Skip to main content

বড় গল্প: সিদ্ধার্থ সিংহ


বোড়কি


না। বোড়কিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। ছলছল চোখে শিবকুমার এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল তার বউ। আর তার কান্না শুনে বইপত্র ফেলে পাশের ঘর থেকে ছুটে এসে মায়ের কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল তাদের বাকি দুই ছেলেমেয়ে— মেজকি আর ছোটকা।
কান্না জড়ানো গলাতেই শিবকুমারের বউ বলল, তা হলে ও বোধহয় আবার পালিয়েছে। যাও, থানায় যাও। একবার গিয়ে বলো...
এর আগেও চার-চার বার ও পালিয়েছে। প্রথম বার যখন ওকে খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন গ্রাম থেকে অনেক দূরে, কালিন্দী থানায় মিসিং ডায়েরি করার সময় পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, তেরো বছর বয়সেই পালিয়েছে! কার সঙ্গে?
শিবকুমার হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। সেটা দেখে ওই পুলিশটি অফিসারটি বলেছিল, ও তো আর দুধের বাচ্চা নয় যে, কোনও তান্ত্রিক তুলে নিয়ে গিয়ে আর সব বাচ্চাদের মতো ওকেও মায়ের সামনে বলি চড়িয়ে দিয়েছে...
হ্যাঁ, এখানে মাঝে মাঝেই বাচ্চা খোয়া যায়। এবং খুঁজে পাওয়া না গেলে লোকেরা ধরেই নেয়, তাকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে বলি দিয়ে দিয়েছে। শোনা যায়, বহু বছর আগে ইংরেজ আমলে ছোট, মেজ, বড়, আরও বড় কর্তাকে বারবার অনুরোধ-উপরোধ করা সত্ত্বেও যখন হল না, তখন আশপাশের গ্রামের লোকেরা সবাই এককাট্টা হয়ে বড় রাস্তায় যাওয়ার একমাত্র বাধা, শীর্ণ নদীটার উপরে কাঠের পোল তৈরি করেছিল, সেটা যাতে ভেঙে না পড়ে এবং টেকসই হয়, সে জন্য নাকি ব্রিজ তৈরির আগেই ভাল দিনক্ষণ দেখে খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। সেই খুঁটি পোঁতাকে ঘিরে পুজোআচ্চা, যাগযজ্ঞও হয়েছিল। এবং পূজারির বিধান অনুযায়ীই ধরিত্রী মাকে খুশি করার জন্য নাকি বিভিন্ন জায়গা থেকে তেরোটি বাচ্চাকে চুরি করে এনে রাতের অন্ধকারে বলি দেওয়া হয়েছিল। এখানকার লোকেদের বিশ্বাস, সেই জন্যই নাকি ওই ব্রিজটা এখনও এত শক্তপোক্ত।
তাই আজও অনেকেই বাড়ি তৈরি করার আগে ভিত পুজোর সময় যেমন পুজো করে, সেটা তো করেই, রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর আড়ালে নাকি নরবলিও দেয়। তাই মাঝে মাঝেই হঠাৎ হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় এক-একটা বাচ্চা। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আশপাশের লোকেরা তাই সদা সতর্ক। কোনও বাচ্চাকেই একা ছাড়ে না। ছাড়লেও চোখে চোখে রাখে। কারণ কোনও বাচ্চাকে চোখের আড়ালে ছাড়াই মানেই নাকি ঘোরতর বিপদ ঘনিয়ে আসা। কিন্তু সে সব বাচ্চাদের বয়স অনেক কম হয়। চার-পাঁচ কিংবা ছয়। বারো-তেরো বছরের বাচ্চাদের সাধারণত কেউ বলি দেওয়ার জন্য নেয় না। ফলে ওই পুলিশ অফিসারটি ভ্রু কুঁচকে শিবকুমারকে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনার কি মনে হয়? ও কার সঙ্গে পালিয়েছে?
শিবকুমার বলেছিল, তা তো জানি না।
— তা হলে যান। গিয়ে খোঁজ করুন আর কে পালিয়েছে...
শিবকুমার বলেছিল, আমি ওর সব ক'টা বন্ধুর বাড়িতেই গিয়েছিলাম। দেখলাম সবাই আছে। শুধু ও-ই নেই। সবাইকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু কেউই বলতে পারল না, ও কোথায় গেছে। ও নাকি কাউকেই কিছু বলে যায়নি।
— তা আবার হয় নাকি? কাউকে কিচ্ছু বলে যায়নি? এ সব ব্যাপারে জানবেন বন্ধুরাই সাঁটে থাকে। আচ্ছা বলুন তো, ও কার কার সঙ্গে মিশত?
— ও মিশত... ওই তো... বিন্দি, চান্দি, বুড়িয়া... এই তিন জনই তো ওর বন্ধু।
— আরে, আমি তা বলছি না। বলছি, ও কোন ছেলের সঙ্গে মিশত?
— ছেলে! শিবকুমার একেবারে আকাশ থেকে পড়েছিল।
হ্যাঁ, ওদের গ্রাম থেকে মাঝে মাঝেই ছেলেমেয়েরা পালায়। এই তো ক'বছর আগেই, সতেরো-আঠারো বছরের দু'-দুটো ছেলে বাবার মুদিখানা দোকান থেকে সব টাকা পয়সা নিয়ে কেউ কিছু টের পাওয়ার আগেই রাতের অন্ধকারে চম্পট দিয়েছিল সুরাটে। অনেক খোঁজখবর করার পরে পুলিশ যখন তাদের তিন মাস পরে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে এসেছিল, তারা বলেছিল, আমরা ভাগ্যের সন্ধানে গিয়েছিলাম।
পরে জানা গিয়েছিল, কে নাকি তাদের বলেছিল সুরাটে গেলেই চাকরি পাওয়া যায়। পড়াশোনা কিছু লাগে না। ওরাই শিখিয়ে পড়িয়ে নেয়। প্রচুর টাকা মাইনে। তাই গরিব বাবা-মায়ের হাতে প্রতি মাসে মাসে কিছু টাকা তুলে দেওয়ার জন্যই নাকি ওরা সুরাটে যাবার জন্য পালিয়েছিল। কিন্তু ভুল করে অন্য ট্রেনে উঠে পড়ায় ওরা মজফ্ফরপুরে চলে গিয়েছিল। অচেনা-অজানা জায়গায় গিয়ে মহাবিপাকে পড়েছিল। যে ক'টা টাকা ছিল তা দিয়ে চার-পাঁচ দিন কোনও রকমে চলেছিল। কিন্তু তার পরেই দেখা দিয়েছিল বিপদ। কী খাবে, কোথায় থাকবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজে ঢুকেছিল তারা। এঁঠো থালাবাসন মাজা, দূরের টিউবওয়েল থেকে জল তুলে আনা, আনাচ কাটাই শুধু নয়, বাড়ির টুকিটাকি কাজ, মনিবের ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা, বাজারের ব্যাগ বয়ে নিয়ে আসা থেকে ফাইফরমাস খাটা, কিছুই বাদ যেত না। এমনকী রাত্রিবেলায় যতক্ষণ না মনিব ঘুমিয়ে পড়ত, ততক্ষণ তার হাত-পা টিপে দিতে হত, মাথা ম্যাসাজ করে দিতে হত।
কেবল ছেলেরাই নয়, এই তো কিছু দিন আগে একসঙ্গে দল বেঁধে তেরো-চোদ্দো বছরের চার-চারটে মেয়েও উধাও হয়ে গিয়েছিল। চোখের ঘুম ছুটে গিয়েছিল গোটা গ্রামের। নড়েচড়ে বসেছিল লোকাল থানাও। সে দিনই মধ্যরাতে যখন তাদের রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হল, তারা বলেছিল, আমরা মুম্বই যাচ্ছিলাম। সিনেমায় নামার জন্য।
শুধু কোনও বন্ধুর সঙ্গে কিংবা দল বেঁধেই নয়, একবার তাদের গ্রামেরই ষোলো বছরের একটি মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে বেমালুম ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল। থানায় মিসিং ডায়েরি করতে গিয়ে তাদের বাড়ির লোকেরা জানতে পেরেছিল, পাশের গ্রামের বছর উনিশের একটি ছেলেকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই পুলিশ দুয়ে দুয়ে চার করেছিল। এবং তখনই জানা গিয়েছিল, পুলিশের সন্দেহ খুব একটা অমূলক নয়। কারণ, বহু লোকই তখন জানিয়েছিল, ওদের দু'জনকে নাকি প্রায়ই এ দিকে ও দিকে ঘুরতে দেখেছে তারা। কিছু দিন আগে নাকি দু'জনে মিলে সিনেমা দেখতেও গিয়েছিল। অগত্যা সবাই নিঃসন্দেহ হয়েছিল, ওরা দু'জনে পালিয়েছে। কিন্তু অনেক খোঁজ করেও আজ অবধি তাদের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি।
