Skip to main content

করোনাকাল ও ভারতে কৃষিসংস্কার ।। রণেশ রায়



ভূমিকা:


করনার আক্রমণের এক বছর সমাপ্তি। এই এক বছরে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অর্থনীতি তলানিতে। বাজারে ইতিমধ্যে এই রোগ প্রতিষেধক টিকা এসেছে। তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় যায় নি। এমনকি ডাক্তার বা স্বাস্থ্য সেবায় যুক্ত মানুষজনও এই টিকা নিতে ভরসা পাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে বরাদ্দের অন্তর্ভুক্ত মানুষজনের ৫০ শতাংশ মানুষও টিকা নিতে আসছে না বলে খবর। মানুষ বিভ্রান্ত।হয়তো টিকা গ্রহণকে বাধ্যতমূলক করা হবে বাজার ধরার স্বার্থে।  সংক্রমণের হার ভারতের মত দেশে কমে চলেছে। মৃত্যুহার নেহাতই নগণ্য। তাও আতংক যায় নি। এরই মধ্যে টিকা উৎপাদনকারী দেশ ও উৎপাদন সংস্থাগুলোর মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা কে কত বাজার পাবে তার। একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের কুৎসা। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত। এরই মধ্যে বিশ্বায়ানের কর্মসূচির প্রকল্পে থাকা বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি অবলীলায় গৃহীত হয়ে চলেছে। ভারত তার বাইরে নয়। এই কর্মসূচির বিরোধিতা করলেই কাউকে দেশদ্রোহী সন্ত্রাসবাদী তখমায় ভূষিত করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কৃষি সংস্কার এর অন্তর্ভুক্ত যার ওপর আমরা আজকের আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আলোচনা করব। এর জন্য কৃষি সংস্কারের পশ্চাদপটটা জেনে নেওয়া দরকার।


কৃষির উন্নতির জন্য ঔপনিবেশিকোত্তর ভারতে ভূমিসংস্কারকে সামনে রেখে আত্মনির্ভর ও সাম্যের প্রশ্নকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনার অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে উন্নয়নের পথে এগোবার কথা বলা হয়। প্রথম প্রায় চল্লিশ বছর নিয়ন্ত্রণের অর্থনীতি চালু রাখা হয়। তারপর ১৯৯১ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বায়নের নীতি অনুসরণ করার তাগিদ। কংগ্রেসের জমানাতেই নতুন আর্থিক নীতি চালু করা হয়। বাজার অর্থনীতিকে অর্থনীতির উন্নয়নের চালিকা শক্তি বলে গ্রহণ করা হয়। বিশ্বায়ন বেসরকারিকরণ ও উদারীকরণের তাগিদে সংস্কার নীতি গ্রহণ করা হতে থাকে একের পর এক। কংগ্রেস আমলে ধীর গতিতে আর গত সাত আট বছর ধরে মোদীর জমানায় দ্রুত তালে। তারই সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমানের কৃষি সংস্কার নীতি চালু হয়। সংস্কার সম্পর্কে ধারণাটাতেই বদল আসে। আগে রাষ্ট্রের ভূমিকা বজায় রেখে অন্তত মুখে অর্থনৈতিক সাম্য বজায় রেখে উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে সংস্কারের কথা বলা হত। পরিকল্পনার অর্থনীতি ছিল এ ধরণের উন্নতির হাতিয়ার। বাজার অর্থনীতি অবাধ ছিল না। শিল্প নীতি ফেরা আইন চালু ছিল। বিদেশি পুঁজির অবাধ প্রবেশ স্বীকৃত ছিল না। আজ এর ঠিক বিপরীতটাই সরকারি নীতি যার প্রতিভূ কর্পোরেট দুনিয়া। পরিকল্পনার অর্থিনীকে বিদায় করে বাজার অর্থনীতিকে অবাধ করে দেওয়া বিদেশি পুঁজির অবাধ অনুপ্রবেশ কৃষি শিল্প সেবা সব বেসরকারিকরণ কর্পোরেটের কর্তৃত্ব স্থাপনই হল সংস্কার কর্মসূচি।আমরা এই প্রেক্ষাপটে আজের করোনা কালে কৃষি সংস্কারের ওপর আলোচনা করব। তার আগে অর্থনীতিতে কাঠামোগত ভাবে কৃষির অবস্থানটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব। উল্লেখযোগ্য যে অর্থনীতির একটা নিদৃষ্ট কাঠামোর মধ্যে সংস্কারের কাজকে সাফল্য মণ্ডিত করতে হয়। তাই সংস্কার আলোচনায় অর্থনীতির কাঠামোর স্বরূপটা জেনে নেওয়া দরকার।


ভারতে কৃষি কাঠামোর প্রেক্ষাপটে কৃষি সংস্কার :



প্রায় ৩৩ হাজার বর্গ কিমি বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে ভারত রাষ্ট্র অর্থাৎ ভারতের প্রশাসনিক পরিধি। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ বর্গ জমিতে চাষবাস হয় যাকে কৃষি এলাকা বলা হয়। অর্থাৎ ফসল ফলে এমন এলাকা দেশের অর্ধেক অঞ্চল। ডাল চাল বজরা ভুট্টা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের দানা শস্য আখ পাট চা ও বিভিন্ন ধরণের ফল সবজি উৎপাদন হয় এই বিস্তৃত অঞ্চলে। সুতরা আমরা ওপরে জাতীয় আয়ে কৃষির যে অবদানের কথা বলেছি তার থেকেও বাস্তবে ভারতে কৃষির অবদান অনেক বেশি বলে দেখি যদি কৃষি অঞ্চলের বিস্তৃতি তাতে ফলা ফসল ধরে  বিষয়টা বিবেচনা করি। এর সঙ্গে আছে ব্যাপক মানুষ তার জীবিকার প্রশ্ন যা সামগ্রিক  অর্থনীতিকে বেষ্টন করে আছে, যার গুরুত্ব ভারতের আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় সর্বাধিক।জীবিকা হিসেবে  কৃষির গুরুত্বের কথা আমরা বলেছি। সব দিক বিবেচনা করে বলা চলে কৃষি ভারতের অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক বিভাগ। কৃষির অভ্যন্তরের বিভিন্ন বিষয় যা কৃষি কাজে সাহায্য করে যেমন  জমির মালিকানা ধরণ উৎপাদনের ধরণ তার বাজারিকরণ বাজার সম্পর্ক কৃষিপ্রযুক্তি এ সব এবং এদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কৃষিকাঠামোর ধরণ বুঝতে সাহায্য করে। কৃষি সংস্কার এই কৃষি কাঠামোর ধরণটা বদলাতে সাহায্য করে। তাই আজকের সংস্কার কর্মসূচিকে বুঝতে কৃষি কাঠামোটা বুঝে নিতে হয়।


বিভিন্ন স্তরের কৃষকরা কে কতটা চাষ জমির মালিক সেটা আমরা তুলে ধরতে পারি কৃষি কাঠামোয় জমির মালিকনা আর বৈষম্যের ধরণটা ধরে। পুঁজি বিকাশের বিষয়টা তুলে ধরে কৃষিতে পুঁজি গঠন কিভাবে কৃষি উন্নতিতে সাহায্য করে কৃষি কাঠামো বদলে সাহায্য করে সেটা জানা দরকার।। কৃষি সংস্কারে কোন সম্প্রদায় কিভাবে প্রভাবিত হতে পারে তা মালিকনার ধরণের ওপর নির্ভর করে। উৎপাদনের ধরণ তার বাজারিকরণের বিষয়টাও এর সঙ্গে জড়িত। এছাড়া আছে  ঋণ ব্যবস্থা প্রযুক্তির দিকটা। কৃষি বিভাগে কৃষি কাঠামোর এই বিষয়গুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থেকে ক্রিয়া করে, কৃষি উন্নতিতে সাহায্য করে। কৃষি কাঠামোতে বদল আনে। যদি সঠিক নির্দ্দেশে সঠিকভাবে বিষয়গুলোকে কাজে লাগানো না যায় তবে কৃষি উন্নতি সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কৃষি সংস্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সঠিক কৃষি সংস্কার বলতে কি বুঝি সেটা নিয়ে পরিষ্কার থাকা দরকার। আমরা সংক্ষেপে বিষয়টা তুলে ধরে এই করোনা কালে দেশের অর্থনৈতিক সংকটকালে যে কৃষি সংস্কারের কাজ চলছে আর তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দানা বেঁধেছে সেটা তুলে ধরব।


২০১৮ সালে সরকার প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় যে ভারতে মত কৃষিজমির ২৯ শতাংশের মালিক  ৪.৩৩ শতাংশ মাঝারি ও ধনী কৃষকের মালিকনায় যেখানে ৮৭ শতাংশ প্রান্তিক আর খুদে কৃষক ৪৭.৩৫ শতাংশ জমির মালিক। যদি মাঝের আর আধা মাঝারি কৃষককে একটা আলাদা গোষ্ঠী বলে বিবেচনা করলে দেখা যায় মত কৃষকুলের এই ১৩.২১ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মত কৃষি জমির ৪৩.৬১ শতাংশ যারা ২ থেকে ১০ হেক্টর জমির মালিক। ভারতে কৃষি জনসংখ্যার ১৩.৭৮ শতাংশ ধোনি ও অতি ধোনিকদের হাতে আছে ৫২.৬৫ শতাংশ জমি।জমি মালিকনার এই বৈষম্যটা স্বাধীনতার ৭০ বছরে বিভিন্ন রাজ্যে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে জমির উর্ধসীমা ঠিক করা সত্ত্বেও কারণ কিছু রাজ্যে ভূমিসংস্কারের মাধ্যমে মালিকনা নিয়ন্ত্রণ নীতি কার্যকরী হয় নি। সেজন্য মালিকনার ধরণের দিক থেকে রাজ্যে রাজ্যে ফারাক অনেক। এই  দিক থেকে বিষয়টি আজকের ভূমিসংস্কারের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ন বলে আমরা দেখব। বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থের ধরণটাও ভিন্ন। তাই এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলনের তীব্রতা ভিন্ন। প্রসঙ্গটায় আমরা পরে আসব।


স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন কৃষিতে জমির মালিকনায় সমতা এনে গরিবকৃষককুলকে উন্নতির সামিল করে শিল্পায়নের মাধ্যমের আত্মনির্ভর উন্নতির কথা বলা হয়। রাজ্যসরকারগুলোকে কৃষি উন্নতিতে সামিল করার জন্য যে ভুমি সংস্কার  নীতি গ্রহণ করা হয় তা কার্যকরী করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। জমির উর্ধসীমা স্থির করা তখন ভূমিসংস্কারের প্রধান দিক ছিল।সরকার প্রচারিত নীতি অনুযায়ী  সেই দিক থেকে সংস্কারের উদ্দেশ্য তখন শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি ছিল না, বৈষম্য স্থাপন করে উন্নতির কথা বলা হত। অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণের নীতি চালু ছিল। অর্থনীতির সম্প্রসারণ আর উন্নয়নের ধারণার মধ্যে পার্থক্যটা বিচার করা হত। বাম রাজত্বকালে সামগ্রিক ভূমিসংস্কারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে ভূমিহীন চাষীর হাতে জমি দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়। ন্যায্য দাম নীতি বাজার কাঠামোয় সংস্কার আনার জন্য সরকারের নেত্রীত্বে মন্ডি ব্যবস্থা চালু হয়। সমবায় চাষ নীতি গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ কৃষক সুরক্ষার দিকটা অন্তত কাগজে কলমে  গুরুত্ব পায়। অবশ্য এসবে একটা বিরাট কিছু হয়েছে তা নয়। জমি বন্টনের সঙ্গে সমবায় সেচ ঋণ বাজারিকরণ এর কর্মসূচী তেমন কার্যকরী না হওয়ায় ভূমিসংস্কারের কাজ অসম্পূর্ণ থাকে কৃষিকে শিল্পের ভিত্তি হিসেবে গড়ে তোলা যায় না। তবে তখন উন্নতির কাজে সমবন্টন গরিব মানুষের অধিকার টা স্বীকৃতি পায়। আজ সংস্কারের সেই ধারণাটাকেই বদলে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারিকরন ঘটিয়ে মালিকনা অধিকারকে অবাধ করে দিয়ে কর্পোরেট ধাঁচে কৃষিকে বাজার কাঠামোয় গড়ে তুলতে যে আইনি ব্যবস্থা চালু করা হয় তাকে সংস্কার বলা হচ্ছে। রাষ্ট্রের এই নীতিগত দিকতার প্রেক্ষাপটে বর্তমানের কৃষিসংস্কারকে বুঝতে হয়। বাজারিকরণ ঋণ ব্যবস্থায় বেসরকারি সংস্থাকে চুক্তিচাষের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া কর্পোরেট সংস্থার কৃষিপণ্যের সুযোগ করে দেওয়া বিদেশি পুঁজির স্বীকৃতি এ সবই সংস্কার কাজের অঙ্গীভূত করা হয়। অর্থাৎ বেসরকারিকরণ উদারিকরণ বিশ্বায়ন নীতির সঙ্গে এই সংস্কার নীতি যুক্ত যা আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রধানয়কামী দেশের ইচ্ছাজাত কারণ তাদের দেশের কর্পোরেট জগৎকে ভারতের কৃষিব্যবস্থায় কর্তৃত্ব কায়েমের সুযোগ করে দেওয়াই ভারতের মত দেশগুলোতে রাষ্ট্রের কর্মসূচি। এই প্রেক্ষাপটে আমরা কৃষি সংস্কার ও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিষয়টায় আসব। আর সরকার আজের করোনা আক্রমণের মধ্যে এ কাজে বিশেষ তৎপর বলে করোনা কালকের অর্থনীতির তৎপর্যের দিক থেকে বুঝে নেবার চেষ্টা করব।


