Skip to main content

রম্যগল্প ।। বৌ-শাসিত দল ।। সৌমেন দেবনাথ


বৌ-শাসিত দল

সৌমেন দেবনাথ 


বুঝতে শেখার পর থেকেই মানুষ বিয়ের জন্য আকুলি বিকুলি করে। কেউ রোজগার করে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়ে করে, কেউ অপরিণামদর্শীতার পরিচয় দিয়ে সেসব কিছুই না করে বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পূর্বে বৌ প্রাপ্তির যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকে, বিয়ের পর নানা কারণে সেই প্রবল আকাঙ্ক্ষাতে ভাটা পড়ে। বৌর ছেলেমি যেমন মিষ্টি লাগে, খুঁনসুটি যেমন মিষ্টি লাগে, বৌর অবুঝ সবুজ আচরণ আর রূপসুধা যেমন মিষ্টি লাগে তেমনি বৌর অযাচিত চাওয়া, অনৈত কথাবার্তা, দ্বিচারিতা বা দ্ব্যর্থক আচরণ বিরক্তির চরমকে ছুঁয়ে যায়। একটু ভালোবাসার জন্য কখনো উদবেলিত হয়ে ধরা দেয়, একটু ভালোবাসা দিতে গেলেই কটাক্ষ উচ্চারণে জর্জর করে। স্পর্শাকাঙ্ক্ষা জাগলে স্পর্শ করতে গেলে অলঙ্ঘনীয় বাঁধা, অথচ অকারণে কাছে এসে উষ্ণ ওমে স্বর্গসুখে ভাসায়। দূরে থাকে না কিন্তু দুর্লভ্য, ঠিক এতটুকু কাছে কিন্তু অনতিক্রম্য, ছোঁয়ায় ছায়ায় রাখে কিন্তু অস্পর্শনীয়। হাসি দিয়ে ভরিয়ে রাখে কিন্তু হাসির কথা বলতে গেলেই জোকার বলে বসে। সুখ দেয়, সুখের অসুখে মরি, সুখাতীত। কল্পনাতীত সুখ। তার অধীনে থাকলে তুষ্ট, সমচিন্তা পোষণে সে শিষ্ট, দমন চিন্তাতে গেলে সে দুর্দমনীয়। পেশল শক্তি হেরেছে যুগ যুগ মহিমা শক্তির কাছে। পুরুষ যত বেশি থেকেছে পরাজিত, পুরুষ তত বেশি হয়েছে জয়ী। পুরুষ যত বেশি থেকেছে অবনত, পুরুষ তত বেশি থেকেছে সমুন্নত। প্রতিটি বৌ-ই যদি বুদ্ধির ঢেঁকি না হতো তবে স্বামী বিলীন হয়ে যেতো ডাইনোসরের সাথে সাথে। সাংসারিক নানা সংকট, দ্বন্দ্ব সম্পর্কে টানাপোড়েন বাঁধায়। অসহিষ্ণু স্বামীরা  সব সমস্যার অন্তমূলে বৌদেরই দায়ী করে থাকে।
বন্ধুদের মধ্যে আরজুই সফল ভাবে লেখাপড়া শেষ করে সম্মানীয় পেশায় আছে। এজন্যই এখনো তার প্রবল আকাঙ্ক্ষার বিয়েটা করা হয়ে উঠেনি। বিকেল থেকে রাত দশটা অবধি ওরা চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। যখনই বন্ধুরা শুনলো আরজুর পরিবার আরজুর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে বান্না দাঁড়িয়ে বললো, মেয়ে একদিন দেখে কিচ্ছু বুঝবি না। দশদিন দেখেও কিচ্ছু বুঝবি না। আমি অর্ধযুগ সংসার করছি তাই কিচ্ছু বুঝলাম না। তুই শিক্ষিত, জ্ঞানী। বুঝে শুনেও ভুল করিস না। তোর সাজানো সংসার মদমত্তহস্তীর মতো চটকিয়ে শেষ করে দেবে। বিয়ে করিস না।
চা দোকানদার সজীব বললো, খাবে যার গাবে না গীত তার। খাবে যার দৌঁড়ের উপর রাখবে তার। খাবে না যার সেই-ই বীর পুরুষ। সেই সংসারের সব কাজ করে। আর যে সংসারটাকে জোয়াল করে গরুর মতো টেনে চলেছে সে বেবোধ, অকর্মণ্য। 
সুমন বললো, আমরা বিপথে হেটে বিয়ে করে ফেলেছি। আমরা অশিক্ষিত বলে বিয়ে করেছি, তুই শিক্ষিত হয়ে বিয়ে ক-র-বি কেন? তুই ভালো পথে চলা মানুষ। এত আয় রোজগার করেও বৌর মন পাই না। রোদ বৃষ্টিতে এত কষ্ট করি তার কষ্টও লাগে না। আর তার খোরাক হাতির খোরাকের চেয়ে বেশি। আমরা না দেখে না জেনে ভুল করেছি; তুই দেখেও জেনেও ভুল করবি কেন? বিয়ে করিস না।
সাইদুর বললো, বিয়ের পূর্বে বৌ সম্বন্ধে খুব উত্তেজনা থাকে, কৌতুহল থাকে, বিয়ের পর বুঝবি কিচ্ছু না। পঁচা উচ্ছিষ্টের চেয়েও খারাপ কিছু। এখন তো একা থাকতে পারছিস না, তখন একা থাকার জন্য দূরে পালাবি। নিকৃষ্ট প্রাণীর দিকে তাকাতে ইচ্ছে হবে কিন্তু বৌর দিকে তাকাতে ইচ্ছে হবে না। বিয়ে করিস না।
সজীব বললো, রূপে চমক, চড়ক; কথায় খড়গ। রূপজলে স্নান, কথার তীর্যক বাণে স্থান অথৈ অতল। দিতে দিতে রিক্ত হবি তবুও তার চাওয়া কমবে না, বাড়বেই। আর মিলন তৃষ্ণায় পর্যাপ্ত জল না দিতে পারলে স্বামী ধরা তা কী ধরা, মরণ ধরা। দিনের ক্ষুধা রোজগার করে না হয় স্বামী মেটাতে সক্ষম, রাতের ক্ষুধা মেটাতে স্বামী অক্ষম হলে তার ইহজাগতিক সুখ শেষ।
আরজু বন্ধুদের থামিয়ে বললো, ভালো মানুষেরা খারাপ বলে না, খারাপ মানুষেরা ভালো বলে না। ভালো মানুষের বৌ ভালো হয়, খারাপ মানুষের বৌ খারাপ হয়। 
আবির বললো, ও, আমরা ভালো না বলে আমাদের বৌ ভালো না? বৌয়ের চুলে চিরুনি করে দিই, বৌয়ের চুলে বেণি করে দিই, বৌর মাথার উঁকুন বেছে দিই। আর কি করলে বৌর চোখে ভালো হবো শুনি?  
আরজু বললো, অযত্নে লোহায় মরিচা পড়ে। অযত্নে অবহেলায় সম্পর্কের বাঁধনে ঘূণপোকা ধরে। জীবনে সবটা সময় বর্ষা নয়, আবার সবটা সময় বসন্তও নয়। সম্পর্কে উত্থান-পতন থাকবে, মান-অভিমান থাকবে। বৌকে যত্ন করবি, বৌয়ের কাজের মূল্যায়ন করবি। বৌয়ের ছোট ছোট কাজেরও গুরুত্ব দিবি, তার মতের প্রাধান্য দিবি। বৌয়ের কথার মূল্য দিবি।
জাহিদ আবিরকে উত্তর দিতে না দিয়ে নিজে দিলো, বৌয়ের কথার মূল্য দিই না? বৌয়ের কথার আর বৌকে মূল্য দিতে দিতে সবার কাছে মূল্যহীন হয়ে গেলাম। বাবা-মা, ভাই-বোনকে ত্যাগ করলাম। তবুও তো সুখ পেলাম না। সংসারে আমার মতের কোনো মূল্য নেই। কিছু বলতে গেলেই বৌ শাশিয়ে বলে, তোমার নিয়মে সব চলবে না।
সজীব বললো, ঘরবাড়ি ছেড়ে জাহিদ রয়েছে শ্বশুরবাড়ি। হয়েছে ঘর জামাই। সারা গ্রামের মানুষ বলে জামাই, মনে মনে বলে ঘর জামাই। সমাজের মানুষের কাছে একটা নিকৃষ্ট মানুষ হয়ে গেলে ও। স্বামীর সম্মানে স্ত্রী সম্মানিত, স্ত্রীর গুণেও স্বামী সম্মানিত। তবে বেশির ক্ষেত্রে স্ত্রীর অহিতকাণ্ডে স্বামী অসম্মানিত। মাথায় ঘোমটা থাকে না, বুকে কাপড় থাকে না। অন্য পুরুষ দেখারও দেখবে আবার শাশিয়ে বলবে তোর বৌ বেলাল্লাপনা। 
রিপন বললো, বৌয়ের সাথে পারেনি রাজা, পারেনি প্রজা। বৌয়ের সাথে পারেনি দশ খুনের দাগী আসামীও। বৌয়ের আপাত সৌন্দর্যে আছে বিস্ময়, তার রণ-কৌশল না বুঝলে ভাঙবে না তন্ময়। বৌয়ের রসের হাড়িতে মুখ দিলে স্বামী আর স্বামী থাকে না, হয়ে যায় হুকুমের গোলাম। 
আরজু বললো, সব কিছুতেই ভালো মন্দ আছে। ভালো আরো ভালো হয়, মন্দও একদিন ভালো হয়ে উঠে। আদর-সোহাগ ভালোবাসার পাশাপাশি শাসনও করতে হবে। শাসন হবে আদর প্রাপ্তির জন্য। বৌকে শাসন করা আর চোরকে শাসন করা তো এক না। বৌ তো চোর না।
মাহাবুর বললো, একবার বৌকে একটা থাপ্পড় মেরেছিলাম। বৌ হাউমাউ করে কান্না শুরু করে, সন্তান মরলেও মা অত জোরে কান্না করে না। থাপ্পড় মেরেই হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েও পার পাইনি। বাবা এসে বকলো, মা এসে বকলো, শ্বাশুড়ি ফোনে বকলেন, শ্বশুর দেখে নেবেন বললেন, আর শ্যালক তো জেলের ভয় দেখালো। সেদিনই কানে ধরেছি বৌর অত্যাচারে মরে যাবো তবুও বৌর গায়ে হাত দেবো না। সবাই বৌর পক্ষে। 
আরজু বললো, অন্যায় সবাই-ই করে, বৌর অন্যায় চোখে পড়ে বেশি। বোনও নানা কথা বলে, মেনে নিই। বৌ কোনো কথা বললেই বেঁধে যায়। নপুংসকরা বৌকে প্রহার করে। বৌ ভুল করলে ভালো ভাবে ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। কাজ না হলে সর্বোচ্চ গরম দেয়া যেতে পারে।
স্বজল বললো, বৌকে গরম দিলে বৌ কি বলে জানিস? বলে, তোমাকে আমার এমনিতেই ভালো লাগে না, পছন্দ হয় না; আবার দাও গরম? কী সাহস!
আরজু বললো, বৌর চোখে তুই ভালো না কেন? বৌ তোকে পছন্দ করে না কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবি আগে। সংসার শুধু জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য শরীর গরম করে উঁৎ পেতে থাকা না। বৌর হৃদয়ের খোঁজ রাখিস? কাজের সময় কাজ, ঘুমের সময় ঘুম আর বাকি সময় শুধু ভালোবাসতে শিখতে হবে। টাকা-পয়সা, অলংকার, কাপড়-চোপড়ের চেয়ে নারী বেশি ভালোবাসাখোর। ধনীর দুলালীও গরীবের ঘরে থাকে, শুধু পর্যাপ্ত ভালোবাসার ওমে।
মহিন নড়েচড়ে বসে বললো, তুই লেকচারার, লেকচার দিয়ে পার পাচ্ছিস। সংসারে প্রবেশ কর বুঝবি সংসার একটা জঞ্জাল। কোনো হিসেব মেলে না। বৌকে ভালোবাসতে যাবি বৌ ঐ টাকা-পয়সা, অলংকার, কাপড়-চোপড়ই চেয়ে বসবে। বৌকে ভালোবাসা যায় না। দূর্গন্ধকে যতই দূরে রাখা যায় ততই সুগন্ধ পাওয়া যায়। 
আরজু বললো, আমি সকল বাঁধাকে জয় করে একটা সুখী, সুন্দর আর অনুকরণীয় সংসার গড়বোই। তোরা দেখিস।
রিপন বললো, ওকে আমরা যতই বোঝাবো, ও বুঝবে না। আমরা বিয়ের পূর্বে এই বাঁধাটা পেলে আজ এতো দুর্ভোগ ভোগ করতাম না। আমরা সব মল খাওয়া পাখি, মল আচ্ছামতো চোখে, মুখে, নাকে, ঠোঁটে, জিভে মাখবো, তারপরই আমাদের চোখে সব পরিষ্কার হবে। তার আগে কি করছি জ্ঞানেই আসবে না।