মেয়ের বাড়ির লোকেরা অবশেষে দু'ক্রোশ দূরের নাবিক গ্রামের এক নামকরা বৃদ্ধ গুনিনের কাছে গিয়েছিল। আলো বাতাস-হীন দমবন্ধ হয়ে আসা একরত্তি ঘরে বসে সেই গুনিন নাকি বলেছিল, ওরা আছে। একসঙ্গেই আছে। ভাল আছে। ওদের একটা ফুটফুটে মেয়েও হয়েছে। এই দ্যাখ, বলে, একটা মন্ত্রপূত আয়না বের করে ওদের সামনে ধরেছিল। বলেছিল, সবাই নয়, যে কোনও একজন দ্যাখ। ওদের দেখতে পাবি। ওরা এখন কোথায় আছে। কী করছে। কে দেখবি, তোরা নিজেদের মধ্যে ঠিক কর।
তখন মেয়ের মা বলেছিল, আমি দেখব। আমি।
সেই আয়নায় ছায়া-ছায়া মতো সে নাকি কী একটা দেখেওছিল। স্পষ্ট কিছু দেখা না গেলেও গুনিন যখন বলেছে, ওটা তার মেয়ে, তা হলে নিশ্চয়ই ওটা তার মেয়েই। সে উপরের দিকে তাকিয়ে ঠাকুরের উদ্দেশে প্রণাম করে বিড়বিড় করে বলেছিল, ও যেখানেই থাক, ভাল থাক। ওকে ভাল রেখো ঠাকুর। ওকে ভাল রেখো…
ওই মেয়েটা ওই রকমই ছিল। কিন্তু তাদের মেয়ে বোড়কি তো ও রকম নয়। সে তো বাচ্চা। সবে সেভেনে পড়ে। ও কি ও সব বোঝে! তবু কেবল নিজেদের গ্রামেই নয়, আশপাশের সব ক'টা গ্রামে, এমনকী দূর-দূরান্তের স্কুলে গিয়েও শিবকুমার খোঁজ করেছিল, আর কেউ পালিয়েছে কি না...
কিন্তু না। সে রকম কোনও খবর জোগাড় করতে না পাড়ায় ফের থানায় গিয়েছিল সে। এবং থানাও সত্যি সত্যিই খোঁজখবর শুরু করেছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বোড়কিকে খুঁজে বের করে নিয়ে এসেছিল। ও নাকি রেল স্টেশনের একটা বেঞ্চে একা-একা বসেছিল।
তা হলে কি ওই মেয়েটার মতো ও-ও কারও সঙ্গে ট্রেনে করে পালিয়ে যাওয়ার মতলবে ছিল! তাই প্ল্যাটফর্মে বসে কারও জন্য অপেক্ষা করছিল! পুলিশ অফিসারটি অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। পুলিশ চলে যাওয়ার পরে তার বাবা-মাও। কিন্তু ও সেই একই কথা বলে যাচ্ছিল। বললাম তো, আমি ট্রেন দেখতে গিয়েছিলাম…
ওর বাবা অনেক বুঝিয়েছিল। বলেছিল, তুই যে ভরদুপুরে একা একা ঘুরে বেড়াস। তুই কি জানিস, এই দুপুরবেলায় বড় বড় গাছের মগডালে ভূত-পেত্মী-ব্রহ্মদত্যিরা মানুষের রক্ত খাওয়ার জন্য কী ভাবে ওত পেতে বসে থাকে। একবার পেলে একেবারে ঘাড় মটকে খায়, জানিস না? এই ভাবে কাউকে কিছু না বলে একা-একা কেউ বেরোয়? আর কোনও দিন এই ভাবে কোথাও যাস না, বুঝেছিস? বলেই, ওর বাঁ হাতের বালাটা দেখিয়ে বলেছিল, যদি না যাস, ভাল ভাবে থাকিস, তা হলে গত বার যেমন তোর নাম খোদাই করা রুপোর এই বলাটা বানিয়ে দিয়েছিলাম, ঠিক সেই রকম আর একটা বালা তোকে বানিয়ে দেব…
হ্যাঁ, বোড়কি বায়না করেছিল বলে বিয়েতে পাওয়া বউয়ের রুপোর টিকলি, গলার মোটা হার আর পাশের গ্রামের রথের মেলা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চাদের পায়ের এক পাটি তোরা ভেঙে গড়িয়ে দিয়েছিল ওটা।
বোড়কি বলেছিল, ওটার মধ্যে আমার নাম লিখে দিয়ো। না হলে, ওটা যদি হারিয়ে যায়, তা হলে তোরা হারানো মেয়েটার মতো আমিও আর ওটা ফেরত পাব না।
ওর বাবা বলেছিল, ঠিক আছে, তাই হবে। স্যাকরাকে বলব, তোর বালার মধ্যে বড় বড় করে 'বোড়কি' লিখে দিতে। কী? খুশি তো?
বোড়কি খুশি হয়েছিল। কিন্তু আজ ও রকমই আর একটা বালা গড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেও, বোড়কির মুখে কিন্তু সে রকম কোনও খুশির ঝলক দেখতে পেল না শিবকুমার। শুধু ফ্যালফ্যাল করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
দ্বিতীয় বার যখন ওকে খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন তার বাবা প্রথমেই গিয়েছিল রেল স্টেশনে। এর আগের বার যেটায় বসেছিল, শুধু সেই বেঞ্চটাতেই নয়, গোটা স্টেশনের এই প্ল্যাটফর্মে ওই প্ল্যাটফর্মে যতগুলি বেঞ্চ ছিল, সিমেন্টের বাঁধানো বেদি ছিল, সব ক'টা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল। কিন্তু না। বোড়কিকে সে পায়নি। অগত্যা কোনও উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত থানায় ছুটে গিয়েছিল।
সে বারও থানার লোকেরাই তার মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিল। ওকে নাকি একটা পুকুরের পাড়ে তন্ময় হয়ে বসে থাকতে দেখেছিল তারা।
— ওখানে কী করছিলি? জিজ্ঞেস করায় ও বলেছিল, আমি কচুরিপানার ফুল দেখতে গিয়েছিলাম। প্রতিটা পাপড়িতে কী সুন্দর ময়ূরের পেখমের মতো রং। চোখ ফেরানো যায় না...
— কচুরিপানার ফুল দেখতে গিয়েছিলি! তুই কি পাগল? জানিস, কত রকমের লোক ঘুরে বেড়ায়? তারা বাচ্চাদের বস্তায় ভরে নিয়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে, অন্ধ করে শহরের রাস্তায় রাস্তায় তাদের দিয়ে ভিক্ষে করায়। তুই কি সেই লোকগুলির খপ্পড়ে পড়তে চাস? তা হলে? অনেক বুঝিয়েছিল শিবকুমার। তবুও...
তৃতীয় বার যখন পালিয়ে গেল, প্রথমেই শিবকুমার গেল সেই পুকুরের পাড়ে। তার পরে রেল স্টেশনে। তার পর ওর বন্ধুদের বাড়িতে। কোথাও না পেয়ে অবশেষে থানায়।
তখনই পুলিশ অফিসারটা তাকে ধমকে বলেছিল, আপনারা কি ইয়ার্কি পেয়েছেন? আমাদের আর কোনও কাজ নেই? আপনাদের মেয়ে রোজ-রোজ পালিয়ে যাবে, আর তাকে খুঁজে খুঁজে আমাদের নিয়ে আসতে হবে? একটা মেয়েকে সামলে রাখতে পারেন না? যান, নিজেরা খুঁজে নিন।
কাঁচুমাচু মুখ করে থানা থেকে বেরিয়ে এলেও পুলিশ অফিসারটি যে ওগুলো শুধু কথার কথা বলেছিলেন, বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, আসলে সে থানা থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রই মেয়েটিকে খুঁজে বের করার জন্য ফোর্স পাঠিয়েছিলেন, সেটা সন্ধে হওয়ার অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল শিবকুমার।
সে বার স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে বাঁদরখেলা দেখার পরে গ্রামের আরও অনেক বাচ্চাদের মতো সেই বাঁদরওয়ালার পিছু পিছু সেও নাকি গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা পথ চলে গিয়েছিল। কিছুটা যাবার পরে বাকি বাচ্চারা ফিরে এলেও সে আর ফেরেনি। বাঁদরওয়ালার পিছু পিছু হেঁটেই যাচ্ছিল। সেটা দেখে নাকি বাঁদরওয়ালা বলেছিল, কী রে বেটি, আর কত দূর আসবি? এ বার যা।
বোড়কি নাকি বলেছিল, আমি যাব না। আমি তোমার সঙ্গে যাব।
বাঁদরওয়ালা নিতে চায়নি। তবুও পিছন ছাড়েনি ও। হাইওয়ের উপরে বাস স্টপেজের ধারে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে আড্ডা মারছিল কয়েকটি স্থানীয় ছেলে। তারা বাঁদরওয়ালার পিছনে পিছনে স্কুলের পোশাক পরা একটা মেয়েকে ওই ভাবে যেতে দেখে ভেবেছিল, বাঁদরওয়ালাটা নিশ্চয়ই ছেলেধরা। মেয়েটাকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই তারা বাঁদরওয়ালাটাকে ধরে জিজ্ঞেস করেছিল, এই মেয়েটাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
বাঁদরওয়ালা বলেছিল, আমি নেব কেন? ও-ই তো আমার পিছু ছা়ড়ছে না।
ওরা যখন বোড়কিকে জিজ্ঞেস করল, তুই কোথায় থাকিস?