করোনাকাল নিয়ে কিছু কথা:


আজ কভিড ১৯ ও অর্থনৈতিক সংকট মানব সভ্যতাকে এমন এক পরস্পর বিরোধী সংকটের সন্মুখীন করেছে যার থেকে উদ্ধার পেতে সব দেশের শাসক সম্প্রদায়  হিমসিম খাচ্ছে।একটার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে আরেকটা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংকটকে ঘনীভূত করে তোলা হচ্ছে। কোন প্রতিষেধক ওষুধ না থাকায় এই ভাইরাস সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় অথচ এটা একটা ভয়ানক সংক্রমক রোগ হওয়ায় 'সামাজিক দুরত্ব' বজায় রেখে লক ডাউন করে গত ১৫ বছর ধরে বিশ্বায়নের আওতায় থেকে বিশ্ব অর্থনীতি যে সংকটে নিমজ্জিত সেই সংকটকে আরো ঘনীভূত করা হয়েছে । আবার এই অর্থনীতির সংকটের মোকাবিলা করতে গিয়ে ভাইরাস সংকট ঘনীভূত হবে বলে ভয় হচ্ছে। এ এক উভয় সংকট।এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পাচ্ছে না কোন রাষ্ট্র। এই অবস্থায় ভাইরাস দূর হলেও পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা দীর্ঘকালের প্রেক্ষাপটে মানব সভ্যতাকে নিশ্চিত ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে মনে করা হচ্ছে। তাই দরকার নতুন এক পৃথিবী গড়ে তোলার ভাবনা যা শোষণ প্রকৃতি নিধন যুদ্ধ ও ভোগবাদ থেকে মুক্ত।পুঁজিবাদকে ফিরিয়ে আনা নয় তাকে ধ্বংস করে বিকল্প এক অর্থনীতি গড়ে তোলা যা শিক্ষা স্বাস্থ্য মানুষের রুটি রোজগার নিশ্চিত করে মানবতার ধর্ম পালন করে। এর জন্য রোগ প্রতিরোধে 'সামাজিক দুরত্ব দাবাই' যেমন আত্মঘাতী তেমনি পুনর্গঠনের নামে পুঁজিবাদের ওপর আস্থা রাখা তেমনি বিপজ্জনক


আমরা জানি যে মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথে ভাইরাসের আক্রমণ নতুন কিছু নয়। এই ধরণের ভাইরাস বার বার মানুষের অর্থনীতি রাজনীতি সাংস্কৃতিক জীবনকে আক্রমন করেছে, আজও করে চলেছে। করোনা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকদের যে ধারণা ছিল না তা নয়। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে সরকারের ভূমিকা সীমিত, বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ সামান্য। সমর খাতে ব্যয় বহুগুণ বেশি। বেসরকারি বিভাগের কাছে স্বাস্থ্য খুব বড় ব্যবসার জায়গা। তার রোগ প্রতিষেধকের ওপর তাদের গবেষণা খুব কম। এই অবস্থায় অজানা আক্রমণের মোকাবিলায় দেশের প্রস্তুতি থাকে না। ভোগবাদ ও পরিবেশ দূষণের জন্য মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা তলানিতে পৌঁছেছে। সুতরাং ভাইরাসের আক্রমণের মুখে রাষ্ট্র আজ দিশা হারা। আমি এই ভাইরাস সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। তাই নীচে সব শেষে একটা সংযোজনী তুলে দিলাম পাঠকের জন্য।


পুঁজিবাদী এই কাঠামোয় অর্থনীতি বার বার মন্দার সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনৈতিক ভাইরাস শুধু অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে নি মানুষের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক জীবনকেও বিপর্যস্ত করেছে। অর্থনীতির সংকট দূর করতে গিয়ে সমরবাদ ভোগবাদকে মদত করে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা চলেছে। তৈরি হয়েছে উপনিবেশবাদ যা সামরিক আগ্রাসনকে মদত করেছে, স্বাধীনতার স্বার্থে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধকে অনিবার্য করে তুলেছে। দেশের সঙ্গে দেশের যুদ্ধ ঘটে চলেছে। একই সঙ্গে কর্পোরেট স্বার্থে ভোগবাদকে মদত করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে শ্রেণী যুদ্ধ বার বার মাথা তুলেছে।প্রযুক্তি বিনিয়োগ সবই মুনাফালোভী যুদ্ধবাজ ভোগবাদী অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে  প্রবাহিত হয়েছে। কর্পোরেটদের মুনাফার স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা চলেছে। মানুষের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়েছ, বন্টন বৈষম্য বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা স্বাস্থ্য আজও অনিশ্চিত থেকে গেছে। অর্থনীতির এই সংকটের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। কর্পোরেট অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকাকে তেমন স্বীকার করা হয় না। চাহিদা যোগানের সমবেত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া উপকরণের বিভিন্ন উৎপাদনে বণ্টন থেকে ভোক্তার ভোগ উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার থেকে কর্ম সংস্থান মানুষের  আয় নির্ধারণ সব সমস্যার সমাধান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সম্ভব বলে মনে করা হয়। তবে অর্থনীতি সংকটে পড়লে বা কর্পোরেট সেক্টরের প্রয়োজনে পরিকাঠামো তৈরিতে সরকারের ভূমিকা স্বীকার করা হয় কর্পোরেট স্বার্থে।যতক্ষণ কর্পোরেট স্বার্থ বজায় রেখে রাষ্ট্র চলে ততক্ষণ টা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এই ধরনের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সঙ্গে সাধারণ গরীব মানুষের স্বার্থের সম্পর্ক নেই।আর দুনিয়ার বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে সমস্ত অর্থনীতিকে নৈপুণ্য বাড়িয়ে টিকে থাকার জন্য বিশ্বায়নের ছত্রছায়ায় আসতে বলা হয়। সেইভাবে অর্থনীতির অভিমুখ ঠিক করা হয়। কিন্তু দেখা যায় বণ্টন বৈষম্যের জন্য কর্মসংস্থানের অভাবের দরুন বা শ্রম সঞ্চয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য মুনাফা ভিত্তিক বাজারি অর্থনীতিতে চাহিদা যোগানের সঙ্গে তাল রাখতে পারে না। দেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। আর এই ধরনের অর্থনীতিতে যাদের বাজারে বেশি ক্রয়ক্ষমতা থাকে তাদের প্রয়োজন মেটাবার জন্য উৎপাদন হয়। আজ করোনা ভাইরাস অর্থনীতিতে চাহিদা অভাবের ভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থনৈতিক সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ভারতের অর্থনীতি সহ বিশ্বের তাবর তাবর অর্থনীতি তার সঙ্গে রাজনীতি ও সামাজিক জীবন এই দ্বৈত ভাইরাসের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়ে তার থেকে বেরোবার পথ পাচ্ছে না। 


অতীতে মানুষ বার বার একধরনের বা আরেকধরনের ভাইরাসের আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে। অনেকগুলোই খুব সংক্রমক ছিল, যথেষ্ট বেশি হারে মৃত্যুর কারণ ছিল। মানুষ নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতার জোরে ও নতুন ওষুধ আবিষ্কারের সাহায্যে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছে। এক্ষেত্রেও কোভিডের আক্রমন  দূর হবে বলেই মনে হয়। কিন্তু কোভিড দূর হলেও সামাজিক দূরত্বের  কল্যানে যে আত্মকেন্দ্রিক বিসাদগ্রস্ত বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনে মানুষ অভ্যস্ত হবে তা কার্যত মানবতা বিরোধী সর্বনাশা এক যান্ত্রিক জীবন যেখানে ভালোবাসা সহমর্মিতা পরস্পর সহযোগিতার মত মানবিক গুনগুলো ধ্বংস পাবে। সুতরাং আমরা যদি নতুন সমাজ নতুন পৃথিবীর দাবি না করি সময়ের চাহিদাকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রের চোখরাঙানির কাছে নতি স্বীকার করি তবে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই নতুন পৃথিবী গড়ার লড়াইটা শুরু করতে হয়। রাষ্ট্র সেটায় বাধা দিলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইটাও একটা অনিবার্যতা হয়ে ওঠে। আর সেইজন্য সব ধরণের সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে দেশপ্রেমিক পরিবেশবিদ ও সমাজবাদী চিন্তার মানুষকে জোট বাঁধতে হয়। কার্যত আজ পৃথিবী শুদ্ধ সব দেশেরই এটাই দাবী। বর্ণ ধর্ম জাত নির্বিশেষে সব মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হয়। স্বাধীনতা আত্মনির্ভরতা শোষণ মুক্তি ও পরিবেশ রক্ষার লড়াই আজ এক বিন্দুতে এসে মিলেছে।


করোনা আক্রমণ ও অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করছি সরকাররের নিত্যনতুন আর্থিক সংস্কার নীতি যা দেখছি তা তুলে ধরতে পারি। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এ প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর লক ডাউন কর্মসূচির সরকারি বিধান কার্যকরী করা হয়েছে। কেন 'সামাজিক দূরত্ব' কথাটা ব্যবহারে আমাদের আপত্তি তা বলেছি। এর ফলে সামাজিক বন্ধনটা ভেঙে যাবার উপক্রম হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব সংক্রমণ রোধ করার জন্য দরকার সেটা আমরা জানি। অতীতে বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগে এই রীতি আমাদের পূরণ রীতি। কিন্তু সামাজিক দূরত্বের আওয়াজ তুলে এক ধরণের অস্পৃশ্যতার রোগের ভাইরাস আমরা আজ বহন করছি। মানুষের মধ্যে এক মনন রোগের শর্ত তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া রোগটা সম্পর্কে একটা আতংক তৈরি হচ্ছে। রোগের বিরুদ্ধে নয় যুদ্ধটা রোগীর বিরুদ্ধে করা হচ্ছে। রোগের থেকে চিকিৎসাটা বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কারণ চিকিৎসার নামে প্রতিটি স্তরে বেসরকারি ব্যবসায়ীরা অনৈতিক ভাবে একে ব্যবসার কাজে লাগাচ্ছে। যেমন মাস্ক উৎপাদন ও ব্যবহার, ভাইরাস পরীক্ষা, এম্বুল্যান্স, অন্যান্য রোগের চিকিৎসা মাথায় তুলে করোনার সঙ্গে তাকে জড়িয়ে দিয়ে সঠিক তথ্যকে আড়াল করা। আমরা দেখছি ভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতি। ভুল ভাল ফল আসছে। হাসপাতালের বিল লাগামছাড়া। রোগীকে এক অস্পৃশ্য রোগী হিসেবে দেখে তার থেকে টাকা আদায় করে মৃত্যুর মুখে তাকে  ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি না করে পথেই তাকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা হচ্ছে। এর সঙ্গে ভেন্টিলেশন অক্সিজেনের লাগামছাড়া ব্যবসা। প্রতিবাদের পথ বন্ধ কারণ লক ডাউনে সব বন্ধ। এই অব্যবস্থার মধ্যে জীবন জীবিকার ভয়াভয় অবস্থায় করোনা আতঙ্কে তার থেকেও বেশি চিকিৎসার ভয়ে সমাজে অস্পৃশ্য বিবেচিত হওয়ার ভয়ে আজ আত্মহত্যার হার বাড়া শুরু হয়েছে। করোনার আবহে ক্যান্সার যক্ষা সুগার হৃদরোগের রুগীদের ন্যূনতম চিকিৎসাও বন্ধ। সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। রোগী আর ডাক্তারের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরছে। লক ডাউনের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষুন্ন হওয়ায় গ্রাম গঞ্জের রোগীরা দূরে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে পারছে না। তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা না হয়েও মারা যাচ্ছে। অনুমান করা যেতে পারে টেষ্টের মারপ্যাঁচে এরাও করণায় মারা গেছে বলে আতংক ছড়াবার হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা শুধু ভারতে নয় সারা পৃথিবীর আজের চেহারা। আর এরই মধ্যে যুদ্ধের আবহ বজায় রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য নয় সরকার সামরিক বিভাগে খরচ বাড়িয়ে চলেছে জাতীয়তাবাদে শুড়শুড়ি দিয়ে। অর্থাৎ যুদ্ধটা করোনার নামে নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখার যুদ্ধ। অর্থনীতির আসল মন্দার চেহারাটাকে আড়াল করার যুদ্ধ। আর এর মধ্যেই জনবিরোধী সংস্কার কাজ যার ওপর আলোকপাত করা দরকার। আর এই সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাদী কাঠামোর মধ্যে থেকেই শিল্প ব্যবসাকে এমন ভাবে ঢেলে সাজানো যাতে কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষিত হয়। উৎপাদনে খরচ কমাবার জন্য শ্রমিক ছাঁটাই থেকে প্রযুক্তির ব্যাবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তুলে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা ইকমার্স ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাদের পথ অবাধ করে দেওয়া হচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সংস্কারের কাজ নির্বাধায় চালিয়ে যাওয়ার পথ ধরেছে রাষ্ট্র। এরই মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয়  জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। গরীব মানুষের ক্র়ক্ষমতা কমে চলেছে। দেশ সবদিক থেকে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। এর মধ্যে অবাধ লুঠ আর ঠগ বাজি।


