Skip to main content

গল্প // হৈমন্তীর মন // সৌমেন দেবনাথ


হৈমন্তীর মন

সৌমেন দেবনাথ 


চোখে কাজল এঁকে, ঠোঁটে লাল প্রলেপ বসিয়ে, উন্মুক্ত কেশের উপর বকুলফুলের মালা গেঁথে, অলংকারে সর্বাঙ্গ আচ্ছন্ন করে হৈমন্তীর স্বাভাবিক শ্রীকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে বিনাশ করার জন্য। চির নীরব হৃদয়ের মধ্যে একটা অসীম অব্যক্ত ক্রন্দন, দুই চক্ষের পত্র পল্লবের বাঁধা ডিঙিয়ে অশ্রু বের হয়ে এলো। চক্ষু দুটি ক্রোধাগ্নি ব্যক্তির মতো লাল-রক্তিম হয়ে গেছে, নাক সর্দি লাগা লোকের মতো লালিমা হয়ে গেছে। এতে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বরং বিকশিতই হয়েছে। যেমন পরিপূর্ণ বয়স, তেমনি পরিপূর্ণ সৌন্দর্য। যেন শরৎকালের রোদের মতো কাঁচা সোনার প্রতিমা, সেই রোদের মতোই দ্বীপ্ত, উদ্বীপ্ত; তার দৃষ্টি দিনের আলোকের ন্যায় মুক্ত, উন্মুক্ত; নীরব শান্ত নদীর মতো শান্ত, নিস্তব্ধ। দীঘল কেশের উপর বকুলফুলের মালা হেলে দুলে খেলছে। ঘ্রাণে ঘরটা স্বর্গের রাজধানী অমরাবতীতে পরিণত হয়ে আছে। বিশ্বকর্মা অতিশয় সলজ্জ সজীব সৌন্দর্যের এই মেয়েটিকে মাত্র নির্মাণ করে যেন জগৎ মাঝে ছেড়ে দিয়েছেন। বয়স ঠিক করা মুশকিল। শরীরটি ডাগরের ন্যায় বিকশিত কিন্তু মুখটি এত কাঁচা লাগে যেন রোদের তাপ, কাজের চাপ, কষ্টের কালি বা চিন্তার চিহ্ন তাকে লেশমাত্রও স্পর্শ করতে পারেনি। সে যে যৌবনের বনে পা ফেলে মৌরানী হয়ে গেছে এখনো নিজের কাছে সে খবর যেন পৌঁছেনি। 
হৈমন্তীর রূপের উপর পিতামাতার একমাত্র ভরসা। বরপক্ষ যদি হৈমন্তীর সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে বিনাপণে গ্রহণ করেন তবেই পিতামাতার রক্ষা। জলের কাদায় বেড়ে উঠা জলপদ্মকে তাঁরা ডাঙায় রোপণ বা স্থানান্তর করতে যাচ্ছেন। রূপধন্যা ধরণীর মানুষের কাছে রূপের কদর খুব বেশি। তাই অপরূপ রূপবতী হৈমন্তীর বরপক্ষকে মন ভোলানোর জন্য এত সাজার প্রয়োজন মোটেও ছিলো না। একটা অতি নিগূঢ় মায়াবিনী চিত্র বা আভা তার মুখ জুড়ে বিরাজ করছে। মুখশ্রী সম্পর্কে অধিক কিছু কী বলবো! বনশ্রীর শুভশ্রী মেখে আছে মুখমণ্ডল জুড়ে, লাগে দেবশ্রী, অতুল্য মুখশ্রী, রূপশ্রীতে তার জয়জয়কার। কেবল মুখাবয়বে এই একটি অসামান্যতা বা ঘাটতি আছে যে, দেখলেই ঐ দ্বিধা জাগবে যেন বনের ত্রস্ত হরিণী। এই একটি মেয়েকে স্রষ্টা এত যত্নে, এত মহিমা ঢেলে, মনের মাধুরী মিশিয়ে, আপন খেয়ালে ফুলের মত সুকুমার করে নির্মাণ করেছেন যে দেখলেই বিস্ময় জাগে। তারপর জন্ম তার দরিদ্রতার সংগ্রাম প্রকোষ্টে। কিন্তু এই সংগ্রাম জীবনের আঁচই চেহারায় রূপের চেয়ে লাবণ্যকেই বাড়িয়েছে। সৌন্দর্যে বিবেক বশে, সৌন্দর্য বিবেক নাশে, সৌন্দর্য সীমিতই কী শ্রেয় নয়! হৈমন্তীর সৌন্দর্য কী বাড়াবাড়ি রকমের নয়? যাকে বলা যেতে পারে ঈশ্বরের বেশিবেশি। ওর সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ জনের অভাব নেই, বিমুখ জনের অভাবও নেই। অন্যায় রকমের এই সৌন্দর্য যে কারো মনে হিংসার জন্ম দেবে। আবার সৌন্দর্যে ভরা মানবীর কী অভাব ধরাতলে? পুরুষ চায় মেয়েদের রূপে ও মনে একত্রে মাধুর্যময়তা যেটা হৈমন্তীর মাঝে মোটেই কম নয়। রূপ মাধুর্যে কত বেশি আগুয়ান হৈমন্তী, হয়ত হৈমন্তী জানেই না বা নিজে জানার চেষ্টাও করেনি। বিধাতাপ্রদত্ত রূপ আর রূপের বারতা নিয়ে অহমিকা প্রকাশের মাঝে আত্ম-আহম্মকী ছাড়া কিছুই নেই, হয়ত হৈমন্তী মনে প্রাণে সেটাই ধারণ করে। বিধাতা নিজের আনন্দে গড়ে, নিজের খেয়ালে আবার ভাঙে, নিজের হেয়ালে আবার কাড়ে। 
হঠাৎ হৈমন্তীর ডাগর দুটি চোখ মোটা মোটা জলের ফোঁটায় আবার ভরে গেলো। চোখের জলের যেন কোনো দামই নেই, ও ঝরিয়েই চলেছে। মনের মানুষের নিষ্পাপ মুখের প্রতিচ্ছবি চোখে কেবলই ভাসছে। চিন্তায় হৈমন্তী অনাবৃষ্টির দিনে ফুলের কুঁড়িটির মত একেবারে বিমর্ষ হয়ে পড়েছে, নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে। নব জোয়ারের তেজে ঝকমক তনুলতাতে নিস্তেজতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নবরোপিত চারা জল না পেলে যেমন নেতিয়ে পড়ে, হৈমন্তীর অবস্থা এখন তেমন। মুখে গাঢ় একটা চিন্তার রেখা। পলকহীন ভাবে যেদিকে তাকাচ্ছে সেদিকেই একদৃষ্টে চেয়ে থাকছে। পাশে বেশ কজন সখী তাকে ঘিরে মজা করছে। কিন্তু তার মনের ভেতর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে জানছে না বৃক্ষরাজি, জানছে না স্রোতস্বিনী নদী; সেখানে মানুষের বোঝার সাধ্য কই!
কনে দেখতে বরপক্ষ এসে উপস্থিত। বারান্দায় তাঁদের বসতে দেয়া হলো। হৈমন্তীর হৃদয়ে প্রকম্পন শুরু হলো। নিজের সৌন্দর্যকে সে গালি দিচ্ছে, কেননা তাঁরা তো তাকে অপছন্দ করে যাবার কারণ পাবেন না। প্রারম্ভিক কথা সেরে হৈমন্তীকে ডাকা হলো। সখীরা তাকে অতি যতনে রেখে গেলো। নতুন আত্মীয়দের সাথে রবীন্দ্র ছাড়াও দুজন যুবকও ছিলো। ও দুজন যুবকের নজর মাটিতেই আর পড়ে না। সলজ্জ তারা, তবুও নির্লজ্জের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে। চেয়ে দেখতে নেই মানা। মেয়ে দেখতে এসে লজ্জায় না দেখার লোক তারা নয়। স্বপ্নেও এমন নারী তারা দেখেনি যেন! টকটকে লাল শাড়িতে হৈমন্তীকে লাগছে লাল পরী। বারান্দাটাও রক্তবর্ণ হয়ে গেছে। ছিপছিপে চেহারায় বিদ্যুতের চমক। চোখে ধাঁধাঁ লাগে। কপালে কালো টিপ, চোখে কাজলের রেখা মুখটিতে দিয়েছে চমৎকার মুগ্ধতা। এক যুবক শাড়ির উপরে যে জরির রশ্মি ঝলমল করছে এক মুহূর্তের মধ্যে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। দেখলেই মন আনমনা হয়। মন বলে দেখছো না কেনো, স্বর্গ থেকে দেবী সম্মুখে নেমে এসেছে। রক্তের ন্যায় রক্তিম পদপল্লব। খুব সুন্দর একটা ভঙ্গি নিয়ে চেয়ারে বসেছে। হাত দুটো হাঁটুর উপর। ঐ হাতের দিকে নজর নিক্ষিপ্ত করে হৈমন্তী বসে আছে। এক বৃদ্ধ মাথা তুলতে বললেন। চোখ দুটো খুলতে বললেন। হরিণীনয়না হৃদয় হরণা।দৃষ্টি শক্তির স্বচ্ছ আলো জ্বলজ্বল করছে, মুখের মধ্যের আকর্ষণীয় একটি। দেখে এক যুবক কী একটা বিস্মিতসূচক শব্দ উচ্চারণ করলো। তা শুনে হৈমন্তী তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ঠেকলো শাণ দেয়া ছুরির মতো। ঘোমটা মেলতে বললেন অন্য আর এক বৃদ্ধ। ঐ চুলে চমক দিচ্ছে ভ্রমরকৃষ্ণ কালো বর্ণ। একটু দাঁড়াতে বললেন। উচ্চতায় অন্যতম। দশ জনের মধ্যে দাঁড়ালে বোঝা যাবে ঐ তো হৈমন্তী। সরল সোজা প্রশ্নের কিছু উত্তর দিলো। কী তার মায়াবী মুখের বচন! মধুমিশ্রিত উক্তি প্রাণ হরণ করে। এবার হেটে ঘরে চলে যেতে বললেন। হৈমন্তী পায়ের নূপুর বাজিয়ে নিক্বণে নিক্বণে ঘরে চলে গেলো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্র সূক্ষ্মভাবে হৈমন্তীকে পর্যবেক্ষণ করেছে। যে দুজন যুবক ছিলো তাদের অন্তরদ্বয় ছটফট শুরু করলো। আর একটু সময় থাকতো! রূপমুগ্ধ মন রূপ দেখে তৃপ্ত হয় না। শান্ত হয় না। দেখলে চোখের জ্যোতি বাড়ে, মনের আরাম বাড়ে, প্রাণের আরাম বাড়ে।
