Skip to main content

জনতার অর্থনীতি বনাম কর্পোরেট অর্থনীতি : রণেশ রায়

 

করোনা আক্রান্তের প্রেক্ষাপটে

জনতার  অর্থনীতি বনাম কর্পোরেট অর্থনীতি

 

 

 



মনে আছে নিশ্চয় আজকের আমার মত বৃদ্ধদের। প্রতি বসন্তে বসন্ত রোগের ফুল ফুটত ঘরে ঘরে। দুরকম বসন্ত--- গুটি বসন্ত আর মুরগি বসন্ত। গুটি বসন্ত ছিল মরক রোগ আর সাংঘাতিক সংক্রমক। মারা যেত খুব আর বাঁচলেও তার অজস্র চিহ্ন রেখে যেত সারা শরীরে যা দেখলে বোঝা যেত তার গুটি বসন্ত হয়েছিল। মুরগি বসন্ত বা চিকেন পক্স তেমন বিপজ্জনক ছিল না। তবে সাংঘাতিক সংক্রমক। আজও আছে। একবার ঘরে ঢুকলে সবাইকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। ২১ দিন ঘর বন্দী। রোগীকে বিচ্ছিন্ন করে তার ঘটি বাটি কাপড় সব আলাদা করে দেয়। আজকের কেতাবী সামাজিক দুরত্ব বা  social distancing আর কি । অনুরূপ রোগ টিবি ফ্লু দিপথরিয়া প্লেগ কলেরা সব। আমার যখন মুরগি বসন্ত হয়েছিল ছোটবেলায় তখন বাবা মাও আক্রান্ত হয়। সুতরাং এই করোনা আক্রমণ এক নামে বা আরেক নামে। মানুষ এদের সঙ্গে যুদ্ধ করেই বাঁচে। তাই কবি বলেন মন্বন্তরে মরি নি আমরা মারি নিয়ে ঘর করি। আজও আমাদের সেই লড়াই, নতুন কিছু নয়। নতুন টা হল আতংক যেটা ছিল না সকালে। আজ এই আতংক ছড়াচ্ছে সংবাদ মাধ্যমকে হাতিয়ার করে বিশ্বের বাণিজ্য যুদ্ধে নিজেকে সংরক্ষিত রাখতে বা বাণিজ্য আগ্রাসনের যুদ্ধে জিততে কোন স্বার্থগোষ্ঠী। আর একটা আরামদায়ক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে আমরা আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়েছি আতঙ্কগ্রস্ত বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্ষমতা হারিয়েছি। ভয়ে আতংকে যা প্রচার হচ্ছে তাই খাচ্ছি। একধরনের মনোরোগে আক্রান্ত হচ্ছি যেটা করোনা থেকে কম ভয়ংকর নয়।





এ কোন সংকট:

আজও বিশ্বব্যাপী সংকটের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত পন্ডিত অর্থনীতিবিদরা কর্পোরেট অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে তথা বাজার অর্থনীতির কাঠামোয় আজকের অর্থনীতির সংকট ও সংকট মোকাবিলার কথা বলে চলেছেন। অথচ করোনা সংকটের সঙ্গে যে অর্থনৈতিক সংকট জড়িয়ে আছে, এই মুহূর্তে করোনা সংকট দূর করতে না পারলে আর্থিক সংকট দূর হবে না মানবতা মানব সভ্যতা অবলুপ্তির পথে যেতে পারে সে কথা সেভাবে সকলে বলছেন না। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থনীতির গতিপথ পরিবর্তণ করে সময়ের প্রয়োজনে তার কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার সেটা এদের ভাবনায় অনুপস্থিত। এরা জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি বিনিয়োগে উৎসাহ প্রভৃতির মাপকাঠিতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের কথা তোতা পাখির মত আওড়ে চলেছেন। বিশ্বায়নের ছত্রছায়ায় বাজার অর্থনীতির কার্যকারিতার অবাস্তব কথা বলে চলেছেন। অর্থাৎ কর্পোরেট অর্থনীতির ওপর ভরসা রেখে সংকট মোকাবিলা করার কথা বলছেন। অথচ এই দ্বিমুখী আক্রমণে অর্থনীতি তলানিতে। করোনা বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমাদের মত অর্থনীতিকে কার্যত শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। ইতিমধ্যে অর্থনীতির উন্নতির হার শূন্য কেন ঋণাত্বকে পৌঁছতে পারে । কার্যত এই লক ডাউনের অবস্থায় আমরা এক ধরণের টিকে থাকা অর্থনীতির ( Subsistence Economy) খেয়া ধরে ভেসে বাঁচার চেষ্টা করছি। গাড়ি থাকলেও তার ব্যবহার নেই, মলে কেনা কাটা ফুর্তি বন্ধ। বাহারি জামাকাপড় কেনা বন্ধ।শিল্পে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ মানুষের রুটি রোজগারের পথ বন্ধ। জীবনের সব ক্ষেত্রে  লক ডাউন। করোনা ভাইরাসের বিশ্বায়ন। আর গরিব মানুষতো দিন আনে দিন খায়। এক ধরণের টিকে থাকার অর্থনীতিতেই টিকে থাকে। কিন্তু বিশ্বায়িত ভাইরাস যদি এদের ঘরেও ঢোকে তবে অবস্থা কোথায় যাবে বলা শক্ত। তাদের সেই টিকে থাকার সম্ভাবনাটাও বাজার অর্থনীতির আয়তায় লোপ পেতে চলেছে। রুটি রোজগারের পথ বন্ধ। দেশে পাশাপাশি অবস্থিত প্রাচুর্যের অর্থনীতি ও টিকে থাকার অর্থনীতির ব্যবধান কমে গেছে। এখন লকডাউনের মুখে গরিবদের জন্য সরকারী অনুদান সাহায্য টিকে থাকার শর্ত। মধ্যবিত্তরাও অন্ধকার ভবিষ্যতের অপেক্ষায়। জমানো অর্থে কদিন চলবে চাকরি থাকবে কি না তা অনিশ্চিত। উন্নত দেশের অবস্থাও শোচনীয়। এই অবস্থায় শূন্য থেকে শুরু করার শর্ত তৈরি হচ্ছে।

ভাইরাসের আক্রমণ বার বার মানুষের অর্থনীতি রাজনীতি সাংস্কৃতিক জীবনকে আক্রমন করেছে, আজও করে চলেছে। এটা নতুন কিছু না। পুঁজিবাদী এই কাঠামোয় অর্থনীতি বার বার মন্দার সম্মুখীন হয়েছে। অর্থনৈতিক ভাইরাস শুধু অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে নি মানুষের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক জীবনকেও বিপর্যস্ত করেছে। অর্থনীতির সংকট দূর করতে গিয়ে সমরবাদ ভোগবাদকে মদত করে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা চলেছে। তৈরি হয়েছে উপনিবেশবাদ যা সামরিক আগ্রাসনকে মদত করেছে, স্বাধীনতার স্বার্থে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধকে অনিবার্য করে তুলেছে। দেশের সঙ্গে দেশের যুদ্ধ ঘটে চলেছে। একই সঙ্গে কর্পোরেট স্বার্থে ভোগবাদকে মদত করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে শ্রেণী যুদ্ধ বার বার মাথা তুলেছে।প্রযুক্তি বিনিয়োগ সবই সেভাবে প্রবাহিত হয়েছে। কর্পোরেটদের মুনাফার স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা চলেছে। মানুষের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়েছ, বন্টন বৈষম্য বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা স্বাস্থ্য আজও অনিশ্চিত থেকে গেছে। অর্থনীতির এই সংকটের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। কর্পোরেট অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকাকে তেমন স্বীকার করা হয় না। চাহিদা যোগানের সমবেত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া উপকরণের বিভিন্ন উৎপাদনে বণ্টন থেকে ভোক্তার ভোগ উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার থেকে কর্ম সংস্থান মানুষের  আয় নির্ধারণ সব সমস্যার সমাধান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সম্ভব বলে মনে করা হয়। তবে অর্থনীতি সংকটে পড়লে বা কর্পোরেট সেক্টরের প্রয়োজনে পরিকাঠামো তৈরিতে সরকারের ভূমিকা স্বীকার করা হয়। আর দুনিয়ার বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে সমস্ত অর্থনীতিকে নৈপুণ্য বাড়িয়ে টিকে থাকার জন্য বিশ্বায়নের ছত্রছায়ায় আসতে বলা হয়। সেইভাবে অর্থনীতির অভিমুখ ঠিক করা হয়। কিন্তু দেখা যায় বণ্টন বৈষম্যের জন্য কর্মসংস্থানের অভাবের দরুন বা শ্রম সঞ্চয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য মুনাফা ভিত্তিক বাজারি অর্থনীতিতে চাহিদা যোগানের সঙ্গে তাল রাখতে পারে না। দেশ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। আর এই ধরনের অর্থনীতিতে যাদের বাজারে বেশি ক্রয়ক্ষমতা থাকে তাদের প্রয়োজন মেটাবার জন্য উৎপাদন হয়। আজ করোনা ভাইরাস অর্থনীতিতে চাহিদা অভাবের ভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থনৈতিক সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ভারতের অর্থনীতি সহ বিশ্বের তাবর তাবর অর্থনীতি তার সঙ্গে রাজনীতি ও সামাজিক জীবন এই দ্বৈত ভাইরাসের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়ে তার থেকে বেরোবার পথ পাচ্ছে না। একে কেন্দ্র করেই আজ আমার এই প্রতিবেদন।

সংকট সমাধানের পথ

আজ ভাইরাসের সংকটের লড়াইয়ের সঙ্গে দেশের নিজেদের সম্পদ ও প্রযুক্তির সাহায্যে রাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক স্বাধীন আত্মনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার লড়াই চালানোর সময় এসেছে, বলা চলে এটাই উপযুক্ত সময়। বিশ্বায়নের ভাওতা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। সাম্রাজ্যবাদের তাবে থেকে দেশকে বার করে নিয়ে আসা দরকার।তবেই আমরা স্বাধীন ভারত স্বপ্নের ভারত গড়ে তুলতে পারব। স্বাধীনতার পর থেকেই এ কাজটাকেই প্রাথমিক কাজ বলে গণ্য করা দরকার ছিল। সেটা না করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশের সঙ্গে গাঁটছড়া আরও শক্ত করা হয়েছে। দেশটাকে বলতে গেলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিজেদের দেশেই কমছে। তার ওপর এই ভাইরাসের সংকট। এই সুযোগটা নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে নিজেদের সম্পদে দেশের আত্মনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার সুযোগ নেওয়া দরকার। তবে সাম্রাজ্যবাদ সহজে সেটা হতে দেবে না। তবে বিশ্বের পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে সবার সহযোগে এই লড়াইটা লড়তে হয়। এর জন্য জনগণকে মূল্য দিতে হবে। আর মানুষতো এই সংকটের মুখে মূল্য দিচ্ছেই। মরণের সামনে এ লড়াইয়ে মানুষ চিরকাল মূল্য দিয়েছে। আজও দিতে রাজি হবে বলে আমার ধারণা। আর এ লড়াইয়ের মধ্যে থেকেই নেতৃত্ব উঠে আসবে। পথই পথ চেনাবে। সুভাষ বোসের ডাক রক্ত দাও স্বাধীনতা দেব আজ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তার সাথে যোগ হয়েছে রক্ত দাও রুটি রুজি দেব।