পরদিন আরজু এসে বললো, যারা মেয়ে দেখতে গিয়েছিলেন তাঁরা মেয়ে পছন্দ করে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করে এসেছেন। শুনামাত্রই আবির বললো, বিয়ে যখন করবিই, কর। ঘোল আমরা একা খাবো কেনো, তুই-ও খা। তবে বিয়েতে খবরদার খরচ করবি না। একটা গণ্ডমূর্খ, অপদার্থ, জ্ঞানহীনা, বুদ্ধিহীনা, জড়বস্তু, ভারবোঝা বৌকে ঘরে আনতে একটা টাকাও খরচ করা ঠিক না।
সবাই আবিরের কথাতে সমর্থন দিলো। আরজু বললো, বিয়ের কথা ২১-এ, করছি ৩০-এ, বৌ পাওয়া ভাগ্যের, অনেক সাধনায় মেলে বৌ। অনেক খরচ করবো বিয়েতে, তোরা পেট পুরে খাবি।
মহিন বললো, বান্নাকেও বিয়েতে বাঁধা দিয়েছিলাম। বান্না বলেছিলো, আমি তোদের মতো মেছো বাঘ না, বাঘা বাঘ। আমাদের বাঁধাকে অগ্রাহ্য করে বাঘা বাঘ বিয়ে করলো। বাঘা বাঘ সর্পিণী বৌর ছোবল খেয়ে মিনমিনে বিড়াল হয়ে গেছে।
বান্না মহিনের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস কাটলো আর বললো, বৌর সাথে কেউ পারবে না। সুমনের বৌ সুমনকে জ্বালাতো বলে সুমনকে বলতাম, আমার বৌ হলে পিটিয়ে সোজা করে ফেলতাম। বৌ সোজা করবো কী! আমিই সোজা হয়ে গেছি। মাঝে মাঝে ভাবি এই কালনাগিনী বিষধর গোখরা সাপ বৌর সাথে সারাটা জীবন সংসার করবো কী করে!
আরজু বললো, তুই ছিলি বাঁকা, বিয়ের পরই সোজা হয়েছিস। এটাই তোর কপাল, বিয়ের সুফল। বিয়ের পর ঘাড়তেড়া, রগচটা,লম্পট, ডাকাত, বখাটে, ইভটিজার সব সোজা হয়ে যায়। অলস কর্মঠ হয়। কাজ উদাসী কাজ পাগল হয়। রোদ-ভীতু রোদে পোড়ে, বেহিসেবী হিসেবী হয়, অপচয়কারী সঞ্চয়ী হয়, বেহুদা আলাপী সদালাপী হয়, পরনারী আসক্তে চরিত্র শুদ্ধ হয়। এগুলো বিয়ের কুফল না, সুফল। 
সজীব দীর্ঘশ্বাস কেটে বললো, সাইদুরের বড় ভাই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মানুষকে খাওয়ায়ে হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ করে বিয়ে করলো। বৌয়ের বুদ্ধিতে জমি বিক্রি করে কিনলো গাড়ি। জমিতে হতো বছরের ফসল। খাদ্য সংকটে সাইদুরের ভাই  গেলো বিদেশ৷ বিদেশ থেকে সাইদুরের ভাই টাকা পাঠায়, সেই টাকা দু হাতে উড়ায় তার ভাবি। শেষে কুদ্দুসের হাত ধরে গেলো চলে।
আরজু বললো, সম্পর্কের ভীত না থাকলে অঘটন ঘটেই। যে সম্পর্কে মমত্ব থাকে, আদর থাকে, মায়া থাকে, থাকে দায়িত্ব ও শ্রদ্ধা সে সম্পর্ক ভাঙে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী বিয়ে নামক বন্ধনের মধ্য দিয়ে নারী পুরুষ ঘর বেঁধে সুখের স্বপ্নে জীবধাত্রী ধরিত্রীর বুকে সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রেখেছে। জীবন চলার পথে মতৈক্য, মতনৈক্য থাকলেও জীবন ধারা থেমে থাকেনি। আমরা আপাত দৃশ্য দেখে মন্তব্য করি, গভীরের সৌন্দর্য দেখি না।
কেউ আরজুর কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করে আর কথা বাড়ালো না। কেউ হাসলো, নাক দিয়ে বায়ু বের হলো, কেউ ঠোঁটের কোণা বাঁকিয়ে হাসলো। যার ভাবটা এমন, বিয়ের পর দেখবো এমন ভাবের কথা অটুট থাকে কি না!
পরের দিন আবারো চায়ের দোকানে আড্ডা শুরু হলো। বিয়ে উপলক্ষে আরজু ব্যস্ত, কেনাকাটা সারছে। আবির দোকানের এক কর্নারে চুপ করে বসে আছে। দীর্ঘশ্বাস কেটে বললো, আমি এতো ঘরকুনো ছিলাম, বিয়ের পর ঘরেই থাকি না। থাকি না মানে থাকতে পারি না। সারাক্ষণ বৌ কানের কাছে ঘ্যানর-ঘ্যানর, প্যানর-প্যানর করে। এ নেই তা নেই, এ দাও কিনে তা দাও কিনে। এ করলে কেনো, তা করলে না কেনো? এতো অতিষ্ঠ সহ্য হয়? বাইরে থাকলে বাড়ি গেলে কৈফিয়ত। স্বাধীনতা তুলোর মতো উড়ে গেছে।
সুমন বললো, আমার বৌর কথা কী বলবো! প্রতিবেশিদের সাথে ঝগড়া করবে, মায়ের সাথে বাবার সাথে ঝগড়া করবে, আর পাশে যখন কেউ থাকবে না একা একা গলা বাজাবে। আমি বাড়ি ফিরলে সারাদিন যা যা করেছে বিরতিহীনভাবে বলতে থাকবে। অসহ্য যন্ত্রণা, ছুঁড়ে ফেলা গেলে ফেলেই দিতাম। 
স্বজল বললো, সপ্তাহে সপ্তাহে শাড়ি কিনে দিই তাও বৌয়ের হয় না। শপিংয়ে যাবে, সারাদিন বাজার ঘুরবে। বাড়ি এসে বলবে, আরো একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছিলো, পেঁপে রঙের। টাকা তো দেওয়ার সময় হাত থেকে সরে না। আচ্ছা, বৌ এতো বেহিসেবী হলে জীবনে উন্নতি সম্ভব? জীবনের কোকিল ভেবে যাকে ঘরে আনলাম, সেই কাকের মতো কাজ করে।
রিপন বললো, আমার বৌয়ের কথা তিন মিনিট শুনলেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাবে। কোনো সোজা কথা বলবে না, কোনো ভালো কথা বলবে না। আমার সক্ষমতা নেই বিয়ে করেছি কেনো! ঘুরতে নিয়ে যাই না বলে আমি বেরসিক। প্রতিদিন মাছ-মাংস কিনি না বলে আমি কৃপণ। দুপুরে খেয়ে কেনো বিশ্রাম নিই, তাই আমি অলস।
আরজু মুখ খুললো, সংসার এমন সমস্যাপূর্ণ। মানিয়ে চলতে হয়। 
তা শুনেই আবির ক্ষেপে গেলো, বললো, মানিয়ে চলি বলেই সংসার টেকে। নতুবা বৌর যে বুদ্ধি আর কথাবার্তা দুদিন পরপর তার সংসার ত্যাগ করতে হতো। এতো হালকা বুদ্ধি প্রাণীকূলে আর কারো নেই। নিজের ভুল নিজেই বোঝে না। সংসারে দুখের আগুন জ্বেলে কী ও সুখের ঠিকানা খোঁজে? কী বলে, কী করে, বিরক্তিকর!
সুমন বললো, বৌয়ের সব অভিযোগ, আদেশ, আবদার মেনে নিতে নিতে প্রতিটি পরিবারে বীরপুরুষও গাধা হয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবে পাই না, বৌটি কেবল চায়-ই, চায়-ই। চাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভাবনা নেই, কি চাচ্ছে!  মাথা অবনত হবে বলে আমি কখনো কারো কাছে কিছু চাই না।
আরজু বললো, স্যাক্রিফাইজ করার মন মানসিকতা উভয়ের মধ্যেই থাকতে হবে। ত্যাগের জোর অনেক।
স্বজল বললো, যতই স্যাক্রিফাইজ করো, একটা পর্যায়ে যেয়ে কেনো যেন আর সহ্য করা যায় না। কোনো স্বামীই অযথা বৌকে প্রহার করে না। অনর্থক কথা বলে বলে মাথা আউলায়ে দেবে। যতই শিক্ষিত হোক, কাজ একই রকম। গাধা পালন করা যায়, বৌ পালা যায় না। অসহ্য রকমের মূর্খ।
আরজু বললো, সব সময় তো আর ঝগড়া মনোমালিন্য হয় না। হাজার অমিলের মধ্যেও কোথাও না কোথাও মিলের কারণে স্বামী-স্ত্রী আজো বেঁধে বেঁধে বাস করছে। সবটা সময় ভালো থাকা, মহব্বতে থাকা এটা আশা করাও ঠিক না। যে বৌ বকছে, সে বৌ সেবাও দিচ্ছে, রান্না করে খাওয়াচ্ছে, বুকে মাথা রেখে দুটো স্বপ্নের কথাও বলছে। বিপদে সাহায্য করতে না পারলেও পাশ থেকে তো সরছে না। স্বামীর দুর্দিনে নিজ গহনা কী দিয়ে দেয় না? স্বামীর অসুস্থতায় নির্ভরতার হাত কী বাড়িয়ে দেয় না? স্ত্রীর শুশ্রূষাতেই স্বামী বাঁচে। স্বামীর অস্থিরতায় সান্ত্বনার হাত বাড়িয়ে দেয় কে? স্ত্রী। 
রিপন বললো, দোস্ত, তুই বিয়ে করিসনি, এ জ্বালা বুঝবি না। বৌ তোর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে, ভাবছিস খুব যত্নে রাখবে, আদরে রাখবে, যতই যত্নে রাখবি, যতই আদরে রাখবি সে ভাববে আমার খেয়ালই করছে না। তার মনের যত দাবি পূরণ করতে যেয়ে সঞ্চিত সঞ্চয় সব যাবে, মনের দাবি কমবে না, বাড়বেই। স্বামীর সম্পদকে বৌ যদি নিজের সম্পদ না ভাবে স্বামী তো পথে বসবেই।
আরজু বললো, আমি তো জানি বৌয়ের কারণেই বখাটে স্বামী রত্ন স্বামী হয়ে উঠে। উড়নচণ্ডী স্বামী সংসারী স্বামী হয়ে উঠে। বিয়ে করলেই রুজি বাড়ে। বৌর আকর্ষণেই ঘরবিমুখ স্বামীও ঘরমুখী হতে থাকে। বৌ তো আঁচল পেতে বসে থাকে অপেক্ষায়, মায়াবী কথা বলে মন ভুলায়, মান ভাঙায়।
সুমন নাক সিটকে বললো, স্বপ্নে আছিস। বিয়ে কর সব ভুল ভাঙবে।
আরজু বললো, মন বুঝে চললে সংসারে অশান্তি হবে না। বৌয়ের মন বুঝতে হবে, তাকেও বোঝাতে হবে, সেও যেন বোঝে।
স্বজল বললো, বৌ-জাতি কী বোঝে! কী বোঝাবি? সে যা বোঝে তাই উত্তম। আর যে কী বোঝে বিয়ের পরে বুঝবি! সে নিজেরটা, নিজের শখটা, নিজের অধিকারটা বোঝে, আর কিছু বোঝে না।
আরজু বললো, বৌয়ের মতামতের মূল্য দিতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে। বৌ পর না যে তার মতামতের অধিকার থাকবে না।
মাহাবুর এতক্ষণ চুপ করে ছিলো। পারলো না আর চুপ থাকতে। বললো, বৌয়ের কথা শুনে কাজ করলে দশদিনে ফকির হতে হবে। বৌয়ের ভাবনা যে কত অপুষ্ট, সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে বোঝা যায়। 
আরজু বললো, বৌয়ের প্রতি এতো ক্ষোভ কেন? তার কী কিছুই ভালো না?
আবির বললো, তার হাসিটা সুন্দর, তা কী অভাগা স্বামীর জন্য? তার কথা মিষ্টি, তা কী হতভাগা স্বামীর জন্য? পাশের বাড়ির দেবরের জন্য।