হৈমন্তীকে তাঁরা পছন্দ করেছেন। অবশ্য পছন্দ না হবার কারণ তাঁরা খুঁজে পাননি। কারণ খোঁজার চেষ্টাও করেননি। এক টাকার কাঁচা পয়সা পড়ে থাকা দেখলে মানুষেরা ফেলে যান না, তাঁরা হৈমন্তীকে ফেলে যাবেন ভাবাও দুষ্কর। পণবিহীন তাঁরা রাজি। হৈমন্তীকে যে পাবে সাথে পণ চাইবে এমন অবিবেচক নয় সে। দিন তারিখ নির্ধারিত হলো। জলের থেকে মাছ উঠানো হলে যেমন মাছ ছটফট করে হৈমন্তীর অস্থির মনটাও তেমনি ছটফট করছে। পুঁটির প্রাণ হলে মরেই যেত। তাকে এই অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রশালা থেকে কোনো এক অজানা বন্দীশালায় প্রেরণের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। প্রকৃতিতে যে সয়, কংক্রিটে সে রয় না। হৈমন্তী প্রকৃতির দেবী, উন্মুক্ত এই আকাশ তলেই তার রূপের পূর্ণ পরিচয়, তাকে কোনো রাজপ্রাসাদের রানী হলে মানাবে না। এ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ যতই সুন্দর, সেটা মাছের স্বাভাবিকতা নয়। স্বাভাবিকতাতেই প্রকৃত সৌন্দর্য ফোঁটে। সোনার ফুলদানির চেয়ে বাগিচাতেই ফুলকে বেশি আকর্ষণীয় লাগে। যে ফুল বাগিচায় বাড়ে, টবে সে ম্রিয়মাণ হবেই। হৈমন্তীর যার সাথে বিবাহ হতে যাচ্ছে সে হৈমন্তীর মন পাবে, না রক্তে মাংসে গড়া হৈমন্তীকে পাবে? তার হৃদয় সে তো এই খোলা পরিবেশে বিলিয়ে দিয়েছে। বনের পক্ষী কূজন বন্ধ করে হৈমন্তীর মিষ্টিমিশ্রিত কণ্ঠের গান শোনে, বনের গাছপালা কম্পন থামিয়ে অবাকদৃষ্টে ঐ চন্দ্রময় বদনের দিকে চেয়ে থাকে। সন্ধ্যায় তরুচ্ছায়াঘন নির্জন পথ তার পদধূলি পেয়ে, এত দেরি করার অপরাধ থেকে ক্ষমা করে দেয়। হৈমন্তীর সব অপরাধ আরও একজন ক্ষমার দৃষ্টে দেখে। অবশ্য ক্ষমা না করেও পারে না, কেননা মনের মানুষের অভিমান ভাঙানোর ক্ষমতা হৈমন্তীর প্রবল। আর হৈমন্তীর মুখপানে না তাকিয়ে অভিমান করে থাকা কী সম্ভব? অলোকসুন্দরী ফুলকুমারী হৈমন্তীর হৃদয় মন্দিরে যে আসন পেয়েছে সে অপু। হৈমন্তীকে দর্শনমাত্রই অপুর মেঘমুক্ত আকাশে শরতের সূর্য কিরণ ঘটে। অপু অবাক হয়, বিস্ময়ে অভিভূত হয়। মনের মলিনতা দূরীভূত হয়। চকিত চেয়ে থাকে। পুলকোচ্ছ্বাসে চিত্ত বিমোহিত হয়ে যায়। মনের মধ্যে যার ছবি আঁকা সেই ছবি যদি সম্মুখে আসে, ছবির মত অবিচল চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকে, ঐ মায়াবিনী চোখের ভাষা যদি তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তবে অপুর কঠিন হৃদয়ে প্রস্রবণ বয়ে যেতে কেনোইবা দেরি করবে! অপু হৈমন্তীকে যতবার বুকে জড়িয়ে নিয়েছে ততবারই ভেবেছে, আমি সত্যই কী হৈমকে বক্ষ পিঞ্জরে ডানা দিয়ে বেঁধেছি, না স্বপ্ন দেখছি! এ যে দুর্লভ, আমি তাকে সুলভে পেয়েছি। 
দুর্লভ্যকে সুলভে পেলে পাওয়াতে খটকা লাগে। 
অপুর সৌন্দর্যময়, আলোকময়, সংগীতময় রাজ্যে কখনো কখনো এমন ভাবনাও উদিত হয়। আবার ভাবে, না, হৈম আমার ঐশ্বর্যের উজ্জ্বল মূর্তি। আমার প্রাণ প্রতিমা। একে অন্যের একে অপরের নয়নের মণি। 
পরম পাওয়ার মধ্যেও দ্বিধা থাকে, কারণ পরম পাওয়াতে বিশ্বাস স্থাপিত হতে চায় না।
যেদিন অপুর সাথে হৈমন্তীর প্রথম দর্শন হয় সেদিন হৈমন্তী তৃণশয্যায় শয়নে ছিলো। একটি তৃণ ছেদন দাঁতে পিষ্ট করতে ব্যস্ত ছিলো। ছাদসদৃশ আম গাছ তাকে ছায়া প্রশান্তি প্রদান করছিলো। ও যেন কাননের পোষা হরিণ। কানন মাঝের সৌন্দর্যে ডুবে থাকতে পছন্দ করে। আগন্তুক শিকারী অপু সেদিন হৈমন্তীর সম্মুখে পড়ে যায়। হৈমন্তীকে দেখামাত্রই অপুর ফাগুনের রোদের কথা মনে পড়ে। একে সে যেভাবে হোক শিকার করবেই। প্রথম দেখাতে অপুকেও হৈমন্তীর মনে ধরেছিলো। শ্যামলা রঙের অপুর ভ্রূ জোড়া খুব ঘন, চোখ দুটো পোষা প্রাণীর মতো। পাখি শিকার নেশা হলেও চোখে শিকারী ভাবটা নেই। হৈমন্তীর দিকে বিনাসংকোচে তাকিয়ে আছে। দেখতে নেহাত ভালো মানুষের মত। হৈমন্তী অপুকে দর্শনমাত্র উঠে বসে। পিঠের বেণি করা চুল সম্মুখ বুকের উপর আছড়ে পড়ে। নিমেষ নয়নে অপুকে দেখে নজর নামিয়ে নেয়। অপু স্তম্ভিত হয়ে গিয়ে ভেবেছিলো, বিধাতা, আমাকে যেন ও শত্রু না ভাবে, কত মায়াবিনী ও, কত মায়ায় মোড়া তার ঐ চোখ, ঐ চোখে যদি শত্রু বলে বিবেচিত হই, তবে সত্য বলে পৃথিবীতে আর কিছুই থাকবে না। তোমাকে জয় করার প্রবল ইচ্ছা আমার পেয়ে বসেছে। তোমার ঐ অপরূপ রূপ-মাধুর্যের ভাগিদার হওয়ার আমি কী যোগ্য!
অপু চমকে উঠে বাস্তবতায় ফেরে। সম্মুখে আর নেই সেই হঠাৎ দেখা মায়া-হরিণী। ঐ যে নেশা পেয়ে বসেছিলো অপুকে। শিকারের আশায় নিয়ত তাই এদিকেই তার যাত্রা থাকতো। দুদিন পর পর না দেখতে পেয়ে অপু ভেবেছিলো, বিধাতা কী আমাকে আলেয়ার আলোয় ডুবালো?
তৃতীয় দিন থেকে দেখা নিয়মিত হতে শুরু করে। কেউ কারো সাথে কথা বলে না। কিন্তু দুজনের দেখা ঠিকই হয়। দুজনের দেখা কেনোই হবে সেটাও প্রশ্ন! অন্যের হৃদয় জয়ের সুতীব্র ক্ষমতা ছিলো অপুর। ছলে বলে নয়, কুট কৌশলে নয়, হৃদয়ের ঐশ্বর্য দিয়ে অপু আকর্ষিত করে ফেলে হৈমন্তীর। কত এসেছে অপু, দাঁড়িয়ে দেখেছে দূর থেকে, কত কথা হয়েছে মনে মনে, হত না কথা মুখে। প্রত্যহ প্রথম দেখাতেই এক অমিয় হাসি দিত অপু। অপুর হাসিতে হেসে উঠতো হৈমন্তী। পালিয়ে ঘরে এসে ঐ হাসি মুখের ছবি নয়ন মাঝে জাগিয়ে সারারাত স্বপ্নের মালা গাঁথতো। এরপর থেকেই অপু তার হৃদয় মন্দিরের হৃদয় দেবতা। বনপাখি শিকারে এসে মনপাখি শিকার করে ফেলে অপু। মনপাখি বনদেবতাকে শপথ করিয়েছে আর যেন কখনো বনের উড়ন্ত বিহঙ্গকে শিকার না করে।
বরপক্ষ দিনক্ষণ পাকা করে যাওয়ার পর থেকেই হৈমন্তীর ঐ স্বতঃস্ফূর্ত মনে কেবলি অস্থিরতা বিরাজ করছে। মা বাবাকে বলতে চাচ্ছে, তোমরা আমাকে নির্বাসন দিও না। এই মুক্ত পরিবেশের প্রকৃতি দেবতার বক্ষ থেকে ছিন্ন করে আমাকে কোনো বদ্ধ পরিবেশে প্রেরণ করো না। 
হঠাৎ হৈমন্তীর অপুর সেই ঢলঢল দুখানি বড় বড় চোখ, কালো কালো তারা, ঘনকৃষ্ণ পল্লব, স্থির স্নিগ্ধ দৃষ্টির কথা মনে পড়ে গেলো। অপুর দর্শন না থাকায় এ কদিনে বিকশিত পুষ্পটি জীর্ণ হয়ে গেছে। আজ বকুলতলের তৃণবুকে সন্ধ্যাক্ষণে প্রতিমার মত দাঁড়িয়ে ছিলো। কিশোরী হৃদয়ের সবটুকু অংশীদার হয়েও কেনো অপু দূর বাস করছে? তখনকার হৈমন্তীর মনের ভাষাকে লেখায় প্রকাশ অসম্ভব ছিলো। 
রবীন্দ্রর আবদ্ধ প্রকোষ্টে হৈমন্তীর আজ থেকে যুগল বাসের যাত্রা শুরু। উন্মুক্ত আকাশের মুক্ত পক্ষীকে সে খাঁচায় বন্দী করলো। সে মন্ত্র বলে হৈমন্তীকে পেলো। এবার শুভদৃষ্টির প্রাক্কাল। রবীন্দ্র হৈমন্তীর লম্বা ঘোমটা খুলে ঝড়ের মতো কেঁপে উঠলো। একদিন দেখে সে অতৃপ্ত ছিলো। দেখার নেশায় তাই পেয়ে বসেছিলো।  এখন থেকে প্রত্যহ অহর্নিশ দেখে দেখে তৃপ্তি নেবে। দেখার মাঝেও দেখার বাকি থেকে যায়, হৈমন্তীকে দেখলে সেটাই বোধ হয়। চন্দ্রময় বদনের ঝলকে পুষ্পশয্যার ঘর আলোকিত হয়ে উঠলো। হৈমন্তীর রমণী হৃদয় থেকে কী এক অভূতপূর্ব শোভা, কী অভাবনীয় লাবণ্য বিচ্ছুরিত হচ্ছে! জগদাত্রীর মত রূপ, একি সত্যি বাস্তবিক! রবীন্দ্র হৈমন্তীর এ রূপকে সংগায়িত করতে পারছে না। রূপের কী বর্ণনা হয়! রূপের কী বর্ণনা করা যায়! হৈমন্তীর হাত দুই ধরতেই রবীন্দ্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলো। চমকে উঠে রবীন্দ্র নিজেকে সামলে নিলো। ভাবলো, আগে মন জয়, পরে হাত। মগজ জয় করলে পুরো অবয়ব মেলে। 
নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে রবীন্দ্র মনে মনে হাসলো। মন্ত্রবলে হৈমন্তীর সব পাওয়া সম্ভব নয় রবীন্দ্র বুঝে ফেলেছে। তবে যতটুকু পেয়েছে তাতেই আপাতত সন্তুষ্ট। হৈমন্তীর ভালোবাসা থেকে যদি সে বঞ্চিত হয় তবে তার সান্ত্বনার কিছু আর থাকবে না। অভাগাদের একজন হয়ে যাবে।
অপুর আসতে অনেক দেরিই হয়েছে। ঝড় থেমে গেছে আর চিহ্ন রয়ে গেছে। পুরো কাননের গাছপালা হৈমন্তীর অনুপস্থিতিতে আছাড়ি পিছাড়ি খেয়েছে। সেই পূর্বের বনশ্রী আর নেই। বাগিচাই নতুন কোনো ফুলও ফোঁটেনি। ফুটন্ত ফুল গুলোও মাথা নুয়ে আছে। যেন ওরা অনশন করেছে। নেই ভ্রমরের গুঞ্জণ ধ্বনি। হিল্লোলে তরুপল্লব কাঁপছে না। প্রকৃতি যেন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। অপুর বুঝতে আর বাকি থাকলো না। প্রকৃতি দেবী প্রকৃতিকে ছেড়ে চলে গেছে। ফুঁটো ফুটবলের মতো অপুর মনটা চুপসে গেলো। অপুর জীবনের প্রাণ প্রতিমা হৈমন্তী অপুর জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে। যে ছিলো সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের মানুষ, যাকে ঘিরে দীঘল স্বপ্নের জাল বোনা, সেই বনদেবী, কাননশ্রীর কানন দেবী হৈমন্তীকে অপু যে হাজার লক্ষ অপরিচিত মানুষের মধ্যে হারিয়ে ফেললো। অপুর আশা ভরা প্রেম আকাশে মুহূর্তের মধ্যে মেঘ এসে রাজত্ব শুরু করলো। অমাবস্যার ঘোর আঁধারে তার চন্দ্রালোকপ্লাবিত অসীম আকাশ নিমজ্জিত হয়ে গেলো। যাকে দেখলে নক্ষত্রলোকের মতো মনের মধ্যে আলোকপুঞ্জ জ্বলজ্বল করে উঠতো তাকে হীনা হৃদয় আকাশ ভাবনাহীন। ওদিন ও সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐ বকুলতলের নিচে অপেক্ষায় ছিলো। অপেক্ষা তার নিরাশায় পর্যবেশিত হয়।
