Skip to main content

গল্প ।। সামান্য মেয়ে ।। রণেশ রায়


সুন্দরবনের এক প্রান্তিক গ্রাম। ছোট্ট একটা দ্বীপ। সুন্দরী গাছ আর গরান গাছে ঘেরা যেন এক সবুজ বনানী। সেখানে গড়ে উঠেছে কিছু মানুষের বাস। জমিতে চাষ, জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ আর মাছ ধরাই প্রধান জীবিকা। শাক সবজি ধান যা উৎপাদন হয় তা দিয়ে পরিবারের পেট চলে। যারা মধু সংগ্রহ করে বা মাছ ধরে তারা তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। উৎপাদন কাজ চালিয়ে নেওয়ার জন্য মহাজনের ঋণের কারবার চালু থাকে। এখানে হরবছর ঝড় বন্যা লেগেই থাকে। সাগরের নোনা জল ঢুকে জমির চাষের বারোটা বাজিয়ে দেয়। মানুষের খাওয়া পড়ার অভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। আর তখন গরিব মানুষকে খাওয়া পড়ার জন্য মহাজনের দ্বারস্ত হতে হয়। গ্রামের চল্লিশ পঞ্চাশটি পরিবারের মধ্যে কেউ কেউ  যথেষ্ট বর্ধিষ্ণু। তাদের জমিজমা বেশি থাকায় উদ্বৃত্ত উৎপাদন সম্ভব হয় যা তাদের বাড়তি লাভ। এছাড়া এরা ব্যবসা মহাজনী কারবারের সঙ্গে যুক্ত। মহাজনী কারবার ব্যবসাই এদের  সমৃদ্ধির কারণ। এ গ্রাম ছাড়াও এদের শহরে ব্যবসা ঘর বাড়ি সম্পত্তি আছে।  ধরুন এই অজ পাড়াগাঁয়ের নাম অমাবস্যার চাঁদ। ভ্রমণ রসিক মানুষের কাছে এই গ্রাম থেকে দেখা জ্যোৎস্না রাতের চাঁদ এই ছোট্ট দ্বীপের সবুজ বনানী নদীর কলোকল যতই মনোরম যতই সুন্দরী রহস্যময়ী মনে হোক না কেন এখানে বসবাসকারী রোজ জীবিকার জন্য যুদ্ধরত মানুষগুলোর কাছে ব্যাপারটা এক নয়। বোধ হয় এটা উপলব্ধি করেই কোন কালে কোন পরিব্রাজক বা সাহিত্যিক এই গ্রামের আপাত সৌন্দর্যের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের ভয়াভয় দারিদ্রের জীবন দেখে এই গ্রাম সমাজকে তিনি এ ভাবেই দেখেছিলেন যেখানে পূর্ণিমার জ্যোৎস্নার নীচে মানুষের জীবনটা অন্ধকারে ঢাকা থাকে। ঠিক যেমন কবি সুকান্ত দেখেছিলেন: পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।


এই অজপাড়াগাঁয়ের এক সামান্য মেয়েকে নিয়েই আমাদের এই উপাখ্যান। মেয়েটির বয়স হয়তো বছর কুড়ি হবে । হয়তো বলতে হল কারণ এ ধরণের গ্রামে গরিব মানুষের ঘরে জন্মানো  সন্তানের জন্ম দিন লিপিবদ্ধ থাকে না। অনেক সন্তানের সবার নাম বাবা মায়ের মনে থাকে না। যদি জন্মের পর থেকে জন্মদিন পালনের রেওয়াজ থাকত তবে জন্মদিনটা মনে থাকত। সেটা এই গ্রামীণ জীবনে গরীব ঘরে তেমন চালু নেই।তাও গ্রামে  একটা স্কুল থাকায় একটা দিনকে জন্মদিন বলে নথিভুক্ত করার রীতি চালু হয়েছে এখন। গরিব বাবা আমাদের গল্পের এই মেয়েকে আদর করে বুড়ি বলে ডাকে। ওই ডাকেই সবাই ওকে  চেনে। আর ওদের অপর্ণা বা সুপর্ণার মত মন ধরানো ভালো নাম দিয়ে কি হবে! যারা স্কুলের গন্ডি টপকাবার সুযোগ পায় না গ্রামের বাইরের জগৎটা যারা চেনে না তাদের ভালো নামে কাদের সঙ্গে পরিচিতি ঘটবে! তার চেয়ে গাঁয়ের মেয়ের গেঁয়ো নামে পরিচিতিটাই ভালো। সেটা অনেক আন্তরিক। বুড়ির বছর কুড়ি বয়স। পড়াশুনার ইচ্ছে থাকলেও বেশিদূর এগোতে পারে নি। স্কুলের বেড়া ডিঙানো সম্ভব হয় নি। সামান্যের মধ্যে যদি অসামান্য কিছু  থাকে তার তা হল মিষ্টি মুখ, মুখে লেগে থাকা হাসি আর  শরীরের ছিপছিপে গঠন। সে যখন হাসে কাশ ফুল ফোটে। সে যখন হাটে কবিতার ছন্দ তাতে। কবির ভাষায় কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ। তবু সে সুন্দরী নয়। ঘরে অভাব, সে অভাবের ছায়া চেহারায়। তেমন চাকচিক্য নেই। ঘরে বাইরে তার কাজ। মায়ের সাথে ঘরে সংসার আগলানো। ছোট ভাই বোনেদের দেখাশুনা। দোকান পাট সবই। তারপর বাড়তি কাজ বাবাকে সামলানো। একজন দিন মজুর বাবা সারাদিন  খেটে খুটে বেসামাল হয়ে ঘরে ফেরে। তখন মাকে পাহারা দেওয়ার কাজ মেয়ের। বাবা বাড়িতে মেয়েকেই ভয় করে। ভয় বললে হয়তো ভুল বলা হয়। স্নেহবশত সমীহ করে। মেয়ে বাবার আদরের দুলালী। অন্ধ স্নেহ তার প্রতি। মায়ের ওপর বাবার যত হম্বি তম্বি। কিন্তু মেয়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস তার নেই। বেসামাল অবস্থাতেও নিজেকে মেয়ের সামনে সামলে রাখে। মেয়ে ঘরে বাইরে এত সামাল দেওয়ার মুখে নিজে বেসামাল হয়ে পড়ে যার ছোঁয়া লাগে শরীরে মুখে। তাও যা অবশিষ্ট তাতে চেহারার ওই মাধুর্য। হলপ করে বলা যায় জীবনযাপনের এই বেয়ারাপনা না থাকলে সে সুন্দরী বলে খ্যাতি পেত। তবে তাতে তার কিছু আসে যায় না। বরং গরিব মানুষের সে খ্যাতি বিড়ম্বনার কারণ হতে পারত গ্রামের উচ্চবিত্ত ভদ্রলোকদের কল্যানে। মানুষের চোখে পড়ার ভয় থাকত। তাও যে মধ্যে মধ্যে সে গ্রহে পড়তে হয় না তা নয়। তবে তাকে এড়িয়ে চলার কায়দা সে বাস্তবের ঘাত প্রতিঘাতে শিখে গেছে।