আরজু বললো, তোদের পরিবারে অশান্তি, আমার মনে হচ্ছে ভালোবাসার দৌঁড়ে তোরা হেরে গেছিস!
জাহিদ বললো, সংসারের জন্যই পুরুষ কাজ করে। বন বাদাড়ে কাজ করে পরিবারের অন্ন যোগান দেয়। এরচেয়ে কীভাবে আর ভালোবাসা প্রকাশ করবে স্বামী?
আরজু বললো, বৌয়ের সাথে কখনোই দূরত্ব বাড়ানো ঠিক না। কাছে কাছে ঘেঁষে থাকলে সম্পর্ক কখনো নষ্ট হবে না।
রিপন বললো, বৌয়ের কাছে ঘেঁষে থাকবো? স্বপ্ন ভালো! বৌ যে কী তিক্ত যন্ত্র দেখবি তার পাশে ঘুমাতেও বিরক্ত আর অসহ্য লাগবে। যত শাসনে রাখা যাবে ততই শান্তি, প্রশ্রয় পেলে মানসিক রোগী বানায়ে ছাড়বে।
আরজু বললো, কেনো যেন মনে হচ্ছে আমার বৌ ভালো হবে। না হলেও আমার মোহনীয় শক্তি আর তিতিক্ষা দিয়ে ঠিক করে নেবো।
সাইদুর বললো, এমন স্বপ্ন নিয়ে আমরাও সংসার পেতেছিলাম। বাজার বা অফিসে যা খেতাম বাড়ি নিয়ে যেতাম। এখন পথের কুকুরকে খেতে দিই, কুকুর যার খায় তাকে ঘেউ করে না।
পরদিন চায়ের দোকানদার সজীব চুলা জ্বালাচ্ছে আর বলছে, পাঁচ হাজার টাকা ইনকাম করলেও মা বাবার সব চাহিদা পূরণ করা যায়, ত্রিশ হাজার টাকা ইনকাম করলেও বৌয়ের চাহিদা পূরণ করা যায় না।
দীর্ঘশ্বাস কেটে বান্না বললো, ভেবেছিলাম বিয়ে করলে সুখ-দুঃখ শেয়ার করার মানুষ পাবো, দুশ্চিন্তা লাঘব হবে। বিয়ের পর দেখি বৌ দুশ্চিন্তা তৈরির কারখানা! বড় ভাই আমার বন্ধু ছিলো, তাকেও শত্রু বানিয়ে ছেড়েছে, বোঝ বৌর কেরামতি!
সজীব বললো, সব পাওয়াতে কিছু না কিছু অতৃপ্তির পাশাপাশি তৃপ্তিও আছে। বৌ পাওয়াতে কোন তৃপ্তি নেই। বৌর গুণগান যে পুরুষ করে বুঝতে হবে বৌর থেকে থেরাপি খাওয়ার ভয়ে। 
সজীবকে শাশিয়ে মাহাবুর বললো, বৌ যখন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসার গল্প করে তখন তো ভুলে যাস বৌ মায়ের সাথে কী অন্যায় করেছে, বাবার সাথে কী দুর্ব্যবহার করেছে। অন্ধকারে বৌয়ের গায়ের গন্ধ মাখলে ভুলে যাস দিনে যে সে তোর মরা মুখ দেখবে দশ বার বলেছিলো। 
মহিন বললো, ঘরের কোনো জিনিসে হাত দিতে হলে আগে অনুমতি নিতে হবে বৌর থেকে। ঘরে আম পেকে পঁচছে, তাও অনুমতি নিয়ে খেতে হবে। কোথাকার কে সে! উড়ে এসে জুড়ে বসা!
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে মহিনের গলা ধরে এলো। সাইদুর বললো, আমার বড় ভাই সারাটা জীবন বড় ভাবীর পিছন পিছন হাটলো। বড় ভাবী গোসলে গেছে তো বড় ভাই পিছন পিছন গোছলে গেছে। এমন বৌ ঘেঁষে থাকা পুরুষ পৃথিবীতে আর জন্মাবে কিনা সন্দেহ।
জাহিদ বললো, আর আলম কী? বৌয়ের ভয়ে এতই তটস্থ থাকে কোথাও গেলে বলে যেতে হয় বৌকে।  ক্ষেতে গেলে বলে যাবে, কইগো, আমি ক্ষেতে গেলাম। বাজারে গেলে বলে যাবে, শুনছো, আমি বাজারে গেলাম। এমন কী পায়খানা করতে গেলেও বলে যাবে, হ্যাঁগো, আমি পায়খানা করতে গেলাম। 
হায় নিঃশ্বাস কেটে রিপন বললো, বিয়ের আগে ভেবেছিলাম বৃষ্টি হলে বৌকে বুকে বেঁধে জানালায় বসে বৃষ্টি দেখবো। আর বিয়ের পর? বৃষ্টি হলে বৌ বলে গরু ঘরে তোলো, জ্বালানি ঘরে তোলো। বৃষ্টি আর বজ্রপাতের মধ্যেও বৌ বাজার করতে বাজারে পাঠায়। মৌচাকে মুখ দিয়ে প্রতি ঘরে শৌর্য-বীর্যের স্বামী শৌর্য-বীর্যহীন হয়ে গেছে।
স্বজল বললো, বৌ যখন আমার সাথে অকারণেই কথাতে কথাতে ঝগড়া লেগে যায় তখন বৌকে একটা রাস্তা দেখিয়ে দিই, পাশের বাড়ির সাকিনের বৌর সাথে ঝগড়া করো। আয়েশ মিটবে। ও পোড়ামুখী বৌ সাকিনের বৌর সাথে ঝগড়া না করে রাসেলের বৌর সাথে ঝগড়া করতে গেছে। ইচ্ছেমত গাল মন্দ খেয়ে বাড়ি এসে বসে আছে। ভেবেছিলো সাকিনের বৌর চেয়ে রাসেলের বৌ কম ঝগড়াটে, জিততে পারবে।
ঠিক সে সময় আরজু এলো। মুখে লজ্জা লজ্জা হাসি। কাল দিন পর পরশু তার বিয়ে। সময় যেন কাটছে না। মহিন আরজুর এমন পুলকিত ভাব দেখে বললো, শীতের সময় মানুষ গরমের তৃষ্ণায় ভোগে, গরমের সময় মানুষ শীতের তৃষ্ণায় ভোগে। অবিবাহিত পুরুষও তাই, অবিবাহিত অবস্থায় প্রকাশ না করলেও বিয়ের তৃষ্ণায় ভোগে। বিয়ের পর কেনো বিয়ে করলাম এই যন্ত্রণায় ভোগে। না বিয়ের পূর্বে শান্তি, না বিয়ের পরে শান্তি। না বিয়ের পূর্বে মজা পেলাম, না বিয়ের পর মজা পেলাম।
জাহিদ বললো, আঙুরফল খেতে না পারলে টক, আর খেতে পারলে মিষ্টি না। আসলে অবিবাহিত পুরুষ ভাবে শীতের কাঁথা বৌ গরম করে রাখবে সে যেয়েই ঘুমাবে। বাস্তবতা হলো, কাঁথা বৌ নিজের দখলেই রাখে। আর বৌ গরমে পাখার বাতাস করে দেবে? আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দেবে? গালি দেবে আর বলবে, অক্ষম পুরুষ, ফ্যান কিনতে পারো না? পুুরুষ সব সহ্য করতে পারে, পুরুষত্ব নিয়ে কথা বললে সহ্য করতে পারে না।
আরজু একটু হেসে বললো, কী বলিস! আমি তো জানি বৌ গরম কালে পাখার বাতাস করে দেয়, আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দেয়, গরমে কাজে যেতে বাঁধা দেয়। শীতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকে, উষ্ণতা দেয়। বৌ খুব আদর জানে আর তা খাবার জন্য পুরুষ বিয়ে করে স্বামী হয়। বৌ তো পরী, অপ্সরী, নেশাচ্ছন্ন করে রাখবে। শুধু ভালোবাসাটা শিখে নে, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
মাহাবুর বললো, বিয়ে করলেই বুঝবি এ ভুল কেনো করলাম। এই পঁচা কাজ করার জন্য এতো মুখিয়ে থাকতাম কেনো! বিয়ের পূর্বে মনে হবে বৌ মধুর হাড়ি, বিয়ের পর বুঝবি বৌ যন্ত্রণার মেশিন। বাজারে গেলে বলবে, বাজারে গেলে কেনো? বাজারে না গেলে বলবে, বাজারে গেলে না কেনো? পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে কথা বললে বলবে, আমাকে আর ভালো লাগে না? আর তার সাথে দুটো মিষ্টি কথা বলতে গেলেই বলবে, কাজ কাম নেই, শুধু রসালাপ? তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে বলবে, শুধু বৌ দেখার জন্য উতালা? আর দেরি করে ফিরলে বলবে, কোন ভাবীর ঘরে ঢুকেছিলে?
সাইদুর বিরক্তিভরে বললো, আরে আরো যন্ত্রণা আছে! টিভি নেই,  টিভি কিনবে কবে? ফ্রিজ নেই, ফ্রিজ কিনবে কবে? ঘরটা পাকা করবে কবে? বৌ যদি সীমাবদ্ধতা বুঝতে চেষ্টা না করে সংসার কী ভালো লাগে? ঘরে ঘরে কত স্বামী সহ্য না করতে পেরে গলায় দড়ি দিচ্ছে, স্ট্রোক করছে। না হয় গলায় বাঁধা কাটার জ্বালা সহ্য করে মরার মতো বেঁচে থাকছে।
আরজু বিজ্ঞজনের মতো করে বললো, আমি তো জানি স্বামী স্ত্রীর সম্মিলিত প্রয়াসেই একটি সংসার দাঁড়িয়ে থাকে। অভাবে, দুঃখে, কষ্টে সমব্যথী হয়ে সংসার সাগর পাড়ি দেয়। এক প্লেট অন্ন ভাগ করে খায়। অনেক সময় নিজে না খেয়ে একে অন্যকে খাওয়ায়। মনের চাওয়া পাওয়াকে বিসর্জন দিয়ে সংসারকে দাঁড় করায়। পরস্পর শক্ত হাতে ঝঞ্ঝা সাগর পাড়ি দেয়। 
মহিন একগাল হেসে বললো, বিয়ে কর বুঝবি কী ধারণা নিয়ে বড় হযেছিস, ঘটছে কী! বইয়ের গল্প, সিনেমার গল্পের সাথে বাস্তবের গল্পের কত অমিল! বৌকে শাসন করে দমন করা যায়, কিন্তু ভালোবেসে জয় করা যায় না। বৌর চোখে তাকালে বজ্রাঘাত পেতে হয়, বৌর হাতে হাত রাখলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে হয়।
বান্না বললো, বৌকে যত ভালোবাসবি বৌ বলবে ভ্যাবলা পুরুষ, বৌর পিছু ছাড়ে না। প্রতিবেশি বলবে কাপুরুষ, বৌর আঁচল তলে থাকে। বৌকে ভালবাসলে বৌ সেই ভালোবাসাকে অস্ত্র বানিয়ে নেয়, প্রশ্রয় ভেবে নেয়, আর বৌ প্রশ্রয় পেলে কি করে সবার জানা। তারচেয়ে বৌকে শাসনে রাখতে হবে, বৌ দৌঁড়ের উপর থাকবে। গরু-ছাগল কিনে দিতে হবে, হাঁস-মুরগি কিনে দিতে হবে, খাওয়া।
আরজু বললো, বৌ একটা মানুষ, তাকে সম্মান দিতে হবে। বৌকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কথা আসে কেনো? বৌকে নানা কাজে ব্যস্ত করে সুখ পাবি? মিলেমিশে কাজ করলে কাজে বরকত বাড়ে। হীন চিন্তা বাদ দে।
বান্না বললো, কাকে সম্মান দেবো আরজু? বৌকে? সম্মানের বোঝে কী! বুদ্ধিই তো হাঁটুতে। শাড়ি, ব্লাউজ, শায়া ম্যাচিং করতে করতে দিন শেষ। কুঁচিয়ে শাড়ি পরতে, চোখে-ভ্রূতে কাজল, ঠোঁটে লিপিস্টিক দিতে দিতেই জীবন পার। ভ্রূও প্লাগ করা লাগে। গাধার মতো খেটে রোজগার করবি, গাধার জ্ঞানে বৌ সব খরচ করে উড়িয়ে দেবে।
আরজু বললো, বৌ কখনো খরচপ্রিয় না। বরং সেই সংসারের বাড়তি খরচের লাগাম টানে। 
সবাই মিলে ক্ষিপ্ত হলো আরজুর প্রতি বৌ পক্ষের হয়ে কথা বলছে বলে। আরজু আর কথা বাড়ালো না, বুঝলো শুধুমাত্র বৌয়ের কারণেই সংসার জীবন ওদের ভালো যাচ্ছে না।

