Skip to main content

ধারাবাহিক : ভুখা অর্থনীতি -- রণেশ রায়

 

 (পূর্বপাঠের পর)  ভুখা অর্থনীতি ২


অনুসন্ধানলব্ধ গল্প ও আমাদের কথা:


পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তর থেকে বিশেষ করে আফ্রিকা ভারত পাকিস্তান ও অন্যান্য শতদরিদ্র্য  দেশগুলো থেকে গৃহীত অনুসন্ধান ভিত্তিক পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়েছে তাঁদের গবেষণায়। দারিদ্র্যের পেছনে নানা কারণ আছে বলে তাতে দেখা যায়। দারিদ্র্যের ফাঁদ একটা বা দুটো কারণে দেখা যায় না। এর পেছনে বহু বিচিত্র কারণ দেখা যায়। যেমন কোথাও আয়ের অভাবে পুষ্টির অভাবে গরিব মানুষের কর্মক্ষমতা থাকে না ফলে সে নিজেকে আগামীদিনে আয় বাড়াবার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। ফলে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে আটকে থাকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে উৎপাদনের প্রযুক্তি বদলের জন্য বা নতুন উপকরণের ব্যবহারের মুখে বেকারির উদ্ভব ঘটে। তার শিকার হওয়ায়  আয় বাড়াতে সক্ষম হয় না। এক্ষেত্রে খাবার জোটে না বা পুষ্টি জোটে না তাই দারিদ্র্য তা নয়। কর্মচ্যুতি বেকারি এক্ষেত্রে সমস্যা। সে দিক থেকে পুষ্টি অভাব জনিত দারিদ্র্য ফাঁদ দেখা যায় না। সে কাজ হারিয়ে নিষ্কর্মা হয়ে পড়ে, হতাশা তাকে গ্রাস করে। তাই দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র দেখা দেয়। আবার যেখানে দেখা যায় শিশুরা পুষ্টি পায় তারা উপার্জনক্ষম হিসেবে বেড়ে ওঠে সেখানে দারিদ্র্য থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে তাদের আয় বাড়াতে পারে। তারা দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আবার কোথাও শিক্ষার অভাব থাকায় নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে গরিব মানুষ নিজেকে গড়ে তুলতে পারে না তাই দারিদ্র্যের ফাঁদে তাকে পড়ে থাকতে হয়। ভোগের ধরন কোথাও কোথাও একটা বড় সমস্যা। আবার কোথাও বড় পরিবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমরা দেখব যে সমস্যাগুলোকে অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যষ্টি স্তরে তুলে আনলেও সমষ্টিগত স্তরে একটা ব্যবস্থায় সেগুলো আশ্রয় পায় যাকে অবহেলা করে সমাধানের স্থায়ী পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। আর অভিজিৎবাবুদের ব্যাখ্যায় এই সামগ্রিক দিকটা অবহেলিত হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়। আর এটা আদর্শগত দিক যেটাকে অভিজিৎবাবুরা শুধু উপেক্ষা করেন নি কটাক্ষ করেছেন। এতে এই ব্যবস্থার কর্তারা সন্তুষ্ট হন। কারণ আপাতভাবে অনেক সত্যের আড়ালে একটা ব্যবস্থার আসল চরিত্রটা চাপা পড়ে যায়। ব্যষ্টি  স্তরে কিছু মানুষের কিছু উপকার করার মধ্যে ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এখানে আমাদের আপত্তি। উনারা আদর্শের বিষয়টা কিভাবে কটাক্ষ করেছেন সেটা নিয়ে কিছু কথা আমরা বলতে পারি। এখানে স্বীকার করে নিতে হয় যে অমর্ত্যবাবু এ বিষয়টা মাথায় রেখেছিলেন। তাই মানুষের আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকারটা, তাঁর আলোচনায় স্বাধিকার সক্ষমতা ও ক্ষমতায়নের বিষয়টা এত গুরুত্ব পেয়েছিল। লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে তিনি এত মাথা ঘামিয়েছিলেন। শুধু দারিদ্র্য ও তার সমাধানের মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখেন নি । মানুষের আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার প্রশ্নটা বড় করে দেখা দিয়েছিল। অধিকারের দাবিটা দারিদ্র্য আলোচনা প্রসঙ্গে এসেছিল। মানবতাবাদের প্রশ্নটা উঠে এসেছিল। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির বিভিন্ন দিকগুলো উদ্ঘাটিত হয়েছিল। ওগুলো আনলে দারিদ্র্য উপশমের বিষয়টা তত্ত্বের চশমায় দেখা হবে বলে অভিজিৎবাবুরা এড়িয়ে যান। তাঁরা মানুষের ব্যক্তিজীবনের নানা অভিজ্ঞতার আড়ালে একটা ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত সমস্যার এই মৌলিক দিকটাকে এড়িয়ে যান। আমরা এই বিষয়টায় আবার আসব অভিজিৎ বাবুদের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া দুচারটে গল্প শোনার পর। অভিজিৎ বাবুদের বই কি বার্তা বহন করে? তাঁদের ভাষায় :

''The message of the book, however, goes well beyond poverty traps. As we will see , ideology, ignorance and inertia ----- the three Is----- of the part of the expert , the aid worker, or the local policy maker , often explain why the policies fail and why aid does not have the effect it should. It is possible to make world a better place --- probably not tomorrow , but in some future that is within our reach ------ but we cannot get there with lazy thinking."( Page23)

অর্থাৎ শুরুতেই এই গবেষকরা আক্রমণ করেন আদর্শ ভিত্তিক তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাকে। তাঁরা শিকার করতে চান না যে অনেক তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা উঠে আসে প্রজন্মকাল ধরে সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনার অভিজ্ঞতালব্ধ সত্য ধরে। সেখান থেকে তৈরি হওয়া তত্ত্ব বর্তমানকে ব্যাখ্যা করতে কাজে লাগে। একে তাঁদের আই ( I ) তিন বলে কটাক্ষ করাটা ঔদ্ধত্য ছাড়া কিছুই নয় যদিও এটা ঠিক যে বেশ কিছু এমন তত্ত্বও উঠে আসে যা বিভ্রান্তের সৃষ্টি করে। আদর্শ অজ্ঞতা আর জড়তাকে একই পঙক্তিভূক্ত করতে দ্বিধা করেন নি তাঁরা। তবে এই বিভ্রান্তিমূলক তত্ত্বগুলোকে এই ব্যবস্থার কর্ণধাররাই মদত করে। এর বাইরে মানুষের অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে অনেক তত্ত্ব উঠে আসে যেগুলো এই ব্যবস্থা অনুমোদন করে না। বরং তাদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, তাকে দেশবিরোধী তকমা দিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থিত করা হয়। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা পরে আবার আসব। এখন অভিজিৎবাবুদের অনুসন্ধানলব্ধ দুচারটে গল্প শুনে নিতে পারি। 