সুন্দরবনে বিদ্যাধরি নদী থেকে দক্ষিণে বয়ে যাওয়া একটা খারির মুখে বুড়িদের গ্রাম। সেই গ্রামে কয়েকটি বিত্তশালী পরিবারের বাস। শহরে ব্যবসা আর গাঁয়ে জমির মালিকনার দৌলতে তাদের বিত্ত।এরকমই একটা বিত্তশালী পরিবারের কর্তার নাম কুশল মানি। ভদ্রলোক নিজে গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। গ্রামে তার যথেষ্ট প্রতিপত্তি। কুশল বাবুর ছেলে মেয়েরা কেউ কেউ ভিন প্রদেশে চাকুরীরত আর কেউ কেউ শহরে থাকে চাকুরী বা ব্যবসা সূত্রে। মেয়েরা যার যার শশুর বাড়িতে। ছয় ছেলের মধ্যে দুজন কুশলবাবুর সঙ্গে থাকে। এখানকার ব্যবসা জমি জমা দেখাশোনা করে। তাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরা হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে। কুশলবাবু রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ছেলেদের বা নাতীদের মিশনে ভর্তিতে অসুবিধে হয় না। পড়াশুনার দৌলতে প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠিত। কুশলবাবুর বড় মেয়ে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্ত গড়িয়ায় থাকে। স্বামী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মেয়ের ঘরের নাতিটি কুশলবাবুর নেওটা। দাদুর কাছে ছোট বেলা থেকে আসাযাওয়া। একটু ভাবুক প্রকৃতির ভালো ছেলে। ছেলেটির নাম নীলাশীষ,  সবাই নীলু বলে ডাকে। লেখাপড়ায় ভালো। এখন ইংরেজি নিয়ে এম এ পড়ে। এই গ্রামের জীবনের প্রতি একটা টান আছে। মধ্যে মধ্যে চলে আসে। একুশ বাইশ বছর বয়স। প্রকৃতি ওকে টানে। ওর প্রকৃতি প্রেম ওকে লেখার উপাদান যোগায়। আর প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখা এখানকার মানুষের জীবন যাপন সম্পর্কে ওর উৎসাহ। তবে প্রকৃতির প্রাচুর্য আর তার মধ্যে মানুষের কঠিন জীবন যাপন, এই বৈপরীত্য তাকে পীড়িত করে।প্রকৃতি একদিকে যেমন উদার অন্যদিকে তেমনি নিষ্ঠুর। আর তার নিষ্ঠুরতার শিকার প্রধানত গরিব মানুষ। প্রকৃতির দানের সবটাই লুট করে নেয় বিত্তশালী মানুষ। গরিব মানুষ প্রকৃতিকে ছেঁচে যে সম্পদ সৃষ্টি করে তার কণামাত্র গরিব মানুষ পায় না। দিনে দিনে একদিকে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে আর তার ফলে একটা ক্ষুদ্র অংশ লাভবান হচ্ছে। অপরদিকে মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন হচ্ছে। প্রকৃতির রোষের শিকার হয় গরিব মানুষ। তাদের খাদ্য বস্ত্র শিক্ষা স্বাস্থ্য সবই নাগালের বাইরে। নীলুর ভাবুক মন এই স্ববিরোধতার কারণ খোঁজার চেষ্টা করে। এর প্রতিকারই বা কি ভেবে পায় না।


বুড়িদের বাড়ির কাছেই একটা পুকুর। জ্ঞান হওয়ার পড় থেকে এ গ্রামের সবচেয়ে কাছের কিছুর মধ্যে বুড়ির কাছে পুকুরটাই সবচেয়ে আপন জন। পুকুরের কাছেই সে তার যা কিছু নির্দ্বিধায় সমর্পণ করে। সেই শিশুকাল থেকে তার শরীর মন উৎসর্গ করেছে এই পুকুরকে। তার কাছে বুড়ির কোন লজ্জা নেই। বুড়ির সুখ দুঃখের সাথী এই পুকুর। নিজের নগ্ন শরীর সে এই পুকুরের বুকে ভাসিয়ে দিতে কখনও কার্পণ্য করে নি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সে তার নারীত্বকে আবিষ্কার করেছে পুকুরের সঙ্গে জলকেলিতে। পুকুর তার সব চাহিদা মেটায়। পুকুরের জলই তার জীবন। পুকুরের জলে তার জ্বলন্ত শরীর শীতল হয় মন শান্ত হয় পিপাসা মেটে। বাসন বসন ধোয়া মোছা সবেতেই পুকুর তার বন্ধু। তাই দিনের একটা বড় সময় বুড়ির কাটে পুকুরে, কখনও জলে কখনও  পুকুর পাড়ে। সে পুকুরের সঙ্গে নিভৃতে সুখ দুঃখের কথা বলে। পুকুর তাকে তার বারোমাস্যার কথা তুলে ধরে। গ্রীষ্মের দহনে তার ভরাট বুক ক্ষীণকায় হয়ে যায়। সে চেহারায় তাকে চেনাই যায় না। বর্ষায় তার ভরা যৌবন। শীতে সে আবার মজে যায়। ঝড় তুফান পুরুষাকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে কখনো কখনো। ক্ষত বিক্ষত করে তাকে। সমুদ্রের নোনা জল যেন তাকে ধর্ষণ করে। আবার বসন্তের সবুজ বনানী তাকে হাতছানি দেয়। পুকুরের এই সুখ দুঃখের বারোমাস্যার সঙ্গে বুড়ির নাড়ীর যোগ।


বুড়ি আর কারও চোখে না পড়লেও নীলুর চোখে পড়ে। পুকুরের পর বুড়িও বাবা মা ছাড়া আর যাকে আপন করে চিনেছে এই গ্রামে সে হল নীলু। এই পুকুরকে সাক্ষী রেখেই দুজনের আলাপ। এক অসম বন্ধুত্ব। কি আর্থিক অবস্থা কি সামাজিক মর্যাদা কি বিদ্যা বুদ্ধি সব কিছুর বিচারেই এ এক অসম সম্পর্ক। তাও সম্পর্কটা গড়ে ওঠে। প্রথমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম।  বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার আগেই নীলু বুড়িকে আবিষ্কার করেছে তার রূপে তার সৌন্দর্যে। শরীরের রূপে চলন বলনের সৌন্দর্যে। এই অসম দুই কিভাবে একে রূপান্তরিত হলো সেটা জেনে নেওয়া যাক। বিকেলে বুড়ি যখন সব কাজকর্ম ছেড়ে পুকুর পাড়ে বসে পুকুরের সাথে গল্প করে তখন নীলুকে প্রায়ই দেখা যায় উদাস মনে পুকুর পাড়ে। পুকুর ঘাট থেকে অদূরে সুন্দরী গাছ আর গরান গাছে আচ্ছাদিত রূপসী দ্বীপটার  দিকে তাকিয়ে। মাঝে মাঝে আড়চোখে বুড়ির দিকে তাকায়। উদাস মনে কি যেন ভাবে। বোধহয় ঋজু দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরী গাছ তার কাছে বুড়ির ছিমছাম দেহ বৈশিষ্ট্য। আর সবুজে সবুজে গরানের গুল্ম যেন তার মুখাবয়ব যা হাসির চ্ছটায় প্রস্ফুটিত। নীলুর রোমান্টিক মনে মান্না দের একটা গানের কলি ভেসে আসে: সে কেন এত সুন্দরী হল---

নীলু আবিষ্কার করে বুড়িকে কেবল দেহ সৈষ্ঠবে নয় তার মানসিক সৌন্দর্যেও সে তাকে চিনেছে। বুড়িও উদাসিন এই যুবকের মধ্যে এক প্রেমিককে যেন খুঁজে পায়। যে শুধু দেহের নয় মনেরও পিয়াস। 