হৈমন্তী বদ্ধ ঘরে সারাক্ষণই অপুর বিশ্বাস ভরা সরল মুখের কথা ভাবে। আর অফিসে রবীন্দ্র অস্থিরভাবে ভাবে হৈমন্তীকে। এদিকে অপু বসে বসে হৈমন্তীর নানান বিপদের আশঙ্কা করে, সকল বিপদ থেকে সে যেন সুস্থ থাকে। হৈমন্তী রবীন্দ্রর থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। সামাজিক এই বন্ধন ছেদ করা ছেদন দাঁতের মত সহজ নয়। রবীন্দ্র হৈমন্তীর সকল মনোবাসনা পূরণ করতে পারে, তাই বলে এটা সে কোনক্রমেই করতে পারে না। খেয়ালি মনের খেয়ালি বাসনা পূরণ করা যায়, তাই বলে বন্ধন বিচ্ছিন্ন করা তো যাবে না। রবীন্দ্র অফিস থেকে বাড়ি এলো। ভেবেছিলো দু হাত প্রসারিত করে ডাকবে আর ওমনি হৈমন্তী দৌঁড়ে এসে বুকে মুখ লুকাবে। ভাবনা ভাবনায় থাকে। হৈমন্তী সাজেনি। কপালে সেই বাসী লাল রঙের টিপ। সিঁথিতে গতকালের সিঁদুর বিশ্রী রূপ নিয়েছে। গতকালের সেই লাল রক্তিমা শাড়িটা এখনো অঙ্গে। মুখে এমন একটি ভাব রয়েছে যে ভাবটি শুধু বলছে তার অন্তরটা অপুর শূন্যতায় ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে। হৃদয়ের ভিতর তার যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, কে তা বোঝার চেষ্টা করবে! প্রভাতের শিশিরস্নাত স্নিগ্ধতা, পৃথিবীর সবুজ, আকাশের জ্যোৎস্না কিছুই যে অপুর শূন্যতায় তার ভালো লাগে না। শিশিরধৌত পূজার ফুলের মত পবিত্র ছিপছিপে তার দুটি চোখ কেবলি এই নির্দেশ করছে, অপু, তুমি আমাকে এই বদ্ধ প্রকোষ্টে প্রেরণের পূর্বে কেনো বাঁধা দিলে না! যাকে দেখামাত্রই গায়ের রক্ত টগবগ করে উঠে সেই স্বামী নামক বস্তুটি যে তোমার হৈমন্তীকে চোখের আড়াল হতে দেয় না! এ কেমন যন্ত্রণা! 
রবীন্দ্রর অবশ্য অধিকার আছে। রবীন্দ্র অধিকার ফলাতে যায়ও না। তবে রবীন্দ্রর বাড়ি একটাই কাজ প্রথম এবং পরম প্রিয়তমা প্রাণসখী স্ত্রীর ঐ অলৌকিক অনিন্দ্য রূপ দর্শন করা। রূপে আঁখি হরে, মন ভরে। রবীন্দ্রর আঁখী হরে, মন ভরে না। 
অন্তর অন্তর হৈমন্তীর চোখে জল চলে আসে। রবীন্দ্র হৈমন্তীর অশ্রুপূর্ণ কাতর চক্ষু দেখে বিহ্বল হয়ে যায়, বলে, কেনো কান্না করছো?
রবীন্দ্রর কৌতূহলী মুখখানি হৈমন্তীর চন্দ্রসদৃশ মুখবদনের দিকে ফেলফেলিয়ে চেয়ে থাকে। ভাবে, মা বাবার জন্য মন পোড়ে, দুদিন গেলে সব সয়ে যাবে। অন্তর যত না পিছে পড়ে পুড়তে চায়, তারচেয়ে আগামীর পথে হাটতে চায় বেশি। পথ পানে চেয়ে তাপিত হতে হতে নারী তো একদিন পিতৃগৃহে যেতে অনাগ্রহী হয়ে উঠে, স্বামীগৃহই স্বামীগৃহ থেকে আপনাগৃহ হয়ে উঠে। হয়ে উঠে আপনালয়, আপন বিচরণের স্বর্গক্ষেত্র।
ওদিন রাতে ছিলো ফুটফুটে জ্যোৎন্না। অশ্রুহীন অনিমেষ দৃষ্টিতে অপু চন্দ্রের দিকে চেয়েছিলো। হৈমন্তীকে উদ্দেশ্য করে বলছে, হৈম, তুমি আমাকে সহস্র হস্ত গভীর গহ্বরে কেনো ফেলে দিয়ে গেলে! তোমার বিচ্ছেদ স্মৃতি চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে আমাকে জ্বালাচ্ছে। আমার হৃদয় সাগরে যে তুমি গোপন শোকের মন্দির নির্মাণ করে দিয়ে গেলে! পূর্ণিমার উজ্জ্বলতা জীবন থেকে কেড়ে নিয়ে কেনো আমাকে অমাবস্যার কালিমা দিয়ে গেলে? আমার জীবনে তোমার ভালোবাসা কোনো দিনই অতীত হবে না। আমার অন্তরের আহাজারি কী তোমার অন্তঃপুরে পৌঁছে যায়নি? তোমার প্রতি আমার অনুরাগের আকর্ষণ তোমাকে কী আকর্ষিত করে আমার কাছে তোমাকে টেনে আনবে না? তুমি কী তোমার অন্তরকে পাথর বানিয়ে নিয়েছো?
রবীন্দ্র রাতে বাসায় ফিরে দেখে হৈমন্তী শয়নের জন্য প্রস্তুত। একটু আলাপ করতে পারে না রবীন্দ্র। প্রথমে হৈমন্তীকে ও একবার চোখ মেলে দেখে নিলো। তারপর বললো, তুমি আমার সাথে কথা না বলে কিভাবে থাকতে পারো?
হৈমন্তী বললো, রাত এখন। আমি ঘুমে যাবো। আপনার সাথে কিচ্ছা করতে ভালো লাগে না।
রবীন্দ্র নাছোড়বান্দার মতো করে বললো, এখনও কী অপরিচিত আমি তোমার কাছে? আমি তোমার সবচেয়ে চেনা, সবচেয়ে জানা। আমি তোমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন। তোমার কাছে আমার কোনো অপ্রকাশ্য নেই। আমার সাথে কথা বলতে তোমার এত দ্বিধা কেনো? কেনো এত ইতস্তত তুমি?
বলেই রবীন্দ্র হৈমন্তীর ডান হাত শক্ত করে ধরে বসলো। বললো, আজ ঘুমাবো না। তোমাকে ঘুমাতে দেবো না।
হৈমন্তী হাত ছুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো না। যেন অনুভূতিহীন। স্পন্দনহীন। রবীন্দ্র হাত ছেড়ে দিলো। নিরীক্ষণ করলো হৈমন্তীকে। অবুঝের মতো লাগছে। রবীন্দ্র উষ্ণ হয়ে উঠলো। ঠোঁট দুটো ফণা তুলে উদ্যত হলো হৈমন্তীর গালে ছোবল দিতে। যা ভাবনা সেই কাজ। হৈমন্তী এবারও অনুভূতিহীন, স্পন্দনহীন। রবীন্দ্র নিরাবেগের হৈমন্তীর পাশ থেকে উঠে গেলো।
কাঁথাটা টেনে হৈমন্তী ঘুমের দেশে গেলো। সৌন্দর্য কত সুন্দর, সৌন্দর্য থেকে সুন্দরের দ্যুতি না অবজ্ঞার বিচ্ছুরণ বের হয় তা সে টের পাচ্ছে। রূপ দেখে বিমুগ্ধের কিছু নেই, এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে। রূপে বিমুগ্ধ হতে চাওয়া এখন বিদগ্ধ হচ্ছে।
হৈমন্তীর মন জেগে ছিলো। চোখ খোলা ছিলো না। রবীন্দ্র এসে হৈমন্তীর ঘুমন্ত মুখে হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর বাহু দ্বারা আঁকড়ে ঘুমালো। হৈমন্তী রবীন্দ্রর হাত সরিয়ে দিতে গেলে বাঁধা পেলো। হৈমন্তী বললো, কী মুশকিল, এ কেমন উপদ্রবের পাল্লাতে পড়লাম!
রবীন্দ্র বললো, স্বামীর ছোঁয়া স্ত্রীর আকণ্ঠ তৃষ্ণার জল। স্বামীর পরশ স্ত্রীর জন্য স্বর্গের বাতাস। স্বামীর ঘ্রাণগন্ধে থাকা পবিত্র সুগন্ধী জলস্নানের চেয়ে শ্রেয়। স্বামীর দুহাতের মাঝে স্ত্রীর সুরক্ষিত নিরাপত্তা ও সোহাগের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। স্বামীর চোখের মায়াতে হারানোতেই স্ত্রীর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। স্বামীর ডেরাতেই স্ত্রীর সুখের বলয়। আমাতে আশ্রয় নাও, প্রশান্তি পাবে। আমাতে হারাও, হারানো বৃথা যাবে না। আমাতে সুখ খোঁজো, সুখের মণিমুক্তা পাবে। শুধু একবার জেদের কাছে হেরে যাও, আমাতে বিলীন হও। আমি তোমার মন চাই, আর কিছু নয়।
হৈমন্তী বললো, বিরক্তির সীমা থাকা দরকার। আপনার কর্মকাণ্ড রীতিমত উত্যক্তের পর্যায়ে চলে গেছে। সহ্য হচ্ছে না আর।
রবীন্দ্র হৈমন্তীকে ছেড়ে দিলো। নানা কিছু ভাবলো। ভেবে হৈমন্তীর মন বোঝার চেষ্টা করলো। মনে মনে ভাবলো, নিশ্চয় ওর মনে কোনো অশান্তি বিরাজ করছে।
মুখে বললো, তোমার মনে কী কোনো অশান্তি বিরাজ করছে? তোমার অশান্তি থাকতে পারে আমি বিশ্বাস করি না। একবার আমার বুকে লুকাও, যদি শান্তি না পাও পৃথিবীর আর কোথাও সুখ পাবে না। তোমার সুখ আমার কাছেই, পৃথিবীর তাবৎ সুখ।
কথাগুলো শুনে হৈমন্তী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। আর বললো, সুখ? পৃথিবীর তাবৎ সুখ? বাচ্চা বচন!
হৈমন্তীর তাচ্ছিল্যে মাখা কথাতে রবীন্দ্র কান দিলো না, বললো, তুমি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছো, আমার থেকে পালিয়ে তুমি আসলেই কী শান্তি পাবে? আমার থেকে তুমি যত সরবে, তত তোমার বিপর্যয়। আমার কাছে যত ধেয়ে আসবে, তত তোমার জয়, বিস্ময়। চারদিকে চেয়ে দেখো স্বামী-স্ত্রী শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে কেমন সুন্দর বেঁধে বেঁধে অটুট শৈলী মালার মতো বসবাস করছে। তুমি আমাকে নির্ভয়ে বিশ্বাস করো, তোমার হৃদয় মৃণালে নিঃসঙ্কোচে আমাকে আসন দাও, তোমার প্রতি আমার অনুরাগ ঠুনকো নয়।
বলেই রবীন্দ্র আবার হৈমন্তীর হাত দুখান ধরে বললো, তুমি চাও না আমার পেশাগত জীবনে উন্নতি হোক?
হৈমন্তী বললো, শুধু আপনার না, পৃথিবীর সব মানুষ তাঁদের জীবনে উন্নতি করুক। কিন্তু আমি কী আপনার পেশাগত জীবনে উন্নতির অন্তরায়?
রবীন্দ্র বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, ওহ, তোমার উদাসীনতা, নিরাসক্ততা, মলিনতা আমার যাবতীয় কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তুমি বোঝো না আমার জীবনে তোমার কতো প্রভাব?
হৈমন্তীকে টেনে বুকে নিলো রবীন্দ্র। রবীন্দ্রর বুকে লেপ্টে গেছে হৈমন্তী। ভাবলো, এ বিধির কোন নিয়ম, কেমন নিয়ম! কোথাকার অচেনার করালগ্রাসে আজীবন বন্ধী থাকতে হবে! আর কেনোইবা এনি আমার সাথে ছেলেমানুষি করবেন! আমার সুুন্দর সরল জীবনে এ বালাই কেনো এসে জুটলো!
