Skip to main content

রম্যগল্প ।। বৌ-শাসিত দল ।। সৌমেন দেবনাথ


বৌ-শাসিত দল

সৌমেন দেবনাথ 


বুঝতে শেখার পর থেকেই মানুষ বিয়ের জন্য আকুলি বিকুলি করে। কেউ রোজগার করে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়ে করে, কেউ অপরিণামদর্শীতার পরিচয় দিয়ে সেসব কিছুই না করে বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পূর্বে বৌ প্রাপ্তির যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকে, বিয়ের পর নানা কারণে সেই প্রবল আকাঙ্ক্ষাতে ভাটা পড়ে। বৌর ছেলেমি যেমন মিষ্টি লাগে, খুঁনসুটি যেমন মিষ্টি লাগে, বৌর অবুঝ সবুজ আচরণ আর রূপসুধা যেমন মিষ্টি লাগে তেমনি বৌর অযাচিত চাওয়া, অনৈত কথাবার্তা, দ্বিচারিতা বা দ্ব্যর্থক আচরণ বিরক্তির চরমকে ছুঁয়ে যায়। একটু ভালোবাসার জন্য কখনো উদবেলিত হয়ে ধরা দেয়, একটু ভালোবাসা দিতে গেলেই কটাক্ষ উচ্চারণে জর্জর করে। স্পর্শাকাঙ্ক্ষা জাগলে স্পর্শ করতে গেলে অলঙ্ঘনীয় বাঁধা, অথচ অকারণে কাছে এসে উষ্ণ ওমে স্বর্গসুখে ভাসায়। দূরে থাকে না কিন্তু দুর্লভ্য, ঠিক এতটুকু কাছে কিন্তু অনতিক্রম্য, ছোঁয়ায় ছায়ায় রাখে কিন্তু অস্পর্শনীয়। হাসি দিয়ে ভরিয়ে রাখে কিন্তু হাসির কথা বলতে গেলেই জোকার বলে বসে। সুখ দেয়, সুখের অসুখে মরি, সুখাতীত। কল্পনাতীত সুখ। তার অধীনে থাকলে তুষ্ট, সমচিন্তা পোষণে সে শিষ্ট, দমন চিন্তাতে গেলে সে দুর্দমনীয়। পেশল শক্তি হেরেছে যুগ যুগ মহিমা শক্তির কাছে। পুরুষ যত বেশি থেকেছে পরাজিত, পুরুষ তত বেশি হয়েছে জয়ী। পুরুষ যত বেশি থেকেছে অবনত, পুরুষ তত বেশি থেকেছে সমুন্নত। প্রতিটি বৌ-ই যদি বুদ্ধির ঢেঁকি না হতো তবে স্বামী বিলীন হয়ে যেতো ডাইনোসরের সাথে সাথে। সাংসারিক নানা সংকট, দ্বন্দ্ব সম্পর্কে টানাপোড়েন বাঁধায়। অসহিষ্ণু স্বামীরা  সব সমস্যার অন্তমূলে বৌদেরই দায়ী করে থাকে।
বন্ধুদের মধ্যে আরজুই সফল ভাবে লেখাপড়া শেষ করে সম্মানীয় পেশায় আছে। এজন্যই এখনো তার প্রবল আকাঙ্ক্ষার বিয়েটা করা হয়ে উঠেনি। বিকেল থেকে রাত দশটা অবধি ওরা চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়। যখনই বন্ধুরা শুনলো আরজুর পরিবার আরজুর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে বান্না দাঁড়িয়ে বললো, মেয়ে একদিন দেখে কিচ্ছু বুঝবি না। দশদিন দেখেও কিচ্ছু বুঝবি না। আমি অর্ধযুগ সংসার করছি তাই কিচ্ছু বুঝলাম না। তুই শিক্ষিত, জ্ঞানী। বুঝে শুনেও ভুল করিস না। তোর সাজানো সংসার মদমত্তহস্তীর মতো চটকিয়ে শেষ করে দেবে। বিয়ে করিস না।
চা দোকানদার সজীব বললো, খাবে যার গাবে না গীত তার। খাবে যার দৌঁড়ের উপর রাখবে তার। খাবে না যার সেই-ই বীর পুরুষ। সেই সংসারের সব কাজ করে। আর যে সংসারটাকে জোয়াল করে গরুর মতো টেনে চলেছে সে বেবোধ, অকর্মণ্য। 
সুমন বললো, আমরা বিপথে হেটে বিয়ে করে ফেলেছি। আমরা অশিক্ষিত বলে বিয়ে করেছি, তুই শিক্ষিত হয়ে বিয়ে ক-র-বি কেন? তুই ভালো পথে চলা মানুষ। এত আয় রোজগার করেও বৌর মন পাই না। রোদ বৃষ্টিতে এত কষ্ট করি তার কষ্টও লাগে না। আর তার খোরাক হাতির খোরাকের চেয়ে বেশি। আমরা না দেখে না জেনে ভুল করেছি; তুই দেখেও জেনেও ভুল করবি কেন? বিয়ে করিস না।
সাইদুর বললো, বিয়ের পূর্বে বৌ সম্বন্ধে খুব উত্তেজনা থাকে, কৌতুহল থাকে, বিয়ের পর বুঝবি কিচ্ছু না। পঁচা উচ্ছিষ্টের চেয়েও খারাপ কিছু। এখন তো একা থাকতে পারছিস না, তখন একা থাকার জন্য দূরে পালাবি। নিকৃষ্ট প্রাণীর দিকে তাকাতে ইচ্ছে হবে কিন্তু বৌর দিকে তাকাতে ইচ্ছে হবে না। বিয়ে করিস না।
সজীব বললো, রূপে চমক, চড়ক; কথায় খড়গ। রূপজলে স্নান, কথার তীর্যক বাণে স্থান অথৈ অতল। দিতে দিতে রিক্ত হবি তবুও তার চাওয়া কমবে না, বাড়বেই। আর মিলন তৃষ্ণায় পর্যাপ্ত জল না দিতে পারলে স্বামী ধরা তা কী ধরা, মরণ ধরা। দিনের ক্ষুধা রোজগার করে না হয় স্বামী মেটাতে সক্ষম, রাতের ক্ষুধা মেটাতে স্বামী অক্ষম হলে তার ইহজাগতিক সুখ শেষ।
আরজু বন্ধুদের থামিয়ে বললো, ভালো মানুষেরা খারাপ বলে না, খারাপ মানুষেরা ভালো বলে না। ভালো মানুষের বৌ ভালো হয়, খারাপ মানুষের বৌ খারাপ হয়। 
আবির বললো, ও, আমরা ভালো না বলে আমাদের বৌ ভালো না? বৌয়ের চুলে চিরুনি করে দিই, বৌয়ের চুলে বেণি করে দিই, বৌর মাথার উঁকুন বেছে দিই। আর কি করলে বৌর চোখে ভালো হবো শুনি?  
আরজু বললো, অযত্নে লোহায় মরিচা পড়ে। অযত্নে অবহেলায় সম্পর্কের বাঁধনে ঘূণপোকা ধরে। জীবনে সবটা সময় বর্ষা নয়, আবার সবটা সময় বসন্তও নয়। সম্পর্কে উত্থান-পতন থাকবে, মান-অভিমান থাকবে। বৌকে যত্ন করবি, বৌয়ের কাজের মূল্যায়ন করবি। বৌয়ের ছোট ছোট কাজেরও গুরুত্ব দিবি, তার মতের প্রাধান্য দিবি। বৌয়ের কথার মূল্য দিবি।
জাহিদ আবিরকে উত্তর দিতে না দিয়ে নিজে দিলো, বৌয়ের কথার মূল্য দিই না? বৌয়ের কথার আর বৌকে মূল্য দিতে দিতে সবার কাছে মূল্যহীন হয়ে গেলাম। বাবা-মা, ভাই-বোনকে ত্যাগ করলাম। তবুও তো সুখ পেলাম না। সংসারে আমার মতের কোনো মূল্য নেই। কিছু বলতে গেলেই বৌ শাশিয়ে বলে, তোমার নিয়মে সব চলবে না।
সজীব বললো, ঘরবাড়ি ছেড়ে জাহিদ রয়েছে শ্বশুরবাড়ি। হয়েছে ঘর জামাই। সারা গ্রামের মানুষ বলে জামাই, মনে মনে বলে ঘর জামাই। সমাজের মানুষের কাছে একটা নিকৃষ্ট মানুষ হয়ে গেলে ও। স্বামীর সম্মানে স্ত্রী সম্মানিত, স্ত্রীর গুণেও স্বামী সম্মানিত। তবে বেশির ক্ষেত্রে স্ত্রীর অহিতকাণ্ডে স্বামী অসম্মানিত। মাথায় ঘোমটা থাকে না, বুকে কাপড় থাকে না। অন্য পুরুষ দেখারও দেখবে আবার শাশিয়ে বলবে তোর বৌ বেলাল্লাপনা। 
রিপন বললো, বৌয়ের সাথে পারেনি রাজা, পারেনি প্রজা। বৌয়ের সাথে পারেনি দশ খুনের দাগী আসামীও। বৌয়ের আপাত সৌন্দর্যে আছে বিস্ময়, তার রণ-কৌশল না বুঝলে ভাঙবে না তন্ময়। বৌয়ের রসের হাড়িতে মুখ দিলে স্বামী আর স্বামী থাকে না, হয়ে যায় হুকুমের গোলাম। 
আরজু বললো, সব কিছুতেই ভালো মন্দ আছে। ভালো আরো ভালো হয়, মন্দও একদিন ভালো হয়ে উঠে। আদর-সোহাগ ভালোবাসার পাশাপাশি শাসনও করতে হবে। শাসন হবে আদর প্রাপ্তির জন্য। বৌকে শাসন করা আর চোরকে শাসন করা তো এক না। বৌ তো চোর না।
মাহাবুর বললো, একবার বৌকে একটা থাপ্পড় মেরেছিলাম। বৌ হাউমাউ করে কান্না শুরু করে, সন্তান মরলেও মা অত জোরে কান্না করে না। থাপ্পড় মেরেই হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েও পার পাইনি। বাবা এসে বকলো, মা এসে বকলো, শ্বাশুড়ি ফোনে বকলেন, শ্বশুর দেখে নেবেন বললেন, আর শ্যালক তো জেলের ভয় দেখালো। সেদিনই কানে ধরেছি বৌর অত্যাচারে মরে যাবো তবুও বৌর গায়ে হাত দেবো না। সবাই বৌর পক্ষে। 
আরজু বললো, অন্যায় সবাই-ই করে, বৌর অন্যায় চোখে পড়ে বেশি। বোনও নানা কথা বলে, মেনে নিই। বৌ কোনো কথা বললেই বেঁধে যায়। নপুংসকরা বৌকে প্রহার করে। বৌ ভুল করলে ভালো ভাবে ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। কাজ না হলে সর্বোচ্চ গরম দেয়া যেতে পারে।
স্বজল বললো, বৌকে গরম দিলে বৌ কি বলে জানিস? বলে, তোমাকে আমার এমনিতেই ভালো লাগে না, পছন্দ হয় না; আবার দাও গরম? কী সাহস!
আরজু বললো, বৌর চোখে তুই ভালো না কেন? বৌ তোকে পছন্দ করে না কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবি আগে। সংসার শুধু জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য শরীর গরম করে উঁৎ পেতে থাকা না। বৌর হৃদয়ের খোঁজ রাখিস? কাজের সময় কাজ, ঘুমের সময় ঘুম আর বাকি সময় শুধু ভালোবাসতে শিখতে হবে। টাকা-পয়সা, অলংকার, কাপড়-চোপড়ের চেয়ে নারী বেশি ভালোবাসাখোর। ধনীর দুলালীও গরীবের ঘরে থাকে, শুধু পর্যাপ্ত ভালোবাসার ওমে।
মহিন নড়েচড়ে বসে বললো, তুই লেকচারার, লেকচার দিয়ে পার পাচ্ছিস। সংসারে প্রবেশ কর বুঝবি সংসার একটা জঞ্জাল। কোনো হিসেব মেলে না। বৌকে ভালোবাসতে যাবি বৌ ঐ টাকা-পয়সা, অলংকার, কাপড়-চোপড়ই চেয়ে বসবে। বৌকে ভালোবাসা যায় না। দূর্গন্ধকে যতই দূরে রাখা যায় ততই সুগন্ধ পাওয়া যায়। 
আরজু বললো, আমি সকল বাঁধাকে জয় করে একটা সুখী, সুন্দর আর অনুকরণীয় সংসার গড়বোই। তোরা দেখিস।
রিপন বললো, ওকে আমরা যতই বোঝাবো, ও বুঝবে না। আমরা বিয়ের পূর্বে এই বাঁধাটা পেলে আজ এতো দুর্ভোগ ভোগ করতাম না। আমরা সব মল খাওয়া পাখি, মল আচ্ছামতো চোখে, মুখে, নাকে, ঠোঁটে, জিভে মাখবো, তারপরই আমাদের চোখে সব পরিষ্কার হবে। তার আগে কি করছি জ্ঞানেই আসবে না।