ও সব বলেছিল। গ্রামের নাম। পাড়ার নাম। বাবার নাম। এমনকী স্কুলের নামও।
তখন ওই ছেলেদের মধ্যে থেকেই একজন তার বাইকে করে ওকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক খাতে বরাদ্দ টাকায় সদ্য তৈরি হওয়া কালো পিচের চওড়া হাইওয়েটা যতই মসৃণ হোক না কেন, হুসহাস করে ছুটে যাক না কেন দূরপাল্লার এক্সপ্রেস বাস, মাল-বোঝাই বড় বড় ট্রাক, তার পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া গ্রামে ঢোকার সরু রাস্তাগুলি কিন্তু এখনও যে কে সে-ই। খোয়া বেছানো। গর্ত-গর্ত।
দু'ধারে কোথাও বড় বড়় গাছ, কোথাও আবার ঝোপঝাড়। জঙ্গল জঙ্গল মতো। সেই রাস্তার পাশেই কোথাও হিন্দুপাড়া, কোথাও মুসলমানপাড়া, কোথাও কৈবর্তপাড়া, নাপিতপাড়া, কোথাও আবার ব্রাহ্মণপাড়া।
এক সময় বেশির ভাগ বাড়িই মাটির ছিল। কিন্তু হাইওয়ে হওয়ার আগে থেকেই শুধু রাস্তার ধারের জমিই নয়, ভিতরের, আরও ভিতরের জমির দামও হু হু করে বাড়তে শুরু করেছিল। বাইরে থেকে লোকজন এসে বাড়িঘর করে বসে পড়ছিল। কেউ কেউ দোতলা-তিনতলাও হাঁকাচ্ছিল। আর তারা বাইরে থেকে এলেও, এখানে বাড়ি করার সময় কিন্তু এখানকার চিরাচরিত ধ্যান-ধারনা অনুযায়ীই কেউ কেউ বলিও চড়াতে শুরু করেছিল।
পিছনে বোড়কিকে বসিয়ে সেই রাস্তা দিয়েই ঝাঁকুনি খেতে খেতে ধুলো উড়িয়ে বাইক নিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটা। কিন্তু তাকে আর বোড়কিদের বাড়ি পর্যন্ত যেতে হয়নি। মাঝপথেই দেখা হয়ে গিয়েছিল, বোড়কির খোঁজে বেরোনো কালিন্দী থানারই এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে। ওই পুলিশ অফিসারটিই তার জিপে করে বোড়কিকে শিবকুমারের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল, মেয়েকে দেখেশুনে রাখুন। ভাল করে বোঝান। কখন কোন বিপদে পড়ে যাবে, বলা যায়! সব ছেলে তো আর সমান নয়… দরকার হলে ভাল কোনও সায়ক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যান। ও কেন বার বার বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে, কাউন্সেলিং করান। এর পরে ও যদি আবার কোথাও চলে যায়, আমাদের কাছে আর আসবেন না। বুঝেছেন?
শিবকুমার বুঝেছিল। মেয়েকেও বুঝিয়েছিল, তুই কি জানিস এখন কত রকমের লোক রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়? তারা তোর বয়সি ছেলেমেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে কিডনি, চোখ, হার্ট— সব বের করে বিক্রি করে দেয়। এখনও সময় আছে। সাবধান হ। না হলে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবি। আর তোর বিপদ মানে আমাদেরও বিপদ। তুই কি তোর বাবা-মাকে কাঁদাতে চাস, বল?
কিন্তু তার মেয়ে বোঝেনি। পর দিন স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছিল। সঙ্গে ছিল তার বোন মেজকি আর ছোট ভাই ছোটকা। ওরা তিন জন একই স্কুলে পড়ে। বোড়কি এ বার ক্লাস নাইনে উঠেছে। মেজকি ক্লাস সিক্সে পড়ে আর ছোটকা থ্রি-তে। বাকি দু'জন ঠিক থাকলেও বোড়কিটাই যেন একটু কেমন কেমন…
শিবকুমার জোগাড়ের কাজ করে। তার বউ নতুন গজিয়ে ওঠা কয়েকটা বাবুর বাড়িতে। কোথাও সপ্তাহে তিন দিন কাপড়় কাচার কাজ, কোথাও ঘরদোর মোছা-বাসন মাজার কাজ। কোথাও আবার রান্নার কাজ। তাদের কারও কারও বাড়ির মূলত কার্ড এন্ট্রি করার জন্যই রেশন তুলে দেয়। সবার বাড়িতেই গ্যাস আছে। তাই অনেকেই প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে কেরোসিন তোলে না। সেটা সে ধরে। এবং বেশ কিছুটা জমে গেলে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। ফলে ফিরতে ফিরতে তার দুপুর গড়িয়ে যায়। এসে রান্নাবান্না করে।
সে দিন রান্নাবান্না করার পর হাতের কাজ নিয়ে বসেছিল। কক্ষনো চুপচাপ বসে থাকতে পারে না সে। গরম যাওয়ার আগেই নানান নকশার সোয়েটার বুনতে শুরু করে। মেয়ের জামায় নানা রঙের সুতো দিয়ে কলকা তুলে দেয়। স্বামীর রুমালে তো বটেই, নিজের রুমালেও চেকনাই সুতো দিয়ে নামের অদ্যাক্ষর লেখে। কারণ রুমালের প্রতি খুব ছোটবেলা থেকেই তার দুর্বলতা। সব সময় কোমরে একটা গোঁজা থাকে।
বড় মেয়েকে কাঁদতে দেখে সে ভেবেছিল, নিশ্চয়ই বোন বা ভাইয়ের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে। এক্ষুনি হাতাহাতি লেগে যাবে। তাই হাতের কাজ ফেলে ত়ড়িঘড়ি উঠে এসে জিজ্ঞ়়েস করেছিল, কী হয়েছে রে?
বোড়কি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, আমি আর স্কুলে যাব না।
মা বলেছিল, এ আবার কী অলুক্ষুণে কথা! কেন? স্যার মেরেছে?
— না।
— কেউ কিছু বলেছে?
— না।
— তা হলে?
বোড়কি বলেছিল, আমার স্কুলে যেতে ভাল লাগে না। আমি আর স্কুলে যাব না।
— কেন যাবি না, সেটা তো বলবি।
— না। আমি আর স্কুলে যাব না।
ওর মা বলেছিল, তা হলে কি আমার মতো লোকের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করবি? তোর বাবা তোদের জন্য মুখে রক্ত তুলে কাজ করে। আর তুই বলছিস… আসুক তোর বাবা।
ওর বাবা বড় মেয়েকে ভীষণ ভাল বাসে। শত অন্যায় করলেও বকে না। বউ মারতে গেলেও আটকায়। সব সময় বলে, বড়় হোক। সব ঠিক হয়ে যাবে। সে-ই বাবাও বুঝতে পারছে, এই মেয়ে তার বাকি দুই ছেলেমেয়ের মতো নয়। তাই ওকে কাছে ডেকে আদর করে পাশে বসিয়ে বোঝাতে লাগল, এ রকম করতে নেই মা। তুই কেন বারবার পালিয়ে যাস?
বোড়কি বলেছিল, আমার বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না।
— কেন?
কোনও উত্তর না দিয়ে ও চুপ করে ছিল। তাতে আরও মেজাজ চড়ে যাচ্ছিল শিবকুমারের। তাই গলা চড়়িয়ে ফের জিজ্ঞেস করেছিল, কেন? কেন? কেন থাকতে ইচ্ছে করে না তোর?
বোড়কি বলেছিল, জানি না।
— তোর ভাইবোনেরা তো এ রকম নয়। তুই এ রকম করিস কেন?
বাবার কথার উত্তর না দিয়ে, উল্টে ও-ই প্রশ্ন করেছিল, সবাইকে কি একই রকম হতে হবে?
— তুই কি চাস?
— যে দিকে দু'চোখ যায়, আমি সে দিকে যেতে চাই।
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে গলার স্বর একেবারে খাদে নামিয়ে শিবকুমার বলেছিল, এ রকম বললে হয় মা বল? তুই তো মেয়েমানুষ।
— আমি ছেলে মেয়ে বুঝি না। আমার যা মন চায় আমি তাই করব। আর কিছু বলবে?
মেয়ের বেয়াদব কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল শিবকুমারের। মনে হচ্ছিল ঠাসিয়ে একটা চড় মারে। শেষ পর্যন্ত নিজেকে কোনও রকমে সামলে নিয়েছিল। সরে গিয়েছিল ওর সামনে থেকে।
না। সে দিন নয়। তার পর দিনও নয়। তার পর দিন ফের বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল বোড়কি। সব জায়গায় খুঁজেছিল শিবকুমার। কিন্তু কোত্থাও পায়নি। বউ বলেছিল, একবার থানায় যাও। ওরা ঠিক আমার মেয়েকে খুঁজে এনে দেবে।
সে বলেছিল, কী করে যাব? এর আগের বার মেয়েকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে উনি কী বলে গিয়েছিলেন তোমার মনে নেই?