অভিজিৎবাবুরা দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা ধারণা দুটিকে পশ্চিমি জগতে অভিন্ন বলে দেখবার প্রবণতার কথা বলেন। বিষয়টা পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না কারণ তাদের অনুসন্ধানে সাক্ষাৎকারী অনেকের সঙ্গে কথা বলে এটা মনে হয়েছে। তবে সবসময় দেশে খাদ্যের অভাবে ভূখা মানুষ দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে বাঁধা পড়ে তা নয়। ২০০৯ সালে UNO Food and Agriculture Organisation ( FAO) ভূখা জনিত দারিদ্র্যের কথা বলে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব মত তখন পৃথিবীতে বুভুক্ষু গরিব মানুষের সংখ্যা ছিল ১০ কোটির ওপরে। সম্মিলিত জাতি সংঘের প্রথম শত বর্ষের উন্নয়ন লক্ষ্যে ( Millennium Development Goal) দারিদ্র্য ও তার সাথে ভূখা নিবৃত্তির কথা বলা হয়। বুভুক্ষ ও দারিদ্র্য যেন হাত ধরাধরি করে চলে। সেইজন্য দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচিকে সরকার মূলত গরিবের মধ্যে বিনা খরচায় বা কম দামে  খাদ্য বিতরণের কর্মসূচি বলে গ্রহণ করে। গরিব মানুষ নিজের আয়ে ক্ষুধার নিবৃত্তি করতে পারে না বলে দারিদ্র্যের ফাঁদের উদ্ভব হয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু গরিব মানুষের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় যে সব সময় দেশে খাদ্যাভাব থেকে সেটা ঘটে না। এই প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন অনেকদিন আগেই দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ গ্রন্থে বলে গিয়েছিলেন যে খাদ্যের উৎপাদনের অভাবে সব সময় দুর্ভিক্ষ দেখা যায় না। আয় বৈষম্য ও তার ফলে খাদ্য বন্টনে অসমতার দরুন দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। একই কথা খাদ্যের যোগান ও দারিদ্র্যের সম্পর্ক সম্পর্কে বলা যায়। অভিজিৎবাবুদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে আজ শুধু আয় স্বল্পতা নয় আয় কিভাবে ব্যয় করা হয়, সেই আয়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যয় হয় কিনা পরিবারের গঠন কেমন উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ গরিব মানুষ গ্রহণ করতে পারে কি না তার ওপর নির্ভর করে গরিব মানুষ দারিদ্র্যের কোন স্তরে আছে সে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা। এই প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারীদের  থেকে শোনা দুএকটা গল্প শুনে নিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জানা একটা আধটা গল্প তুলে ধরব। দেখব অভিজ্ঞতা কাছাকাছি। অভিজিৎবাবুদের বিরোধিতা করার কারণ নেই। কিন্তু আমরা দেখব কি ব্যবস্থার মধ্যে এরকম বহু বিচিত্র ঘটনা ঘটে যা নিয়ে আমরা উচ্চবিত্তরা হাসি তামাশা করি। গরিব মানুষদের অদ্ভুত কার্টুন চরিত্র বলে মনে করি। এই ব্যবস্থার মধ্যেকার সমস্যা দূর না করে ব্যক্তি স্তরে সকলকে দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করা যায় কি না। না কি এই ব্যবস্থা টিকে থাকলে দারিদ্র্য থাকবেই যদিও দারিদ্র্যের মাত্রা পরিবর্তিত হয়। ইতিহাস বলে প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে চিরকালই দারিদ্র্যের মাত্রা কমেছে । যখন প্রগতি বিপথগামী হয়েছে তখন ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে নতুন ব্যবস্থ্যা গড়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গটা আমরা আলোচনায় বিশদভাবে আনব। সেখানেই আমরা আমাদের প্রশ্ন রাখব। অভিজিৎ বাবুরা কি বলেন জানতে চাইব।

ধরে নেওয়া হয় যে গরিব মানুষরা  নিজেদের আয়ে নিজেদের ভরণ পোষণ করতে পারে না। প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না বলে আগামীদিন নিজের আয় বাড়াতে পারে না । নিজেদের অতিরিক্ত যায় অর্জনে উপযুক্ত করে তুলতে পারে না। তাই তারা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে বা দারিদ্র্যের ফাঁদে  বাঁধা পড়ে। সেখান থেকে বেরোতে পারে না। ইন্দোনেশিয়ার বানদং নামে ছোট্ট একটি গ্রামের এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তার নাম পাক সহলিন। তাদের যা জমি ছিল তাতে বড় পরিবারের সবার বাড়ি তৈরিতে কাজে লেগে যায়। সে একজন কৃষি শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করত। গরিব হলেও যা রোজগার করত তা দিয়ে চলত। কিন্তু সার ও বীজের দাম বাড়ায় জমির মালিক খরচ কমিয়ে নিজের লাভজনকতা বজায় রাখতে  তাকে ছাঁটাই করে দেয়। সেখান থেকে চলে গিয়ে অন্যত্র কাজে তার যা আয় হত তা তার পরিবার চালাবার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তার খাদ্যের অভাব হয় যা তাকে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে নিক্ষেপ করে। সে যখন মোটামুটি ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাদ্য পেত তখন পুষ্টির তেমন অভাব হত না। সে মাছ ধরে বিকল্প কাজ করেও কিছু রোজগার করত যা তাকে অবস্থা উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কৃষিতে কাজ চলে যাওয়ায় উত্তরোত্তর তার অবস্থার অবনতি হয়। সে নিজের কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র তাকে গ্রাস করে। সে জানায় খাদ্যাভাব তার এই দারিদ্র্যের জন্য দায়ী যা ঘটে তার চাকরি চলে যাওয়ায়, নিজের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায়। তার থেকেই জানা যায় খুব গরিব মানুষরা ন্যূনতম পুষ্টিকর খাদ্য পায় না বলে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে পাক খায়। অভিজিৎ বাবুদের S আকৃতির দারিদ্র্য রেখার e বিন্দুর বা দিকে স্থান হয় তার। আর যে যথেষ্ট যায় অর্জন করতে পারে, e বিন্দুর ডানদিকে অবস্থান করে সে কালক্রমে আরো আয় বাড়াতে সক্ষম হয়। প্রথম দিকে রেখাটির e বিন্দুর ডানদিক ধরে দ্রুত হারে আয় বাড়ে তারপর বৃদ্ধির হার কমে ও শেষ পর্যন্ত আজ ও কালের আয়ের মধ্যে সমতা বজায় থেকে একটা স্থিতিতে পৌঁছয়। এটাই হলো সহলিনের দারিদ্র ফাঁদের গল্প যা তার জীবনের ইতিবৃত্ত। চাকরি চলে যাওয়ায় আয় কমে যাওয়ায় আর পুষ্টির অভাব হওয়ায় তাকে দারিদ্রের ফাঁদে পড়তে হয় যেখান থেকে সে আর বেরোতে পারে না।

অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাচস ও অভিনেত্রী এঞ্জেলিনা একটি ভিডিওতে কেনিয়ার শতবর্ষ পুরোনো  এক গ্রামের কৃষকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দারিদ্র্যের ফাঁদ কোন অবস্থায় কিভাবে উদ্ভব ঘটে আর কোন অবস্থায় এর থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব সেটা  আলোচনা করেন। সেটা তুলে ধরেন অভিজিৎবাবুরা তাঁদের বইতে। এও জীবনের এক চলমান গল্প। এই গরিব কৃষককে দারিদ্র্য ফাঁদ থেকে তুলে আনতে কিছু অনুদান দেওয়া হলো। সে তা দিয়ে সার কিনে চাষ করলো।  ফলে তার কুঁড়িগুন ফসল বাড়ল। সে পরের বছর এর থেকে কিছু বীজ হিসেবে ব্যবহার করল তাতে আবার তার ফসল বাড়লো যা তাকে কিছুদিনের মধ্যে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বার করে আনে। সে e বিন্দুর ডানদিকে বেরিয়ে আসে। কালক্রমে তার আয় বাড়ার গতি বজায় থাকে। এ ব্যাপারে সন্দেহভাজনরা বলেন তাই যদি হয় সে যদি জানে অল্প সার ব্যবহার করে আয় বাড়ানো যায় তবে আয়ের থেকে অল্প অল্প বাঁচিয়ে সার ব্যবহারের পথ ধরে সাহায্য পাবার আগে এগিয়ে এলো না কেন।  অভিজিৎবাবুরা দেখান যে আয় ছাড়াও এ পথে প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে যা কৃষককে দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আস্তে দেয় না। যেমন সারের বাজারটাই এমন যে একসঙ্গে বেশি সার কিনতে হয়। যার জন্য বড় সঞ্চয় দরকার। কিন্তু কৃষক সেটা পারে না। এই প্রসঙ্গে অভিজিৎবাবুরা বইয়ের পরবর্তী একটা পরিচ্ছেদে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা আনেন যেখানে ক্ষুদে সঞ্চয় তথা micro finance এর আলোচনা হয়। কিভাবে এর মাধ্যমে দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভাঙা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে তারা তিল তিল করে সঞ্চয় কর কিভাবে দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা যায় তা আলোচনা করেন। ছোট ছোট প্রচেষ্টা একটু সহায়তা কিভাবে দারিদ্র্য দূর করে গরিব মানুষকে সমাজে প্রতিষ্ঠা দেওয়া যায় সেই আলোচনা এই গবেষণায় জায়গা  পায়। 