যারা বাজার অর্থনীতির প্রবক্তা তারা এখনও বলে চলেছেন  বিনিয়োগের উদ্যোগ সৃষ্টি করে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে নিয়োগ বাড়বে ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে চাহিদা বাড়বে যা অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে সাহায্য করবে। আবার সব ঠিক ঠাক চলবে। অথচ গত ১৫ বছর ধরে করোনা ভাইরাসের অনুপস্থিতিতেও  চাহিদা ভাইরাস বিশ্বের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। ভারতের অর্থনীতি কি জাতীয় আয় কি কর্মসংস্থান সব দিক থেকেই গভীর সংকটে। এটা আর লুকোনো যাচ্ছে না উন্নয়নের যতই ঢক্কানিনাদ শোনা যাক। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাস যা রোখাটা আজ সবচেয়ে জরুরী। এর থেকে রক্ষা না পেলে অর্থনীতিও বাঁচবে না। রুটি রুজির সুযোগ কমতে থাকবে বিনিয়োগের উদ্যোগ কমবে অর্থনৈতিক কাজকর্ম স্তব্ধ হয়ে যাবে। এই নতুন করোনা ভাইরাস অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেরামিটার হয়ে গেছে যা চাহিদাকে তলানিতে ফেলে দিয়েছে। আজ রিজার্ভ ব্যাংক রেপ রেট কমানোয় কোন কোন অর্থনীতিবিদ একে উৎসাহ সঞ্চারি কার্যকরী ব্যবস্থা বলে উৎসাহ প্রকাশ করছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কথা তাদের আলোচনায় নেই। এই ভাইরাস দূর না করতে পারলে বাজার অর্থনীতির চলতি ইতিমধ্যে ভোতা হয়ে যাওয়া হাতিয়ারগুলো যে কাজ করবে না সেটা তাদের মাথায় নেই। আজকের এই সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য অর্থনীতির গতিমুখের ব্যাপক পরিবর্তন করা দরকার যা অর্থনীতির পুনর্গঠনের সঙ্গে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারকে অর্থনীতি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হয়। নিয়ন্ত্রনকে কঠোর করতে হয়। দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতির শক্তিকে ক্রিয়াশীল করার চেষ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না। সমস্যা সমাধানের জন্য বিনিয়োগকে কাঙ্খিত খাতে প্রবাহিত করতে হয়। সাধারণ মানুষের আয় বজায় রেখে আয়ে সমতা এনে পণ্য সামগ্রী ন্যায্য দামে পৌঁছে দিয়ে মানুষের টিকে থাকাকে নিশ্চিত করতে হয়। আপদকালীন জরুরী অবস্থায় অর্থনীতির গতিপথ বদলে কিভাবে সমস্যার মোকাবিলা করা যায় তা বিশ্ব মন্দা কালের পরবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে সোভিয়েত রাশিয়ায় স্ট্যালিনের নেতৃত্বে দেখা গিয়েছিল। আজ সেটা স্মরণ করাটা বিশেষ প্রাসঙ্গিক। এতে কমিনিষ্ট বিরোধিতার ফোবিয়ায় যারা ভোগেন তাদের গোঁসা হতে পারে। তাও আমাদের এখানে সেটা উল্লেখ করতেই হয় ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার স্বার্থে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত বিপ্লব পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করতে সাহায্য করে বলশেভিক দলের নেতৃত্বে প্রথম সর্বহারার একনায়কতন্ত্র চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। লেনিন ছিলেন তার নেতৃত্বে। নতুন সংবিধান চালু  হয় যার মাধ্যমে বড় বড় মালিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের মালিকনায় সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভীত তৈরি হয়। সংবিধানের নীতি মেনে মজুরি আইন রুটিরোজগারের অধিকার মহিলাদের ভোটদান থেকে চাকরির অধিকার স্বীকৃতি লাভ করে। চালু হয় কৃষিতে যৌথ খামার। ধনী কৃষক কুলাকদের অধিকার খর্ব করা হয়। শক্তিশালী কুলাকসম্প্রদায়কে দমন করে গরিব ও প্রান্তিক কৃষকের সাহায্যে কৃষিকে পুনর্গঠিত করার কাজ শুরু হয়। সঙ্গে শিল্পের জন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা। পরিকল্পনার অর্থনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের নেতৃত্বে অর্থনীতিকে সমাজতন্ত্রের ধাঁচে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুলাককূল ও তার মদতদাতা পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরোধিতার মুখে ছাই দিয়ে সোভিয়েতের অগ্রগমন শুরু হয় বিশেষ করে বিশের দশক থেকে। লেনিনের পর স্ট্যালিনের নেতৃত্বে ত্রিশের দশকে যখন পুঁজিবাদী দুনিয়া মহামন্দার কবলে তখন দ্রুত শিল্পায়ন হতে থাকে। পশ্চিমী গবেষকরাই স্বীকার করেন যে সেই সংকটকালে সোভিয়েতের উন্নতি থেমে তো থাকেই নি তা গতি পায়। দেশের অর্ধেক মানুষ মহিলারা যথার্থ মর্যাদা পায়। তাদের মজুরির অধিকার কাজের অধিকার ভোটদানের অধিকার স্বীকৃতি পায়। উল্লেখযোগ্য যে মহিলারা বিপ্লবের পরই এমন কি আমেরিকার আগেই ভোটদানের অধিকার পায়। এর মধ্যে জার্মানিতে হিটলারের উথ্যান ঘটে। আমেরিকা ব্রিটেন সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজে। রাশিয়া তখন সবে শিল্পায়নের কাজে এগিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ ঘাড়ের ওপর পড়ায় তারা বোঝে তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। স্ট্যালিনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলে দলে মানুষ বলশেভিক লালফৌজে যোগ দেয়। সরকারকে ইতিমধ্যে নাগরিকদের দেওয়া অনেক অধিকার সংকুচিত করতে হয়। পুরুষরা যুদ্ধে যাওয়ায় মেয়েদের সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়। বাইরের কাজে তাদের অধিকার সংকুচিত হয়। মানুষের ভোগে নিয়ন্ত্রণের রাশ টানা  হয়। অর্থনীতির অভিমুখ বদলে ফেলা হয়। ভোগ্য দ্রব্যের জায়গায় শিল্প ভিত্তিক অস্ত্র উৎপাদন জরুরি হয়ে পড়ে। মানুষকে ত্যাগ স্বীকারের ডাক দেওয়া হয় দেশের স্বার্থে। এত অল্প সময়ে যুদ্ধ ভাইরাসের সংকটের মোকাবিলা করা হয় যা দেখে পশ্চিমের রাষ্ট্র প্রধানরা অবাক হয়ে যান। মানুষের আত্মত্যাগ আর অর্থনীতির এই দিকনির্দ্দেশের পরিবর্তন সোভিয়েত রাশিয়াকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোকাবিলায় সাহায্য করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ভাইরাসের আক্রমণকে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। 

আজও ভারতে এক সংকট দোরগোড়ায় যার মোকাবিলা সম্ভব অর্থনীতির যুদ্ধকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হলে। তা না হলে অপেক্ষা করতে হবে প্রকৃতির বদান্যতার উপর। কখন তিনি সদয় হন। নিজে থেকে যদি করোনা বিদায় হয়। মানুষের ইতিহাসের প্রাথমিক পর্যায়ে অপেক্ষা করার নীতির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হত। সংকট বার বার এসেছে আবার গেছে। তখন মানুষের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ছিল। তা তাকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। আজ প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। লক্ষ্য ঠিক রেখে অগ্রাধিকার স্থির করে উপকরণ ও প্রযুক্তিকে সেইভাবে ব্যাবহার করে এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় বিশ্বাসী। প্রকৃতি তথা সর্বশক্তিমান খোদার ওপর নির্ভর করে বসে থাকে না। তবে রোগে আক্রমণের মুখে মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমেছে। অতীতেও মানুষ লড়াই করে বেঁচেছে। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতি  সীমিত থাকায় প্রযুক্তির ব্যবহার তেমন ছিল না বলে তাকে অপেক্ষা করতে হত কখন প্রকৃতি সদয় হয়।খোদার ওপর বিশ্বাস তার হাতিয়ার ছিল।কিন্তু আজ যারা গোমূত্র সমীকরণে সমাধান খোঁজেন বা নিজামুদ্দিনে আল্লার শরণাপন্ন তাঁরাও আক্রান্ত হলে হাসপাতালে যান। টিকা বা vaccine ব্যবহার করেন। চিকিৎসকের কাছে তাকে যেতে হয়। তবে তারই মধ্যে সর্বনাশটা ডেকে আনেন। সরকার চোখ বন্ধ করে থাকে। ধর্মীয় উন্মাদনাকে প্রশ্রয় দেয়। বিজ্ঞানকে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। বিষয়টাকে এখানে উত্থাপন করার তাৎপর্য এখানেই।

আমরা আজের এই সংকটকালে রাষ্ট্রের কর্তৃত্বে উপকরণের সঠিক লক্ষ্যে ব্যবহারের মাধ্যমে সংকট মোকাবিলার ওপর আলোচনায় এসেছি। শ্রেণী শোষণের অবসান ঘটিয়ে সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের সংকট মোচনের কথা কার্ল মার্কসের বহু আগে থেকেই মানুষ বলে আসছেন। কিন্তু শ্রেণী শোষণ নিপিড়ন আর শ্রেণী সংগ্রামের মূলে গিয়ে মার্কস বিষয়টাকে নতুন মাত্রা দেন তার উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বের সাহায্যে। সে বিষয়ে আমরা এখানে যাচ্ছি না । মানুষের জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে আজ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কেন দরকার সেটা আমরা তুলে ধরব।এই মৌলিক সমস্যাগুলো হল:

১) সীমিত উপকরণের কাম্য ব্যবহার করা
২) উৎপাদনের অগ্রািকার ঠিক করা
৩) আয়ের কাঙ্খিত বণ্টন ঘটান 
৪) ভোগবাদকে বর্জন করে মানবিক স্বার্থে ভোগের ধরন ঠিক করা 
৪) প্রকৃতির ভারসাম্য দূর করা 
৫) লক্ষ্য অনুযায়ী প্রযুক্তির উন্নতি ও তার ব্যবহার করা
৬) দুর্যোগের মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়া 

৬ নং লক্ষ্য এতদিন অর্থনীতিতে তেমনভাবে আলোচিত হয় নি যদিও বার বার মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সন্মুখীন হয়েছে। বোধ হয় ধরে নেওয়া হয়েছে যে প্রযুক্তির উন্নতি আপনা থেকেই সমস্যার সমাধান করবে। প্রযুক্তিকে দুর্যোগের মোকাবিলায় ব্যবহার করার জন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহণ দরকার নেই। উদ্ধত অহংকারী সভ্যতার ধারক বাহক তথাকথিত সভ্য পশ্চিমী জাতি বোধ হয় ভেবেছিল মারি মহামারী দুর্ভিক্ষ ওগুলো গরীব দেশের ব্যাপার তাই এর জন্য প্রস্তুতিতে তাদের দরকার নেই। কিন্তু চীন আমেরিকা ফ্রান্স জার্মানী ইংল্যান্ড স্পেন ইরানে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সেটাকে ভুল প্রমাণিত করল। আজ সংকট মোকাবিলার প্রশ্নটা তাই অর্থনীতির মৌলিক সমস্যাগুলোর একটা বলে বিবেচিত হতে বাধ্য। তবে এখনও আমরা জানি না সে সুযোগ পাওয়া যাবে কি না। তবে মানব সভ্যতার ইতিহাস বলে মানুষের উদ্যোগ ও সংকট মোচনের তাগিদ মানুষকে পথ দেখাবে। মানুষ পারবে। সেইজন্য নতুন করে অর্থনীতি,রাজনীতি,বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। 