— আমার সব মনে আছে। তবু তুমি যাও।
— না। আমি যাব না।
— এই বারই শেষ বার। এর পরে ও গেলেও আমি আর কক্ষনো তোমাকে থানায় যেতে বলব না। যাও।
শিবকুমার গিয়েছিল। সে থানায় ঢুকতেই ওই পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, কী হল? আবার থানায় কেন? আপনাকে বলেছিলাম না, থানায় আসবেন না। মেয়ে হারানো ছাড়া অন্য কিছু বলার থাকলে বলুন…
কোনও কথা নয়। ঝপ করে বসে তার পা জড়িয়ে ধরেছিল শিবকুমার। হাউহাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছিল। পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, আরে, ছাড়ুন ছাড়ুন। পা ধরছেন কেন? ঠিক আছে ঠিক আছে, বলুন, কখন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?
শিবকুমার বলেছিল। এবং অবাক কাণ্ড, সে বারও সন্ধে নামার আগেই… না। মেয়েকে পৌঁছে দেয়নি। থানা থেকে লোক পাঠিয়ে তাকে আর তার বউকে ডেকে পাঠিয়েছিল ওই পুলিশ অফিসারটি।
মেয়েকে দেখে শিবকুমারের চোখ আনন্দে চকচক করে উঠেছিল। বলেছিল, কোথায় পেলেন ওকে?
পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, আমাদের এক অফিসার গ্রামে টহল দিচ্ছিলেন। উনি হঠাৎ দেখেন, সুনসান রাস্তার ধারে ঢালু জমির নীচে একটি বাচ্চা কী যেন করছে। বাচ্চাটি কে! দেখতে গিয়ে দেখে— ও।
— কী করছিল?
— উবু হয়ে বসে এক হাত এক হাত করে রাস্তা মাপছিল।
— রাস্তা মাপছিল? শিবকুমার অবাক।
— তা হলে আর বলছি কী… ও নাকি ওই ভাবে হাত মেপে মেপে দেখতে চেয়েছিল আপনাদের বাড়ির সীমানা থেকে হাইওয়েটা কত হাত দূরে।
— সে কী!
— সে কী, সেটা আপনারাই বুঝুন। বলে, তাদের হাতে বোড়কিকে সঁপে দেওয়ার আগে রীতিমত বেশ কড়া ভাষাতেই ধমকেছিল সে। বলেছিল, একটা মেয়েকে দেখে রাখতে পারেন না? দেখুন তো, শুধু আপনাদের গ্রামেই নয়, আশপাশের কোনও গ্রামে এ রকম আর একটাও মেয়ে আছে কি না। তা হলে আপনাদের মেয়ে এ রকম কেন?
সে দিন দু'জনেই পুলিশ অফিসারটিকে কথা দিয়েছিল, এ বার থেকে মেয়েকে চোখে চোখে রাখব। ভাল করে বোঝাব। দরকার হলে দুটো বাড়ির কাজ ছেড়ে দেব। মেয়েকে আর পালাতে দেব না।
বাড়ি নিয়ে এসে মা-বাবা দু'জনেই খুব করে বুঝিয়েছিল। বোড়কিকে বলেছিল, তুই যদি এ রকম করিস, তা হলে তোর ভাইবোনেরা তোর কাছ থেকে কী শিখবে বল? তা ছাড়া, তুই বড় হয়েছিস। কোন ছেলে কী রকম তুই জানিস? চারিদিকে কত কী হচ্ছে। যদি সে রকম কোনও বিপদ হয়! তখন? তোকে বিয়ে দিতে পারব? না, আমরা কাউকে মুখ দেখাতে পারব? আমরা গরিব মানুষ মা। এ রকম করিস না।
সে দিন রাত্রে ওর দুই ভাইবোনকে পাশের ঘরে ঘুম পাড়িয়ে বোড়কিকে মাঝখানে শুইয়ে দু'পাশ থেকে দু'জন অনেক বুঝিয়েছিল। বোঝাতে বোঝাতে কখনও কখনও রেগে যাচ্ছিল ওর মা। রাগ সামলাতে না পেরে থেকে-থেকেই মেয়ের উপরে হাত ওঠাতে যাচ্ছিল। আর প্রতি বারের মতোই বউকে বিরত করছিল শিবকুমার। কারণ, আরও দুটো বাচ্চা থাকলেও এই বড় মেয়েটাই ছিল তার প্রাণ।
তবু মেয়েকে আগলে রাখা গেল না। পালিয়ে গেল। না। অনেক খোঁজ করেও তাকে কোথাও পাওয়া গেল না। ছলছল চোখে শিবকুমার এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল তার বউ। আর তার কান্না শুনে বইপত্র ফেলে পাশের ঘর থেকে ছুটে এসে মায়ের কাছ ঘেষে দাঁড়াল তাদের বাকি দুই ছেলেমেয়ে।
ফের কান্না জড়ানো গলায় বউ বলল, যাও না… থানায় গিয়ে একবার বলো না… দরকার হলে হাতে-পায়ে ধরো। আমি যাব?
ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেও শিবকুমার নিজেকে কোনও রকমে সামলে নিয়ে এই প্রথম বার একটু কড়া গলাতেই বলল, না।
নিজে তো গেলই না। বউকেও যেতে দিল না।
বিকেল হল। সন্ধে হল। রাত্র হল। না। মেয়ে ফিরল না। সারা রাত স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই খাটের উপর ঠাঁয় বসে রইল। সকাল হল। শিবকুমার কাজে বেরোল না। বউও না। এমনকী তাদের যে আরও দুটো বাচ্চা আছে, সে কথাও যেন তারা বেমালুম ভুলে গেল। ভুলে গেল, নিজেদের জন্য না করলেও ওদের জন্য রান্নাবান্না করতে হবে। রেডি করে স্কুলে পাঠাতে হবে।
ছোটকা এসে মাকে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগল, মা, দিদি কোথায়?
মেজকি ঘুরে ঘুরে এসেই তার বাবাকে বলতে লাগল, দিদিকে খুঁজতে যাবে না?
কিন্তু কারও কথাই যেন তাদের কানে ঢুকছে না। তারা যেন কেমন পাথর হয়ে গেছে।
সে দিন না। তার পর দিনও না। এমনকী তার পর দিনও তাদের মেয়ে বাড়িতে ফিরল না। চার দিনের দিন এল পুলিশ।
তারা যখন থানায় পৌঁছল, যে তাদের কখনও বসতে বলেনি, বরং দূর দূর করে প্রায় তাড়িয়ে দিত, সেই পুলিশ অফিসারটিই তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ভাল ব্যবহার করল। টেবিলের উল্টো দিকের চেয়ারে বসতে বলল। তার পর জিজ্ঞেস করল, আপনাদের মেয়ে কোথায়?
— পেয়েছেন?
— না। আমি জিজ্ঞেস করছি, আপনাদের মেয়ে কোথায়?
স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল।
— কী হল? তাকান আমার দিকে।
ওরা যখন মুখ তুলল, পুলিশ অফিসারটি দেখল, ওদের দু'জনের চোখই ছলছল করছে। তাই একটু থেমে ওদের কাছে জানতে চাইল, কবে পালিয়েছিল?
কাঁদো কাঁদো গলায় বোড়কির মা বলল, আজ চার দিন হয়ে গেল…
— থানায় মিসিং ডায়েরি করেননি কেন?
— আপনি বারণ করেছিলেন, তাই…
ড্রয়ার থেকে এক চিলতে কাপড়ে মো়ড়া একটা পুটুলি বের করে সামনের টেবিলে রেখে কাপড়টা খুলতে খুলতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখুন তো, এটা চিনতে পারেন কি না…
শিবকুমারের বউ দেখল, যেটা সে তার বিয়েতে পাওয়া রুপোর টিকলি, গলার মোটা হার আর পাশের গ্রামের রথের মেলা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চাদের পায়ের এক পাটি তোরা ভেঙে নিজের পছন্দ করা ডিজাইনে গড়িয়ে দিয়েছিল, স্যাকরাকে বলে যার মধ্যে বড় বড় করে 'বোড়কি' লিখে দিয়েছিল, এটা সেই বালা। সঙ্গে সঙ্গে সে বলল, এটা কোথায় পেলেন?
— আমরা আজ রাস্তার ধারের একটা ঝোপের আড়াল থেকে মুণ্ডুহীন একটা লাশ পেয়েছি। বারো-চোদ্দো বছর বছরের একটা মেয়ের। কিন্তু তার মুণ্ডুটা এখনও পাইনি। তল্লাশি চলছে। শরীরটাও এমন ভাবে ঝলসে গেছে যে, শনাক্ত করা মুশকিল। মনে হচ্ছে, বাচ্চা কাউকে না পেয়ে, একটু বড়় বয়সের মেয়েকেই বলি দেওয়া হয়েছে।
— বলি! আঁতকে উঠল স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই।
— হ্যাঁ, বলি। প্রাথমিক তদন্তে সেটাই মনে হচ্ছে। কারণ, ডেডবডির পাশে বিশাল ব়ড় একটা ফুলের মালাই শুধু নয়, অনেক কুঁচো ফুলও পাওয়া গেছে। আর যারা তাকে বলি দিয়েছে, সে যে কে, সেটা যাতে কেউ চিনতে না পারে, সে জন্যই সম্ভবত তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
শিউরে উঠল শিবকুমার। এই ভাবে একটা বাচ্চাকে মেরেছে…
চোখ মুখ কুঁচকে শিবকুমারের বউ জিজ্ঞেস করল, কিন্তু তার সঙ্গে আমার মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার কী সম্পর্ক?
