Skip to main content

গল্প // হৈমন্তীর মন // সৌমেন দেবনাথ


হৈমন্তীর মন

সৌমেন দেবনাথ 


চোখে কাজল এঁকে, ঠোঁটে লাল প্রলেপ বসিয়ে, উন্মুক্ত কেশের উপর বকুলফুলের মালা গেঁথে, অলংকারে সর্বাঙ্গ আচ্ছন্ন করে হৈমন্তীর স্বাভাবিক শ্রীকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে বিনাশ করার জন্য। চির নীরব হৃদয়ের মধ্যে একটা অসীম অব্যক্ত ক্রন্দন, দুই চক্ষের পত্র পল্লবের বাঁধা ডিঙিয়ে অশ্রু বের হয়ে এলো। চক্ষু দুটি ক্রোধাগ্নি ব্যক্তির মতো লাল-রক্তিম হয়ে গেছে, নাক সর্দি লাগা লোকের মতো লালিমা হয়ে গেছে। এতে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বরং বিকশিতই হয়েছে। যেমন পরিপূর্ণ বয়স, তেমনি পরিপূর্ণ সৌন্দর্য। যেন শরৎকালের রোদের মতো কাঁচা সোনার প্রতিমা, সেই রোদের মতোই দ্বীপ্ত, উদ্বীপ্ত; তার দৃষ্টি দিনের আলোকের ন্যায় মুক্ত, উন্মুক্ত; নীরব শান্ত নদীর মতো শান্ত, নিস্তব্ধ। দীঘল কেশের উপর বকুলফুলের মালা হেলে দুলে খেলছে। ঘ্রাণে ঘরটা স্বর্গের রাজধানী অমরাবতীতে পরিণত হয়ে আছে। বিশ্বকর্মা অতিশয় সলজ্জ সজীব সৌন্দর্যের এই মেয়েটিকে মাত্র নির্মাণ করে যেন জগৎ মাঝে ছেড়ে দিয়েছেন। বয়স ঠিক করা মুশকিল। শরীরটি ডাগরের ন্যায় বিকশিত কিন্তু মুখটি এত কাঁচা লাগে যেন রোদের তাপ, কাজের চাপ, কষ্টের কালি বা চিন্তার চিহ্ন তাকে লেশমাত্রও স্পর্শ করতে পারেনি। সে যে যৌবনের বনে পা ফেলে মৌরানী হয়ে গেছে এখনো নিজের কাছে সে খবর যেন পৌঁছেনি। 
হৈমন্তীর রূপের উপর পিতামাতার একমাত্র ভরসা। বরপক্ষ যদি হৈমন্তীর সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে বিনাপণে গ্রহণ করেন তবেই পিতামাতার রক্ষা। জলের কাদায় বেড়ে উঠা জলপদ্মকে তাঁরা ডাঙায় রোপণ বা স্থানান্তর করতে যাচ্ছেন। রূপধন্যা ধরণীর মানুষের কাছে রূপের কদর খুব বেশি। তাই অপরূপ রূপবতী হৈমন্তীর বরপক্ষকে মন ভোলানোর জন্য এত সাজার প্রয়োজন মোটেও ছিলো না। একটা অতি নিগূঢ় মায়াবিনী চিত্র বা আভা তার মুখ জুড়ে বিরাজ করছে। মুখশ্রী সম্পর্কে অধিক কিছু কী বলবো! বনশ্রীর শুভশ্রী মেখে আছে মুখমণ্ডল জুড়ে, লাগে দেবশ্রী, অতুল্য মুখশ্রী, রূপশ্রীতে তার জয়জয়কার। কেবল মুখাবয়বে এই একটি অসামান্যতা বা ঘাটতি আছে যে, দেখলেই ঐ দ্বিধা জাগবে যেন বনের ত্রস্ত হরিণী। এই একটি মেয়েকে স্রষ্টা এত যত্নে, এত মহিমা ঢেলে, মনের মাধুরী মিশিয়ে, আপন খেয়ালে ফুলের মত সুকুমার করে নির্মাণ করেছেন যে দেখলেই বিস্ময় জাগে। তারপর জন্ম তার দরিদ্রতার সংগ্রাম প্রকোষ্টে। কিন্তু এই সংগ্রাম জীবনের আঁচই চেহারায় রূপের চেয়ে লাবণ্যকেই বাড়িয়েছে। সৌন্দর্যে বিবেক বশে, সৌন্দর্য বিবেক নাশে, সৌন্দর্য সীমিতই কী শ্রেয় নয়! হৈমন্তীর সৌন্দর্য কী বাড়াবাড়ি রকমের নয়? যাকে বলা যেতে পারে ঈশ্বরের বেশিবেশি। ওর সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ জনের অভাব নেই, বিমুখ জনের অভাবও নেই। অন্যায় রকমের এই সৌন্দর্য যে কারো মনে হিংসার জন্ম দেবে। আবার সৌন্দর্যে ভরা মানবীর কী অভাব ধরাতলে? পুরুষ চায় মেয়েদের রূপে ও মনে একত্রে মাধুর্যময়তা যেটা হৈমন্তীর মাঝে মোটেই কম নয়। রূপ মাধুর্যে কত বেশি আগুয়ান হৈমন্তী, হয়ত হৈমন্তী জানেই না বা নিজে জানার চেষ্টাও করেনি। বিধাতাপ্রদত্ত রূপ আর রূপের বারতা নিয়ে অহমিকা প্রকাশের মাঝে আত্ম-আহম্মকী ছাড়া কিছুই নেই, হয়ত হৈমন্তী মনে প্রাণে সেটাই ধারণ করে। বিধাতা নিজের আনন্দে গড়ে, নিজের খেয়ালে আবার ভাঙে, নিজের হেয়ালে আবার কাড়ে। 
হঠাৎ হৈমন্তীর ডাগর দুটি চোখ মোটা মোটা জলের ফোঁটায় আবার ভরে গেলো। চোখের জলের যেন কোনো দামই নেই, ও ঝরিয়েই চলেছে। মনের মানুষের নিষ্পাপ মুখের প্রতিচ্ছবি চোখে কেবলই ভাসছে। চিন্তায় হৈমন্তী অনাবৃষ্টির দিনে ফুলের কুঁড়িটির মত একেবারে বিমর্ষ হয়ে পড়েছে, নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে। নব জোয়ারের তেজে ঝকমক তনুলতাতে নিস্তেজতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নবরোপিত চারা জল না পেলে যেমন নেতিয়ে পড়ে, হৈমন্তীর অবস্থা এখন তেমন। মুখে গাঢ় একটা চিন্তার রেখা। পলকহীন ভাবে যেদিকে তাকাচ্ছে সেদিকেই একদৃষ্টে চেয়ে থাকছে। পাশে বেশ কজন সখী তাকে ঘিরে মজা করছে। কিন্তু তার মনের ভেতর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে জানছে না বৃক্ষরাজি, জানছে না স্রোতস্বিনী নদী; সেখানে মানুষের বোঝার সাধ্য কই!
কনে দেখতে বরপক্ষ এসে উপস্থিত। বারান্দায় তাঁদের বসতে দেয়া হলো। হৈমন্তীর হৃদয়ে প্রকম্পন শুরু হলো। নিজের সৌন্দর্যকে সে গালি দিচ্ছে, কেননা তাঁরা তো তাকে অপছন্দ করে যাবার কারণ পাবেন না। প্রারম্ভিক কথা সেরে হৈমন্তীকে ডাকা হলো। সখীরা তাকে অতি যতনে রেখে গেলো। নতুন আত্মীয়দের সাথে রবীন্দ্র ছাড়াও দুজন যুবকও ছিলো। ও দুজন যুবকের নজর মাটিতেই আর পড়ে না। সলজ্জ তারা, তবুও নির্লজ্জের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে। চেয়ে দেখতে নেই মানা। মেয়ে দেখতে এসে লজ্জায় না দেখার লোক তারা নয়। স্বপ্নেও এমন নারী তারা দেখেনি যেন! টকটকে লাল শাড়িতে হৈমন্তীকে লাগছে লাল পরী। বারান্দাটাও রক্তবর্ণ হয়ে গেছে। ছিপছিপে চেহারায় বিদ্যুতের চমক। চোখে ধাঁধাঁ লাগে। কপালে কালো টিপ, চোখে কাজলের রেখা মুখটিতে দিয়েছে চমৎকার মুগ্ধতা। এক যুবক শাড়ির উপরে যে জরির রশ্মি ঝলমল করছে এক মুহূর্তের মধ্যে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। দেখলেই মন আনমনা হয়। মন বলে দেখছো না কেনো, স্বর্গ থেকে দেবী সম্মুখে নেমে এসেছে। রক্তের ন্যায় রক্তিম পদপল্লব। খুব সুন্দর একটা ভঙ্গি নিয়ে চেয়ারে বসেছে। হাত দুটো হাঁটুর উপর। ঐ হাতের দিকে নজর নিক্ষিপ্ত করে হৈমন্তী বসে আছে। এক বৃদ্ধ মাথা তুলতে বললেন। চোখ দুটো খুলতে বললেন। হরিণীনয়না হৃদয় হরণা।দৃষ্টি শক্তির স্বচ্ছ আলো জ্বলজ্বল করছে, মুখের মধ্যের আকর্ষণীয় একটি। দেখে এক যুবক কী একটা বিস্মিতসূচক শব্দ উচ্চারণ করলো। তা শুনে হৈমন্তী তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ঠেকলো শাণ দেয়া ছুরির মতো। ঘোমটা মেলতে বললেন অন্য আর এক বৃদ্ধ। ঐ চুলে চমক দিচ্ছে ভ্রমরকৃষ্ণ কালো বর্ণ। একটু দাঁড়াতে বললেন। উচ্চতায় অন্যতম। দশ জনের মধ্যে দাঁড়ালে বোঝা যাবে ঐ তো হৈমন্তী। সরল সোজা প্রশ্নের কিছু উত্তর দিলো। কী তার মায়াবী মুখের বচন! মধুমিশ্রিত উক্তি প্রাণ হরণ করে। এবার হেটে ঘরে চলে যেতে বললেন। হৈমন্তী পায়ের নূপুর বাজিয়ে নিক্বণে নিক্বণে ঘরে চলে গেলো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্র সূক্ষ্মভাবে হৈমন্তীকে পর্যবেক্ষণ করেছে। যে দুজন যুবক ছিলো তাদের অন্তরদ্বয় ছটফট শুরু করলো। আর একটু সময় থাকতো! রূপমুগ্ধ মন রূপ দেখে তৃপ্ত হয় না। শান্ত হয় না। দেখলে চোখের জ্যোতি বাড়ে, মনের আরাম বাড়ে, প্রাণের আরাম বাড়ে।