কিছুদিনের জন্য নীলু এসেছে এ গ্রামে। গ্রীষ্ম কাল। বৈশাখ শেষ হয়ে জৈষ্ঠ। গ্রীষ্মের দহনে শরীরে জ্বলন। এ জ্বালা শুকোতে সময় লাগে। যতক্ষণ না বর্ষা নামে। দিনের শেষ বেলাতে তাপ কিছুটা কম। পুকুর পাড়ে বাতাসের শীতল হাওয়ায় শরীরের জ্বালা মেটে। সঙ্গে মনের জ্বালাও কমে। বিকেলে যথারীতি বুড়ি এসেছে তার সইয়ের কাছে। এরই মধ্যে বুড়ি লক্ষ্য করেছে নীলুও এসেছে। এখন নীলু শুধু যে প্রকৃতির টানে আসে তা নয়। তার মানসে এক মানস সুন্দরী। সেই হয়তো এখন তার প্রকৃতি। সে টান সে উপেক্ষা করতে পারে না। কিন্তু হঠাৎ এক বিপত্তি। আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে। আকাশে ধূমায়িত মেঘ যেন আছড়ে পড়বে। সুন্দরবনের গ্রীষ্মের এই বিকেলটাকে নীলু চেনে না। মাতাল হয়ে ওঠে বাতাস। আছড়ে পড়ে ঝড়। সব যেন লন্ড ভন্ড। এখান থেকে কুশলবাবুর বাড়ি বেশ দূরে। এদিকে নীলু পুকুরের পাড়ে ঢালের কাছে। বুড়ি প্রকৃতির এই চরিত্র জানে। এরপর কি হতে পারে সে আন্দাজ করে। এই অবস্থায় নীলু টাল মাটাল হয়ে যেতে পারে। ঝড়ের ধাক্কায় হয়তো পড়ে যাবে পুকুরের জলে। ভালো সাঁতার না জানলে বিপদ। এর মধ্যে অন্ধকার হয়ে এসেছে। বিপদ বুঝে বুড়ি এগিয়ে আসে। সে আসতে আসতে যে ভয় পাচ্ছিল তাই হয়। নীলু নিজেকে সামলাতে না  পেরে পড়ে যায়। বুড়ি এগিয়ে এসে ওকে ধরে। নীলু বুড়িকে ধরে ওঠে। খুব জোড়ে বৃষ্টি নামে। দুজনে কাছেই একটা ছাউনিতে আশ্রয় নেয়। এই প্রথম দুজনে দুজনের চোখাচুখি । কথা বলার সুযোগ।বর্ষণ সিক্ত বসনে বুড়ি আনত মুখে নীলুর কথার উত্তর দেয়।পরস্পরকে আনুষ্ঠানিকভাবে চেনা। কার কি নাম কে কি করে কোথায় থাকে ইত্যাদি। তবে এতে পরস্পরকে চেনার আগ্রহের তেষ্টা কারও মেটে না। এরই মধ্যে বৃষ্টি ভেজা নারী দেহ নীলুকে চিনিয়ে দেয় বুড়ির দেহ সৈষ্ঠব। নামের সঙ্গে চেহারার কি অমিল। নামটা যেখানে তাকে নিয়ে যায় আকাশ পারে চরকা কাটা বুড়ির দুয়ারে তেমনি এই বৃষ্টি ভেজা নারী শরীর তাকে  সুযোগ করে দেয় সেই বর্ষা রাতে  বিরোহিনীর ঘরে উঁকি মারতে। এ যেন পুকুরের ছায়ায় দেখা এক যুবতী।সিক্ত স্নিগ্ধ। দিনের রোদের দহন আর পরিশ্রমের ক্লান্তিতে রিক্ত শরীরটা বৃষ্টিতে ভিজে আর স্নিগ্ধ বাতাসে সিক্ত হয়ে ওঠে।আর ওর কথাবার্তা সম্ভ্রব বোধ নীলুকে আকৃষ্ট করে।বুড়ি বোঝে নিলু শিক্ষিত মার্জিত এক পুরুষ। সে কৃতজ্ঞ তার সাহায্য পেয়ে।  সে বার বার বলে আজ বুড়ি তার প্রাণ রক্ষক। তবে দুজনেই এই প্রথম আলাপে মনের টানটা যতটুকু অনুভব করে শরীরের টানটা ততটা নয়। সংযত দুই পুরুষ নারীর প্রথম পরিচয়টা  জনমানব শূন্য এই রহস্যময়ী আলো আঁধারেও মানসিক যোগাযোগের মধ্যেই সীমিত থাকে। বেশ কিছু পর বৃষ্টি থামলে প্রায় অন্ধকারের মধ্যেই একজনকে আরেকজনের কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়। দুজনেই সঙ্গে নিয়ে যায় শরীর ও মনের এক অচেনা অথচ কাঙ্খিত স্পর্শের রেশ।


এরপর থেকে দুজনকে দেখা যায় গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরালা খুঁজতে। নীলুর এখানে আসার আকর্ষণ বেড়ে যায়। ও এলে ওরা দুজন দেখা করে। নির্জনে বসে গল্প করে। কখনও বনে বাদারে কখনও পুকুর পাড়ে। দুজনের শিক্ষা দীক্ষা চাল চলনে ব্যাপক ফারাক থাকলেও যখন ওরা আলাপে প্রলাপে তখন এই আনুষ্ঠানিক বৈপরীত্য দূর হয়ে যায়। একজন আরেকজনকে কাছে টেনে নেয়। পরিবেশের বন্যতা তাদের সভ্য সমাজের কৃত্রিমতাকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। সুন্দর বনের আদিমতা তাদের আঁধারে ঢেকে দেয়। সুযোগ করে দেয় একজনকে আরেকজনের কাছে পেতে। দুজনের একান্ত আলাপে সব সময় যে প্রেমের জোয়ার বয় তা নয়। মত পার্থক্য দেখা যায়, সংশয়ের কালো মেঘ উঁকি মারে। বিশেষ করে আলোচনা প্রসঙ্গে উভয়ের পরিবারের সামাজিক মর্যাদার প্রশ্ন যখন ওঠে। বাড়িতে কে কি করে সে সব আলোচনা হয়। বুড়ি সবসময় যেন দ্বিধাগ্রস্ত শঙ্কিত থাকে। একেই সে গাঁয়ের মেয়ে। গাঁয়ের আঁচার আচরণ চাল চরণ শহরের শিক্ষা সংস্কৃতি থেকে আলাদা। দুটো পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি শিক্ষা দীক্ষা দুজনকে সামাজিক মর্যাদায় দুই প্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। এই অবস্থায় সমস্যাটা মেয়েদের বেশি বিশেষ করে অর্থে শিক্ষায় সামাজিক মর্যাদায় মেয়েরা  যদি বুড়ির মত শতছিন্ন পরিবার ভুক্ত হয়। ছেলের পরিবার যদি বিত্তশালী হয় তবে সাধারণত সেই বিত্তশালী পরিবার থেকে চাহিদাটা আকাশ প্রমান। বিয়ের যৌতুক যদি থাকে তবে তো প্রশ্নই ওঠে না। সাধ্যাতীত। তাছাড়া লেখাপড়া চাল চলন কিছুতেই খাপ খায় না। এসব ভেবে বুড়ি শঙ্কিত হয়। প্রাথমিক আবেগটা কেটে গেলে নীলু কি ওকে সেভাবে গ্রহণ করতে পারবে? নীলু পারলেও ওর পরিবার। বুড়ি জানতে চায়। এতে নীলু বিড়ম্বনায়। সত্যি কথাটা পুরো বলতে পারে না। জানে বাড়ি মানিয়ে নিতে পারবে না। ও নিজেও কি পারবে? উত্তরটা সবটা জানা নেই। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী সমাজে মর্যাদাসম্পন্ন একজনের পক্ষে বাস্তবে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। নীলু সেটা জানে। জানে বলেই আলাপ চারিতায় তার ব্যবহারে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। আর বুড়ির মত মেয়েদের বাস্তব বোধ অতি তুখোড় কারণ বাস্তবকে তাদের মত মেয়েদের মুখোমুখি প্রাত্যহিক জীবনে মোকাবিলা করতে হয়। তাই সে সেটা বোঝে। তাও প্রেমের আমেজে বিষয়গুলো চাপা থাকে। এক ধরণের স্পর্ধা মাথা চাড়া দেয়। স্পর্ধা নিয়েই বুড়িরা বেঁচে থাকে। কিন্তু নিলুরা কি পারবে শেষ রক্ষা করতে, প্রেমের নিগড় আঁকড়ে ধরে রাখতে। নাকি আর দশটার মধ্যে নয়টায় যা ঘটে তারই এখানে পুনরাবৃত্তি ঘটবে।  সেই বিচ্ছেদ বিরহের সেই খেলা!