ভারতের শহরে গরিব  জনসাধারণের ওপর সমীক্ষায় দেখা গেছে শহরে খাদ্যাভ্যাস বদলে গেছে। আজের তুলনায় মানুষ কম খায়। খাবার ক্ষমতা কমে গেছে। মানুষ  সুগারের মত রোগে ভোগে। ফলে শরীর ক্যালরি পায় না। প্রয়োজনীয় পুষ্ট পায় না । এতে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।গৃহস্থের বাড়িতে চারজনের মধ্যে তিনজনের শহরে গড় ক্যালরি জোটে ২১০০ আর গ্রামে ২৪০০। এটা ন্যুনতম প্রয়োজনের মাত্রা। সব স্তরের মানুষের মধ্যে মোট খরচে খাদ্যের ওপর খরচের মাত্রা কমে গেছে। এমন কি খাদ্যের মধ্যে কম খরচে যে খাদ্যশস্য বেশি পুষ্টি দিতে পারে তার ওপর খরচ তেমন না করে দামি খাদ্য যাতে ক্যালরি বেশি তার ওপর বেশি খরচ করার প্রবণতা বেড়েছে। গরীবের আঁয় কম বলে তারা সেটা কিনতে পারে না। তাই অভ্যাসের এই বদল তাদের পুষ্টির পক্ষে ক্ষতিকর। অভিজিতবাবুরা মনে করেন গরিব মানুষদের খাদ্যাভাস সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত কারণ তাদের মেহনত করে খেতে হয় যার জন্য পুষ্টি দরকার। এই পুষ্টির অভাব তাদের দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে রাখে। কিন্তু এর জন্য সব সময় খাদ্যাভাব নয় খাদ্যাভ্যাসও দায়ী। কম খরচে কিভাবে বেশি পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে মানুষের আরও উৎসাহিত হওয়া দরকার।

এবার আসা যাক শিক্ষা প্রসঙ্গে। বইটাতে আলোচনা হোয়েছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা যার ছাপ থাকলে কাউকে বেশি রোজগারের জন্য বেশি যোগ্য বলে মনে করা হয় চলতি বাজারে। এখনও এই শিক্ষা প্রসারে ব্যবস্থাটা গুরুত্বপূর্ণ যার আধারে শিশু শিক্ষা অর্জন করে।যেটা অবহেলিত হয়েছে বইটাতে। সেই প্রসঙ্গে পরে আমরা  আসব। সেটা ধরে বইটার মূল্যায়ণ করব। শিক্ষার সঙ্গে দারিদ্রের সম্পর্ক ব্যাখ্যা যে সব সাক্ষাৎকার ধরে বোঝার চেষ্টা হয় তার একটা দুটো আমরা তুলে ধরব। শিক্ষার অভাব কেন ঘটে সে সম্পর্কে চলতি ধারণা তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো সব ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য নয় সেটা বলা হয়েছে। যেমন পরিকাঠামোর অভাব শিক্ষকের যোগ্যতার অভাব শিক্ষকের অভাব। এর জন্য এই সমস্যা সমাধানে কোন সাধারণ সূত্র পাওয়া সম্ভব নয়। কোন ক্ষেত্রে হয়ত পরিবারের দারিদ্রের দরুন সন্তানকে রোজগারে লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাই সে শিক্ষা পেয়ে নিজেকে যথেষ্ট রোজগারের উপযুক্ত করে তুলেতে পারে না। দারিদ্রের ফাঁদে আটকে থাকে। আবার বাবা মায়ের ইচ্ছে থাকলেও ছেলেমেয়ে কোন কারণে পড়াশুনায় উৎসাহ পায় না। স্কুল ফাঁকি দেয়। তাই তার স্কুল ছুট। আবার সরকারী স্কুলের অভাব বেসরকারি স্কুল  খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় শিক্ষা জোটে না গরিব মানুষের। এসব নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। সরকারি স্কুল ব্যবস্থা ও বেসকারী ব্যবস্থার প্রয়োজন তার ত্রুটি নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন লেখকদ্বয়।

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে শান্তারামা নামে এক মহিলার থেকে জানা যায় তাঁর স্বামী অল্পবয়সে ছয় সন্তান রেখে মারা গেলে তাদের আর্থিক সংকট বাড়ে। মহিলা নিজে কাজ করে সংসারের সংকটের মোকাবেলার চেষ্টা করেন তাও বাচ্চাদের স্কুলে পড়া বন্ধ করেন নি। সুতরাং এক্ষেত্রে চলতি অনুমানটি যে সংসারের অভাবের দরুন শিক্ষা না পাওয়ায় সন্তানদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারে না বলে দারিদ্রের ফাঁদে আটকে থাকে গরিব মানুষ তা সবসময় সত্যি নয় বলে দেখা যায় । তবে তাঁর কোন কোন বাচ্চা স্কুল যেতে তাগিদ বোধ করত না বলে তাদের পড়াশুনো বন্ধ হয়ে যায়। যেমন ছোট মেয়েটি পড়া ছেড়ে দেওয়ায় তাকে বেকার বসিয়ে না রেখে কাজে পাঠান মা।অন্যেরা যারা যেমন চেয়েছে পেরেছে তেমন পড়াশোনা করেছে। এক্ষেত্রে যে পড়াশোনা করেনি স্কুল ছুট তার ক্ষত্রে অন্যত্র কারণ খুঁজতে হয়। হতে পারে স্কুলে শিক্ষার পরিবেশের অভাব বাচ্চাদের বিরাগের কারণ। সুতরাং মনে করার কারণ নেই যে গরিব মানুষরা শিক্ষা চায় না। স্কুল ছুটের পরিসংখ্যান দেখিয়ে বা স্কুল থাকলেও স্কুলে পাঠানোর বা যাবার তাগিদের অভাব দেখিয়ে অনেকে বলেন যে প্রতিষ্ঠানের চেষ্টায় ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বানানোর প্রচেষ্টা একটা অর্থহীন ও বিরাট পরিহাস যদি না শিক্ষার চাহিদা থাকে। যদি চাহিদা থাকে তবে তার টানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব হয় না।  অর্থাৎ শিক্ষায় বাজার অর্থনীতি না নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি কোনটা বেশি কার্যকরী সেই বিতর্কটা চলে আসে। এই প্রসঙ্গে অভিজিতবাবুরা বলেন:

'' Though the specific reasons invoked are different, the fault line divides the field essentially in the same place it divides of the subject of aid, with the aid optimists being generally education interventionists, and aid pessimists being in favor of Laissez-faire.'' (109-110)