হৈমন্তীকে তাঁরা পছন্দ করেছেন। অবশ্য পছন্দ না হবার কারণ তাঁরা খুঁজে পাননি। কারণ খোঁজার চেষ্টাও করেননি। এক টাকার কাঁচা পয়সা পড়ে থাকা দেখলে মানুষেরা ফেলে যান না, তাঁরা হৈমন্তীকে ফেলে যাবেন ভাবাও দুষ্কর। পণবিহীন তাঁরা রাজি। হৈমন্তীকে যে পাবে সাথে পণ চাইবে এমন অবিবেচক নয় সে। দিন তারিখ নির্ধারিত হলো। জলের থেকে মাছ উঠানো হলে যেমন মাছ ছটফট করে হৈমন্তীর অস্থির মনটাও তেমনি ছটফট করছে। পুঁটির প্রাণ হলে মরেই যেত। তাকে এই অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রশালা থেকে কোনো এক অজানা বন্দীশালায় প্রেরণের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। প্রকৃতিতে যে সয়, কংক্রিটে সে রয় না। হৈমন্তী প্রকৃতির দেবী, উন্মুক্ত এই আকাশ তলেই তার রূপের পূর্ণ পরিচয়, তাকে কোনো রাজপ্রাসাদের রানী হলে মানাবে না। এ্যাকুয়ারিয়ামে মাছ যতই সুন্দর, সেটা মাছের স্বাভাবিকতা নয়। স্বাভাবিকতাতেই প্রকৃত সৌন্দর্য ফোঁটে। সোনার ফুলদানির চেয়ে বাগিচাতেই ফুলকে বেশি আকর্ষণীয় লাগে। যে ফুল বাগিচায় বাড়ে, টবে সে ম্রিয়মাণ হবেই। হৈমন্তীর যার সাথে বিবাহ হতে যাচ্ছে সে হৈমন্তীর মন পাবে, না রক্তে মাংসে গড়া হৈমন্তীকে পাবে? তার হৃদয় সে তো এই খোলা পরিবেশে বিলিয়ে দিয়েছে। বনের পক্ষী কূজন বন্ধ করে হৈমন্তীর মিষ্টিমিশ্রিত কণ্ঠের গান শোনে, বনের গাছপালা কম্পন থামিয়ে অবাকদৃষ্টে ঐ চন্দ্রময় বদনের দিকে চেয়ে থাকে। সন্ধ্যায় তরুচ্ছায়াঘন নির্জন পথ তার পদধূলি পেয়ে, এত দেরি করার অপরাধ থেকে ক্ষমা করে দেয়। হৈমন্তীর সব অপরাধ আরও একজন ক্ষমার দৃষ্টে দেখে। অবশ্য ক্ষমা না করেও পারে না, কেননা মনের মানুষের অভিমান ভাঙানোর ক্ষমতা হৈমন্তীর প্রবল। আর হৈমন্তীর মুখপানে না তাকিয়ে অভিমান করে থাকা কী সম্ভব? অলোকসুন্দরী ফুলকুমারী হৈমন্তীর হৃদয় মন্দিরে যে আসন পেয়েছে সে অপু। হৈমন্তীকে দর্শনমাত্রই অপুর মেঘমুক্ত আকাশে শরতের সূর্য কিরণ ঘটে। অপু অবাক হয়, বিস্ময়ে অভিভূত হয়। মনের মলিনতা দূরীভূত হয়। চকিত চেয়ে থাকে। পুলকোচ্ছ্বাসে চিত্ত বিমোহিত হয়ে যায়। মনের মধ্যে যার ছবি আঁকা সেই ছবি যদি সম্মুখে আসে, ছবির মত অবিচল চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকে, ঐ মায়াবিনী চোখের ভাষা যদি তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তবে অপুর কঠিন হৃদয়ে প্রস্রবণ বয়ে যেতে কেনোইবা দেরি করবে! অপু হৈমন্তীকে যতবার বুকে জড়িয়ে নিয়েছে ততবারই ভেবেছে, আমি সত্যই কী হৈমকে বক্ষ পিঞ্জরে ডানা দিয়ে বেঁধেছি, না স্বপ্ন দেখছি! এ যে দুর্লভ, আমি তাকে সুলভে পেয়েছি। 
দুর্লভ্যকে সুলভে পেলে পাওয়াতে খটকা লাগে। 
অপুর সৌন্দর্যময়, আলোকময়, সংগীতময় রাজ্যে কখনো কখনো এমন ভাবনাও উদিত হয়। আবার ভাবে, না, হৈম আমার ঐশ্বর্যের উজ্জ্বল মূর্তি। আমার প্রাণ প্রতিমা। একে অন্যের একে অপরের নয়নের মণি। 
পরম পাওয়ার মধ্যেও দ্বিধা থাকে, কারণ পরম পাওয়াতে বিশ্বাস স্থাপিত হতে চায় না।
যেদিন অপুর সাথে হৈমন্তীর প্রথম দর্শন হয় সেদিন হৈমন্তী তৃণশয্যায় শয়নে ছিলো। একটি তৃণ ছেদন দাঁতে পিষ্ট করতে ব্যস্ত ছিলো। ছাদসদৃশ আম গাছ তাকে ছায়া প্রশান্তি প্রদান করছিলো। ও যেন কাননের পোষা হরিণ। কানন মাঝের সৌন্দর্যে ডুবে থাকতে পছন্দ করে। আগন্তুক শিকারী অপু সেদিন হৈমন্তীর সম্মুখে পড়ে যায়। হৈমন্তীকে দেখামাত্রই অপুর ফাগুনের রোদের কথা মনে পড়ে। একে সে যেভাবে হোক শিকার করবেই। প্রথম দেখাতে অপুকেও হৈমন্তীর মনে ধরেছিলো। শ্যামলা রঙের অপুর ভ্রূ জোড়া খুব ঘন, চোখ দুটো পোষা প্রাণীর মতো। পাখি শিকার নেশা হলেও চোখে শিকারী ভাবটা নেই। হৈমন্তীর দিকে বিনাসংকোচে তাকিয়ে আছে। দেখতে নেহাত ভালো মানুষের মত। হৈমন্তী অপুকে দর্শনমাত্র উঠে বসে। পিঠের বেণি করা চুল সম্মুখ বুকের উপর আছড়ে পড়ে। নিমেষ নয়নে অপুকে দেখে নজর নামিয়ে নেয়। অপু স্তম্ভিত হয়ে গিয়ে ভেবেছিলো, বিধাতা, আমাকে যেন ও শত্রু না ভাবে, কত মায়াবিনী ও, কত মায়ায় মোড়া তার ঐ চোখ, ঐ চোখে যদি শত্রু বলে বিবেচিত হই, তবে সত্য বলে পৃথিবীতে আর কিছুই থাকবে না। তোমাকে জয় করার প্রবল ইচ্ছা আমার পেয়ে বসেছে। তোমার ঐ অপরূপ রূপ-মাধুর্যের ভাগিদার হওয়ার আমি কী যোগ্য!
অপু চমকে উঠে বাস্তবতায় ফেরে। সম্মুখে আর নেই সেই হঠাৎ দেখা মায়া-হরিণী। ঐ যে নেশা পেয়ে বসেছিলো অপুকে। শিকারের আশায় নিয়ত তাই এদিকেই তার যাত্রা থাকতো। দুদিন পর পর না দেখতে পেয়ে অপু ভেবেছিলো, বিধাতা কী আমাকে আলেয়ার আলোয় ডুবালো?
তৃতীয় দিন থেকে দেখা নিয়মিত হতে শুরু করে। কেউ কারো সাথে কথা বলে না। কিন্তু দুজনের দেখা ঠিকই হয়। দুজনের দেখা কেনোই হবে সেটাও প্রশ্ন! অন্যের হৃদয় জয়ের সুতীব্র ক্ষমতা ছিলো অপুর। ছলে বলে নয়, কুট কৌশলে নয়, হৃদয়ের ঐশ্বর্য দিয়ে অপু আকর্ষিত করে ফেলে হৈমন্তীর। কত এসেছে অপু, দাঁড়িয়ে দেখেছে দূর থেকে, কত কথা হয়েছে মনে মনে, হত না কথা মুখে। প্রত্যহ প্রথম দেখাতেই এক অমিয় হাসি দিত অপু। অপুর হাসিতে হেসে উঠতো হৈমন্তী। পালিয়ে ঘরে এসে ঐ হাসি মুখের ছবি নয়ন মাঝে জাগিয়ে সারারাত স্বপ্নের মালা গাঁথতো। এরপর থেকেই অপু তার হৃদয় মন্দিরের হৃদয় দেবতা। বনপাখি শিকারে এসে মনপাখি শিকার করে ফেলে অপু। মনপাখি বনদেবতাকে শপথ করিয়েছে আর যেন কখনো বনের উড়ন্ত বিহঙ্গকে শিকার না করে।
বরপক্ষ দিনক্ষণ পাকা করে যাওয়ার পর থেকেই হৈমন্তীর ঐ স্বতঃস্ফূর্ত মনে কেবলি অস্থিরতা বিরাজ করছে। মা বাবাকে বলতে চাচ্ছে, তোমরা আমাকে নির্বাসন দিও না। এই মুক্ত পরিবেশের প্রকৃতি দেবতার বক্ষ থেকে ছিন্ন করে আমাকে কোনো বদ্ধ পরিবেশে প্রেরণ করো না। 
হঠাৎ হৈমন্তীর অপুর সেই ঢলঢল দুখানি বড় বড় চোখ, কালো কালো তারা, ঘনকৃষ্ণ পল্লব, স্থির স্নিগ্ধ দৃষ্টির কথা মনে পড়ে গেলো। অপুর দর্শন না থাকায় এ কদিনে বিকশিত পুষ্পটি জীর্ণ হয়ে গেছে। আজ বকুলতলের তৃণবুকে সন্ধ্যাক্ষণে প্রতিমার মত দাঁড়িয়ে ছিলো। কিশোরী হৃদয়ের সবটুকু অংশীদার হয়েও কেনো অপু দূর বাস করছে? তখনকার হৈমন্তীর মনের ভাষাকে লেখায় প্রকাশ অসম্ভব ছিলো। 