ওদের এই মেলামেশায় অসম সম্পর্কে গ্রামের মানুষের মধ্যে আলোড়ন ওঠে নি যে তা নয়। ব্যাপারটা আর এখন গোপন নয়। ওরা দুজন চলা ফেরা মেলা মেশায় আগের থেকে অনেক বেশি স্পর্ধিত। অনেকটাই খোলা মেলা। বলতে গেলে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলে। এটা যে সবাই মেনে নেয় তা নয়। তবে এ ধরণের অজপাড়াগাঁয়েও আজ শহরের ছোঁয়া। ছেলে মেয়েরা আগের তুলনায় অনেকটাই লাগাম ছাড়া। ছেলে মেয়েরা একসঙ্গে স্কুলের পড়ে। মেয়েদের উপস্থিতি স্কুলে রাস্তা ঘাটে খেলার মাঠে বেড়েছে। পরস্পর  বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । তাই এসব নিয়ে এখন আর তেমন হৈ চৈ হয় না। ঘরে ঘরে এর প্রভাব। অন্যের ঘরের আলোচনা আনতে গেলে সবারই নিজের ঘরে চোখ পড়ে। তাই  এ ধরণের সম্পর্ক নিয়ে আসর বসিয়ে তা নিয়ে গুলতানি হয় না আগের মত। তবে এ নিয়ে আড়ালে আগডালে কথা হয়। বিব্রত হয় বাড়ির অভিভাবকরা। যেমন মানি মাস্টারমশায়ের কাছে নাতি নিয়ে নালিশ এসেছে। তিনি রীতিমত অস্বস্তিতে। আজকের দিনে প্রেম ভালোবাসা আর কারও অভিভাবকের অভিভাবকত্ব মেনে চলে না। সেটা মাস্টারমশাই জানেন। এ নিয়ে তিনি নাতিকে শাসন করতে ভরসা পান না। আবার চিন্তা আছে ব্যাপারটা মেয়ে জামাই কিভাবে নেবে। আর এই অসম সম্পর্কটা তিনি জানেন জামাই মেনে নেবে না। তাদের যে আর্থিক অবস্থা আর জীবন ধারণ তাতে দুস্থ  প্রায় অশিক্ষিত পরিবার আর সে বাড়ির মেয়েকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। উনার স্ত্রী বেঁচে নেই যে সে ব্যাপারটা সামাল দেবে। এর জন্য তাকেই দায় নিতে হবে। তিনি যে কি করবেন ভেবে পান না। ওদিকে বুড়ির বাবার অবস্থা আরও খারাপ। তিনি জানেন ব্যাপারটা একদম মানান সই নয়। সমাজ একে গ্রহণ করে না। অনেকে ইতিমধ্যে বলা শুরু করেছে যে মানু বাবু মানে বুড়ির বাবা সুযোগ নিয়ে মেয়েকে এক বোকা ভালো ছেলের ঘারে চাপিয়ে দিতে চাইছে। অথচ মানু বাবু কিন্তু মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছেন। দুচারজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তবে একটা গরিব পরিবারে মেয়ের বিয়ে ব্যাপারটা অত সহজ নয়। তিনি মেয়ের এই বিষয়টা একেবারেই পছন্দ করেন না। বরং তাঁর মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে। ধনি  পরিবারের সুখী ছেলে। সেখানে মেয়ের সুখ কি সইবে? ওদের কখন কি মর্জি হয়। ঘোর ভাঙলে ছেলে সরে যেতে পারে। এর মধ্যে কোন অঘটন না ঘটে! উনার নানা দুশ্চিন্তা। তিনি মেয়েকেও বকাবকি করেছেন। কিন্তু তার আর কি করার আছে ? আরও একটা ব্যাপার তলায় তলায় পাকাচ্ছে। সে আর এক সমস্যা। এ গ্রামের এক মহাজন নিধিবাবু তাঁর ছেলের জন্য বুড়িকে পাত্রী হিসেবে পেতে চান। মহাজন মানুষটাকে মানুবাবুর একেবারেই পচ্ছন্দ নয়। শুধু টাকা বোঝে। আর গরিব মানুষকে পায়ের তলায় রাখতে চেষ্টা করে। ছেলেটাও তথৈ বচ। গুণের শেষ নেই। জুয়া মদ তো আছেই। তাছাড়াও অনেক। মানুবাবু নিজেও একজন মাতাল। কিন্তু মেয়ের সঙ্গে মাতালের বিয়ে দিতে আপত্তি। আবার গ্রামের এরকম এক প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রস্তাব মুখের ওপর অস্বীকার করা মুশকিল। অথচ জানেন  এমন জামাইয়ের সঙ্গে মেয়ে বেশিদিন ঘর করতে পারবে না।


গ্রামীন সমাজে মানুষগুলোর মধ্যেকার বাদ বিবাদ হিংসা প্রতিহিংসা পরস্পর সহযোগিতা আনন্দ নিরানন্দ কোন আভিজাত্যের আড়ালে আড়াল থাকে না। তা খোলাখুলি অনেকসময় দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ পায়। সভ্য সমাজে যা একধরনের অসভ্যতা। এই গ্রামের পারস্পরিক সম্পর্কেও এটা ব্যতিক্রম নয়। সেই জন্যই দেখি মানি মাস্টারমশাইকে তার নাতিকে নিয়ে নানা রকম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। মাস্টারমশাই এর সঙ্গে নিধিবাবুর বিরোধটা প্রকাশ্যে আসে। গ্রামের মানুষের যে শ্রদ্ধা মাস্টারমশাই পান সেটা নিধিবাবু পান না। যদিও নিধিবাবুর আর্থিক প্রতিপত্তি মানি বাবু থেকে কম নয়। আর মাস্টারমশাই দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে নিধিবাবুর মহাজনী কারবার ফেঁপে ওঠাটাকে পছন্দ করেন না। সে নিয়ে পরষ্পর দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ। নিধিবাবুর মধ্যে একটা প্রতিহিংসা স্পৃহা কাজ করে। মাষ্টার মশাইয়ের নাতির বুড়ির সঙ্গে সম্পর্কটা নিয়ে নিধিরাম ঘোট পাকানো শুরু করেন। তার দুটো উদ্দেশ্য। মাষ্টার মশাইকে অপদস্ত করা আর একই সঙ্গে নাতিকে বুড়ির থেকে দূরে সরিয়ে বুড়ির বাবাকে বাধ্য করা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে। উনু জানেন উনার পরিচয়ে আর ছেলের গুণের জন্য এখানে সক্ষম পরিবারগুলোর ঘরের মেয়েকে বউ হিসেবে পাওয়া মুশকিল। আবার উনার ছেলে তার নিজ গুনেই আসে পাশে গ্রামে পরিচিত হয়ে গেছে। আর উনি তো তার বড় পরিবারের জন্য একজন বউ একই সঙ্গে বাদী চান যে তাঁর ঘরে দিনরাত মুখ বন্ধ রেখে গতরে খেটে যাবে আর একই সঙ্গে ছেলের সব অপকীর্তি মেনে নিয়ে তার রাতের সঙ্গিনী হবে।সেটা সম্ভব মানুর মত গরিব মানুষের মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েই। নিধিবাবু তার এই দ্বিমুখী লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বলে বেড়াচ্ছেন মানিবাবুর প্ৰশ্রয়ে গরিব অশিক্ষিত মানুষগুলো বেড়ে উঠছে। তাদের ঘরের মেয়েরা বেপরোয়া। এটাকে আটকাতে না পারলে গ্রামের জীবনে উশৃঙ্খলা দানা বাঁধবে। গ্রামের বেশ কিছু মানুষ নিধিরামের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে তাকে সমর্থন করে। মানি মাস্টারের সামাজিক সম্মানের হানি ঘটতে থাকে বলে উনি আশংকিত হয়ে ওঠেন। উনি গরীব মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও উনার আর্থিক প্রতিপত্তি সামাজিক মর্যাদা উনাকে নাতির সঙ্গে বুড়ির প্রেম ঘটিত ব্যাপারটা মন থেকে মেনে নিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তাই নাতি এ পথ থেকে সরে আসুক সেটা তিনি চান। আর তার একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে যার সঙ্গে মানুবাবুর পরিবারের আত্মীয়তা সম্পর্কটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই তিনি বুঝেও নিধিরামের আক্রমণের মুখে নিজেকে কম জোরি বলে মনে করেন। তার কাছে এ লড়াই নিজের সন্মান রক্ষার লড়াই বলে মনে হয় যেটাতে জয় সম্ভব ওদের বিচ্ছেদে। যদি নাতি সরে আসে তবে তা নির্বিগ্নে ঘটে যায়। নিধিরামের মত একটা লোকের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে যেতে হয় না। নিজের সন্মান বাঁচিয়ে এ যুদ্ধে জয় সম্ভব।


