মুক্তগদ্যঃ পিয়ালী মজুমদার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Monday, June 17, 2019

মুক্তগদ্যঃ পিয়ালী মজুমদার


অকিঞ্চিৎকরের ডায়েরি- ৪

---------------------------------------------------------

একটা আলুথালু দুপুর পেরোচ্ছি অপেক্ষার। বারোটা বেজে দশ কুড়ি....তিরিশ... 
ঘড়ির কাঁটায় একটা নাকফুল স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ। ঝিকমিক করে এগিয়ে আসছে এই সুরভিত রেস্তোরাঁর দিকে। এখানে জীবন বড়ো মাংসল। বিরিস্তা- কেশরে মাখামাখি। নতমুখে ঘ্রাণ নিচ্ছে তৃপ্ত যুবতী। উষ্ণ তন্দুরে লোভ ঝলসে নিচ্ছে অস্থির যুবক।  খুশবুদার, তুলতুলে কাবাবের সাথে একটা ঝুঁকিপূর্ণ শহরের হা-মুখের ভেতর  মিলিয়ে যাচ্ছে জোমাটোবালকেরা।  ক্রমাগত আসা- যাওয়ার চিলচিৎকার ব্রীজ পেরোতে থাকা রেলগাড়ির মতো ঝমঝম করে বাজছে ওদের মাথার ভেতর। রূপমতীর শীর্ণ আঙুল জ্বালা করে উঠছে উচ্ছিষ্ট হাড়ের খোঁচায়। ফুটন্ত ফিরনির মতো ক্ষুধা গাঢ় হচ্ছে  আবহে। সন্তানের মুখ ঢেকে যাচ্ছে চিমনির ধোঁয়ায়। 
এমন সব দৃশ্যের পাশে পাত্তা না পেয়ে, একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল তাকাচ্ছে গোলাপবিবি। হাতের প্লাস্টিকে ভাগের অন্ন। পাত পড়বে এক্ষুনি। লেজ নাড়াতে নাড়াতে এসে পড়েছে সবাই। ওদের অবোলা চোখে ছায়া ফেলছে বিষণ্ণ অন্নপূর্ণা.... 
এসে পড়েছে নাকফুলও। তার ভেজা ভেজা হাসির সাথে যেন খানিক ছলকে পড়ল মাটির কুঁজোর সোঁদা শীতল জল! সেই জলের গভীরে পাক খেতে খেতে হারিয়ে যাচ্ছে যাবতীয় ক্যাকোফনি। প্রাচীন মাছের মতো ঘাই মেরে উঠছে দক্ষিণামোহন ঠাকুরের এসরাজ। রাগ য়মন- দিলরুবা! 
একটা লাল রঙের বারান্দা আমার চোখের সামনে মাদুরকাঠির কারুকাজ পেতে দিল। সাজিয়ে দিল নিরাময়ের পুষ্পান্ন। ভালবাসার হরিয়ালি কাবাব। বন্ধুতার শাহি- টুকরা। 
চারটে বেজে তিরিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ.... বিকেল ফুরোচ্ছে অপেক্ষার।  
সূর্যাস্তের ডানায় ক্ষুধানিবৃত্তির শ্লোক। মানুষের বুকে মানুষ জড়িয়ে শহর হাঁটছে। সেই চলার সুরে সুর মিলিয়ে অন্নপূর্ণার নোলক দুলে উঠছে
দুলে উঠছে নাকফুল 
রূপমতীর নথনি
 গোলাপবিবির বেসর...

-------------------------------------------------
পিয়ালী মজুমদার 
১৯ নং, বান্ধবনগর, বেলঘরিয়া 
কলকাতা- ৭০০০৫৬