পরদিন সাপ্তাহিক ছুটি। রবীন্দ্রর বুক সেলফ দেখতে দেখতে দুটো ডায়েরি পেলো হৈমন্তী। রবীন্দ্র দেখে ফেলতেই ডায়েরি বন্ধ করে ফেললো।  রবীন্দ্র দেখে বললো, বন্ধ করছো কেনো? পড়ো। আমার চিন্তা চেতনা ভাবনা দিয়ে কল্পনার অলিতে-গলিতে ঘুরে ঘুরে একটি প্রতিমা নির্মাণ করেছি। কবিতায় গল্পে যতটুকু তার রূপকে ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছি, মনের মত করে তা পারিনি। যতটুকু ভেবেছি ততটুকু না হয় লিখতে পারিনি কিন্তু তার থেকেও যে আমি বেশি পেয়েছি এবং তা বাস্তবিক। আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আমার হৈমন্তী। হৈমন্তী নামের আগে আমি সব সময় 'আমার' যোগ করি। আমার হৈমন্তী। আমার কল্পনার সব উপমা তোমার রূপের কাছে মাথা নত করেছে। আমি তোমার অন্তরের অন্তঃস্থলের একমাত্র একজন হতে চাই।
হৈমন্তী ডায়েরি দুখান রেখে দিলো। বললো, ডায়েরি পড়ার ইচ্ছা আমার নেই। আপনার অনুরাগমিশ্রিত কথামালা পড়ার ন্যূনতম শখ আমার নেই। 
রবীন্দ্র হৈমন্তীর দেমাগী কথাতে কর্ণপাত না করে বললো, আমি যখন অফিসে যাই তোমার মুখটা ভাবতে ভাবতে যাই। যখন অফিস থেকে ফিরি তখনও তোমার মুখের ছবি মনের মাঝে আঁকতে আঁকতে ফিরি। আমি জানি আমার হৈমন্তী আমার অপেক্ষাতে থাকে না। আমি জানি আমার হৈমন্তীর সুন্দরতম হৃদয়ে আমার ঠাঁইটুকু হয়নি। আমি জানি যার মাঝে হারিয়েছি, আমাতে সে হারায়নি।
হৈমন্তী তীর্যক চোখে চেয়ে বললো, আমাকে না পাওয়া নিয়ে আপনার আক্ষেপের শেষ নেই। খেদোক্তির শেষ নেই। আমি কখন আপনার ছিলাম না?
রবীন্দ্র বললো, একপ্রকার হয়ে আছো তুমি। তোমাকে তো পাওয়া হইনি আমার! যে পাওয়াতে তৃপ্তি নেই, সে পাওয়া পাওয়া নয়। যে পাওয়াতে দ্বিধার মিশ্রণ সে পাওয়া পূর্ণাঙ্গ পাওয়া নয়।
হৈমন্তী উচ্চস্বরে বললো, আমি তো আপনার দেয়া চার দেয়ালের মাঝেই। দূর আকাশের কোনো তারা নই, ইচ্ছাশীল দেখেন, ইচ্ছাশীল স্পর্শ করেন। আবার ইচ্ছামত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নিজে ভাবেন, নিজে বাজেন, নিজেই কাঁদেন। বেশি বেশি, একটু বেশি বেশিই।
দুপুরের দিকে হৈমন্তীর মা হৈমবতী আর বাবা শরৎ মেয়েকে দেখতে এসেছেন। অচেনার এই ভীড়ে হৈমন্তী কেবলি কান্না করতো, বাবা মাকে দেখে তার খুশি দেখে কে? তৎক্ষণাৎ তার মনের আকাশ সতেজ হয়ে উঠলো। 
রবীন্দ্রর মা বাসন্তী হৈমন্তীর মাকে হৈমন্তী সম্বন্ধে সব খুলে বললেন। বাড়ির কারো সাথে ঠিকমতে মেশে না, ঠিকমত কথা বলে না, ঘরের টুকটাক কাজেও মনোনিবেশ করে না। সংসারকে নিজের না ভাবলে সংসার কী গোছাতে পারে?
রবীন্দ্রর মায়ের কাছে মেয়ে সম্বন্ধে এমন কথা শুনে হৈমন্তীর মা বাবা দুজনের মন খারাপ হয়ে গেলো। হৈমন্তীর কাছে যেয়ে তার প্রমাণ হাতে নাতে পেলেন। হৈমন্তী অকপটে স্বীকার করে বলে, মা, বাবা, আমার এখানে ভালো লাগে না। মন টেকে না। আমার গ্রাম ভালো। আমি গ্রামে যাবো।
হৈমবতী বললেন, মেয়ে বলে কী! এখন তো এ ঘরই তোর সব! এটাই তোর সংসার স্বর্গ।
বাবা মা মিলে হৈমন্তীকে অনেক বুঝ দিতে লাগলেন। শ্বাশুড়ীকে সেবা শুশ্রূষা করতে বললেন। স্বামীর কথা মত চলতে বললেন। স্বামীকে দেবতাজ্ঞানে তাকে ভুল বুঝতে, কষ্ট দিতে বারণ করলেন। স্বামীকে আপন করে, তার কথার অবাধ্য যেন না হয় সে উপদেশও দিলেন।
পরদিন বাবা মা চলে গেলেন। হৈমন্তীর মন আবার খারাপ হয়ে গেলো। তার দু চোখের উদাসীন দৃষ্টি কোনো এক অতিদূরবর্তী চিন্তারাজ্যে ভ্রমণ করছে। নানান ভাবনা তার মনকে বিচলিত করে তুললো। রবীন্দ্র অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে হৈমন্তী মেঘলা আকাশের মত বিষণ্ন ভাব ধরে বসে আছে। রবীন্দ্র ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুঁটিয়ে বললো, মা বাবা চলে গেছেন। তাই বলে গোমড়া মুখে থাকবে? একলা থাকলে মন ভার হবেই।
রবীন্দ্র হৈমন্তীর হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। রবীন্দ্র হৈমন্তীর সম্মুখে বসে বললো, একা থাকি না, একা থাকা যায় না। তোমাকে এজন্য একা থাকতে মানা করি। একা থাকতেও দেবো না। একা থাকলে চিন্তার পরিসীমা বাড়ে। কিন্তু সেই চিন্তার বেশির ভাগই নেগেটিভ। আমি সব সময় বিশ্বাস করি তুমি আমি মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবো তার মত সুন্দর সিদ্ধান্ত তোমার আমার জীবনে আর নেই।
হৈমন্তী বিমর্ষ নেত্রে চেয়ে বললো, চুপ! এত বকেন কেনো? বাচাল? জ্ঞানীরা তো এত কথা বলেন না! 
রবীন্দ্র চুপ হয়ে গেলো।
অফিসে এক কলিগকে রবীন্দ্র খুব বিশ্বাস করে। সংসার জীবনের অস্থিরতার কথা তার সাথে শেয়ার করলো। তার কলিগ বললো, এ নিয়ে ভাববেন না। অচেনা অজানা মানুষকে চিনতে জানতে সময় লাগে। বৌদিকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে। আবার যদি বেশি সময় দিলে ঘটনা বিপরীত ঘটে তবে সময় দেয়া কমিয়ে দিতে হবে। বেশি সময় দিলে বন্ধনে যেমন কাঠিন্য বা মালিন্য আসে, সময় কমিয়ে দিলেও সান্নিধ্য আকাঙ্ক্ষা বা তৃষ্ণা জাগে। 
রবীন্দ্র বিমর্ষচিত্তে বললো, আমি সব দিক দিয়ে হেটেছি। ফলাফল শূন্য। একান্ত বিপদে পড়েই কথাগুলো আপনাকে বলেছি।
কলিগ বিজ্ঞজনের মতো করে বললো, আচ্ছা, বৌদি কী পছন্দ করেন তাঁর অজ্ঞাতে জানার চেষ্টা করে তাঁকে এনে দেবেন, বিস্মিত হবেন। হীরা-মাণিক্যের চেয়ে হয়ত অনেকের কাছে রাস্তার দশ টাকার বাদামই দামী। বৌদির কাছ থেকে জানার দরকার নেই। তাঁর আকাঙ্ক্ষাটা বোঝার চেষ্টা করেন। আর ভালোবাসি ভালোবাসি বলার দরকার নেই, ভালোবাসেন সেটা কর্ম দিয়ে বুঝিয়ে দেন।
রবীন্দ্র এক পলকে চেয়ে বললো, কঠিন কাজ!
কলিগটি বললো, হ্যাঁ, কঠিন ও জটিল কাজ। আবার সহজ, আজ বাসায় ফেরার সময় একটা ফুলের স্টিক কিনে নিয়ে যান।
রবীন্দ্র একটু হেসে বললো, হ্যাঁ, আপনার বৌদির ফুল পছন্দ। যেদিন তাকে প্রথম দেখতে যাই খোলা চুলে বেলিফুলের মালা ঢেউ খেলছিলো।
অফিস থেকে ফেরার পথে কয়েক রকমের ফুল কিনলো রবীন্দ্র। জীবনে কখনো ফুল ক্রয় করেনি। কোন বিপদে পড়লে সেই ফুল কিনতে হয়! তা হাতে করে বহন করতেও কেমন ইতস্তততা কাজ করছে। হৈমন্তীকে দিতে যেয়েও সেকি ইতস্তততা। কোথায় রাখবে এই খোঁজে হৈমন্তী চলে গেলো। হৈমন্তীকে পরোক্ষে যেতে দিলো না রবীন্দ্র। দেখলো পিছনের জানালা দিয়ে সে ফুল ফেলে দিচ্ছে। মন বিমর্ষে দাঁতে ঠোঁট কাটলো রবীন্দ্র। রবীন্দ্রর সামনে দিয়েই হৈমন্তী হেটে চলে যাচ্ছিলো। ক্রুদ্ধ হয়ে রবীন্দ্র হৈমন্তীর হাত ধরতে যেয়ে ব্যর্থ হলেও কাপড়ের আঁচল ধরলো। হৈমন্তী এমন বাঁধা পেয়ে দাঁড়ালো ঠিকই, কিন্তু পিছনে ফিরে তাকালো না। পরে রবীন্দ্র আঁচল ছেড়ে দিলো। অফিসের অপ্রয়োজনীয় কাগজ বিনে ফেলতে যেয়ে রবীন্দ্র দেখলো তার আনা বাদাম বিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। রবীন্দ্রর মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।
ছেলে বৌয়ের মধ্যে সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি মা বাসন্তী বুঝতে পারেন। বাসন্তী বললেন, সুখ ভালো লাগে না?
হৈমন্তী চুপ থাকে। বাসন্তী আবার বলেন, রূপের গরব? মা দুর্গার ছেলে কার্তিকের মতো স্বামী হলে খুশী হতে? আমার ছেলের মত ধৈর্যশীল আর সহ্যশীল স্বামী পেয়েছো, নতুবা আরো কয়েকটা স্বামীর ঘর এতদিন করা হয়ে যেত তোমার!
মাকে মিষ্টি-মধুর গরম দিয়ে হৈমন্তীকে ডেকে ঘরে নিলো রবীন্দ্র। হৈমন্তীর প্রস্থান কালে মা শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন, বেশি সুখে থাকলে শান্তি হয় না। সুখের জ্বর ভর করেছে!
হৈমন্তী ঘরে আসতেই রবীন্দ্র বললো, মায়ের কথাতে রাগ করো না। তোমার যত রাগ আমার উপর প্রয়োগ করবে। আমি কিছু বলবো না। আর মা বকেছে? বকতেই পারে। মা বকেছে তার বিচার আমার কাছে চেও না যেন। মায়ের মাথায় তেল দিয়ে দেবে। মায়ের মাথায় চিরুনি করে দেবে। মায়ের কাছে বাবার গল্প শুনতে চাইবে। দেখবে মা তোমাকে আর বকবে না। ফলাফল হাতে-নাতেই পাবে, পরদিন মা তোমার মাথায় তেল দিয়ে দেবে, চিরুনি করে দেবে।
হৈমন্তী রবীন্দ্রর দিকে একবার তাকিয়ে নিলো। আশ্চর্য হয় সে, একটু রাগ করে না, একটু সন্দেহ করে না। বললো, আমার এত অন্যায়, এত ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতেও আমার উপর আপনার রাগ উঠে না?
রবীন্দ্র গুরুগম্ভীরভাবে বললো, কার উপর রাগ করবো! তোমার উপর! একটু তো ভালোবাসলেই না। আগে ভালোবাসো, রাগ করবো। অনুরাগের জন্য।
হৈমন্তী আবারও মুখ তুলে রবীন্দ্রকে দর্শন করলো আর বললো, আমার ভেতর কী হয় আমি ঠিক বুঝি না। আমি নিজের সাথে পারি না। আমার স্বস্তি নেই।