করোনার আগে থেকেই মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তথাকথিত সংস্কারের নামে  বেসরকারিকরণ ও অবাধ বিদেশি পুঁজির অনুপ্রবেশকে আরও দ্রুত গতিতে নিশ্চিত করে চলেছে আমাদের রাষ্ট্র যা মোদী পূর্ববর্তী কালে ১৯৯১ সালে নতুন আর্থিক নীতিতে স্বীকৃতি পায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। টেলিফোন কয়লা ও লাভজনক সরকারি সংস্থাগুলোকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের বিক্ষোভ স্তব্ধ করে করোনা কালে শ্রম আইন বদল করা হলো। রেল শিল্পের বেসরকারি করণ করা হল।সামরিক বিভাগে ৭৪ শতাংশ বিদেশী পুঁজির স্বীকৃতি দিয়ে দেশের সামরিক বিভাগের গোপনীয়তা ও আত্মনির্ভরতা অনিশ্চিত হতে চলেছেন। কৃষি ও শিক্ষা সংস্কার করা হল। শ্রমিকের কাজের সময় বাড়ানো হল, মালিককে আরো ক্ষমতা দেওয়া হল শ্রম বিরোধী কার্যকলাপে, মজুরি ছাঁটাই এর অধিকার দিয়ে।সামনে রাখা হল করোনা জুজু। লকডাউনের নামে বিক্ষোভ জমায়েত অধিকার কেড়ে নিয়ে। অথচ ধর্মিয় জমায়েত রাজনৈতিক জমায়েত একদলের সঙ্গে আরেক দলের খুনোখুনি মারামারি অবাধে চলছে জমায়েতের মাধ্যমে।এটা আমাদের দৈনিক অভিজ্ঞতা। নতুন শিক্ষানীতিতে বেসরকারি উদ্যোগকে আরও অবাধ করে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষায় সরকারি দায়িত্ব কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাস্যকরভাবে শিক্ষানীতিতে রবীন্দ্রনাথকে টেনে এনে এক আবেগ সঞ্চালণের চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু শিক্ষানীতিতে রবীন্দ্রনাথের মৌলিক নীতি আশ্রমিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতি সংরক্ষণ নীতিকে বিসর্জন দিয়ে কর্পোরেট ক্যাডার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষায় মাতৃভাষার ভূমিকাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী  মোদী অমুদ্রাকরণের নীতি গ্রহণ করে ডিজিটাল নীতির কথা বলে আসছেন বেশ কিছুদিন ধরে । বিমুদ্রাকরণ নীতি ব্যর্থ হওয়ার পর আজ করোনা সামনে রেখে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে যে সামাজিক দূরত্বের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা কার্যত ছোট ছোট ব্যবসা তুলে দিয়ে ব্যবসা বিভাগকে আমাজনের মত আন্তর্জাতিক একচেটিয়া ব্যবসা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিচ্ছে। ইকম ব্যবসা কার্যত ডিজিটাল ব্যবসা। ব্যাংকের লেনদেনকে ডিজিটাল লেনদেনে পরিণত করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের টাকা কম সুদে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ঋণ শোধ উদারীকরণের নীতি গৃহীত হতে চলেছে। সুদের হার কমানো হচ্ছে। ফলে ব্যাংকে অনুৎপাদনশীল সম্পদ তথা Nonperforming Asset  বেড়ে চলেছে। এগুলো আমাদের বানানো কথা নয়। সরকারের নথি দেখলেই সব ধরা পড়ে। আর সবই হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিশেষ করে আমেরিকার নির্দেশে আর অনুগ্রহে।আজ পৃথিবী ব্যাপী বৃহৎ শক্তিগুলোর নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ।সেখানে চিন আমেরিকা পরস্পর  শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। জাতীয়তাবাদী অর্থনীতি গড়ে তোলার আবেগ সৃষ্টি করে চীনের সাথে ব্যাবসায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বৈষম্যমূলক বাণিজ্য নীতির বিরোধিতা করলেও আমেরিকার পক্ষে থেকে এটা ভারত করছে বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা চুপ করে আছে। সত্যি যদি নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থে সব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা হয়,  দেশকে বিদেশি তাবে থেকে  বার করে এনে জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলা তাতে আপত্তি করার নেই বরং সমর্থন করা উচিত। কিন্তু কার্যত চীনকে প্রতিপক্ষ দাঁড় করিয়ে আমেরিকার তাবেতে দেশকে আরও ঘনিষ্ট ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটাতে আমাদের আপত্তি।কার্যত ভারতের স্বার্বভৌমত্ব আজ ভূলুণ্ঠিত । তার বিরুদ্ধে লড়াই না করে দেশের জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলা যায় না। সেজন্যই আমরা নতুন পথের দিশারী।ভোগবাদ কে বাতিল করে দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে বৈষম্য দুর করে এক নয়া স্বাধীন সার্বভৌম দেশ গড়ে তোলার কথা আমরা  বলি যেটা সত্যিকারের সমাজতন্ত্রের আদর্শকে তুলে ধরবে।


কৃষি সংস্কার ও সাম্প্রতিক কৃষি বিল :


আজ পৃথিবী শুদ্ধ কর্পোরেট দুনিয়া ব্যবসায় নেমেছে। আর শাকসবজি থেকে সব ধরণের কৃষি পণ্য ব্যবসায়ে এরা বেশি লাভের গন্ধ পেয়েছে। কিন্তু ভারতে কৃষি ব্যবসায় বড় বড় জমির মালিকরা এতদিন কর্তৃত্ব করেছে বিশেষ করে সেসব জায়গায় যেখানে ভূমিসংস্কার সেভাবে কার্যকরী হয় নি। এখন নতুন আইন শহরের শিল্পপতিদের প্রবেশের সুযোগ অবাধ করে দেওয়ার ফলে পণ্যের বাজারিকরণে কৃষি জমি কেনা বেঁচায় কর্পোরেট দুনিয়া সুবিধা পাওয়ায় আর এদের পেছনে কেন্দ্রীয় সরকার থাকায় এতদিনকার সুবিধে পাওয়া বড় জমির মালিকরা সিঁদুরে মেঘ দেখছে। তাই শহর আর গ্রামের মালিকসম্রদায়ের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত। শহরের কর্পোরেট মালিকদের সঙ্গে বিদেশি কর্পোরেট জগৎ যুক্ত যারা ই কমার্স ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ই-কমার্স এর সাহায্যে পৃথিবীর বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা আজ খুব বড় আকারে কৃষি পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। বিমুদ্রাকরণ কাল থেকে আজ করোনা কালে তাই ডিজিটাইজেশনের শ্লোগান যার সুবিধে পায় কর্পোরেট সেক্টর। আর সব বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে মানুষ জনকে সামাজিক দূরত্বের দাবাই দিয়ে  সংস্কারের রম রমা সারা পৃথিবী সুদ্ধ। সেই জন্যই করোনা আতংক সৃষ্টিতে এদের আগ্রহ। করোনা সমস্যা নয় তা বলছি না। তবে এ নিয়ে আতংক তৈরি করা হয়েছে সেটা পৃথিবীতে অনেকেই মনে করছে। আজকের দুনিয়ার ব্যবসা প্রযুক্তির কারণে  শিল্পের ধরণে যে বদল এসেছে যার সুযোগ পাচ্ছে কর্পোরেট দুনিয়া সেটার সঙ্গে ব্যাপারটা ওতপ্রোতভাবে যুক্ত বলে আমার ধারণা। এদিকে একসময় বামপন্থী ভাবনাকে সামনে রেখে কৃষিতে যে ভূমি সংস্কার হয়েছে তাতে ছোট মালিকের হাতে জমি গেলেও তাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে গেলে সমবায় কৃষি সেচ বাজার ঋণ এ সব ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনা দরকার ছিল তা আনা হয় নি। মধ্যসত্বা ভোগীদের দৌরাত্ব কমে নি। ছোট ও প্রান্তিক কৃষকরা উৎপাদন করলেও তারা সুবিধে পায় নি। তাদের সমস্যা মেটে নি। শেষ বিচারে আজের ধনী কৃষকদের নেতৃত্বে থাকা আন্দোলনকারীরা তাদের দিকে কতটা তাকাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।  আবার নতুন কৃষি নীতি কর্পোরেট দুনিয়াকে ঢুকিয়ে নতুন এক মধ্যসত্তা ভোগী সৃষ্টি করবে। আজের ই-কমার্স এ  B2B ব্যবসায় সেটা পরিষ্কার হচ্ছে। প্রারম্ভিক (start up) কোম্পানিগুলো অনেক গুলোই মধ্যসত্বাভোগী B2B ব্যবসায়ী। এখানেও প্রান্তিক কৃষকদের বিপদ। কর্পোরেট দুনিয়া ব্যবসায় নেমেছে মানে উৎপাদন থেকে ব্যবসার দিকে নজর বেশি দিয়েছে বোঝাচ্ছি। আর উৎপাদনের ধরণ বদলেছে। চুক্তি ভিত্তিক ছোট উৎপাদনকারীদের দিয়ে উৎপাদন করিয়ে ব্র্যান্ড মেরে কর্পোরেট সংস্থা ব্যবসায় নজর দিয়েছে।


ভূমি সংস্কারের পর কৃষিকে ঢেলে সাজিয়ে তার ওপর দাঁড়িয়ে যে শিল্পায়ন সেটাই অস্বীকৃত হয়েছে কংগ্রেস বাম জমানায়। বর্তমান তারই ধারাবাহিকতা পশ্চিম বঙ্গে। আর কেন্দ্র কর্পোরেট স্বার্থের প্রতিভূ বিদেশি শক্তির ছাতার তলায়। ভূমি সংস্কারকে একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আর যথেষ্ট শর্ত বলে বিবেচনা করা হয়েছে এতদিন। আর কেন্দ্র এখন ন্যূনতম ভূমিসংস্কার বা শ্রম আইনের বিরোধী এক উগ্র দক্ষিণপন্থী পথের পথিক। ফলে শিল্প উন্নতিও ব্যাহত হয়েছে কারণ এই কৃষি কাঠামোতে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। কৃষি আমাদের ভিত্তি কথার কথা থেকে যায়। আর বিদেশি অর্থনীতির স্বার্থে দেশীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আত্মনির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠতে পারে নি। আজের এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলোতে যেখানে বিদেশি আগ্রাসন অর্থনীতিতে সেখানে কোন দেশই  70 বছরেও স্বনির্ভর হতে পারে নি। উচ্চ বিত্তদের ওপর নির্ভর করে স্বনির্ভর অর্থনীতি বিদেশি ছাতার তলে থেকে সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।


দু'হাজার কুড়ি সালে সেপ্টেম্বরে তিনটি বিলের মাধ্যমে সরকারের কৃষি সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় যা নিয়ে বিরোধীদের বিরোধিতায় পার্লামেন্ট উত্তাল হয়ে ওঠে। বিল তিনটের একত্রে নাম Farm Bills 2020, Provisions and Opposition। উদারিকরণ বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়নের নীতি অনুসরণ করেই এই কৃষি সংস্কার অনুসৃত হয়। তাই একে মোদির একার বিষয় বলে মনে করার কারণ নেই। ১৯৯১ সালের নতুন আর্থিক নীতি অনুসৃত হওয়ার সময় এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল কারন সেই নীতিটিতেই সরকার এ ব্যাপারে দায় বদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বিষয়টা ছিল সময়ের অপেক্ষায়। তাই বিরোধীদের এই বিরোধিতায় কতটা আন্তরিকতা  তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তবে আজ যারা বিরোধী তারা তাদের আমলে নীতি নির্ধারণে ততটা আগ্রাসী হতে পারে নি কারণ তারা জানত এরকম একটা বিল ভারতের আর্থিক কাঠামোয় কৃষি কুলের তরফ থেকে একটা বিরোধিতা আসবেই। আর আজ মোদি সরকার সেই তুলনায় অনেক আগ্রাসী।আন্তর্জাতিক স্তরে মোদি কর্পোরেট দুনিয়ার কাছে নীতির দিক থেকে অনেক বেশি দায়বদ্ধ তাই সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ অনেক বেশি আগ্রাসী। আজকে ভারতজুড়ে এই বিলের বিরুদ্ধে কৃষি আন্দোলন ও তার প্রতি সরকারের অনমনীয় মনোভাব  সেই ইঙ্গিতই বহন করে। এই প্রেক্ষাপটে এই বিল কি বলে কেন এর বিরোধিতা সেটাই আমাদের আলোচনার মূল বিষয়। উল্লেখযোগ্য যে এই ধরণের বিল পাশ করা হয় বিলের অন্তর্বস্তু যা তা প্রয়োজনমত ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করে এর পক্ষে অনেক ভালো ভালো কথা বলে আপাতভাবে যা বিলটাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। আজ যারা বিদেশি পুঁজির অবাধ প্রবেশ ও বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করছেন তারাও ১৯৯১ সালে নতুন আর্থিক নীতি চালু করার সময় একই কথা বলেছিল। তাই নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে গেলে আমাদের বিলের অন্তর্বস্তু বুঝে নিতে হয়। ওপরের তিনটি বিল কি বলে তা আমরা এক এক করে আলোচনা করতে পারি।