ইদানিং এ গ্রামে বুড়ি আর নীলুকে আগের মত দেখা যায় না। আগে প্রতি শনি রবিবার ছুটিতে নিলু যেমন নিয়মিত আসত এখন তেমন আর আসতে পারে না। হয়ত ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার চাপ বেড়েছে অথবা কুশলবাবু নাতির বেশি আসাটা পছন্দ করেন না তাই। বুড়িকে নিলু জানিয়েছে এ নিয়ে দাদু বিরূপ। আর নীলুর বাবা মা ব্যাপারটা জানায় জটিলতা বেড়েছে। তবে কি নিলু আসতে আসতে সরে যাচ্ছে। বাড়ির চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে চলেছে! প্রশ্ন ওঠে বুড়ির মনে। এ ব্যাপারটা আগে বুড়ি নীলুর কাছে তুলেছিল। এরকম একটা অমিলের মেলবন্ধন কি সম্ভব। এতটা অসম সম্পর্ক বাস্তবে কার্যকরী হওয়া ততটা সম্ভব নয় বলে সে সংশয় প্রকাশ করেছিল। কিন্তু নিলু সেটা গ্রাহ্য করে নি। তাকে যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছিল। আর নীলুর একার কেন বুড়িরও তো একটা সমস্যা ছিল। ও বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে। জানত নিধিবাবুর চাপ দিন দিন বাড়ছে। বাবাকে রাজি হতে বাধ্য করানোর চেষ্টা চলছে। আর গ্রামের কেউ কেউ তাতে সায় দিচ্ছে। নিধিরাম এর প্রস্তাবটা বুড়ির বাবা যখন বুড়িকে জানায় তখন বুড়ি সেটাতে আপত্তি জানায়। কিন্তু ও যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। জানত নিধিবাবুরা পয়সার প্রতিপত্তি খাটিয়ে বাবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে এ কাজটা সম্পন্ন করতে চাইবে। আর বাবার পয়সা নেই, সেই গরিমা নেই যে ইচ্ছেমত মেয়ের জন্য পাত্র ঠিক করবে। ওদিকে এটাও সত্যি যে সে নীলুর ও তার পরিবারের কাছে তেমন মানানসই নয়। আর বিয়েটা তো মানানসই দুজনের মধ্যে গাঁট বন্ধনের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের সামাজিক স্বীকৃতি। প্রেম সেখানে পরের প্রশ্ন। প্রেম থাক বা না থাক মানিয়ে চলার বিষয়টি প্রধান। আর মেয়েদের কাছে মানিয়ে চলাটা বাধ্যবাধকতা। তার নিজের সত্তা আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে হলেও। প্রেমে পড়ে নিলু নিজেকে প্রত্যয়ী বলে যতই মনে করুক না কেন বিয়ে আর প্রেম সব সময় একই প্রবাহে বয় না। বিয়ের পর জটিলতা তৈরী হয়। সেও হয় তো ও বাড়িতে শেষ পর্যন্ত বান্দায় পরিণত হবে। যেভাবে নিধিরাম ওকে উনার বাড়িতে বউ হিসেবে পেতে চায় সেটাই নীলুর বাড়িতে ওর পরিণতি। বিশেষ করে ও যেখানে পড়াশুনা জানে না। আচার আচরণে একটা বৈপরীত্য। এই সব সাথ পাঁচ ভেবে বুড়ি একেক সময় ভাবে এই সম্পর্কটা না তৈরী হলেই ভালো হত। ওদের মত গরীব ঘরের মেয়ের কাছে এটা দিবাস্বপ্ন। নিধি বাবুদের খোয়ারেই ওদের স্থান। আর বাবা এই নিয়ে যদি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় তবে বাবাকে দোষ সে দিতে পারে না। দারিদ্রই এর জন্য দায়ী। গরীব বলেই ওর পড়াশুনা হয়নি সামাজিক মর্যাদা সে পেতে পারে না । তাই এটাই যেন বিধাতার বিধান। তাকেও হয়তো মেনে নিতে হবে।


নীলু বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পড়াশুনা আর অন্য কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাড়িতে বুড়িকে নিয়ে বিশেষ করে বাবার সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে।  সম্পর্কটা জানা জানি হবার পর বাবা রীতিমত খড়গ হস্ত। এর জন্য দাদুকে যথেষ্ট অপমানিত হতে হয়েছে। সেটা নীলু মেনে নিতে পারে নি। মাও ব্যাপারটা যে মেনে নিয়েছেন তা নয়। তবে তিনি নিলুকে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন যে এ ধরণের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা শক্ত। এই সমাজে মায়ের এই প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক বলে মনে হলেও বাবার সঙ্গে তার বিরোধ কারণ বুড়ির পরিবার গরিব বলে তারা বাবার কাছে মানুষই নন। তাছাড়া আনুষ্ঠানিক বিচারে অশিক্ষিত। পরিবারের সাথে বিরোধ নিলুকে পরিবার থেকে যেন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সে বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় কাটায়। অনেক সময় বাড়ি ফেরে না, বাড়িতে থাকলে পড়াশুনা নিয়ে থাকে। আর সে একটা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যারা দেহ ব্যবসায়ী মেয়েদের অধিকার সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে লড়াই করে, তাদের মুক্তির কথা ভাবে। সেই সূত্র ধরে নিষিদ্ধ পল্লীতে তাদের যাতায়াত। তার এম এতে অধ্যয়নের বিশেষ বিষয় এইসব মেয়েদের শিল্প সাহিত্য প্রতিভা। এই নিয়ে সে লেখালেখি করে। এদের বাস্তব জীবন যেন ওকে জীবনটাকে দেখার ব্যাপারে নতুন একটা চোখ দিয়েছে। সে আমাদের স্বীকৃত সমাজের সঙ্গে এই সমাজটার পার্থক্য বোঝে।একটু গভীরে ঢুকে বুঝতে চেষ্টা করলে চমকে ওঠে। আমাদের সমাজটা স্বীকৃত কিন্তু এই সমাজটা ব্রাত্য যদিও আমাদের সমাজের শিক্ষিত অশিক্ষিত গরিব বড়লোক সব স্তরের মানুষের জৈবিক চাহিদা মেটাবার  জন্যই অর্থের মাধ্যমে লেনদেনে গড়ে উঠেছে এই বাজার। এটাও পণ্যের বাজার। মেয়েরা এই বাজারে মাছ মাংস শাক সবজির মত পণ্য। ফল ফুল সবজি এমন কি বিশেষ ক্ষেত্রে মাছ মাংস দেবতার প্রাঙ্গনে উৎসর্গের দ্রব্য হলেও তা বাজার থেকে এনে ঘরে তুললেও একটা জ্যান্ত মানুষ একই সেবা করেও অর্থাৎ মানুষের চাহিদা মেটালেও এই সমাজে অস্পৃশ্য ব্রাত্য হয়ে যায়। মূল সমাজে তার জায়গা হয় না। সভ্য জগতে এ এক অদ্ভুত স্ববিরোধিতা। এই দেহব্যবসায়ী  মেয়েদের সঙ্গে তাদের ছেলেমেয়েরাও ব্রাত্য।


অনেকদিন পরে নীলু সুন্দরবনের সে গ্রামে। দিদিমা বেশ কিছুদিন মারা গেছেন। তখন পরীক্ষা থাকায় আসতে পারে নি। তাছাড়া বুড়ির সঙ্গে সম্পর্কটা নেই। ওর বিয়ে হয়ে গেছে সেই নিধিরামের ছেলের সঙ্গে। বলতে গেলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবাকে বাঁচাতে।  দু বছর আগে যে ভয়ঙ্কর ঝড় তুফান তাতে ওদের ঘর ভেঙে যায়। বাবাকে নিধিরাম টাকা দেয় ঘর করে নিতে। সে টাকা শোধ দিতে পারে না বাবা। তারপর চাপে পড়ে বাধ্য হয় মেয়েকে ও বাড়িতে সমর্পণ করতে। নীলুর খুব ইচ্ছে জানতে ও কেমন আছে। কিন্তু কি করে জানবে। এদিকে দাদুর শরীর ভালো না। তার দুই ছেলে এখন আলাদা থাকে। দাদু বড় ছেলের সঙ্গে ওর স্ত্রী আর তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে। এখানে নীলুর আর আগের মত টান নেই। তাও দাদুর স্নেহ ধন্য সে। দাদুর কাছে বুড়ি আর বুড়ির পরিবারের খবর পায়। বুড়ি শ্বশুর বাড়িতে ভালো নেই। পরিবারের সব কাজ। তার ওপর জামাইয়ের উশৃঙ্খল জীবন। বুড়িকে মদ্য অবস্থায় কুৎসিত গালাগালি আর মারধর করে। এই নিয়ে গ্রামের মানুষজন বিরক্ত। ওকে সাবধান করলেও কিছু আসে যায় না ওদের। শুনে নীলুর মন খারাপ। নিজেকে দায়ী করে। ও যদি ওর ব্যাপারে যত্নশীল হত ওর নিজের সিদ্ধান্তে কঠিন থাকত তবে মেয়েটার এই পরিণতি হত না। ওর ইচ্ছে করে ওকে একবার দেখার।