রবীন্দ্র নিষ্পলকে চেয়ে বললো, আমি জানি, তোমার অনেক অপ্রাপ্তি। কিন্তু তোমার প্রাপ্তিও কম নয়। অপ্রাপ্তির জন্য অধৈর্য হতে নেই। অপেক্ষা করতে হয়। সময় সব মানুষকে দিয়ে দেয়।
হৈমন্তী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, আমার কোনো কিছুতে মন বসে না। না আপনাতে, না সংসারে।
রবীন্দ্র বললো, মন যখন যা চায় তার জন্য আকুল হয়ো না। মন বিচিত্র রূপের। সে চাইবে, যা দেখবে তাতেই নিবিষ্ট হবে। মনকে বলবে আমি তোর দাস নই, তুই আমার দাস। মনের বাড়ন্ত চাওয়া চুপ হয়ে যাবে। তুমি খুব অস্থির, তুমি চিত্তকে বশীভূত করার চেষ্টা করো। তোমার অস্থিরতা চলে যাবে।
হৈমন্তী আজ নির্বাক। রবীন্দ্রর সব কথা তার ভালো লাগছে। বললো, আমার উপর অনেক স্বপ্ন ভর করে। অলীক স্বপ্ন। আমি অলীক স্বপ্নে মায়াচ্ছন্ন। কোনক্রমে অলীকতা থেকে বের হতে পারি না।
রবীন্দ্র বললো, জানি, আমাকে তোমার মনে ধরে না। তোমার ক্ষোভ আছে। তোমার অতৃপ্তি আছে। কিন্তু দেখো, তোমার জন্য আমার চেষ্টার কমতি নেই। তোমাকে যা এনে দিতে পারি তা আমার সক্ষমতার পরিচয়। তোমাকে যা এনে দিতে পারি না তার জন্য আমার পরিশ্রম আছে। বাড়তি কিছু প্রাপ্তির জন্য বাড়তি শ্রম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। মনের স্বাস্থ্য নষ্ট হলে পঁচতে আর কিছু বাকি থাকে না। তুমি আমাকে সেদিকেই ক্রমে ক্রমে ঠেলে দিচ্ছো।
হৈমন্তী কথাটি শুনতেই চমকে রবীন্দ্রর দিকে চাইলো। রবীন্দ্র আবার বললো, কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার যেদিন নানা কারণে মন খারাপ হয় সেদিন মস্তিষ্ককে খুব ব্যস্ত করে তুলি। বই পড়ি, লিখি, কাছের বন্ধুকে ফোন করি। আমি নিজেকে সামলে নিই। তোমার সাথে পথ চলতে হলে এভাবে নিজেকে সামলে সামলেই চলতে হবে।
হৈমন্তী মাথা নিচু করে বললো, আমার কংক্রিটের চার দেয়ালের মধ্যে ভালো লাগে না। আমি বনান্তে ঘুরবো, নদীর কাছে যাবো, হাঁসেদের খাদ্য অণ্বেষণ দেখবো। ফুলের কাছে যাবো। প্রকৃতির মায়ায় মিশবো। খালি পায়ে ঘাসের উপর দিয়ে হাটবো।
রবীন্দ্র মৃদু হেসে বললো, তুমি এসব হতাশা থেকে বলছো। আমার কারণে তোমার হতাশার শেষ নেই। তোমাকে পাওয়ার আশায় এই যে আমার লেগে থাকা তোমার ভালো লাগে না। আমি আজ কথা দিচ্ছি, আমি কখনো তোমার হাতে হাত দেবো না, যদি না তুমি হাত বাড়াও। আমি কখনো তোমাকে বুকে নেবো না, যদি না তুমি বুকে আসো। তোমায় ছুঁয়েও দেখবো না, যদি না ছোঁয়া দাও। কখনো উষ্ণ হবো না, যদি না উষ্ণতা বাড়িয়ে কাছে আসো। কখনো স্বপ্নেও দেখবো না, যদি না তুমি স্বপ্নের সারথি হও।
অফিসে যেয়ে সেই কলিগকে বর্তমান অবস্থা সব বললো রবীন্দ্র। কলিগ একগাল হেসে নিয়ে বললেন, বৌদি আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। আপনাকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন। 
রবীন্দ্র বললো, আর বলেন না। এত শক্ত মনের মেয়ে হতে পারে জানা ছিলো না। চেয়েও দেখে না। চিনেও চেনে না। চোখে তাকিয়ে দুটো কথাও বলে না। ভরদিন বাইরে কাজ করি, আমার প্রতি তার কোনো মায়াও জন্মালো না।
কলিগ বললো, কখনো তাঁর সামনে অহংকারী হয়েছিলেন? নিজেকে কী বড় করে জাহির করেছিলেন? বা রাগ করেছিলেন?
রবীন্দ্র বললো, আপনি কী আমাকে চেনেন না? আপনার কী মনে হয় আমি বড়াই করতে পারি? আমি তার সব সয়ে নিই, প্রচণ্ড রাগ উঠলেও হেসে বুক হালকা করি।
কলিগ বললো, কদিনের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসেন। যত অচেনা জায়গায় ঘুরতে যাবেন ততই দেখবেন নিজেদের মধ্যে চেনা জানা বাড়বে। অচেনার ভীড়ে আপনারা দুজনই তো দুজনের পরিচিত!
রবীন্দ্র বললো, যাবে না। বাইরে তাকে নিয়ে যেতে পারবো বলে মনে হয় না!
কলিগ আরো একটা বুদ্ধি দিলো, হাতে ব্যান্ডেজ করে বাসায় যান, দেখেন আপনার অসুস্থতা দেখে তাঁর ভেতর ছটফটানি বাড়ে কিনা!
বুদ্ধিটা রবীন্দ্রর ভালো লাগলো, কিন্তু দ্বিধান্বিত হয়ে বললো, অসুস্থ সেজে থাকা, তারপর ধরা পড়া; ছেলেমি হয়ে যাচ্ছে না?
কলিগ বললো, তবে একদিন প্রহার করেন, ভূত ছুটে যাবে। 
রবীন্দ্র বুঝতে পারলো তার কলিগ কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠেছে এ বিষয়ে। তাই আর কথা বাড়ালো না। কিন্তু কলিগ নিজ থেকেই বললো, সময় করে একদিন শ্বশুরবাড়ি যান। আপনার স্ত্রীর কোনো এক বান্ধবীকে ডেকে জানার চেষ্টা করেন আপনার স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা!
কথাটি শুনতেই রবীন্দ্র স্থির হয়ে গেলো। হৈমন্তীর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে ও মানতেই পারছে না। ভাবনাতেও কখনো নেইনি। উদ্বিগ্ন হয়ে বাড়ি এলো। তবে সহসা জানার চেষ্টা করলো না। হৈমন্তী রবীন্দ্রর ধারে কাছে এসে বসলো। আর বললো, আপনাকে বিচলিত লাগছে! 
রবীন্দ্র কোনো কথা বললো না। হৈমন্তী বললো, আমার নিজের প্রতি আমার নিজের রাগ, আমার নিজের প্রতি আমার নিজের ঘৃণা। আমার মন ভাসে, মন বসে না। আমি আর স্বপ্ন দেখতে চাই না, কিন্তু স্বপ্ন ভর করে। বিভোর করে। অতীত শুধু চারদিকে ঘোরে। অতীতের প্রতি কেনো এত মায়া আমার! অতীত কেনো আমাকে মোহমগ্ন করে রাখে? বর্তমান কেনো আমাকে মোহগ্রস্ত করতে পারে না?
রবীন্দ্র হৈমন্তীর কথাগুলো শুনে থমকে থাকে। বিষণ্ণতা গ্রাস করলো ওকে। রাজ্যের মেঘ ভর করলো মুখের উপর। ও কত বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছে কখনো এত বিমর্ষ হয়ে পড়েনি। মনমরা হয়ে ও ঘরে চলে গেলো। হৈমন্তী রবীন্দ্রর বর্তমান অবস্থাটা উপলব্ধি করলো। ও দিন ও সারারাত ভেবেছে, নানা বিষয় ভেবেছে। অপু তাকে কতটুকু মায়া দিয়ে মন ভরিয়েছিলো তারচেয়ে কম ছায়া কী রবীন্দ্র দিচ্ছে? আশার উল্কায় চড়িয়ে অপু হৈমন্তীকে দেশ পরিভ্রমণ করিয়েছিলো, রবীন্দ্র তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডও ঘুরাতে সক্ষম। যে অপু তার বিবাহের পর আর খোঁজ নেইনি, সেই অপুকে সে রোজ ভেবে ভেবে কাঁদবে কেনো? যে রোজ খোশ মেজাজে দোষ না দেখে জাগিয়ে তুলতে চায় তাকে কেনো বঞ্চিত করবে সে? এসব ভাবতে ভাবতে নিজের মনকে সে বশে আনতে ব্যপ্ত হলো। যার সান্নিধ্যে তৃপ্তি ছিলো, আনন্দ ছিলো, প্রাণস্ফূর্তি ছিলো, সাথে কলুষ হওয়ার ভয়ও ছিলো তার কথা এতকাল কেনো সে মনে গেঁথে রাখবে? যার সান্নিধ্য পেয়ে কালিন্য, মালিন্য, মনোদারিদ্র্য দূর হবে তাকে কেনো হতাশায় নিমজ্জিত রাখবে সে? সারারাত সে ঘুমালো না। ভোরেই উঠে পড়লো। সংসারের কাজে হাত দিলো। মা আর রবীন্দ্র দেখলো, আশ্চর্য হলো। কিন্তু না দেখার ভান করে বিনাশ্চর্যেই থাকলো, কারণ যে নদীর বহমান ধারায় বাঁক ফিরেছে তাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া আর তাচ্ছিল্য সমান। রবীন্দ্র অফিসে যাবে। সামনে হৈমন্তী মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে গেলো। রবীন্দ্র অপ্রস্তুত হয়ে অজানা ভাবনায় পড়লো। হঠাৎ হৈমন্তী রবীন্দ্রর বুকে গিয়ে পড়লো আর শক্ত করে তাকে ধরলো। খুব শক্ত করে ধরলো। কোনো কথা বলছে না। রবীন্দ্র হৈমন্তীকে বুক থেকে তুলে চোখের মণি বরাবর চেয়ে ভ্রূ নাচিয়ে বললো, কী! কিছু বলবে!
হৈমন্তী লাজুক হেসে বললো, কিছু না! যাও, অফিসে যাও! মন দিয়ে কাজ করবে!
প্রফুল্ল মনে রবীন্দ্র অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতেই হৈমন্তী ডাক দিলো, শোনো, ফেরার পথে একটি বকুলফুলের মালা আনবে!
মৃদু হেসে রবীন্দ্র গেট পার হয়ে গেলো। হৈমন্তী দৌঁড়ে গেটে এসে আবার রবীন্দ্রকে ডাকলো, আর শোনো, দশ টাকার বাদামও আনবে!
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে রবীন্দ্র চলে গেলো। লজ্জায় আঁচল চিবাতে চিবাতে হৈমন্তী ঘরে গেলো।
দুপুরে একটু কাজে বের হয়েছিলো হৈমন্তী। বাইরে বের হতেই সামনে দেখে অপু। অপুকে দেখেই হৈমন্তী আঁচলে মুখ ঢেকে বিপরীত পথ ধরে হাটতে লাগলো। পিছন থেকে অপু হৈম হৈম তারপর হৈমন্তী হৈমন্তী শব্দ উচ্চারণ করে বারবার ডাকলো। হৈমন্তী পিছন ফিরে একবারও তাকায়নি। দুচোখ বেয়ে তার জলের ধারা বইতে লাগলো। অনেক জল, এত জল তার চোখ থেকে কখনো ঝরেনি। কী শপথ করেই সে রবীন্দ্রকে এত শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো যে অপুকে দেখতেই চোখে এত জল এলো?