পরদিন আরজু এসে বললো, যারা মেয়ে দেখতে গিয়েছিলেন তাঁরা মেয়ে পছন্দ করে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করে এসেছেন। শুনামাত্রই আবির বললো, বিয়ে যখন করবিই, কর। ঘোল আমরা একা খাবো কেনো, তুই-ও খা। তবে বিয়েতে খবরদার খরচ করবি না। একটা গণ্ডমূর্খ, অপদার্থ, জ্ঞানহীনা, বুদ্ধিহীনা, জড়বস্তু, ভারবোঝা বৌকে ঘরে আনতে একটা টাকাও খরচ করা ঠিক না।
সবাই আবিরের কথাতে সমর্থন দিলো। আরজু বললো, বিয়ের কথা ২১-এ, করছি ৩০-এ, বৌ পাওয়া ভাগ্যের, অনেক সাধনায় মেলে বৌ। অনেক খরচ করবো বিয়েতে, তোরা পেট পুরে খাবি।
মহিন বললো, বান্নাকেও বিয়েতে বাঁধা দিয়েছিলাম। বান্না বলেছিলো, আমি তোদের মতো মেছো বাঘ না, বাঘা বাঘ। আমাদের বাঁধাকে অগ্রাহ্য করে বাঘা বাঘ বিয়ে করলো। বাঘা বাঘ সর্পিণী বৌর ছোবল খেয়ে মিনমিনে বিড়াল হয়ে গেছে।
বান্না মহিনের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস কাটলো আর বললো, বৌর সাথে কেউ পারবে না। সুমনের বৌ সুমনকে জ্বালাতো বলে সুমনকে বলতাম, আমার বৌ হলে পিটিয়ে সোজা করে ফেলতাম। বৌ সোজা করবো কী! আমিই সোজা হয়ে গেছি। মাঝে মাঝে ভাবি এই কালনাগিনী বিষধর গোখরা সাপ বৌর সাথে সারাটা জীবন সংসার করবো কী করে!
আরজু বললো, তুই ছিলি বাঁকা, বিয়ের পরই সোজা হয়েছিস। এটাই তোর কপাল, বিয়ের সুফল। বিয়ের পর ঘাড়তেড়া, রগচটা,লম্পট, ডাকাত, বখাটে, ইভটিজার সব সোজা হয়ে যায়। অলস কর্মঠ হয়। কাজ উদাসী কাজ পাগল হয়। রোদ-ভীতু রোদে পোড়ে, বেহিসেবী হিসেবী হয়, অপচয়কারী সঞ্চয়ী হয়, বেহুদা আলাপী সদালাপী হয়, পরনারী আসক্তে চরিত্র শুদ্ধ হয়। এগুলো বিয়ের কুফল না, সুফল। 
সজীব দীর্ঘশ্বাস কেটে বললো, সাইদুরের বড় ভাই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মানুষকে খাওয়ায়ে হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ করে বিয়ে করলো। বৌয়ের বুদ্ধিতে জমি বিক্রি করে কিনলো গাড়ি। জমিতে হতো বছরের ফসল। খাদ্য সংকটে সাইদুরের ভাই  গেলো বিদেশ৷ বিদেশ থেকে সাইদুরের ভাই টাকা পাঠায়, সেই টাকা দু হাতে উড়ায় তার ভাবি। শেষে কুদ্দুসের হাত ধরে গেলো চলে।
আরজু বললো, সম্পর্কের ভীত না থাকলে অঘটন ঘটেই। যে সম্পর্কে মমত্ব থাকে, আদর থাকে, মায়া থাকে, থাকে দায়িত্ব ও শ্রদ্ধা সে সম্পর্ক ভাঙে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী বিয়ে নামক বন্ধনের মধ্য দিয়ে নারী পুরুষ ঘর বেঁধে সুখের স্বপ্নে জীবধাত্রী ধরিত্রীর বুকে সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রেখেছে। জীবন চলার পথে মতৈক্য, মতনৈক্য থাকলেও জীবন ধারা থেমে থাকেনি। আমরা আপাত দৃশ্য দেখে মন্তব্য করি, গভীরের সৌন্দর্য দেখি না।
কেউ আরজুর কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করে আর কথা বাড়ালো না। কেউ হাসলো, নাক দিয়ে বায়ু বের হলো, কেউ ঠোঁটের কোণা বাঁকিয়ে হাসলো। যার ভাবটা এমন, বিয়ের পর দেখবো এমন ভাবের কথা অটুট থাকে কি না!
পরের দিন আবারো চায়ের দোকানে আড্ডা শুরু হলো। বিয়ে উপলক্ষে আরজু ব্যস্ত, কেনাকাটা সারছে। আবির দোকানের এক কর্নারে চুপ করে বসে আছে। দীর্ঘশ্বাস কেটে বললো, আমি এতো ঘরকুনো ছিলাম, বিয়ের পর ঘরেই থাকি না। থাকি না মানে থাকতে পারি না। সারাক্ষণ বৌ কানের কাছে ঘ্যানর-ঘ্যানর, প্যানর-প্যানর করে। এ নেই তা নেই, এ দাও কিনে তা দাও কিনে। এ করলে কেনো, তা করলে না কেনো? এতো অতিষ্ঠ সহ্য হয়? বাইরে থাকলে বাড়ি গেলে কৈফিয়ত। স্বাধীনতা তুলোর মতো উড়ে গেছে।
সুমন বললো, আমার বৌর কথা কী বলবো! প্রতিবেশিদের সাথে ঝগড়া করবে, মায়ের সাথে বাবার সাথে ঝগড়া করবে, আর পাশে যখন কেউ থাকবে না একা একা গলা বাজাবে। আমি বাড়ি ফিরলে সারাদিন যা যা করেছে বিরতিহীনভাবে বলতে থাকবে। অসহ্য যন্ত্রণা, ছুঁড়ে ফেলা গেলে ফেলেই দিতাম। 
স্বজল বললো, সপ্তাহে সপ্তাহে শাড়ি কিনে দিই তাও বৌয়ের হয় না। শপিংয়ে যাবে, সারাদিন বাজার ঘুরবে। বাড়ি এসে বলবে, আরো একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছিলো, পেঁপে রঙের। টাকা তো দেওয়ার সময় হাত থেকে সরে না। আচ্ছা, বৌ এতো বেহিসেবী হলে জীবনে উন্নতি সম্ভব? জীবনের কোকিল ভেবে যাকে ঘরে আনলাম, সেই কাকের মতো কাজ করে।
রিপন বললো, আমার বৌয়ের কথা তিন মিনিট শুনলেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যাবে। কোনো সোজা কথা বলবে না, কোনো ভালো কথা বলবে না। আমার সক্ষমতা নেই বিয়ে করেছি কেনো! ঘুরতে নিয়ে যাই না বলে আমি বেরসিক। প্রতিদিন মাছ-মাংস কিনি না বলে আমি কৃপণ। দুপুরে খেয়ে কেনো বিশ্রাম নিই, তাই আমি অলস।
আরজু মুখ খুললো, সংসার এমন সমস্যাপূর্ণ। মানিয়ে চলতে হয়। 
তা শুনেই আবির ক্ষেপে গেলো, বললো, মানিয়ে চলি বলেই সংসার টেকে। নতুবা বৌর যে বুদ্ধি আর কথাবার্তা দুদিন পরপর তার সংসার ত্যাগ করতে হতো। এতো হালকা বুদ্ধি প্রাণীকূলে আর কারো নেই। নিজের ভুল নিজেই বোঝে না। সংসারে দুখের আগুন জ্বেলে কী ও সুখের ঠিকানা খোঁজে? কী বলে, কী করে, বিরক্তিকর!
সুমন বললো, বৌয়ের সব অভিযোগ, আদেশ, আবদার মেনে নিতে নিতে প্রতিটি পরিবারে বীরপুরুষও গাধা হয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবে পাই না, বৌটি কেবল চায়-ই, চায়-ই। চাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভাবনা নেই, কি চাচ্ছে!  মাথা অবনত হবে বলে আমি কখনো কারো কাছে কিছু চাই না।
আরজু বললো, স্যাক্রিফাইজ করার মন মানসিকতা উভয়ের মধ্যেই থাকতে হবে। ত্যাগের জোর অনেক।
স্বজল বললো, যতই স্যাক্রিফাইজ করো, একটা পর্যায়ে যেয়ে কেনো যেন আর সহ্য করা যায় না। কোনো স্বামীই অযথা বৌকে প্রহার করে না। অনর্থক কথা বলে বলে মাথা আউলায়ে দেবে। যতই শিক্ষিত হোক, কাজ একই রকম। গাধা পালন করা যায়, বৌ পালা যায় না। অসহ্য রকমের মূর্খ।
আরজু বললো, সব সময় তো আর ঝগড়া মনোমালিন্য হয় না। হাজার অমিলের মধ্যেও কোথাও না কোথাও মিলের কারণে স্বামী-স্ত্রী আজো বেঁধে বেঁধে বাস করছে। সবটা সময় ভালো থাকা, মহব্বতে থাকা এটা আশা করাও ঠিক না। যে বৌ বকছে, সে বৌ সেবাও দিচ্ছে, রান্না করে খাওয়াচ্ছে, বুকে মাথা রেখে দুটো স্বপ্নের কথাও বলছে। বিপদে সাহায্য করতে না পারলেও পাশ থেকে তো সরছে না। স্বামীর দুর্দিনে নিজ গহনা কী দিয়ে দেয় না? স্বামীর অসুস্থতায় নির্ভরতার হাত কী বাড়িয়ে দেয় না? স্ত্রীর শুশ্রূষাতেই স্বামী বাঁচে। স্বামীর অস্থিরতায় সান্ত্বনার হাত বাড়িয়ে দেয় কে? স্ত্রী। 
রিপন বললো, দোস্ত, তুই বিয়ে করিসনি, এ জ্বালা বুঝবি না। বৌ তোর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে, ভাবছিস খুব যত্নে রাখবে, আদরে রাখবে, যতই যত্নে রাখবি, যতই আদরে রাখবি সে ভাববে আমার খেয়ালই করছে না। তার মনের যত দাবি পূরণ করতে যেয়ে সঞ্চিত সঞ্চয় সব যাবে, মনের দাবি কমবে না, বাড়বেই। স্বামীর সম্পদকে বৌ যদি নিজের সম্পদ না ভাবে স্বামী তো পথে বসবেই।
আরজু বললো, আমি তো জানি বৌয়ের কারণেই বখাটে স্বামী রত্ন স্বামী হয়ে উঠে। উড়নচণ্ডী স্বামী সংসারী স্বামী হয়ে উঠে। বিয়ে করলেই রুজি বাড়ে। বৌর আকর্ষণেই ঘরবিমুখ স্বামীও ঘরমুখী হতে থাকে। বৌ তো আঁচল পেতে বসে থাকে অপেক্ষায়, মায়াবী কথা বলে মন ভুলায়, মান ভাঙায়।
সুমন নাক সিটকে বললো, স্বপ্নে আছিস। বিয়ে কর সব ভুল ভাঙবে।
আরজু বললো, মন বুঝে চললে সংসারে অশান্তি হবে না। বৌয়ের মন বুঝতে হবে, তাকেও বোঝাতে হবে, সেও যেন বোঝে।
স্বজল বললো, বৌ-জাতি কী বোঝে! কী বোঝাবি? সে যা বোঝে তাই উত্তম। আর যে কী বোঝে বিয়ের পরে বুঝবি! সে নিজেরটা, নিজের শখটা, নিজের অধিকারটা বোঝে, আর কিছু বোঝে না।
আরজু বললো, বৌয়ের মতামতের মূল্য দিতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে। বৌ পর না যে তার মতামতের অধিকার থাকবে না।
মাহাবুর এতক্ষণ চুপ করে ছিলো। পারলো না আর চুপ থাকতে। বললো, বৌয়ের কথা শুনে কাজ করলে দশদিনে ফকির হতে হবে। বৌয়ের ভাবনা যে কত অপুষ্ট, সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে বোঝা যায়। 
আরজু বললো, বৌয়ের প্রতি এতো ক্ষোভ কেন? তার কী কিছুই ভালো না?