রবীন্দ্রর আবদ্ধ প্রকোষ্টে হৈমন্তীর আজ থেকে যুগল বাসের যাত্রা শুরু। উন্মুক্ত আকাশের মুক্ত পক্ষীকে সে খাঁচায় বন্দী করলো। সে মন্ত্র বলে হৈমন্তীকে পেলো। এবার শুভদৃষ্টির প্রাক্কাল। রবীন্দ্র হৈমন্তীর লম্বা ঘোমটা খুলে ঝড়ের মতো কেঁপে উঠলো। একদিন দেখে সে অতৃপ্ত ছিলো। দেখার নেশায় তাই পেয়ে বসেছিলো।  এখন থেকে প্রত্যহ অহর্নিশ দেখে দেখে তৃপ্তি নেবে। দেখার মাঝেও দেখার বাকি থেকে যায়, হৈমন্তীকে দেখলে সেটাই বোধ হয়। চন্দ্রময় বদনের ঝলকে পুষ্পশয্যার ঘর আলোকিত হয়ে উঠলো। হৈমন্তীর রমণী হৃদয় থেকে কী এক অভূতপূর্ব শোভা, কী অভাবনীয় লাবণ্য বিচ্ছুরিত হচ্ছে! জগদাত্রীর মত রূপ, একি সত্যি বাস্তবিক! রবীন্দ্র হৈমন্তীর এ রূপকে সংগায়িত করতে পারছে না। রূপের কী বর্ণনা হয়! রূপের কী বর্ণনা করা যায়! হৈমন্তীর হাত দুই ধরতেই রবীন্দ্র বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলো। চমকে উঠে রবীন্দ্র নিজেকে সামলে নিলো। ভাবলো, আগে মন জয়, পরে হাত। মগজ জয় করলে পুরো অবয়ব মেলে। 
নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে রবীন্দ্র মনে মনে হাসলো। মন্ত্রবলে হৈমন্তীর সব পাওয়া সম্ভব নয় রবীন্দ্র বুঝে ফেলেছে। তবে যতটুকু পেয়েছে তাতেই আপাতত সন্তুষ্ট। হৈমন্তীর ভালোবাসা থেকে যদি সে বঞ্চিত হয় তবে তার সান্ত্বনার কিছু আর থাকবে না। অভাগাদের একজন হয়ে যাবে।
অপুর আসতে অনেক দেরিই হয়েছে। ঝড় থেমে গেছে আর চিহ্ন রয়ে গেছে। পুরো কাননের গাছপালা হৈমন্তীর অনুপস্থিতিতে আছাড়ি পিছাড়ি খেয়েছে। সেই পূর্বের বনশ্রী আর নেই। বাগিচাই নতুন কোনো ফুলও ফোঁটেনি। ফুটন্ত ফুল গুলোও মাথা নুয়ে আছে। যেন ওরা অনশন করেছে। নেই ভ্রমরের গুঞ্জণ ধ্বনি। হিল্লোলে তরুপল্লব কাঁপছে না। প্রকৃতি যেন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। অপুর বুঝতে আর বাকি থাকলো না। প্রকৃতি দেবী প্রকৃতিকে ছেড়ে চলে গেছে। ফুঁটো ফুটবলের মতো অপুর মনটা চুপসে গেলো। অপুর জীবনের প্রাণ প্রতিমা হৈমন্তী অপুর জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে। যে ছিলো সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের মানুষ, যাকে ঘিরে দীঘল স্বপ্নের জাল বোনা, সেই বনদেবী, কাননশ্রীর কানন দেবী হৈমন্তীকে অপু যে হাজার লক্ষ অপরিচিত মানুষের মধ্যে হারিয়ে ফেললো। অপুর আশা ভরা প্রেম আকাশে মুহূর্তের মধ্যে মেঘ এসে রাজত্ব শুরু করলো। অমাবস্যার ঘোর আঁধারে তার চন্দ্রালোকপ্লাবিত অসীম আকাশ নিমজ্জিত হয়ে গেলো। যাকে দেখলে নক্ষত্রলোকের মতো মনের মধ্যে আলোকপুঞ্জ জ্বলজ্বল করে উঠতো তাকে হীনা হৃদয় আকাশ ভাবনাহীন। ওদিন ও সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐ বকুলতলের নিচে অপেক্ষায় ছিলো। অপেক্ষা তার নিরাশায় পর্যবেশিত হয়।
হৈমন্তী বদ্ধ ঘরে সারাক্ষণই অপুর বিশ্বাস ভরা সরল মুখের কথা ভাবে। আর অফিসে রবীন্দ্র অস্থিরভাবে ভাবে হৈমন্তীকে। এদিকে অপু বসে বসে হৈমন্তীর নানান বিপদের আশঙ্কা করে, সকল বিপদ থেকে সে যেন সুস্থ থাকে। হৈমন্তী রবীন্দ্রর থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। সামাজিক এই বন্ধন ছেদ করা ছেদন দাঁতের মত সহজ নয়। রবীন্দ্র হৈমন্তীর সকল মনোবাসনা পূরণ করতে পারে, তাই বলে এটা সে কোনক্রমেই করতে পারে না। খেয়ালি মনের খেয়ালি বাসনা পূরণ করা যায়, তাই বলে বন্ধন বিচ্ছিন্ন করা তো যাবে না। রবীন্দ্র অফিস থেকে বাড়ি এলো। ভেবেছিলো দু হাত প্রসারিত করে ডাকবে আর ওমনি হৈমন্তী দৌঁড়ে এসে বুকে মুখ লুকাবে। ভাবনা ভাবনায় থাকে। হৈমন্তী সাজেনি। কপালে সেই বাসী লাল রঙের টিপ। সিঁথিতে গতকালের সিঁদুর বিশ্রী রূপ নিয়েছে। গতকালের সেই লাল রক্তিমা শাড়িটা এখনো অঙ্গে। মুখে এমন একটি ভাব রয়েছে যে ভাবটি শুধু বলছে তার অন্তরটা অপুর শূন্যতায় ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে। হৃদয়ের ভিতর তার যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, কে তা বোঝার চেষ্টা করবে! প্রভাতের শিশিরস্নাত স্নিগ্ধতা, পৃথিবীর সবুজ, আকাশের জ্যোৎস্না কিছুই যে অপুর শূন্যতায় তার ভালো লাগে না। শিশিরধৌত পূজার ফুলের মত পবিত্র ছিপছিপে তার দুটি চোখ কেবলি এই নির্দেশ করছে, অপু, তুমি আমাকে এই বদ্ধ প্রকোষ্টে প্রেরণের পূর্বে কেনো বাঁধা দিলে না! যাকে দেখামাত্রই গায়ের রক্ত টগবগ করে উঠে সেই স্বামী নামক বস্তুটি যে তোমার হৈমন্তীকে চোখের আড়াল হতে দেয় না! এ কেমন যন্ত্রণা! 
রবীন্দ্রর অবশ্য অধিকার আছে। রবীন্দ্র অধিকার ফলাতে যায়ও না। তবে রবীন্দ্রর বাড়ি একটাই কাজ প্রথম এবং পরম প্রিয়তমা প্রাণসখী স্ত্রীর ঐ অলৌকিক অনিন্দ্য রূপ দর্শন করা। রূপে আঁখি হরে, মন ভরে। রবীন্দ্রর আঁখী হরে, মন ভরে না। 
অন্তর অন্তর হৈমন্তীর চোখে জল চলে আসে। রবীন্দ্র হৈমন্তীর অশ্রুপূর্ণ কাতর চক্ষু দেখে বিহ্বল হয়ে যায়, বলে, কেনো কান্না করছো?
রবীন্দ্রর কৌতূহলী মুখখানি হৈমন্তীর চন্দ্রসদৃশ মুখবদনের দিকে ফেলফেলিয়ে চেয়ে থাকে। ভাবে, মা বাবার জন্য মন পোড়ে, দুদিন গেলে সব সয়ে যাবে। অন্তর যত না পিছে পড়ে পুড়তে চায়, তারচেয়ে আগামীর পথে হাটতে চায় বেশি। পথ পানে চেয়ে তাপিত হতে হতে নারী তো একদিন পিতৃগৃহে যেতে অনাগ্রহী হয়ে উঠে, স্বামীগৃহই স্বামীগৃহ থেকে আপনাগৃহ হয়ে উঠে। হয়ে উঠে আপনালয়, আপন বিচরণের স্বর্গক্ষেত্র।
ওদিন রাতে ছিলো ফুটফুটে জ্যোৎন্না। অশ্রুহীন অনিমেষ দৃষ্টিতে অপু চন্দ্রের দিকে চেয়েছিলো। হৈমন্তীকে উদ্দেশ্য করে বলছে, হৈম, তুমি আমাকে সহস্র হস্ত গভীর গহ্বরে কেনো ফেলে দিয়ে গেলে! তোমার বিচ্ছেদ স্মৃতি চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে আমাকে জ্বালাচ্ছে। আমার হৃদয় সাগরে যে তুমি গোপন শোকের মন্দির নির্মাণ করে দিয়ে গেলে! পূর্ণিমার উজ্জ্বলতা জীবন থেকে কেড়ে নিয়ে কেনো আমাকে অমাবস্যার কালিমা দিয়ে গেলে? আমার জীবনে তোমার ভালোবাসা কোনো দিনই অতীত হবে না। আমার অন্তরের আহাজারি কী তোমার অন্তঃপুরে পৌঁছে যায়নি? তোমার প্রতি আমার অনুরাগের আকর্ষণ তোমাকে কী আকর্ষিত করে আমার কাছে তোমাকে টেনে আনবে না? তুমি কী তোমার অন্তরকে পাথর বানিয়ে নিয়েছো?
রবীন্দ্র রাতে বাসায় ফিরে দেখে হৈমন্তী শয়নের জন্য প্রস্তুত। একটু আলাপ করতে পারে না রবীন্দ্র। প্রথমে হৈমন্তীকে ও একবার চোখ মেলে দেখে নিলো। তারপর বললো, তুমি আমার সাথে কথা না বলে কিভাবে থাকতে পারো?
হৈমন্তী বললো, রাত এখন। আমি ঘুমে যাবো। আপনার সাথে কিচ্ছা করতে ভালো লাগে না।
রবীন্দ্র নাছোড়বান্দার মতো করে বললো, এখনও কী অপরিচিত আমি তোমার কাছে? আমি তোমার সবচেয়ে চেনা, সবচেয়ে জানা। আমি তোমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন। তোমার কাছে আমার কোনো অপ্রকাশ্য নেই। আমার সাথে কথা বলতে তোমার এত দ্বিধা কেনো? কেনো এত ইতস্তত তুমি?
বলেই রবীন্দ্র হৈমন্তীর ডান হাত শক্ত করে ধরে বসলো। বললো, আজ ঘুমাবো না। তোমাকে ঘুমাতে দেবো না।
হৈমন্তী হাত ছুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো না। যেন অনুভূতিহীন। স্পন্দনহীন। রবীন্দ্র হাত ছেড়ে দিলো। নিরীক্ষণ করলো হৈমন্তীকে। অবুঝের মতো লাগছে। রবীন্দ্র উষ্ণ হয়ে উঠলো। ঠোঁট দুটো ফণা তুলে উদ্যত হলো হৈমন্তীর গালে ছোবল দিতে। যা ভাবনা সেই কাজ। হৈমন্তী এবারও অনুভূতিহীন, স্পন্দনহীন। রবীন্দ্র নিরাবেগের হৈমন্তীর পাশ থেকে উঠে গেলো।