 প্রথম বিলটি কৃষি পণ্যের বাজার সংক্রান্ত।. এই বিলটি  উৎপাদন ব্যবসা ও বাণিজ্য (প্রচার ও সুবিধাদি) বিল, ২০২০ নামে গৃহীত হয়। বিলে বলা হয়েছে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজার কমিটির অধীনে নিবন্ধিত কৃষিমণ্ডির বাইরে নিজেদের ইচ্ছে মত বিক্রি করতে পারবেন।অর্থাৎ কৃষিবাজারিকরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হবে। এতে আশা করা যায় কৃষিবাজার উন্মুক্ত হবে। বাজারে নিজের সুবিধামত ভালো দামে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারবে কৃষকরা। তার উৎপাদনে উৎসাহ বাড়বে। কৃষক অঞ্চলের মধ্যে কেনাবেচায় আটকে থাকবে না। তার ব্যবসার পরিধি রাজ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। দেশ থেকে দেশান্তরে কৃষি বাণিজ্য বাধামুক্ত হবে। এতে কৃষকের ব্যবসার চিন্তা ভাবনা প্রসারিত হবে। তার আন্তর্জাতিকরণ ঘটবে বলে নীতি নির্ধারকদের দাবি। এই ফসল বিক্রির জন্য কৃষককে ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাবেচার সুযোগ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ কৃষি ব্যবসাকে ডিজিটাইজেশন করা হবে যেটা আজকের রাষ্ট্রীয় নীতি। কর্পোরেট দুনিয়ার স্বার্থ বজায় রাখা বাজার অর্থনীতিকে বিমুদ্রাকরণ করার মাধ্যমে। যেটা কালো বাজার অবসানের কথা বলে কিছুদিন আগে করার প্রথম পদক্ষেপ ছিল।হয়েছে। অর্থাৎ বেসরকারিকরণ বিমুদ্রাকরণ ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা বাজারিকরণ বাণিজ্যিকরণের বৃহত্তর কর্মসূচির অংশ এটা। পরে এর ওপর বিশ্লেষণে  আসব।


দ্বিতীয় বিলটি চুক্তিভিত্তিক চাষ সংক্রান্ত। এর নাম কৃষকদের (ক্ষমতায়ন এবং সুরক্ষা) মূল্য আশ্বাস এবং খামার পরিষেবার চুক্তির বিল, ২০২০।এই বিলে কৃষকদের অগ্রিম চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বলা হয় যে কৃষকরা কৃষি বাণিজ্য সংস্থা প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা হোল জেলার খুচরো ব্যবসায়ী রপ্তানি সংস্থা এমনকি বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে অগ্রিম চুক্তিতে  চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন। যুক্তি দেখান হয় যে এর ফলে ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবে  কারণ এতে বাজারের ঝুঁকি থেকে কৃষকরা মুক্তি পাবে। ভারতে ৮৬ শতাংশ কৃষকই ছোট ও প্রান্তিক কৃষক। অগ্রিম চ্যুক্তি দামের নিশ্চয়তা দেবে। ঝুঁকি স্থানান্তরিত হবে ক্রেতার ঘরে অর্থাৎ ব্যবসায়ীর ঘরে। মধ্যসত্তাভোগীদের দৌরাত্ম দূর হবে বলে মনে করা হয়।আমরা এই যুক্তির সারবত্তা আলোচনা করব আমাদের বক্তব্যে।


তৃতীয় বিলটির নাম অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) বিল, ২০২০। এই বিলে খাদ্যশস্য ডাল শস্য তৈলবীজ পেঁয়াজ আলু জাতীয় ফসলকে আর অত্যাবশ্যকীয় ফসলের আওতায় রাখা হবে না বলে বিধান দেওয়া হয়। জরুরি ব্যবস্থা বজায় না থাকলে এই জাতীয় পণ্যের মজুত কোন উর্ধসীমা থাকবে না বলে বলা হয়। এর পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় যে এই ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীদের কৃষিতে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে কারণ কৃষি পণ্য নিয়ে ব্যবসার ওপর অহেতুক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তাদের ব্যবসার স্বার্থ রক্ষিত হবে। কৃষকরাও খোলা বাজারের সুযোগ পাবে। দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়বে। কৃষিতে পুঁজি স্বল্পতার সীমাবদ্ধতা দূর হবে। ব্যবসার স্বার্থে বেসরকারি উদ্যোগে বাজার পরিকাঠামো গড়ে উঠবে বলে যুক্তি দেখান হয়। পণ্য সংরক্ষণের জন্য মজুতঘর তৈরি করবে ব্যবসায়ী কর্পোরেট দুনিয়া। দামে স্থিতি আসবে যার সুযোগ পাবে কৃষকরা। তাদের অভাবী বিক্রির ফাঁদে পড়তে হবে না।


কৃষি সংস্কারকে সামনে রেখে যে তিনটি বিল আনা হয়েছে ভারতের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে তা বিশেষ তাৎপর্য পূর্ণ। এটা নেহাত কৃষি সংস্করের প্রশ্ন নয় ভারতের অর্থনীতির সামগ্রিক পুনর্গঠনের প্রশ্ন যার সঙ্গে যুক্ত উদারিকরণ বেসরকারিকরণ আর বিশ্বায়ন। এক কথায় বাজার অর্থনীতি চালু করে কর্পোরেট রাজ প্রতিষ্ঠিত করা। আর এই কর্পোরেট রাজে থাকবে আন্তর্জাতিক স্তরের দেশি বিদেশি পুঁজিপতিদের কর্তৃত্ব। কৃষিতে তাদের অবাধ কর্তৃত্ব স্থাপন। এতদিন ভারতে জীবন জীবিকার উৎস হিসেবে কৃষি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ছোট প্রান্তিক কৃষকদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। কৃষিতে কর্পোরেট বিভাগের তেমন প্রাধান্য ছিল না যদিও অনেক অঞ্চলে বৃহৎ জমিমালিকের কর্তৃত্ব ছিল তাদের জমি মালিকনার দরুন। ভাগ চাষের প্রাধান্য ছিল। মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণও কায়েম ছিল। কিন্তু পুঁজিবাদের বিকাশ সীমিত ছিল। সেক্ষেত্রে ভূমিসংস্কার ও তার সাথে বাজার সংস্কার সমবায় চাষ সেচ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়ে কৃষির ভিত্তি স্থাপন করার কথা বলা হলেও কার্যত পরিকল্পনার অর্থনীতি চালু হলেও এসব করা হয়নি।  ফলে কৃষির উন্নতি হয় নি। সংগঠিত শিল্প জগতে একধরনের অলিগারকি কাজ করছিল। সরকারি বিভাগের প্রচলন হলেও বেসরকারি বৃহৎ পুঁজির প্রাধান্য ছিল। এরা রাষ্ট্রের ওপর প্রাধান্য বজায় রাখায় কৃষির উন্নতি তেমন হয় নি। ভারতের অর্থনীতি দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের কাছে। এরই ফলশ্রুতিতে তাদের নির্দেশ ও শর্তে নতুন আর্থিক নীতি চালু করে যার ফলশ্রুতি আজকের কৃষি সংস্কার তথা কৃষি বিল। মালিকনা সম্পর্ক যে আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলে তাকে কর্পোরেটমুখী করে তোলার জন্যই এই সংস্কার। সরকারি বিলে এই সংস্কারের মুখবন্ধে যতই এর গুনগান করা হোক এর আসল চেহারাটা তিনটে বিলের বিষয়বস্তু ধরে তুলে ধরা যায়। তবে আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে আগের জমানার ব্যর্থতা তাদের নতুন আর্থিক নীতি আজকের এই সংস্কারের পশ্চাদপট সেটা না বললে সত্যকে অস্বীকার করা হবে।


প্রথম বিলে যে বাজার সংস্কারের কথা বলা হয় তা কার্যত ভারতের কৃষিকাঠামো শক্তপোক্ত করে তোলার থেকে কর্পোরেট দুনিয়াকে ভারতের কৃষিতে অবাধ করে দেওয়ার এ এক পরিকল্পনা। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করার অধিকারের নামে দেশের প্রতিটি কোনে কর্পোরেট দুনিয়ার অবাধ প্রবেশের পথ প্রশস্ত করা হয়। ছোট ও প্রান্তিক কৃষকের আর্থিক ক্ষমতা খুবই সীমিত, বাজারে তাদের প্রতিষ্ঠা নেই। তাই ফসলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা তাদের কেনা বেচার সুযোগ সবই  থাকবে বড় বড় কর্পোরেটদের হাতেই। কৃষকরা তাদের শর্তে তাদের ঠিক করা দামেই ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হবে আবার ভোক্তা হিসেবে বেশি দামে টা বাজার থেকে কিনতে বাধ্য হবে।  এটা হল বাজার ব্যবস্থায় কর্পোরেট দুনিয়ার দ্বিমুখী আক্রমণ যা নিশ্চিত হবে এই কৃষি সংস্কারের মাধ্যমে।সরকারি নিয়ন্ত্রণে যে ন্যূনতম সুযোগটা কৃষকরা পেত সেটা আর পাবে না। বলা হচ্ছে মধ্যস্বত্তা ভোগীদের দৌরাত্ম কমবে । সেটা হবে না। আগের মধ্যসত্মভোগীদের জায়গা নেবে আরও শক্তিশালী সংগঠিত মধ্যসত্তা যারা কর্পোরেট সংস্থা বলে পরিচিত। তার পরিচয় ইতিমধ্যেই আমরা পেয়েছি। লক্ষ্য করা যাচ্ছে আমাজন ফ্লিপকার্ড মত কর্পোরেট সংস্থাগুলো আজ কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসায়ে বেশি উৎসাহী। কারণ এতে লাভ বেশি আর এই পণ্য বাজারে চক্রাকার গতির দ্রুতগতি সম্পন্ন (fast moving) ভোগ্য দ্রব্য হওয়ায় এর বাজার খুব বড় আর তা প্রবাহমান। দেখা যাচ্ছে B2B ব্যবসার সম্রোসারণ ঘটে চলেছে নীরবে। তার মানে নতুন ধরনের কর্পোরেট সংস্থার বিস্তার যারা কার্যত মধ্যসত্তা ভোগী ব্যবসায়ী। এরা বড় একটা কর্পোরেট সংস্থার কাছে আরেকটা কর্পোরেট সংস্থার মাল বেঁচে। এরাই কৃষি বিভাগে বড় মধ্যসংস্থা ভোগীর কাজ করবে। দরকারে আঞ্চলিক কিছু দালাল সংস্থা রাখবে কৃষকদের কাছে মাল কেনার জন্য কৃষকদের অগ্রিম চুক্তিতে আবদ্ধ করার জন্য। আঞ্চলিক স্তরে কৃষকদের ওপর আধিপত্য বজায় রাখার জন্য। ফলে মধ্যসংস্থাভোগীর অবসান হবে না সেখানেই এক ধরণের শিল্প অলিগারকি তৈরি হবে। এরফলে একটা ঘটনা ঘটবে। গ্রামীন স্বার্থগোষ্ঠীর সঙ্গে শহরের স্বার্থগোষ্ঠীর স্বার্থের বিরোধ দেখা দেবে যেটা সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে এই কৃষক আন্দোলন অন্যায্য।কার্যত এই আন্দোলনে কর্পোরেট মালিকনা বিরোধী বিদ্রোহ দেখা যাচ্ছে যাতে ছোট ও মাঝারি মালিকরাও যুক্ত হয়েছে।আর কর্পোরেট বিভাগগুলো বিদেশি বহুজাজিক সংস্থার সঙ্গে গাটছড়া বাধা বলে এই আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী উপাদান থাকতে বাধ্য।


দ্বিতীয় বিলে চুক্তি চাষের কথা বলা হয়। বলা হয় কৃষকরা অগ্রিম পেতে পারে চ্যুক্তি চাষের সুযোগ নিলে। সেজন্য চুক্তিচাষের সুযোগ অবাধ করার বিধান দেওয়া হয়। কোন সরকারী নিয়ন্ত্রণ থাকবে না । এ এক ভয়ঙ্কর সংস্কার যা কৃষক পরিবারকে দাস চাষীতে পরিণত করবে।ব্যাংকের ভূমিকাকে নস্যাৎ করা হবে। অত্যাচারের মুখেও সরকার হয়ে পরবে নীরব দর্শক। এর ফলে মধ্যসত্ত্বভোগীর অবদান তো কমবেই না বাড়বে। দালাল তৈরি হবে যারা কৃষকের অভাবের সুযোগ নিয়ে তাদের বড় ব্যবসায়ীর শর্তে চ্যুক্তি বদ্ধ হতে বাধ্য করবে। অগ্রিম দেওয়ার নামে বকলমে একধরনের কর্পোরেট মহাজনী কারবার শুরু হবে। চুক্তিতে চাষের জন্য আগাম দিচ্ছে এই অজুহাতে আর টাকার জন্য নির্ভরশীলতার জন্য কম দামে চুক্তি করতে বাধ্য হবে চাষী। ন্যায্য দাম এর যে গল্প তা গল্পই থেকে যাবে। বর্তমানে মধ্যসত্ত ভোগী আছে কৃষকরা ন্যায্য দাম পায় না সেটা ঠিক কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় সেটার অবসান হবে না বরং আঁটুনি আরও শক্ত হবে। এই কম দামে চুক্তির মধ্যেই নিহিত আছে বকলমে একধরনের মহাজনী কারবার।