আবির বললো, তার হাসিটা সুন্দর, তা কী অভাগা স্বামীর জন্য? তার কথা মিষ্টি, তা কী হতভাগা স্বামীর জন্য? পাশের বাড়ির দেবরের জন্য।
আরজু বললো, তোদের পরিবারে অশান্তি, আমার মনে হচ্ছে ভালোবাসার দৌঁড়ে তোরা হেরে গেছিস!
জাহিদ বললো, সংসারের জন্যই পুরুষ কাজ করে। বন বাদাড়ে কাজ করে পরিবারের অন্ন যোগান দেয়। এরচেয়ে কীভাবে আর ভালোবাসা প্রকাশ করবে স্বামী?
আরজু বললো, বৌয়ের সাথে কখনোই দূরত্ব বাড়ানো ঠিক না। কাছে কাছে ঘেঁষে থাকলে সম্পর্ক কখনো নষ্ট হবে না।
রিপন বললো, বৌয়ের কাছে ঘেঁষে থাকবো? স্বপ্ন ভালো! বৌ যে কী তিক্ত যন্ত্র দেখবি তার পাশে ঘুমাতেও বিরক্ত আর অসহ্য লাগবে। যত শাসনে রাখা যাবে ততই শান্তি, প্রশ্রয় পেলে মানসিক রোগী বানায়ে ছাড়বে।
আরজু বললো, কেনো যেন মনে হচ্ছে আমার বৌ ভালো হবে। না হলেও আমার মোহনীয় শক্তি আর তিতিক্ষা দিয়ে ঠিক করে নেবো।
সাইদুর বললো, এমন স্বপ্ন নিয়ে আমরাও সংসার পেতেছিলাম। বাজার বা অফিসে যা খেতাম বাড়ি নিয়ে যেতাম। এখন পথের কুকুরকে খেতে দিই, কুকুর যার খায় তাকে ঘেউ করে না।
পরদিন চায়ের দোকানদার সজীব চুলা জ্বালাচ্ছে আর বলছে, পাঁচ হাজার টাকা ইনকাম করলেও মা বাবার সব চাহিদা পূরণ করা যায়, ত্রিশ হাজার টাকা ইনকাম করলেও বৌয়ের চাহিদা পূরণ করা যায় না।
দীর্ঘশ্বাস কেটে বান্না বললো, ভেবেছিলাম বিয়ে করলে সুখ-দুঃখ শেয়ার করার মানুষ পাবো, দুশ্চিন্তা লাঘব হবে। বিয়ের পর দেখি বৌ দুশ্চিন্তা তৈরির কারখানা! বড় ভাই আমার বন্ধু ছিলো, তাকেও শত্রু বানিয়ে ছেড়েছে, বোঝ বৌর কেরামতি!
সজীব বললো, সব পাওয়াতে কিছু না কিছু অতৃপ্তির পাশাপাশি তৃপ্তিও আছে। বৌ পাওয়াতে কোন তৃপ্তি নেই। বৌর গুণগান যে পুরুষ করে বুঝতে হবে বৌর থেকে থেরাপি খাওয়ার ভয়ে। 
সজীবকে শাশিয়ে মাহাবুর বললো, বৌ যখন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসার গল্প করে তখন তো ভুলে যাস বৌ মায়ের সাথে কী অন্যায় করেছে, বাবার সাথে কী দুর্ব্যবহার করেছে। অন্ধকারে বৌয়ের গায়ের গন্ধ মাখলে ভুলে যাস দিনে যে সে তোর মরা মুখ দেখবে দশ বার বলেছিলো। 
মহিন বললো, ঘরের কোনো জিনিসে হাত দিতে হলে আগে অনুমতি নিতে হবে বৌর থেকে। ঘরে আম পেকে পঁচছে, তাও অনুমতি নিয়ে খেতে হবে। কোথাকার কে সে! উড়ে এসে জুড়ে বসা!
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে মহিনের গলা ধরে এলো। সাইদুর বললো, আমার বড় ভাই সারাটা জীবন বড় ভাবীর পিছন পিছন হাটলো। বড় ভাবী গোসলে গেছে তো বড় ভাই পিছন পিছন গোছলে গেছে। এমন বৌ ঘেঁষে থাকা পুরুষ পৃথিবীতে আর জন্মাবে কিনা সন্দেহ।
জাহিদ বললো, আর আলম কী? বৌয়ের ভয়ে এতই তটস্থ থাকে কোথাও গেলে বলে যেতে হয় বৌকে।  ক্ষেতে গেলে বলে যাবে, কইগো, আমি ক্ষেতে গেলাম। বাজারে গেলে বলে যাবে, শুনছো, আমি বাজারে গেলাম। এমন কী পায়খানা করতে গেলেও বলে যাবে, হ্যাঁগো, আমি পায়খানা করতে গেলাম। 
হায় নিঃশ্বাস কেটে রিপন বললো, বিয়ের আগে ভেবেছিলাম বৃষ্টি হলে বৌকে বুকে বেঁধে জানালায় বসে বৃষ্টি দেখবো। আর বিয়ের পর? বৃষ্টি হলে বৌ বলে গরু ঘরে তোলো, জ্বালানি ঘরে তোলো। বৃষ্টি আর বজ্রপাতের মধ্যেও বৌ বাজার করতে বাজারে পাঠায়। মৌচাকে মুখ দিয়ে প্রতি ঘরে শৌর্য-বীর্যের স্বামী শৌর্য-বীর্যহীন হয়ে গেছে।
স্বজল বললো, বৌ যখন আমার সাথে অকারণেই কথাতে কথাতে ঝগড়া লেগে যায় তখন বৌকে একটা রাস্তা দেখিয়ে দিই, পাশের বাড়ির সাকিনের বৌর সাথে ঝগড়া করো। আয়েশ মিটবে। ও পোড়ামুখী বৌ সাকিনের বৌর সাথে ঝগড়া না করে রাসেলের বৌর সাথে ঝগড়া করতে গেছে। ইচ্ছেমত গাল মন্দ খেয়ে বাড়ি এসে বসে আছে। ভেবেছিলো সাকিনের বৌর চেয়ে রাসেলের বৌ কম ঝগড়াটে, জিততে পারবে।
ঠিক সে সময় আরজু এলো। মুখে লজ্জা লজ্জা হাসি। কাল দিন পর পরশু তার বিয়ে। সময় যেন কাটছে না। মহিন আরজুর এমন পুলকিত ভাব দেখে বললো, শীতের সময় মানুষ গরমের তৃষ্ণায় ভোগে, গরমের সময় মানুষ শীতের তৃষ্ণায় ভোগে। অবিবাহিত পুরুষও তাই, অবিবাহিত অবস্থায় প্রকাশ না করলেও বিয়ের তৃষ্ণায় ভোগে। বিয়ের পর কেনো বিয়ে করলাম এই যন্ত্রণায় ভোগে। না বিয়ের পূর্বে শান্তি, না বিয়ের পরে শান্তি। না বিয়ের পূর্বে মজা পেলাম, না বিয়ের পর মজা পেলাম।
জাহিদ বললো, আঙুরফল খেতে না পারলে টক, আর খেতে পারলে মিষ্টি না। আসলে অবিবাহিত পুরুষ ভাবে শীতের কাঁথা বৌ গরম করে রাখবে সে যেয়েই ঘুমাবে। বাস্তবতা হলো, কাঁথা বৌ নিজের দখলেই রাখে। আর বৌ গরমে পাখার বাতাস করে দেবে? আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দেবে? গালি দেবে আর বলবে, অক্ষম পুরুষ, ফ্যান কিনতে পারো না? পুুরুষ সব সহ্য করতে পারে, পুরুষত্ব নিয়ে কথা বললে সহ্য করতে পারে না।
আরজু একটু হেসে বললো, কী বলিস! আমি তো জানি বৌ গরম কালে পাখার বাতাস করে দেয়, আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দেয়, গরমে কাজে যেতে বাঁধা দেয়। শীতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকে, উষ্ণতা দেয়। বৌ খুব আদর জানে আর তা খাবার জন্য পুরুষ বিয়ে করে স্বামী হয়। বৌ তো পরী, অপ্সরী, নেশাচ্ছন্ন করে রাখবে। শুধু ভালোবাসাটা শিখে নে, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
মাহাবুর বললো, বিয়ে করলেই বুঝবি এ ভুল কেনো করলাম। এই পঁচা কাজ করার জন্য এতো মুখিয়ে থাকতাম কেনো! বিয়ের পূর্বে মনে হবে বৌ মধুর হাড়ি, বিয়ের পর বুঝবি বৌ যন্ত্রণার মেশিন। বাজারে গেলে বলবে, বাজারে গেলে কেনো? বাজারে না গেলে বলবে, বাজারে গেলে না কেনো? পাশের বাড়ির ভাবীর সাথে কথা বললে বলবে, আমাকে আর ভালো লাগে না? আর তার সাথে দুটো মিষ্টি কথা বলতে গেলেই বলবে, কাজ কাম নেই, শুধু রসালাপ? তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে বলবে, শুধু বৌ দেখার জন্য উতালা? আর দেরি করে ফিরলে বলবে, কোন ভাবীর ঘরে ঢুকেছিলে?
সাইদুর বিরক্তিভরে বললো, আরে আরো যন্ত্রণা আছে! টিভি নেই,  টিভি কিনবে কবে? ফ্রিজ নেই, ফ্রিজ কিনবে কবে? ঘরটা পাকা করবে কবে? বৌ যদি সীমাবদ্ধতা বুঝতে চেষ্টা না করে সংসার কী ভালো লাগে? ঘরে ঘরে কত স্বামী সহ্য না করতে পেরে গলায় দড়ি দিচ্ছে, স্ট্রোক করছে। না হয় গলায় বাঁধা কাটার জ্বালা সহ্য করে মরার মতো বেঁচে থাকছে।
আরজু বিজ্ঞজনের মতো করে বললো, আমি তো জানি স্বামী স্ত্রীর সম্মিলিত প্রয়াসেই একটি সংসার দাঁড়িয়ে থাকে। অভাবে, দুঃখে, কষ্টে সমব্যথী হয়ে সংসার সাগর পাড়ি দেয়। এক প্লেট অন্ন ভাগ করে খায়। অনেক সময় নিজে না খেয়ে একে অন্যকে খাওয়ায়। মনের চাওয়া পাওয়াকে বিসর্জন দিয়ে সংসারকে দাঁড় করায়। পরস্পর শক্ত হাতে ঝঞ্ঝা সাগর পাড়ি দেয়। 
মহিন একগাল হেসে বললো, বিয়ে কর বুঝবি কী ধারণা নিয়ে বড় হযেছিস, ঘটছে কী! বইয়ের গল্প, সিনেমার গল্পের সাথে বাস্তবের গল্পের কত অমিল! বৌকে শাসন করে দমন করা যায়, কিন্তু ভালোবেসে জয় করা যায় না। বৌর চোখে তাকালে বজ্রাঘাত পেতে হয়, বৌর হাতে হাত রাখলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে হয়।
বান্না বললো, বৌকে যত ভালোবাসবি বৌ বলবে ভ্যাবলা পুরুষ, বৌর পিছু ছাড়ে না। প্রতিবেশি বলবে কাপুরুষ, বৌর আঁচল তলে থাকে। বৌকে ভালবাসলে বৌ সেই ভালোবাসাকে অস্ত্র বানিয়ে নেয়, প্রশ্রয় ভেবে নেয়, আর বৌ প্রশ্রয় পেলে কি করে সবার জানা। তারচেয়ে বৌকে শাসনে রাখতে হবে, বৌ দৌঁড়ের উপর থাকবে। গরু-ছাগল কিনে দিতে হবে, হাঁস-মুরগি কিনে দিতে হবে, খাওয়া।
আরজু বললো, বৌ একটা মানুষ, তাকে সম্মান দিতে হবে। বৌকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কথা আসে কেনো? বৌকে নানা কাজে ব্যস্ত করে সুখ পাবি? মিলেমিশে কাজ করলে কাজে বরকত বাড়ে। হীন চিন্তা বাদ দে।
বান্না বললো, কাকে সম্মান দেবো আরজু? বৌকে? সম্মানের বোঝে কী! বুদ্ধিই তো হাঁটুতে। শাড়ি, ব্লাউজ, শায়া ম্যাচিং করতে করতে দিন শেষ। কুঁচিয়ে শাড়ি পরতে, চোখে-ভ্রূতে কাজল, ঠোঁটে লিপিস্টিক দিতে দিতেই জীবন পার। ভ্রূও প্লাগ করা লাগে। গাধার মতো খেটে রোজগার করবি, গাধার জ্ঞানে বৌ সব খরচ করে উড়িয়ে দেবে।
আরজু বললো, বৌ কখনো খরচপ্রিয় না। বরং সেই সংসারের বাড়তি খরচের লাগাম টানে। 
সবাই মিলে ক্ষিপ্ত হলো আরজুর প্রতি বৌ পক্ষের হয়ে কথা বলছে বলে। আরজু আর কথা বাড়ালো না, বুঝলো শুধুমাত্র বৌয়ের কারণেই সংসার জীবন ওদের ভালো যাচ্ছে না।