এবার আসা যাক আমাদের প্রশ্নে। মানুষের রুটি রোজগার কর্মসংস্থান প্রযুক্তির উন্নতি ভোগবাদ নিয়ন্ত্রন পরিবেশ দূষণ কিভাবে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত সেটার পরিপ্রেক্ষিতে করোনা ভাইরাস তথা যে কোন ধরনের অজানা দুর্যোগ মোকাবিলার প্রশ্নটা যুক্ত সেটা আলোচনা করা দরকার। এটার স্বল্পকালীন আর দীর্ঘকালীন দুটো দিক থাকে। সমস্যা হঠাৎ  ঘাড়ে এলে স্বল্পকালীন ব্যবস্থা নেওয়া যাতে সংকটের আপাত মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু এই সংকট আবার ঘুরে আসবে না তা বলা যায় না। আবার নতুন সংকট দেখা দেবে না সেটাও ঠিক নয়। তাই পরিকল্পনা মাফিক সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার জন্য অনুকরণীয় প্রস্তুতি ব্যবস্থা জেনে রাখতে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হয়, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটাতে হয়। অর্থনীতি তার সঙ্গে রাজনীতি ও সংস্কৃতির অভিমুখ ঠিক করতে হয়। দীর্ঘকালে মানুষের মত প্রকৃতিও বুড়ো হচ্ছে। আর মানুষের মত  প্রাণীজগত তার ক্ষয় ঘটিয়ে নিজের জীবন আরো আরামদায়ক করতে চাইছে। তাই প্রকৃতিকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সেটাও মানুষের জীবন জীবিকা টিকে থাকার প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত। ভোগবাদী অর্থনীতিকে পুষ্ট হতে দিলে চলে না। সমরবাদ কে বর্জন করতে হয়।

দেশের উপকরণ সীমিত থাকলে দেখা যায় অগ্রাধিকার ঠিক করে দেশের চাহিদা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ঠিক করে কোন দ্রব্য কতটা উৎপাদন করতে হয় তা ঠিক করা হয়। দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ী চাহিদার বিন্যাস ঠিক হয়। সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ক্রয় ক্ষমতা নির্ভর করে আয় বণ্টনের ওপর। কিন্তু এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আয়ের বৈষম্য ব্যাপক। পুঁজির মালিকের হাতে বিনিয়োগ লব্ধ সম্পত্তি থাকে বলে তারা পুঁজি খাটিয়ে লাভের মাধ্যমে বেশি আয় অর্জন করে। কার্যত শ্রমজীবী মানুষকে কাজে লাগিয়ে তার উৎপাদিত পণ্য মূল্যের মোটা অংশই মালিকশ্রেণী পায় আর শ্রমজীবী মানুষ টিকে থাকার জন্য যে মজুরি দরকার সেটা পায়। মার্কস তার উদ্বৃত্ত তত্ত্বে এটাই দেখিয়েছেন। বাজার ব্যবস্থায় এইভাবে অসম বণ্টনের ভিত্তিতে সৃষ্ট চাহিদা মান্যতা পায়। তাই প্রয়োজন নয় বাজারের চাহিদা অনুসরণ করে উৎপাদন করে উৎপাদক। গরিব মানুষদের চাহিদা মান্যতা পায় না কারণ তাদের ক্রয় ক্ষমতা নেই। এখানে সরকারের কর্তৃত্ব থাকে না। সেই অনুযায়ী দেশের কৃষি শিল্প শিক্ষা স্বাস্থ্য সব কিছুর উৎপাদন হয়। যার হাতে বেশী টাকা সে তার খাদ্য বস্ত্রের প্রয়োজন মিটিয়ে নানা ধরনের অভিজাত তথা বিলাস দ্রব্য কেনে যেটা কার্যকরী চাহিদা হিসাবে বাজারে মান্যতা পায়। গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতা সামান্য বলে তারা বাজার থেকে উৎকৃষ্ট শিক্ষা বা স্বাস্থ্য পরিসেবা পায় না। বাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন ও বণ্টন কাঠামো এমন যে সেখানে মানবিক সম্পদ কাঁচামাল প্রযুক্তি সবই ব্যবহৃত হয় ধনীদের ভোগ মেটাবার জন্য। দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিষেবার পরিকাঠামো খুব দূর্বল। অভাব গরীব মানুষের নিত্য সঙ্গী। এমন কি উন্নত দেশেও আজ দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোও যথেষ্ট মজবুত নয়। আর বাজার দখলের লড়াইটা পরদেশ দখল ও যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত।তাই উগ্র দেশপ্রেমের নাম করে যুদ্ধ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা। অস্ত্রের ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । আর লাভ প্রবণতা বাজারের চালিকা শক্তি যেখানে ভোগবাদ প্রশ্রয় পায়। সমাজ দুটি শ্রেণীতে ভাগ হয় যাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ শ্রেণী ঘৃণা অহরহ । আমাদের আজের আলোচনায় এই বিষয়টা নিয়ে নয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে গেলে বিষয়টা এসে পড়ে। আমরা অর্থনীতির গতিপথের পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নে আসতে বাধ্য হই।  এই মোকাবিলার পূরোণ প্রশ্নটা নতুন করে সামনে আনছে।

আজ অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তন করে উৎপাদনের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হয়। অর্থিনীতিকে জনতার অর্থনীতি হিসেবে গড়ে তোলা দরকার যার উদ্দেশ্য হবে টিকে থাকার জন্য মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা। করোনা সংকট কেটে গেলে জনগণের রুটি রোজগারের সুযোগের দিকে লক্ষ্য রেখে অর্থিনীতির নবজাগরণের পথ প্রশস্ত করা। মনে রাখা দরকার যদি  দেশের মানুষ কঠিন লড়াইয়ের মাধ্যমে একটা জাতীয় সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে তবে সেই জনগোষ্ঠী প্রত্যয়ে ইস্পাত কঠিন হয়ে ওঠে। যদি অর্থনীতির কাঠামো সহায়ক হয় তবে পুনর্গঠনের কাজে সে সম্পদ হয়ে ওঠে। আজকে ভিয়েতনাম কিউবা চীন এর উদাহরণ। জারের অন্ধকার দিনের অবসানের পর বলশেভিক অভ্যুত্থান তার উদাহরণ। অন্ধকারচ্ছন্ন মধ্যযুগের অবসানের পর ইউরোপের দেশগুলো সেই উদাহরণ রেখে গেছে । প্রতিযোগিতামূলক বাজার অর্থনীতি তথা পুঁজিবাদ সে দৃষ্টান্ত রেখে গেছে  যেটা কার্ল মার্ক্স কমিউনিষ্ট ইশতেহারে লিখে গেছেন। শোষণ নিপীড়ন বজায় থাকলেও ইতিহাসে এটা সত্যি। আজ একচেটিয়া বিশ্বায়নের যুগে পুঁজিবাদের সে ক্ষমতা নেই। তারা সমরবাদ ভোগবাদ আর প্রকৃতি নিধনকে হাতিয়ার করে টিকে থাকে। অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে জনতার ইচ্ছা অনিচ্ছা তার উদ্যোগ সম্ভবনার সম্পর্ক থাকে না।  

আজকের এই আপদকালীন অর্থনীতিতে অগ্রাধিকার কোনটা তার দু একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। অর্থনীতির অভিমুখ বদলে একে জনমুখী করতে পারলেই সেটা সম্ভব। এটা না করতে পারলে দেশে ব্যাপক বিদ্রোহের সূত্রপাত হবে যেটাকে সন্ত্রাস নাম দিয়ে দমন করা যাবে না। রাষ্ট্রের ব্যর্থতার মুখে এই বিদ্রোহ মানুষের কাছে ন্যায্যতা পাবে। যেমন বলশেভিক বিদ্রোহ চীনের বিদ্রোহ ভিয়েতনামের বিদ্রোহ কিউবার বিদ্রোহ পেয়েছিল।  নতুন অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ওষুধ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উৎপাদন করতে হবে। সেই অনুযায়ী উপকরণকে চলতি ব্যবহার থেকে সরিয়ে বিকল্প প্রয়োজনীয় ব্যবহারে নিয়ে আসতে হয়। যেমন সমস্ত নাগরিকদের উন্নত মানের মুখ ঢাকার মুখোশ উৎপাদন দরকার হলে অন্যান্য বস্ত্র দ্রব্য বিশেষ করে বিলাস জাত বস্ত্রের উৎপাদন কমাতে হয়। তেমনি সাবানের উৎপাদন বাড়াতে হয়। সাবান উৎপাদনের যে একই উপকরণ অন্য কোন দ্রব্য ব্যবহারে কাজে লাগে সেখানে তার ব্যাবহার কমাতে হয়। উৎপাদনের এই অগ্রাধিকার বদলের দরকার হয় লাভের বিবেচনায় নিয়, প্রয়োজনের বিবেচনায়। এখন যেমন প্রয়োজনটা করোনা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়াই । যেটা সামাজিক প্রয়োজনে অবশ্যম্ভাবী। আর এ ব্যাপারে বেসরকারি উদ্যোগ তেমন উৎসাহী হয় না। সরকারের অংশগ্রহণ জরুরি। উৎপাদিত পণ্য ও সেবা  সামাজিক প্রয়োজনে যার দরকার সেই ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার। গরীব দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের খাদ্য দ্রব্যের ব্যবস্থা করা দরকার। টাকা ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে দ্রব্য ভিত্তিক একধরনের টিকে থাকার অর্থনীতির ভীত শক্ত করা দরকার ঘরে বন্দী থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইএ সার্থকতা পেতে। এটা না করতে পারলে কি অবস্থার উদ্ভব হতে পারে তা আজ টিভিতে যা দেখলাম সেটা থেকে বোঝা যায়। সেটা নিম্নরূপ।

বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে গৃহবন্দী ও মানুষের রুটিরোজগারের প্রশ্ন:

২৮/০৩/২০২০ তারিখে আজ টিভিতে ঘরবন্দি অবস্থায় দেখছি খোদ রাজধানী দিল্লীতে লক ডাউন উপেক্ষা করে ব্যাপক শ্রমজীবী মানুষ হাতে পিঠে মাল নিয়ে হেঁটে চলেছে। পুলিশ সংযত থেকেই জানতে চাইছে তারা কেন সরকারি আদেশ ভাঙছে কোথায় যাচ্ছে। আজকের অবস্থায় পুলিশ সংযম দেখাচ্ছে কারণ বল প্রয়োগ করতে গেলে মানুষ বিদ্রোহ করতে পারে বলে আজ সরকারও বুঝছে কারণ করোনার তান্ডবের ভয় থাকলেও তাদের রুটিরুজির তাগিদ বিপদের মুখেও তাদেরকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে। তারা যে ঘরে বন্দী থাকার প্রয়োজন বোধ করছে না তা নয়। তারাও সংযত থেকে জানাচ্ছে তারা অনাহারের সম্মুখীন হয়েছে। করনায় না হলে এই অবস্থায় দুর্ভিক্ষে মরবে। তাই তারা তাদের বহুদূর গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। বুঝি যদি তাদের রুটির ব্যবস্থা না হয় তবে আমরা পথে ঘাটে মৃত্যুমিছিল দেখব না হয় বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠতে দেখব। দুটোই অকাম্য পরিণতি। কিন্তু আমরা না চাইলেও এটা ঘটে যেতে পারে যদি না অর্থনীতির তথা উৎপাদন ও বন্টনের অভিমুখে খুব দ্রুত বদলে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। সরকার যদি ব্যর্থ হয়। বুঝতে হবে আমাদের দেশে দারিদ্র্য ব্যাপক। তার মুখে দাঁড়িয়ে সরকারের কঠিন ব্যবস্থা নিতে হয় যা বাজার অর্থনীতিকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনকে মান্যতা দেয়। গরিব মানুষের এই মনোভাবকে নিচের কয়েক ছত্রে তুলে ধরা যেতে পারে:

করোনা, পুষ্টি খোঁজ তুমি! ধননা দাও দুয়ারে আমার।জান না! পুষ্টি আমার জোটে না,তবে কেন এ দুয়ারে আবার? যাও অযথা বিরক্ত করো না। তুমি কি জান না? অপুষ্ট বুভুক্ষু আমি,পেটে ডন মারে ক্ষুধা পান করি অমৃত সুধা।কত দিন খাবার জোটে না। আমার কানে বাজে ওরা যেন বলে :

 মহাভয় আমি দুশমন
'মন্বন্তরে মরি না আমি 
মারি নিয়ে ঘর করি',
কাকে ভয় দেখাও তুমি!
'জাহান্নামে বসিয়া আমি
হাসি পুষ্পের হাসি'
আমি সৃষ্টি আমি ধ্বংস
মরকের দুনিয়ায় আমি যদুবংশ।

এই অবস্থায় ভারতের ভাগ্যাকাশে দুর্ভোগের সম্ভাব্য চেহারাটা তুলে ধরা যেতে পারে যেটা আমরা দেখছি খোদ রাজধানী সহ সব রাজ্যে:

নিঃশব্দে যাত্রা তাদের, পদযাত্রা নীরবে। শহর থেকে গ্রামে ফিরবে তারা ঘরে। সহায় সম্বলহীন লোটা কম্বল কাঁধে।যেতে হয় সেই সুদুরে লম্বা যাত্রা পথে। অসহায় তারা ফিরতে হয় নিজ দুয়ারে। এসেছিল খাবার সন্ধানে এ অজান শহরে।করোনার থাবায় সবহারা সম্বলহীন কাজ হারা রুটির সন্ধানী আদেশ ভেঙে নামে আসে পথে। কত যোজন যেতে হবে কত দূরে জানা নেই তাদের।নিজের অজান্তেই খিদের তাড়নায় রাষ্ট্রদ্রোহী তারা। ভাঙে রাষ্ট্রের নির্দেশ করোনার সংক্রমণ রুখতে। জানে তারা ডাক এসেছে মরতে হবে খিদেতে নয় করোনায়।

আমরা  এপার্টমেন্টে বসে নিশ্চিন্তে। খাদ্যের মজুত ঘরে।আশঙ্কায় কখন করোনা অতিথি দুয়ারে। ভাবি অবাধ্য এরা, মানে না রাষ্ট্রের নির্দেশ আজের এ দুঃসময়ে। মরবে নিজেরা মারবে আমাদের, অশিক্ষিত অবাধ্য সব।বন্দী কর ওদের, নয়তো গুলি বৃহত্তর স্বার্থে, বৃহত্তর কারা! ওরা না আমরা, বুঝিনা আমরা।

বন্দী তো করা চলে না, খাওয়াবে কে? আর যদি  বন্দীদশায় করোনার গ্রাসে ! সবার সর্বনাশ যে, উপায় কি তবে? যদি মারতে হয়, শবদাহ কেমনে, ভাবায় রাষ্ট্রকে।

ওপরে আলোচনায় অর্থনীতির গতিপথ বদলে উৎপাদনের ও উপকরণ ব্যবহারের পুনর্বিন্যাস এর প্রয়োজনটা আমরা দেখলাম। এটা করতে গেলে রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনের উপকরণের মালিকনার ওপর রাষ্ট্রের দখল দরকার। এর সঙ্গে দীর্ঘকালীন প্রেক্ষাপটে  ন্যায্য আয় বন্টনের ওপর জোর দিতে হয়। বেসরকারি মালিকনায় এটা করা সম্ভব নয়। প্রকৃতি সংরক্ষণ ও লক্ষ্য অনুযায়ী প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহারের দিকটা এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ন। এর সঙ্গে দীর্ঘকালে আওতাভুক্ত স্বরক্ষিত (sustanable) উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে গেলে অর্থনীতিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটা এসে পড়ে যা ব্যক্তিমালিকনায় মুনাফা ভিত্তিক অর্থনীতিতে সম্ভব নয়। তাছাড়া দীর্ঘকালে সবধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত করে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলতে হয়। এক কথায় আজের অর্থনীতির মন্দা এবং একইসঙ্গে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের কাছে সেই বার্তাই পৌঁছে দেয়। নিচের কয়েকটি ছত্রে আমরা সে কথা বলারই প্রয়াস পেয়েছি:

প্রিয় বন্ধু,

 সুপ্রিয় করোনা,
ভালো আছো নিশ্চয়। তুমি বেঁচে থাক বাঁচতে দাও আমাদের। তোমার অনুগ্রহে পেয়েছি অফুরন্ত ছুটি, বিনা খরচে খাবার.সঙ্গে ইন্টারনেট।শিখিয়েছ অপ্রয়োজনে গাড়ি না চড়তে, দূষণ না ঘটাতে না ছড়াতে,একটু হিসেব করে খরচ করতে। নিজেকে দূরে রাখতে শিখিয়েছ।আবার সহযোগিতার হাত বাড়াতে সংযত জীবন যাপন করতে হাবাতে না হতে বলেছ। এ সবই তোমার অনুগ্রহ সুন্দর এক পৃথিবী গড়তে। আমরা ফিরে যাব অরণ্য গহনে আদিম সে বন্য জগতে। বিচ্ছেদ  আমার আজের এ সভ্যতার সঙ্গে। ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি যে ভাবে চাও সেভাবেই চলব, বেচাল আর নয় একদম মানুষের মত মানুষ হব। শুধু প্রার্থনা আমার, তুমি বাঁচ বাঁচিয়ে রাখ আমাদের। অসময়ে যেন পটল না তুলি। আমি তুমি সবাই ভালো থাকি আজের এ আনন্দ লোকে।
আমরা কৃতজ্ঞ তোমার কাছে।

সশ্রদ্ধ প্রণাম তোমাকে।

এই সংকট কি বার্তা বহন করে:

আজকের বিশ্বব্যাপী এই সংকট কি বার্তা বহন করে সেটা আমরা দেখতে পারি:

১) একটা সমাজে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অবশ্য প্রয়োজনীয়। আর সে নিয়ন্ত্রণ হওয়া দরকার ব্যাপক সাধারণ মানুষের স্বার্থে। মুষ্টিমেয় স্বার্থগোষ্ঠীর জন্য নয়।এই নিয়ন্ত্রণ দু রকম: বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ  বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ যা ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে কারণ সমাজ ব্যক্তির ঊর্ধ্বে। সে নেহাৎ ব্যক্তির যোগফল নয়। তার নিজস্ব সত্তা থাকে সে সমাজের প্রতিভূ নেহাৎ ব্যক্তির নয়। সমাজের সামগ্রিক স্বার্থই সমাজ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য। এছাড়া দরকার আত্মনিয়ন্ত্রন যাকে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ বলা চলে। 

২) প্রযুক্তির বিকল্প ব্যবহার দরকার। যুদ্ধের জন্য নয় প্রকৃতি ধ্বংসের জন্য নয় ভোগবাদকে মদত করার জন্য নয়, ব্যাপক মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার।

৩) ঘটনা ঘটার পর তৎপরতা দেখানো নয়। সমস্যা কি হতে পারে তা আগাম ভাবা ও সেইঅনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ধরণ ঠিক করতে হয় দেশের সম্পদকে ব্যবহার করতে হয়। সমাজের অভিমুখ ঠিক করতে হয়। 

৪) দেশের সব স্তরের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তুলতে হয়, তাদের অধিকারকে নিশ্চিত করতে হয় কারণ আত্মনির্ভরে বলীয়ান সাধারণ মানুষই এই ধরণের বিপদ মোকাবিলায় হাতিয়ার। এই লক ডাউনের সময়ে সবার স্বার্থে তাদের সেবা ও শ্রমই পারে এই যুদ্ধে জিততে সাহায্য করতে। শুধু তাদের শ্রমের ফল গ্রহণ করা নয় তাদের প্রাপ্য তাদের দিয়ে তাদের আত্মনির্ভর করতে হয়। সাবধানতা অবলম্বনের জন্য নিজেকে আলাদা সরিয়ে রাখা জরুরি কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই একে অপরের জন্য না দাঁড়াই তবে আমাদের টিকে থাকাই সম্ভব নয়।

৫) ব্যক্তির টিকে থাকার প্রতিযোগিতা নয় মানুষকে বাঁচানো সমাজকে বাঁচানোর সংগ্রামীই জীবনের মন্ত্র। ব্যক্তি স্বার্থে নয় সমাজ স্বার্থে সামাজিক পুঁজি সে বুদ্ধিবৃত্তিই হোক আর মেহনতিই হোক ব্যবহৃত হতে হয়। 

কিভাবে করোনা আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্তরে আমরা ভূমিকা পালন করব সেটা ওপরের একটা লেখার কয়েক ছত্রে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।

আজ সারা পৃথিবী জুড়ে করোনার সংকট সভ্যতাকে কিভাবে উলঙ্গ করে দিয়েছে তা আমরা প্রত্যক্ষ করি। ইউরোপ আমেরিকার বৃহৎ শক্তিগুলি এই আক্রমণে দিশাহারা। গরিব বড়লোক নির্বিশেষে মৃত্যুমিছিল। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। যে আমেরিকা এতদিন অন্যের ঘরে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে আগুন লাগিয়ে নিজের ঘরে মুনাফা তুলেছে আজ তার ঘরে আগুন জ্বলছে। তারা একদিন হিরোশিমা নাগশিকায় বোমা ফেলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে প্রজন্ম ধরে মানুষকে প্রতিবন্ধী করে রেখেছে । সেদিন ইরাক সিরিয়াকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাসায়নিক অস্ত্রে আজ তারা তাদের সৃষ্ট কবরে কেঁদে মরছে। এর জন্য দায়ী কে তাদেরই বা দায় কতটা সেটা উদ্ঘাটিত হবে কি না জানি না। কিন্তু জানি অনেক না জানা কাহিনী অন্ধকারে বাতাসে গুমরে মরছে। সত্যি মিথ্যে একাকার হয়ে গেছে । আমাদের সেটা নিয়ে বাদানুবাদের সময় এটা নয়। মানবতা বিপন্ন। এর মুখে দাঁড়িয়ে একে বাঁচানোর লড়াই ই আজ প্রধান কর্তব্য। আমরা নিজের কাছেই নিজেরা পরাজিত। সেটা ভাষা পায় যখন কেউ বলে:

সুরাপাত্র হাতে থাক নিজ আবাসে
একান্তে নিজ গৃহকোনে,
দিও না নিজেরে সপি পরবাসে।
তার বিদায় কালে
আঘাত হানো তাকে
তার মরণকালে জেগে ওঠো সবে
মেল এসে সবার সাথে
বিরহ শেষে আনন্দ উৎসবে।

কিন্তু ওই যে দিন আনা গরিব শ্রমজীবী
বা ডাক্তার সেবিকা, যদি না থাকে পাশে,
যদি সরিয়ে রাখে তোমায় দূরে,
করোনার ভয়ে ত্রাসে
 যদি  না আসে তোমার  দুয়ারে,
চাল ডাল সবজি সেবা
কিছুই জোটে না কপালে
পৌঁছয় না কিছু তোমার ঘরে,
তুমি থাক অনাহারে।

তাকে যে আসতে দিতে হয়,
দূরে রেখে করোনা আতংক ভয়,
তুমি কি নও আজ নিঃসঙ্গ
নিজের কাছেই নিজে উলঙ্গ?