অভিজিৎবাবুরা নানা কারণে শিক্ষার যোগানের দিকটার অসম্পূর্ণতার পরিচয় পান বিভিন্ন অনুসন্ধানে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি, শিক্ষকদের অনীহা, অনুপযুক্ত পাঠ্যসূচি সবকিছুর কথা বলেন। সেসব দেখে মনে হতে পারে শিক্ষার ওপর খরচ অপচয়। শিক্ষার যথাযথ চাহিদা থাকলে যোগান আপনা থেকেই আসে। এটাই যথার্থ শিক্ষার প্রসার বলে শিক্ষার জগতের চাহিদাওয়ালাদের বক্তব্য। এই চাহিদা ওয়ালাদের যুক্তিতে শিক্ষাকে বিনিয়োগের দিক থেকে দেখা দরকার। কিন্তু লেখকদের গবেষণায় দেখা যায় সবসময় যে চাহিদার অভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা যোগানের দিক থেকে কাজ করে না তা নয়। যোগান এলে এবং তার সঙ্গে কিছু উৎসাহ ব্যঞ্জক উপাদান থাকলে বা স্কুলে পাঠানোকে বাধ্যতামূলক করলে বা স্কুলে গেলে নগদ টাকা পউরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে স্কুল প্রকল্প স্বার্থক হয় বলে তারা দেখান। তারা বলেন ইন্দোনেশিয়ায় একনায়কতন্ত্রী শাসক সৌহার্তের স্কুল যোগানের কর্মসূচি কাজ করেছে বলে দেখা যায়। তাইওয়ানে বাধ্যতামূলক শিক্ষা কর্মসূচী ফলদায়ক হয়েছে। এ ছাড়াও Pratham নামে NGO সংগঠন ভারতে শিক্ষা নিয়ে যে কাজ করেছে তার বিশদ আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি বেসরকারি স্কুল আপাতদৃষ্টিতে বেশি ভালো হলেও তার সুযোগ গরিবরা পায় না বলে তাঁরা দেখান। তাছাড়া এসব স্কুলের মূল কিছু ত্রুটির কথা বলা হয়। যেমন যে স্কুলে অভিজিৎবাবু পড়তেন সে স্কুলে ছেঁকে ভালো ছাত্রদের রেখে দেওয়া হতো আর বাকিদের বাদ দেওয়া হত। এই বাছাই করা ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করলে তাদের স্কুলের সুনাম বজায় থাকত। গরিবদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে এই সব বেসরকারি স্কুলের কোন ভূমিকা থাকত না। এই সব সম্ভ্রান্ত স্কুলের অসম্পূর্ণতার কথাও আলোচনা করা হয়েছে বইটাতে।

দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রশ্নে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপুর। স্বাস্থ্য ভালো রেখে মানুষকে কর্মতৎপর কর্মক্ষম রাখা যায়। ফলে তারা বেশি আয় অর্জনে সক্ষম হয়। শিশুরা সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠলে দারিদ্রের সমস্যা অর্ধেক মিটে যায়। কিন্তু সাবসাহারা দক্ষিণ এশিয়ার মত দেশগুলোতে ম্যালেরিয়া ডায়রিয়া যক্ষার মত রোগ মানুষকে একধরনের মহামারীর মধ্যে ফেলে রাখে। শিশু মৃত্যুর হার ভয়ংকর।

এ ছাড়াও বিভিন্ন পরিচ্ছেদে পরিবারের বড় সংসার প্রযুক্তি ব্যবহারে অক্ষমতা বা অনীহা শিক্ষার সুযোগের অভাব দারিদ্রের ফাঁদ সৃষ্টিতে সাহায্য করে বলে দেখানো হয়। এ সব প্রশ্নের সঙ্গে শুধু অর্থ নয় মানুষের জীবন যাপনের অভ্যেস রুচি সবই যুক্ত বলে মনে করা হয়।  বিচ্ছিন্ন ভাবে এক একটা গল্প সুন্দর মনে হতে পারে। গরিব মানুষের ব্যক্তিজীবনে সত্যিই মর্মস্পর্শী। ব্যক্তিস্তরে সামান্য সাহায্য বাইরের থেকে ধাক্কা সমস্যা সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সাহায্য সরকারের সাহায্য আঞ্চলিক স্বশাসন বা বৈদেশিক সাহায্য এ ব্যাপারে বিরাট সহায়ক হতে পারে। এর জন্য আদর্শ অর্থনৈতিক তত্ত্ব আলোচনার তেমন দরকার নেই বলে অভিজিৎবাবুরা মনে করেন।  বিষয়টা ব্যষ্টিস্তরে ভুক্তভোগী মানুষকে সাহায্যের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার। তাদের জীবন ধারণ আচার আচরণকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার। এটা করতে গেলে তাদের জীবনের মধ্যেই এর সমাধানের সূত্র খোঁজা দরকার। আমরা এখানে আমাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারি। দেখতে পারি পশ্চিমবঙ্গে সরকারি বা সরকার অনুদিত স্কুলে বছর চল্লিশ আগে ইংরেজি প্রাথমিক বিভাগ থেকে তুলে দেওয়ার পর যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা আমাদের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক।

সাতাত্তর সালে বামফ্রন্ট সরকারে আসার পর ১৯৮০ সাল নাগাদ প্রাথমিক বিভাগ থেকে ইংরেজি তুলে দেয়। তাদের যুক্তি ছিল মাতৃভাষা শিক্ষার উপযুক্ত বাহন। কথাটাকে অস্বীকার করা যায় না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যার যার নিজের ভাষায় বিভিন্ন ভাষাভাষীরা নিজেদের দেশের অর্থনীতি গড়ে তুলেছে, সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছে। চীন উপনিবেশের কাঠামো ভেঙে নিজেদের সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলে ভাষাটাকে প্রশাসনিক কাজ থেকে ব্যবসা সর্বত্র চালু করেছে। ভাবলে অবাক লাগে তারা  তাদের ভাষায় কম্পিউটার প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভর হয়েছে। কিন্তু ভারতে আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজির প্রয়োজন বাড়িয়ে তুলেছে।বর্ণমালার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা হলেও চীন খুব অল্প সময়ে গুগলকে দেশ থেকে বিদায় করে নিজেদের ভাষায় আত্মনির্ভর হয়ে কম্পিউটার শিল্পে বিরাট উন্নতি করেছে।কিন্তু ভারতের মত দেশে দু শতক ধরে ইংরেজ শাসনে যে উপনিবেশিক ধাঁচ গড়ে উঠেছে সেটা আজও বজায় আছে। কার্যত বেড়ে চলেছে। ব্যবসা থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমনকি শিক্ষিত সমাজের আচার ব্যবহার গড়ে উঠেছে ইংরেজিকে কেন্দ্র করে সাহেবি কায়দায়। স্বাধীনতার পর দেশের একটা জাতীয় ভাষাকে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয় নি বা যায় নি। চাকুরী ও প্রশাসনের কাজে প্রধানত ইংরেজি ভাষার চল থেকে গেছে। কর্পোরেট দুনিয়ায় ইংরেজি দাপিয়ে বেড়িয়েছে ও বেড়াচ্ছে।এই অবস্থায় আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হলে যে ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো দরকার সেটা এখনও নেই। এমনকি গরিব মানুষের মধ্যেও এই ইংরেজি নির্ভরতার মনন গেড়ে বসেছে । এই আর্থ-সামাজিক অবস্থায় মাতৃভাষার ওপর আকর্ষণ না বেড়ে গত চল্লিশ বছরে কমেছে। বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে নিজেকে ভালো রোজগারের তাগিদে গড়ে তোলা যায় বলে বিশ্বাস গড়ে উঠেছে।সেটার কারণ নিহিত আছে সমাজের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে। ব্যষ্টি স্তরের ব্যাখ্যা দিয়ে একে বোঝা যাবে না। আর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পরিসংখ্যান নিয়ে হদিস পাওয়া যাবে না কারণ সাক্ষাৎকারে অসংখ্য মানুষ মুখে অন্তত বলবে মাতৃভাষার প্রয়োজনের কথা। এটা আজ আমাদের জীবনের স্ববিরোধিতা যার উদ্ভব ঘটেছে একটা ব্যবস্থার ফলে যার ওপর আমার এই বই আলোকপাত করতে চায়, যেটা অভিজিৎ বাবুদের বইতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তাত্ত্বিক বিতর্ক উঠবে বলে। পরিবারগুলোতে ইংরেজি শিক্ষার ওপর আনুগত্য আজ এমন বেড়েছে যে মাতৃভাষাকে অহেতুক দায় বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে।একটা সমাজে এই গোষ্ঠীগত দিকটা যে কত শক্তিশালী তা উপলব্ধির বিষয়। এই বিষয়টা আজ গরিব মানুষকে যে এক ধরনের নতুন দারিদ্র্যের ফাঁদে ফেলছে সেটা আমরা তুলে ধরছি।