"মানুষ স্বপ্নে ডোবে, স্বপ্নে ভাসে, স্বপ্নে রাঙায় মনের মানুষকে। প্রত্যাশার ঢেউ বুকের মাঝে কল্লোল করে। হাজার উপচারে সাজায় তাকে যে হবে হৃদয়ের অধিষ্ঠাত্রী। আমিও কল্পনার ডানায় ভর করে একটি প্রিয় মুখের চিত্র এঁকেছিলাম মানসপটে। কিন্তু স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর মানুষ পায় এ আমার বিশ্বাসে ছিলো না। আমি এখন যার চোখে চোখ রাখি, যার বুকে মুখ লুকাই, যার কাঁধে মাথা ঠেকাই সে আমাকে যত্ন করে, খুব যত্ন করে; ভালোবাসে, খুব ভালোবাসে। আমাকে সুখে রাখার তার প্রচেষ্টার শেষ নেই। একটা চিরসুন্দর, চিরসবুজ মানুষকে চিরজীবনের জন্য পেয়েছি। আর কিছু চাই না জীবনে! আমি আমার পরম পাওয়া পেয়ে গেছি।"
স্টাটাসটা পড়ে আরজু চোখ বুঝে থাকলো তিন মিনিট। ভাবলো, ওর ভাবনা জুড়ে কত বেশি স্থান করে নিছি! কত আপন ভাবে আমায় ও! কত আপন করে নেছে ও! মানুষ অযথা বলে, বৌ স্বামীর কাছে অধরা থাকে। মানুষ অযথা বলে, বৌ স্বামীকে বুঝতে চায় না।
আরজু খুব আবেগতাড়িত হয়ে পড়লো। মনের মুকুলে কখনো কেউ এভাবে ধরা দেয়নি। মায়ার বাঁধনে কেউ কখনো এভাবে আবদ্ধ করেনি। সব যেন মধুময় মনে হচ্ছে। সব কথা সুর হয়ে যাচ্ছে। একি সমস্যা! মধুময় সমস্যা!
বাজার শেষে বাড়ি আসতেই আয়মান বাচ্চা শিশুর মতো হাত পা ছুঁড়ে আরজুর হাত ধরে ঘরে নিয়ে এলো। বাজারের থলে খুলে বললো, পটল এনেছো, ডাঁটাশাক কই? পেয়াজ এনেছো, রসুন কই?
আরজু ডাঁটাশাক আর রসুন আনতে আবার বাজারের দিকে যাচ্ছে। সাইদুর দেখে বললো, তুই তো মাত্র বাজার করে ফিরলি। আবার তাও এতো রাতে বাজার যাচ্ছিস কেন?
আরজু বাজারে যাওয়ার কারণ বলতেই সাইদুর হেসে বললো, বাজার সদাই আনতে ভুল হলে মা কখনো আবার বাজারে পাঠিয়েছিলো? পড়েছিস বৌয়ের পাল্লায়, ভুল হলে ক্ষমা নেই। দেখবো বিয়ের আগের বৌ-পাগল বিয়ের পর কত দিন বৌ-পাগল থাকে! সংসারের লাটিম বৌর হাতে দিয়েছিস, ঘুড়ি হয়ে উড়, উলোট-পালোট বাতাসেও স্বাভাবিক উড়তে হবে কিন্তু!
বাজার শেষে আরজু বাড়ি এলো। আয়মান তরকারি কুটে বসে আছে। আরজুই আজ রান্না করতে উদগ্রীব হলো। আয়মান বাঁধা দিলো। আরজু বললো, পৃথিবীর বড় বড় রাধুনি সব পুরুষ। সব অনুষ্ঠানের রাধুনি পুরুষ। হোটেল, রেস্টুরেন্টের রাধুনি পুরুষ।
আয়মান একগাল হেসে রান্নার দায়িত্ব স্বামীকে দিলো। মহিনের বৌ তা দেখতে পেয়ে কিছু না বলে হেসে বাড়ি চলে গেলো। খেতে খেতে আরজু বললো, আচ্ছা, বৌর বুদ্ধি নাকি হাঁটুতে থাকে, বৌর বুদ্ধি শুনলে নাকি স্বামী ঠকে?
আয়মান ভ্রূ ভাজ করে বললো, এসব যারা বলে মাথা মোটা লোক তারা, তুমি তাদের সাথে মিশবে না।
আরজু আবার বললো, বৌ নাকি স্বামীকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয়? বিশ্রাম নিতে নাকি পারে না, দৌঁড়ের উপর রাখে?
আয়মান বললো, স্বামী-স্ত্রী মিলেই সংসার। সংসারের কাজ স্বামী-স্ত্রী মিলেই করবে। ওসব বন্ধুদের সাথে মিশবে না। ওরা কিন্তু আমাকে তোমার কাছে খারাপ করে উপস্থাপন করবে। আর আমি তখন তোমার চোখে খারাপ হয়ে উঠবো।
পরের দিন থেকে বন্ধুদের সাথে মেশা কমিয়ে দিলো আরজু। বান্না বললো, কী, বৌ মিশতে মানা করেছে? দেখলি তো বন্ধুত্বের মাঝে বৌ কিভাবে বিষক্রিয়া ছড়ায়? বৌর কথা শুনিস বলে আজ বন্ধু হারাচ্ছিস, একদিন সমাজ হারাবি। আর হয়ে যাবি বৌর কোল ঘেঁষা পুরুষ।
আরজু কথা না বাড়িয়ে চলতে লাগলো। সরল রেখার মতো শুয়ে আছে রাস্তা। সে রাস্তা দ্রুত মাড়িয়ে বাড়ি এলো ও। আরজুকে দেখে আলতো করে মুখটা তুলে আয়মান তাকালো। আরজু দেখলো, ওর দৃষ্টির পরিসীমা মাপা যায় না। চোখে অনেক স্বপ্নের মায়াঞ্জন আঁকা। চোখে চোখে হয়ে গেলো কত আলাপ। আলতো করে হাসে, কপালের এলোকেশ সরায়। ওরা ঘরে গেলো। আরজু বললো, আজ এতো দেখছো কেনো?
আয়মান বললো, আমার দুটি চোখে একটি আকাশ। সেই আকাশে তুমি প্রেমের শুকতারা। তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে এক ফোঁটা ভারোবাসার বৃষ্টি তুমি। সব যেন মধুময় মনে হয়, তুমি কাছে তাই।
আরজু নিষ্পলক চেয়ে বললো, ঝিনুক মুক্তো রাখে বুকে, তুমি আমাকে কোথায় রাখবে?
আয়মান আরজুকে বুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো, আমার বুকের মাঝে শুধু তুমি। তুমি কাছে না থাকলে মেটে না পিয়াস। আমি তোমার আদর সুধা পান করে করে বেঁচে থাকবো। তোমার বুকের সন্নিকটে না থাকলে আমার স্বপ্ন সত্য হতো না। আঁখিজুড়ে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন তুমি কেন্দ্রীক। তোমাকে ভুল বোঝার সেই দুঃসাহস বিধাতা যেন আমাকে না দেন। মনের পুরোটা রাজ্য জুড়ে তোমার অবস্থান। 
শুনে আরজুর বুকটা ভরে গেলো। আয়মানকে একটা উষ্ণ পরশ দিয়ে বললো, বাক্যকে শাসন করে বিরাম চিহ্ন। আমাকে শাসন করবে তুমি। মধুর শাসন।
আয়মান না-বোধক মাথা নেড়ে বললো, তোমার আমার মাঝে শাসন বলে কোনো শব্দ আসবে না। আমার মনের সাধনার যোগফল তুমি। তোমার মুখ নিঃসৃত এক একটি বাক্য আমার জীবনের সংলাপ। প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে, প্রতি ক্ষণে-অনুক্ষণে, প্রতিটি অনুভব-অনুভূতিতে, অবচেতন-চেতন মনে, জীবন বীণার তন্দ্রীতে তুমি শুধু বিরাজ করবে। 
আরজু আবেগে উদবেলিত হয়ে বললো, এতো ভালোবেসে আমাকে ঋণী করো না। আমি যে তোমার মতো করে তোমাকে ভালোবাসতে পারি না।
আয়মানের ওষ্ঠপ্রান্তে এক মায়াবী হাসি। একবিন্দুও নেই তাতে চাতুরী। ওর অনন্য চোখের মৃদু আকর্ষণে আরজুর মনে থাকা দুরাশা বাণের জলে খড়-কুটোর মতো ভেসে গেলো। পরস্পর পরস্পরের মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলো। আরজু এবার বললো, তোমার অকৃত্রিম ভালোবাসার কাছে আমার দোদুল্য মনের দুর্ভাবনা হার মেনেছে। মনের কোণে লুকানো তিলকণা ভুলও ফুল হয়ে ফুঁটে গেছে। আজ তোমার জন্য এই বেঁচে থাকা, আর তাই বেঁচে থাকাতে এতো স্বাদ!
হঠাৎ আরজুর থেকে এক হাত সরে আয়মান বললো, আমাকে ভালোবাসার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। খাবার টেবিল মুছে ফেলো, আমি ভাত তরকারি নিয়ে আসছি।
আরজু বললো, টেবিল মুছা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না। টেবিল মুছছি, ছোট-বড় হোটেল-রেস্টুরেন্টের সব মেসিয়ার পুরুষ।
চলে যেতে যেতে পিছু ফিরে হেসে আবার চলে গেলো আয়মান। আরজু হাসলো আর ভাবলো, ওরা কেনো বলেছিলো বৌ বিরক্তির মেশিন? বৌ তো বেঁচে থাকার অক্সিজেন। ওরা কেনো বলেছিলো বৌর উত্যক্তে মাথার কাঁচা চুল দশ দিনে পেকে পনের দিনে পড়ে যাবে? কেনো বলেছিলো বৌর বিরক্তিতে স্বামী স্ট্রোক পর্যন্তও করে? আমি তো দেখছি বৌ আছে বলেই মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম কোষগুলো জাগ্রত হচ্ছে, চিন্তার দরজা খুলে যাচ্ছে। 
আয়মান এসে বললো, এবার প্লেট, চামচ, গ্লাস একটু ধুয়ে ফেলো।
সবই আয়মান আদেশের সুরে বলছে, কিন্তু সবই মধুর লাগছে আরজুর কাছে। খাওয়া শেষে আরজু উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে, ময়লা তৈজসপত্র ধুতে টিউবওয়েলের দিকে যেতে গেলেই আয়মান বাঁধা দিলো। আরজু বললো, তুমি তো প্রতিদিন কাজগুলো করো। আমি কী একদিন সাহায্য করতে পারি না? তবে আমি তোমার কিসের সমব্যথী সাথী?
আয়মান বাঁধা দিলো না আর। থালাবাটি ধুতে গেলেই রিপনের বৌ তা দেখে ফেলেছে। কোনো শব্দটুকুও না করে বাড়ি চলে গেলো।
পরদিন আয়মান ঘরের যত ময়লা কাপড়-চোপড় বের করলো। দু বালতি ভরে গেলো। এতো কাপড়-চোপড় আয়মান কাঁচবে দেখে আর ভেবে আরজুর খুব কষ্ট লাগলো। তাই আরজু নিজেই কাপড়-চোপড় কাঁচতে মনস্থির করলো। আয়মান বাঁধা দিলেও আরজু শুনলো না। বললো, কাপড়-চোপড় কাচা কোনো ব্যাপার? এতকাল তো নিজের কাপড়-চোপড় নিজেই কেচেছি। লন্ড্রীর কাজ তো সব পুরুষরাই করে। 
আরজু যে কাপড়-চোপড় কাচছিলো তা দেখে ফেলে আবিরের বৌ। দিন শেষে ইস্ত্রী মেশিন নিয়ে আরজু বসে গেলো ইস্ত্রী করতে। আয়মান বললো, সব শিখে রেখেছো দেখি! বৌয়ের এতো কাজ করে দিলে বৌ আদর দিতে দিতে তো ফতুর হয়ে যাবে!
আরজু বললো, ইস্ত্রী করা কোনো ব্যাপার! দোকানে দোকানে সব ইস্ত্রীর কাজ তো পুরুষরাই করে!