— কারণ, ওই ডেডবডির হাতেই এই বালাটা ছিল…
দু'জনেই থরথর করে কেঁপে উঠল। শিবকুমারের মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল, মানে?
— চলুন, মর্গে যাই। দেখুন, আইডেনটিফাই করতে পারেন কি না…
উঠেপ়ড়ে লাগল পুলিশ অফিসারটি। যে ভাবেই হোক এর খুনিকে খুঁজে বের করতেই হবে। সে নানান সোর্স মারফত খবর নিতে লাগল, তিন-চার দিনের মধ্যে কারও বাড়িতে কোনও ভিত পুজো হয়েছে কি না… কেউ কোনও মানসিক পুজো দিয়েছে কি না… প্রথমে মনে হয়েছিল, যেখানে মৃতদেহ পাওয়া গেছে, তার আশপাশেরই কোনও বাড়িতে ওকে বলি দেওয়া হয়েছে। কারণ, বলি দেওয়ার পর সেই দেহ বেশি দূর থেকে বয়ে নিয়ে এসে ওখানে ফেলা চাট্টিখানি কথা নয়। তা ছাড়া, দূর থেকে নিয়ে এলে বস্তায় ভরে নিয়ে আসতে হত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তবু চার-পাঁচ দিনের মধ্যে পুজো হয়েছে, কাছাকাছি এ রকম একটাও বাড়ি যখন পাওয়া গেল না, তখন খোঁজ শুরু হল এলাকার বাইরেও।
তল্লাশি করতে করতে পাওয়া গেল তিনটে বা়ড়ি। প্রথম বাড়িটির কর্তার রোগ কিছুতেই সারছিল না। তাকে রোগমুক্ত করার জন্যই বাড়িতে মহাধুমধাম করে যজ্ঞ করা হয়েছে। এবং সেখানে নাকি বলিও দেওয়া হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে থানায় তুলে নিয়ে আসা হল সেই বাড়ির বড় ছেলেকে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল, বলি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে নরবলি নয়, এমনকী ছাগ বলিও নয়, বলি দেওয়া হয়েছে একটা চালকুমরোকে।
দ্বিতীয় বাড়িটাতেও পুজো হয়েছিল। ধুমধাম করেই হয়েছিল। তবে সেখানে নাকি কোনও বলি-টলি দেওয়া হয়নি।
কিন্তু তৃতীয় বাড়িটার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সেই পুলিশ অফিসারটি। তারা জানিয়েছিল, হ্যাঁ, আমরা বলি দিয়েছিলাম। তবে কোনও প্রাণ নয়, কাম-ক্রোধ-ঈর্ষা-লোভ-ভয়ের প্রতীক হিসেবে মাটি দিয়ে বানানো কয়েকটা পুতুলকে।
ওরা ও কথা বললেও, পুলিশ অফিসারটির কাছে কিছুতেই যখন সেটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছিল না, তখন আর এক ইনভেস্টিগেশন অফিসার বলল, আচ্ছা, বডির উপরে যে মালাটা পাওয়া গেছে, সেটা কিন্তু সব দোকানে সচরাচর পাওয়া যায় না। অত মোটা গোরের মালা! আমার মনে হয়, অর্ডার দিয়ে বানানো। এখানে তো ফুলের দোকান মাত্র কয়েকটা। হাতে গোনা। একবার খোঁজ করে দেখলে হয় না?
মাথা কাত করেছিল পুলিশ অফিসারটি।
ওরা যখন আলোচনা করছে, তখনই, যেখানে মৃতদেহটি পাওয়া গিয়েছিল, তার আশপাশে কাটা মুণ্ডুর তল্লাশি করতে থাকা তদন্তকারী এক অফিসার রাস্তার ধার থেকে কুড়িয়ে পেল একটা লেডিস রুমাল। আর ওটা দেখেই তার সন্দেহ হল, এই খুনের সঙ্গে কোনও মহিলা জড়িত। কোনও মহিলাই তাকে ফুঁসলে নিয়ে এসেছিল। আর সেই মহিলার সঙ্গে ও এসেছিল মানে, ও তাকে খুব ভাল করেই চিনত। সে তার মায়ের কোনও বন্ধু হতে পারে। কোনও আত্মীয়া হতে পারে। আবার তাদের পরিবারের কোনও পরিচিতাও হতে পারে। তবে যে-ই হোক, সে একজন মহিলাই। কারণ, রুমালটা কোনও পুরুষের নয়, মহিলার।
এ ক'দিন আর রান্নাবান্না হয়নি শিবকুমারের বাড়িতে। মুড়ি খেয়েই কাটিয়েছে বাচ্চা দুটো। কিন্তু কত দিন আর ওদের মু়ড়ি খাইয়ে রাখা যায়! তাই চুল্লি ধরিয়ে ভাতের সঙ্গে সেদ্ধ দেওয়ার জন্য আলু ফালি করছিল শিবকুমারের বউ। মেয়ের মৃতদেহ শনাক্ত করে আসার পর থেকে আর বা়ড়ির বাইরে বেরোয়নি সে। ক'দিন যাবদ বাড়িতেই আছে।
হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দ শুনে দরজার কাছে এসে দেখে শুধু ওই পুলিশ অফিসারটিই নয়, তার সঙ্গে আরও তিন-চার জন পুলিশ। তার মধ্যে দু'জন মহিলা পুলিশও আছে। গলির মধ্যে পুলিশের ভ্যান ঢুকতে দেখে আশপাশ থেকে বেরিয়ে এসেছে লোকজন। এত জন পুলিশ একসঙ্গে দেখে হকচকিয়ে গেল শিবকুমার। জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে বাবু?
— আপনার বউ কোথায়?
— ও তো ভিতরে। রান্না করছে।
ওটা শোনামাত্রই ধুপধাপ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল তারা। দু'জন মহিলা পুলিশ রান্নাঘরে ঢুকে শিবকুমারের বউকে বের করে নিয়ে এল।
শিবকুমার আকাশ থেকে পড়়ল। হকচকিয়ে গিয়ে পাগলের মতো বারবার একই প্রশ্ন করে যেতে লাগল, কী হয়েছে বাবু, কী হয়েছে? ও কী করেছে? ওকে ধরছেন কেন?
মুখ ঝামটা দিয়ে উঠেছিল পুলিশ অফিসারটি। কেন? ও একটা খুনি। বোড়কিকে ও-ই খুন করেছে।
— না বাবু, না। ও খুন করতে পারে না।
পুলিশ অফিসারটি বলল, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। বোড়কির মৃতদেহের পাশে যে ফুলের মালা পাওয়া গিয়েছিল, সেটা আপনার বউই কিনে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা ফুলওয়ালার কাছ থেকে জানতে পেরেছি। আর ও-ই যে গিয়েছিল, তার প্রমাণ— ওই মৃতদেহের খুব কাছেই পাওয়া গেছে আপনার বউয়ের একটা রুমাল।
— রুমাল? ওটা যে আমার বউয়েরই, সেটা বুঝলেন কী করে?
— ওটার এক কোনায় ছোট্ট করে লেখা রয়েছে আপনার বউয়ের নামের প্রথম অক্ষর।
— তবু আমি বলছি, ও খুন করেনি। বেশ জোরের সঙ্গেই বলল শিবকুমার।
— ও খুন করেনি?
— না। ও খুন করেনি।
পুলিশ অফিসারটি জিজ্ঞেস করল, তা হলে কে করেছে? কে?
শিবকুমার খুব ধীর-স্থির হয়ে বলল, আমি।
থানায় এনে জবানবন্দি নেওয়া হল শিবকুমারের। কেন আপনি মেয়েকে মারতে গেলেন? আপনি তো আপনার ছেলেমেয়েদের মধ্যে ওকেই সব থেকে বেশি বাসবাসতেন?
মাথা নামিয়ে ছলছল চোখে শিবকুমার খুব ধীরে ধীরে বলল, ভালবাসতাম দেখেই তো মেরেছি।
— মানে?
— আপনারা তো সবই জানেন, চারিদিকে কী হচ্ছে। এই তো সে দিন একটা মেয়েকে রাস্তার মধ্যে একা পেয়ে কতগুলো ছোকরা তুলে নিয়ে গিয়ে কী করল। তার পর তার রক্তমাখা দেহ পাওয়া গেল কাছেরই একটি নির্মীয়মান বাড়ির ভিতরে।
তেলেনি পা়ড়ার একটা বা়ড়িতে মা-বাবা না থাকার সুযোগে পা়ড়ারই একজন বাবার বয়সি মানুষ, ঘরে ঢুকে… সে সবাইকে বলে দেবে বলেছিল দেখে, হেঁসো দিয়ে তাকে কোপাতে শুরু করেছিল। তার পর তার চিৎকারে পা়ড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসায় তাকে ওই রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেই সে চম্পট দেয়… পাড়ার লোকেরা ধরাধরি করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরেই তার মৃত্যু হয়।
বুড়ো বটতলার ঘটনাটা তো আরও ভয়াবহ। মায়ের পাশে ঘুমিয়েছিল একরত্তি মেয়েটা। পর দিন সকালে তার বাবা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখে, সামনের আমগাছে তার মেয়ের দেহ ঝুলছে। পরনে কিচ্ছু নেই। পরে জানা গিয়েছিল, কারা নাকি রাতের অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে তার মায়ের পাশ থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার পর… পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে নাকি বলা হয়েছিল, ওকে কয়েক জন মিলে পর পর… ছিঃ… আর তার ফলেই নাকি তার মৃত্যু হয়েছে।