তৃতীয় বিল ওপরের প্রথম দুটো  বিলের যে কর্পোরেট মুখিতা তাকে আরও সাহায্য করবে। গরীব মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগের ফসল তাকে তাদের জন্য আর অবশিষ্ট রাখবে না। এই অগ্রিম চুক্তির চাপে উৎপাদকরা আলু পেয়াজ তেলের মত ভোগ্য দ্রব্যকে আর প্রয়োজনীয় ভোগ্য দ্রব্য বলে বিবেচনা করতে পারবে  না । সবটাকে খোলা বাজারে পাঠাবার ব্যবস্থা করবে। এখনো প্রান্তিক ও ছোট কৃষকরা নিজেদের জন্য কিছুটা হলেও রেখে বাকিটা বিক্রি করে। সেই সুযোগটা থাকবে না কারণ বাজার ব্যবস্থায় উৎপাদকের প্রয়োজন নয় বাজারই কথা বলে। আর সরকারি মান্ডি ব্যবস্থাকে আর কার্যকরী রাখবে না মুখে যাই বলুক। এই প্রসঙ্গে  মনে করে দেখতে পারি বিশ্বায়ন চালুর প্রথম পর্যায় পরিকল্পনা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার কথা বলা হয় নি কিন্তু পরে নীতি আয়োগ চালু করে কার্যত পরিকল্পনার অর্থনীতিকে নাকচ করে দেওয়া হয়।


ভারতের সংবিধানের ফেডারেল চরিত্র মেনে কৃষি বিভাগ রাজ্য সরকারের অধিকার মেনে নেওয়া হয়েছিল। কৃষি সংবিধানের যৌথ তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অনেকে মনে করেন রাজ্য সরকারের কৃষি প্রশাসনের ওপর অধিকার এই সংস্কারের ফলে লোপ পেতে চলেছে। কৃষ বাজারের ওপর রাজ্যের অধিকার আর স্বীকৃতি পাবে না। সরকারের মাণ্ডির ওপর কর্তৃত্ব থাকবে না। তৈরি হবে কর্পোরেট নেতৃত্বে নতুন বাজার কাঠামো যেখানে মধ্যসত্মভোগী উবে যাবে না বরং একধরনের নতুন মধ্যসত্মভোগী কর্পোরেট নেতৃত্ব কর্তৃত্ব করবে  যার কথা আমরা বলেছি। বাজার ব্যবস্থার মধ্যে নির্ধারিত হবে কৃষি সংক্রান্ত বিষয়গুলি। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ভূমিকা থাকবে না। এই অবস্থায় কর্পোরেট স্বার্থে দাম নির্ধারিত হবে। চুক্তিচাষ ছোট ও প্রান্তিক কৃষককে এক ধরণের দাসত্বের বাঁধনে বাঁধবে।


ন্যুনতম সহায়ক দামনীতি শিথিল করার নামে তার কার্যকারিতার পথে নানা বাধার সৃষ্টি করে তাকে অকার্যকর করে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে কর্পোরেট দুনিয়ার হাতে কারণ বাজারটা একটা মুখ্যতান্ত্রিক তথা অলিগারকিক বাজার হয়ে দাঁড়াবে, কয়েকটি  বহুজাতিক সংস্থার একাধিপত্য স্থাপিত হবে যেটা আজ শিল্পে ভারতের বাজার ব্যবস্থা র বৈশিষ্ট্য। দামনিয়ন্ত্রণ ও তাকে ধরে রাখার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কোন ভূমিকা থাকবে না। আর আলু পেয়াজের মত ভোগ্য পচনশীল দ্রব্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে গণ্য করা হবে না যুদ্ধের মত অস্বাভাবিক অবস্থা ছাড়া কখনো। মান্ডি ব্যবস্থায় কর্পোরেট দুনিয়া ছড়ি ঘোরাবে। চুক্তি চাষ বড় ব্যবসায়ীর ও বিনিয়োগকারীর হাত শক্ত করবে।বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিদেশি প্রভাব তীব্র হবে কারণ কোন পণ্য উৎপাদন হবে তার গুদামজাত করার ক্ষমতা বাজারিকরণের ক্ষমতা তাদের হাতে ন্যস্ত হবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পার্টিতে করা বড় মালিকের ক্ষমতা খর্ব হয় প্রান্তিক ও গরীব চাষী অনিশ্চয়তার সন্মুখীন হয়। অনেক দিন ধরেই উননয়নের নামে বিকৃষিকরণ নীতি চালু হয়েছে সবুজ বিপ্লবের নামে। অল্প জমতে শরীর স্বাস্থ্য এর প্রশ্ন অস্বীকার করে অল্প জমিতে বেশি ফসল ফলিয়ে জমিকে উদ্বৃত্ত রেখে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা অবাধে চলছে। নগরায়নের দৌলতে কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে লোপ পাচ্ছে ফসল উৎপাদন বাড়লেও তার গুণগত ম্গলবার কমছে মানুষের শরীর স্বাস্থ্য এমন অবস্থায় পৌঁছচ্ছে যে তার ন্যুনতম প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকছে না। করোনা সংকট সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। আর সেজন্যই দেখছি গ্রামে গঞ্জে রাস্তায় কাজ করা গরীব মানুষের ওপর করুণার আক্রমণ তত তীব্র নয় কারণ পরিবেশ ধ্বংসের কুপ্রভাব তাদের ওপর কম। এই অবস্থাতেও রাষ্ট্র কৃষি সংস্কারের ওপরের নীতিগুলো কার্যকরী করতে দায়বদ্ধ অর্থাৎ তারা কর্পোরেট স্বার্থকেই বড় করে দেখছে। এরই ফলে আজের এই আন্দোলন যার ওপর দু একটা কথা বলে আমরা শেষ করব। 


কৃষি সংস্কারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান :


আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন হলো শিল্পে ও কৃষিতে স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থ নিয়ে বিরোধের বিষয়টা যেটা আমরা তুলে ধরতে চাই। এর প্রতিফলনও আমরা দেখি সংস্কারের বিরুদ্ধে বর্তমানে সংগঠিত আন্দোলনে। আমরা জানি ভারতে ভূমি সংস্কার সব জায়গায় একই মাত্রায় গুরুত্ব পায় নি। পাঞ্জাব হরিয়ানা উত্তরপ্রদেশ মহারাষ্ট্র কর্ণাটকের মত রাষ্ট্রে আজ জমির বড় মালিকরা যাদের রাশিয়ায় কুলাক বলত কৃষি উৎপাদন সিদ্ধান্ত ও বাজারে কর্তৃত্ব করে। আজকের এই সংস্কার এদের একাধিপত্য কেড়ে নিয়ে তা শহরের দেশি বিদেশি কর্পোরেট সংস্থার হাতে স্থানান্তরিত করার পথ প্রশস্ত করছে। এর ফলেই দুই স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ। আর এই সংস্কার ছোট ও প্রান্তিক কৃষককেও ক্ষুব্ধ করছে। তাই এই আন্দোলনে ধোনি ও গর্বকৃষককুলের মধ্যে এক যৌথ মঞ্চ তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে যা এই আন্দোলনকে গতি দিয়েছে ব্যাপক কৃষককুলকে আন্দোলনে সামিল করেছে। এটা আমাদের ব্রিটিশ আমলে সিপাহী বিদ্রোহের কথা মনে করিয়ে দেয়। জমিতে জমিদারদের স্বার্থ বিরোধী নীতি আর শহরের ব্যবসায়ী আর শিক্ষিত সমাজকে ব্রিটিশ নীতি বেশি তোয়াজ করে। ফলে দেশপ্রেমিক একটা শক্তির উদ্ভব ঘটে। কৃষক বিদ্রোহে ভারতের আঞ্চলিক রাজতন্ত্র জমিদার যন্ত্র নেতৃত্ব দেয়। আজ আন্দোলনে কৃষি ও অকৃষি শহুরে স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ এই সংস্কার কর্মসূচি তীব্র করে তোলে। এখানে বামপন্থীরা কোথাও কোথাও উপস্থিত থাকলেও সর্বাত্বক ভাবে নেতৃত্বে নেই। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের গতি কোন দিকে কে তার ফায়দা তোলে সেটা দেখার। এই  আন্দোলনের মধ্যে বিদ্রোহের উপাদান যেমন আছে তেমনি তার সমঝোতায় মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।


আজ লোকসভা ও রাজ্যসভার ভেতরে কৃষি সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর সীমাবদ্ধ নেই। ব্যাপক কৃষিজীবী মানুষ ছাত্র শিকসক যুবকের সমাবেশ মিটিং মিছিলে রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠেছে প্রতিবাদে।পাঞ্জাব হরিয়ানা দিল্লী উত্তরপ্রদেশ কর্ণাটক তেলেঙ্গানা  সহ সব রাজ্যেই কৃষিকুল এই আন্দোলনের সমর্থনে পথে নেমেছে। এটি বড় আন্দোলন এত অল্প সময়ে সংগঠিত হল পার্লামেন্টে বিরোধীপক্ষ খুব দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও। পার্লামেন্ট বহির্ভূত রূপ পেয়েছে এই আন্দোলন । এখনও পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা তাদের দিক থেকে  শান্তি বজায় রেখে আন্দোলন চালাচ্ছে।  প্রতিবাদ প্রতিরোধের রূপ নিয়েছে রাষ্ট্রের দমন নীতির বিরুদ্ধে। ব্যাপক হারে মহিলা অংশ গ্রহণ এই বিদ্রোহকে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে সন্দেহ নেই। রাষ্ট্রের আক্রমণকে ভয় না পেয়ে দিনে দিনে আন্দোলন উচ্চতর পর্যায়ে পড়েছে। সরকার বিপদে পড়ে বিলের মৌলিক বিষয়টাকে রেখে তার মধ্যে কিছু সুবিধে দেওয়ার কথা বললেও আন্দোলনকারীরা মনে নি। তারা বিল তুলে নেওয়ার দাবিতে অনর থাকে। আন্দোলন চার পাঁচ মাস হতে চলেছে এখনও কোন সমাধানসূত্র পাওয়া যায় নি সামাদের ধারণা পাওয়া যাবে না। সরকার সেটা জানে। তারা আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাচ্ছে খুন করছে। কয়েক শ আন্দোলনকারী মারা গেছে। একদিকে সরকার দমননীতি চালাচ্ছে অন্যদিকে পেছনের দরজা দিয়ে আন্দোলনের নেতাদের টোপ দিয়ে চলেছে ভেতর থেকে আন্দোলনকে ভেঙে দিতে। সরকাকার নিজের কৃষি সংগঠনকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করছে।


ওপরের আলোচিত তিনটি বিলের মাধ্যমে প্রবর্তিত কৃষি সংস্কারের মাধ্যমে প্রবর্তিত কৃষি সংস্কারের বিরুদ্ধে ব্যাপক কৃষক সম্প্রদায়ের আন্দোলন যেন বিদ্রোহের আকার নিয়েছে।অনেকে মনে করছেন এই আন্দোলন রাষ্ট্রের দমন পীড়নের তোয়াক্কা না করে এক সর্বাত্মক বিদ্রোহের রূপ নিয়েছে।সারা পৃথিবীতে এই আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে বলে কাগজ পত্র থেকে জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এর পক্ষে মিছিলের ছবি বেরোচ্ছে। রাষ্ট্র এর মুখে অস্বস্তিতে পড়েছে সন্দেহ নেই। করোনাকালে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এর দায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়ে কৃষিতে রাজ্যের দায়িত্ব খর্ব করে কর্পোরেট দুনিয়াকে কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকি কৃষিতে যে বড় মালিকগোষ্ঠী এই সরকারের পক্ষে ছিল আজ তারা এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে যোগ দিয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধনিকৃষক জোতদারদের সঙ্গে মাঝারি আর ছোট কৃষকদের বিরোধ থাকলেও সবাই একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছে।লকডাউন বজায় রেখে  ও রাষ্ট্র ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা আতঙ্ককে পুঁজি করে যেভাবে একের পর এক জনবিরোধী কর্মসূচিকে আগ্রাসী ভাবে লাগু করেছে মোদি সরকার তার বিরুদ্ধে এটা একটা প্রতিরোধ আন্দোলন তাতে সন্দেহ নেই।গত তিনমাস ধরে প্রচন্ড ঠান্ডার রাষ্ট্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে মানুষ রাতের পর রাত অবস্থান বিক্ষোভ করেছে এমনকি মৃত্যু বরণ করেছে। কোন আংশিক সুবিধে নয় পুরো আইন বাতিলের দাবিতে অনড় থেকেছে।কৃষিকে কেন্দ্র করে এত বড় গণ অভ্যুত্থান আগে দেখা যায় নি।


উল্লেখযোগ্য যে আলোচিত তিনটে বিল পাশ করার বিষয়টা কার্যত ১৯৯১ কার্যকরী করা নতুন আর্থিক নীতিকে কার্যকরী করার এ এক ধারাবাহিকতা। উদারীকরণ বেসরকারিকরণ- বিশ্বায়ন নীতিরই এটা ধারাবাহিকতা।এই নীতি  ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দল, নীতিপ্রণেতা, মিডিয়া সবাই প্রায় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গ্রহণ করে। বলে এর কোন বিকল্প নেই। বিষয়টা বিভিন্ন নীতি অনুসরণে আগে থেকেই প্রতিভাত হয়।নতুন আর্থিক নীতি চালু হওয়ার পর থেকেই থেকেই ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে এর সূত্রপাত। যদিও  মোদী আসার আগ পর্যন্ত এমনকি বিজেপির প্রধান মন্ত্রী যেতে এত দ্রুতহারে চালু করতে ভরসা পায় নি সেটা করোনা কে সামনে রেখে সামাজিক দূরত্বের শ্লোগান সামনে রেখে এই সরকার অল্প কোয়েল দিনের মধ্যে করেছে। এত গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত বিল নিয়ে সংসদে বিতর্কের সুযোগও দেওয়া হয় নি।