কাপড় ইস্ত্রী করা দেখে ফেলেছে জাহিদের বৌ। পরদিন লুঙ্গি ছেঁড়া সেলাই করতে বসেছে আরজু। আয়মান বললো, দাও, আমি সেলাই করে দিই। পুরুষ কী সেলাইয়ের কাজ পারে!
আরজু বললো, ঘরে মেয়েরা যতই সেলাইয়ের কাজ করুক, দেশ-বিদেশে সবখানেই টেইলার্সে পুরুষই সর্বোত্তম সেলাইকর্মী। 
আরজুর লুঙ্গি সেলাই দৃশ্য দেখে ফেলেছে সাইদুরের বৌ। পরদিন চায়ের দোকানে যেতেই মহিন বললো, তুই বাসায় নাকি রান্না করিস? আমার বৌ দেখেছে। বাসায় আমার বৌ এই কাজটিই করতো, এখন তোকে উদাহরণ টেনে আমার বৌ আমাকে রান্না করতে বলছে। তুই একটা মাদী-পুরুষ। সবাইকে মাদী-পুরুষ বানাবি?
আরজুর উত্তর করার আগে আবির বললো, বিয়ের আগে কাপড়-চোপড় ধৌত করেছিস, ভালো। এখন ধৌত করিস কেনো? তোর কাপড় কাচা আমার বৌ দেখেছে। এখন সে আমাকে কাপড় কাচতে বাধ্য করছে।
জাহিদ বললো, ও তো কাপড় ইস্ত্রীও করে। গতকাল আমার বৌ আমাকে দিয়ে কাপড় ইস্ত্রী করিয়েছে।
সাইদুর খুব রেগে বললো, ও লুঙ্গিও সেলাই করে। আমার বৌ দেখেছে। আমার বৌ আমাকে দিয়ে কবে না জানি কাঁথাও সেলাই করিয়ে নেয়।
রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, ও থালাবাটিও ধৌত করে। আমার বৌ আমাকে বকেছে আর বলেছে, আরজু ভাইয়ের মতো তো আর থালাবাটি ধৌও না।
সবাই মিলে আরজুকে ইচ্ছামত বকলো, গালি দিলো, অপমান করলো। আরজু সবাইকে শান্ত করে বললো, যে বৌ নিজের বাবা-মাকে, ভাই-বোনকে, আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে আমার কাছে এসে সুখ খুঁজছে; আমার পরিবারকে নিজের করে নিচ্ছে আমি তার হাতের কাজে সাহায্য করবো না?
মাহাবুর বললো, বৌ কী জাদু করেছে? এমনি ভাবে তোকে খাটাচ্ছে, তোর পৌরষকে অপদলিত করছে তবুও রাগ করিস না! চোখে কাজল আর কপালে টিপ দেয়া উচিত তোর।
সাইদুর বললো, ওর বৌ যদি ওর চোখে কাজল, কপালে টিপ দিয়ে দেয় ও তাও গ্রহণ করবে। কাজল, টিপ গ্রহণ যদি করিস হাতে চুড়িও পরিস, পায়ে নূপুরও পরিস। তুই আর  কত নিচে নামাবি সুউচ্চ শীরের স্বামী জাতিটাকে? তুই একটা মেন্দা মার্কা স্বামী।
কথাগুলো শুনে আরজুর মন খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো, বৌকে সাহায্য করা অন্যায়? ঘরের সব কাজ বৌ করবে? ঘরের কাজ করলে পুরুষের পৌরষ জলাঞ্জলি হয়?
ভাবতে ভাবতে বাজারটা সেরে বাড়ি এলো। ফিরতে দেরি হওয়াতে আয়মান বললো, রাত করে মাছ এনেছো। যাও মাছ কুঁটে পরিষ্কার করো।
আরজুর কথাটি কোথায় গিয়ে যেন বাঁধলো ও বিঁধলো। বললো, বাজার করার দায়িত্ব আমার, মাছ-তরকারি কুঁটার দায়িত্ব তোমার।
আয়মান রাগ দেখিয়ে বললো, এতো রাতে আমি মাছ কুঁটবো না।
ঘরে চলে গেলো আয়মান। আরজু বেশক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একবার মাছ একবার তরকারির দিকে তাকিয়ে থেকে মাছ কুঁটতে লেগে গেলো। পিছন দিয়ে আয়মান এসে সবজি কুটতে লাগলো আর বললো, তোমার পরে রাগ হয় না। রাগ চলে গেছে, যাও আমি কুঁটছি।
আয়মানের দিকে তাকিয়ে আরজু ভুলে গেলো সব দ্বেষ-ক্ষোভ। তবুও বললো, চাপ দাও কেনো আমায়? 
আয়মান বললো, তোমার তিন ঘণ্টা আগে আসার কথা। এতক্ষণে আমাদের খাওয়া শেষ হতো। যাও, মাছ ধুয়ে আনো।
আরজু বললো, মাছ ধুয়ে আনবো মানে? কুঁটে দিছি এই বেশি।
আয়মান বললো, কানের কাছে গুণগুণিয়ে অনেক বলেছো পড়াশোনাকালীন রান্না-বান্না করে খেয়েছো। যাও, মাছ ধুয়ে আনো।
আরজু মাছ ধুতে যেতে বাধ্য হলো। মাছ ধুতে ধুতে গান ধরলো, সংসার আমার ভাল লাগে না, সংসার বিষে মরি...
শুনে আয়মান হাসতে থাকে। রান্না শুরু করলো ও। আর কেঁকিয়ে বললো, তুমি কইগো? পানি আনো।
আরজু খুব বিরক্তিভরে পানি এনে দিয়ে বললো, আমাকে আর কিছু আনতে বলবে না। আমাকে বসতে দেখলে তোমার ভালো লাগে না!
আয়মান চামচটা আরজুকে ধরিয়ে দিয়ে বললো, তরকারি নাড়তে থাকো, ঘেমে গেছি, একটু বাতাস খেয়ে আসি।
আয়মান সত্য সত্য রান্না ফেলে চলে গেলো। বাধ্য হয়ে তরকারি নাড়তে ব্যস্ত হলো আরজু। মাঝে দু বার উঁকি মেরে দেখে গেছে আয়মান। তৃতীয় বার আর উঁকি মেরে গেলো না। পিছন থেকে আরজুকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমার রান্না খুব সুস্বাদু। বেড়েও খাওয়াবে।
আরজু বিরক্তির স্বরে বললো, ছাড়ো তো। শরীরে ঘাম। ঘাম শরীরে এভাবে কেউ জড়ায়?
আয়মান কথা শুনলো না। বললো, মনে মনে আমাকে বকা দিচ্ছো, না?
আরজু বললো, আমি কী কখনো তোমাকে বকেছি? আমি কী তোমাকে বকতে পারি? তবে তুমি যে আমার উপর রুষ্ট এটা পরিষ্কার। 
আয়মান বললো, গালে তুলে খাওয়ায়ে দেবে।
আরজু বললো, বাজার করবো, তরকারি কুঁটবো, রান্না করবো, গালে তুলে খাওয়ায়ে দেবো। পেয়েছো কী? সরে যাও। খুব রাগ হচ্ছে, ছাড়ো!
আয়মান বললো, খাওয়া শেষে থালাবাটিও ধুয়ে দেবে।
রান্না ফেলে আরজু দুপদাপ পা ফেলে চলে গেলো। আয়মান স্বর বাড়িয়ে বললো, টেবিলটা মুছে রাখো।
আরজু ফিরে এসে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো, টেবিল মুছবো মানে? 
আয়মান বললো, তুমিই তো বলেছো, ছোট-বড় সব হোটেল-রেস্টুরেন্টের মেসিয়ার পুরুষ। যাও, কথা না বলে টেবিল মুছো, যেতে আসতে মেঝেটাও নোংরা হয়ে গেছে। মেঝেটাও মুছে ফেলো।
আরজু বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে চলে গেলো। খাওয়ার সময় আয়মান প্লেট নিয়ে বসে বললো, চামচ ধরো, ভাত দাও, তরকারি দাও, গ্লাসে পানি ঢালো। 
আরজু বললো, এতো অত্যাচার কোনো একদিন সহ্যের বাইরে চলে যাবে।
আয়মান বললো, অত্যাচার মানে? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছো। হলে থেকেছো। ডাইনিংয়ে খেয়েছো। বলেছো, আক্কেলরা তরকারি কোঁটে, রান্না করে, পরিবেশন করে। দেখে দেখে বড় হয়েছো। এপ্লাই করো।
আরজু শুনে চামচ ছুঁড়ে মেরে ঘরে চলে গেলো। ভাত, তরকারি নিয়ে আয়মান বেডরুমে এলো। একবার গালে তুলে দিতে গেলো, আরজু হাত সরিয়ে দিলো। দ্বিতীয় বার গালে তুলে দিতে গেলো, আরজু এবারও হাত সরিয়ে দিলো। 
তখন আয়মান বললো, তোমাকে দু একটা ঘরের কাজ করতে বলি ভালোবাসার অধিকার থেকে, আর তুমি রাগ করো সম্পূর্ণ হিংসা থেকে। 
বলে আয়মান উঠে যাচ্ছিলো। আরজু তার হাত ধরে থামালো আর খাওয়ার জন্য হা করলো। আয়মান হেসে একগাল ভাত তুলো দিয়ে বললো, দারুন না? তোমার রান্না। 
আরজু খেয়ে বললো, হ্যাঁ দারুন। তবে আমার রান্না বলে না, তুমি গালে তুলে খাওয়ায়ে দিচ্ছো তাই।
আয়মান ভালো সেলাইয়ের কাজ পারে। আপন মাধুরী মিশিয়ে রুমালে আল্পনা এঁকে সেলাই করে সেই রুমাল আরজুকে দিয়েছে। রুমাল ব্যবহার করার অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও আরজু এখন পকেটে রুমাল রাখে। মানুষের সামনে রুমাল বের করে না, তবে যখনই একা থাকে রুমাল বের করে নির্বাক চোখে আয়মানের নিপুণ সেলাই কর্ম দেখে। ওদিন আয়মান কাঁথা সেলাই করছিলো। আরজু একটা শার্ট এনে বললো, একটা বোতাম ঢিল হয়ে গেছে। কখন ছিঁড়ে পড়ে যাবে। সেলাই করে দাও তো।
আয়মান সুচ-সুতা আরজুর হাতে দিয়ে বললো, নিজের কাজ নিজে করাতেই বেশি আনন্দ। তাছাড়া তুমি সেলাই পারো। নাও, সেলাই করো।
আরজু রেগে যেয়ে বললো, সেলাই করবো মানে? সেলাই কী আমার কাজ?
আয়মান বললো, তুমিই বলেছো ছোট-বড় সব টেইলার্সের সেলাইকর্মী পুরুষ। সুচ-সুতা ধরো, কথা কম।
আরজু সুচ-সুতা দিয়ে শার্টের বোতাম সেলাই করতে লাগলো। আয়মান আরজুর কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে বললো, সেলাই পারো। তা আমার উপর অত নির্ভর করো কেনো?
আরজু বললো, সবই পারি। শুধু পারি না তোমার সাথে। তুমি আমাকে যেভাবে খাটাচ্ছো রীতিমত স্বামী নির্যাতন। প্রকৃত পুরুষ পুরুষ নির্যাতন কখনো মেনে নেবে না।
আয়মান আরজুর গলা দু বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, ভালোবাসি না?
আরজু বললো, ঘরে ঘরে স্বামী নির্যাতিত, কেউ কেউ ভালোবেসে ভুলিয়ে ভালিয়ে নির্যাতন করছে, কেউ কেউ শাসন বা তীর্যক বাণে নির্যাতন করছে। আগে বিশ্বাসই করতাম না।
বোতাম সেলাই হলে এবার আয়মান বললো, এবার কাঁথা সেলাই করো। কাঁথা কী আমি একা গায়ে দেবো? সেলাই করে আমার তোমার নাম লেখো। আমার জন্য তোমার উপহার।