"মানুষ স্বপ্নে ডোবে, স্বপ্নে ভাসে, স্বপ্নে রাঙায় মনের মানুষকে। প্রত্যাশার ঢেউ বুকের মাঝে কল্লোল করে। হাজার উপচারে সাজায় তাকে যে হবে হৃদয়ের অধিষ্ঠাত্রী। আমিও কল্পনার ডানায় ভর করে একটি প্রিয় মুখের চিত্র এঁকেছিলাম মানসপটে। কিন্তু স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর মানুষ পায় এ আমার বিশ্বাসে ছিলো না। আমি এখন যার চোখে চোখ রাখি, যার বুকে মুখ লুকাই, যার কাঁধে মাথা ঠেকাই সে আমাকে যত্ন করে, খুব যত্ন করে; ভালোবাসে, খুব ভালোবাসে। আমাকে সুখে রাখার তার প্রচেষ্টার শেষ নেই। একটা চিরসুন্দর, চিরসবুজ মানুষকে চিরজীবনের জন্য পেয়েছি। আর কিছু চাই না জীবনে! আমি আমার পরম পাওয়া পেয়ে গেছি।"
স্টাটাসটা পড়ে আরজু চোখ বুঝে থাকলো তিন মিনিট। ভাবলো, ওর ভাবনা জুড়ে কত বেশি স্থান করে নিছি! কত আপন ভাবে আমায় ও! কত আপন করে নেছে ও! মানুষ অযথা বলে, বৌ স্বামীর কাছে অধরা থাকে। মানুষ অযথা বলে, বৌ স্বামীকে বুঝতে চায় না।
আরজু খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়লো। মনের মুকুলে কখনো কেউ এভাবে ধরা দেয়নি। মায়ার বাঁধনে কেউ কখনো এভাবে আবদ্ধ করেনি। সব যেন মধুময় মনে হচ্ছে। সব কথা সুর হয়ে যাচ্ছে। একি সমস্যা! মধুময় সমস্যা!
বাজার শেষে বাড়ি আসতেই আয়মান বাচ্চা শিশুর মতো হাত পা ছুঁড়ে আরজুর হাত ধরে ঘরে নিয়ে এলো। বাজারের থলে খুলে বললো, পটল এনেছো, ডাঁটাশাক কই? পেয়াজ এনেছো, রসুন কই?
আরজু ডাঁটাশাক আর রসুন আনতে আবার বাজারের দিকে যাচ্ছে। সাইদুর দেখে বললো, তুই তো মাত্র বাজার করে ফিরলি। আবার তাও এতো রাতে বাজার যাচ্ছিস কেন?
আরজু বাজারে যাওয়ার কারণ বলতেই সাইদুর হেসে বললো, বাজার সদাই আনতে ভুল হলে মা কখনো আবার বাজারে পাঠিয়েছিলো? পড়েছিস বৌয়ের পাল্লায়, ভুল হলে ক্ষমা নেই। দেখবো বিয়ের আগের বৌ-পাগল বিয়ের পর কত দিন বৌ-পাগল থাকে! সংসারের লাটিম বৌর হাতে দিয়েছিস, ঘুড়ি হয়ে উড়, উলোট-পালোট বাতাসেও স্বাভাবিক উড়তে হবে কিন্তু!
বাজার শেষে আরজু বাড়ি এলো। আয়মান তরকারি কুটে বসে আছে। আরজুই আজ রান্না করতে উদগ্রীব হলো। আয়মান বাঁধা দিলো। আরজু বললো, পৃথিবীর বড় বড় রাধুনি সব পুরুষ। সব অনুষ্ঠানের রাধুনি পুরুষ। হোটেল, রেস্টুরেন্টের রাধুনি পুরুষ।
আয়মান একগাল হেসে রান্নার দায়িত্ব স্বামীকে দিলো। মহিনের বৌ তা দেখতে পেয়ে কিছু না বলে হেসে বাড়ি চলে গেলো। খেতে খেতে আরজু বললো, আচ্ছা, বৌর বুদ্ধি নাকি হাঁটুতে থাকে, বৌর বুদ্ধি শুনলে নাকি স্বামী ঠকে?
আয়মান ভ্রূ ভাজ করে বললো, এসব যারা বলে মাথা মোটা লোক তারা, তুমি তাদের সাথে মিশবে না।
আরজু আবার বললো, বৌ নাকি স্বামীকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয়? বিশ্রাম নিতে নাকি পারে না, দৌঁড়ের উপর রাখে?
আয়মান বললো, স্বামী-স্ত্রী মিলেই সংসার। সংসারের কাজ স্বামী-স্ত্রী মিলেই করবে। ওসব বন্ধুদের সাথে মিশবে না। ওরা কিন্তু আমাকে তোমার কাছে খারাপ করে উপস্থাপন করবে। আর আমি তখন তোমার চোখে খারাপ হয়ে উঠবো।
পরের দিন থেকে বন্ধুদের সাথে মেশা কমিয়ে দিলো আরজু। বান্না বললো, কী, বৌ মিশতে মানা করেছে? দেখলি তো বন্ধুত্বের মাঝে বৌ কিভাবে বিষক্রিয়া ছড়ায়? বৌর কথা শুনিস বলে আজ বন্ধু হারাচ্ছিস, একদিন সমাজ হারাবি। আর হয়ে যাবি বৌর কোল ঘেঁষা পুরুষ।
আরজু কথা না বাড়িয়ে চলতে লাগলো। সরল রেখার মতো শুয়ে আছে রাস্তা। সে রাস্তা দ্রুত মাড়িয়ে বাড়ি এলো ও। আরজুকে দেখে আলতো করে মুখটা তুলে আয়মান তাকালো। আরজু দেখলো, ওর দৃষ্টির পরিসীমা মাপা যায় না। চোখে অনেক স্বপ্নের মায়াঞ্জন আঁকা। চোখে চোখে হয়ে গেলো কত আলাপ। আলতো করে হাসে, কপালের এলোকেশ সরায়। ওরা ঘরে গেলো। আরজু বললো, আজ এতো দেখছো কেনো?
আয়মান বললো, আমার দুটি চোখে একটি আকাশ। সেই আকাশে তুমি প্রেমের শুকতারা। তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে এক ফোঁটা ভারোবাসার বৃষ্টি তুমি। সব যেন মধুময় মনে হয়, তুমি কাছে তাই।
আরজু নিষ্পলক চেয়ে বললো, ঝিনুক মুক্তো রাখে বুকে, তুমি আমাকে কোথায় রাখবে?
আয়মান আরজুকে বুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো, আমার বুকের মাঝে শুধু তুমি। তুমি কাছে না থাকলে মেটে না পিয়াস। আমি তোমার আদর সুধা পান করে করে বেঁচে থাকবো। তোমার বুকের সন্নিকটে না থাকলে আমার স্বপ্ন সত্য হতো না। আঁখিজুড়ে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন তুমি কেন্দ্রীক। তোমাকে ভুল বোঝার সেই দুঃসাহস বিধাতা যেন আমাকে না দেন। মনের পুরোটা রাজ্য জুড়ে তোমার অবস্থান। 
শুনে আরজুর বুকটা ভরে গেলো। আয়মানকে একটা উষ্ণ পরশ দিয়ে বললো, বাক্যকে শাসন করে বিরাম চিহ্ন। আমাকে শাসন করবে তুমি। মধুর শাসন।
আয়মান না-বোধক মাথা নেড়ে বললো, তোমার আমার মাঝে শাসন বলে কোনো শব্দ আসবে না। আমার মনের সাধনার যোগফল তুমি। তোমার মুখ নিঃসৃত এক একটি বাক্য আমার জীবনের সংলাপ। প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে, প্রতি ক্ষণে-অনুক্ষণে, প্রতিটি অনুভব-অনুভূতিতে, অবচেতন-চেতন মনে, জীবন বীণার তন্দ্রীতে তুমি শুধু বিরাজ করবে। 
আরজু আবেগে উদবেলিত হয়ে বললো, এতো ভালোবেসে আমাকে ঋণী করো না। আমি যে তোমার মতো করে তোমাকে ভালোবাসতে পারি না।
আয়মানের ওষ্ঠপ্রান্তে এক মায়াবী হাসি। একবিন্দুও নেই তাতে চাতুরী। ওর অনন্য চোখের মৃদু আকর্ষণে আরজুর মনে থাকা দুরাশা বাণের জলে খড়-কুটোর মতো ভেসে গেলো। পরস্পর পরস্পরের মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলো। আরজু এবার বললো, তোমার অকৃত্রিম ভালোবাসার কাছে আমার দোদুল্য মনের দুর্ভাবনা হার মেনেছে। মনের কোণে লুকানো তিলকণা ভুলও ফুল হয়ে ফুঁটে গেছে। আজ তোমার জন্য এই বেঁচে থাকা, আর তাই বেঁচে থাকাতে এতো স্বাদ!
হঠাৎ আরজুর থেকে এক হাত সরে আয়মান বললো, আমাকে ভালোবাসার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। খাবার টেবিল মুছে ফেলো, আমি ভাত তরকারি নিয়ে আসছি।
আরজু বললো, টেবিল মুছা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না। টেবিল মুছছি, ছোট-বড় হোটেল-রেস্টুরেন্টের সব মেসিয়ার পুরুষ।
চলে যেতে যেতে পিছু ফিরে হেসে আবার চলে গেলো আয়মান। আরজু হাসলো আর ভাবলো, ওরা কেনো বলেছিলো বৌ বিরক্তির মেশিন? বৌ তো বেঁচে থাকার অক্সিজেন। ওরা কেনো বলেছিলো বৌর উত্যক্তে মাথার কাঁচা চুল দশ দিনে পেকে পনের দিনে পড়ে যাবে? কেনো বলেছিলো বৌর বিরক্তিতে স্বামী স্ট্রোক পর্যন্তও করে? আমি তো দেখছি বৌ আছে বলেই মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম কোষগুলো জাগ্রত হচ্ছে, চিন্তার দরজা খুলে যাচ্ছে। 
আয়মান এসে বললো, এবার প্লেট, চামচ, গ্লাস একটু ধুয়ে ফেলো।
সবই আয়মান আদেশের সুরে বলছে, কিন্তু সবই মধুর লাগছে আরজুর কাছে। খাওয়া শেষে আরজু উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে, ময়লা তৈজসপত্র ধুতে টিউবওয়েলের দিকে যেতে গেলেই আয়মান বাঁধা দিলো। আরজু বললো, তুমি তো প্রতিদিন কাজগুলো করো। আমি কী একদিন সাহায্য করতে পারি না? তবে আমি তোমার কিসের সমব্যথী সাথী?
আয়মান বাঁধা দিলো না আর। থালাবাটি ধুতে গেলেই রিপনের বৌ তা দেখে ফেলেছে। কোনো শব্দটুকুও না করে বাড়ি চলে গেলো।
পরদিন আয়মান ঘরের যত ময়লা কাপড়-চোপড় বের করলো। দু বালতি ভরে গেলো। এতো কাপড়-চোপড় আয়মান কাঁচবে দেখে আর ভেবে আরজুর খুব কষ্ট লাগলো। তাই আরজু নিজেই কাপড়-চোপড় কাঁচতে মনস্থির করলো। আয়মান বাঁধা দিলেও আরজু শুনলো না। বললো, কাপড়-চোপড় কাচা কোনো ব্যাপার? এতকাল তো নিজের কাপড়-চোপড় নিজেই কেচেছি। লন্ড্রীর কাজ তো সব পুরুষরাই করে। 
আরজু যে কাপড়-চোপড় কাচছিলো তা দেখে ফেলে আবিরের বৌ। দিন শেষে ইস্ত্রী মেশিন নিয়ে আরজু বসে গেলো ইস্ত্রী করতে। আয়মান বললো, সব শিখে রেখেছো দেখি! বৌয়ের এতো কাজ করে দিলে বৌ আদর দিতে দিতে তো ফতুর হয়ে যাবে!
আরজু বললো, ইস্ত্রী করা কোনো ব্যাপার! দোকানে দোকানে সব ইস্ত্রীর কাজ তো পুরুষরাই করে!