কি কে কেন:

করোনা ভাইরাস কি কিভাবে তার উদ্ভব সেটা আমার পক্ষে  বলা ঠিক না আমি আগেই স্বীকার করে নিচ্ছি। কারণ এ বিষয়ে আমি বিশেষ কিছুই জানি না। কোন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সেটা জেনে নেওয়া ভালো। কিন্তু সে কে এবং কেন তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। অনেকে বলছেন এটা প্রকৃতির অঙ্গ। মানুষের ইচ্ছাকৃত সৃষ্টি নয়। মানুষ এখনও তার উদ্ভবের কারন যেমন জানে না তেমনি এর বিরুদ্ধে প্রতিকারের অস্ত্রও তার হাতে নেই। মানুষ সাবধান হয়ে তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে পারে মাত্র। আরেকটা মত এটা মানুষেরই সৃষ্টি। আজ পৃথিবীব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ জয় করতে  জৈবিক অস্ত্র নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা, তার প্রয়োগের ফল এটা। যুক্তিটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতে বার বার রাসায়নিক অস্ত্র হাইড্রোজেন বোমা জৈবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। পশ্চিমী দুনিয়ার কর্পোরেট জগতের রক্ষক রাষ্ট্র এটা করেছে। ফ্যাসিস্ট হিটলার জিলটিনে হত্যা করেছে অসংখ্য মানুষ। মার্কিন নেতৃত্বে জাপানে হিরোশিমা নাগাশিকায় হাইড্রোজেন বোমা ফেলার সে ভয়ংকর খবর আমরা জানি। এই সেদিন ইরাক সিরিয়া বিরাটে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তারা। প্যালেস্টাইনে ইজ্রাল তার তাবেদার। আজ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের কথা সবার জানা। আর চীনও সমাজতন্ত্রের পথ থেকে সরে এসে বাণিজ্য যুদ্ধে আমেরিকাকে টক্কর দিচ্ছে। তার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে নেমেছে। দেশের আর্থ সামাজিক অভিমুখ বদলে ফেলেছে। আর চীনে উহানে আজের এই সংকটের সূত্রপাত বলে চীনের দিকে আঙ্গুল উঠেছে। আর কমিউনিস্ট দল যখন পাল্টি খায় পুঁজিবাদের পথ ধরে আদর্শ বিসর্জন দেয় তখন তারা এই অমানবিক কাজ করতে পারে না তা আমরা মনে করি না। বরং তারা আরো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তবে আমরা নিশ্চিত নই। এই প্রসঙ্গে আমরা মাও সে তুংয়ের  ব্যক্তিপুঁজির পথ বাতিল করে উন্নয়নের পথে এগোবার কথা তুলতে পারি। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার কথা তখন বলা হয়। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে ব্যক্তির স্বার্থপর চরিত্র এর বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলা হয় যেটা মূলত ভোগবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। পশ্চিমী পুঁজিবাদের পথ বর্জনের কথা তিনি বলেন। বাণিজ্য যুদ্ধের পথ থেকে দেশকে দূরে রাখেন। সে লড়াই তিনি শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন নি। আমলা পুঁজির প্রবর্তকরা পার্টি দখল করে ও পরে ক্ষমতায় আসে।পার্টির ভেতরে স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে মাও পরাজিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর সেখানে অবস্থা বদলে যায়। চীনে বা রাশিয়ায় আজ বাস্তবতাটা উল্টো । তাই করোনা আক্রমণের পেছনে আজ কে সেটা আমরা নিদৃষ্ট করে বলতে পারছি না। কোনদিনও সত্য উদ্ঘাটিত হবে কি না জানি না। আমার এই বিভ্রান্তিকর অবস্থাটাকে উজান ব্যানার্জির লেখা নিচের কয়েক ছত্রে আমরা প্রকাশ করতে পারি:

ছড়ায় নড়ায়॥

ওরে ভাই ভাইরাস !
যাকে তাকে কামড়াস ,
কোথা তোর হয় চাষ 
নিজে নিজে জন্মাস ?

নাকি তুই আলাদিন,
বোতলের ভরা জিন 
যুদ্ধের মহড়ায় ,
নেচে ওঠে তাতা ধিন ।

হয়ে আজ বুমেরাং 
পৃথিবীর যত গ্যাং 
জন ডন মেরী চ্যাং 
ডাকছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।

এরই মধ্যে একটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এসে পড়ে। দিল্লীতে পুলিশের নাকের ডগায় অনুমতি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের একটা মুসলমান সংগঠন প্রতি বছরের মত ধর্ম্মীয় সভা করল যেখানে দেশ বিদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার জন দিল্লিতে চলা লকডাউন উপেক্ষা করে হাজির হয়। এর সংগঠকরাই বা কেন বিদেশ থেকে এত জন মানুষকে নিয়ে জমায়েতটা করল প্রস্তাবিত সভাটা বন্ধ না করে সেটার উত্তর নেই। আর তখন দেখা যাচ্ছিল বিদেশ থেকে উড়ানে এদেশে আসা মানুষদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াচ্ছে। দেশে বিদেশী উড়ান বন্ধ করার দাবী উঠতে শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু উড়ানের ক্ষেত্রে লকডাউন পরে হল। এই সুযোগে কারা এই কুকীর্তি করার সুযোগ পেলে তার যথাযথ তদন্ত কোন দিন হবে কি? ষড়যন্ত্রকারীর মাথা হয়তো দেশেই আছে।  কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সভা করার খবর ছিল। রাজ্য সরকারই বা এটা কি করে এড়িয়ে গিয়ে অনুষ্ঠান করতে দিল। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দিল্লীর পুলিশ প্রশাসন। আর এর দুদিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক সংকটের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণা করলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আবেদন জানিয়েও কাসর ঘন্টা বাজিয়ে জনতা কারফু উৎসব পালন করতে উৎসাহ দিলেন নিজের মহাত্মা স্বমহিমায় প্রচার করার জন্য। মানুষের উন্মাদনায় ঘি ঢালা হল যেন উন্মাদনার আগুনটা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচির প্রাচীর ভেঙে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব নয় উন্মাদনার সামাজিক একাত্মতার গলা চড়াতে পারে। তখন সামাজিক দূরত্ব নীরবতা নয় ঘনিষ্ঠতা সরবতাটাই রাজনৈতিক হাতিয়ার। 

লক্ষণীয় যে সংগঠকদের সক্রিয় উদ্যোগে ও আমাদের দেশের শাসক সম্প্রদায়ের নীরব সমর্থনে ধর্ম্মীয় ভাবাবেগ  মানুষের প্রানের থেকেও বড় হয়ে গেল। একই সঙ্গে দেখা যায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হিন্দুদের পুজোর জমায়েত হচ্ছে। সারা ভারত ধরে গোমূত্র সেবনের জন্য আঞ্চলিক স্তরে জমায়েত। পুলিশ প্রশাসন সব ক্ষেত্রে নীরব। এর পেছনে কার কোন স্বার্থ কোন রাজনীতির খেলা? হিন্দু মুসলমানের মধ্যেকার বিভেদটাকে জিইয়ে রাখার অপচেষ্টা বললে কি ভুল হবে? সেটা যেখানে সব সাম্প্রদায়িক শক্তির মূলধন। আর তাতে সব সাম্প্রদায়িক শক্তি একজোট। অথচ  এই বিশেষ অবস্থায় ধর্মীয় জমায়তকে বন্ধ করলে সাধারণ মানুষ হিন্দুই হোক আর মুসলমান হোক কেউই আপত্তি করত না বলে আমাদের বিশ্বাস। সাম্প্রদায়িক শক্তির চেহারাটা বেরিয়ে আসত সে যে ধর্মের সাম্প্রদায়িক শক্তিই হোক না। এই ধরণের সাম্প্রদায়িক সংগঠকএর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রশক্তির একধরনের আঁতাত আমরা বরাবরই দেখি। ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতির খেলা। আর এর জন্যই দেখা যাচ্ছে বিদেশ থেকে আসা সাম্প্ৰদায়িক শক্তি খেলে যেতে পারছে। আজ নিজামুদ্দিনে এই ধর্মীয় সভা করা এবং করতে দেওয়ার জন্য এতজন মানুষ সরকারি হিসেবেই মারা গেল ও আক্রান্ত হল। এর দায় কেন হিন্দু বা মুসলমান সাধারণ মানুষ নেবে। আর সংবাদ মাধ্যম বা বিরোধী দল এত খবর রাখে আর বছরের পর বছর চলে আসা এই অনুষ্ঠানের কথা জানত না? এটা কি বিশ্বাস করতে হবে আমাদের। তাদের মুখে কুলুপ কার স্বার্থে কার নির্দেশে। তারা এটা নিয়ে কথা তুলল না কেন? এত নীরবে খেলাটা খেলতে দিল কেন? ঘটনার পর আজ তাদের গলাবাজি। খেলাটা কোথায় কার স্বার্থে সে প্রশ্নটা বোধহয় করোনা ভাইরাস কি কেন কার জন্য প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত। জানা যাচ্ছে ইটালিতেও খেলার মাঠে জমায়েত থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছে। তবে কি কোন স্বার্থ গোষ্ঠী এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে? এর সঙ্গে এক এক দেশের এক এক ধরণের স্বার্থ গোষ্ঠী যেমন ধর্ম বা খেলা  কি জড়িয়ে যাদের সাহায্যে এই কুৎসিত মানবতা বিরোধী কাজ চলছে বিশ্বিজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে? আমরা সাধারণ মানুষরা অংক মেলাতে পারি না।

মনুষের খাওয়া পড়ার সমস্যা ও করোনা  ভাইরাস:

আজ করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইএ যে লকডাউন কর্মমসূচী তাতে এক্ষুনি সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত পরিযায়ী দিন আনা কোটি কোটি  শ্রমিক যারা গ্রাম থেকে শহরে শ্রম বিক্রি করতে আসে। তারা ঘিঞ্জি বস্তিতে থাকে। একবেলার বেশি খাদ্যের যোগান তাদের থাকে না। ঘিঞ্জি ঘরে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা তাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই এখানে শুরু হলে সক্রমন সম্ভবনা প্রবল। তবে এই রোগ উচ্চবিত্তদের ধরে শুরু হওয়ায় আর তাদের সঙ্গে এদের সামাজিক দূরত্ব এমনিতেই বজায় থাকে তাই এখনও এই গরিবমানুষদের মধ্যে এর মরক দেখা যায় নি।  এই অবস্থায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের রোজের আয় বন্ধ। শুধু খাদ্য নয় তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপকরণ দূরত্ব বজায় রেখে চলার দায় খাদ্যের যোগান সব সরকারের ওপরই পরে। কারণ তাদের যারা নিয়োগ করে তারা কোন দায় নেয় না আর এই ব্যবস্থায় নিতে তারা বাধ্য নয়। তাই সরকারকে তার বাজেটের অভিমুখ সম্পুর্ন বদলে ফেলতে হয় যাতে জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করা যায়। আর এই শ্রমিকরা সেটা না পেলে নিজের গ্রামে পালিয়ে বাঁচতে বাধ্য হয়। সেই প্রক্রিয়া যে শুরু হয়ে গেছে সেটা আমরা দেখেছি। এখানে সরকারের সাহায্য না পেলে বিদ্রোহ ঘটতে পারে। এটা সীমিত মাত্রায় হলেও ঘটে চলেছে। বড় আকার ধারণ করলে রাষ্ট্রের স্বরূপটা আমরা দেখব বলে আশঙ্কা আমাদের। এখানে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্তরা প্রাথমিক পর্যায়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে গলা মিলিয়ে এদের অবাধ্য তাদের বিপদের কারন বলে চিহ্নিত করবে। কিন্তু বেশিদিন চলতে থাকলে এই সংকট মধ্যবিত্ত এমন কি একটা উচ্চবিত্ত অংশকেও গ্রাস করবে কারন তাদের জীবিকাও বিপন্ন হবে। তখন তারা বুঝলেও দেরি হয়ে যাবে। বাজার ব্যবস্থার মধ্যে এর সমাধান নেই। বরং বাজার ব্যবস্থা অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনে। সেটা চাপা দিতে মানুষকে মানসিক মন্দার মধ্যে রেখে তাকে করোনা আতঙ্কে আতঙ্কিত রাখার চেষ্টা হবে যাতে জীবনে রুটি রোজগার নিয়ে গড়ে ওঠা বিক্ষোভটা দানা না বাঁধতে পারে। একটা নিয়ন্ত্রিত জনতার স্বার্থে পরিকল্পিত ব্যবস্থাই পারে এর মোকাবিলা করতে। চীনের উহানে যদি মোকাবিলা কিছু হয়ে থাকে এইজন্যই হয়েছে যেখানে মানুষের চেতনায় একটা সমাজতন্ত্রের ভাবনা এখনও আছে। তারা জাতীয় সংকটে একজোট হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আর রাষ্ট্র নিজের তাগিদে মানুষের এই আবেগকে কাজে লাগায় তার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে।

লেখক কে আমি চিনি না।কিন্তু, তাঁর পাঠানো একটুকরো সংগৃহিত লেখা যেটা আমাদের আলোচনা প্রসঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক সেটা  নীচে তুলে ধরলাম:

আমি গ্রামের এক অতি সাধারণ মানুষ।অল্প জমিতে ভাগ চাষ করি আবার দিন মজুরিও করি।ক দিন আগে পাড়ার ক্লাবে টিভিতে দেখছিলাম,এক শহুরে  বাবু বলছেন "লক ডাউন হলে গ্রামের রোজ আনা রোজ খাওয়া মানুষ গুলোর কি হবে"। আমি বলি বাবু গো আমাদের নিয়ে তোমাদের এতো চিন্তা করতে হবে না। দেশের যদি  ভালো হয়, তো আমরা এইটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারবো। আমরা দিন মজুর, বছরের সব দিন কাজ পাইনা, কত দিনই তো আমাদের বসে থাকতে হয় তবুও তো আমাদের চলে যায়। আমাদের বাড়িতে কিছু চাল আছে, ক দিন আগে চাষিদের আলু কুড়াতে যাচ্ছিলাম,তারা বেতনের সঙ্গে  কিছু আলুও দিতেন। বাড়িতে চার ছয় বস্তা আলুও মজুত আছে। বাড়ির উঠানে কুমড়ো গাছে কুমড়ো, লাউগাছে লাউ, কাঁঠাল গাছে এঁচোড় ধরে আছে।বাড়ির পাশের ডোবায় কলমিলতা,ডোবার ধারে নটেখটে শাক আরো কতো কি। এসব দিয়ে আমাদের একুশ দিন কেনে তিনচার মাস দিব্যি চলে যাবে।কিন্তু এখন দেখছি যারা আমাদের নিয়ে চিন্তা করছিল, তাদের একদিনও বাড়ি থেকে না বেড়ালে চলছে না।শহরের বাবুদের বাড়িতে দামি টিভি আছে, ঘর ঠান্ডা করা  মেশিন আছে, ফ্রিজ আছে, ভরি ভরি গহনা আছে,পাঁচ আঙুলে পাঁচটা দামি পাথর বসানো আংটি আছে,দুটো দুচাকা, দুটো চারচাকা দামি গাড়ি আছে আরো কতো কি। কিন্তু বেঁচে থাকার আসল রসদ,খাবারটা যে তাদের নাই।এরাই তো দেখি আসল "রোজ আনা রোজ খাওয়া" মানুষ। তাইতো তারা লক ডাউন ভেঙে দলে দলে বাইরে বেড়াচ্ছে, আর দেশের অবস্থা ভয়ংকর হচ্ছে। এদের কাছে ধনদৌলত আছে শিক্ষা আছে তবুও এরা অবুঝ,দেশের দশের ভালো এরা কোনো দিনই বোঝেনি, এখনতো দেখছি নিজের ভালোও এরা বুঝতে চাইছে না।আমাদের বাড়ির ছেলেরা ভিন রাজ্য থেকে (মজদুরি করে)এসময়ে ফিরে এলে আমরা তাদের বাড়ি ডুকতে না দিয়ে গাছের ডালে মাচা করে রেখে দিতে পারি।আর উনারা আক্রান্ত হলে তা গোপন করে সমাজে মারন ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। হায়রে শহুরে বাবু  শত ধিক তোমাদের। শহরে এই মারন ভাইরাস প্রকোপ দেখালেও গ্রামে এখনো থাবা বসাতে পারেনি। হয়তো শহর থেকে গ্রামেও একদিন ছড়িয়ে যাবে এই মারন রোগ আর কোনো অপরাধ না করেও আমাদের জীবন যাবে। তাই ঈশ্বরের কাছে আমাদের মিনতি,হে প্রভু শহুরে মানুষগুলোকে সুবুদ্ধি দাও আর রক্ষা কর এই পৃথিবীকে।
৷৷ ৷৷ ৷৷    ইতি - এক দরিদ্র চাষী ৷৷৷   (লেখক- তরুণ ঘোষ )

উপসংহার:

আমরা আমাদের আলোচনায় আজ কোন দেশের আর্থসামাজিক জীবনে রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকার অনিবার্য গুরুত্বের ওপর আলোচনা করলাম। আমরা মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিভিন্ন ভাবে রাষ্ট্র ভূমিকা পালন করে এসেছে বলে  দেখি যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ হয় নি আমাদের এই ছোট প্রতিবেদনে। আমরা জানি মানব সমাজের ইতিহাসের একটা পর্যায়ে ধর্মতন্ত্র একটা সময়ে রাজতন্ত্র কখনও গণতন্ত্র আবার কখনও একনায়কতন্ত্র কাজ করেছে। তবে সব অবস্থাতেই রাষ্ট্র একটা না একটা শ্রেণীর হাতে দমনের হাতিয়ার। সেই দিক থেকে দেখলে রাষ্ট্র একটা প্রয়োজনীয় অশুভ বা evil শক্তি বলে মনে করার কারণ আছে যেটা বলে গেছেন মার্কস সহ অনেক  দার্শনিকরা। তাঁরা মনে করেন শ্রেণী শোষণ বন্ধ হলে রাষ্ট্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। লেনিনের মতে রাষ্ট্র শোষণহীন সমাজে উবে যাবে। আমরা এই বিষয়ের ওপর আলোচনায় আসছি না। আজকে ঐতিহাসিক অবস্থায় রাষ্ট্র প্রয়োজন কোন নিদৃষ্ট দেশে। সেখানে পৃথিবী করোনা আক্রমণের মুখে পড়ার আগেও রাষ্ট্রের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ন তা দেখেছি। ইতিহাসে প্রকৃতির বিপর্যয়ের মুখে এটা বার বার দেখা গেছে। ধর্মীয় শাসনকালে রাজতন্ত্রের আমলে বা একনায়কতান্ত্রিক শাসনে দেশের আর্থসামাজিক জীবনে রাষ্ট্রের ভূমিকাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। অর্থনীতিতেও রাষ্ট্রের অংশগ্রহন স্বীকৃত। আজ গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী দেশে যেখানে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকাকে তেমন স্বীকার করা হয় না সেখানেও চোখে আঙুল দিয়ে রাষ্ট্রের ভূমিকা কি তা দেখিয়ে দিচ্ছে। আজ সমরবাদ ভোগবাদেকে অস্বীকার করে আওতাভুক্ত স্বরক্ষিত (inclusive sustainable) উন্নয়নের স্বার্থে সেটা যে কতটা জরুরি সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি আমাদের আলোচনায়। তার মানে এই নয় যে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের অর্থনীতির ত্রুটি নেই। অতি মাত্রায় নিয়ন্ত্রন মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী হয়ে যেতে পারে, আমলা পুঁজির মাধ্যমে একধরনের পুঁজিবাদ দেখা দিতে পারে যা আমরা আজের রাশিয়া বা চিনে দেখি। তত্ত্ব গোপনের প্রবণতা দেখা দিয়ে সমস্যাকে জটিল করে তুলতে পারে। সমাজতান্ত্রিক দেশেও এই সমস্যার উদ্ভব হতে দেখা যায়। এগুলো মাথায় রেখেই আমরা জনতার অর্থনীতির কথা বলেছি । আজ সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে প্রাকৃতিক সংকট মানব সভ্যতাকে এক নতুন সংকটে ফেলেছে যার ফলে ধনি গরিব সবাই সংকটের মুখে। মানুষকে এই সত্য উপলব্ধি করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে জাত্যাভিমান দূর করে সমরবাদ ভোগবাদ আর প্রকৃতি নিধন যজ্ঞের বিরোধতায় নামতে হবে রুটি রুজির লড়াই তথা অর্থনৈতিক লড়াইকে  সামনে রেখে। এখানেই বিকল্প জনতার অর্থনীতির দাবি। দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষকে কর্মক্ষম রাখতে তাদের অফুরন্ত ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে আত্মনির্ভর ও উন্নত করে তুলতে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, স্বাস্থ্য শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন বাড়িয়ে সুষ্ঠ বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাকে মানুষের কাছে পৌঁছই দিতে হয়।
আর এর হাতিয়ার গরিব নিম্নবিত্ত ঘরের মানুষরাই হারা এই সংকটকালে দূর দুরন্ত থেকে খাদ্যদ্রোবয় পৌঁছে দিচ্ছে জল পৌঁছে দিচ্ছে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। এর সঙ্গে আছেন ডাক্তার নার্সরা। করোনার আক্রমণের মত বিপর্যয় মানুষকে বার বার এই বার্তা দিয়ে যাচ্ছে দিচ্ছে যে নিজেকে অফাতে রাখলেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইটা লড়তে হয়। বর্ণ ধর্মের বিভেদের সংষ্কৃতি লড়াইটা লড়তে দেয় না।ওI আর করোনার বিপদ কেটে গেলেও এই ব্যবস্থা বজায় রাখতে হয় যেটা বাজার অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল কর্পোরেট অর্থনীতির পক্ষে করা সম্ভব নয় কারণ বাজার  অর্থনীতি মুনাফাকে লক্ষ্য রেখে পরিচালিত হয়। এর জন্যই আমাদের দাবি জনতার অর্থনীতি। আজ দেখা যাচ্ছে লক ডাউন করে অন্তত ভোগের ও বন্টনের দিক থেকে এক ধরণের খেয়ে পড়ে টিকে থাকার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর প্রকৃতি দূষণ তথা বাতাস আকাশ জল দূষণ কমে প্রকৃতির ভারসাম্য অনেকটা ফিরিয়ে আনা গেছে। এর জন্য দরকার অর্থনীতিকে সেইভাবে পুনর্গঠিত করা মানুষের জীবন যাপনকে সেই অভিমুখে চালু করা। এর জন্য দরকার সমরবাদ ভোগবাদ থেকে সরে এসে জনতার অর্থনীতি গড়ে তোলা। পুঁজিবাদী অর্থনীতি থেকে সরে আসা। এটা যদি না হয় তবে ইতিহাস নিজের পথ নিজে বেছে নেবে। শোষণ বজায় রেখে রাষ্ট্রকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মানব সভ্যতাকে বাঁচানো যাবে না। আমরা জানি পুঁজিবাদ আর পুঁজিবাদীরা স্বেচ্ছায় সে পথে যাবে না। তাই অপেক্ষা করছে ওরা যেটা ভয় পায় সেই অবশ্যম্ভাবিকতা তথা সমাজ বিপ্লব। আর গরিব মানুষের মধ্যে যে কি অফুরন্ত ইচ্ছাশক্তি আর ক্ষমতা লুকিয়ে আছে সেটা আমরা বুঝি যখন দেখি আজকের সংকটের অবস্থায় বেঁচে থাকার তাগিদে ৪০০-৫০০ কি মি পথ তারা কিভাবে অনায়াসে পারি দিতে পারে খুব অল্প সময়ে কোন বাহ্যিক সাহায্য ছাড়া, পথের সব বিপদ অস্বীকার করে, জীবনকে তুচ্ছ করে।