একথা শুনে আরজু গরম চোখে আয়মানের দিকে চেয়ে থাকলো। আয়মান না ডরিয়ে বললো, চোখ গরম দিচ্ছো কেনো? বাসর রাতে তুমিই বলেছিলে আমরা আমাদের কাজ ভাগে যোগে, মিলেমিশে করবো। 
আরজু কাঁথা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। এতো রাগ জীবনে কখনো ওর ওঠেনি।
পরদিন সকালে কাপড়-চোপড় বালতি মাঝে রেখে বললো, কাচবে না?
আরজু মনে মনে ভাবলো, আয়মান তো রীতিমত নির্যাতন শুরু করেছে।
তীর্যক চেয়ে আরজু উচ্চারণ করে বললো, কাপড় কাচবো মানে? আমি চুড়িপরা পুরুষ?
আয়মান বললো, কথা কম, কাজ বেশি। তুমিই বলেছো, লন্ড্রীর সব কর্মী পুরুষ।
আরজু তদাপেক্ষা রেগে, কাপড়-চোপড় কাচা আমার কাজ?
আয়মান বললো, তুমিই বলেছো, কোনো কাজ ঘৃণা করা উচিত না। কার না কার কাজ না ভেবে কাজে মন দাও। সব কাজ সমান। 
আরজু ফুঁসতে ফুঁসতে কাপড়-চোপড়ের বালতি নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। আর গান ধরলো, বৌয়ের জ্বালায় ইচ্ছে করে গাড়ির নিচে মারি ঝাপ, কেন যে বিয়ে করলাম বাপরে বাপ...
হাসতে হাসতে পিছনে এসে দাঁড়ালো আয়মান। আরজু দেখে বললো, চোখের সামনে থেকে যাও, তোমাকে সহ্য হচ্ছে না।
আয়মান কর্ণপাত না করে বললো, জামার কলার আর হাতা ভালো করে ঘষো।
আরজু বললো, শিখাতে হবে না। নিজের কাপড়-চোপড় নিজেই কেচেছি। ভেবেছিলাম, বিয়ে করেছি এসব থেকে বাঁচবো।
আয়মান বললো, তোমরা পুরুষরা বিয়ে করো অনেক কিছু থেকে বাঁচবে বলে। এ চিন্তাটা দূষিত। কাপড় শুকাবে নেড়েনেড়ে। ইস্ত্রী করবে। তুমিই বলেছো, দোকানে দোকানে যারাই ইস্ত্রী করে সব পুরুষ।
আরজু রেগে গেলেও নিজেকে শান্ত রাখলো। চায়ের দোকানে গেলেও বৌয়ের বদনাম ঢেকে গুণগান করে কটাক্ষ ভোজনের ভয়ে। একা একা ও ভাবলো, নিজের বলা বুলিতে নিজেই আটকে যাচ্ছি। ঘরের কাজ করলে বাইরে সম্মানহানী হচ্ছে। বাইরে অপমানিত হচ্ছি, ঘরেও সহ্য হচ্ছে না। আয়মান অর্থনৈতিক চাপ দেয় না, বাবা-মায়ের আভিজাত্য প্রকাশ করে না। কিন্তু তাও তাকে সহ্য হচ্ছে না। না জানি কোন মূহুর্তে কোন কাজ করতে বলে বসে। বিশ্রাম নিলে ডেকে তুলে কাজ ধরিয়ে দিচ্ছে। এক কাজ করতে বলে সে কাজ শেষ না হতেই অন্য কাজে যেতে বলছে। বেশ মুশকিলে পড়লাম যে!
ঘরের কথা বাইরে না বললেও বন্ধুরা কেমন করে যেন ধরে ফেলে। মহিন বললো, বানর খেলায় যে লোক সে তার বানরদের জীবদ্দশায় যত না নাচায় তোর বৌ তারচেয়ে তোকে বেশি নাচাবে। বৌকে দিয়েছিস প্রশ্রয়। ওরা প্রশ্রয়ের মানে বোঝে? কিল-লাথির উপর রেখেও তাই দমাতে পারি না।
আরজু বললো, কিভাবে বুঝলি আমার বৌ আমাকে নাচাচ্ছে? সংসারে তোরাই আগুন জ্বালাচ্ছিস। দোষ দিচ্ছিস বৌয়ের। বনের দাবানল নিভলেও তোদের সংসারের দাবানল নিভবে না। বাড়ি যাবার সময় মাত্র দশ টাকার বাদাম নিয়ে যাবো, আমার বৌ দশ লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কারের চেয়েও বেশি খুশি হবে।
চাপা মেরে আরজু বাড়ি এলো। আগের মতো সব বিষয়ে অতি আগ্রহ দেখায় না। আয়মান তা লক্ষ্য করে। আয়মান বললো, ইদানিং তোমাকে উদাসীন লাগছে। নিষ্প্রাণ আর স্পন্দনহীন দেখাচ্ছে। মন খারাপ করে থাকো কেনো? তোমার মন খারাপ থাকলে আমার কী ভালো লাগে!
আরজু নিষ্প্রভতার কারণ এড়িয়ে জবাব দিলো, তুমি যে এতো ভালোবাসো আমায় এতকাল মানুষ সহ্য করতে পারতো না, এখন আমি সহ্য করতে পারি না। আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো?
আয়মান বললো, তুমি তো আর দশটা পুরুষের মতো আমাকে দাসী করে রাখোনি। সংসারের আবর্জনা ভেবে ঘরের কোণে ফেলো রাখোনি। বৌয়ের বুদ্ধিকে তো তুমি গাধার বুদ্ধি ভাবো না। বৌকে সাথে রাখো সংসারের উন্নয়নের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে। অন্যদের মতো বৌ সন্তান উৎপাদনের ফ্যাক্টরি সে হীনজ্ঞান তোমার নেই। শুধু উষ্ণতা প্রাপ্তির জন্য বৌর কাছে আসো না, ভালোবাসো, সম্মান করো। চোখে চোখে রাখো, মনের চাহিদা বোঝো। তুমি ভালোবাসার যোগ্য, আমি সারাক্ষণ ভাবি তোমাকে কত উপায়ে ভালোবাসবো। কত উপায়ে তোমার মন রাঙাবো। তোমাকে হৃদয়ের সবটুকু ভারোবাসা দিয়েও আমি তৃপ্ত না। তোমাকে ভালোবেসে মন ভরে না। তোমাকে সংসারের টুকটাক কাজ করতে বলি তা নিতান্ত মনের খেয়ালে, অন্য রকম ভালোবাসা থেকে। আমি তো জানি পেশা জীবনে তুমি কত কষ্ট করো, আমি তো সেসব কাজে তোমার সঙ্গী হতে পারি না। বাড়ির দু চারটে ছোট ছোট কাজ তোমাকে আর করতে দেবো না। আমি বুঝতে পারছি এতে তুমি বন্ধু সমাজে, বন্ধুদের বৌদের মাঝে ছোট হচ্ছো, অসম্মানিত হচ্ছো। তোমার সম্মান রক্ষা আমার প্রথম কাজ। দয়া করে তুমি আমার উপর রাগ করো না। তুমি যদি আমার উপর রাগ করো, আমি তবে বাঁচি কী করে!
আরজু নির্বাক হয়ে গেলো কথাগুলো শুনে। নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। আবেগে গদগদ হয়ে আরজু বললো, তুমি সম্মুখে থাকলেই সুখ পাই, তুমি আছো ঘরময়, ঘর জুড়ে তোমার পদধ্বনি আমার ব্যাখ্যাতীত ভালো লাগা। তুমি এঘর ওঘর কাজ করো, কাজের ব্যস্ততায় আমায় না দেখার ভান করো, আমার দৃষ্টিতে সব ধরা পড়ে। তুমি আছো তাই আমাদের ঘর-বাইর পরিচ্ছন্ন, তুমি নিশ্চিন্ত রেখেছো, নির্ভরতায় থাকি তাই। একমাত্র তোমাতেই আমার যত লাভ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত লোভ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত মোহ, একমাত্র তোমাতেই আমার যত নেশা। প্রস্তুতি নিয়ে আমি তোমায় দেখি, খুব করে দেখি আমি খুব করে ভাবি। ভাবি সুন্দর তুমি, ভারি মিষ্টি তোমার মমতা। যত না ভাবিনি, তুমি তার চেয়ে বেশি ভালো, ভাবনার পরিসীমা দিয়েছো বাড়িয়ে। কেউ এতটা আপন হবে, কেউ এতটা আপন করবে, কাউকে এতটা আপন করে পাবো ভাবনাতেও ছিলো না। শুধু তোমার জন্য আমার সব কিছুতেই ভালো লাগা, সব কিছুতেই সফলতা। সব কিছুই রঙিন, সব কিছু রংময়, বাঙময়, চিন্ময়, হিরন্ময়। সুখ পাখি হয়ে এভাবে উড়ো, আমার বুক জমিনটা সম্পূর্ণই তোমার।
আয়মান আরজুর চোখ বরাবর চেয়ে বললো, পুরুষ তো কখনো এতটা দরদী পুরুষ হয় না, পুরুষ তো কখনো এতটা প্রেমিক পুরুষও হয় না। বুক-পিঠ প্রাচীর করে সব দায়িত্বের ঝঞ্ঝা একা থেকালেও ভালোবাসাটা অপ্রকাশই রাখো। হাত দুটো শক্ত আর কড়া পড়া হলেও যত্ন-আত্তিতে কত না নরম আর কোমল। শুনেছি পুরুষের মন শক্ত, অথচ তুমি কত অনায়াসেই তোমার বুকে আমার ঠাঁই দাও; জেনেছি নানা প্রলোভন দেখিয়ে পুরুষ নারীর সান্নিধ্যে আসে, প্রয়োজনটুকুর পর অপ্রয়োজনীয় করে দূরে রাখে। অথচ তুমি কত সুন্দর, স্পর্শে আসো,স্পর্শে ডাকো, স্পর্শে রাখো, স্বপ্ন দেখাও, স্বপ্নের সারথি করে ধরে রাখো, আদরে রাখো, নজরে রাখো, মনেতে গেঁথে রাখো, মনের কথা শোনো। প্রয়োজনটুকুর জন্য উষ্ণ করো না, প্রয়োজনীয় করে রাখো, কখনোই হেয় করো না, অপ্রয়োজনীয় ভাবো না, অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাবো। মন-মননে তুমি অনেক উঁচু, সুস্থ চিন্তার মানুষ তুমি। তোমাকে পেয়ে আমি ঠকিনি। তোমাকে ভালোবেসেও আমি ঠকবো না। মৃত্যু অবধি তোমার সান্নিধ্যে থেকেও আমি ঠকবো না। যত বেশি ভালোবাসার পর আর ভালোবাসা যায় না, আমি তার থেকেও তোমাকে ভালোবাসি। 
আয়মানের কথা শুনে আরজুর চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয়ে গেলো। হাসতে হাসতে আয়মান বললো, গাছের পাতা পড়ে উঠান দেখো ময়লা হয়ে গেছে, উঠানটা ঝাড়ু দাও।
আরজু সে কথাতে কর্ণপাত না করে দোকানে গেলো। দোকানের এক পাশে বসে চা খেতে লাগলো। মহিন বললো, কী মন খারাপ? এক কোণে বসলি যে!
সজীব বললো, বৌ ঘরে। মন ভালো থাকার প্রশ্নই আসে না। ও যতই মুখে বলুক ভালো ভালো। ভিতরে ভিতরে পুড়ে ও ছাই। তোর বিয়েই সবাই বাঁধা দিছি। বোঝ এবার বিয়ের জ্বালা। দিল্লিকা লাড্ডু, না খাইলেও পস্তাবেন, খাইলেও পস্তাবেন। 