তাই অনেকেই সন্দেহ করেছিল, মরে গেছে বুঝতে পেরেই ওই ছেলেগুলি তার গলায় গামছা বেঁধে ওই ভাবে আমগাছে লটকে দিয়েছিল। কেউ যদি দেখে ফেলে! সেই ভয়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে তারা খেয়ালই করেনি, তার পা মাটি ছুঁয়ে আছে। যা সহজেই বুঝিয়ে দেয়, ওটা আত্মহত্যা নয়, খুন।
এ সব ওকে বলতে পারিনি। নিজের মেয়েকে কি এ সব বলা যায়! তবু নানা রকম ভাবে ভয় দেখিয়েছিলাম। যাতে ও ভুলভাল খপ্পড়ে না পড়ে। কিন্তু ও শোনেনি।
— কিন্তু ওকে মারলেন কেন? কী হয়েছিল?
— সে দিন ও স্কুলে যাওয়ার সময় দেখি ওর বইয়ের ব্যাগটা একেবারে ঢাউস হয়ে ফুলে আছে। দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল। তাই বেরোবার আগে ও যখন খেতে বসেছিল, তখন চুপিচুপি ওর ব্যাগের চেন খুলে দেখি, তার মধ্যে বেশ কয়েকখানা সালোয়ার-কামিজ । বুঝতে পারলাম, ও আজ পালাবে।
ও বেরোতেই আমিও বেরোলাম। ওর পিছনে পিছনে খানিকটা গেলাম। হঠাৎ ও পিছন ফিরতেই আমাকে দেখে ফেলল। বলল, বাপু, তুমি আমার পিছু পিছু আসছ কেন?
আমি তখন ওকে বললাম, তোর সঙ্গে ক'টা কথা আছে মা। চল, ওই গাছতলায় গিয়ে একটু বসি।
ও বলল, আমার স্কুলের দেরি হয়ে যাবে।
আমি বললাম, তুই যে স্কুলে যাবি, তোর বইখাতা কোথায়— তোর ব্যাগে তো শুধু ক'খানা সালোয়ার-কামিজ।
ও খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি স্কুলে যাব না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
ও বলল, আমার ভাল লাগে না।
আমি জানতে চাইলাম, তা হলে তোর কী ভাল লাগে?
ও বলল, যে দিকে দু'চোখ যায়, সে দিকে চলে যেতে।
আমি ফের জিজ্ঞেস করলাম, তুই চলে যাবার জন্য বেরিয়েছিস?
ও বলল, হ্যাঁ। একেবারে চলে যাওয়ার জন্য। তোমরা কিন্তু আমাকে আর খুঁজো না।
আমি অনেক কাকুতি-মিনতি করে বললাম, মা, আমার কথাটা শোন…
ও বলল, না। আমি তোমাদের কারও কোনও কথা শুনব না। আমার ভাল লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। আমাকে আটকিয়ো না।
আমি আবার জানতে চাইলাম, তা হলে তুই ঠিকই করে নিয়েছিস, চলে যাবি?
ও বলল, হ্যাঁ, চলে যাব। চিরদিনের জন্য চলে যাব।
আমি আর মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না। আমার চোখের সামনে একের পর এক ভেসে উঠতে লাগল এই বয়সি মেয়েদের উপরে ঘটতে থাকা একের পর এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। ভাবলাম, মরার যখন জন্যই বেরোচ্ছে, তখন মরুক। আমি ওকে বললাম, যা। যাবিই যখন, যা। চিরদিনের জন্যই যা।
ও হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। ও আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলল, যাব?
আমি বললাম, হ্যাঁ। যা। একেবারে যা। বলেই, আমার মধ্যে হঠাৎ কী হল বুঝতে পারলাম না, ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি ওর গলা টিপে ধরলাম।
তদন্তকারি অফিসারটি জিজ্ঞেস করল, গলা টিপে? তা হলে ওর ধ়ড় থেকে মুণ্ডুটা আলাদা করল কে?
— আমিই।
— কখন?
— মারার পর আমি বুঝতে পারলাম আমি কী করে ফেলেছি। কিন্তু তখন আর কোনও উপায় নেই। নিজেকে পুলিশের হাতে সঁপে দিতেই পারতাম। কিন্তু দিলে, আমার সংসারটা ভেসে যাবে। আমার আরও ছোট ছোট দুটো বাচ্চা আছে। তারা না খেতে পেয়েই মরে যাবে। তাই নিজেকে কোনও রকমে সামলে ঝোপের আড়ালে ওর দেহটা লুকিয়ে রেখে বাড়ি ফিরে এলাম। বউকে সব বললাম। ও সব শুনে হাউহাউ করে কাঁদল। তার পর ও-ই বলল, পুলিশে ধরা পড়লে মুশকিল হবে। এমন একটা কিছু করতে হবে, যাতে তুমি ধরা না পরো। আমাদের কিন্তু আরও দুটো বাচ্চা আছে।
সে দিনই ঠিক করি, ধড় থেকে ওর মুণ্ডুটা কেটে ফেলব। যাতে লোকেরা ভাবে, আরও অনেক বাচ্চাদের মতো ওকেও কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে বলি দিয়ে দিয়েছে।
— মুণ্ডুটা আপনিই কাটলেন?
— হ্যাঁ। রাত্রিবেলায় ও দিকে খুব একটা কেউ যায় না। তাই রাতের অন্ধকারে আমিই কাটারি দিয়ে এক কোপে ওর দেহ থেকে মুণ্ডুটা আলাদা করে ফেলি।
— তা হলে মু্ণ্ডুটা কোথায়?
— ওর মুণ্ডু কাটার পর সেই মুণ্ডুটা খানিকটা দূরে নিয়ে গিয়ে একটা গর্ত করে তার মধ্যে আমি পুঁতে দিই।
— তা হলে ওর শরীরটা পোড়াল কে?
— ওর মা। মেয়েকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য ওর মা-ই দুপুরবেলায় অর্ডার দিয়ে ওই মালাটা বানিয়েছিল। সন্ধ্যার পর ওটা দিতে গিয়ে দেখে, মেয়ের দেহটা অনেকখানি ফুলে গেছে। কতগুলো পোকামাকড় ওকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। ও সেটা সহ্য করতে পারেনি। তাই বেশি দামে বিক্রি করার জন্য তিল তিল করে জমানো দশ লিটারেরও বেশি কেরোসিন ভর্তি জারিকেনটা নিয়ে ও হাঁটা দিয়েছিল। মেয়ের গায়ে পুরোটা ঢেলে দিয়ে দেশলাই জ্বালিয়ে কোনও রকমে ছুটে পালিয়ে এসেছিল।
— ও… তা হলে পালাবার সময়ই বোধহয় ওর রুমালটা পড়ে গিয়েছিল, না?
— হতে পারে। কারণ, ওর শরীরে আগুন লাগানোর সময় শক্ত থাকলেও তার পরেই ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফিরে এসেছিল। এসেই, আমার বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ও ভীষণ কেঁদেছিল। মাঝে মাঝেই আঁচল দিয়ে চোখ-মুখ মুছছিল। ওর হাতে তখন কোনও রুমাল দেখিনি…
— প্রথমে যখন জেরা করেছিলাম, তখন এগুলো বলেননি কেন?
— বলিনি, কারণ, আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না এটা ঘটেছে। এবং আমিই সেটা ঘটিয়েছি। তাই ওই ঘটনাটা আমরা দু'জনেই আমাদের জীবন থেকে একদম মুছে ফেলেছিলাম। এতটাই নিখুঁত ভাবে মুছেছিলাম যে, আমাদের মাথা থেকেই ওটা উবে গিয়েছিল। তাই ওই ঘটনা ঘটার পর দিনই, ও পালিয়ে গেছে মনে করে অন্যান্য বারের মতো ওকে খুঁজতে পর্যন্ত বেরিয়েছিলাম। এবং তার পরও, প্রতিদিনই, আজ এখানে কাল সেখানে ওকে খুঁজতে বেরোতাম। আর প্রত্যেক বারই বাড়ি ফেরার সময় দেখতাম, মেয়ের জন্য তার মা দরজার সামনে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে আসতে দেখলেই ও ছুটে এসে জিজ্ঞেস করত, ও কোথায়?
আমি ছলছল চোখে বলতাম, না। বোড়কিকে কোথাও খুঁজে পেলাম না।
কেন জানি না, আমার বারবারই মনে হত, এটা একটা দুঃস্বপ্ন। যে কোনও সময় ভেঙে যাবে। ঘুম থেকে উঠে দেখব, বোড়কি ছুটতে ছুটতে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে… ওই তো বোড়কি… ওই তো… ওই তো ছুটতে ছুটতে আসছে… ওই তো…
শিবকুমার যখন জবানবন্দি দিচ্ছে, ওর বউ তখন ভাঙা রেকর্ডের মতো একটাই কথা বার বার বলে যাচ্ছে, সব দোষ আমার… সব দোষ আমার… সব দোষ আমার…
সিদ্ধার্থ সিংহ
২৭/এ, আলিপুর রোড,
কলকাতা ৭০০ ০২৭
ফোন: ২৪৩৯ ৯৯২৬