কাপড় ইস্ত্রী করা দেখে ফেলেছে জাহিদের বৌ। পরদিন লুঙ্গি ছেঁড়া সেলাই করতে বসেছে আরজু। আয়মান বললো, দাও, আমি সেলাই করে দিই। পুরুষ কী সেলাইয়ের কাজ পারে!
আরজু বললো, ঘরে মেয়েরা যতই সেলাইয়ের কাজ করুক, দেশ-বিদেশে সবখানেই টেইলার্সে পুরুষই সর্বোত্তম সেলাইকর্মী। 
আরজুর লুঙ্গি সেলাই দৃশ্য দেখে ফেলেছে সাইদুরের বৌ। পরদিন চায়ের দোকানে যেতেই মহিন বললো, তুই বাসায় নাকি রান্না করিস? আমার বৌ দেখেছে। বাসায় আমার বৌ এই কাজটিই করতো, এখন তোকে উদাহরণ টেনে আমার বৌ আমাকে রান্না করতে বলছে। তুই একটা মাদী-পুরুষ। সবাইকে মাদী-পুরুষ বানাবি?
আরজুর উত্তর করার আগে আবির বললো, বিয়ের আগে কাপড়-চোপড় ধৌত করেছিস, ভালো। এখন ধৌত করিস কেনো? তোর কাপড় কাচা আমার বৌ দেখেছে। এখন সে আমাকে কাপড় কাচতে বাধ্য করছে।
জাহিদ বললো, ও তো কাপড় ইস্ত্রীও করে। গতকাল আমার বৌ আমাকে দিয়ে কাপড় ইস্ত্রী করিয়েছে।
সাইদুর খুব রেগে বললো, ও লুঙ্গিও সেলাই করে। আমার বৌ দেখেছে। আমার বৌ আমাকে দিয়ে কবে না জানি কাঁথাও সেলাই করিয়ে নেয়।
রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, ও থালাবাটিও ধৌত করে। আমার বৌ আমাকে বকেছে আর বলেছে, আরজু ভাইয়ের মতো তো আর থালাবাটি ধৌও না।
সবাই মিলে আরজুকে ইচ্ছামত বকলো, গালি দিলো, অপমান করলো। আরজু সবাইকে শান্ত করে বললো, যে বৌ নিজের বাবা-মাকে, ভাই-বোনকে, আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে আমার কাছে এসে সুখ খুঁজছে; আমার পরিবারকে নিজের করে নিচ্ছে আমি তার হাতের কাজে সাহায্য করবো না?
মাহাবুর বললো, বৌ কী জাদু করেছে? এমনি ভাবে তোকে খাটাচ্ছে, তোর পৌরষকে অপদলিত করছে তবুও রাগ করিস না! চোখে কাজল আর কপালে টিপ দেয়া উচিত তোর।
সাইদুর বললো, ওর বৌ যদি ওর চোখে কাজল, কপালে টিপ দিয়ে দেয় ও তাও গ্রহণ করবে। কাজল, টিপ গ্রহণ যদি করিস হাতে চুড়িও পরিস, পায়ে নূপুরও পরিস। তুই আর  কত নিচে নামাবি সুউচ্চ শীরের স্বামী জাতিটাকে? তুই একটা মেন্দা মার্কা স্বামী।
কথাগুলো শুনে আরজুর মন খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো, বৌকে সাহায্য করা অন্যায়? ঘরের সব কাজ বৌ করবে? ঘরের কাজ করলে পুরুষের পৌরষ জলাঞ্জলি হয়?
ভাবতে ভাবতে বাজারটা সেরে বাড়ি এলো। ফিরতে দেরি হওয়াতে আয়মান বললো, রাত করে মাছ এনেছো। যাও মাছ কুঁটে পরিষ্কার করো।
আরজুর কথাটি কোথায় গিয়ে যেন বাঁধলো ও বিঁধলো। বললো, বাজার করার দায়িত্ব আমার, মাছ-তরকারি কুঁটার দায়িত্ব তোমার।
আয়মান রাগ দেখিয়ে বললো, এতো রাতে আমি মাছ কুঁটবো না।
ঘরে চলে গেলো আয়মান। আরজু বেশক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একবার মাছ একবার তরকারির দিকে তাকিয়ে থেকে মাছ কুঁটতে লেগে গেলো। পিছন দিয়ে আয়মান এসে সবজি কুটতে লাগলো আর বললো, তোমার পরে রাগ হয় না। রাগ চলে গেছে, যাও আমি কুঁটছি।
আয়মানের দিকে তাকিয়ে আরজু ভুলে গেলো সব দ্বেষ-ক্ষোভ। তবুও বললো, চাপ দাও কেনো আমায়? 
আয়মান বললো, তোমার তিন ঘণ্টা আগে আসার কথা। এতক্ষণে আমাদের খাওয়া শেষ হতো। যাও, মাছ ধুয়ে আনো।
আরজু বললো, মাছ ধুয়ে আনবো মানে? কুঁটে দিছি এই বেশি।
আয়মান বললো, কানের কাছে গুণগুণিয়ে অনেক বলেছো পড়াশোনাকালীন রান্না-বান্না করে খেয়েছো। যাও, মাছ ধুয়ে আনো।
আরজু মাছ ধুতে যেতে বাধ্য হলো। মাছ ধুতে ধুতে গান ধরলো, সংসার আমার ভাল লাগে না, সংসার বিষে মরি...
শুনে আয়মান হাসতে থাকে। রান্না শুরু করলো ও। আর কেঁকিয়ে বললো, তুমি কইগো? পানি আনো।
আরজু খুব বিরক্তিভরে পানি এনে দিয়ে বললো, আমাকে আর কিছু আনতে বলবে না। আমাকে বসতে দেখলে তোমার ভালো লাগে না!
আয়মান চামচটা আরজুকে ধরিয়ে দিয়ে বললো, তরকারি নাড়তে থাকো, ঘেমে গেছি, একটু বাতাস খেয়ে আসি।
আয়মান সত্য সত্য রান্না ফেলে চলে গেলো। বাধ্য হয়ে তরকারি নাড়তে ব্যস্ত হলো আরজু। মাঝে দু বার উঁকি মেরে দেখে গেছে আয়মান। তৃতীয় বার আর উঁকি মেরে গেলো না। পিছন থেকে আরজুকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার রান্না খুব সুস্বাদু। বেড়েও খাওয়াবে।
আরজু বিরক্তির স্বরে বললো, ছাড়ো তো। শরীরে ঘাম। ঘাম শরীরে এভাবে কেউ জড়ায়?
আয়মান কথা শুনলো না। বললো, মনে মনে আমাকে বকা দিচ্ছো, না?
আরজু বললো, আমি কী কখনো তোমাকে বকেছি? আমি কী তোমাকে বকতে পারি? তবে তুমি যে আমার উপর রুষ্ট এটা পরিষ্কার। 
আয়মান বললো, গালে তুলে খাওয়ায়ে দেবে।
আরজু বললো, বাজার করবো, তরকারি কুঁটবো, রান্না করবো, গালে তুলে খাওয়ায়ে দেবো। পেয়েছো কী? সরে যাও। খুব রাগ হচ্ছে, ছাড়ো!
আয়মান বললো, খাওয়া শেষে থালাবাটিও ধুয়ে দেবে।
রান্না ফেলে আরজু দুপদাপ পা ফেলে চলে গেলো। আয়মান স্বর বাড়িয়ে বললো, টেবিলটা মুছে রাখো।
আরজু ফিরে এসে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো, টেবিল মুছবো মানে? 
আয়মান বললো, তুমিই তো বলেছো, ছোট-বড় সব হোটেল-রেস্টুরেন্টের মেসিয়ার পুরুষ। যাও, কথা না বলে টেবিল মুছো, যেতে আসতে মেঝেটাও নোংরা হয়ে গেছে। মেঝেটাও মুছে ফেলো।
আরজু বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে চলে গেলো। খাওয়ার সময় আয়মান প্লেট নিয়ে বসে বললো, চামচ ধরো, ভাত দাও, তরকারি দাও, গ্লাসে পানি ঢালো। 
আরজু বললো, এতো অত্যাচার কোনো একদিন সহ্যের বাইরে চলে যাবে।
আয়মান বললো, অত্যাচার মানে? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছো। হলে থেকেছো। ডাইনিংয়ে খেয়েছো। বলেছো, আক্কেলরা তরকারি কোঁটে, রান্না করে, পরিবেশন করে। দেখে দেখে বড় হয়েছো। এপ্লাই করো।
আরজু শুনে চামচ ছুঁড়ে মেরে ঘরে চলে গেলো। ভাত, তরকারি নিয়ে আয়মান বেডরুমে এলো। একবার গালে তুলে দিতে গেলো, আরজু হাত সরিয়ে দিলো। দ্বিতীয় বার গালে তুলে দিতে গেলো, আরজু এবারও হাত সরিয়ে দিলো। 
তখন আয়মান বললো, তোমাকে দু একটা ঘরের কাজ করতে বলি ভালোবাসার অধিকার থেকে, আর তুমি রাগ করো সম্পূর্ণ হিংসা থেকে। 
বলে আয়মান উঠে যাচ্ছিলো। আরজু তার হাত ধরে থামালো আর খাওয়ার জন্য হা করলো। আয়মান হেসে একগাল ভাত তুলো দিয়ে বললো, দারুন না? তোমার রান্না। 
আরজু খেয়ে বললো, হ্যাঁ দারুন। তবে আমার রান্না বলে না, তুমি গালে তুলে খাওয়ায়ে দিচ্ছো তাই।
আয়মান ভালো সেলাইয়ের কাজ পারে। আপন মাধুরী মিশিয়ে রুমালে আল্পনা এঁকে সেলাই করে সেই রুমাল আরজুকে দিয়েছে। রুমাল ব্যবহার করার অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও আরজু এখন পকেটে রুমাল রাখে। মানুষের সামনে রুমাল বের করে না, তবে যখনই একা থাকে রুমাল বের করে নির্বাক চোখে আয়মানের নিপুণ সেলাই কর্ম দেখে। ওদিন আয়মান কাঁথা সেলাই করছিলো। আরজু একটা শার্ট এনে বললো, একটা বোতাম ঢিল হয়ে গেছে। কখন ছিঁড়ে পড়ে যাবে। সেলাই করে দাও তো।
আয়মান সুচ-সুতা আরজুর হাতে দিয়ে বললো, নিজের কাজ নিজে করাতেই বেশি আনন্দ। তাছাড়া তুমি সেলাই পারো। নাও, সেলাই করো।
আরজু রেগে যেয়ে বললো, সেলাই করবো মানে? সেলাই কী আমার কাজ?
আয়মান বললো, তুমিই বলেছো ছোট-বড় সব টেইলার্সের সেলাইকর্মী পুরুষ। সুচ-সুতা ধরো, কথা কম।
আরজু সুচ-সুতা দিয়ে শার্টের বোতাম সেলাই করতে লাগলো। আয়মান আরজুর কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে বললো, সেলাই পারো। তা আমার উপর অত নির্ভর করো কেনো?
আরজু বললো, সবই পারি। শুধু পারি না তোমার সাথে। তুমি আমাকে যেভাবে খাটাচ্ছো রীতিমত স্বামী নির্যাতন। প্রকৃত পুরুষ পুরুষ নির্যাতন কখনো মেনে নেবে না।
আয়মান আরজুর গলা দু বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, ভালোবাসি না?
আরজু বললো, ঘরে ঘরে স্বামী নির্যাতিত, কেউ কেউ ভালোবেসে ভুলিয়ে ভালিয়ে নির্যাতন করছে, কেউ কেউ শাসন বা তীর্যক বাণে নির্যাতন করছে। আগে বিশ্বাসই করতাম না।
বোতাম সেলাই হলে এবার আয়মান বললো, এবার কাঁথা সেলাই করো। কাঁথা কী আমি একা গায়ে দেবো? সেলাই করে আমার তোমার নাম লেখো। আমার জন্য তোমার উপহার।