*******************************************

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

শিক্ষার সেকাল ও একাল ।। অমৃতা সাহা

শিক্ষার সেকাল ও একাল অমৃতা সাহা  শিক্ষক শব্দটির ব্যুৎপত্তি √শিক্ষ+ অক অর্থাৎ যিনি শিক্ষা দান করেন। শিক্ষক শব্দটি সংস্কৃত শিক্ষ ধাতু থেকে উদ্ভুত যার অর্থ বিদ্যা গ্রহণ করা, শেখা বা বিদ্যা দান করা। শিক্ষ ধাতুর সঙ্গে ক প্রত্যয় যোগে উৎপন্ন শিক্ষক যার অর্থ শিক্ষা সম্পর্কিত।          শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস বা আট মাস সে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী শিক্ষা লাভ করে থাকে। তারপর থেকে মা বাবাই তাকে জীবনের প্রথম পাঠ দেন। কী কী করতে হয় আর কী কী করতে নেই তাই দিয়েই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়। অনুকরণই হলো তখন তার একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম। তারপর কথা বলতে শেখা, আশেপাশের সামগ্রী চিনে নিয়ে তাদের নাম বলতে শেখা এভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।         প্রাচীন কালে পঞ্চম বর্ষে উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হতো। গুরুগৃহে বসবাস করে, ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে বাল্য ও কৈশোর কাল অতিবাহিত হতো। পুঁথিগত অধ্যয়ন, শ্রুত্বয়ন এর পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা গ্রহণ করতে হ...