বিকেল না হতেই নীলু সেই পুকুর পাড়ে। অতীত স্মৃতি তাকে তাড়া করে। এখানেই বুড়ির সাথে আলাপ। সেই ঝড় তুফান। বৃষ্টিস্নাতা বুড়ি যেন সামনে দাঁড়িয়ে। সেই দুর্যোগে ওই ওর অভয়। বুড়ির জন্য জলে তলিয়ে যায় নি। মনে পড়ে এই সবুজ বনানী। নিটোল পুকুর যে পুকুরের জলের ছায়ায় সে আবিষ্কার করেছিল বুড়ির শরীরের সৌন্দর্য রাশি। তা আজ কেমন ধূসর। এই শীতের বিকেলে সূর্যের রেশমিতে পাতা ঝরে গেছে। গাছের মাথা ন্যাড়া মাথা । প্রকৃতি কেমন বিষণ্ণ। তার প্রকৃতি প্রেম যেন আজ বিরহ বেদনায়। অন্যমনস্ক নীলুর হঠাৎ চোখে পড়ে কে এক মহিলা কাপড় কাঁচছে। মনে পড়ে এই সময় বুড়ি কাপড় কাঁচত বাসন মাঝতো তারপর শরীরটাকে পুকুরের জলে ভাসিয়ে দিত কোন যেন পরিচিত এক ভঙ্গিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলুর মন বলে এই তো সেই বুড়ি। কেমন যেন বুড়িয়ে গেছে। সেই টান টান শরীর ভেঙে পড়েছে। মাত্র দু বছরে এ কি চেহারা হয়েছে! দাদু বলেছেন বুড়ি ভালো নেই। এই ভালো না থাকার প্রত্যক্ষ নিদর্শন। ওদিকে বুড়িও নিলুকে লক্ষ্য করেছে। না চেনার কিছু নেই কারণ নীলু একই রকম আছে। দুবছরটা কোন সময় নয়। এরপর কোন ভনিতা না করে বুড়িই এগিয়ে আসে। জানতে চায় ওর খবর কি। তারপর দুজন পাশাপাশি আগের মত। বুড়ি জানায় ওর অবস্থা। ও বাধ্য হয়েছিল বিয়ে করতে। তারপর সেই অত্যাচার। কিছুদিন হল তার বাবা মারা গেছে। সে শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছে আর ফেরার ইচ্ছে নেই। ছোট তিন ভাইবোন আর মা। মা বাবুদের বাড়িতে কাজ করে। সেও সকালে একবেলা কাজ করে। তার আর ফেরার ইচ্ছে নেই। শ্বশুরবাড়ি জোর করছে ফেরার জন্য। তারা বিনে পয়সায় পাওয়া এরকম এক বাদিকে হারাতে রাজি না যে সংসারের কাজ করে আবার অপদার্থ একটা মানুষের কামনা চরিতার্থ করে। তার বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। রোজগার বাড়াতে কি করবে ভেবে পায় না। এক এক সময় ভাবে মায়ের কাছে ভাই বোনকে রেখে নিজে শহরে গিয়ে একটা কাজ বেছে নেবে। বুড়ি জানতে চায় নীলু কি করছে। নীলু জানায় ওর পড়াশুনা শেষ হয়ে গেছে। একটা চাকরি খুঁজছে। ভেঙে সবটা বলে না। নিজের সংগঠনের কাজ বা বাড়ির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। কথা বার্তা শেষে দুজনে ঘরে ফিরে আসে। বুড়ি তাকে অনুরোধ করে এখান থেকে নিয়ে যেতে। কিন্তু বুড়ি পরস্ত্রী বলে সেটা নীলুর পক্ষে সম্ভব নয় বলে সে জানায়।


বছর পনের কেটে গেছে। এখন নীলুর বয়স চল্লিশ বা তার কাছে। সুন্দরবনে দাদু মারা গেছে। তার সেখানে আর যাওয়া হয় না। খবর পেয়েছে বুড়ি কলকাতায় কোথাও কাজ করে। তার রোজগারে সংসার চলে। কলকাতায় নীলুর অলিতে গলিতে যাতায়াত হলেও এই লোক অরণ্যে কোথায় বুড়িকে খুঁজে পাবে? তাও ভাবে কখনও যদি দেখা হয়। আর দেখা হলেই বা কি! ও কি করতে পারবে। নীলু মগ্ন থাকে দেহব্যবসায়ীদের সগঠনের কাজ নিয়ে। সমাজ সেবা হিসেবে জীবনটা কাটিয়ে দেওয়াই তার ইচ্ছে। মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বাবার সঙ্গে তেমন সম্পর্ক নেই। আর দেহ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ সেটা তো সভ্য সমাজে পাতে পড়ে না। আর ওতে একটা অস্পৃশ্যতার ছোঁয়া আছে যেটা বাবার সংস্কৃতিতে ব্রাত্য। তাই সে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে উত্তর শহরতলিতে থাকে। টিউশনি করে নিজের ভালোই চলে যায়। আর ওর পড়ানোতে যথেষ্ট সুনাম। তাই অসুবিধে হয় না। বিয়ে করে নি। এরই মধ্যে জীবনের একটা পর্যায় সে পার হয়ে এসেছে যেটা আমাদের অজানা। এম এ পড়তে পড়তে নীলু যখন মেয়েদের এই সংগঠনের সঙ্গে কাজ শুরু করে তখন ওর ক্লাশের রিনা বলে একটি মেয়ে ওই সংগঠনে কাজ করত। তখন নীলুর বুড়ির সঙ্গে সেই সম্পর্ক। মেয়েটি কাজকর্মে দক্ষ। ও নিলুকে পছন্দ করত। বিষয়টা যেন আর না গড়ায় তাই নীলু রিনাকে বুড়ির কথা বলে। রিনা বোধ হয় এই অসম সম্পর্ক টিকবে না বলে অনুমান করে। নীলুর সংগ ধরে থাকে। নীলু ওকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে। তারপর বুড়ির সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়লে ওর বিয়ে হয়ে গেলে রিনারর সঙ্গে নীলুর সম্পর্কটা গড়ে ওঠে। দুজনে একসঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। নীলু ভাবে ওর সঙ্গে বিবাহিত জীবনটা গড়ে তুলবে যেটা দুজনকে সংগঠনের কাজে সাহায্য করবে। কিন্তু এম এ পরীক্ষায় রিনা খুব ভালো ফল করে। বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করার জন্য স্কলারশিপ পায়। সে সেটা গ্রহণ করে। বিদেশে যাওয়ার পর কিছুদিন দুজনের মধ্যে চিঠিতে যোগাযোগ থাকে। রিনা ওখানে ডক্টরেট করে চাকরি পায়। আর দেশে ফেরে না। শোনা যায় ও পিএইচ ডির গাইডকে বিয়ে করে অক্সফোর্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে। আর নীলু এখানে বুড়ির স্মৃতি নিয়ে আর সংগঠন নিয়ে দিন যাপন করছে। রিনার পাট চুকে যায়।


নীলুর চিন্তাজগতে একটা বিষয় বার বার ঘুরে ফিরে আসে। এই নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা বন্ধুদের সঙ্গে বিবাদ হয়। প্রশ্ন জাগে এই সংগঠনের কাজ দেহব্যবসায়ীদের কতদূর সাহায্য করতে পারে? নীলুর মনে হয় এই পিছিয়ে পড়া সমাজে বঞ্চিত বিচ্ছিন্ন মেয়েদের মধ্যে একটা অধিকার বোধ জাগিয়েতো লা  যায় এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন সরকারি সুবিধা আদায় করা যায়। এদের সন্তানদের সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। নীলু মনে করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এটা করা যায়। শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলনকে অস্বীকার  করা যায় না। সীমাবদ্ধতা থাকলেও গণতন্ত্রের পরিসরে এটা করা প্রয়োজন। আবার অনেকে মনে করে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া যায় না। নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ের পথে এই সংগ্রাম একটা সমঝোতার পথ মাত্র। সমাজ পরিবর্তনের লড়াই ছাড়া এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নেই। শ্রেণীসংগ্রামের সঙ্গে একে যুক্ত হতে হয়। কিন্তু দেহ ব্যবসায়ীরা শ্রমিক শ্রেণী নয় তাই তাদের লড়াইকে ঠিক  শ্রেণীসংগ্রাম সেটা সঠিক অর্থে বলা চলে না যদিও এটা শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই। কিন্তু এক শ্রেণীর দ্বারা অন্য এক শ্রেণীকে উৎখাতের লড়াই এটা নয়। এই নিয়ে বিতর্ক চলে।