একথা শুনে আরজু গরম চোখে আয়মানের দিকে চেয়ে থাকলো। আয়মান না ডরিয়ে বললো, চোখ গরম দিচ্ছো কেনো? বাসর রাতে তুমিই বলেছিলে আমরা আমাদের কাজ ভাগে যোগে, মিলেমিশে করবো। 
আরজু কাঁথা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। এতো রাগ জীবনে কখনো ওর ওঠেনি।
পরদিন সকালে কাপড়-চোপড় বালতি মাঝে রেখে বললো, কাচবে না?
আরজু মনে মনে ভাবলো, আয়মান তো রীতিমত নির্যাতন শুরু করেছে।
তীর্যক চেয়ে আরজু উচ্চারণ করে বললো, কাপড় কাচবো মানে? আমি চুড়িপরা পুরুষ?
আয়মান বললো, কথা কম, কাজ বেশি। তুমিই বলেছো, লন্ড্রীর সব কর্মী পুরুষ।
আরজু তদাপেক্ষা রেগে, কাপড়-চোপড় কাচা আমার কাজ?
আয়মান বললো, তুমিই বলেছো, কোনো কাজ ঘৃণা করা উচিত না। কার না কার কাজ না ভেবে কাজে মন দাও। সব কাজ সমান। 
আরজু ফুঁসতে ফুঁসতে কাপড়-চোপড়ের বালতি নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। আর গান ধরলো, বৌয়ের জ্বালায় ইচ্ছে করে গাড়ির নিচে মারি ঝাপ, কেন যে বিয়ে করলাম বাপরে বাপ...
হাসতে হাসতে পিছনে এসে দাঁড়ালো আয়মান। আরজু দেখে বললো, চোখের সামনে থেকে যাও, তোমাকে সহ্য হচ্ছে না।
আয়মান কর্ণপাত না করে বললো, জামার কলার আর হাতা ভালো করে ঘষো।
আরজু বললো, শিখাতে হবে না। নিজের কাপড়-চোপড় নিজেই কেচেছি। ভেবেছিলাম, বিয়ে করেছি এসব থেকে বাঁচবো।
আয়মান বললো, তোমরা পুরুষরা বিয়ে করো অনেক কিছু থেকে বাঁচবে বলে। এ চিন্তাটা দূষিত। কাপড় শুকাবে নেড়েনেড়ে। ইস্ত্রী করবে। তুমিই বলেছো, দোকানে দোকানে যারাই ইস্ত্রী করে সব পুরুষ।
আরজু রেগে গেলেও নিজেকে শান্ত রাখলো। চায়ের দোকানে গেলেও বৌয়ের বদনাম ঢেকে গুণগান করে কটাক্ষ ভোজনের ভয়ে। একা একা ও ভাবলো, নিজের বলা বুলিতে নিজেই আটকে যাচ্ছি। ঘরের কাজ করলে বাইরে সম্মানহানী হচ্ছে। বাইরে অপমানিত হচ্ছি, ঘরেও সহ্য হচ্ছে না। আয়মান অর্থনৈতিক চাপ দেয় না, বাবা-মায়ের আভিজাত্য প্রকাশ করে না। কিন্তু তাও তাকে সহ্য হচ্ছে না। না জানি কোন মূহুর্তে কোন কাজ করতে বলে বসে। বিশ্রাম নিলে ডেকে তুলে কাজ ধরিয়ে দিচ্ছে। এক কাজ করতে বলে সে কাজ শেষ না হতেই অন্য কাজে যেতে বলছে। বেশ মুশকিলে পড়লাম যে!
ঘরের কথা বাইরে না বললেও বন্ধুরা কেমন করে যেন ধরে ফেলে। মহিন বললো, বানর খেলায় যে লোক সে তার বানরদের জীবদ্দশায় যত না নাচায় তোর বৌ তারচেয়ে তোকে বেশি নাচাবে। বৌকে দিয়েছিস প্রশ্রয়। ওরা প্রশ্রয়ের মানে বোঝে? কিল-লাথির উপর রেখেও তাই দমাতে পারি না।
আরজু বললো, কিভাবে বুঝলি আমার বৌ আমাকে নাচাচ্ছে? সংসারে তোরাই আগুন জ্বালাচ্ছিস। দোষ দিচ্ছিস বৌয়ের। বনের দাবানল নিভলেও তোদের সংসারের দাবানল নিভবে না। বাড়ি যাবার সময় মাত্র দশ টাকার বাদাম নিয়ে যাবো, আমার বৌ দশ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কারের চেয়েও বেশি খুশি হবে।
চাপা মেরে আরজু বাড়ি এলো। আগের মতো সব বিষয়ে অতি আগ্রহ দেখায় না। আয়মান তা লক্ষ্য করে। আয়মান বললো, ইদানিং তোমাকে উদাসীন লাগছে। নিষ্প্রাণ আর স্পন্দনহীন দেখাচ্ছে। মন খারাপ করে থাকো কেনো? তোমার মন খারাপ থাকলে আমার কী ভালো লাগে!
আরজু নিষ্প্রভতার কারণ এড়িয়ে জবাব দিলো, তুমি যে এতো ভালোবাসো আমায় এতকাল মানুষ সহ্য করতে পারতো না, এখন আমি সহ্য করতে পারি না। আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো?
আয়মান বললো, তুমি তো আর দশটা পুরুষের মতো আমাকে দাসী করে রাখোনি। সংসারের আবর্জনা ভেবে ঘরের কোণে ফেলো রাখোনি। বৌয়ের বুদ্ধিকে তো তুমি গাধার বুদ্ধি ভাবো না। বৌকে সাথে রাখো সংসারের উন্নয়নের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে। অন্যদের মতো বৌ সন্তান উৎপাদনের ফ্যাক্টরি সে হীনজ্ঞান তোমার নেই। শুধু উষ্ণতা প্রাপ্তির জন্য বৌর কাছে আসো না, ভালোবাসো, সম্মান করো। চোখে চোখে রাখো, মনের চাহিদা বোঝো। তুমি ভালোবাসার যোগ্য, আমি সারাক্ষণ ভাবি তোমাকে কত উপায়ে ভালোবাসবো। কত উপায়ে তোমার মন রাঙাবো। তোমাকে হৃদয়ের সবটুকু ভারোবাসা দিয়েও আমি তৃপ্ত না। তোমাকে ভালোবেসে মন ভরে না। তোমাকে সংসারের টুকটাক কাজ করতে বলি তা নিতান্ত মনের খেয়ালে, অন্য রকম ভালোবাসা থেকে। আমি তো জানি পেশা জীবনে তুমি কত কষ্ট করো, আমি তো সেসব কাজে তোমার সঙ্গী হতে পারি না। বাড়ির দু চারটে ছোট ছোট কাজ তোমাকে আর করতে দেবো না। আমি বুঝতে পারছি এতে তুমি বন্ধু সমাজে, বন্ধুদের বৌদের মাঝে ছোট হচ্ছো, অসম্মানিত হচ্ছো। তোমার সম্মান রক্ষা আমার প্রথম কাজ। দয়া করে তুমি আমার উপর রাগ করো না। তুমি যদি আমার উপর রাগ করো, আমি তবে বাঁচি কী করে!
আরজু নির্বাক হয়ে গেলো কথাগুলো শুনে। নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। আবেগে গদগদ হয়ে আরজু বললো, তুমি সম্মুখে থাকলেই সুখ পাই, তুমি আছো ঘরময়, ঘর জুড়ে তোমার পদধ্বনি আমার ব্যাখ্যাতীত ভালো লাগা। তুমি এঘর ওঘর কাজ করো, কাজের ব্যস্ততায় আমায় না দেখার ভান করো, আমার দৃষ্টিতে সব ধরা পড়ে। তুমি আছো তাই আমাদের ঘর-বাইর পরিচ্ছন্ন, তুমি নিশ্চিন্ত রেখেছো, নির্ভরতায় থাকি তাই। একমাত্র তোমাতেই আমার যত লাভ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত লোভ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত মোহ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত নেশা। প্রস্তুতি নিয়ে আমি তোমায় দেখি, খুব করে দেখি আমি খুব করে ভাবি। ভাবি সুন্দর তুমি, ভারি মিষ্টি তোমার মমতা। যত না ভাবিনি, তুমি তার চেয়ে বেশি ভালো, ভাবনার পরিসীমা দিয়েছো বাড়িয়ে। কেউ এতটা আপন হবে, কেউ এতটা আপন করবে, কাউকে এতটা আপন করে পাবো ভাবনাতেও ছিলো না। শুধু তোমার জন্য আমার সব কিছুতেই ভালো লাগা, সব কিছুতেই সফলতা। সব কিছুই রঙিন, সব কিছু রংময়, বাঙময়, চিন্ময়, হিরন্ময়। সুখ পাখি হয়ে এভাবে উড়ো, আমার বুক জমিনটা সম্পূর্ণই তোমার।
আয়মান আরজুর চোখ বরাবর চেয়ে বললো, পুরুষ তো কখনো এতটা দরদী পুরুষ হয় না, পুরুষ তো কখনো এতটা প্রেমিক পুরুষও হয় না। বুক-পিঠ প্রাচীর করে সব দায়িত্বের ঝঞ্ঝা একা থেকালেও ভালোবাসাটা অপ্রকাশই রাখো। হাত দুটো শক্ত আর কড়া পড়া হলেও যত্ন-আত্তিতে কত না নরম আর কোমল। শুনেছি পুরুষের মন শক্ত, অথচ তুমি কত অনায়াসেই তোমার বুকে আমার ঠাঁই দাও; জেনেছি নানা প্রলোভন দেখিয়ে পুরুষ নারীর সান্নিধ্যে আসে, প্রয়োজনটুকুর পর অপ্রয়োজনীয় করে দূরে রাখে। অথচ তুমি কত সুন্দর, স্পর্শে আসো,স্পর্শে ডাকো, স্পর্শে রাখো, স্বপ্ন দেখাও, স্বপ্নের সারথি করে ধরে রাখো, আদরে রাখো, নজরে রাখো, মনেতে গেঁথে রাখো, মনের কথা শোনো। প্রয়োজনটুকুর জন্য উষ্ণ করো না, প্রয়োজনীয় করে রাখো, কখনোই হেয় করো না, অপ্রয়োজনীয় ভাবো না, অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাবো। মন-মননে তুমি অনেক উঁচু, সুস্থ চিন্তার মানুষ তুমি। তোমাকে পেয়ে আমি ঠকিনি। তোমাকে ভালোবেসেও আমি ঠকবো না। মৃত্যু অবধি তোমার সান্নিধ্যে থেকেও আমি ঠকবো না। যত বেশি ভালোবাসার পর আর ভালোবাসা যায় না, আমি তার থেকেও তোমাকে ভালোবাসি। 
আয়মানের কথা শুনে আরজুর চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয়ে গেলো। হাসতে হাসতে আয়মান বললো, গাছের পাতা পড়ে উঠান দেখো ময়লা হয়ে গেছে, উঠানটা ঝাড়ু দাও।
আরজু সে কথাতে কর্ণপাত না করে দোকানে গেলো। দোকানের এক পাশে বসে চা খেতে লাগলো। মহিন বললো, কী মন খারাপ? এক কোণে বসলি যে!
সজীব বললো, বৌ ঘরে। মন ভালো থাকার প্রশ্নই আসে না। ও যতই মুখে বলুক ভালো ভালো। ভিতরে ভিতরে পুড়ে ও ছাই। তোর বিয়েই সবাই বাঁধা দিছি। বোঝ এবার বিয়ের জ্বালা। দিল্লিকা লাড্ডু, না খাইলেও পস্তাবেন, খাইলেও পস্তাবেন। 