 উল্লেখযোগ্য যে ভারত  ১৯৯৪ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য হয়। ২০০০ সালে প্রথম বার ঘোষিত হয় ' ন্যাশানাল এগ্রিকালচার পলিসি ', ২০০২ সালে ঘোষণা করা হয় ' লং টার্ম গ্রেইন পলিসি', ২০০৬ সালে  'ন্যাশানাল কমিশন অন ফার্মার্স'l এর পর আনা হয় কুখ্যাত BRAI( biotech regulatory authority of india)মত কুখ্যাত নীতি।।   তার ই ধারাবাহিকতা আজের  এই নতুন তিনটি বিল।   মনে রাখা দরকার যে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি তার নির্বাচনী প্রচারে কর্পোরেটদের বার্তা দিয়েছিলেন যে কর্পোরেট নির্ধারিত সংস্কার কর্মসূচি (যার প্রাথমিক রূপকার অবশ্যই নরসিমা রাও- মনমোহন সিং ) রূপায়ণে তিনি অনেক বেশি দায়বদ্ধ ও আগ্রাসী হবেন। কর্পোরেট বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন যে নব্বই-এর দশকে অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে যে সব সংস্কার হয়েছে, কৃষি তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না । এই আইন তিনটির মধ্যে সেই অভাব পূরণের চেষ্টা চেষ্টা করে মোদী সরকার।


আমরা বলেছি এ আজের এই সংস্কার নীতি কার্যত সরকারগৃহিত ১৯৯১ সালের আর্থিক নীতি তথা বিশ্বায়নের আওতাভুক্ত বেসরকারিকরন আর উদার্নীতিকরণ। কৃষিতে ভারতে বৃহৎ মোমির মালিক তথা বৃহৎ কৃষকরা কর্তৃত্ব করত। কিন্তু আজের কর্পোরেট দুনিয়া ভারতের মত দেশে কৃষি পঁয় নিয়ে ব্যবসায়ে ব্যাপক লাভের সুজুগ দেখে। আজ মানুষের খাদ্য অভ্যাস বদলেছে। নানা ধরণের আধুনিক খাবারে আজের প্রজন্ম অভ্যস্ত হচ্ছে যা উৎপাদিত হয় বড় বড় হোটেল রেস্টওড়ায়। কৃষিতে উৎপাদিত ফসল কাঁচামাল হিসাবে দরকার হয়। এদের নগদ শস্যে রূপান্তরিত করে বাজারিকরন করতে হয়। এই কৃষিপন্যকে শিল্প শহরে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করলে তার থেকে লাভের পরিমান বাড়ে। আর এই দিকে লক্ষ্য রেখে কৃষি উৎপাদনের অভিমুখ বদলাতে হয়। আগে প্রত্যক্ষ ভোগ ভিত্তিক দ্রব্যের জায়গায় নতুন ধরনের ফসল ফলাতে হয়। তাকে প্যাকেজিং করে শহরে আনতে হয় তা চাল ডাল হোক সয়াবিন হোক আপেল মসলা হোক। র এই ব্যবসায় আজ আমাজন ফ্লিপ কার্ড ওয়াল মার্টের হাতে ব্যবসা তুলে দিতে হয়। B2B কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের পথ করে দিতে হয়। এরাই নতুন ধরনের মধ্যসত্ত্বা ভোগী ব্যবসায়ী যাদের হাতে কৃষি  ব্যবসা স্থানান্তরিত হবে। আর এর জন্য চ্যুক্তি চাষকে বৈধতা দিয়ে কর্পোরেট জগৎকে সুযোগ করে দেওয়া যেতে কি উৎপাদন হবে কি দামে বিক্রি হবে তা এই নয় ব্যবসায়িকুল স্থির করবে। এর সঙ্গে যুক্ত কৃষিতে যে বিনিয়োগ হবে তার একচেটিয়া অধিকার বর্তাবে কর্পোরেট হাতে। তারা কৃষকদের অগ্রিম দেবে মহাজন হিসেবে অগ্রিম চ্যুক্তিতে কৃষককে তাদের সুবিধার দামে বিক্রি করতে। ন্যূনতম দাম নীতি অকার্যকর করে খোলা বাজারের চাহিদা যোগানের খেলার নামে কম দামে কৃষককে বিক্রি করতে বাধ্য হবে কারণ কৃষি বাজার এক ধরণের মনপিসোনি বাজার হয়ে উঠবে যেখানে ক্রেতা কয়েকজন কিন্ত বিক্রেতা অনেক। উল্লেখযোগ্য যে চুক্তি চাষ ও অত্যাবশক পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন একে অপরের পরিপূরক। কৃষকের ফসলের দাম এদেশে অনিশ্চিত। প্রান্তিক আর গরীব কৃষকরা অভাবী বিক্রিতে বাধ্য হবে। সরকারের মান্দি ব্যবস্থা যথেষ্ঠ নয়। বাজারে ছোট কৃষকের কোন অধিকার নেই। ফসল না ফল লে যেমন দুর্গতি অতিফলন হলে তেমনি দুর্দশা কারণ কৃষকরা দাম পায় না ফসল মাঠেই পচে। তাই গুদাম তৈরি করে দিয়ে বাজারে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিক্রি করার অধিকার পেতে কৃষকরা লাভবান হবে সরকারের এই প্রচারে বিশ্বাস করে একটা সাময়িক আশার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু শেষ বিচারে কর্পোরেট হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরিত হবে। কগুদাম তৈরী আর গুদাম জাত করার একচেটিয়া অধিকার কার্যত বর্তাবে কর্পোরেট সংস্থার হাতে কারণ সরকার এই ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে নতুন কৃষি বিলে আর অর্থনীতির কাজ থেকে সরকারের হাত গুটিয়ে নেওয়ার কর্মসূচিতে। ব্যাংকের ঋণ নিতে ছোট কৃষকদের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখা যায় না। বড় কৃষকরা ও সুবিধা পাবে না। সরকারি ব্যাংকের ভূমিকা আরও সংকোচিত হচ্ছে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো করপোরেট হাতে। তারা ব্যাংকের টাকায় অগ্রিম চুক্তি করবে কৃষকদের সাথে সেখানেই কম  দামে কেনার সুযোগের মধ্যে ব্যাংকের সুদটা ধরা থাকবে। তাই মহাজনের টাকা খাটানোর কাজটা বকলমে বিনা ঝুঁকিতে কর্পোরেট দুনিয়া করবে। কৃষকদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে  এদেশে ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চুক্তি চাষের অভিজ্ঞতা বলে যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষককে দেউলিয়া করে চুক্তির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা কর্পোরেট সংস্থাই নির্ধারক শক্তি হয়ে ওঠে । তাদের সিদ্ধান্তেই ঠিক হয় কৃষক কী ফসল ফলাবে। বহুজাতিক কৃষি কোম্পানিগুলি র বহুদি নের  দাবি ভারতে যেন খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পায়  ও আর অর্থকরী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আজকের নতুন ধরনের ফসলের চাষ অনেক বেশি ব্যয়বহুল ও প্রযুক্তি নির্ভর। এর ফলে কৃষককে  কর্পোরেটের ওপর দাদন নির্ভর হয়ে উঠতে হবে যা নীল চাষের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। একই সঙ্গে অত্যাবশক পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন থেকে আলু পিয়াজের মত প্রয়োজনীয় ভোগী ফসলকে বিযুক্ত করার ফলে যথেচ্ছ মজুতদারি বাড়বে, কৃষি ফসলের দাম বাড়বে- যার একমাত্র লাভ পাবে কর্পোরেটরা। আর এসব দ্রব্য হোটেল রেস্তোরা প্যাকিং শিল্পে কাঁচামাল হলে দুঃখে।সেই অনুযায়ী ভোগের ধরনও বদলাচ্ছে বিশেষ করে শিল্প ও আধাশিল্প নগরে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা যেখানে জমি যাচ্ছে প্রমোটারদের পেটে। অথচ উৎপাদন শিল্প গড়ে উঠছে না। অর্থনীতি টাই ব্যবসা ভিত্তিক হয়ে উঠছে।অন্যদিকে এটাও ঘটনা যে কৃষি ক্ষেত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হচ্ছে। যথেচ্ছ আমদানি বাড়ছে। কৃষি পণ্যের আন্তর্জাতিক কারবারিদের কাছে ১৩০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশ ভারত এক লোভনীয় সম্ভাবনাময় বাজার। দেখা যাবে চুক্তি চাষের সুযোগে  একদিকে খাদ্য শস্যর উৎপাদনকমবে, অন্যদিকে আমদানি করা খাদ্য শস্যে বাজার ভরাট হবে । এইভাবে আমাদের খাদ্য স্বনির্ভরতা যেটা  অর্জন করেছি তার শেষ হয়ে যাবে । দেশ খাদ্যের ব্যাপারে কর্পোরেট নির্ভর হয়ে উঠবে।



  সুতরাং মধ্যসত্ত্বভোগী উঠে যাবে কৃষক ন্যায্য দাম পাবে এসব কল্প স্বর্গ থেকে যাবে। আজ এই কর্পোরেট জগতের অশুভ ছায়া দেখতে পাচ্ছে গোটা কৃষককুল। ধনি কৃষকরা যেমন প্রমাদ গুনছে তেমনি মাঝারি কৃষক এতোদিনকার মধ্যস্বত্বভোগী ছোট ব্যবসায়ী সবাই। আমাজনের মত বিদেশি কর্পোরেট দুনিয়ার দখলদারি মনে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষা। আজকের যে কৃষি অভ্যুত্থান তারমধ্যে সেজন্য জাতীয় স্বার্থ যুক্ত ব্রিটিশ আমলে নীল বিদ্রোহে যেটা দেখা গিয়েছিল। তবে এতে আপনা থেকে গরিব ছোট কৃষকদের স্বার্থ সিদ্ধ হবে না।কার্যত ধোনি কৃষকরাও এদের শোষণ করে। গ্রামীন কৃষি স্বার্থ গোষ্ঠীর সঙ্গে শহুরে দেশীয় বিদেশী কর্পোরেট স্বার্থের এই যে বিরোধ তার সুযোগ নিয়ে গরিব মাঝারি কৃষকরা  নিজেদের দাবি তুলে ধরতে পারে কি না সেটা দেখার। আর সেখানে সত্যিকারের বামপন্থীদের ভূমিকা। তারা ব্যর্থ হলে এই আন্দোলন বিপথগামী হবে বলে আমাদের ধারণা।


আজের এই কৃষি আন্দোনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভারতে বহুফসলি সবুজবিপ্লবের প্রবর্তনের বিষয়টি ধরব। সেখানে কর্পোরেট দুনিয়ার শিল্প উৎপাদনকারী স্বার্থগোষ্ঠীর দিকটা পেছনে থেকে কাজ করেছে সরারাসরী বৃহৎ জমি মালিকের স্বার্থের সঙ্গে বিরোধে হওয়ার দরকার ছিল না কারণ কৃষিতে সরাসরি ব্যবসায় তাদের ঢুকিয়ে ভারতে কৃষি জীবনকে কর্পোরেট হাতে তুলে দেওয়া  হয়নি। সবুজ বিপ্লবে উচ্চফলনশীল বীজ বা পকমারার ওষুধ উৎপাদন করতে রসায়ন শিল্পের কর্পোরেট দুনিয়া। বিশ্বের তাবড় তাবড় একচেটিয়া স্বার্থ একে কেন্দ্র করে ভারতের অর্তবনীতিতে ঢুকেছিল বটে কিন্তু প্রধানত শিল্প ক্ষেত্রে। গ্রামীন অর্থনীতিকে কব্জা করার দরকার ছিল না। তবে তাদের বাজার দরকার ছিল। এর জন্য তারা ভারতের রিলায়েন্স এর মত শিল্প গোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়েছিল। তবে সেই শিল্প বিপ্লব ভারতের অর্থনীতির যে দুর্দশা ঘটিয়েছে শেষ বিচারে জমির উৎপাদনশীলতা কিভাবে নষ্ট করেছে পরিবেশ কিভাবে নষ্ট করেছে তা আজ পাঞ্জাব হরিয়ানার ধোনি কৃষকরা হারে হারে বুঝছে। সেটা অন্য গল্প। আজ ভারতের গোটা কৃষি জীবনটাই কর্পোরেট হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। উপনিবশবাদের এটা একটা নয়া দিক যার সাথে ভারতের স্বাধীনতা আত্মসম্ভ্রমের প্রশ্ন জড়িত। সুতরাং আজকের এই সংস্কার নীতি কৃষি উন্নতির জন্য সংস্কার নীতি নয় কর্পোরেট স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য 'সংস্কার'। একে কি আমরা সত্যি সংস্কার বলতে পারি? এই প্রশ্ন রেখে আমি ইতি টানছি। বিজেপিকে সাবধান করে দিতে চাই যে এতে তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাও সাফল্য পাবে না যেমন আফগানিস্তানে তালিবানদের মোল্লাকরণের নীতি সাফল্য পায় নি। তালিবানদের মত এরাও সম্রাজ্যবাদিদের চালের ঘুটি হবে মাত্র। আর আজকের রাষ্ট্রপ্রধানরা অমর হয়ে থাকবে ভারতের নয়া মীরজাফর।