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

চন্দন সুরভি নন্দর কবিতা

টাকার মেশিন                      মায়ের ওষুধ নিয়ে শহর থেকে ফিরল রতন সবে সন্ধ্যা নেমেছে  রাস্তায় আলো কম হাসপাতাল অনেক দূরে  অদৃশ্য যম খেলাকরে  মৃত্যুর সীমান্তে শায়িত মা   শেষ রক্ষা হল না  আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফোটে রাতের আঁধারে ঘরের দেওয়াল গুলো রাঙিয়ে গেছে কারা  তুলেছে রং বেরং এর তোরন  এসেছে নির্বাচন  শোনাযায় এবার নাকি এ টি এম চিহ্নে দাঁড়িয়েছে একজন! টাকার মেশিন........  জিতলে সবাইকে দেওয়া হবে! সামনে বসে উল্লাসে ফেটে পড়া রোবট গুলো মানুষ কবে হবে?  ====================== Chandansuravi Nanda Revenue Office  BL&LRO,Manbazar-ll Boro Purulia PIN-723131 Phone-9163332432

কবিতা ।। রঙ ।। ইউসুফ মোল্লা

  রঙ  ইউসুফ মোল্লা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি,  পৃথিবী নানা রঙে সেজে উঠেছে।  ধূসর বাদামী রঙ তোমার দেহ,  মাথায় সবুজ রঙের বাবরি চুল,  তাতে গুঁজে রেখেছো লাল-নীল ফুল।  নববধূর মতো সিঁথিতে দিয়েছো সিঁদুর,  চোখে দিয়েছো কাজল।  দিগন্তভরা আকাশ তোমাকে নীল উপহার দিল,  সূর্যের লাল আলো তোমাকে সুন্দর করেছে।  তুমি তাদের ফিরিয়ে দিলে, বুকভরা ভালোবাসা আর স্নেহ।  মাঝে মাঝে এইভাবে হোলি আসে,  আমার মনকে রাঙিয়ে দিতে। ------------------    ইউসুফ মোল্লা উত্তর অঙ্গদ বেড়িয়া, ট্যাংরাখালী, ক্যানিং,  দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ৭৪৩৩২৯

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

ছোটগল্প ।। নীলিমার আত্মজাগরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত

নীলিমার আত্মজাগরণ পরেশ চন্দ্র মাহাত নীলিমা মাহাত, বয়স পঁচিশ প্লাস —তার বাবা মায়ের পঞ্চম তথা শেষ সন্তান। দুই দাদা —বড়দাদা শঙ্কর ও ছোটদাদা বিজয়। বড় দাদা শঙ্কর আর দুই দিদি তাদের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র নীলিমা আপাতত স্বামীর কোমল হাতের স্পর্শ ও সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত এবং আদৌ কবে অথবা সেই সৌভাগ্য আসবে সেটা ঈশ্বরের নিকটই একমাত্র জ্ঞাত। সেই সঙ্গে দুবছরের সিনিয়র ছোটদাদা বিজয়েরও নীলিমার মতো অবস্থা। তারও জীবনসঙ্গিনী জুটেনি। মোট সাতজন সদস্য নিয়ে গঠিত সংসার নীলিমাদের পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবার —মধ্যবিত্ত পরিবার না বলে যদি নিম্নবিত্ত বলা হয় তবুও কোনো অত্যুক্তি করা হয় না। বাবার প্রত্যেকদিনের আয়ের উপর ভিত্তি করেই চলে সংসার। এই কঠোর এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও নীলিমার মা শ্রীমতী মেনকা‚ সংসার সামলে তার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার প্রতি যথেষ্ট তৎপর ও সহানুভূতিশীল। তাদের পড়াশুনায় কোনো খামতি রাখেননি। যথা সময়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ের মুখ দেখিয়েছে – টিউশনের বন্দোবস্ত করেছে। তাদের জীবন যাতে সুখকর হয় সেটাই প্রতিদিন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছে। পাঁচ-পাঁচটি ছেলেমেয়ের মধ্যে সবাইকে উচ্চশিক্ষিত করে তোলা একপ...

কবিতা ।। সোনালি অতীত ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

সোনালি অতীত  প্রবোধ কুমার মৃধা   সুশীতল ছায়াঘেরা স্নেহময়ী মাটি মা।   সে আমার জন্মভূমি সপ্তপুরুষের গাঁ।   প্রকৃতির বুক থেকে প্রাণের রসদ নিয়ে।   ফিরিতাম নদীতীরে হৃদয়ের গান গেয়ে।   সন্ধ্যাতারা উঁকি দিত গোধূলি লগনে।   প্রত্যুষে ভাঙিত ঘুম বিহঙ্গ কূজনে ।   আষাঢ়ের নব মেঘে ঘিরিত গগন।   বাদলের ছায়া ঢাকা কদম্ব কানন।   দলবেঁধে মাঠে-বাটে বেতালা-বেছন্দে।   কেটে যেত সারাদিন ভালো কভু মন্দে।   ডাক দেয় শিশুকাল, বাল্য ও কৈশোর।   অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বল, আনন্দে বিভোর।   করমের স্রোতে ভেসে সংসারের হাটে।   ভিড়িল জীবনতরী নগরের ঘাটে।   ফিরিবার সাধ্য নাই ফেলে আসা পথে।   বাল্য রোমন্থন করি অতীত স্মৃতিতে।                    __________ 