দেখা যাচ্ছে ভোটের চাহিদার তাগিদে  অফুরন্ত অর্থ ব্যয় করে সরকার সরকারি ও আধাসরকারি স্কুলগুলোকে চালিয়ে যাচ্ছে।করপোরেশন ও বিভিন্ন সরকারি আধা সরকারি স্কুলগুলো সরকারি ও বিভিন্ন এনজিওর অনুদানে ধুঁকতে ধুঁকতে হলেও টিকে আছে। বিশেষ করে কলকাতা ও বড় বড় মফস্বল শহরের  স্কুলে। এদের যোগান থাকলেও চাহিদা নেই। অভিজিৎবাবুরা শিক্ষার চাহিদা যোগানের দিকটা তুলে ধরলেও এই বাস্তব অবস্থাটার কথা বলেন নি।অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর চাহিদা বেড়ে চলেছে লাভের তাগিদে। বেসরকারি উদ্যোগে যোগান এর পিছু ধাওয়া করে চলেছে। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। টাকার থলি নিয়ে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েকে ভর্তি করবে বলে ছুটছে। শহরে নামজাদা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তো কথাই নেই। এখানে দেখা যাচ্ছে দুধরনের স্কুলকে কেন্দ্র করে  অভিজিৎবাবুদের তোলা অনুদানের অর্থনীতি ও বাজারের মুক্ত অর্থনীতির বিতর্কটা ভিন্ন প্রেক্ষিতে হলেও এসে পড়ে।

আমরা আমাদের আলোচিত দারিদ্র্য ফাঁদ ধারণার প্রেক্ষাপটে দেখব শিক্ষার এই অবস্থাটা যেটা প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি তুলে দেওয়া এবং তার সঙ্গে শিক্ষার বেসরকারিকরণের সঙ্গে সৃষ্ট হোয়েছ। আজ বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার খরচ আকাশ ছোঁয়া। তাও গরিব মানুষরাও ভালো রোজগারের উপযুক্ত করে গড়ে উঠবে আশায়  সন্তানদের সর্বস্ব খরচ করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করছে। নামী স্কুলে দিতে যারা তেমন খরচ করতে পারছে না তারা অঞ্চলের কোন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দিচ্ছে। সেখানে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হলেও গরিব মানুষটার পক্ষে কম নয়। এসব স্কুলে পরিকাঠামো নেই বললেই চলে। উপযুক্ত শিক্ষকও নেই। শিক্ষকের মাইনে যৎসামান্য। তাও তারা সন্তানদের বাংলা মাধ্যম স্কুলে দিচ্ছে না। বিড়লা স্কুল বা সাউথ পয়েন্টে দেবার ক্ষমতা এদের নেই। ইংরেজি মাধ্যম বলে এদের বাড়িতে কেউ দেখার নেই। কোচিনে দিতে হয় আরও টাকা খরচ করে। স্কুলের মান ভালো নয় বলে বা তেমন ভালো কোন ঘরের শিক্ষক নেই বলে এরা তেমন ভালো করতে পারে না এক আধটা ব্যতিক্রম ছাড়া। ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেও ইংরেজি তেমন শেখে না। বাংলা বা অন্য কোন আঞ্চলিক ভাষা তো নয়ই। না হয় ঘরকা না ঘাটকা। এর মধ্যে থেকেই যারা একটু ভালো করে তাদের এবার ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়।সেটাই সমাজের মানে সমাজ শক্তির বিধান। তার জন্য আছে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। টাকা লাগে দেবে গৌড়ি সেন। ব্যাংক থেকে না পেলে মহাজন আছে। ফলে ঋণের ফাঁস লাগে।সেটা থেকে বেরোবার উপায় কি?। আছে। বেশি রোজগারের উপযুক্ত হলে সন্তান শোধ করবে। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট চাকরি নেই। চাকরি থাকলেও আয় তেমন নয় যা দিয়ে শোধ করা যায়। এরই মধ্যে কেউ কেউ টিকে যায় বাকিরা হারিয়ে যায়। দারিদ্র্যের ফাঁস আরও শক্ত হয়। এই অবস্থার মধ্যে আজ দেখা যাচ্ছে বাংলা মাধ্যম স্কুলে ছাত্র থাকছে না। ইংরেজি মাধ্যমে যোগান  থেকে চাহিদা বেশি আর বাংলা মাধ্যম স্কুলে ছাত্র কম কিন্তু স্কুল বেশি। অর্থাৎ যোগান বেশি। 

উপরোক্ত আলোচনা প্রসঙ্গে আমি আমার জীবনের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। ধরে নিতে পারেন এটাও অভিজিৎবাবুদের মত একটা সাক্ষাৎকারের গল্প।

আমার গাড়ী চালায় ছেলেটি একদিন আমায় জানায় ছেলে তথ্যপ্রযুক্তির একটা কোর্স করবে। সে জানতে পারে পড়া শেষে চাকরি নিশ্চিত। কোন একটি কলেজ বলেছে ১ লাখ টাকা ওরা ব্যাংক থেকে ব্যবস্থা করবে যদি ১ লাখ টাকা দিয়ে নিজেরা ভর্তি করে দেয় । আমার কাছ থেকে ও পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার নেয়। আমি সংশয় প্রকাশ করি ব্যাংক কিছু বন্ধক না নিয়ে টাকা দেবে কি না।এতে ওর স্ত্রী মনঃক্ষুণ্ণ হয়। ভাবে বোধ হয় আমি টাকা দিতে চাইছি না। আমি কথা না বাড়িয়ে টাকাটা দিয়ে দিই। দুমাস না যেতেই কলেজ টাকার জন্য চাপ দেয়। ব্যাংক জানায় বিনা বন্ধকে টাকা দেবে না। ছেলের পড়ার সাধ চুকে যায়। এখানে বলতেই হয় আমার টাকাটা ও কষ্ট করে ফেরত দেয়। বুঝুন দারিদ্রের ফাঁদটা কি আর এ ধরণের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাটা কেমন।