আরজু এবার জবাব দিলো, বৌ দিল্লিকা লাড্ডু নয়, না খাওয়ারও কিছু নেই, খাওয়ারও কিছু নেই। বৌ হৃদয়ের কাছ ঘেঁষে থাকা হৃদয়ের খোরাক। বৌ অন্তরে বাস করা ছোট্ট পাখি, বৌ অন্তর। বৌ মনের প্রশান্তির রসদ, বাঁচার অন্য নাম। বৌকে শাসন করলে বৌ শাসন করবে। বৌয়ের শাসন খুব মিষ্টি না। বৌকে ভালোবাসতে হয়, বৌ ভালোবাসা পাবার কাঙাল। বৌকে যতটুকু ভালোবাসবি, ততোধিক বৌ ভালোবাসা প্রতিদানে দেবে। বৌকে অবজ্ঞা করলে বৌ অবজ্ঞা করবে। বৌয়ের অবজ্ঞার ওজন অনেক। বৌকে গাধার মতো খাটানোর অর্থ নেই, বৌকে গাধার মতো খাটালে বৌ গাধার মতো খাটাবে। বৌ গাধার মতো খাটালে মাজা আর উঁচু হবে না।বৌকে সময় দিতে হয়, বৌ সময় চায়, সময় চায়ের দোকানে দিলে সময় হাত থেকে চলে যাবে। বৌকে সময় দিলে সংসার মধুর হবে, তখন চায়ের দোকানে আসতেও ইচ্ছে করবে না। বৌয়ের কাজে সাহায্য করা মানে বৌকেই সাহায্য করা না, নিজের সংসারকেও টানা। বৌয়ের সাথে মিলেমিশে থাকলে বৌয়ের আঁচল তলে থাকা বলা ঠিক না, বৌর সাথে যদি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি না করতে পারিস, সংসারের মধ্যে যদি শান্তি আনয়ন না করতে পারিস পৃথিবীর এত এত সুখ কোন প্রশান্তি দেবে না।
আরজুর টানা কথা বলা দেখে মহিনসহ আরজুও চুপ হয়ে গেলো। আরজু চা খেয়ে বাড়ি চলে এলো। আয়মানকে বললো, আমার বন্ধুগুলো সংসারে খুব অশান্তিতে। বৌদের সহ্যই করতে পারে না। তোমার আমার মিলও ওরা সহ্য করতে পারে না।
আয়মান বললো, বন্ধুদের সাথে বৌর প্রশংসা করবে না। বৌর প্রশংসা শুধু বন্ধুরা নয়, পৃথিবীর কেউ সহ্য করতে পারে না। তোমার বন্ধুরা তাঁদের বৌকে চায়ের দোকানে যেভাবে উপস্থাপন করে তুমিও আমাকে ঠিক তেমনি করে তাঁদের সামনে উপস্থাপন করবে। দেখবে তোমার বন্ধুরা আগের মতো আবার তোমার সাথে সুন্দর ব্যবহার করছেন। এই সমাজ এমন, যে যত তার বৌকে শাসন-দমন করতে পারবে সেই তত সুপুরুষ। কাল যেয়ে বন্ধুদের বলবে বৌকে কনুই দিয়ে মেরেছি। আর বলবে, বৌ বেকুবই, বৌর বুদ্ধি হাঁটুতেই, বৌ বাড়তি বোঝা, বৌ যন্ত্রণার ফ্যাক্টরিই, বৌ ঝগড়াটেই, বৌ কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানরই করে, বৌর অত্যাচারে কাঁচা চুলে পাকই ধরে, বৌয়ের কাজ আবার কাজ হলো, বৌয়ের কাজের কোনো মূল্যই নেই, সংসারের কাজ আবার কাজ হলো!
আয়মানকে থামালো আরজু। আর বললো, শীরধার্য। এখন বলো ঘর ঝাড়ু দেবো, না টেবিল মুছবো, না থালাবাটি ধৌত করবো, না... 
আয়মান আরজুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, ঘরের কাজ করবে, পর যেন না জানে। যা করবে জানালা দরজা বন্ধ করে...
জানালা দরজা বন্ধের কথা বলেই আয়মান লজ্জায় জিহ্বা কাটলো। আরজু আয়মানের কাছে সরে এলো। আয়মান আদেশের সুরে বললো, কাছে আসবে না। ঘোরো।
আরজু ঘুরতেই আয়মান আরজুর গলা জড়িয়ে পিঠে চড়ে বসে বললো, বৌ তো বাদর। পিঠে চড়বে, মাথায় উঠবে। এখন আমাকে রান্না ঘরে নিয়ে চলো।
আরজু বললো, এভাবে তোমায় নিয়ে চলবো আমি হাজার বছর হাজার মাইল জীবনের পথ।
আয়মান নেমে আরজুর হাত ধরে বললো, সহযাত্রী ঘাড়ে চড়ে না, সমব্যথী ঘাড়ে চড়ে না। স্বামীর ঘাড়ে চড়ে হাজার বছর হাজার মাইল চলা যায় না। স্বামীর হাত ধরে পাশাপাশি হাজার বছর হাজার মাইল চলা সম্ভব।
আরজু বললো, তুমি অনেক জ্ঞানী, জানো অনেক। তোমাতে আমার মুগ্ধতার শেষ নেই। 
আয়মান বললো, মানুষ তো তখনই মুগ্ধ হয় যখন মুগ্ধ নয়নে চায়। জোরাজুরি, পীড়াপীড়ি, বলপ্রদর্শন, ক্ষিপ্রতা, দমন-শাসন সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। তোমার আমার সম্পর্ক একটা শিল্প, একটা সৌন্দর্য।
তখন রিপন এসে হাক দিলো, স্যার, আপনি কই? ডিমে তা দিচ্ছেন? 
বন্ধু যখন নাম না ধরে ডেকে স্যার ডাকে আর তুই স্থলে আপনি বলে তখন বোঝায় যায় ইচ্ছাপূর্বক অবজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই নয়। আরজু বাইরে এসে বললো, আরে দূর ডিমে তা দেবো কেনো? ভেবেছি, বৌ জ্বালালেই পিটাবো, বাড়তি কথা বললেই পিটাবো, পাশের বাড়ির কারো সাথে ঝগড়া করলেই পিটাবো, জ্ঞান দিতে গেলেই পিটাবো, সক্ষমতা নিয়ে কথা বললেই পিটাবো, অতি অভিরুচি দেখালেই পিটাবো, রান্না করতে দেরি করলেই পিটাবো, খেতে দিতে দেরি করলেই পিটাবো, ঘুরতে নিয়ে যাও বায়না ধরলেই পিটাবো।
রিপন খুব খুশি হলো আরজুর আজকের কথা শুনে। সে আরজুর সাথে করমর্দন করে বললো, এত দিনে তোর মুখে বীর পুরুষের মতো কথা শোনা গেলো। 
আর ধীরস্বরে বললো, শোন, স্বামীকে প্রেমিক হলে চলে না, স্বামী কামুকের মতো কাম সেরেই স্ত্রীকে পাঁচ হাত দূরে সরিয়ে রাখবে।
এ কথা বলে রিপন আরজুকে বুকে চেপে ধরে সান্ত্বনা খুঁজলো। নিজ ঘরে অশান্তিতে বাস করা মানুষ অন্যের ঘরে একই রকম অশান্তি দেখলে তাকে সমব্যথী ভেবে বুকে টেনে কী সুন্দর সান্ত্বনার আশ্রয় খোঁজে! বৌ-শাসিত নতুন কেউ বৌ-শাসিত দলে ভিড়লে বৌ-শাসিতদের মনে কী যে দক্ষিণা পবন বয় বলা দুষ্কর।
রিপন দ্রুত দোকানে গেলো। আর আরজু ঘরে এলো। আরজুকে সাবাস বলে আয়মান বললো, অভিনয় সুদক্ষতার সাথে করেছো। পাকা অভিনেতা যেন তুমি।
আরজু বললো, তোমায় নিয়ে খারাপ কথা বলতেই দেখলে ও কী খুশি হলো! লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ঘর করে, কিন্তু ঘরের মানুষটিকে অগুরুত্বপূর্ণ ভেবে ঘরকে নরক করে তুলেছে ওরা। ঘর হয়, ঘরণীও হয়, ওদের সুখ আর হয় না।
বৌ দ্বারা জ্বালাতনে অতিষ্ঠ আরজু, একথা রিপন বন্ধু সমাজে জানিয়ে দিলো। ঘোলা জল খেয়ে তাদের বন্ধু তাদের মাঝে ফিরে আসছে একথা কেউ কেউ বিশ্বাস করলেও কেউ কেউ করলো না। আরজু আসতেই সুমন বললো, তুই বৌয়ের পিছন ছাড়া পুরুষ না। বৌর বুদ্ধিতে চলা মানুষ তুই। নিশ্চয় তোর বৌ বলেছে, বন্ধুদের কাছে বৌর বদনাম করবে, বন্ধুরা তবে তোমাকে সাদরে গ্রহণ করবে। মাহাবুর, আরজুকে খবরদার আমাদের দলে নেয়া ঠিক হবে না।
মাহাবুর বললো, আমি জানি ও বৌর কথায় উঠে, বৌর কথায় বসে। বৌকে ভয় পায়, বৌর গরম খায়, বৌর দাসত্ব করে। ও বৌ ভক্ত, পুরুষ নামের কলঙ্ক।
আরজু কিছু বলতে চাচ্ছিলো। স্বজল, জাহিদ দুজন মিলে ওকে কোনো কথায় বলতে দিলো না। আরজু বন্ধু সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাড়ি এলো। আরজুকে দেখতেই আয়মান বললো, কোথায় যাও, বলে যাও না কেনো? আমার শাড়ি, শায়া, ব্লাউজ শুকাতে দেয়া আছে ছাদে, নিয়ে এসো তো।
কথাটি শুনতেই আরজুর রাগ হয়ে গেলো। হাতে ছিলো ডিমের থলি। ছুঁড়ে মেরে আবার দোকানে গেলো। জাহিদ দেখে বললো, ও মনে হয় সত্যিই বাড়ি আর টিকতে পারছে না। ওকে দলে নিয়ে নিই।
স্বজল প্রতিবাদ করে বললো, ও পর্যবেক্ষণে থাকবে, দেখি সত্যিই অত্যাচারিত হচ্ছে কিনা! অত্যচারিত হলে তার মাত্রা মৃদু, না তীব্র তাও জানা দরকার। ও অত্যাচার মেনেই নেবে, না সহ্য করবে না তাও বুঝতে হবে।
আরজু সবাইকে কষ্ট করে থামিয়ে বললো, দেখ, তোরা সংসারে শুধু শাসিত হচ্ছিস। আমি শাসিতও হচ্ছি, ভালোবাসাও পাচ্ছি। অমৃতে ভেসে যাচ্ছি, তো গরলে ডুবে যাচ্ছি। না মধু, না বিষ; না মানতে পারছি, না দূরে ঠেলতে পারছি। অন্ধ পতঙ্গের মতো ঘুরপাক খাচ্ছি, না পাচ্ছি কূল, না পারছি শূল জ্বালা সয়তে, না চাচ্ছিস তোরা শুনতে, না পারছি  বুকে চেপে রাখতে।
বান্না কটাক্ষ হেসে বললো, ও আচ্ছা, বৌ দ্বারা যত হচ্ছিস প্রভাবিত, তত হচ্ছিস প্রতারিত।
আবির বিজ্ঞজনের মতো করে বললো, গলার কাটা, না যায় ফেলা, না যায় জ্বালা সওয়া।
মহিন নড়ে চড়ে বসে তীর্যক চোখে চেয়ে কটাক্ষের গুঁড়ো মিশিয়ে বললো, রূপমাধুর্যে হচ্ছিস বিভোর, কথাচাতুর্যে কাটছে ঘোর। না পাচ্ছিস রাস্তা, না পাচ্ছিস পালাতে।
আরজু বললো, যত না দেয় রাগ উঠিয়ে, তারচেয়ে বেশি দেয় মন ভরিয়ে; মন তার রশদ পেলে রাগ যায় ভুলে। যত না দেয় জ্বালা, তারচেয়ে বেশি দেয় মায়া, মায়া পেলে জ্বালা যাই ভুলে। অম্ল-মধুর এই সম্পর্ক না পারি প্রত্যাখ্যান করতে, না পারি আশ্বাদন করতে।
বান্না বললো, বৌর হাতে নির্যাতিত হলেও থাকছিস হয়ে প্রিত, বৌ-জালে ধৃত তুই ইচ্ছাকৃত, বৌয়ের আঁচল আবৃত তুই, তুই একটা মৃত।
সাইদুর বললো, বুঝেছি, শাসন করতে যেয়ে সোহাগ দিয়ে ফেলছিস; সোহাগ দিতে যেয়ে ছোবল খেয়ে বসছিস। হাত তুলিস মারতে, সে হাত দিয়ে ফেলে আদর। আর আদর দিতে গেলেই হাত হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। তোর পাওয়ার আকুলতা প্রবল, তাই হারানোর ভয়ও প্রবল। উপসংহার, তুই বৌ ভক্ত।
বন্ধুরা মিলে আরজুকে দোকান থেকে  আবারো বিতাড়িত করে দিলো। বৌ-শাসিত দলে একটি মাত্র বৌ-শাসিত প্রাণীর ঠাঁই হলো না।
 