কাঁথাটা টেনে হৈমন্তী ঘুমের দেশে গেলো। সৌন্দর্য কত সুন্দর, সৌন্দর্য থেকে সুন্দরের দ্যুতি না অবজ্ঞার বিচ্ছুরণ বের হয় তা সে টের পাচ্ছে। রূপ দেখে বিমুগ্ধের কিছু নেই, এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে। রূপে বিমুগ্ধ হতে চাওয়া এখন বিদগ্ধ হচ্ছে।
হৈমন্তীর মন জেগে ছিলো। চোখ খোলা ছিলো না। রবীন্দ্র এসে হৈমন্তীর ঘুমন্ত মুখে হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর বাহু দ্বারা আঁকড়ে ঘুমালো। হৈমন্তী রবীন্দ্রর হাত সরিয়ে দিতে গেলে বাঁধা পেলো। হৈমন্তী বললো, কী মুশকিল, এ কেমন উপদ্রবের পাল্লাতে পড়লাম!
রবীন্দ্র বললো, স্বামীর ছোঁয়া স্ত্রীর আকণ্ঠ তৃষ্ণার জল। স্বামীর পরশ স্ত্রীর জন্য স্বর্গের বাতাস। স্বামীর ঘ্রাণগন্ধে থাকা পবিত্র সুগন্ধী জলস্নানের চেয়ে শ্রেয়। স্বামীর দুহাতের মাঝে স্ত্রীর সুরক্ষিত নিরাপত্তা ও সোহাগের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। স্বামীর চোখের মায়াতে হারানোতেই স্ত্রীর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। স্বামীর ডেরাতেই স্ত্রীর সুখের বলয়। আমাতে আশ্রয় নাও, প্রশান্তি পাবে। আমাতে হারাও, হারানো বৃথা যাবে না। আমাতে সুখ খোঁজো, সুখের মণিমুক্তা পাবে। শুধু একবার জেদের কাছে হেরে যাও, আমাতে বিলীন হও। আমি তোমার মন চাই, আর কিছু নয়।
হৈমন্তী বললো, বিরক্তির সীমা থাকা দরকার। আপনার কর্মকাণ্ড রীতিমত উত্যক্তের পর্যায়ে চলে গেছে। সহ্য হচ্ছে না আর।
রবীন্দ্র হৈমন্তীকে ছেড়ে দিলো। নানা কিছু ভাবলো। ভেবে হৈমন্তীর মন বোঝার চেষ্টা করলো। মনে মনে ভাবলো, নিশ্চয় ওর মনে কোনো অশান্তি বিরাজ করছে।
মুখে বললো, তোমার মনে কী কোনো অশান্তি বিরাজ করছে? তোমার অশান্তি থাকতে পারে আমি বিশ্বাস করি না। একবার আমার বুকে লুকাও, যদি শান্তি না পাও পৃথিবীর আর কোথাও সুখ পাবে না। তোমার সুখ আমার কাছেই, পৃথিবীর তাবৎ সুখ।
কথাগুলো শুনে হৈমন্তী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। আর বললো, সুখ? পৃথিবীর তাবৎ সুখ? বাচ্চা বচন!
হৈমন্তীর তাচ্ছিল্যে মাখা কথাতে রবীন্দ্র কান দিলো না, বললো, তুমি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছো, আমার থেকে পালিয়ে তুমি আসলেই কী শান্তি পাবে? আমার থেকে তুমি যত সরবে, তত তোমার বিপর্যয়। আমার কাছে যত ধেয়ে আসবে, তত তোমার জয়, বিস্ময়। চারদিকে চেয়ে দেখো স্বামী-স্ত্রী শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে কেমন সুন্দর বেঁধে বেঁধে অটুট শৈলী মালার মতো বসবাস করছে। তুমি আমাকে নির্ভয়ে বিশ্বাস করো, তোমার হৃদয় মৃণালে নিঃসঙ্কোচে আমাকে আসন দাও, তোমার প্রতি আমার অনুরাগ ঠুনকো নয়।
বলেই রবীন্দ্র আবার হৈমন্তীর হাত দুখান ধরে বললো, তুমি চাও না আমার পেশাগত জীবনে উন্নতি হোক?
হৈমন্তী বললো, শুধু আপনার না, পৃথিবীর সব মানুষ তাঁদের জীবনে উন্নতি করুক। কিন্তু আমি কী আপনার পেশাগত জীবনে উন্নতির অন্তরায়?
রবীন্দ্র বিরক্তি প্রকাশ করে বললো, ওহ, তোমার উদাসীনতা, নিরাসক্ততা, মলিনতা আমার যাবতীয় কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তুমি বোঝো না আমার জীবনে তোমার কতো প্রভাব?
হৈমন্তীকে টেনে বুকে নিলো রবীন্দ্র। রবীন্দ্রর বুকে লেপ্টে গেছে হৈমন্তী। ভাবলো, এ বিধির কোন নিয়ম, কেমন নিয়ম! কোথাকার অচেনার করালগ্রাসে আজীবন বন্ধী থাকতে হবে! আর কেনোইবা এনি আমার সাথে ছেলেমানুষি করবেন! আমার সুুন্দর সরল জীবনে এ বালাই কেনো এসে জুটলো!
পরদিন সাপ্তাহিক ছুটি। রবীন্দ্রর বুক সেলফ দেখতে দেখতে দুটো ডায়েরি পেলো হৈমন্তী। রবীন্দ্র দেখে ফেলতেই ডায়েরি বন্ধ করে ফেললো।  রবীন্দ্র দেখে বললো, বন্ধ করছো কেনো? পড়ো। আমার চিন্তা চেতনা ভাবনা দিয়ে কল্পনার অলিতে-গলিতে ঘুরে ঘুরে একটি প্রতিমা নির্মাণ করেছি। কবিতায় গল্পে যতটুকু তার রূপকে ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছি, মনের মত করে তা পারিনি। যতটুকু ভেবেছি ততটুকু না হয় লিখতে পারিনি কিন্তু তার থেকেও যে আমি বেশি পেয়েছি এবং তা বাস্তবিক। আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আমার হৈমন্তী। হৈমন্তী নামের আগে আমি সব সময় 'আমার' যোগ করি। আমার হৈমন্তী। আমার কল্পনার সব উপমা তোমার রূপের কাছে মাথা নত করেছে। আমি তোমার অন্তরের অন্তঃস্থলের একমাত্র একজন হতে চাই।
হৈমন্তী ডায়েরি দুখান রেখে দিলো। বললো, ডায়েরি পড়ার ইচ্ছা আমার নেই। আপনার অনুরাগমিশ্রিত কথামালা পড়ার ন্যূনতম শখ আমার নেই। 
রবীন্দ্র হৈমন্তীর দেমাগী কথাতে কর্ণপাত না করে বললো, আমি যখন অফিসে যাই তোমার মুখটা ভাবতে ভাবতে যাই। যখন অফিস থেকে ফিরি তখনও তোমার মুখের ছবি মনের মাঝে আঁকতে আঁকতে ফিরি। আমি জানি আমার হৈমন্তী আমার অপেক্ষাতে থাকে না। আমি জানি আমার হৈমন্তীর সুন্দরতম হৃদয়ে আমার ঠাঁইটুকু হয়নি। আমি জানি যার মাঝে হারিয়েছি, আমাতে সে হারায়নি।
হৈমন্তী তীর্যক চোখে চেয়ে বললো, আমাকে না পাওয়া নিয়ে আপনার আক্ষেপের শেষ নেই। খেদোক্তির শেষ নেই। আমি কখন আপনার ছিলাম না?
রবীন্দ্র বললো, একপ্রকার হয়ে আছো তুমি। তোমাকে তো পাওয়া হইনি আমার! যে পাওয়াতে তৃপ্তি নেই, সে পাওয়া পাওয়া নয়। যে পাওয়াতে দ্বিধার মিশ্রণ সে পাওয়া পূর্ণাঙ্গ পাওয়া নয়।
হৈমন্তী উচ্চস্বরে বললো, আমি তো আপনার দেয়া চার দেয়ালের মাঝেই। দূর আকাশের কোনো তারা নই, ইচ্ছাশীল দেখেন, ইচ্ছাশীল স্পর্শ করেন। আবার ইচ্ছামত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নিজে ভাবেন, নিজে বাজেন, নিজেই কাঁদেন। বেশি বেশি, একটু বেশি বেশিই।
দুপুরের দিকে হৈমন্তীর মা হৈমবতী আর বাবা শরৎ মেয়েকে দেখতে এসেছেন। অচেনার এই ভীড়ে হৈমন্তী কেবলি কান্না করতো, বাবা মাকে দেখে তার খুশি দেখে কে? তৎক্ষণাৎ তার মনের আকাশ সতেজ হয়ে উঠলো। 
রবীন্দ্রর মা বাসন্তী হৈমন্তীর মাকে হৈমন্তী সম্বন্ধে সব খুলে বললেন। বাড়ির কারো সাথে ঠিকমতে মেশে না, ঠিকমত কথা বলে না, ঘরের টুকটাক কাজেও মনোনিবেশ করে না। সংসারকে নিজের না ভাবলে সংসার কী গোছাতে পারে?
রবীন্দ্রর মায়ের কাছে মেয়ে সম্বন্ধে এমন কথা শুনে হৈমন্তীর মা বাবা দুজনের মন খারাপ হয়ে গেলো। হৈমন্তীর কাছে যেয়ে তার প্রমাণ হাতে নাতে পেলেন। হৈমন্তী অকপটে স্বীকার করে বলে, মা, বাবা, আমার এখানে ভালো লাগে না। মন টেকে না। আমার গ্রাম ভালো। আমি গ্রামে যাবো।
হৈমবতী বললেন, মেয়ে বলে কী! এখন তো এ ঘরই তোর সব! এটাই তোর সংসার স্বর্গ।