আমরা আগেই বলেছি যে শিক্ষার সাথে সাথে স্বাস্থ্য দারিদ্র্য ও দারিদ্র্য দূরীকরণের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ কারণ সুস্বাস্থ্য মানুষকে আরও কর্মক্ষম ও আয় উপার্জনে সক্ষম করে তোলে। আর এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলোতে মানুষ গরিব নিরক্ষর ভগ্নস্বাস্থ্য ।গরিব বলেই তারা একদিকে যেমন স্বাস্থের প্রতি যত্ন নিতে পারে না আবার শিক্ষার অভাব বলে স্বাস্থ্য প্রতিরক্ষা রোগ প্রতিহতের সস্তা পথগুলো তাদের জানা থাকে না। জানা থাকলেও সেগুলো তেমন গ্রহণ করে না। সেইজন্য ভগ্ন স্বাস্থ্য তাদের দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ দারিদ্র্য যেমন ভগ্ন স্বাস্থের কারণ আবার তা ভগ্ন স্বাস্থ্যের ফল। স্বাস্থ্যের নৈরাজ্যজনক অবস্থাটা আমরা জানি যখন দেখি সাব সাহারা ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর নব্বই লক্ষ শিশু পাঁচ বছর না হতেই মারা যায় ডাইরিয়া ম্যালেরিয়ার মত রোগে। যদিও নুন চিনি ক্লোরাইনে ঘরে তৈরি করা পানিও সেবন বা মশারী টাঙিয়ে শোয়ার মত সস্তার ওষুধগুলো বা মশারি ব্যবহারের মত প্রতিরোধী ব্যবস্থা এই মৃত্যু হার কমাতে জাদুর মত কাজ করে কিন্তু মানুষের এদের ওপর তেমন আস্থা নেই। বরং তারা বেশি দামী অ্যান্টি বায়টিক এর  ওপর আস্থাশীল। ফলে দারিদ্র্যের মুখে চিকিৎসা করানো বা রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থা না নেওয়ায় রোগের আক্রমণ থেকে মুক্তি পায় না। আবার খরচ করে চিকিৎসা করাতে পারে না। ফলে তাদের কর্মক্ষমতা থাকে না। আয় বাড়িয়ে দারিদ্র্য ফাঁদ থেকে বেরোতে পারে না। এছাড়াও বিশুদ্ধ খাবার জলের ব্যবস্থা করে ডায়রিয়ার মত রোগ প্রতিহত করা যায় যা শিশুমৃত্যু কমাতে সাহায্য করে তাদের কর্মক্ষম রেখে আয় বাড়াতে সাহায্য করে। এই প্রসঙ্গে সচসের The End of Poverty বইটির ওপর আলোচনা হয়। বিভিন্ন NGO যে সব কর্মসূচি গ্রহণ করে সেগুলো তুলে ধরা হয়। সাচস মনে করেন যে এসব ক্ষেত্রে গরিবদের সাহায্য করা সরকারের কাজ। অর্থনীতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। যদিও বলা হয় যে গরিব মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর খরচের ব্যাপারে উদাসীন গবেষণায় দেখা যায় বাস্তবতা উল্টো। তারা তাদের আয়ের বেশ কিছুটা অংশ স্বাস্থ্যের ওপর খরচ করে। কিন্তু তাদের আয় কম বলে টাকাটা যথেষ্ট। সরকারের সাহায্য তদের স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করলে তার ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হয়। আমরা পশ্চিমবঙ্গেও দেখি সরকারি হাসপাতালে বা ক্লিনিকে গরিব মানুষের ভিড় উপচে পরে। গ্রাম গঞ্জ থেকে মানুষ আসে চিকিৎসা নেবার জন্য। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ব্যবস্থা কম বলে এখানে স্বাস্থ্য সেবার মান নেমে যায়। যতটা সেবা পাবার তারা সেটা পায় না। পরিকাঠামো দুর্বল বলে অবস্থাটা এক এক সময় ভয়ঙ্কর আকার নেয়। পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো অবাধে ব্যবসা করে। প্রচারের ঢক্কানিদাদে এদের দিকে গরিব মানুষ ঝোঁকে। খরচ এখানে অনেক। কিন্তু বাস্তবে এখানেও নানা দুর্নীতি দেখা যায়। এব্যাপারে আমার নিজের অভিজ্ঞতা আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে আমি কলকাতার একটা নার্সিং হোমে ভর্তি হই। সেখানকার অব্যবস্থ্যা আমাকে স্তম্ভিত করে দেয়। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অবাধ বেসকারী ব্যবস্থা বড় বড় কর্পোরেট হসপতালের লুঠের ময়দান সেটা বলতে আমার দ্বিধা নেই। সরকারি ব্যবস্থাকে বাড়িয়ে সেখানে আরও সেবার সুযোগ সৃষ্টি করে গরিব মানুষকে সেবা দিতে পারলে তাদের উপকারে লাগে।তাদের কর্মক্ষমতা রক্ষিত হতে পারে। চূড়ান্ত দারিদ্র্য থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে। এরই সঙ্গে গরিবদের জন্য সস্তা বীমা চালু করা দরকার। বীমা বেসরকারিকরণ করায় যে খরচ বেড়েছে তা গরিব মানুষের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। সরকারের ব্যবস্থাও খুবই সীমিত। এই অবস্থায় গরিব মানুষকে দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনা এই মুহূর্তে আকাশ কুসুম কল্পনা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য আজ ভারতে সর্ববৃহৎ ব্যবসা হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে নির্মাণ শিল্প। নির্মাণ শিল্পে চাষের জমি নিয়ে যে আশ্রয়স্থল গড়ে উঠছে তা গরিব মানুষকে সাহায্য করছে না। বরং তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে ধনীদের বিলাস এপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। কৃষিতে নিয়োগ কমছে।দিল্লি গুরগাঁও বোম্বে বেঙ্গালোর বা কলকাতার নিউ টাউনে যে সব এপার্টমেন্ট হচ্ছে তা তারাই কিনতে পারে যাদের যথেষ্ট অর্থ আছে, মোটা ঋণ ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা আছে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে এদের বেশিরভাগের বিকল্প আশ্রয় আছে। এপার্টমেন্টগুলো খালি থাকে। এগুলো নিয়ে ফাটকা খেলা চলে। অথচ শিক্ষা স্বাস্থ্যের মত বাসস্থানও মানুষকে পরিষ্কার জীবন যাপনে সাহায্য করে যা তাকে আরো উপার্জনক্ষম করে তুলতে পারে। দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচির অঙ্গ হতে পারে।

দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যষ্টি বা ক্ষুদে অর্থসংস্থান ও বীমা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বইটাতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ব্যবসা আর লাভের স্বার্থে এগুলো পরিচালিত হয়। আজ ক্ষুদে অর্থসংস্থান নিয়ে যে লুঠের রাজত্ব চলছে আমরা পশ্চিমবঙ্গে সারদা রোজভ্যালি দেখে সেটা বুঝি। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয় সারা ভারতে একই চিত্র। কিন্তু বইটাতে অনেক গল্প জায়গা পেলেও এগুলো নিয়ে তেমন আলোচনা হয় নি। অথচ এদের কার্যকলাপ গরিব মানুষকে তো সাহায্য করছেই না সর্বশান্ত করে আবার দুষ্টচক্রকেই স্থিতি দিচ্ছে।

এবার আমরা আমাদের আলোচনায় প্রযুক্তির বিষয়টায় বিশদে আসব। আমরা এ ব্যাপারে প্রথমে প্রযুক্তি কিভাবে মানব সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত দেখব। অভিজিৎবাবুদের আলোচনায় উন্নত সার ব্যবহার প্রসঙ্গে ইতিমধ্যে বিষয়টা এসেছে। কিন্তু অর্থিনীতির উন্নয়নের ইতিহাসে প্রযুক্তির উন্নতি এক বিশাল ভূমিকা পালন করেছে আজও করছে যেটা তার আলোচনায় তেমন জায়গা পায়নি। শুধু ব্যক্তিস্তরে প্রযুক্তির উন্নতি কিভাবে গরীব মানুষের দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভাঙতে সাহায্য করতে পারে তা বলা হয়েছে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে যেটা আমরা ইতিমধ্যে এনেছি।  কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায় একটা সমাজের কাঠামো বদলাতে প্রযুক্তির উন্নতি সাহায্য করেছে। নতুন প্রযুক্তিকে জায়গা করে দেওয়ার স্বার্থে একটা ব্যবস্থা ভেঙে আরেকটা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। সমাজ জীবন ব্যক্তি জীবন তোলপাড় করে দিয়েছে। সুতরাং শুধু ব্যক্তি স্তরে নয় গোষ্ঠী স্তরেও বিষয়টা বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রযুক্তি প্রয়োগের আধার। এর সঙ্গে আদর্শের প্রশ্নটা যুক্ত। কোন প্রযুক্তি কার স্বার্থে কিভাবে কাজে লাগবে কি ধরণের সাংস্কৃতিক আধার প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবে সেটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। এই সামগ্রীকতার দিক থেকে প্রযুক্তির প্রশ্নটাকে অভিজিৎবাবুদের আলোচনায় আসেনি বলে আমাদের মনে হয়েছে। আমরা এ বিষয়টা সংক্ষেপে অথচ সামগ্রীকতায় আলোচনা করব। এই প্রসঙ্গে ভোগবাদের বিষয়টাও আসবে যেটা দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। আমরা শ্রেণী বিভক্ত সমাজে প্রযুক্তির আগ্রাসনের মুখে আজ  শুধু একটা শ্রেণীর মুনাফার স্বার্থে প্রযুক্তির ব্যবহার যে গরিব মানুষকে প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন করে তার দারিদ্র্যকে স্থায়িত্ব দিতে সাহায্য করে সেটা দেখব। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা লব্ধ সত্যটাকে বাদ দিয়ে কৃষকের প্রযুক্তি গ্রহণের পথে বাধা বিষয়টা আলোচনা করা যায় না।