আমরা সব শেষে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হলে কোন পথে মানব সভ্যতার এগিয়ে যাওয়া কাম্য তা নিয়ে অরুন্ধতী রায়ের বক্তব্য তুলে ধরতে পারি যা আমাদের উপরোক্ত প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সার বলে বিবেচিত হতে পারে:

"আর যাই হোক না কেন মানতেই হয় করোনা ভাইরাস আজ সভ্যতার অহং ভেঙে দিয়ে তাকে নতজানু হতে বাধ্য করেছে, পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে যা আর কেউ করতে পারেনি। তাও আমাদের পেছন ফেরার তাগিদ। সব ঠিক হয়ে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কাঁদুনি। মানুষের ভবিষ্যতকে পরিত্যক্ত অন্ধকার অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেখানে তাকে বেঁধে দেওয়া যেখানে শুধু এই ভয়াবহতা ফিরে আসার আতঙ্ক। অস্বীকার করা এই ধ্বংসলীলা। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দরকারকে বাতিল করা। অথচ এই ধ্বংস লীলাটা বাস্তব সত্যি। এটাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছে যে আমাদের অবিমিশ্রকারিতাই আজ আমাদের এই সর্বনাশ ডেকে এনেছে। ধ্বংসের এই হাতিয়ার আমাদেরই সৃষ্টি। তথাকথিত 'স্বাভাবিকতা' তথা ভারসাম্য ফিরে আসার থেকে খারাপ আজ আর কিছু হতে পারে না। ইতিহাসে দেখা যায় করোনা ভাইরাসের মত  ভয়াভয়তাই মানুষকে বার বার অতীত ভেঙে নতুনের পথে এগোবার স্বপ্ন দেখায়। এক পৃথিবী থেকে নতুন এক পৃথিবীতে প্রবেশের পথ খুঁজে বার করতে বাধ্য করে মানুষকে। পূরণ বাতিল হওয়া পথে আবার আমরা ঘৃণা শোষণ কুসংস্কার মৃত ভাবনা রাশি রাশি বস্তাপচা তত্ত্বের ও তথ্যের ভার বহন করে বিচরণ করতে পারি।সঙ্গে থাকবে মজে যাওয়া স্রোতহীন নদী, ধোয়াচ্ছন্ন আকাশ। সেক্ষেত্রে অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলবে। অথবা আমরা ধীর প্রত্যয়ী পায়ে অল্প রসদ নিয়ে নতুন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারি। নতুন পৃথিবী গড়ার যুদ্ধে নামতে পারি।"

অরুন্ধতী রায় 


নিচে কয়েক ছত্রে আমি আমার শেষ যা বলার বলে শেষ করছি।

দিন শেষে

আজ এ কি ভয়ঙ্কর নির্জনতা
সযত্নে সৃজিত এ কি বিচ্ছিন্নতা,
বনানী শোনে না বাতাসের মর্মর
পল্লব ঝরে বসন্তে ঝর ঝর,
এ কোন বনানী মাঝে নির্বাসন
সমুদ্রের অতলে গরল মন্থন।

পূর্ণিমার রাতে এ কি অন্ধকার ঘনায়!
আকাশের নীলিমায় তুফান বয়ে যায়,
নিস্তব্ধ বনানী মাঝে আদিম চিৎকার
সাজিয়ে এসেছে ব্যাপারী পণ্যের কারবার,
আপন কুকর্মে আজ নিজেই কুপোকাত
বাতাসে তুফান আকাশে বজ্রপাত।

আমি বসে গৃহকোনে সৃজি নির্জনতা
বনানী মাঝে সে এক ভয়ংকর নীরবতা,
সযত্নে সৃজিত এ কি বিচ্ছিন্নতা!
চিন্তার জগতে এ কি দৈনতা,
ভোরের সকালে অন্ধকার কুয়াশা
পূর্ণ চন্দ্র রাতে অন্ধকার তমসা,
আমার রাত কাটে বিরহ শয্যায়
চেতনার আকাশে সাইরেন বেজে যায়।

এ নিশি রাতে তবু আমি অপেক্ষায়
পুরানো দুনিয়ার খোঁজে আমি নেই আর,
নতুন পৃথিবী আজ আমার চেতনায়
আমি হাঁটি উদয়ের পথে,
 নতুন সূর্য উঠবে রাত শেষে সে বেলায়।

আজ পুরোনোর বিদায় বেলায়
নতুন পৃথিবীর অন্বেষণ আমার
নতুন দিগন্ত আমার চেতনায়,
বনানীর ভোরে নতুন কিশলয়
শীত শেষে বসন্তের আগমন
পূব দিগন্তে নতুন সূর্যের উদয়,
খরস্রোতা নদী পথ খুঁজে পায়
আমার  ডিঙা উজানে দাঁড় বায়
মিলবে সে গিয়ে জীবন মোহনায়,
যুদ্ধ শেষে আমরা মিলি এসে
নব দুনিয়ার কল্লোলিত আঙিনায়।

====================

রণেশ রায়
০২/০৪/২০২০

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

রেজাল্ট ।। সৈকত মাজী

রেজাল্ট সৈকত মাজী শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।    " মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক  দিলো শুভ্রাংশু।    " কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।     " ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো"  কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।      " না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও"  মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।      শুভ্রাংশু...

রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি

রাই আর বাবা অদিতি চ্যাটার্জি রাই-র জীবনে বেশ কিছু ভালো লাগা আছে তার মধ্যে একটা হলো সন্ধ্যার সময় তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দেওয়া ।" আজ যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে বেশ ভিড়,নির্ঘাত 'তেলে ভাজা ' প্রেমীরা।" আপন মনেই ভাবে ও, কিন্তু বসার ঘরে সুমন আর আঁখি এতো জোরে 'হল্লা গোল্লা ' করছে তালতলার জমজমাট রাস্তার দিকে আর মন দিতে পারছে না রাই।  পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়ায় রাই, দেখে ক্লাস ফোরের মেয়ে এতোটা ঝগড়া করছে সুমনের সাথে , "বাপ রে, কবে এতোটা কথা শিখলো মেয়ে! কিভাবে কথা বলছে?? কোঁকড়া চুল ঝাঁঝিয়ে,গোলগাল হাত নেড়ে " ...মেয়ে কে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাই। এদিকে আঁখি বলছে, "ধুত্ বাপী তুমি কিচ্ছু পারো না, তুতাই-র বাবা, পিসাই, মামু সবাই কত ভালো করে খেলতে পারে , না আমি তোমার সাথে খেলবো না।" কাতর চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সুমন বলে ,"আচ্ছা তুই আমাকে শেখা, দ্যাখ আমি কার জন্য আলিপুরদুয়ার থেকে পনেরো দিন পর পর কলকাতায় আসি বল!"  ঐ টুকু মেয়ে কথা প্রায় না শুনেই ঘরে চলে গেল রাই-র চোখের সামনে, সুমন একবার হেসে বাথরুমের দিকে এগো...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী

বস্তু, চেতনা এবং  কবি সজল চক্রবর্তী  "যেখানে পৌঁছায় না রবি,, সেখানে পৌঁছে যান কবি।" এই ছোট্ট কবিতা টি অনেক পুরনো  এবং বহু পরিচিত, তথাপি এর তাৎপর্য এখনো হারায় নি। তবে, কথা হ'চ্ছে -আমরা তো  রবি-কবিকে একত্রেই পেয়ে যাই আমাদের ঋষি-প্রতিম কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। আর তখনই জেনে যাই উপরোক্ত ছোট কবিতার প্রণিধানযোগ্যতা ।  ... এবার শুনে নেয়া যাক, ঋষি-প্রতিম কবির মুখ নিঃসৃত বাণী:- "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি যাই ...." অর্থাৎ আমাদের প্রিয়তম কবি অনায়াসে পৌঁছে যান সৃষ্টির অসীমে , যা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এখানে কবির চেতনা সুদূর প্রসারী! ... প্রকৃত প্রস্তাবে কবি অতিন্দ্রীয় জগতের এক নাগরিক। তাঁর কাছে তাই চেতনা বা চৈতন্যেরই প্রাধান্য। ...এখন আসছি, বস্তু এবং চেতনার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে।  ... আমি একজন অতি সাধারন মানুষ, তাই এই ব্যাপারটাকে কবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ক'রছি। তবে আমার সামান্য জ্ঞান থেকে একটা সাধারণ কথা সেরে নি'। আমরা সাধারণত ব'লে থাকি-- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। প্রকৃত অর্থে কি তাই ? আসলে সূর্য যেদিকে ওঠে ,আমরা  সেই দিকটাকে নামাঙ্কিত ক...