নীলু মধ্য কলকাতায় একটি নিষিদ্ধ পল্লীতে সংগঠনের কাজ করে। ওদের আন্দোলন গতি পেয়েছে। দেহব্যবসায়ীদের নানা সমস্যা নিয়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে। এখন নতুন করে তাদের ছেলেমেয়েদের সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া তাদের মূল স্রোতের শিক্ষাব্যবস্থায় যে কোন প্রতিষ্ঠানে বিনা খরচায়  শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেবার দাবি ওঠে। এতদিন ওদের জন্য পৃথক কয়েকটা স্কুলে দায়সারা ভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তাকে সার্বজনীন করার দাবি ওঠে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না দিলে তাদের সামাজিক স্বীকৃতি কার্যত অস্বীকার করা হয়। এ ব্যাপারে হাওড়ার একটা নিষিদ্ধ পল্লীতে ফুলকি নামে এক মহিলার নেতৃত্বে আন্দোলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওদের সঙ্গে একত্রে নিলুরাও নিজেদের  কর্মস্থলে আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। যে ব্যাপারে ফুলকির সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব পরে নীলুর ওপর। ফুলকিকে নীলু চেনে না। শুনেছে ও নাকি খুব ভালো সংগঠক। নিজে একজন দেহ ব্যবসায়ী ছিলেন এখন সর্বক্ষনের সংগঠক। নীলু হাওড়ায় নিষিদ্ধ পল্লীতে যায়। ঠিকানা ধরে ফুলকিকে খুঁজে পায়। যে নিয়ে যায় সে ফুলকির দরজায় নিলুকে পৌঁছে দেয়। নীলু দরজায় কড়া নাড়ে। এক মহিলা দরজা খুলে দাঁড়ায়। সুন্দর ছিমছাম চেহারা। দেখেই নীলু চেনে। সেই বুড়ি দাঁড়িয়ে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। অবাক হয় নীলু। ও এখানে! ওর মনে পড়ে বুড়ি বলেছিল শ্বশুর বাড়ি থেকে রেহাই পাবার জন্য আর সংসার খরচ টানার জন্য ও কলকাতায় কোন কাজ ধরবে। তবে এটাই কি এই  সেই কাজ। কে এর সন্ধান দিল! বুড়িও নিলুকে চেনে। একটু শ্লেষের ভঙ্গিতে বলে: কি তুমি? পরস্ত্রীর দুয়ারে!


নীলুর মনে পড়ে সেই পুকুর ঘাটে যখন শেষ দেখা বুড়ি তাকে তার দুরবস্থা থেকে বাঁচাতে অনুনয় করেছিল তাদের পরস্পর সম্পর্কের দাবিতে। নিলু সেই সম্পর্ককে মূল্য দেয়নি l তখন সে বুড়িকে বলেছিল বুড়ি পরস্ত্রী। তাকে সে কিভাবে সাহায্য করবে? আইনে আটকাবে। নীলু বোঝে আজ সঠিক মুহূর্তে সঠিক জবাবটা দিয়েছে বুড়ি। আজ এটা তার প্রাপ্য। সে রাগ করে না। বরং বুড়ির প্রতি অনুরাগে যেন সিক্ত হয়। হাসতে হাসতে বলে, 


" আমাকে বসতে দেবে তো? অনেক কিছু আলোচনার আছে। তুমিই তো ফুলকি? তোমার সঙ্গে সংগঠনের হয়ে কথা বলতে এসেছি।" এরই মধ্যে ও লক্ষ্য করে বুড়িকে শেষ দেখায় যে বুড়িয়ে যেতে দেখেছিল সেটা আজ আর নেই। শরীরে মাংস লেগেছে। মুখে চাকচিক্য। সে সেই যৌবনের বুড়ি।


ফুলকি নীলুকে নিয়ে ঘরে বসে। কে কেমন আছে জানতে চেয়ে কথা শুরু হয়। বুড়ি জানায় বছর বারো তের হল সে এখানে আসে। এক দালাল চাকরি দেবে বলে আনে। তবে চাকরি নয় এই  ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। আর এই ব্যবসার আয়ে এতদিন তার সংসার চলত। নিজের হেসে খেলে চলে যায়। এখন ভাইরা বড় হয়ে কিছু না কিছু করে। সংসারের খরচ ওরাই চালায়। বুড়িকে আর টাকা পাঠাতে হয় না। বুড়ি ফুলকি নামে এখানে এখন এই মেয়েদের সংগঠক। নিজে দেহ ব্যবসার কাজ ছেড়ে দিয়ে এই সংগঠন নিয়েই আছে। মেয়েদের দেখাশোনা করে। এখান থেকে ও আর বাড়ি ফেরে না। আর সমাজে সে এখন ব্রাত্য । সন্মান নিয়ে থাকতে পারবে না। সব শুনে নীলু বলে:


তুমি আমার সঙ্গে চল। এখন আর তুমি পরস্ত্রী নও। এই সংগঠনে কাজ করে আমি অনেক শিখেছি। জেনেছি কে পরস্ত্রী আর কে নিজের স্ত্রী। তুমি চল আমার সঙ্গে থাকবে। দুজনেই সংগঠনের কাজ করব।"


বুড়ি বলে:


"সেটা আজ সম্ভব নয়। আমি জানি এই মেয়েদের আমি মুক্তি দিতে পারব না। কিন্তু ওদের ছেড়ে চলে গেলে আমার বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। এখানে আমি স্বাধীনভাবে সম্মানের সঙ্গে আছি। আর এই মেয়েরা এদের ছেলেমেয়েরা আমাকে যে সন্মান দেয় সে সন্মান স্বীকৃতি আমি কোনদিন তোমাদের সমাজে পাই নি পাব না। বলত শ্বশুর বাড়িতে বউয়ের পরিচয়ের আড়ালে আমি কে ছিলাম।একজন বিনা পয়সার বান্দি যাকে দাসী ছাড়া কিছুই বলা যায় না। ক্রীতদাসকেও পয়সা দিয়ে কিনতে হয়, দেহ ব্যবসায়ীকে দেহের সেবা দেওয়ার বিনিময়ে পয়সা দেওয়া হয়। কাজের লোককে মাইনে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাকে কিছু না দিয়ে সব করিয়ে নেওয়া হত। নামে মাত্র বাড়ির বউ। অনিচ্ছা সত্বেও এক দুশ্চরিত্র লম্পটকে দেহ দিতে হত। সেটাও কার্যত এক ধরণের ধর্ষণ। এমন কি তোমার সঙ্গে বিয়ে হলেও তোমার বাড়ি আমাকে কি দিত? আজ সমাজ আমাকে যাই বলুক আমি জানি আমি আমিই। আমার নিজস্ব সত্তা আছে। এমনকি খদ্দেররাও আমাকে সমীহ করে। আর মেয়েদের মুক্তির জন্য আন্দোলনে নেমেছি। জানি এই ব্যবস্থার বদল না হলে এদের মুক্তি সম্ভব নয়। তবে সেতু বানাতে কাঠবেড়ালির কাজটা তো করতে পারি।"


সব শুনে নীলু থ বনে যায়। জীবন সম্বন্ধে কি গভীর বোধ। মেয়েদের অধিকার তাদের সম্মানের সম্পর্কে এ কি প্রত্যয়! আর সবটাই জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। কথা না বাড়িয়ে কিছুটা সংগঠনের কথা কিছুটা আন্দোলনের কথা বলে ফেরার জন্য নীলু উঠে দাঁড়ায়। মনে হয় দুজনের মধ্যেকার এতদিনের অসম সম্পর্ক যেন সমতা অর্জন করেছে।আজ সত্যিকারের সামাজিক মর্যাদার নিরিখে দুজনে একই আসনে। কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াইয়ের ময়দানে। সেখানেই তাদের প্রেমের সার্থকতা। একজন আরেকজনকে চিনে নেওয়া।