বাবা মা মিলে হৈমন্তীকে অনেক বুঝ দিতে লাগলেন। শ্বাশুড়ীকে সেবা শুশ্রূষা করতে বললেন। স্বামীর কথা মত চলতে বললেন। স্বামীকে দেবতাজ্ঞানে তাকে ভুল বুঝতে, কষ্ট দিতে বারণ করলেন। স্বামীকে আপন করে, তার কথার অবাধ্য যেন না হয় সে উপদেশও দিলেন।
পরদিন বাবা মা চলে গেলেন। হৈমন্তীর মন আবার খারাপ হয়ে গেলো। তার দু চোখের উদাসীন দৃষ্টি কোনো এক অতিদূরবর্তী চিন্তারাজ্যে ভ্রমণ করছে। নানান ভাবনা তার মনকে বিচলিত করে তুললো। রবীন্দ্র অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে হৈমন্তী মেঘলা আকাশের মত বিষণ্ন ভাব ধরে বসে আছে। রবীন্দ্র ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুঁটিয়ে বললো, মা বাবা চলে গেছেন। তাই বলে গোমড়া মুখে থাকবে? একলা থাকলে মন ভার হবেই।
রবীন্দ্র হৈমন্তীর হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। রবীন্দ্র হৈমন্তীর সম্মুখে বসে বললো, একা থাকি না, একা থাকা যায় না। তোমাকে এজন্য একা থাকতে মানা করি। একা থাকতেও দেবো না। একা থাকলে চিন্তার পরিসীমা বাড়ে। কিন্তু সেই চিন্তার বেশির ভাগই নেগেটিভ। আমি সব সময় বিশ্বাস করি তুমি আমি মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবো তার মত সুন্দর সিদ্ধান্ত তোমার আমার জীবনে আর নেই।
হৈমন্তী বিমর্ষ নেত্রে চেয়ে বললো, চুপ! এত বকেন কেনো? বাচাল? জ্ঞানীরা তো এত কথা বলেন না! 
রবীন্দ্র চুপ হয়ে গেলো।
অফিসে এক কলিগকে রবীন্দ্র খুব বিশ্বাস করে। সংসার জীবনের অস্থিরতার কথা তার সাথে শেয়ার করলো। তার কলিগ বললো, এ নিয়ে ভাববেন না। অচেনা অজানা মানুষকে চিনতে জানতে সময় লাগে। বৌদিকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে। আবার যদি বেশি সময় দিলে ঘটনা বিপরীত ঘটে তবে সময় দেয়া কমিয়ে দিতে হবে। বেশি সময় দিলে বন্ধনে যেমন কাঠিন্য বা মালিন্য আসে, সময় কমিয়ে দিলেও সান্নিধ্য আকাঙ্ক্ষা বা তৃষ্ণা জাগে। 
রবীন্দ্র বিমর্ষচিত্তে বললো, আমি সব দিক দিয়ে হেটেছি। ফলাফল শূন্য। একান্ত বিপদে পড়েই কথাগুলো আপনাকে বলেছি।
কলিগ বিজ্ঞজনের মতো করে বললো, আচ্ছা, বৌদি কী পছন্দ করেন তাঁর অজ্ঞাতে জানার চেষ্টা করে তাঁকে এনে দেবেন, বিস্মিত হবেন। হীরা-মাণিক্যের চেয়ে হয়ত অনেকের কাছে রাস্তার দশ টাকার বাদামই দামী। বৌদির কাছ থেকে জানার দরকার নেই। তাঁর আকাঙ্ক্ষাটা বোঝার চেষ্টা করেন। আর ভালোবাসি ভালোবাসি বলার দরকার নেই, ভালোবাসেন সেটা কর্ম দিয়ে বুঝিয়ে দেন।
রবীন্দ্র এক পলকে চেয়ে বললো, কঠিন কাজ!
কলিগটি বললো, হ্যাঁ, কঠিন ও জটিল কাজ। আবার সহজ, আজ বাসায় ফেরার সময় একটা ফুলের স্টিক কিনে নিয়ে যান।
রবীন্দ্র একটু হেসে বললো, হ্যাঁ, আপনার বৌদির ফুল পছন্দ। যেদিন তাকে প্রথম দেখতে যাই খোলা চুলে বেলিফুলের মালা ঢেউ খেলছিলো।
অফিস থেকে ফেরার পথে কয়েক রকমের ফুল কিনলো রবীন্দ্র। জীবনে কখনো ফুল ক্রয় করেনি। কোন বিপদে পড়লে সেই ফুল কিনতে হয়! তা হাতে করে বহন করতেও কেমন ইতস্তততা কাজ করছে। হৈমন্তীকে দিতে যেয়েও সেকি ইতস্তততা। কোথায় রাখবে এই খোঁজে হৈমন্তী চলে গেলো। হৈমন্তীকে পরোক্ষে যেতে দিলো না রবীন্দ্র। দেখলো পিছনের জানালা দিয়ে সে ফুল ফেলে দিচ্ছে। মন বিমর্ষে দাঁতে ঠোঁট কাটলো রবীন্দ্র। রবীন্দ্রর সামনে দিয়েই হৈমন্তী হেটে চলে যাচ্ছিলো। ক্রুদ্ধ হয়ে রবীন্দ্র হৈমন্তীর হাত ধরতে যেয়ে ব্যর্থ হলেও কাপড়ের আঁচল ধরলো। হৈমন্তী এমন বাঁধা পেয়ে দাঁড়ালো ঠিকই, কিন্তু পিছনে ফিরে তাকালো না। পরে রবীন্দ্র আঁচল ছেড়ে দিলো। অফিসের অপ্রয়োজনীয় কাগজ বিনে ফেলতে যেয়ে রবীন্দ্র দেখলো তার আনা বাদাম বিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। রবীন্দ্রর মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।
ছেলে বৌয়ের মধ্যে সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি মা বাসন্তী বুঝতে পারেন। বাসন্তী বললেন, সুখ ভালো লাগে না?
হৈমন্তী চুপ থাকে। বাসন্তী আবার বলেন, রূপের গরব? মা দুর্গার ছেলে কার্তিকের মতো স্বামী হলে খুশী হতে? আমার ছেলের মত ধৈর্যশীল আর সহ্যশীল স্বামী পেয়েছো, নতুবা আরো কয়েকটা স্বামীর ঘর এতদিন করা হয়ে যেত তোমার!
মাকে মিষ্টি-মধুর গরম দিয়ে হৈমন্তীকে ডেকে ঘরে নিলো রবীন্দ্র। হৈমন্তীর প্রস্থান কালে মা শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন, বেশি সুখে থাকলে শান্তি হয় না। সুখের জ্বর ভর করেছে!
হৈমন্তী ঘরে আসতেই রবীন্দ্র বললো, মায়ের কথাতে রাগ করো না। তোমার যত রাগ আমার উপর প্রয়োগ করবে। আমি কিছু বলবো না। আর মা বকেছে? বকতেই পারে। মা বকেছে তার বিচার আমার কাছে চেও না যেন। মায়ের মাথায় তেল দিয়ে দেবে। মায়ের মাথায় চিরুনি করে দেবে। মায়ের কাছে বাবার গল্প শুনতে চাইবে। দেখবে মা তোমাকে আর বকবে না। ফলাফল হাতে-নাতেই পাবে, পরদিন মা তোমার মাথায় তেল দিয়ে দেবে, চিরুনি করে দেবে।
হৈমন্তী রবীন্দ্রর দিকে একবার তাকিয়ে নিলো। আশ্চর্য হয় সে, একটু রাগ করে না, একটু সন্দেহ করে না। বললো, আমার এত অন্যায়, এত ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতেও আমার উপর আপনার রাগ উঠে না?
রবীন্দ্র গুরুগম্ভীরভাবে বললো, কার উপর রাগ করবো! তোমার উপর! একটু তো ভালোবাসলেই না। আগে ভালোবাসো, রাগ করবো। অনুরাগের জন্য।
হৈমন্তী আবারও মুখ তুলে রবীন্দ্রকে দর্শন করলো আর বললো, আমার ভেতর কী হয় আমি ঠিক বুঝি না। আমি নিজের সাথে পারি না। আমার স্বস্তি নেই।
রবীন্দ্র নিষ্পলকে চেয়ে বললো, আমি জানি, তোমার অনেক অপ্রাপ্তি। কিন্তু তোমার প্রাপ্তিও কম নয়। অপ্রাপ্তির জন্য অধৈর্য হতে নেই। অপেক্ষা করতে হয়। সময় সব মানুষকে দিয়ে দেয়।
হৈমন্তী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, আমার কোনো কিছুতে মন বসে না। না আপনাতে, না সংসারে।
রবীন্দ্র বললো, মন যখন যা চায় তার জন্য আকুল হয়ো না। মন বিচিত্র রূপের। সে চাইবে, যা দেখবে তাতেই নিবিষ্ট হবে। মনকে বলবে আমি তোর দাস নই, তুই আমার দাস। মনের বাড়ন্ত চাওয়া চুপ হয়ে যাবে। তুমি খুব অস্থির, তুমি চিত্তকে বশীভূত করার চেষ্টা করো। তোমার অস্থিরতা চলে যাবে।
হৈমন্তী আজ নির্বাক। রবীন্দ্রর সব কথা তার ভালো লাগছে। বললো, আমার উপর অনেক স্বপ্ন ভর করে। অলীক স্বপ্ন। আমি অলীক স্বপ্নে মায়াচ্ছন্ন। কোনক্রমে অলীকতা থেকে বের হতে পারি না।
রবীন্দ্র বললো, জানি, আমাকে তোমার মনে ধরে না। তোমার ক্ষোভ আছে। তোমার অতৃপ্তি আছে। কিন্তু দেখো, তোমার জন্য আমার চেষ্টার কমতি নেই। তোমাকে যা এনে দিতে পারি তা আমার সক্ষমতার পরিচয়। তোমাকে যা এনে দিতে পারি না তার জন্য আমার পরিশ্রম আছে। বাড়তি কিছু প্রাপ্তির জন্য বাড়তি শ্রম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। মনের স্বাস্থ্য নষ্ট হলে পঁচতে আর কিছু বাকি থাকে না। তুমি আমাকে সেদিকেই ক্রমে ক্রমে ঠেলে দিচ্ছো।