আরজু এবার জবাব দিলো, বৌ দিল্লিকা লাড্ডু নয়, না খাওয়ারও কিছু নেই, খাওয়ারও কিছু নেই। বৌ হৃদয়ের কাছ ঘেঁষে থাকা হৃদয়ের খোরাক। বৌ অন্তরে বাস করা ছোট্ট পাখি, বৌ অন্তর। বৌ মনের প্রশান্তির রসদ, বাঁচার অন্য নাম। বৌকে শাসন করলে বৌ শাসন করবে। বৌয়ের শাসন খুব মিষ্টি না। বৌকে ভালোবাসতে হয়, বৌ ভালোবাসা পাবার কাঙাল। বৌকে যতটুকু ভালোবাসবি, ততোধিক বৌ ভালোবাসা প্রতিদানে দেবে। বৌকে অবজ্ঞা করলে বৌ অবজ্ঞা করবে। বৌয়ের অবজ্ঞার ওজন অনেক। বৌকে গাধার মতো খাটানোর অর্থ নেই, বৌকে গাধার মতো খাটালে বৌ গাধার মতো খাটাবে। বৌ গাধার মতো খাটালে মাজা আর উঁচু হবে না।বৌকে সময় দিতে হয়, বৌ সময় চায়, সময় চায়ের দোকানে দিলে সময় হাত থেকে চলে যাবে। বৌকে সময় দিলে সংসার মধুর হবে, তখন চায়ের দোকানে আসতেও ইচ্ছে করবে না। বৌয়ের কাজে সাহায্য করা মানে বৌকেই সাহায্য করা না, নিজের সংসারকেও টানা। বৌয়ের সাথে মিলেমিশে থাকলে বৌয়ের আঁচল তলে থাকা বলা ঠিক না, বৌর সাথে যদি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি না করতে পারিস, সংসারের মধ্যে যদি শান্তি আনয়ন না করতে পারিস পৃথিবীর এত এত সুখ কোন প্রশান্তি দেবে না।
আরজুর টানা কথা বলা দেখে মহিনসহ আরজুও চুপ হয়ে গেলো। আরজু চা খেয়ে বাড়ি চলে এলো। আয়মানকে বললো, আমার বন্ধুগুলো সংসারে খুব অশান্তিতে। বৌদের সহ্যই করতে পারে না। তোমার আমার মিলও ওরা সহ্য করতে পারে না।
আয়মান বললো, বন্ধুদের সাথে বৌর প্রশংসা করবে না। বৌর প্রশংসা শুধু বন্ধুরা নয়, পৃথিবীর কেউ সহ্য করতে পারে না। তোমার বন্ধুরা তাঁদের বৌকে চায়ের দোকানে যেভাবে উপস্থাপন করে তুমিও আমাকে ঠিক তেমনি করে তাঁদের সামনে উপস্থাপন করবে। দেখবে তোমার বন্ধুরা আগের মতো আবার তোমার সাথে সুন্দর ব্যবহার করছেন। এই সমাজ এমন, যে যত তার বৌকে শাসন-দমন করতে পারবে সেই তত সুপুরুষ। কাল যেয়ে বন্ধুদের বলবে বৌকে কনুই দিয়ে মেরেছি। আর বলবে, বৌ বেকুবই, বৌর বুদ্ধি হাঁটুতেই, বৌ বাড়তি বোঝা, বৌ যন্ত্রণার ফ্যাক্টরিই, বৌ ঝগড়াটেই, বৌ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানরই করে, বৌর অত্যাচারে কাঁচা চুলে পাকই ধরে, বৌয়ের কাজ আবার কাজ হলো, বৌয়ের কাজের কোনো মূল্যই নেই, সংসারের কাজ আবার কাজ হলো!
আয়মানকে থামালো আরজু। আর বললো, শীরধার্য। এখন বলো ঘর ঝাড়ু দেবো, না টেবিল মুছবো, না থালাবাটি ধৌত করবো, না... 
আয়মান আরজুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, ঘরের কাজ করবে, পর যেন না জানে। যা করবে জানালা দরজা বন্ধ করে...
জানালা দরজা বন্ধের কথা বলেই আয়মান লজ্জায় জিহ্বা কাটলো। আরজু আয়মানের কাছে সরে এলো। আয়মান আদেশের সুরে বললো, কাছে আসবে না। ঘোরো।
আরজু ঘুরতেই আয়মান আরজুর গলা জড়িয়ে পিঠে চড়ে বসে বললো, বৌ তো বাদর। পিঠে চড়বে, মাথায় উঠবে। এখন আমাকে রান্না ঘরে নিয়ে চলো।
আরজু বললো, এভাবে তোমায় নিয়ে চলবো আমি হাজার বছর হাজার মাইল জীবনের পথ।
আয়মান নেমে আরজুর হাত ধরে বললো, সহযাত্রী ঘাড়ে চড়ে না, সমব্যথী ঘাড়ে চড়ে না। স্বামীর ঘাড়ে চড়ে হাজার বছর হাজার মাইল চলা যায় না। স্বামীর হাত ধরে পাশাপাশি হাজার বছর হাজার মাইল চলা সম্ভব।
আরজু বললো, তুমি অনেক জ্ঞানী, জানো অনেক। তোমাতে আমার মুগ্ধতার শেষ নেই। 
আয়মান বললো, মানুষ তো তখনই মুগ্ধ হয় যখন মুগ্ধ নয়নে চায়। জোরাজুরি, পীড়াপীড়ি, বলপ্রদর্শন, ক্ষিপ্রতা, দমন-শাসন সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। তোমার আমার সম্পর্ক একটা শিল্প, একটা সৌন্দর্য।
তখন রিপন এসে হাক দিলো, স্যার, আপনি কই? ডিমে তা দিচ্ছেন? 
বন্ধু যখন নাম না ধরে ডেকে স্যার ডাকে আর তুই স্থলে আপনি বলে তখন বোঝায় যায় ইচ্ছাপূর্বক অবজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই নয়। আরজু বাইরে এসে বললো, আরে দূর ডিমে তা দেবো কেনো? ভেবেছি, বৌ জ্বালালেই পিটাবো, বাড়তি কথা বললেই পিটাবো, পাশের বাড়ির কারো সাথে ঝগড়া করলেই পিটাবো, জ্ঞান দিতে গেলেই পিটাবো, সক্ষমতা নিয়ে কথা বললেই পিটাবো, অতি অভিরুচি দেখালেই পিটাবো, রান্না করতে দেরি করলেই পিটাবো, খেতে দিতে দেরি করলেই পিটাবো, ঘুরতে নিয়ে যাও বায়না ধরলেই পিটাবো।
রিপন খুব খুশি হলো আরজুর আজকের কথা শুনে। সে আরজুর সাথে করমর্দন করে বললো, এত দিনে তোর মুখে বীর পুরুষের মতো কথা শোনা গেলো। 
আর ধীরস্বরে বললো, শোন, স্বামীকে প্রেমিক হলে চলে না, স্বামী কামুকের মতো কাম সেরেই স্ত্রীকে পাঁচ হাত দূরে সরিয়ে রাখবে।
এ কথা বলে রিপন আরজুকে বুকে চেপে ধরে সান্ত্বনা খুঁজলো। নিজ ঘরে অশান্তিতে বাস করা মানুষ অন্যের ঘরে একই রকম অশান্তি দেখলে তাকে সমব্যথী ভেবে বুকে টেনে কী সুন্দর সান্ত্বনার আশ্রয় খোঁজে! বৌ-শাসিত নতুন কেউ বৌ-শাসিত দলে ভিড়লে বৌ-শাসিতদের মনে কী যে দক্ষিণা পবন বয় বলা দুষ্কর।
রিপন দ্রুত দোকানে গেলো। আর আরজু ঘরে এলো। আরজুকে সাবাস বলে আয়মান বললো, অভিনয় সুদক্ষতার সাথে করেছো। পাকা অভিনেতা যেন তুমি।
আরজু বললো, তোমায় নিয়ে খারাপ কথা বলতেই দেখলে ও কী খুশি হলো! লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ঘর করে, কিন্তু ঘরের মানুষটিকে অগুরুত্বপূর্ণ ভেবে ঘরকে নরক করে তুলেছে ওরা। ঘর হয়, ঘরণীও হয়, ওদের সুখ আর হয় না।
বৌ দ্বারা জ্বালাতনে অতিষ্ঠ আরজু, একথা রিপন বন্ধু সমাজে জানিয়ে দিলো। ঘোলা জল খেয়ে তাদের বন্ধু তাদের মাঝে ফিরে আসছে একথা কেউ কেউ বিশ্বাস করলেও কেউ কেউ করলো না। আরজু আসতেই সুমন বললো, তুই বৌয়ের পিছন ছাড়া পুরুষ না। বৌর বুদ্ধিতে চলা মানুষ তুই। নিশ্চয় তোর বৌ বলেছে, বন্ধুদের কাছে বৌর বদনাম করবে, বন্ধুরা তবে তোমাকে সাদরে গ্রহণ করবে। মাহাবুর, আরজুকে খবরদার আমাদের দলে নেয়া ঠিক হবে না।
মাহাবুর বললো, আমি জানি ও বৌর কথায় উঠে, বৌর কথায় বসে। বৌকে ভয় পায়, বৌর গরম খায়, বৌর দাসত্ব করে। ও বৌ ভক্ত, পুরুষ নামের কলঙ্ক।
আরজু কিছু বলতে চাচ্ছিলো। স্বজল, জাহিদ দুজন মিলে ওকে কোনো কথায় বলতে দিলো না। আরজু বন্ধু সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাড়ি এলো। আরজুকে দেখতেই আয়মান বললো, কোথায় যাও, বলে যাও না কেনো? আমার শাড়ি, শায়া, ব্লাউজ শুকাতে দেয়া আছে ছাদে, নিয়ে এসো তো।
কথাটি শুনতেই আরজুর রাগ হয়ে গেলো। হাতে ছিলো ডিমের থলি। ছুঁড়ে মেরে আবার দোকানে গেলো। জাহিদ দেখে বললো, ও মনে হয় সত্যিই বাড়ি আর টিকতে পারছে না। ওকে দলে নিয়ে নিই।
স্বজল প্রতিবাদ করে বললো, ও পর্যবেক্ষণে থাকবে, দেখি সত্যিই অত্যাচারিত হচ্ছে কিনা! অত্যচারিত হলে তার মাত্রা মৃদু, না তীব্র তাও জানা দরকার। ও অত্যাচার মেনেই নেবে, না সহ্য করবে না তাও বুঝতে হবে।
আরজু সবাইকে কষ্ট করে থামিয়ে বললো, দেখ, তোরা সংসারে শুধু শাসিত হচ্ছিস। আমি শাসিতও হচ্ছি, ভালোবাসাও পাচ্ছি। অমৃতে ভেসে যাচ্ছি, তো গরলে ডুবে যাচ্ছি। না মধু, না বিষ; না মানতে পারছি, না দূরে ঠেলতে পারছি। অন্ধ পতঙ্গের মতো ঘুরপাক খাচ্ছি, না পাচ্ছি কূল, না পারছি শূল জ্বালা সয়তে, না চাচ্ছিস তোরা শুনতে, না পারছি  বুকে চেপে রাখতে।
বান্না কটাক্ষ হেসে বললো, ও আচ্ছা, বৌ দ্বারা যত হচ্ছিস প্রভাবিত, তত হচ্ছিস প্রতারিত।
আবির বিজ্ঞজনের মতো করে বললো, গলার কাটা, না যায় ফেলা, না যায় জ্বালা সওয়া।
মহিন নড়ে চড়ে বসে তীর্যক চোখে চেয়ে কটাক্ষের গুঁড়ো মিশিয়ে বললো, রূপমাধুর্যে হচ্ছিস বিভোর, কথাচাতুর্যে কাটছে ঘোর। না পাচ্ছিস রাস্তা, না পাচ্ছিস পালাতে।
আরজু বললো, যত না দেয় রাগ উঠিয়ে, তারচেয়ে বেশি দেয় মন ভরিয়ে; মন তার রশদ পেলে রাগ যায় ভুলে। যত না দেয় জ্বালা, তারচেয়ে বেশি দেয় মায়া, মায়া পেলে জ্বালা যাই ভুলে। অম্ল-মধুর এই সম্পর্ক না পারি প্রত্যাখ্যান করতে, না পারি আশ্বাদন করতে।
বান্না বললো, বৌর হাতে নির্যাতিত হলেও থাকছিস হয়ে প্রিত, বৌ-জালে ধৃত তুই ইচ্ছাকৃত, বৌয়ের আঁচল আবৃত তুই, তুই একটা মৃত।
সাইদুর বললো, বুঝেছি, শাসন করতে যেয়ে সোহাগ দিয়ে ফেলছিস; সোহাগ দিতে যেয়ে ছোবল খেয়ে বসছিস। হাত তুলিস মারতে, সে হাত দিয়ে ফেলে আদর। আর আদর দিতে গেলেই হাত হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। তোর পাওয়ার আকুলতা প্রবল, তাই হারানোর ভয়ও প্রবল। উপসংহার, তুই বৌ ভক্ত।
বন্ধুরা মিলে আরজুকে দোকান থেকে  আবারো বিতাড়িত করে দিলো। বৌ-শাসিত দলে একটি মাত্র বৌ-শাসিত প্রাণীর ঠাঁই হলো না।
 