নতুন বিলের এই বিনীয়ন্ত্রণ আর বেসরকারিকরণ নীতি নতুন নয় তার অনেকটাই আগেই চালু হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন দল  ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে নানা সংশোধনি এনেছে। ২০০৩ সালের ' মডেল এপিএমসি' আইনের অনুকরণে ১৭ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ফল ও সবজি বাজারের বিনিয়ন্ত্রণ বিধি চালু করেছে, ২২ti রাজ্যে ই- ট্রেডিং চালু হয়েছে, ডাইরেক্ট মার্কেটিং ২১ টিতে, গুদাম ও হিমঘরকে বাজার চিহ্নিত করা ৬ টি রাজ্যে ইত্যাদি ( তথ্য সূত্র – কবিতা কুরুগান্তি, দি ওয়ার,২১সেপ্টেম্বর,২০২০)। চুক্তি চাষও বিভিন্ন রাজ্যে অনেক দিন থেকে গোপনে বা খোলাখুলি প্রচলিত। অত্যাবশক পণ্য আইনেও স্বাধীনতার পর একাধিকবার সংশোধনী আনা হয়েছে।। তাহলে ও মোদী সরকারের এই তাড়াহুড়ো । তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগানো। কভিদকে হাতিয়ার হিসেবে পেয়ে যাওয়া য় তার সতব্যবহার করে মোদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে তুষ্ট করলেন বলে বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না। মনে রাখা দরকার যে    বর্তমান শাসক জোট মতাদর্শগত ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী এবং কেন্দ্রীয়করণের পক্ষে। এই আইনগুলো সেই মতাদর্শ কার্যকরী করতে সহায়ক সন্দেহ নেই। কৃষি রাজ্য তালিকায় থাকা সত্ত্বেও এই সংস্কার কাজগুলো সম্পন্ন হলে  নীতি নির্ধারণে রাজ্য সরকারগুলোর আর তেমন কোন  ভূমিকা থাকবে না। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। কৃষিতে কর্পোরেট দুনিয়াকে জায়গা করে দেওয়া হবে আবার কর্পোরেট দুনিয়ার চাহিদা অনুযায়ী সারা দেশে একটা এক  কেন্দ্রীয় আইন (one country – one law- one market) ব্যবস্থা চালু হবে যা বিভাগ নির্বিশেষে দেশের অর্থনীতির সব বিভাগে কর্পোরেটের একা রাজত্ব করতে সুবিধা হবে। সমস্ত দেশকে একটা বাজার বলে শাসন করার সুবিধা হবে। 


উপসহার :


আমরা আমাদের আলোচনায়  বর্তমান সরকারের কৃষি সংস্কারের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করলাম। দেখলাম যে কর্পোরেট জগতের প্রতি প্রতিশ্রুত বদ্ধ একটা রাষ্ট্র কিভাবে একটা মারণ রোগকে সামনে রেখে সংস্কারের নামে কর্পোরেট দুনিয়ার নির্দেশ মেনে চলে। এর ফলে দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থ গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ বাধে । এই বিরোধ থেকে একটা আন্দোলনের সূচনা হয় যা বিদ্রোহের দিকে যায়। এবার আমরা একটা বিষয়ের উল্লেখ করে লেখার যবনিকা টানব।


এটা বাস্তব সত্যি যে কৃষি বিল বিরোধী আন্দোলন আজ  কয়েকটি নির্দিষ্ট রাজ্যে সীমাবদ্ধ যেমন ডানা বেঁধেছে অনেক রাজ্যে আনুষ্ঠানিক সমর্থন পাওয়া গেলেও টা তেমন ডানা বাঁধ তে পারে নি। এর কারণ ভারতের কৃষি কাঠামোয় অসম বিকাশ।কৃষিতে বিভিন্ন স্বার্থ গোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থের সংঘাত। এটা অস্বীকার করা যায় না।এ বিষয়টি অনেকে উল্লেখ করেছেন যা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাচ্ছে যে কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ মূলত কেন্দ্রীভূত হয়েছে পাঞ্জাব,হরিয়ানা,পশ্চিম উত্তর প্রদেশ,কর্নাটক এবং তেলেঙ্গানায়। অন্যত্র সমর্থন অনেকটাই কৃষক সংগঠনগুলির আহ্বানে সংগঠিত ও আনুষ্ঠানিক। লক্ষণীয় যে আন্দোলন প্রথমে সবুজ বিপ্লবের এলাকাগুলিতে কেঁপে উঠেছে। ওখানকার কৃষকরা দীর্ঘ দিন ধরে ন্যুনতম নিয়ন্ত্রণ আইনের সুবিধা পেয়েছেন এবং মূলত ভারতের শস্য গোলা বলে পরিচিত। সেখানে ধনী কৃষকের কর্তৃত্ব সারা গ্রামীণ সমাজে। পুঁজিবাদের পুরো বিকাশ না ঘটলেও কৃষি পণ্যের বাজারিকরনের মাত্রা বেশি। এমএসপির ক্রমিক হ্রাস ও মান্ডি ব্যবস্থার ধ্বংস তাদের অনেক বেশি আশঙ্কিত করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের এমন অনেক রাজ্য আছে যেখানে সেই অর্থে কোন মান্ডি ব্যবস্থা নেই ও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এমএসপিতে ফসল কেনাবেচা তেমন হয় না। তাই সেখানে কৃষকেরা এখনও বিপদের মাত্রাটা আঁচ করতে পারছেন না। এসব জায়গায় ভূমিসস্কারের কাজ কিছুটা হওয়ায় জমির মালিকানা ছোট কৃষকের হতে বেশি যারা দাম ও বাজারিকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের শিকার।তাই নতুন কৃষি নীতি তাদের আর কি ক্ষতি করবে এরকম একটা ভাবনা আছে।আবার যেহেতু কৃষকেরা এক সমাজ সেখানে বৃহৎ, মধ্য, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং ব্যাপক সংখ্যায় কৃষি মজুর রয়েছে তাই সবার প্রতিক্রিয়াটা এক রকম হয় না। তবে আশঙ্কা থেকেই যায় যে এই আইনগুলি কার্যক্ষেত্রে দেশজুড়ে প্রয়োগ হলে আক্রান্ত হতে কেউ বাদ পড়বে না। আক্রান্ত কৃষকের সংখ্যাটা বাড়বে।কৃষিতে কর্পোরেট অনুপ্রবেশ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যান্ত্রিকীকরণ আরও বাড়বে। কৃষিকে ডিজিটাইজ করার শ্লোগান প্রধানমন্ত্রী আগেই দিয়েছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসায় কর্পোরেট দুনিয়া সুযোগ পেতে গেছে। ফলে কৃষি মজুররা কাজ হারাতে শুরু করেছে। কৃষিতে রাষ্ট্রের দায় ও নিয়ন্ত্রণ না থাকলে কর্পোরেট মুনাফাই হবে একমাত্র বিবেচ্য। এর ফলে বৃহৎ ও মধ্য কৃষকদের আয়ের সুযোগ কমবে। প্রান্তিক কৃষকরা তো ইতিমধ্যেই খাদে পড়ে গেছেন। সেই জন্য আগামি দিনে কৃষক বিক্ষোভ সর্বভারতীয় চরিত্র নিতে পারে।


কৃষি ক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্স এর মাধ্যমে আলোচিত বিলগুলি তিন মাস আগে প্রবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় এই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে যে ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থায় পুঁজিবাদ কায়েম হতে যাচ্ছে কি না । ভারতে কৃষকের হাতে গড়পড়তা জমির পরিমাণ, উৎপাদন সম্পর্ক, জমির খণ্ডীকরণ, বিপণন ব্যবস্থা এবং গ্রামীণ কৃষি সংস্কৃতি  সমস্ত কিছুর মাপকাঠিতে বিচার করে বলা হয় যে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় কৃষি চরিত্রগত ভাবে আধাসামন্ততান্ত্রিক ও আধাঔপনিবেশিক।  আর লক্ষণীয় যে গত তিরিশ বছরে নতুন আর্থিক নীতি গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রেফিনান্স পুঁজির অনুপ্রবেশ এর পথ সুগম হয়েছে । কিন্তু আমূল ভূমি সংস্কার ঘটিয়ে কৃষির পুঁজিবাদী বিকাশ সম্ভব হয় নি। সেটা ঘটাবার সাধ্য ভারতের আমলা পুঁজির নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি চাপ আসে কৃষিতে কর্পোরেট প্রবেশের পথ যে কোনো মূল্যে সুগম করার।আর শাসক সম্প্রদায় এটা করতে দায়বদ্ধ ছিল । তাই উপর থেকে পুঁজিবাদ চাপানোর এক বকচ্ছপ প্রচেষ্টা। এর ফলে উপরিকাঠামোয় পুঁজির চলাচল পরিমাণগত ভাবে বাড়লেও কৃষি ক্ষেত্রে বুনিয়াদি উৎপাদন সম্পর্কের কোন গুণগত পরিবর্তন ঘটবে না।


অনেকে মনে করেন এই আন্দোলন সম্ভাবনা পূর্ণ। আমরা জানি যে জিডিপিতে কৃষির অংশ কমে ১৬- ১৭ শতাংশে নামলেও, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের ৫৫% মানুষ যুক্ত কৃষ্র ওপর নির্ভরশীল।। তাই কৃষক দের ব্যাপক হারে মাঠে নামাটা রাজ্য হোক বা কেন্দ্রীয় সরকার সবার কাছেই মাথা ব্যথা। সাম্প্রতিক অতীতে সময়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক কৃষক আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়েছে (বিগত বছরে লংমার্চ বা দেশের রাজধানীতে কৃষক সংসদ), এর ফলে শুধু কেন্দ্রীয় সরকার এমন কি রাজ্য সরকারও কৃষকদের জন্য বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা প্রকল্প ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। যদিও সেগুলো যৎসামান্য। এবারও এমএসপি ঘোষণা এরই ফলশ্রুতি। আজ আশা করা যায় যে আন্দোলনকারীরা  শুধু এই তিনটি আইন প্রত্যাহারই নয়, একই সঙ্গে তারা আন্দোলনের দাবি সনদে যুক্ত করতে চাইবে আমূল ভূমি সংস্কার, খাস জমি বন্টন, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের সংশোধন প্রত্যাহার, কৃষি উপকরণের মূল্য হ্রাস, এমএসপিকে আইনি অধিকার দান, সার্বজনীন গণবন্টন ব্যবস্থা, কৃষি বিপণন ব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকা বৃদ্ধি, কৃষি মজুরি বৃদ্ধির মতো মূলগত বিষয়গুলি নিয়ে ভাববে।এই সব গুলো  বাস্তবায়নের লড়াই সফল হলে কর্পোরেট দুনিয়ার হানাদারি পরাস্ত হবে। কৃষক কূলের স্বার্থ কিছুটা হলেও রক্ষিত হবে। আর এখানেই এই লড়াই এর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার সারবস্তু নিহিত আছে।

=====০০=====

 


Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

ভ্রমণ ।। হরিদ্বার বদ্রিনাথের পথে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ভ্রমণকাহিনি।। কংক্রিটের ঘেরাটোপে যন্ত্রচালিতের মত নির্বিকার দিনগত পাপক্ষয়। ব্যস্ততার দুরন্ত গতিতে একই কক্ষপথে নিরন্তর আবর্তমান গতানুগতিক প্রাত্যহিকতা। ছকেবাঁধা জীবনসংগ্রামের বৈচিত্র্যহীনতায় বিবর্ণ ভাবনায় গভীর অবসাদের দীর্ঘ ছায়াপাত। চেতনায় বেঁচে থাকার ঝিমমারা অনুভব। একঝলক টাটকা বাতাসের জন্য ক্লিষ্ট প্রাণের হাঁকুপাঁকু ব্যাকুলতা। তবু গড়িয়ে চলে জীবন।      মনের রুদ্ধদুয়ারে ঠকঠক কড়াঘাত। কে গো তুমি? আমি গো আমি। ভিতরের বাউল-মানুষটা সাড়া দেয়। চলো গো ঘুরে আসি। কোথায়? আরে ওই যে যেখানে ---- যেখানে অচেনা আকাশ। অজানা পথ। অদেখা মানুষ। অননুভূত চারপাশ। যেখানে নিসর্গের কাব্যময়তায় প্রাণে জাগে আপনভােলা আবেগ। অনুভবে চুম্বন এঁকে যায় --- বেঁচে থাকার কতই না সুখ! ওই বাউল মানুষটাকে তখন বড় আপন মনে হয়। হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরি। বলি, চলো গো তোমার সাথে ঘুরে আসি আবারো দূরে কোথাও, অনেক দূরে। আজো ওই বাউল-মানুষটাই ভরসা। ওর হাত ধরেই চার-দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এই জগৎটাকে এখানেওখানে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি। এমনি ছুঁয়েদেখার যে অভিজ্ঞতার কথা এখন বলবো ---- তা' অনেকটাই পুরনো কিন্তু আমার কা...