হৈমন্তী কথাটি শুনতেই চমকে রবীন্দ্রর দিকে চাইলো। রবীন্দ্র আবার বললো, কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার যেদিন নানা কারণে মন খারাপ হয় সেদিন মস্তিষ্ককে খুব ব্যস্ত করে তুলি। বই পড়ি, লিখি, কাছের বন্ধুকে ফোন করি। আমি নিজেকে সামলে নিই। তোমার সাথে পথ চলতে হলে এভাবে নিজেকে সামলে সামলেই চলতে হবে।
হৈমন্তী মাথা নিচু করে বললো, আমার কংক্রিটের চার দেয়ালের মধ্যে ভালো লাগে না। আমি বনান্তে ঘুরবো, নদীর কাছে যাবো, হাঁসেদের খাদ্য অণ্বেষণ দেখবো। ফুলের কাছে যাবো। প্রকৃতির মায়ায় মিশবো। খালি পায়ে ঘাসের উপর দিয়ে হাটবো।
রবীন্দ্র মৃদু হেসে বললো, তুমি এসব হতাশা থেকে বলছো। আমার কারণে তোমার হতাশার শেষ নেই। তোমাকে পাওয়ার আশায় এই যে আমার লেগে থাকা তোমার ভালো লাগে না। আমি আজ কথা দিচ্ছি, আমি কখনো তোমার হাতে হাত দেবো না, যদি না তুমি হাত বাড়াও। আমি কখনো তোমাকে বুকে নেবো না, যদি না তুমি বুকে আসো। তোমায় ছুঁয়েও দেখবো না, যদি না ছোঁয়া দাও। কখনো উষ্ণ হবো না, যদি না উষ্ণতা বাড়িয়ে কাছে আসো। কখনো স্বপ্নেও দেখবো না, যদি না তুমি স্বপ্নের সারথি হও।
অফিসে যেয়ে সেই কলিগকে বর্তমান অবস্থা সব বললো রবীন্দ্র। কলিগ একগাল হেসে নিয়ে বললেন, বৌদি আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। আপনাকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন। 
রবীন্দ্র বললো, আর বলেন না। এত শক্ত মনের মেয়ে হতে পারে জানা ছিলো না। চেয়েও দেখে না। চিনেও চেনে না। চোখে তাকিয়ে দুটো কথাও বলে না। ভরদিন বাইরে কাজ করি, আমার প্রতি তার কোনো মায়াও জন্মালো না।
কলিগ বললো, কখনো তাঁর সামনে অহংকারী হয়েছিলেন? নিজেকে কী বড় করে জাহির করেছিলেন? বা রাগ করেছিলেন?
রবীন্দ্র বললো, আপনি কী আমাকে চেনেন না? আপনার কী মনে হয় আমি বড়াই করতে পারি? আমি তার সব সয়ে নিই, প্রচণ্ড রাগ উঠলেও হেসে বুক হালকা করি।
কলিগ বললো, কদিনের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসেন। যত অচেনা জায়গায় ঘুরতে যাবেন ততই দেখবেন নিজেদের মধ্যে চেনা জানা বাড়বে। অচেনার ভীড়ে আপনারা দুজনই তো দুজনের পরিচিত!
রবীন্দ্র বললো, যাবে না। বাইরে তাকে নিয়ে যেতে পারবো বলে মনে হয় না!
কলিগ আরো একটা বুদ্ধি দিলো, হাতে ব্যান্ডেজ করে বাসায় যান, দেখেন আপনার অসুস্থতা দেখে তাঁর ভেতর ছটফটানি বাড়ে কিনা!
বুদ্ধিটা রবীন্দ্রর ভালো লাগলো, কিন্তু দ্বিধান্বিত হয়ে বললো, অসুস্থ সেজে থাকা, তারপর ধরা পড়া; ছেলেমি হয়ে যাচ্ছে না?
কলিগ বললো, তবে একদিন প্রহার করেন, ভূত ছুটে যাবে। 
রবীন্দ্র বুঝতে পারলো তার কলিগ কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠেছে এ বিষয়ে। তাই আর কথা বাড়ালো না। কিন্তু কলিগ নিজ থেকেই বললো, সময় করে একদিন শ্বশুরবাড়ি যান। আপনার স্ত্রীর কোনো এক বান্ধবীকে ডেকে জানার চেষ্টা করেন আপনার স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক আছে কিনা!
কথাটি শুনতেই রবীন্দ্র স্থির হয়ে গেলো। হৈমন্তীর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে ও মানতেই পারছে না। ভাবনাতেও কখনো নেইনি। উদ্বিগ্ন হয়ে বাড়ি এলো। তবে সহসা জানার চেষ্টা করলো না। হৈমন্তী রবীন্দ্রর ধারে কাছে এসে বসলো। আর বললো, আপনাকে বিচলিত লাগছে! 
রবীন্দ্র কোনো কথা বললো না। হৈমন্তী বললো, আমার নিজের প্রতি আমার নিজের রাগ, আমার নিজের প্রতি আমার নিজের ঘৃণা। আমার মন ভাসে, মন বসে না। আমি আর স্বপ্ন দেখতে চাই না, কিন্তু স্বপ্ন ভর করে। বিভোর করে। অতীত শুধু চারদিকে ঘোরে। অতীতের প্রতি কেনো এত মায়া আমার! অতীত কেনো আমাকে মোহমগ্ন করে রাখে? বর্তমান কেনো আমাকে মোহগ্রস্ত করতে পারে না?
রবীন্দ্র হৈমন্তীর কথাগুলো শুনে থমকে থাকে। বিষণ্ণতা গ্রাস করলো ওকে। রাজ্যের মেঘ ভর করলো মুখের উপর। ও কত বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছে কখনো এত বিমর্ষ হয়ে পড়েনি। মনমরা হয়ে ও ঘরে চলে গেলো। হৈমন্তী রবীন্দ্রর বর্তমান অবস্থাটা উপলব্ধি করলো। ও দিন ও সারারাত ভেবেছে, নানা বিষয় ভেবেছে। অপু তাকে কতটুকু মায়া দিয়ে মন ভরিয়েছিলো তারচেয়ে কম ছায়া কী রবীন্দ্র দিচ্ছে? আশার উল্কায় চড়িয়ে অপু হৈমন্তীকে দেশ পরিভ্রমণ করিয়েছিলো, রবীন্দ্র তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডও ঘুরাতে সক্ষম। যে অপু তার বিবাহের পর আর খোঁজ নেইনি, সেই অপুকে সে রোজ ভেবে ভেবে কাঁদবে কেনো? যে রোজ খোশ মেজাজে দোষ না দেখে জাগিয়ে তুলতে চায় তাকে কেনো বঞ্চিত করবে সে? এসব ভাবতে ভাবতে নিজের মনকে সে বশে আনতে ব্যপ্ত হলো। যার সান্নিধ্যে তৃপ্তি ছিলো, আনন্দ ছিলো, প্রাণস্ফূর্তি ছিলো, সাথে কলুষ হওয়ার ভয়ও ছিলো তার কথা এতকাল কেনো সে মনে গেঁথে রাখবে? যার সান্নিধ্য পেয়ে কালিন্য, মালিন্য, মনোদারিদ্র্য দূর হবে তাকে কেনো হতাশায় নিমজ্জিত রাখবে সে? সারারাত সে ঘুমালো না। ভোরেই উঠে পড়লো। সংসারের কাজে হাত দিলো। মা আর রবীন্দ্র দেখলো, আশ্চর্য হলো। কিন্তু না দেখার ভান করে বিনাশ্চর্যেই থাকলো, কারণ যে নদীর বহমান ধারায় বাঁক ফিরেছে তাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া আর তাচ্ছিল্য সমান। রবীন্দ্র অফিসে যাবে। সামনে হৈমন্তী মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে গেলো। রবীন্দ্র অপ্রস্তুত হয়ে অজানা ভাবনায় পড়লো। হঠাৎ হৈমন্তী রবীন্দ্রর বুকে গিয়ে পড়লো আর শক্ত করে তাকে ধরলো। খুব শক্ত করে ধরলো। কোনো কথা বলছে না। রবীন্দ্র হৈমন্তীকে বুক থেকে তুলে চোখের মণি বরাবর চেয়ে ভ্রূ নাচিয়ে বললো, কী! কিছু বলবে!
হৈমন্তী লাজুক হেসে বললো, কিছু না! যাও, অফিসে যাও! মন দিয়ে কাজ করবে!
প্রফুল্ল মনে রবীন্দ্র অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতেই হৈমন্তী ডাক দিলো, শোনো, ফেরার পথে একটি বকুলফুলের মালা আনবে!
মৃদু হেসে রবীন্দ্র গেট পার হয়ে গেলো। হৈমন্তী দৌঁড়ে গেটে এসে আবার রবীন্দ্রকে ডাকলো, আর শোনো, দশ টাকার বাদামও আনবে!
মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে রবীন্দ্র চলে গেলো। লজ্জায় আঁচল চিবাতে চিবাতে হৈমন্তী ঘরে গেলো।
দুপুরে একটু কাজে বের হয়েছিলো হৈমন্তী। বাইরে বের হতেই সামনে দেখে অপু। অপুকে দেখেই হৈমন্তী আঁচলে মুখ ঢেকে বিপরীত পথ ধরে হাটতে লাগলো। পিছন থেকে অপু হৈম হৈম তারপর হৈমন্তী হৈমন্তী শব্দ উচ্চারণ করে বারবার ডাকলো। হৈমন্তী পিছন ফিরে একবারও তাকায়নি। দুচোখ বেয়ে তার জলের ধারা বইতে লাগলো। অনেক জল, এত জল তার চোখ থেকে কখনো ঝরেনি। কী শপথ করেই সে রবীন্দ্রকে এত শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো যে অপুকে দেখতেই চোখে এত জল এলো?