======০০০======

সৌমেন দেবনাথ

যশোর

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

শিক্ষক ।। জীবন সরখেল

শিক্ষক  জীবন সরখেল   শিক্ষা চেতনা প্রসারে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ  প্রকৃতি পরিবেশ প্রাণীর   ধারক বাহক ও মান... যাঁদের স্মরণ উপস্থিতিই  কমে মিথ্যা গ্লানি  সেবায় দ্রোহেও নিরপেক্ষ  ঠেলেন সব হয়রানি। কর্ম আচরণ চিন্তন ত্যাগ  সত্য সপ্রেম নিষ্ঠায় গড়েন চিরন্তন সমাজ ভিত নীতি উদারতায়....  নিঃস্বার্থ ভাব ঠিক ভুল গুণেই  অভিজ্ঞতা দীক্ষক  বাবা মা পরিবেশ গুরুই সবার আপন শিক্ষক। __________________       জীবন সরখেল গ্রাম -বাড়াভগলদিঘী, পোস্ট -ভগলদিঘী, থানা-জয়পুর, জেলা-বাঁকুড়া। পিন-৭২২১৫৪  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

স্মৃতিকথা ।। ৺বিজয়ার চিঠি ।। ভাস্কর চৌধুরী

উৎসব শেষের শূন্যতা এখন গ্রাস করে আছে আদিগন্ত। হঠাৎ ভেসে আসা ছাতিম ফুলের গন্ধ যেমন মাতাল করে দেয় ঠিক তেমনই মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে এক না ছুঁতে পাওয়া আলোর পিপাসায়। উৎসব শেষের নিভে যাওয়া সন্ধ্যেবেলার আলোয় ম্লান হয়ে আসে জীবনের টুকরো টুকরো খুশির আমেজ।  বিসর্জনের শেষে ছেলেবেলায় গোটা গোটা অক্ষরে হলদে রঙা পোস্টকার্ড আর নীলচে-সবুজ ইনল্যান্ড লেটারে দূরের সব্বাইকে পাঠাতে হতো ৺বিজয়ার চিঠি! বয়ান মোটামুটি ওই একই ― বড়দের শুভ ৺বিজয়ার প্রনাম আর যেহেতু আমরা তখন ছোট তাই আশীর্বাদ জানানোর কেউ থাকতো না। তবুও কুঁচোকাঁচা ছোট ভাইবোনদের মনের আদর কলমের ডগায় উগড়ে দিতুম সে চিঠিতে!  ৺বিজয়ার চিঠি আসলে পুজোর ছুটির শেষে হাতের লেখা করিয়ে নেবার এক অলৌকিক ষড়যন্ত্র! ইচ্ছে নেই তবুও জোর করে ওই হাতের লেখা শুধু নয়, বানান, বাক্যগঠন সব কিছু সুকৌশলে করিয়ে নেওয়ার ফন্দি। এটা বুঝেছি অনেক পরে। আর যখন বুঝতে পেরেছি তখন কিন্তু সেই চিঠি পাঠানোর মানুষগুলো মনের মধ্যে গেঁথে গেছে। তখন যেন সত্যি সত্যি মন বলতো হোক না ওই পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ড লেটারের একচিলতে জমি, আমার খাস দখল তো থাকবে তাতে! জানেন, এখন আর কেউ ৺বিজয়ার চিঠি পাঠায় না! পুজো ...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষক ।। রাফেল ইসলাম

শিক্ষক মানে রাফেল ইসলাম   শিক্ষক মানে বুকে টেনে  দুর্দিনে দুঃখ ভোলান,  শিক্ষক মানে আন্তরিকতায় শিক্ষা করেন দান।  শিক্ষক মানে বিদ্যা দিয়ে  আঁধার দূর করে,  শিক্ষক মানে স্নেহের পরশে ছাত্র জীবন ভরে।  শিক্ষক মানে আদর্শের উৎসাহে  মেলে ভবিষ্যতের দিশা,  শিক্ষক মানে দরদ দিয়ে  বাঁচিয়ে রাখে আশা।  শিক্ষক মানে গ্রীষ্মের দিনে  মস্ত বটের ছায়া,  শিক্ষক মানে নিবিড় ভালবাসার  শান্ত ঊষার মায়া।  শিক্ষক মানে জ্ঞানের আলোয়  সমাজ গড়ে তোলে,  শিক্ষক মানে সঠিক পথের  মূল দুয়ার খোলে।।    =============           নাম-রাফেল ইসলাম।  গ্রাম-বাগান বেড়িয়া (বিড়লাপুর)। পোস্ট-চককাশিপুর।  থানা-নোদাখালি।  জেলা-দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।  পিন নম্বর-৭৪৩৩১৮.

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

বাংলা ভাষা সাহিত্যে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ।। শুভ জিত দত্ত

বাংলা ভাষা-সাহিত্যে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার শুভ জিত দত্ত   বাংলা ভাষাসাহিত্যে পরোক্ষভাবে যাঁর অবদান অতুলনীয়, সেই প্রজ্ঞাবান পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮২৪ সালে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে জয়গোপাল সেখানে সাহিত্যে কাব্যের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন এবং সুদীর্ঘ বাইশ বছর অধ্যাপনা করেন। সেখানে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে পরবর্তীকালে যাঁরা বিখ্যাত হন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,মদনমোহন তর্কালঙ্কার। জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের জন্ম রেলপথের শিবনিবাস স্টেশন থেকে আট ক্রোশ পূর্বে, নদীয়া বর্তমানে , বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলাতে বজরাপুর গ্রামে এক প্রাচীন বারেন্দ্র বংশের আবাসস্থল ছিল। এই বংশ শুদ্ধাচার ও সিদ্ধশ্রোত্রীয় ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ছিল এবং পরবর্তী সময়ে বাসস্থান, নামকরণ ও কর্মসূত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটলেও তাদের গৌরবময় পরিচয় অক্ষুণ্ণ থেকেছে। এই বংশে বহু দেশপ্রসিদ্ধ মহামহোপাধ্যায় ও পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁদের কীর্তি বাংলার জ্ঞান-সাধনার আঙিনাকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাটোর মহারাজের দ্বার পণ্ডিত কেবলরাম তর্কপঞ্চানন এবং তাঁর...

স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী

রানী গাইডিনলিউ স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি  প্রণব কুমার চক্রবর্তী           ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু কিছু পরিচিত মুখ আর ঘটনার সমষ্টি নয় । এর গভীরে লুকিয়ে আছে অজস্র গল্প, অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ, এবং ছোট বড় অসংখ্য বিদ্রোহের কাহিনী । সংক্ষেপে এই বিশাল সংগ্রামকে তুলে ধরা কঠিন । তবে, চেষ্টা করে কিছু দিক নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক ।           আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং ব্যক্তিত্ব বলতে সাধারণত মঙ্গল পান্ডে, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিদের কথা এবং তাদের লড়াইয়ের কথা বলে থাকি । কিন্তু, এই সংগ্রামের পটভূমি রচিত হয়েছিল আরো বহু বহু আগে - যেখানে স্থানীয় কৃষক উপজাতি এবং সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ ছিল এর প্রথম বীজ । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ আন্দোলনকে প্রায়সই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রথম লড়াই হিসাবে বলা হয়ে থাকে । তবে এর আগেও আমাদের দেশে  ফরাসি এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল । সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫ - ৫৬ সাল),  সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৭০ - ১৮...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

শব্দ ।। সনৎকুমার নস্কর

শব্দ সনৎকুমার নস্কর  কিছু কিছু শব্দ থাকে সুইচের মতো।   হাত দিলেই দপ্ করে জ্বলে ওঠে ব্যঞ্জনার আলো।  তখন দেখে নিই অন্তর-বাহির                  গহন আঁধারে ঢাকা পথ   শব্দ সে পথের সঙ্গী হয়৷     উপনিষদের কবি শব্দকে বলেন 'শব্দব্রহ্ম',  যখন সে দিগন্তবিস্তারী ---                    কথাটার মানে খুঁজে পাই সেসময়   গর্ভের গভীরে উচ্চারিত ধ্বনি জাগিয়ে তোলে                            আমূল  আর্তনাদ৷   শব্দেই কি শব্দের শেষ?   তারও কি নেই আত্মার মতো                       জীবনের অন্তহীন পথ?   এক হৃদয় থেকে আর এক হৃদয়ে                     সে তো করে ক্লান্তিহীন পরিক্রমা  আমাদের বাসনা-বিশ্বে সে তোলে ঝড়  আবেগমায়া দেয় ছড়িয়ে বাক্ স্পন্দের পর  অবশ্য...