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

নারীমর্যাদা ও অধিকার হিমাদ্রি শেখর দাস  নারীর মর্যাদা বলতে বোঝায় নারীর সম্মান, অধিকার, এবং তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এটি সমাজে নারীর অবস্থান এবং তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে। নারীর প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা হয় এবং তাদের অধিকার গুলি সুরক্ষিত থাকে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই শ্রেণি সংগ্রাম শুরু হয়েছিল অনেক আগে।  একদিকে শ্রেণী বৈষম্য অপরদিকে নারী পুরুষের বৈষম্য এই দুটি ছিল শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অন্যতম দুটি মূল ভিত। নারীর অধিকারহীনতা বা দাসত্ব শুরু হয় পরিবার ও সম্পত্তির উদ্ভাবনের ফলে। বহু যুগ ধরে নারী সমাজকে পারিবারিক ও সামাজিক দাসত্বের বোঝা বহন করতে হয়েছে বিনা প্রতিবাদে। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে নিপীড়ন ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে - দাস সমাজব্যবস্থা এবং সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা পুরুষ ও পরিবারের অধীনতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। সামাজিক উৎপাদনের কাজে নারীদের বঞ্চিত রেখেই তাদের পরাধীন জীবন যাপনের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। নারীর অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের সূচনা হয় ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে। নতুন করে নারীদের সামাজিক উৎপাদনের কাজে ...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

গল্প ।। জাতিস্মর ।। আশীষ কুমার বিশ্বাস

    জাতিস্মর   আশীষ  কুমার   বিশ্বাস    গল্পের শুরুটা প্রায় ষাট বছর আগের কথা । যার নাম গৌতম, ডাক নাম ছিল বাবু ।  তার বছর তখন ছয়-সাত হবে । আমরা বা আমি তখন একটু বড় । এক সাথেই চলতো খেলা । গোল্লা ছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, চোর-পুলিশ । যে মাঝে মাঝে খেলা থেকে বিরত থাকতো ; সে-ই জাতিস্মর । মাঠের পাশেই ছিল একটা খেঁজুর গাছ । তাতে হাত রেখে দূরের এক গ্রামের দিকে এক মনে তাঁকিয়ে থাকতো "বাবু" । গ্রামটির নাম "বিনয় পল্লী " । মাঝে বড়ো মাঠ । হাঁটা শুরু করলে তিরিশ - চল্লিশ মিনিট লাগবে । মাঝে জলে ভরপুর দেখে কখনো যাওয়া হয়নি । বাবু কে যখন বলতাম, ওপারে কি দেখছিস? ও বলতো, ওখানে আমার ছোট মা থাকে, দিদি থাকে, আমার ভুলু কুকুর থাকে । এ কথা আমাদের বিশ্বাস হতো না । আবার খেলায় ফিরে যেতাম, খেলতাম ।  কিন্তু ও বসে বসে , ওপারের গাছ পালা , বাড়ি ঘর দেখতো । কাছে গেলে বলতো , ওই যে সবুজ ,কচি কলাপাতা রঙের দালান বাড়ি, ওটাই আমাদের বাড়ি !  এই ভাবে মাস ছয়, বছর গড়াতে লাগলো । মনে প্রশ্ন জাগতে লাগলো, এ টা কি মন গড়া , বা বানিয়ে বানিয়ে বলছে? সত্যি প্রকাশ হোল এক দিন ।  সে বাড়িতে কিছু ...

কবিতা ।। ভাষার জন্য লড়াই ।। চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু

ভাষার জন্য লড়াই চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু মুখের ভাষা বাংলা ভাষা মাকে ডাকি মা, সারা বিশ্বে তোমার মাগো নেই তো তুলনা। তোমার মুখের প্রথম ভাষা আমার মনের সকল আশা তোমার ভাষায় বলবো মাগো আমার মনের কথা, এই ভাষাতেই জড়িয়ে আছে সকল স্বাধীনতা।  এই ভাষাকে আনতে গিয়ে তাজা বুকের রক্ত দিয়ে রাজপথে সব লড়াই হলো করলো লড়াই কারা, আমার মায়ের দামাল ছেলে রক্ত পলাশ যারা।  তোমার ছেলে লড়াই করে আনলো ভাষা ঘরে ঘরে সেদিন থেকে শহীদ মিনার সাজাই ফুলে ফুলে, বীর শহীদের ত্যাগের কথা যাইনি আজও ভুলে।    ++++++++++++++++++++++++++++++++    চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু শহীদ আবুল কাশেম সড়ক, বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ।

চিরকুটের কবিতা

নতুন পৃথিবী আজ সকালে রোদ্দুর নামুক ভেজা বর্ষার মতো গা ধুয়ে কিছুটা পবিত্র হবো যত জীর্ণ মলিন দ্বেষ বিলীন হোক সব সময়ের তটে গা ভাসিয়ে কিছুটা বিলাসী হবো যা ছিল অতীত যা ছিল কষ্ট সবকিছু ভুলে নবীনে ব্রতী হবো আসুক ধেয়ে সতেজ হাওয়া দূর হোক যত কুণ্ঠা ব্যথা পুরানো যত বিবাদ ভুলে ভালোবাসার আবার বেড়া দেবো কিছুটা আশাবাদী কিছুটা কর্মঠ কিছুটা জেদি কিছুটা শপথ আসুক ছুঁয়ে বাঁচার আলো হাতে হাত রেখেই বিশ্বাসের ঘরে আবার নতুন দীপ জ্বালাবো

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

কবিতা ।। মনোজকুমার রায়

জল সিঁড়ি চেক বইয়ের পাতা ফুরিয়ে যেতে থাকে -- ঝরে পড়ে বৃদ্ধ গাছটির পত্রমুকুল কাঁচা গন্ধ বেয়ে চলে সময়ের স্রোতে  সারা ভোর জেগে থাকি ঘুমের টলে তাড়া দেয় একগ্রাস অবিশ্বাসী বায়ু দিন ফুরনো লাল সূর্যের টানে নেমে আসে পাড় ছোঁয়া জল সিঁড়ি ================= মনোজকুমার রায় দঃ ঝাড় আলতা ডাউকিমারী, ধূপগুড়ি জলপাইগুড়ি -৭৩৫২১০ মো ৭৭৯৭৯৩৭৫৬৬

উন্মুক্ত পাগলামি ।। আশরাফুল মণ্ডল

উন্মুক্ত পাগলামি আশরাফুল মণ্ডল আহা, অপরূপ নিজস্বতার দাহ! কুঁকড়ে যায় আবহমান, সজনে পাতার বোঁটায়! ভাপওঠা ভাতের কাছে মাছি সত্তায় কী নিপুণ! তবুও ঘোর লাগা বসন্তের ডাক, হাঁকে! খেদিয়ে দেয় পা দোলানো প্রস্তাব, ওই ধুনুরি চোখ! রাংতায় মোড়া ডাকের সাজ, দে দোল দোল! হুইসেল বাজিয়ে কে রুখে দ্যায় সেই নাকছাবির রুদালি কাঁপন! খালবিল ছেঁচে পাঁচসিকের  মানত কুড়িয়ে আনে, বাংলা বাজার। ঠ্যাং নাচানো সুরে চোখ মারছে, দ্যাখো ভ্যানতারা! মুখ খোলা মানেই পাঁজরের স্রোত ভাবা যেন উগরানো টালমাটাল! ঢিল মারা প্রশ্নের রোয়াকে বক্রচোখে যেন মেধাবী কবিতা! মুছে দিও তবে লাজুক গুপ্ত রোগ, দিনরাত্রি! ভালো থেকো তোমরা বাছাধন, রং মাস সে আর কতদিন... ================    ASRAFUL MANDAL Chandidas Avenue, B-zone, Durgapur, Paschim Bardhaman, Pin - 713205,  

কবিতা ।। সোনালি অতীত ।। প্রবোধ কুমার মৃধা

সোনালি অতীত  প্রবোধ কুমার মৃধা   সুশীতল ছায়াঘেরা স্নেহময়ী মাটি মা।   সে আমার জন্মভূমি সপ্তপুরুষের গাঁ।   প্রকৃতির বুক থেকে প্রাণের রসদ নিয়ে।   ফিরিতাম নদীতীরে হৃদয়ের গান গেয়ে।   সন্ধ্যাতারা উঁকি দিত গোধূলি লগনে।   প্রত্যুষে ভাঙিত ঘুম বিহঙ্গ কূজনে ।   আষাঢ়ের নব মেঘে ঘিরিত গগন।   বাদলের ছায়া ঢাকা কদম্ব কানন।   দলবেঁধে মাঠে-বাটে বেতালা-বেছন্দে।   কেটে যেত সারাদিন ভালো কভু মন্দে।   ডাক দেয় শিশুকাল, বাল্য ও কৈশোর।   অফুরন্ত প্রাণোচ্ছ্বল, আনন্দে বিভোর।   করমের স্রোতে ভেসে সংসারের হাটে।   ভিড়িল জীবনতরী নগরের ঘাটে।   ফিরিবার সাধ্য নাই ফেলে আসা পথে।   বাল্য রোমন্থন করি অতীত স্মৃতিতে।                    __________