======০০০======

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

শিক্ষক ।। জীবন সরখেল

শিক্ষক  জীবন সরখেল   শিক্ষা চেতনা প্রসারে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ  প্রকৃতি পরিবেশ প্রাণীর   ধারক বাহক ও মান... যাঁদের স্মরণ উপস্থিতিই  কমে মিথ্যা গ্লানি  সেবায় দ্রোহেও নিরপেক্ষ  ঠেলেন সব হয়রানি। কর্ম আচরণ চিন্তন ত্যাগ  সত্য সপ্রেম নিষ্ঠায় গড়েন চিরন্তন সমাজ ভিত নীতি উদারতায়....  নিঃস্বার্থ ভাব ঠিক ভুল গুণেই  অভিজ্ঞতা দীক্ষক  বাবা মা পরিবেশ গুরুই সবার আপন শিক্ষক। __________________       জীবন সরখেল গ্রাম -বাড়াভগলদিঘী, পোস্ট -ভগলদিঘী, থানা-জয়পুর, জেলা-বাঁকুড়া। পিন-৭২২১৫৪  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

স্মৃতিকথা ।। ৺বিজয়ার চিঠি ।। ভাস্কর চৌধুরী

উৎসব শেষের শূন্যতা এখন গ্রাস করে আছে আদিগন্ত। হঠাৎ ভেসে আসা ছাতিম ফুলের গন্ধ যেমন মাতাল করে দেয় ঠিক তেমনই মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে এক না ছুঁতে পাওয়া আলোর পিপাসায়। উৎসব শেষের নিভে যাওয়া সন্ধ্যেবেলার আলোয় ম্লান হয়ে আসে জীবনের টুকরো টুকরো খুশির আমেজ।  বিসর্জনের শেষে ছেলেবেলায় গোটা গোটা অক্ষরে হলদে রঙা পোস্টকার্ড আর নীলচে-সবুজ ইনল্যান্ড লেটারে দূরের সব্বাইকে পাঠাতে হতো ৺বিজয়ার চিঠি! বয়ান মোটামুটি ওই একই ― বড়দের শুভ ৺বিজয়ার প্রনাম আর যেহেতু আমরা তখন ছোট তাই আশীর্বাদ জানানোর কেউ থাকতো না। তবুও কুঁচোকাঁচা ছোট ভাইবোনদের মনের আদর কলমের ডগায় উগড়ে দিতুম সে চিঠিতে!  ৺বিজয়ার চিঠি আসলে পুজোর ছুটির শেষে হাতের লেখা করিয়ে নেবার এক অলৌকিক ষড়যন্ত্র! ইচ্ছে নেই তবুও জোর করে ওই হাতের লেখা শুধু নয়, বানান, বাক্যগঠন সব কিছু সুকৌশলে করিয়ে নেওয়ার ফন্দি। এটা বুঝেছি অনেক পরে। আর যখন বুঝতে পেরেছি তখন কিন্তু সেই চিঠি পাঠানোর মানুষগুলো মনের মধ্যে গেঁথে গেছে। তখন যেন সত্যি সত্যি মন বলতো হোক না ওই পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ড লেটারের একচিলতে জমি, আমার খাস দখল তো থাকবে তাতে! জানেন, এখন আর কেউ ৺বিজয়ার চিঠি পাঠায় না! পুজো ...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষক ।। রাফেল ইসলাম

শিক্ষক মানে রাফেল ইসলাম   শিক্ষক মানে বুকে টেনে  দুর্দিনে দুঃখ ভোলান,  শিক্ষক মানে আন্তরিকতায় শিক্ষা করেন দান।  শিক্ষক মানে বিদ্যা দিয়ে  আঁধার দূর করে,  শিক্ষক মানে স্নেহের পরশে ছাত্র জীবন ভরে।  শিক্ষক মানে আদর্শের উৎসাহে  মেলে ভবিষ্যতের দিশা,  শিক্ষক মানে দরদ দিয়ে  বাঁচিয়ে রাখে আশা।  শিক্ষক মানে গ্রীষ্মের দিনে  মস্ত বটের ছায়া,  শিক্ষক মানে নিবিড় ভালবাসার  শান্ত ঊষার মায়া।  শিক্ষক মানে জ্ঞানের আলোয়  সমাজ গড়ে তোলে,  শিক্ষক মানে সঠিক পথের  মূল দুয়ার খোলে।।    =============           নাম-রাফেল ইসলাম।  গ্রাম-বাগান বেড়িয়া (বিড়লাপুর)। পোস্ট-চককাশিপুর।  থানা-নোদাখালি।  জেলা-দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।  পিন নম্বর-৭৪৩৩১৮.

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

বাংলা ভাষা সাহিত্যে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ।। শুভ জিত দত্ত

বাংলা ভাষা-সাহিত্যে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার শুভ জিত দত্ত   বাংলা ভাষাসাহিত্যে পরোক্ষভাবে যাঁর অবদান অতুলনীয়, সেই প্রজ্ঞাবান পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮২৪ সালে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে জয়গোপাল সেখানে সাহিত্যে কাব্যের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন এবং সুদীর্ঘ বাইশ বছর অধ্যাপনা করেন। সেখানে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে পরবর্তীকালে যাঁরা বিখ্যাত হন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,মদনমোহন তর্কালঙ্কার। জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের জন্ম রেলপথের শিবনিবাস স্টেশন থেকে আট ক্রোশ পূর্বে, নদীয়া বর্তমানে , বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলাতে বজরাপুর গ্রামে এক প্রাচীন বারেন্দ্র বংশের আবাসস্থল ছিল। এই বংশ শুদ্ধাচার ও সিদ্ধশ্রোত্রীয় ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ছিল এবং পরবর্তী সময়ে বাসস্থান, নামকরণ ও কর্মসূত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটলেও তাদের গৌরবময় পরিচয় অক্ষুণ্ণ থেকেছে। এই বংশে বহু দেশপ্রসিদ্ধ মহামহোপাধ্যায় ও পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁদের কীর্তি বাংলার জ্ঞান-সাধনার আঙিনাকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাটোর মহারাজের দ্বার পণ্ডিত কেবলরাম তর্কপঞ্চানন এবং তাঁর...

স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী

রানী গাইডিনলিউ স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি  প্রণব কুমার চক্রবর্তী           ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু কিছু পরিচিত মুখ আর ঘটনার সমষ্টি নয় । এর গভীরে লুকিয়ে আছে অজস্র গল্প, অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ, এবং ছোট বড় অসংখ্য বিদ্রোহের কাহিনী । সংক্ষেপে এই বিশাল সংগ্রামকে তুলে ধরা কঠিন । তবে, চেষ্টা করে কিছু দিক নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক ।           আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং ব্যক্তিত্ব বলতে সাধারণত মঙ্গল পান্ডে, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিদের কথা এবং তাদের লড়াইয়ের কথা বলে থাকি । কিন্তু, এই সংগ্রামের পটভূমি রচিত হয়েছিল আরো বহু বহু আগে - যেখানে স্থানীয় কৃষক উপজাতি এবং সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ ছিল এর প্রথম বীজ । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ আন্দোলনকে প্রায়সই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রথম লড়াই হিসাবে বলা হয়ে থাকে । তবে এর আগেও আমাদের দেশে  ফরাসি এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল । সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫ - ৫৬ সাল),  সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৭০ - ১৮...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

শব্দ ।। সনৎকুমার নস্কর

শব্দ সনৎকুমার নস্কর  কিছু কিছু শব্দ থাকে সুইচের মতো।   হাত দিলেই দপ্ করে জ্বলে ওঠে ব্যঞ্জনার আলো।  তখন দেখে নিই অন্তর-বাহির                  গহন আঁধারে ঢাকা পথ   শব্দ সে পথের সঙ্গী হয়৷     উপনিষদের কবি শব্দকে বলেন 'শব্দব্রহ্ম',  যখন সে দিগন্তবিস্তারী ---                    কথাটার মানে খুঁজে পাই সেসময়   গর্ভের গভীরে উচ্চারিত ধ্বনি জাগিয়ে তোলে                            আমূল  আর্তনাদ৷   শব্দেই কি শব্দের শেষ?   তারও কি নেই আত্মার মতো                       জীবনের অন্তহীন পথ?   এক হৃদয় থেকে আর এক হৃদয়ে                     সে তো করে ক্লান্তিহীন পরিক্রমা  আমাদের বাসনা-বিশ্বে সে তোলে ঝড়  আবেগমায়া দেয় ছড়িয়ে বাক্ স্পন্দের পর  অবশ্য...