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

রেজাল্ট ।। সৈকত মাজী

রেজাল্ট সৈকত মাজী শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।    " মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক  দিলো শুভ্রাংশু।    " কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।     " ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো"  কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।      " না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও"  মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।      শুভ্রাংশু...

রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি

রাই আর বাবা অদিতি চ্যাটার্জি রাই-র জীবনে বেশ কিছু ভালো লাগা আছে তার মধ্যে একটা হলো সন্ধ্যার সময় তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দেওয়া ।" আজ যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে বেশ ভিড়,নির্ঘাত 'তেলে ভাজা ' প্রেমীরা।" আপন মনেই ভাবে ও, কিন্তু বসার ঘরে সুমন আর আঁখি এতো জোরে 'হল্লা গোল্লা ' করছে তালতলার জমজমাট রাস্তার দিকে আর মন দিতে পারছে না রাই।  পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়ায় রাই, দেখে ক্লাস ফোরের মেয়ে এতোটা ঝগড়া করছে সুমনের সাথে , "বাপ রে, কবে এতোটা কথা শিখলো মেয়ে! কিভাবে কথা বলছে?? কোঁকড়া চুল ঝাঁঝিয়ে,গোলগাল হাত নেড়ে " ...মেয়ে কে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাই। এদিকে আঁখি বলছে, "ধুত্ বাপী তুমি কিচ্ছু পারো না, তুতাই-র বাবা, পিসাই, মামু সবাই কত ভালো করে খেলতে পারে , না আমি তোমার সাথে খেলবো না।" কাতর চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সুমন বলে ,"আচ্ছা তুই আমাকে শেখা, দ্যাখ আমি কার জন্য আলিপুরদুয়ার থেকে পনেরো দিন পর পর কলকাতায় আসি বল!"  ঐ টুকু মেয়ে কথা প্রায় না শুনেই ঘরে চলে গেল রাই-র চোখের সামনে, সুমন একবার হেসে বাথরুমের দিকে এগো...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী

বস্তু, চেতনা এবং  কবি সজল চক্রবর্তী  "যেখানে পৌঁছায় না রবি,, সেখানে পৌঁছে যান কবি।" এই ছোট্ট কবিতা টি অনেক পুরনো  এবং বহু পরিচিত, তথাপি এর তাৎপর্য এখনো হারায় নি। তবে, কথা হ'চ্ছে -আমরা তো  রবি-কবিকে একত্রেই পেয়ে যাই আমাদের ঋষি-প্রতিম কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। আর তখনই জেনে যাই উপরোক্ত ছোট কবিতার প্রণিধানযোগ্যতা ।  ... এবার শুনে নেয়া যাক, ঋষি-প্রতিম কবির মুখ নিঃসৃত বাণী:- "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি যাই ...." অর্থাৎ আমাদের প্রিয়তম কবি অনায়াসে পৌঁছে যান সৃষ্টির অসীমে , যা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এখানে কবির চেতনা সুদূর প্রসারী! ... প্রকৃত প্রস্তাবে কবি অতিন্দ্রীয় জগতের এক নাগরিক। তাঁর কাছে তাই চেতনা বা চৈতন্যেরই প্রাধান্য। ...এখন আসছি, বস্তু এবং চেতনার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে।  ... আমি একজন অতি সাধারন মানুষ, তাই এই ব্যাপারটাকে কবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ক'রছি। তবে আমার সামান্য জ্ঞান থেকে একটা সাধারণ কথা সেরে নি'। আমরা সাধারণত ব'লে থাকি-- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। প্রকৃত অর্থে কি তাই ? আসলে সূর্য যেদিকে ওঠে ,আমরা  সেই দিকটাকে নামাঙ্কিত ক...

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি  (পর্ব—সাত) অরবিন্দ পুরকাইত স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০, নববর্ষ ১৪৩১ ও কার্তিক ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল। নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তা বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে। আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল। অখেজো/অখেজে — অকেজো থেকে। আদরের তিরস্কার হিসাবেই মূলত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পাজি। অচিমিতি — (উচ্চারণ ওচিমিতি) আচমকা, হঠাৎ। অদীয় — প্রচুর, অজস্র। অদ্বিতীয় থেকে ক...

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায়

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত রণেশ রায় ভূমিকা দর্শনের ইতিহাসে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক মানবচিন্তার গভীরতম প্রশ্ন। অধিবিদ্যা ভাবকে মুখ্য ধরে, বস্তুকে গৌণ বলে মনে করে। বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন—বস্তুই মুখ্য এবং চেতনা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ যখন প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল, তখনই সে বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিল—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর এই দৃশ্যমান জগতের বাইরে কিছু আছে কি? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিয়েছিল দর্শনের দুই বিপরীত স্রোত—ভাববাদ আর বস্তুবাদ। ভাববাদ বলেছিল—"ভাবই প্রথম," আর মার্কস বললেন—"না, বস্তুই প্রথম।" এই দুই প্রান্তের মাঝখানে আমি দেখি এক সেতুবন্ধন, যেখানে বস্তু, স্নায়ু ও চেতনা একে অপরকে গড়ে তোলে, আর তাদের এই ত্রিত্বের নৃত্যেই সৃষ্টি হয় জীবন ও কল্পনার জগৎ। ভাবববাদ এক সর্বশক্তিমান শক্তির কল্পনা করে যা এই বস্তুজগতের স্রষ্টা। আর এখান থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় ভাবধারার সৃষ্টি। আমার এই প্রবন্ধে আমি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক আলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি দেখাবার চেষ্টা করবো কিভাবে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুজগৎ বস্তু ও চেতনাকে সংযুক্ত করে এবং কল্পলোকের জন্ম দেয়...

চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার

চাঁদে জীবন  শমীক সমাদ্দার                           চন্দ্রযান দুরন্ত তৈরি, রকেটের উপর ভর করে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরিয়ে মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে  স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রাযান চাঁদের মাটিতে পা রাখবে সময়ের কাউন্ট ডাউন চলছে। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ স্পেসস্কাই গাবেষণা কেন্দ্র কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান অতল গভীরতায় বাসা বাঁধে। পরিচয়টা দিয়ে দিলাম এই স্পেসসিপে রয়েছে তিনজন নভোচর, একজনের নাম সাইমন আর এক জনের নাম রেমন্ড, আর এদের সঙ্গে একজন মহিলা আছে তার নাম মেরিনা। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। চন্দযান দুরন্ত চাঁদের পূর্ব -পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবতরণ করেছে। আলো আঁধারের গভীরতায় বড় বড় পাথরের পিণ্ড, চাঁদের সার্ফেসের উপরে পাথর জল দেখা যায়। জমাট বাঁধা অক্সিজেন আর কার্বনডাই অক্সাইড। ওরা এখানে এসেছে এক রহস্য উদ্ঘাটন করতে। যে স্থানে ওরা অবতরণ করেছে সেখানে ১০ বছর আগে ওরা এসেছিলো। রুশ সরকার ওদের দেশের ছাত্র ছাত্রী কে মহাকাশে চাঁদে পাঠাতে চায়। ওরা কেন এসেছে সেটা এখনো অধরা। সাইমনের বর্...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

মাসের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

দিদৃক্ষা ।। রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী

  দিদৃক্ষা রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী 'কাল একবার দেখা হতে পারে?' দশমীর দুপুরে খাটে আধশোয়া হয়ে নিজের ফোনটা ঘাঁটছিল দেবমাল্য; হোয়াট্‌সঅ্যাপের সার্চ বক্সে  র‍্যান্ডম সিক্যুয়েন্সে ক'খানা ডিজিট ইনপুট করতেই বিস্মৃতির অতল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে যে নামটা স্ক্রিনের সারফেসে ভেসে উঠল, এককালে দেবমাল্যের প্রায়োরিটি লিস্টে সবথেকে ওপরে পিন্‌ করা থাকতো এই অ্যাকাউন্টটা। 'অহনা দাশগুপ্ত'—গ্রেয়েড-আউট ডিপিটার ডানদিকে, নামটার তলায় নিস্প্রভ হরফে ভেসে থাকা ওর এই লাস্ট মেসেজটা বেশ ক'বছরের পুরনো, কিন্তু দেবমাল্যর স্মৃতির প্যান্ডোরা বাক্সটি উলটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরেকবার আপাদমস্তক শিহরিত হয় সে। প্রোফাইলটা খুলে ওপরে-নীচে স্ক্রল্‌ করে দেখে, ওদের পুরনো চ্যাটগুলো তেমনি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ওর মেসেজগুলোর পাশে ডাবল টিকগুলো এখনও জাজ্বল্যমান সবুজে ছোপানো, যেন এইমাত্র 'সিন্‌' করে রেখেছে অহনা! যেন এখুনি আবার হাত বোলালেই অহনা এসে খানিকটা রাগত ভঙ্গিতে চ্যাট করতে লেগে যাবে। দেবমাল্যের বুক ছাপিয়ে একটা নীরব দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে! ছুটির এই আমেজটা লক্ষ্মীপুজো অব্দি গড়াবে—অফিস খুললেই তো আবার দমফাটা ব্য...

গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম

  গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম হুইসেল (মুরাকামি থেকে অনুপ্রাণিত) ♦ 'গভীর রাতে একটা হুইসেল কতটা গভীর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারো না,' ছেলেটা বললো, 'আশ্চর্য ঐ হুইসেলের মতো আমি ভালবাসি তোমাকে।' কিন্তু গভীর রাতে অন্ধকারে কখনও তো ঘুম ভেঙে যায়নি মেয়েটার, কখনও ও বিচ্ছিন্ন আর একা হয়ে যায়নি। ও কীভাবে অনুভব করবে গভীর রাতে ট্রেনের হুইসেল কতটা গভীর! নিউজ এজেন্সি ♦ একসময় আমরা খবর শুনতাম এখন দেখি স্বীকার করতে হবে খবর শোনার চেয়ে দেখার আনন্দ বেশি আলাদা উত্তেজনা নিউজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে তৎপর আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনটা নিউজ সেটা ওরাই ঠিক করে যেটা ওদের দরকার আর সেটাই আমাদের দেখানো হয় ধারাবাহিকভাবে সুচারু জ্যামিতিকতায় বিভিন্ন পদ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় নতুন বাস্তবতা নির্মাণে যে বাস্তবতায় জায়গা নেই আমাদের ইতিহাস অন্বেষা স্বাধীনতার সমৃদ্ধি আর স্বাধীনতার কথা বলেই ওরা আমার ক্ষেতখামার পাহাড় আর নদীর দখল নিয়েছে তাহলে টিভিতে যে হাসিখুশি প্রাণবন্ত আমাদেরকে দেখানো হয় ওরা কারা এই প্রশ্ন করো নিজের কাছে আগুন নিয়ে খেলা ♦ আজও পুকুরে ছিপ ফেলে বসবো আমি ধীরে চুপ সূর্য আমার ঘাড়ে শ্বাস ফেলবে সারারাত ঘরের ভেতর ল্যাং...

বিদায়ের স্রোত ।। চয়ন মন্ডল

  বিদায়ের স্রোত চয়ন মন্ডল "বিজয়া দশমী—আনন্দের দিন, কারও কাছে যা হয়ে উঠল চিরন্তন বিদায়।" আজ বিজয়া দশমী। শিউলি ফুলের গন্ধে ভোরটা অন্যরকম। পাড়ার প্যান্ডেলে অদ্ভুত এক কোলাহল—মায়ের বিদায় যে আজ। শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা আর উলুধ্বনিতে গমগম করছে চারদিক। একদিকে মা দুর্গার বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ ও মিলনমেলা। সারা বছরের অপেক্ষা শেষে এই দিনটিতে প্যান্ডেল ভরে উঠেছে মানুষের ভিড়ে। সকালের পূজার্চনা শেষ হতেই শুরু হয়েছে সিঁদুর খেলা। মহিলারা মায়ের প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে একে অপরের কপালে, গালে রাঙিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকের তালে আর শাঁখ বাজনার আবেশে ভেসে যাচ্ছে পাড়া। শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু এসবের মধ্যে নেই অনুরাধা। কেউ তার বা মিনির খোঁজ রাখেনি। মুখার্জিদের দোতলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে সে চোখের জল ফেলছে। সবার বাড়িতে আলোর রোশনাই, ভোগের গন্ধ, হাসি—শুধু তাদের ঘরটিতে নিস্তব্ধতা। গতবছর এই দিনেই তো অন্যরকম ছিল সবকিছু। অনুরাধা, সুজয় আর তাদের তিন বছরের মেয়ে মিনি পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে নেচেছিল, সিঁদুর খেলায় রঙে ভেসেছিল। বিকেলের দিকে প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে শামিল ...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

শেষ বিকেলের আলো ।। সৈকত প্রসাদ রায়

  শেষ বিকেলের আলো সৈকত প্রসাদ রায় রানাঘাট শহরের প্রান্তে ছোট্ট এক পাড়া বিশ্বাসপাড়া। সেই পাড়ার পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়িটায় থাকেন পুষ্পরাণী ভট্টাচার্য— বয়স পঁয়ষট্টির কোঠায়। সবাই তাকে "পুষ্পদি" বলেই চেনে। একসময় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন অবসর নিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে পুষ্পদি বারান্দায় বসে চা খান। ছোট একটা টেবিল, কয়েকটা পুরোনো বই, আর একখানা নীল কাঁচের ফুলদানি — তার নিত্যসঙ্গী। বারান্দার সামনেই একটা গলি, যেখান দিয়ে প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পরে বাচ্চারা হইচই করে ছুটে যায়। পুষ্পদির একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ — কলকাতায় চাকরি করে। ছেলেটা আধুনিক, নিজের সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। বছরে হয়তো একবার আসে, তাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়। পুষ্পদি মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতরে একটা কষ্ট জমে থাকে। সেই বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশে ধুলো, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। হঠাৎ পুষ্পদির চোখে পড়ে — রাস্তায় এক কিশোর বসে আছে। বয়স বারো-তেরোর বেশি নয়। মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া চটি। ছেলেটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুষ্পদির বাড়ির গেটে ঝুলে থাকা পুরোনো নোটিশবোর্ডটার দিকে, যেখানে একসময় লেখা ছিল — "পুষ্পরাণী ভ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...