Five poems ।। Prasenjit Das

  Five poems of Prasenjit Das THE FLAME IS ON Life may not be a green leaf, the dews are tears in grief. Life for many maybe cruel, give me the guts for the duel. The good times passed by me, like a humming bird in destiny. If not in life then maybe after, let life be a pleasant chapter. No, I will never give up,...never, be an example for all, forever... THE OPTIMIST Never be drowned in sorrow, as if there is no tomorrow. Tomorrow is a day uncrowned, tomorrow is a time unbound. Many things are left to be done, the path of glory has already begun. The darkness shows the light, life is nothing, nothing but a fight. You will be a winner, sooner or later, the spirit of good will fight for better. The light of honesty burns bright, even in the darkest dark of the night. A LONELY FATHER'S CALL O lonely man! O lonely man! Where is thy rugged winter coat? Bore the ravages of eighty seasons, that still makes thee soul to float. O lonely man! O lonely man! Where is thy loveth destiny? Fough...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

শিক্ষক ।। জীবন সরখেল

শিক্ষক  জীবন সরখেল   শিক্ষা চেতনা প্রসারে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ  প্রকৃতি পরিবেশ প্রাণীর   ধারক বাহক ও মান... যাঁদের স্মরণ উপস্থিতিই  কমে মিথ্যা গ্লানি  সেবায় দ্রোহেও নিরপেক্ষ  ঠেলেন সব হয়রানি। কর্ম আচরণ চিন্তন ত্যাগ  সত্য সপ্রেম নিষ্ঠায় গড়েন চিরন্তন সমাজ ভিত নীতি উদারতায়....  নিঃস্বার্থ ভাব ঠিক ভুল গুণেই  অভিজ্ঞতা দীক্ষক  বাবা মা পরিবেশ গুরুই সবার আপন শিক্ষক। __________________       জীবন সরখেল গ্রাম -বাড়াভগলদিঘী, পোস্ট -ভগলদিঘী, থানা-জয়পুর, জেলা-বাঁকুড়া। পিন-৭২২১৫৪  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

স্মৃতিকথা ।। ৺বিজয়ার চিঠি ।। ভাস্কর চৌধুরী

উৎসব শেষের শূন্যতা এখন গ্রাস করে আছে আদিগন্ত। হঠাৎ ভেসে আসা ছাতিম ফুলের গন্ধ যেমন মাতাল করে দেয় ঠিক তেমনই মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে এক না ছুঁতে পাওয়া আলোর পিপাসায়। উৎসব শেষের নিভে যাওয়া সন্ধ্যেবেলার আলোয় ম্লান হয়ে আসে জীবনের টুকরো টুকরো খুশির আমেজ।  বিসর্জনের শেষে ছেলেবেলায় গোটা গোটা অক্ষরে হলদে রঙা পোস্টকার্ড আর নীলচে-সবুজ ইনল্যান্ড লেটারে দূরের সব্বাইকে পাঠাতে হতো ৺বিজয়ার চিঠি! বয়ান মোটামুটি ওই একই ― বড়দের শুভ ৺বিজয়ার প্রনাম আর যেহেতু আমরা তখন ছোট তাই আশীর্বাদ জানানোর কেউ থাকতো না। তবুও কুঁচোকাঁচা ছোট ভাইবোনদের মনের আদর কলমের ডগায় উগড়ে দিতুম সে চিঠিতে!  ৺বিজয়ার চিঠি আসলে পুজোর ছুটির শেষে হাতের লেখা করিয়ে নেবার এক অলৌকিক ষড়যন্ত্র! ইচ্ছে নেই তবুও জোর করে ওই হাতের লেখা শুধু নয়, বানান, বাক্যগঠন সব কিছু সুকৌশলে করিয়ে নেওয়ার ফন্দি। এটা বুঝেছি অনেক পরে। আর যখন বুঝতে পেরেছি তখন কিন্তু সেই চিঠি পাঠানোর মানুষগুলো মনের মধ্যে গেঁথে গেছে। তখন যেন সত্যি সত্যি মন বলতো হোক না ওই পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ড লেটারের একচিলতে জমি, আমার খাস দখল তো থাকবে তাতে! জানেন, এখন আর কেউ ৺বিজয়ার চিঠি পাঠায় না! পুজো ...

অসবর্ণ ।। দেবাংশু সরকার

অসবর্ণ দেবাংশু সরকার       ইন্টারভিউ দেওয়ার পর অরূপের মনে হয়েছিল চাকরিটা হয়তো সে পেয়ে যাবে। বেশ ভালোভাবেই সে ইন্টারভিউতে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল। সেইসঙ্গে ক্যাশ হ্যান্ডেলের তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছিল। অরূপের মনে হয়েছিল ইন্টারভিউ বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের হয়তো অরূপের কথাবার্তা বেশ ভালো লেগেছে। বারে বারে তাদের মাথা নাড়া, মুখের হাসি দেখে অরূপের মনে হয়েছিল তারা হয়তো অরূপের প্রতি কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট। বেসরকারি চাকরি হলেও এই অফিসটা সব রকম সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, বোনাস সব রকম সুবিধা কর্মচারীরা পায়। চাকরির শেষে পেনশনের ব্যবস্থাও আছে। হয়তো সরকারি চাকরির মত বড় অঙ্কের  পেনশন এই কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা পায় না। কিন্তু পেনশন বাবদ প্রতি মাসে কিছু টাকা তাদের হাতে আসে। মাহিনাও খুব একটা খারাপ নয়। অর্থাৎ সরকারি চাকরির মত অত সুবিধা না থাকলেও, তুলনামূলকভাবে খুব একটা খারাপও নয়। কিন্তু একটাই অসুবিধা তাকে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হবে। কারণ এই অফিসটা অরূপের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন অফিসে যাতায়াত করা সম্ভ...

ডাকবাক্সের আত্মকথা ।। হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

ডাকবাক্সের আত্মকথা হারান চন্দ্র মিস্ত্রী পোস্ট অফিসে কিংবা পথের পাশে, আমরা ছিলাম চিঠিগুলোর আশে। সুখ ও দুঃখের কথা থাকত লেখা ভালোবাসার আতর যেত দেখা। মুঠোফোনের দাপট গেছে বেড়ে স্বপ্ন যত সব নিয়েছে কেড়ে। পত্র লিখে পাঠায় না কেউ মোরে ব্রাত্য জীবন কাটাই কেমন করে? ধীরে ধীরে যাচ্ছি উধাও হয়ে ভারাক্রান্ত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। কোন মানুষ কয় না আমায় ধরে - আবার তোকে নেব আপন করে। আমরা এখন বুঝে গেছি সহে প্রয়োজনের বড় কিছু নহে। সমকালের প্রয়োজনে থেকে বিদায় নিতে হবে ভূবন থেকে। ________   হারান চন্দ্র মিস্ত্রী গ্রাম ও পো: - আমতলা, থানা - ক্যানিং, জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পিন - ৭৪৩৩৩৭

শিক্ষক ।। রাফেল ইসলাম

শিক্ষক মানে রাফেল ইসলাম   শিক্ষক মানে বুকে টেনে  দুর্দিনে দুঃখ ভোলান,  শিক্ষক মানে আন্তরিকতায় শিক্ষা করেন দান।  শিক্ষক মানে বিদ্যা দিয়ে  আঁধার দূর করে,  শিক্ষক মানে স্নেহের পরশে ছাত্র জীবন ভরে।  শিক্ষক মানে আদর্শের উৎসাহে  মেলে ভবিষ্যতের দিশা,  শিক্ষক মানে দরদ দিয়ে  বাঁচিয়ে রাখে আশা।  শিক্ষক মানে গ্রীষ্মের দিনে  মস্ত বটের ছায়া,  শিক্ষক মানে নিবিড় ভালবাসার  শান্ত ঊষার মায়া।  শিক্ষক মানে জ্ঞানের আলোয়  সমাজ গড়ে তোলে,  শিক্ষক মানে সঠিক পথের  মূল দুয়ার খোলে।।    =============           নাম-রাফেল ইসলাম।  গ্রাম-বাগান বেড়িয়া (বিড়লাপুর)। পোস্ট-চককাশিপুর।  থানা-নোদাখালি।  জেলা-দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।  পিন নম্বর-৭৪৩৩১৮.

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সূচিপত্র  প্রবন্ধ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণা ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নবদ্বীপের রাস : মহাপ্রভু চৈতন্যদেব থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ।। বারিদ বরন গুপ্ত  প্রবন্ধ।। কবিতায় সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন ।। রণেশ রায় প্রবন্ধ ।। সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিপ্লবী চেতনার কবি ।। বিচিত্র কুমার কবিতা ।। পরিযায়ী বৃষ্টি ।। সন্দীপ ভান্ডারী দুটি কবিতা : চয়ন দত্ত কবিতা ।। সমঝোতা ।। বিশ্বজিৎ বাউনা কবিতা।। ভালোবাসা।। অরুণ কুমার দাঁ কবিতা।। সময়ের গতিপথে ।। কেতকী বসু গ্রন্থ   আলোচনা।। অরবিন্দ পুরকাইত ।।  গ্রন্থ : বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের  "বাংলা সাহিত্যে মনুষ্যেতর প্রাণীকেন্দ্রিক ছোটগল্পের ধারা" ছোটগল্প।। হ্যাপি বার্থডে।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা।। অন্ধকার রাত জাগে।। অঞ্জন বল অনুবাদ কবিতা।। তুমি আসার আগে।। সুস্মিতা পাল দুটি কবিতা ।। রবীন বসু কবিতা ।। নতুন শাসন ।। মানস মণ্ডল কবিতা ।। শীত ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। সাঁঝবাতি ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। চুপ কথা হৃদয়ে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য ছড়া ।। ভোর ।। বদ্রীনাথ ছোটগল্প ।। ফিরে পাওয়া ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। রূপ বদলায় ।। সুমিত মোদক কবিতা ।। এভা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

মাসের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান ।। কৃশানু ব্যানার্জী

প্রবন্ধ শিক্ষার সেকাল-একাল : এক দার্শনিক অনুসন্ধান কৃশানু ব্যানার্জী  মানবসভ্যতার ইতিহাসে শিক্ষার স্থান যে সর্বাপেক্ষা কেন্দ্রীয় ও নির্ণায়ক — এ বিষয়ে দ্বিধার অবকাশ নেই। কারণ শিক্ষা কেবল জ্ঞানের বাহনমাত্র নয় , বরং মানুষের আত্মস্বরূপের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ , যা সমাজ ও সংস্কৃতির গতিপথকে নির্ধারণ করে। কিন্তু শিক্ষা কেমন ছিল অতীতে এবং কেমন হয়েছে বর্তমানকালে — এই অনুসন্ধান শুধু ঐতিহাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচনার সীমায় আবদ্ধ নয় ; বরং এর ভেতরে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। "সেকাল" ও "একাল" — এই দুই কালের শিক্ষা পরস্পরকে নিরন্তর প্রশ্ন করে , কখনও বিরোধিতা করে , কখনও বা পরস্পরের ওপর দাঁড়িয়েই নিজের রূপ নির্মাণ করে। অতএব , শিক্ষার সেকাল-একাল তুলনায় আমাদের কেবল তথ্যের বিবরণ নয় , মানবজীবন ও সমাজচিন্তার প্রকৃত ভিত্তি উপলব্ধি করতে হবে। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষা যে একটি অনিবার্য ও মৌল প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তথাপি 'শিক্ষা' শব্দটির নিতান্ত ভৌত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা একে পূর্ণাঙ্গ উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। সংস্কৃত ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯০তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩২ আগস্ট ২০২৫