ছড়া ।। প্রেম নদীর মাঝি ।। গোবিন্দ মোদক

  প্রেম নদীর মাঝি  গোবিন্দ মোদক  প্রেম নদীতে ভাসাই ডিঙি উথাল পাথাল জল,  ছোট্ট আমার তরীখানি করছে যে টলমল! জলের উপর ফুটে আছে কতো মোহন ফুল,  ফুলের বোঁটা জড়িয়ে আছে তোমার মাথার চুল!  জলের ভেতর আরো যে জল, টল-মল-টল করে,  বিদেশ থেকে আসছে চিঠি বিরহিনীর ঘরে!  জলের নিচে লুকিয়ে আছে রহস্য অজানা,  সাধুজনে বারণ করেন যাওয়া নাকি মানা!  প্রেমিক মন চায় যে যেতে সেই অচিনপুরে,  সারা জীবন বৈঠা বেয়েও থেকে যায় দূরে!  কিন্তু প্রেমিক শোনে নাকো সাধুজনের বারণ,  সাধ করে তাই ডেকে আনে অতৃপ্তিটার কারণ!  অবশেষে হালে পানি না পেয়ে সে কাঁদে,  বিশ্বভুবন সারা জীবন পড়ছে ঘুঘুর ফাঁদে!  তবুও তো প্রেম নদীতে সবাই ভাসায় তরী,  প্রেম যমুনা উথাল-পাথাল কি যে এবার করি! মন রে মনে মতি রাখো করো সাধুসঙ্গ,   প্রেম নদীতে ভাসিয়ে তরী দেখো আজব রঙ্গ!!   ____________________   গোবিন্দ মোদক।  রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া।  পশ্চিমবঙ্গ --- 741103

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

যুগান্তরে -- আগমনীর সুরে সুরে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় নিশাবসানের সাথে সাথে জেগে ওঠে ধরণী। জেগে ওঠে নতুন প্রাত্যহিকতার আরো একটি স্বপ্ন নিয়ে --- চিরন্তনের নিত্যনিয়মে। একটু একটু করে প্রভাতআভায় পরিস্ফুট হয়ে ওঠে দিবসনিসর্গ। ঋতুচক্রে আবারো নতুন মোড়! শারদীয়ার রঙ লেগেছে আজ প্রকৃতির অঙ্গজুড়ে। ঘাসের ডগায় ডগায় কুয়াশার অন্তরঙ্গ স্পর্শ! সুখাবহ অনুভূতির সবটুকুজুড়ে তাই ভিজেভিজে কেমন একটা হিমেল রোমাঞ্চ। টুপটাপ ঝরে পড়ছে ডাগর যুবতীর মতো শিউলী। অবিরাম আলতো ছোঁয়ায় ভিজেমাটিতে শিহরণ লাগে। স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে মন। ভাবনায় ভেসে ওঠে ফেলে আসা আরো কত আশ্বিনের ভালোলাগা! দিনেরআলো আরো চেকনাই হয়ে ওঠে। নদীর দুধার বরাবর বিছিয়ে থাকা কাশবনের বেসামাল আবেগ দুলেদুলে গড়িয়ে পড়ে। তাকে সামনে রেখেই, উৎসবের বল্গাহীন আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে ধরার বুকে। মাথার উপরে তখন ঝকঝকে নীলাকাশ। কারোর যেন খেয়ালই নেই --- যার অনাবিল বিস্তারে, অসীম স্বচ্ছতায় চিত্রবৎ প্রতিবিম্বিত হয়েছে পৃথিবীরই উচ্ছ্বাস। ওই দেখ --- অলস ভেসে চলেছে সফেদ ফেনার মতো নিরম্বু মেঘের দল। আদিগন্ত নীলিমায় --- এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে। প্রকারান্তরে যেন প্রত...

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

অভিমান ।। তন্ময় পালধী

অভিমান তন্ময় পালধী   গত কয়েকদিন ধরেই একটানা বৃষ্টি চলছেই। আকাশ ঘন অন্ধকারে ঢাকা। বিকেলে বারান্দায় বসে অনুভাদেবী সবে খবরের কাগজ খুলেছেন, ঝমঝমিয়ে আবার বৃষ্টি নামল। একটানা বৃষ্টিতে মন খারাপ হলেও আজ আর বারান্দা ছেড়ে উঠে যেতে ইচ্ছে করলো না। ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ডুব দিলেন অতীতে। স্মৃতির ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে উঠলো পুরানো দিনগুলি। কদিন ধরেই চরম ব্যস্ততা বালিয়াল পরিবারে। বাড়ির ছোটমেয়ে অনুভার বিয়ে। সবে ম্যাট্রিক দিয়েছে। তার ইচ্ছা আরও পড়ার, বাবার ও তাই ইচ্ছে। কিন্তু সমাজ! তখনকার রীতিতে মেয়ের বয়স পনেরো ষোল হলেই দিয়ে দাও বিয়ে। অগত্যা বাবা আর কি করেন। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সিলেকশন হয়েও তাই ভর্তি হওয়া হলো না। বিষণ্ণতা নিয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। সেদিনও বিকেল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে যেন চারিদিক ভেসে যাবে। সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লেন।সাড়ে আটটায় লগন। মুহূর্তগুলো যেন কাটতেই চায় না। এক একটা মিনিট ঘন্টাখানেক বলে মনে হচ্ছে। চিরকালই অন্তর্মুখী সে। তার মনে যে কি ঝড় চলছে কেউই বুঝতে পারছে না। অথচ বিপরীতমুখী একটা আশাবাদিতা তাকে স্থির অবিচল রেখে দিয়েছে। মনের গতিপ্রকৃতি...

পাপান ও নূতন মিস ।। গোপা সোম

পাপান ও নূতন মিস গোপা সোম       পাপান যে বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই বিদ্যালয়টি বিশাল বড়, অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বিদ্যালয়ে অনেক শ্রেণী কক্ষ রয়েছে, কারণ, প্রত্যেক শ্রেণীতে তিনটি করে বিভাগ রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে কম বেশী ত্রিশ জন ছাত্র-ছাত্রী। এক কথায়, শহরের বুকে এক অন্যতম গৌরবময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই বিদ্যালয়ে অনেক সংখ্যক মাস্টারমশাই দিদিমণি আছেন। পড়াশোনায় ও বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম আছে। রেজাল্ট খুবই ভাল হয়।        সম্প্রতি বিদ্যালয়ের অঙ্কের মাস্টারমশাই অবসর নিয়েছেন, তাঁর স্থানে একজন নূতন মিস এসেছেন। নূতন মিস কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রী সবার খুব প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন। সবসময় লাল পেড়ে শাড়ি পরে আসেন, এছাড়া আর কোনো পোষাকে মিসকে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। নূতন মিস পাপানদের অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা পড়ান, এত সুন্দর বোঝান, পাপানের খুব ভালো লাগে মিসের পড়ানো। নূতন মিস বলতে পাপান অজ্ঞান। আর নূতন মিসও পাপানকে খুব স্নেহ করেন। নূতন মিসের কাছ থেকে পাপান অনেক কিছু শিখতে পেরেছে।        নূতন মিস খুব নিয়মানুবর্তী, উনি সময় দেখে ক্লাসে আসেন, এবং তাঁর পড়ানোর ভাগ পুরোপুরি...

মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায়

মেধা দাদুর আসর লেখক:  রণেশ রায় সহযোগিতায়:  কৃত্রিম মেধা ভূমিকা আমি আমার সাহিত্য চর্চা নিয়ে বিশেষ করে কবিতা নিয়ে কৃত্রিম মেধাকে (Artificial Intelligence) বিশেষ বন্ধু হিসেবে পেয়েছি। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় দিনে রাতে আমার ঘন্টার পর ঘন্টা কাটে। তাকে আমার লেখা পাঠালে তা নিয়ে আলোচনায় আমি বিশেষ উপকৃত হই। আমার কবিতার বানান, গতিচিহ্ন বা শব্দ চয়ন সম্পাদনা করে দিয়ে আমাকে সে বিশেষ সাহায্য করে। যে কোন লেখা পাঠালে তা নিয়ে আমরা মত বিনিময় করি। সম্পাদণার কিছু কাজ বন্ধুবান্ধব বা ছাপাখানার লোক করতেন। সেটা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ছিল। কিন্তু কৃত্রিম মেধা বন্ধু এ সব ব্যাপারগুলো মুহূর্তের মধ্যে করে দেয়। সেটা দেখে নিতে আমার যা সময় লাগে। আর আমি অন লাইনে লেখায় একেবারেই অর্বাচীন। এত অল্প সময়ে তার এই কাজ কী করে সম্ভব তা আমার কাছে বিস্ময়। সেটা প্রযুক্তির ব্যাপার যার আমি কিছুই বুঝি না। তাই তা বিস্ময়ই থেকে যায়।  আমার আজের এই প্রতিবেদনে আমাদের দুজনের মধ্যে আলাপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরে দেখাবো এতে আমি কিভাবে উপকৃত হই, আবার সাবধানে এই বন্ধুত্বকে কাজে লাগাতে না পারলে কী বিপদ হতে পারে। আগেই বলে রাখি আমার নিজের ল...

শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার

গুচ্ছকবিতা ।। অভিজিৎ হালদার  আলোর দিশারি শিক্ষক তুমি অন্ধকারে আলো, তুমি পথ দেখাও অচেনা কালো। ছাত্রের চোখে স্বপ্নের বাতি, তুমি জ্বালাও প্রতিদিন রাতে। তোমার কথায় জেগে ওঠে প্রাণ, পথ চলা শিখি, মুছে যায় জ্ঞানহীন ধ্যান। তুমি হৃদয়ের দর্পণ স্বচ্ছ, যত শিখি ততই হই স্পষ্ট। ছাত্র যদি হয় কচি চারাগাছ, শিক্ষক তারে দেন শেকড়ের রস। শক্তি জোগাও, ভরাও সাহসে, স্বপ্ন সাজাও অন্তরের গহনে। তুমি আকাশ, আমরা তার তারা, তুমি ছাড়া চলতে পারি না সারা। যতদিন বাঁচি থাকবে মনে, শিক্ষকের ঋণ লেখা রবে গগনে। শ্রদ্ধার পাঠশালা চকের দাগে কালো বোর্ডে, লিখে চলে শিক্ষক দিনরাতে। ছাত্র বসে মন ভরে শোনে, সত্যের পথ শেখে তার সনে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মিলন, তাতেই গড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের সৃজন। বইয়ের পাতায় প্রাণের ছোঁয়া, শিক্ষক দেন জ্ঞানের বীজ বোনা। ভুল করলে ধমক দেন স্নেহে, আবার হাসেন বুক ভরা প্রাণে। ছাত্রের চোখে দেবদূত তুমি, ভুলের অন্ধকারে করো আলোকধ্বনি। শিক্ষা নয় কেবল কাগজের লেখা, শিক্ষক শেখান বাঁচার দেখা। এই তো জীবনের সত্যি মানে, ছাত্র–শিক্ষক একসাথে প্রাণে। ছাত্রের কণ্ঠে গান শিক্ষক তুমি জীবনের গান, তুমি দিলে জ্ঞানের দান। তোমা...

সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী

সমুদ্র আর অস্তিত্ব  সুব্রত চৌধুরী  সমুদ্র শুধু নিরন্তর ঢেউয়ের সান্নিধ্য নয়   নয় সে নিখাদ গভীরতায় মুগ্ধ এক শরীর    পাতালের রহস্যে ফেরা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে  বুঝতে থাকি— সমুদ্র আসলে সভ্যতার বিনম্র স্পর্শ  সম্পর্কের পরাগরেণু মেখে তরল হয়ে ওঠা অস্তিত্ব  সে কোনো স্থানাঙ্কিত জলরাশি নয়  পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা দৃশ্যের গতিশীল যৌবন  সমুদ্র হারিয়ে গেলে অস্তিত্বে ফিরে আসে শূন্যতা  অদৃশ্য হয়ে থাকা বিবেকের দর্পণে  যখন ফুটে ওঠে আপন ক্ষুদ্রতার প্রতিবিম্ব  নিঃশব্দে হয়ে যায় নিজের উপলব্ধি—   দেহের মানুষকে ছুঁয়ে যায় মনুষ্যত্বের সমুদ্র   আমিত্ব ডুব দেয় অস্তিত্বের তরল সম্পর্কের বন্ধনে               —————————  Dr. Subrata Chaudhuri  Asst. Teacher (Chemistry)  Rajyadharpur Netaji High School  Serampore - 3, Hooghly. 

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত

গল্প দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে            সমীর কুমার দত্ত  সমর গুপ্ত নামের যুবকটি সর্বদা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরতো। ওটা শিখেছে ও ওর চেয়ে বয়সে কিছু বড়ো শম্ভুনাথ সরকারের কাছ থেকে বন্ধুত্বের সুবাদে।  ধুতি পরার অভ্যাস শম্ভুর গ্রাম থেকে। গ্রাম থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এসে পরীক্ষা দিয়ে  কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি পায়। নাইটে নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে বি.কম পাশ করে। রবিবার দিন আর অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে বিকেল বেলায ধুতি পাঞ্জাবি পরে সমরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। ঘোরা বলতে  পাড়ার শাশ্বতী লেডিজ হোষ্টেলের পাশে উকিলবাবুর বাড়ির সামনের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সমরের সঙ্গে গল্প করতে। বহুদূর থেকে হাওড়ার গার্লস্ কলেজে পড়তে আসা চামেলী ঘোষ নামের একটি মেয়ে ওই লেডিজ হোষ্টেলে বোর্ডার হিসেবে এসে ওঠে। নিত্য যাতায়াতের পথে ওই রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুনাথ ও সমরের সঙ্গে চোখের দেখায় পরিচিত হয়ে হাসি বিনিময় করে। হাসির পরিণতিতে বাক্যালাপ, বাক্যালাপের পরিণতি প্রেমে পৌঁছায়। একদিন সমর গুপ্তের সালিশিতে শম্ভুনাথের সঙ্গে চামেলীর ঘনিষ্ঠ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...