======০০০======

সৌমেন দেবনাথ

যশোর

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

রেজাল্ট ।। সৈকত মাজী

রেজাল্ট সৈকত মাজী শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।    " মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক  দিলো শুভ্রাংশু।    " কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।     " ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো"  কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।      " না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও"  মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।      শুভ্রাংশু...

রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি

রাই আর বাবা অদিতি চ্যাটার্জি রাই-র জীবনে বেশ কিছু ভালো লাগা আছে তার মধ্যে একটা হলো সন্ধ্যার সময় তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দেওয়া ।" আজ যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে বেশ ভিড়,নির্ঘাত 'তেলে ভাজা ' প্রেমীরা।" আপন মনেই ভাবে ও, কিন্তু বসার ঘরে সুমন আর আঁখি এতো জোরে 'হল্লা গোল্লা ' করছে তালতলার জমজমাট রাস্তার দিকে আর মন দিতে পারছে না রাই।  পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়ায় রাই, দেখে ক্লাস ফোরের মেয়ে এতোটা ঝগড়া করছে সুমনের সাথে , "বাপ রে, কবে এতোটা কথা শিখলো মেয়ে! কিভাবে কথা বলছে?? কোঁকড়া চুল ঝাঁঝিয়ে,গোলগাল হাত নেড়ে " ...মেয়ে কে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাই। এদিকে আঁখি বলছে, "ধুত্ বাপী তুমি কিচ্ছু পারো না, তুতাই-র বাবা, পিসাই, মামু সবাই কত ভালো করে খেলতে পারে , না আমি তোমার সাথে খেলবো না।" কাতর চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সুমন বলে ,"আচ্ছা তুই আমাকে শেখা, দ্যাখ আমি কার জন্য আলিপুরদুয়ার থেকে পনেরো দিন পর পর কলকাতায় আসি বল!"  ঐ টুকু মেয়ে কথা প্রায় না শুনেই ঘরে চলে গেল রাই-র চোখের সামনে, সুমন একবার হেসে বাথরুমের দিকে এগো...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী

বস্তু, চেতনা এবং  কবি সজল চক্রবর্তী  "যেখানে পৌঁছায় না রবি,, সেখানে পৌঁছে যান কবি।" এই ছোট্ট কবিতা টি অনেক পুরনো  এবং বহু পরিচিত, তথাপি এর তাৎপর্য এখনো হারায় নি। তবে, কথা হ'চ্ছে -আমরা তো  রবি-কবিকে একত্রেই পেয়ে যাই আমাদের ঋষি-প্রতিম কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। আর তখনই জেনে যাই উপরোক্ত ছোট কবিতার প্রণিধানযোগ্যতা ।  ... এবার শুনে নেয়া যাক, ঋষি-প্রতিম কবির মুখ নিঃসৃত বাণী:- "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি যাই ...." অর্থাৎ আমাদের প্রিয়তম কবি অনায়াসে পৌঁছে যান সৃষ্টির অসীমে , যা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এখানে কবির চেতনা সুদূর প্রসারী! ... প্রকৃত প্রস্তাবে কবি অতিন্দ্রীয় জগতের এক নাগরিক। তাঁর কাছে তাই চেতনা বা চৈতন্যেরই প্রাধান্য। ...এখন আসছি, বস্তু এবং চেতনার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে।  ... আমি একজন অতি সাধারন মানুষ, তাই এই ব্যাপারটাকে কবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ক'রছি। তবে আমার সামান্য জ্ঞান থেকে একটা সাধারণ কথা সেরে নি'। আমরা সাধারণত ব'লে থাকি-- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। প্রকৃত অর্থে কি তাই ? আসলে সূর্য যেদিকে ওঠে ,আমরা  সেই দিকটাকে নামাঙ্কিত ক...

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি  (পর্ব—সাত) অরবিন্দ পুরকাইত স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০, নববর্ষ ১৪৩১ ও কার্তিক ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল। নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তা বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে। আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল। অখেজো/অখেজে — অকেজো থেকে। আদরের তিরস্কার হিসাবেই মূলত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পাজি। অচিমিতি — (উচ্চারণ ওচিমিতি) আচমকা, হঠাৎ। অদীয় — প্রচুর, অজস্র। অদ্বিতীয় থেকে ক...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায়

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত রণেশ রায় ভূমিকা দর্শনের ইতিহাসে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক মানবচিন্তার গভীরতম প্রশ্ন। অধিবিদ্যা ভাবকে মুখ্য ধরে, বস্তুকে গৌণ বলে মনে করে। বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন—বস্তুই মুখ্য এবং চেতনা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ যখন প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল, তখনই সে বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিল—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর এই দৃশ্যমান জগতের বাইরে কিছু আছে কি? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিয়েছিল দর্শনের দুই বিপরীত স্রোত—ভাববাদ আর বস্তুবাদ। ভাববাদ বলেছিল—"ভাবই প্রথম," আর মার্কস বললেন—"না, বস্তুই প্রথম।" এই দুই প্রান্তের মাঝখানে আমি দেখি এক সেতুবন্ধন, যেখানে বস্তু, স্নায়ু ও চেতনা একে অপরকে গড়ে তোলে, আর তাদের এই ত্রিত্বের নৃত্যেই সৃষ্টি হয় জীবন ও কল্পনার জগৎ। ভাবববাদ এক সর্বশক্তিমান শক্তির কল্পনা করে যা এই বস্তুজগতের স্রষ্টা। আর এখান থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় ভাবধারার সৃষ্টি। আমার এই প্রবন্ধে আমি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক আলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি দেখাবার চেষ্টা করবো কিভাবে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুজগৎ বস্তু ও চেতনাকে সংযুক্ত করে এবং কল্পলোকের জন্ম দেয়...

চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার

চাঁদে জীবন  শমীক সমাদ্দার                           চন্দ্রযান দুরন্ত তৈরি, রকেটের উপর ভর করে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরিয়ে মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে  স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রাযান চাঁদের মাটিতে পা রাখবে সময়ের কাউন্ট ডাউন চলছে। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ স্পেসস্কাই গাবেষণা কেন্দ্র কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান অতল গভীরতায় বাসা বাঁধে। পরিচয়টা দিয়ে দিলাম এই স্পেসসিপে রয়েছে তিনজন নভোচর, একজনের নাম সাইমন আর এক জনের নাম রেমন্ড, আর এদের সঙ্গে একজন মহিলা আছে তার নাম মেরিনা। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। চন্দযান দুরন্ত চাঁদের পূর্ব -পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবতরণ করেছে। আলো আঁধারের গভীরতায় বড় বড় পাথরের পিণ্ড, চাঁদের সার্ফেসের উপরে পাথর জল দেখা যায়। জমাট বাঁধা অক্সিজেন আর কার্বনডাই অক্সাইড। ওরা এখানে এসেছে এক রহস্য উদ্ঘাটন করতে। যে স্থানে ওরা অবতরণ করেছে সেখানে ১০ বছর আগে ওরা এসেছিলো। রুশ সরকার ওদের দেশের ছাত্র ছাত্রী কে মহাকাশে চাঁদে পাঠাতে চায়। ওরা কেন এসেছে সেটা এখনো অধরা। সাইমনের বর্...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

মাসের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

দিদৃক্ষা ।। রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী

  দিদৃক্ষা রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী 'কাল একবার দেখা হতে পারে?' দশমীর দুপুরে খাটে আধশোয়া হয়ে নিজের ফোনটা ঘাঁটছিল দেবমাল্য; হোয়াট্‌সঅ্যাপের সার্চ বক্সে  র‍্যান্ডম সিক্যুয়েন্সে ক'খানা ডিজিট ইনপুট করতেই বিস্মৃতির অতল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে যে নামটা স্ক্রিনের সারফেসে ভেসে উঠল, এককালে দেবমাল্যের প্রায়োরিটি লিস্টে সবথেকে ওপরে পিন্‌ করা থাকতো এই অ্যাকাউন্টটা। 'অহনা দাশগুপ্ত'—গ্রেয়েড-আউট ডিপিটার ডানদিকে, নামটার তলায় নিস্প্রভ হরফে ভেসে থাকা ওর এই লাস্ট মেসেজটা বেশ ক'বছরের পুরনো, কিন্তু দেবমাল্যর স্মৃতির প্যান্ডোরা বাক্সটি উলটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরেকবার আপাদমস্তক শিহরিত হয় সে। প্রোফাইলটা খুলে ওপরে-নীচে স্ক্রল্‌ করে দেখে, ওদের পুরনো চ্যাটগুলো তেমনি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ওর মেসেজগুলোর পাশে ডাবল টিকগুলো এখনও জাজ্বল্যমান সবুজে ছোপানো, যেন এইমাত্র 'সিন্‌' করে রেখেছে অহনা! যেন এখুনি আবার হাত বোলালেই অহনা এসে খানিকটা রাগত ভঙ্গিতে চ্যাট করতে লেগে যাবে। দেবমাল্যের বুক ছাপিয়ে একটা নীরব দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে! ছুটির এই আমেজটা লক্ষ্মীপুজো অব্দি গড়াবে—অফিস খুললেই তো আবার দমফাটা ব্য...

গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম

  গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম হুইসেল (মুরাকামি থেকে অনুপ্রাণিত) ♦ 'গভীর রাতে একটা হুইসেল কতটা গভীর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারো না,' ছেলেটা বললো, 'আশ্চর্য ঐ হুইসেলের মতো আমি ভালবাসি তোমাকে।' কিন্তু গভীর রাতে অন্ধকারে কখনও তো ঘুম ভেঙে যায়নি মেয়েটার, কখনও ও বিচ্ছিন্ন আর একা হয়ে যায়নি। ও কীভাবে অনুভব করবে গভীর রাতে ট্রেনের হুইসেল কতটা গভীর! নিউজ এজেন্সি ♦ একসময় আমরা খবর শুনতাম এখন দেখি স্বীকার করতে হবে খবর শোনার চেয়ে দেখার আনন্দ বেশি আলাদা উত্তেজনা নিউজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে তৎপর আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনটা নিউজ সেটা ওরাই ঠিক করে যেটা ওদের দরকার আর সেটাই আমাদের দেখানো হয় ধারাবাহিকভাবে সুচারু জ্যামিতিকতায় বিভিন্ন পদ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় নতুন বাস্তবতা নির্মাণে যে বাস্তবতায় জায়গা নেই আমাদের ইতিহাস অন্বেষা স্বাধীনতার সমৃদ্ধি আর স্বাধীনতার কথা বলেই ওরা আমার ক্ষেতখামার পাহাড় আর নদীর দখল নিয়েছে তাহলে টিভিতে যে হাসিখুশি প্রাণবন্ত আমাদেরকে দেখানো হয় ওরা কারা এই প্রশ্ন করো নিজের কাছে আগুন নিয়ে খেলা ♦ আজও পুকুরে ছিপ ফেলে বসবো আমি ধীরে চুপ সূর্য আমার ঘাড়ে শ্বাস ফেলবে সারারাত ঘরের ভেতর ল্যাং...

বিদায়ের স্রোত ।। চয়ন মন্ডল

  বিদায়ের স্রোত চয়ন মন্ডল "বিজয়া দশমী—আনন্দের দিন, কারও কাছে যা হয়ে উঠল চিরন্তন বিদায়।" আজ বিজয়া দশমী। শিউলি ফুলের গন্ধে ভোরটা অন্যরকম। পাড়ার প্যান্ডেলে অদ্ভুত এক কোলাহল—মায়ের বিদায় যে আজ। শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা আর উলুধ্বনিতে গমগম করছে চারদিক। একদিকে মা দুর্গার বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ ও মিলনমেলা। সারা বছরের অপেক্ষা শেষে এই দিনটিতে প্যান্ডেল ভরে উঠেছে মানুষের ভিড়ে। সকালের পূজার্চনা শেষ হতেই শুরু হয়েছে সিঁদুর খেলা। মহিলারা মায়ের প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে একে অপরের কপালে, গালে রাঙিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকের তালে আর শাঁখ বাজনার আবেশে ভেসে যাচ্ছে পাড়া। শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু এসবের মধ্যে নেই অনুরাধা। কেউ তার বা মিনির খোঁজ রাখেনি। মুখার্জিদের দোতলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে সে চোখের জল ফেলছে। সবার বাড়িতে আলোর রোশনাই, ভোগের গন্ধ, হাসি—শুধু তাদের ঘরটিতে নিস্তব্ধতা। গতবছর এই দিনেই তো অন্যরকম ছিল সবকিছু। অনুরাধা, সুজয় আর তাদের তিন বছরের মেয়ে মিনি পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে নেচেছিল, সিঁদুর খেলায় রঙে ভেসেছিল। বিকেলের দিকে প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে শামিল ...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

শেষ বিকেলের আলো ।। সৈকত প্রসাদ রায়

  শেষ বিকেলের আলো সৈকত প্রসাদ রায় রানাঘাট শহরের প্রান্তে ছোট্ট এক পাড়া বিশ্বাসপাড়া। সেই পাড়ার পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়িটায় থাকেন পুষ্পরাণী ভট্টাচার্য— বয়স পঁয়ষট্টির কোঠায়। সবাই তাকে "পুষ্পদি" বলেই চেনে। একসময় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন অবসর নিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে পুষ্পদি বারান্দায় বসে চা খান। ছোট একটা টেবিল, কয়েকটা পুরোনো বই, আর একখানা নীল কাঁচের ফুলদানি — তার নিত্যসঙ্গী। বারান্দার সামনেই একটা গলি, যেখান দিয়ে প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পরে বাচ্চারা হইচই করে ছুটে যায়। পুষ্পদির একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ — কলকাতায় চাকরি করে। ছেলেটা আধুনিক, নিজের সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। বছরে হয়তো একবার আসে, তাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়। পুষ্পদি মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতরে একটা কষ্ট জমে থাকে। সেই বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশে ধুলো, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। হঠাৎ পুষ্পদির চোখে পড়ে — রাস্তায় এক কিশোর বসে আছে। বয়স বারো-তেরোর বেশি নয়। মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া চটি। ছেলেটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুষ্পদির বাড়ির গেটে ঝুলে থাকা পুরোনো নোটিশবোর্ডটার দিকে, যেখানে একসময় লেখা ছিল — "পুষ্পরাণী ভ...