সূচিপত্র ------------- স্বদেশ-স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার কবিতা ।। অনিন্দ্য পাল স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারী বসু অবদান ।। শ্যামল হুদাতী উড়ান কথা ।। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী স্বপ্নের ভারত ।। সৌমিত্র মজুমদার আজ আর কদর নেই ।। সতুচট্টোরাম স্বাধীনতার কবিতাগুচ্ছ ।। অভিজিৎ হালদার শহিদ ব্রত ও অন্য দুটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর স্বাধীন হবো কবে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত দুটি কবিতা ।। তুষার স্বাধীনতা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ স্বাধীনতা মানে ।। পাভেল আমান বাংলা ভাষা : বাঙালি ।। অশোক দাশ বড়দি অপরূপা দেবীর জবানীতে ক্ষুদিরাম বসু ।। সমীর কুমার দত্ত স্বাধীনতা ।। কার্ত্তিক মণ্ডল আমার দেশ ।। বিপ্লব নসিপুরী ভারতমাতার বীর সন্তান ।। আশীষ কুমার চক্রবর্তী স্বাধীনতার আলো ।। অঞ্জনা মজুমদার আমরা স্বাধীন ।। রাফেল ইসলাম নতুন ভারত । কল্যাণ কুমার শাণ্ডিল্য রণ স্বাধীনতার রঙ ।। সফিউল মল্লিক স্বদেশ ।। জীবন সরখেল ভারতবর্ষ ।। নিশান বর্মা শতবর্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য স্মরণে লেখা সুকান্ত ভট্টাচার...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চেনা-অচেনা বরণীয় নারী ।। হিমাদ্রি শেখর দাস

First row (left to right): Prafulla Nalini Brahma, Shanti Ghosh, Suniti Chowdhuri and Bina Das . Second row (left to right): Kamala Dasgupta, Suhasini Ganguly, Pritilata Waddedar and Sarojini Naidu.   Third row (left to right): Abha Maity, Sucheta Kripalini, Lila Nag and Abha Gandhi. Fourth row (left to right): Indusudha Ghosh, Kalpana Dutta, Aruna Asaf Ali and Matangini Hazra. Fifth row (left to right): Basanti Devi, Renuka Ray, Phulorenu Guha and Manikuntala Sen. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে  চেনা-অচেনা বরণীয় নারী হিমাদ্রি  শেখর দাস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের সাথে মহিলারাও কখনও অন্তরালে থেকে কখনও প্রকাশ্যে এসে লড়াই করেছেন।  মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে লাঠিখেলা, পিস্তল চালানো, রাত্রে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেরানো, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, জেলে যাওয়া ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ। তবু তৎকালীন সমজে কোনঠাসা হয়ে থাকা মেয়েরাও  নিজ নিজ জায়গায় থেকে দেশের সেবা করেছেন তা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতই দুরুহ কাজ। তাঁদের মধ্যে দু একজন রাজ পরিবারের হলেও বেশির ভাগই ছিল সাধারণ ঘরের অতি স...

বাংলা ভাষা সাহিত্যে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ।। শুভ জিত দত্ত

বাংলা ভাষা-সাহিত্যে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার শুভ জিত দত্ত   বাংলা ভাষাসাহিত্যে পরোক্ষভাবে যাঁর অবদান অতুলনীয়, সেই প্রজ্ঞাবান পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮২৪ সালে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে জয়গোপাল সেখানে সাহিত্যে কাব্যের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন এবং সুদীর্ঘ বাইশ বছর অধ্যাপনা করেন। সেখানে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে পরবর্তীকালে যাঁরা বিখ্যাত হন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,মদনমোহন তর্কালঙ্কার। জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের জন্ম রেলপথের শিবনিবাস স্টেশন থেকে আট ক্রোশ পূর্বে, নদীয়া বর্তমানে , বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলাতে বজরাপুর গ্রামে এক প্রাচীন বারেন্দ্র বংশের আবাসস্থল ছিল। এই বংশ শুদ্ধাচার ও সিদ্ধশ্রোত্রীয় ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ছিল এবং পরবর্তী সময়ে বাসস্থান, নামকরণ ও কর্মসূত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটলেও তাদের গৌরবময় পরিচয় অক্ষুণ্ণ থেকেছে। এই বংশে বহু দেশপ্রসিদ্ধ মহামহোপাধ্যায় ও পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করেছেন, যাঁদের কীর্তি বাংলার জ্ঞান-সাধনার আঙিনাকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাটোর মহারাজের দ্বার পণ্ডিত কেবলরাম তর্কপঞ্চানন এবং তাঁর...

স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী

রানী গাইডিনলিউ স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু অচর্চিত কাহিনি  প্রণব কুমার চক্রবর্তী           ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু কিছু পরিচিত মুখ আর ঘটনার সমষ্টি নয় । এর গভীরে লুকিয়ে আছে অজস্র গল্প, অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ, এবং ছোট বড় অসংখ্য বিদ্রোহের কাহিনী । সংক্ষেপে এই বিশাল সংগ্রামকে তুলে ধরা কঠিন । তবে, চেষ্টা করে কিছু দিক নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক ।           আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং ব্যক্তিত্ব বলতে সাধারণত মঙ্গল পান্ডে, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিদের কথা এবং তাদের লড়াইয়ের কথা বলে থাকি । কিন্তু, এই সংগ্রামের পটভূমি রচিত হয়েছিল আরো বহু বহু আগে - যেখানে স্থানীয় কৃষক উপজাতি এবং সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ ছিল এর প্রথম বীজ । ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ আন্দোলনকে প্রায়সই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রথম লড়াই হিসাবে বলা হয়ে থাকে । তবে এর আগেও আমাদের দেশে  ফরাসি এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল । সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫ - ৫৬ সাল),  সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৭০ - ১৮...

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ওপর গদ্য || শিশির আজম

'ছাড়পত্র'ই আজ আমাদের ছাড়পত্র (তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য) শিশির আজম ~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সুকান্ত জন্মেছিলেন অগ্নিগর্ভ এক সময়ে। যখন মাতৃভূমি পরাধীন। পার্টি, মার্কসবাদ, সাহিত্য — কোন কিছুই তার কাছে আলাদা ছিল না। কবিতা একটি আর্ট ফর্ম। হ্যাঁ, সত্যি। এটা আরও সত্যি হয় যদি তা মানুষকে তাড়িত করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষকে ভালোবাসায় প্ররোচণা দেয়। এই পথটাই বেছে নিয়েছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। এর ছাপ-তাপ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছাড়পত্রে'র পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। মনে রাখা দরকার, এর পূর্বে ১৯৪০-এ প্রকাশিত হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক'। আর তারও পূর্বে ১৯৩৭-এ আমরা পেলাম দিনেশ দাসের 'কাস্তে'। নিশ্চয় এসবের উত্তাপ সুকান্তের চেতনায় ছাপ ফেলেছিল। কবিতা কখনো কখনো শ্লোগান হয়ে উঠতে পারে। হোক। এই শক্তি কবিরই আছে। নজরুলকে কি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারবো? সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা শামসুর রাহমানকে? পিকাসোর 'গুয়ের্নিকা' অথবা জয়নুলের 'দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা' কি 'আর্ট' নয়? হ্যা আপনি প্রশ্ন করতেই পা...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন: ...

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ।। চন্দন দাশগুপ্ত

স্মৃতির আলোয় শিলিগুড়ি স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট    চন্দন দাশগুপ্ত            সালটা ছিল ২০০৫। বদলীর অর্ডারটা পেতেই মন ভাল হয়ে গেল। গত তিনবছর আমি জলপাইগুড়ি জেলার শ্রমদপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলাম। এবার আমাকে বদলী করা হয়েছে শিলিগুড়ির স্টেট লেবার ইন্সটিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টরের পদে। আমার বাড়িও শিলিগুড়িতে। সুতরাং আরো ভাল করে কাজ করা যাবে।         এই স্টেট লেবার ইন্সটিটিউট ( সংক্ষেপে এস.এল.আই ) ১৯৫৪ সালে কলকাতায় কাঁকুরগাছিতে স্থাপিত হয়। ১৯৯৫ সালে এর একটি শাখা খোলা হয় শিলিগুড়িতে। প্রথমে কলেজ পাড়ার ভাড়া বাড়িতে থাকলেও ১৯৯৮ সালে এটি চলে আসে শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর চা বাগানের পাশে, পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের গাছপালা ঘেরা অনবদ্য প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত নিজস্ব বাড়িতে। এটি মূলতঃ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রম দপ্তরের আধিকারিক, পরিদর্শক এবং অন্যান্য কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাছাড়া এখানে অত্যন্ত সুলভে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ারের একটি এক বছরের পোস্ট...

শব্দ ।। সনৎকুমার নস্কর

শব্দ সনৎকুমার নস্কর  কিছু কিছু শব্দ থাকে সুইচের মতো।   হাত দিলেই দপ্ করে জ্বলে ওঠে ব্যঞ্জনার আলো।  তখন দেখে নিই অন্তর-বাহির                  গহন আঁধারে ঢাকা পথ   শব্দ সে পথের সঙ্গী হয়৷     উপনিষদের কবি শব্দকে বলেন 'শব্দব্রহ্ম',  যখন সে দিগন্তবিস্তারী ---                    কথাটার মানে খুঁজে পাই সেসময়   গর্ভের গভীরে উচ্চারিত ধ্বনি জাগিয়ে তোলে                            আমূল  আর্তনাদ৷   শব্দেই কি শব্দের শেষ?   তারও কি নেই আত্মার মতো                       জীবনের অন্তহীন পথ?   এক হৃদয় থেকে আর এক হৃদয়ে                     সে তো করে ক্লান্তিহীন পরিক্রমা  আমাদের বাসনা-বিশ্বে সে তোলে ঝড়  আবেগমায়া দেয় ছড়িয়ে বাক্ স্পন্দের পর  অবশ্য...