*******************************************

Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

রেজাল্ট ।। সৈকত মাজী

রেজাল্ট সৈকত মাজী শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।    " মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক  দিলো শুভ্রাংশু।    " কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।     " ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো"  কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।      " না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও"  মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।      শুভ্রাংশু...

রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি

রাই আর বাবা অদিতি চ্যাটার্জি রাই-র জীবনে বেশ কিছু ভালো লাগা আছে তার মধ্যে একটা হলো সন্ধ্যার সময় তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দেওয়া ।" আজ যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে বেশ ভিড়,নির্ঘাত 'তেলে ভাজা ' প্রেমীরা।" আপন মনেই ভাবে ও, কিন্তু বসার ঘরে সুমন আর আঁখি এতো জোরে 'হল্লা গোল্লা ' করছে তালতলার জমজমাট রাস্তার দিকে আর মন দিতে পারছে না রাই।  পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়ায় রাই, দেখে ক্লাস ফোরের মেয়ে এতোটা ঝগড়া করছে সুমনের সাথে , "বাপ রে, কবে এতোটা কথা শিখলো মেয়ে! কিভাবে কথা বলছে?? কোঁকড়া চুল ঝাঁঝিয়ে,গোলগাল হাত নেড়ে " ...মেয়ে কে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাই। এদিকে আঁখি বলছে, "ধুত্ বাপী তুমি কিচ্ছু পারো না, তুতাই-র বাবা, পিসাই, মামু সবাই কত ভালো করে খেলতে পারে , না আমি তোমার সাথে খেলবো না।" কাতর চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সুমন বলে ,"আচ্ছা তুই আমাকে শেখা, দ্যাখ আমি কার জন্য আলিপুরদুয়ার থেকে পনেরো দিন পর পর কলকাতায় আসি বল!"  ঐ টুকু মেয়ে কথা প্রায় না শুনেই ঘরে চলে গেল রাই-র চোখের সামনে, সুমন একবার হেসে বাথরুমের দিকে এগো...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী

বস্তু, চেতনা এবং  কবি সজল চক্রবর্তী  "যেখানে পৌঁছায় না রবি,, সেখানে পৌঁছে যান কবি।" এই ছোট্ট কবিতা টি অনেক পুরনো  এবং বহু পরিচিত, তথাপি এর তাৎপর্য এখনো হারায় নি। তবে, কথা হ'চ্ছে -আমরা তো  রবি-কবিকে একত্রেই পেয়ে যাই আমাদের ঋষি-প্রতিম কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। আর তখনই জেনে যাই উপরোক্ত ছোট কবিতার প্রণিধানযোগ্যতা ।  ... এবার শুনে নেয়া যাক, ঋষি-প্রতিম কবির মুখ নিঃসৃত বাণী:- "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি যাই ...." অর্থাৎ আমাদের প্রিয়তম কবি অনায়াসে পৌঁছে যান সৃষ্টির অসীমে , যা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এখানে কবির চেতনা সুদূর প্রসারী! ... প্রকৃত প্রস্তাবে কবি অতিন্দ্রীয় জগতের এক নাগরিক। তাঁর কাছে তাই চেতনা বা চৈতন্যেরই প্রাধান্য। ...এখন আসছি, বস্তু এবং চেতনার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে।  ... আমি একজন অতি সাধারন মানুষ, তাই এই ব্যাপারটাকে কবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ক'রছি। তবে আমার সামান্য জ্ঞান থেকে একটা সাধারণ কথা সেরে নি'। আমরা সাধারণত ব'লে থাকি-- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। প্রকৃত অর্থে কি তাই ? আসলে সূর্য যেদিকে ওঠে ,আমরা  সেই দিকটাকে নামাঙ্কিত ক...

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি  (পর্ব—সাত) অরবিন্দ পুরকাইত স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০, নববর্ষ ১৪৩১ ও কার্তিক ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল। নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তা বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে। আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল। অখেজো/অখেজে — অকেজো থেকে। আদরের তিরস্কার হিসাবেই মূলত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পাজি। অচিমিতি — (উচ্চারণ ওচিমিতি) আচমকা, হঠাৎ। অদীয় — প্রচুর, অজস্র। অদ্বিতীয় থেকে ক...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায়

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত রণেশ রায় ভূমিকা দর্শনের ইতিহাসে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক মানবচিন্তার গভীরতম প্রশ্ন। অধিবিদ্যা ভাবকে মুখ্য ধরে, বস্তুকে গৌণ বলে মনে করে। বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন—বস্তুই মুখ্য এবং চেতনা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ যখন প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল, তখনই সে বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিল—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর এই দৃশ্যমান জগতের বাইরে কিছু আছে কি? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিয়েছিল দর্শনের দুই বিপরীত স্রোত—ভাববাদ আর বস্তুবাদ। ভাববাদ বলেছিল—"ভাবই প্রথম," আর মার্কস বললেন—"না, বস্তুই প্রথম।" এই দুই প্রান্তের মাঝখানে আমি দেখি এক সেতুবন্ধন, যেখানে বস্তু, স্নায়ু ও চেতনা একে অপরকে গড়ে তোলে, আর তাদের এই ত্রিত্বের নৃত্যেই সৃষ্টি হয় জীবন ও কল্পনার জগৎ। ভাবববাদ এক সর্বশক্তিমান শক্তির কল্পনা করে যা এই বস্তুজগতের স্রষ্টা। আর এখান থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় ভাবধারার সৃষ্টি। আমার এই প্রবন্ধে আমি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক আলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি দেখাবার চেষ্টা করবো কিভাবে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুজগৎ বস্তু ও চেতনাকে সংযুক্ত করে এবং কল্পলোকের জন্ম দেয়...

চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার

চাঁদে জীবন  শমীক সমাদ্দার                           চন্দ্রযান দুরন্ত তৈরি, রকেটের উপর ভর করে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরিয়ে মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে  স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রাযান চাঁদের মাটিতে পা রাখবে সময়ের কাউন্ট ডাউন চলছে। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ স্পেসস্কাই গাবেষণা কেন্দ্র কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান অতল গভীরতায় বাসা বাঁধে। পরিচয়টা দিয়ে দিলাম এই স্পেসসিপে রয়েছে তিনজন নভোচর, একজনের নাম সাইমন আর এক জনের নাম রেমন্ড, আর এদের সঙ্গে একজন মহিলা আছে তার নাম মেরিনা। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। চন্দযান দুরন্ত চাঁদের পূর্ব -পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবতরণ করেছে। আলো আঁধারের গভীরতায় বড় বড় পাথরের পিণ্ড, চাঁদের সার্ফেসের উপরে পাথর জল দেখা যায়। জমাট বাঁধা অক্সিজেন আর কার্বনডাই অক্সাইড। ওরা এখানে এসেছে এক রহস্য উদ্ঘাটন করতে। যে স্থানে ওরা অবতরণ করেছে সেখানে ১০ বছর আগে ওরা এসেছিলো। রুশ সরকার ওদের দেশের ছাত্র ছাত্রী কে মহাকাশে চাঁদে পাঠাতে চায়। ওরা কেন এসেছে সেটা এখনো অধরা। সাইমনের বর্...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

মাসের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

দিদৃক্ষা ।। রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী

  দিদৃক্ষা রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী 'কাল একবার দেখা হতে পারে?' দশমীর দুপুরে খাটে আধশোয়া হয়ে নিজের ফোনটা ঘাঁটছিল দেবমাল্য; হোয়াট্‌সঅ্যাপের সার্চ বক্সে  র‍্যান্ডম সিক্যুয়েন্সে ক'খানা ডিজিট ইনপুট করতেই বিস্মৃতির অতল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে যে নামটা স্ক্রিনের সারফেসে ভেসে উঠল, এককালে দেবমাল্যের প্রায়োরিটি লিস্টে সবথেকে ওপরে পিন্‌ করা থাকতো এই অ্যাকাউন্টটা। 'অহনা দাশগুপ্ত'—গ্রেয়েড-আউট ডিপিটার ডানদিকে, নামটার তলায় নিস্প্রভ হরফে ভেসে থাকা ওর এই লাস্ট মেসেজটা বেশ ক'বছরের পুরনো, কিন্তু দেবমাল্যর স্মৃতির প্যান্ডোরা বাক্সটি উলটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরেকবার আপাদমস্তক শিহরিত হয় সে। প্রোফাইলটা খুলে ওপরে-নীচে স্ক্রল্‌ করে দেখে, ওদের পুরনো চ্যাটগুলো তেমনি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ওর মেসেজগুলোর পাশে ডাবল টিকগুলো এখনও জাজ্বল্যমান সবুজে ছোপানো, যেন এইমাত্র 'সিন্‌' করে রেখেছে অহনা! যেন এখুনি আবার হাত বোলালেই অহনা এসে খানিকটা রাগত ভঙ্গিতে চ্যাট করতে লেগে যাবে। দেবমাল্যের বুক ছাপিয়ে একটা নীরব দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে! ছুটির এই আমেজটা লক্ষ্মীপুজো অব্দি গড়াবে—অফিস খুললেই তো আবার দমফাটা ব্য...

গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম

  গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম হুইসেল (মুরাকামি থেকে অনুপ্রাণিত) ♦ 'গভীর রাতে একটা হুইসেল কতটা গভীর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারো না,' ছেলেটা বললো, 'আশ্চর্য ঐ হুইসেলের মতো আমি ভালবাসি তোমাকে।' কিন্তু গভীর রাতে অন্ধকারে কখনও তো ঘুম ভেঙে যায়নি মেয়েটার, কখনও ও বিচ্ছিন্ন আর একা হয়ে যায়নি। ও কীভাবে অনুভব করবে গভীর রাতে ট্রেনের হুইসেল কতটা গভীর! নিউজ এজেন্সি ♦ একসময় আমরা খবর শুনতাম এখন দেখি স্বীকার করতে হবে খবর শোনার চেয়ে দেখার আনন্দ বেশি আলাদা উত্তেজনা নিউজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে তৎপর আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনটা নিউজ সেটা ওরাই ঠিক করে যেটা ওদের দরকার আর সেটাই আমাদের দেখানো হয় ধারাবাহিকভাবে সুচারু জ্যামিতিকতায় বিভিন্ন পদ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় নতুন বাস্তবতা নির্মাণে যে বাস্তবতায় জায়গা নেই আমাদের ইতিহাস অন্বেষা স্বাধীনতার সমৃদ্ধি আর স্বাধীনতার কথা বলেই ওরা আমার ক্ষেতখামার পাহাড় আর নদীর দখল নিয়েছে তাহলে টিভিতে যে হাসিখুশি প্রাণবন্ত আমাদেরকে দেখানো হয় ওরা কারা এই প্রশ্ন করো নিজের কাছে আগুন নিয়ে খেলা ♦ আজও পুকুরে ছিপ ফেলে বসবো আমি ধীরে চুপ সূর্য আমার ঘাড়ে শ্বাস ফেলবে সারারাত ঘরের ভেতর ল্যাং...

বিদায়ের স্রোত ।। চয়ন মন্ডল

  বিদায়ের স্রোত চয়ন মন্ডল "বিজয়া দশমী—আনন্দের দিন, কারও কাছে যা হয়ে উঠল চিরন্তন বিদায়।" আজ বিজয়া দশমী। শিউলি ফুলের গন্ধে ভোরটা অন্যরকম। পাড়ার প্যান্ডেলে অদ্ভুত এক কোলাহল—মায়ের বিদায় যে আজ। শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা আর উলুধ্বনিতে গমগম করছে চারদিক। একদিকে মা দুর্গার বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ ও মিলনমেলা। সারা বছরের অপেক্ষা শেষে এই দিনটিতে প্যান্ডেল ভরে উঠেছে মানুষের ভিড়ে। সকালের পূজার্চনা শেষ হতেই শুরু হয়েছে সিঁদুর খেলা। মহিলারা মায়ের প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে একে অপরের কপালে, গালে রাঙিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকের তালে আর শাঁখ বাজনার আবেশে ভেসে যাচ্ছে পাড়া। শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু এসবের মধ্যে নেই অনুরাধা। কেউ তার বা মিনির খোঁজ রাখেনি। মুখার্জিদের দোতলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে সে চোখের জল ফেলছে। সবার বাড়িতে আলোর রোশনাই, ভোগের গন্ধ, হাসি—শুধু তাদের ঘরটিতে নিস্তব্ধতা। গতবছর এই দিনেই তো অন্যরকম ছিল সবকিছু। অনুরাধা, সুজয় আর তাদের তিন বছরের মেয়ে মিনি পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে নেচেছিল, সিঁদুর খেলায় রঙে ভেসেছিল। বিকেলের দিকে প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে শামিল ...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

শেষ বিকেলের আলো ।। সৈকত প্রসাদ রায়

  শেষ বিকেলের আলো সৈকত প্রসাদ রায় রানাঘাট শহরের প্রান্তে ছোট্ট এক পাড়া বিশ্বাসপাড়া। সেই পাড়ার পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়িটায় থাকেন পুষ্পরাণী ভট্টাচার্য— বয়স পঁয়ষট্টির কোঠায়। সবাই তাকে "পুষ্পদি" বলেই চেনে। একসময় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন অবসর নিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে পুষ্পদি বারান্দায় বসে চা খান। ছোট একটা টেবিল, কয়েকটা পুরোনো বই, আর একখানা নীল কাঁচের ফুলদানি — তার নিত্যসঙ্গী। বারান্দার সামনেই একটা গলি, যেখান দিয়ে প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পরে বাচ্চারা হইচই করে ছুটে যায়। পুষ্পদির একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ — কলকাতায় চাকরি করে। ছেলেটা আধুনিক, নিজের সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। বছরে হয়তো একবার আসে, তাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়। পুষ্পদি মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতরে একটা কষ্ট জমে থাকে। সেই বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশে ধুলো, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। হঠাৎ পুষ্পদির চোখে পড়ে — রাস্তায় এক কিশোর বসে আছে। বয়স বারো-তেরোর বেশি নয়। মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া চটি। ছেলেটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুষ্পদির বাড়ির গেটে ঝুলে থাকা পুরোনো নোটিশবোর্ডটার দিকে, যেখানে একসময় লেখা ছিল — "পুষ্পরাণী ভ...