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি  (পর্ব—সাত) অরবিন্দ পুরকাইত স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০, নববর্ষ ১৪৩১ ও কার্তিক ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল। নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তা বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে। আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল। অখেজো/অখেজে — অকেজো থেকে। আদরের তিরস্কার হিসাবেই মূলত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পাজি। অচিমিতি — (উচ্চারণ ওচিমিতি) আচমকা, হঠাৎ। অদীয় — প্রচুর, অজস্র। অদ্বিতীয় থেকে ক...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায়

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত রণেশ রায় ভূমিকা দর্শনের ইতিহাসে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক মানবচিন্তার গভীরতম প্রশ্ন। অধিবিদ্যা ভাবকে মুখ্য ধরে, বস্তুকে গৌণ বলে মনে করে। বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন—বস্তুই মুখ্য এবং চেতনা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ যখন প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল, তখনই সে বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিল—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর এই দৃশ্যমান জগতের বাইরে কিছু আছে কি? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিয়েছিল দর্শনের দুই বিপরীত স্রোত—ভাববাদ আর বস্তুবাদ। ভাববাদ বলেছিল—"ভাবই প্রথম," আর মার্কস বললেন—"না, বস্তুই প্রথম।" এই দুই প্রান্তের মাঝখানে আমি দেখি এক সেতুবন্ধন, যেখানে বস্তু, স্নায়ু ও চেতনা একে অপরকে গড়ে তোলে, আর তাদের এই ত্রিত্বের নৃত্যেই সৃষ্টি হয় জীবন ও কল্পনার জগৎ। ভাবববাদ এক সর্বশক্তিমান শক্তির কল্পনা করে যা এই বস্তুজগতের স্রষ্টা। আর এখান থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় ভাবধারার সৃষ্টি। আমার এই প্রবন্ধে আমি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক আলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি দেখাবার চেষ্টা করবো কিভাবে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুজগৎ বস্তু ও চেতনাকে সংযুক্ত করে এবং কল্পলোকের জন্ম দেয়...

চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার

চাঁদে জীবন  শমীক সমাদ্দার                           চন্দ্রযান দুরন্ত তৈরি, রকেটের উপর ভর করে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরিয়ে মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে  স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রাযান চাঁদের মাটিতে পা রাখবে সময়ের কাউন্ট ডাউন চলছে। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ স্পেসস্কাই গাবেষণা কেন্দ্র কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান অতল গভীরতায় বাসা বাঁধে। পরিচয়টা দিয়ে দিলাম এই স্পেসসিপে রয়েছে তিনজন নভোচর, একজনের নাম সাইমন আর এক জনের নাম রেমন্ড, আর এদের সঙ্গে একজন মহিলা আছে তার নাম মেরিনা। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। চন্দযান দুরন্ত চাঁদের পূর্ব -পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবতরণ করেছে। আলো আঁধারের গভীরতায় বড় বড় পাথরের পিণ্ড, চাঁদের সার্ফেসের উপরে পাথর জল দেখা যায়। জমাট বাঁধা অক্সিজেন আর কার্বনডাই অক্সাইড। ওরা এখানে এসেছে এক রহস্য উদ্ঘাটন করতে। যে স্থানে ওরা অবতরণ করেছে সেখানে ১০ বছর আগে ওরা এসেছিলো। রুশ সরকার ওদের দেশের ছাত্র ছাত্রী কে মহাকাশে চাঁদে পাঠাতে চায়। ওরা কেন এসেছে সেটা এখনো অধরা। সাইমনের বর্...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

মাসের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

দিদৃক্ষা ।। রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী

  দিদৃক্ষা রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী 'কাল একবার দেখা হতে পারে?' দশমীর দুপুরে খাটে আধশোয়া হয়ে নিজের ফোনটা ঘাঁটছিল দেবমাল্য; হোয়াট্‌সঅ্যাপের সার্চ বক্সে  র‍্যান্ডম সিক্যুয়েন্সে ক'খানা ডিজিট ইনপুট করতেই বিস্মৃতির অতল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে যে নামটা স্ক্রিনের সারফেসে ভেসে উঠল, এককালে দেবমাল্যের প্রায়োরিটি লিস্টে সবথেকে ওপরে পিন্‌ করা থাকতো এই অ্যাকাউন্টটা। 'অহনা দাশগুপ্ত'—গ্রেয়েড-আউট ডিপিটার ডানদিকে, নামটার তলায় নিস্প্রভ হরফে ভেসে থাকা ওর এই লাস্ট মেসেজটা বেশ ক'বছরের পুরনো, কিন্তু দেবমাল্যর স্মৃতির প্যান্ডোরা বাক্সটি উলটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরেকবার আপাদমস্তক শিহরিত হয় সে। প্রোফাইলটা খুলে ওপরে-নীচে স্ক্রল্‌ করে দেখে, ওদের পুরনো চ্যাটগুলো তেমনি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ওর মেসেজগুলোর পাশে ডাবল টিকগুলো এখনও জাজ্বল্যমান সবুজে ছোপানো, যেন এইমাত্র 'সিন্‌' করে রেখেছে অহনা! যেন এখুনি আবার হাত বোলালেই অহনা এসে খানিকটা রাগত ভঙ্গিতে চ্যাট করতে লেগে যাবে। দেবমাল্যের বুক ছাপিয়ে একটা নীরব দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে! ছুটির এই আমেজটা লক্ষ্মীপুজো অব্দি গড়াবে—অফিস খুললেই তো আবার দমফাটা ব্য...

গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম

  গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম হুইসেল (মুরাকামি থেকে অনুপ্রাণিত) ♦ 'গভীর রাতে একটা হুইসেল কতটা গভীর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারো না,' ছেলেটা বললো, 'আশ্চর্য ঐ হুইসেলের মতো আমি ভালবাসি তোমাকে।' কিন্তু গভীর রাতে অন্ধকারে কখনও তো ঘুম ভেঙে যায়নি মেয়েটার, কখনও ও বিচ্ছিন্ন আর একা হয়ে যায়নি। ও কীভাবে অনুভব করবে গভীর রাতে ট্রেনের হুইসেল কতটা গভীর! নিউজ এজেন্সি ♦ একসময় আমরা খবর শুনতাম এখন দেখি স্বীকার করতে হবে খবর শোনার চেয়ে দেখার আনন্দ বেশি আলাদা উত্তেজনা নিউজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে তৎপর আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনটা নিউজ সেটা ওরাই ঠিক করে যেটা ওদের দরকার আর সেটাই আমাদের দেখানো হয় ধারাবাহিকভাবে সুচারু জ্যামিতিকতায় বিভিন্ন পদ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় নতুন বাস্তবতা নির্মাণে যে বাস্তবতায় জায়গা নেই আমাদের ইতিহাস অন্বেষা স্বাধীনতার সমৃদ্ধি আর স্বাধীনতার কথা বলেই ওরা আমার ক্ষেতখামার পাহাড় আর নদীর দখল নিয়েছে তাহলে টিভিতে যে হাসিখুশি প্রাণবন্ত আমাদেরকে দেখানো হয় ওরা কারা এই প্রশ্ন করো নিজের কাছে আগুন নিয়ে খেলা ♦ আজও পুকুরে ছিপ ফেলে বসবো আমি ধীরে চুপ সূর্য আমার ঘাড়ে শ্বাস ফেলবে সারারাত ঘরের ভেতর ল্যাং...

বিদায়ের স্রোত ।। চয়ন মন্ডল

  বিদায়ের স্রোত চয়ন মন্ডল "বিজয়া দশমী—আনন্দের দিন, কারও কাছে যা হয়ে উঠল চিরন্তন বিদায়।" আজ বিজয়া দশমী। শিউলি ফুলের গন্ধে ভোরটা অন্যরকম। পাড়ার প্যান্ডেলে অদ্ভুত এক কোলাহল—মায়ের বিদায় যে আজ। শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা আর উলুধ্বনিতে গমগম করছে চারদিক। একদিকে মা দুর্গার বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ ও মিলনমেলা। সারা বছরের অপেক্ষা শেষে এই দিনটিতে প্যান্ডেল ভরে উঠেছে মানুষের ভিড়ে। সকালের পূজার্চনা শেষ হতেই শুরু হয়েছে সিঁদুর খেলা। মহিলারা মায়ের প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে একে অপরের কপালে, গালে রাঙিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকের তালে আর শাঁখ বাজনার আবেশে ভেসে যাচ্ছে পাড়া। শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু এসবের মধ্যে নেই অনুরাধা। কেউ তার বা মিনির খোঁজ রাখেনি। মুখার্জিদের দোতলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে সে চোখের জল ফেলছে। সবার বাড়িতে আলোর রোশনাই, ভোগের গন্ধ, হাসি—শুধু তাদের ঘরটিতে নিস্তব্ধতা। গতবছর এই দিনেই তো অন্যরকম ছিল সবকিছু। অনুরাধা, সুজয় আর তাদের তিন বছরের মেয়ে মিনি পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে নেচেছিল, সিঁদুর খেলায় রঙে ভেসেছিল। বিকেলের দিকে প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে শামিল ...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

শেষ বিকেলের আলো ।। সৈকত প্রসাদ রায়

  শেষ বিকেলের আলো সৈকত প্রসাদ রায় রানাঘাট শহরের প্রান্তে ছোট্ট এক পাড়া বিশ্বাসপাড়া। সেই পাড়ার পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়িটায় থাকেন পুষ্পরাণী ভট্টাচার্য— বয়স পঁয়ষট্টির কোঠায়। সবাই তাকে "পুষ্পদি" বলেই চেনে। একসময় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন অবসর নিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে পুষ্পদি বারান্দায় বসে চা খান। ছোট একটা টেবিল, কয়েকটা পুরোনো বই, আর একখানা নীল কাঁচের ফুলদানি — তার নিত্যসঙ্গী। বারান্দার সামনেই একটা গলি, যেখান দিয়ে প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পরে বাচ্চারা হইচই করে ছুটে যায়। পুষ্পদির একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ — কলকাতায় চাকরি করে। ছেলেটা আধুনিক, নিজের সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। বছরে হয়তো একবার আসে, তাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়। পুষ্পদি মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতরে একটা কষ্ট জমে থাকে। সেই বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশে ধুলো, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। হঠাৎ পুষ্পদির চোখে পড়ে — রাস্তায় এক কিশোর বসে আছে। বয়স বারো-তেরোর বেশি নয়। মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া চটি। ছেলেটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুষ্পদির বাড়ির গেটে ঝুলে থাকা পুরোনো নোটিশবোর্ডটার দিকে, যেখানে একসময় লেখা ছিল — "পুষ্পরাণী ভ...