Skip to main content

ছোটগল্প ।। আলোকবর্তিকা ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

            

  আলোকবর্তিকা
 গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়



ট্রেনটা যে এতখানি ভিড় হয়ে যাবে ভাবতেও পারেননি রেণুবালা। শান্তিপুর থেকে যখন উঠেছিলেন তখনতো বেশ ফাঁকাই ছিল। বসার একটা জায়গাও মিলেছিল । তারপর কোথা থেকে একটা দমকা ভিড় এসে মুহূর্তের মধ্যে জমাট বেঁধে একেবারে গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি আকার নিয়ে বসল। বছরে অন্তত পাঁচ-ছ বার শান্তিপুরে রাধামাধব মন্দিরে যান রেণুবালা । প্রতিবার এই ট্রেন ধরেই ফেরেন। আজ তো প্রথম নয়, কতবছর ধরেই যাচ্ছেন। কিন্তু এমন অসময়ে এত ভিড় আগে কখনো দেখেছেন কিনা মনে করতে পারেন না। নিরেট ভিড়টাকে আরেক ঝলক দেখলেন। বুকটা কেঁপে উঠল তার। 
দুটো সীটের  মাঝেও চাপাচাপি ভিড়। দন্ডায়মান সেই ভিড়ের ফাঁকফোকর গলে তার দুটো মরিয়া চোখ ঠিক কোন স্টেশন এল ঠাহর করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। অবশেষে সেই চেষ্টায় ইতি টেনে মুখ খুললেন ---
"কোন স্টেশন এল দয়া করে একটু বলবেন।"
"টিটাগড়।"
তারমানে মাঝখানে খড়দা তারপর সোদপুর। মনেমনে  ভাবলেন রেণুবালা। এখনই না উঠলে আর নামতে পারা যাবেনা। রেণুবালা উঠতে না উঠতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি তাকে একপ্রকার ধাক্কা মেরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে দখল নিল তার সীটটার । অন্যকেউ হলে দুটো কথা শুনিয়ে দিত কিন্তু তেমন ধাতের মানুষ নন রেণুবালা। পথেঘাটে বেরোলে অতটা অসহিষ্ণু হলে কী চলে!

চারপাশ থেকে একেবারে টুঁটিটিপে ধরা ভিড়ে যেন দমবন্ধ হয়ে এল রেণুবালার। ভিড় তো নয়, যেন নিরেট পাথরের পুরু প্রাচীর! একে ভেদ করে এগিয়ে যাওয়ার কতটুকুই বা সামর্থ্য আর অবশিষ্ট থাকে এই পঁয়ষট্টি বছর বয়সে? কিন্তু দমলেন না। দমলে চলবেনা। অটল মনবলে ভর করেই নিজেকে টেনে-হিঁচড়ে ঠিক দরজার সামনে এনে ফেললেন।

ট্রেনটা থেমেছে কী থামেনি, আচমকা গলায় একটা ঝটকা অনুভব! সাথেসাথেই পিছন থেকে কে একজন চিৎকার করে উঠল --- "হার ছিনতাই করল .... হার ছিনতাই করল ....।"
ঠিক তার পরপরই আরেকটা কন্ঠস্বরে উচ্চকিতে বেজে উঠল, "এই তো ধরেছি শালাকে, ধরেছি .... ধরেছি, ধরেছি ...."

কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনটা থামল। 

একটা প্রবল ধাক্কা নাকি দুরন্ত কোন ঢেউ --- অচমকা ঝটকায় অনেকটা দূরে ছিটকে দিল রেণুবালাকে। পড়ে যেতে যেতেও কোনোরকমে সামলে নিলেন নিজেকে। কিন্তু দুদন্ড দম নেবার আগেই ভাবনায়  চকিতে চিকুর হানল আশঙ্কাটা। অব্যক্ত উত্তেজনার কোনো এক বিশেষ প্রতিবর্ত ক্রিয়াতেই যেন তার গলা স্পর্শ করল হাতটা। সঙ্গেসঙ্গেই থরথর করে কেঁপে উঠল গোটা শরীর। রক্ত হিম হয়ে গেল। চোখের সামনে আর কোন কিছুই যেন স্পষ্ট নয়। 
"আমার হার .... আমার হার ...." নিজেও জানেন না কীভাবে পারলেন ওই কটাকথা উচ্চারণ করতে!

একটুপরেই সম্বিত ফিরে পেয়ে উদভ্রান্তের মত খুঁজতে শুরু করলেন। এখানে-ওখানে, এপাশে-ওপাশে, কাপড়ের ভাঁজেভাঁজে, এমনকি আলগা খোঁপাটা খুলে ঝাড়াঝাড়ি করেও। কিন্তু কোথায় হার?  নেই নেই, কোথাও নেই ! তাহলে?  তার হারটাই ছিনতাই হয়ে গেছে! হাল ছেড়ে শূণ্যদৃষ্টিতে অপলক চেয়ে রইলেন রেণুবালা। সম্বল বলতে তো ঐ হারটুকুই ছিল। পঁয়তাল্লিশ বছর আগে বাবা দিয়েছিলেন বিয়েতে। বিপদে-আপদে, নানান প্রয়োজনে ক্রমশ হালকা হতে হতে শেষপর্যন্ত ওইটুকুই রয়ে গিয়েছিল। স্বামী, সন্তান, সংসার, বাড়িঘর একএক করে সবই গেছে। হারটাও চলে গেল আজ। নিজের বলতে নিজের অস্তিত্বটুকু ছাড়া আর কিছুই রইলনা।

অনেকক্ষণ চারপাশের কোনো হুঁশ ছিলনা রেণুবালার। আকস্মিক বিপর্যয়ে এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন যে টেরই পাননি নাকের ডগায় কী ঘটছে। অনেকমানুষের ভিড়। উত্তেজনা। হৈচৈ। গালাগাল। মারধোর। কিছু যে একটা ঘটছে --- সচকিত হয়ে টের পেলেন ঠিক তখনই যখন ওই ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন হঠাৎ তাকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বলে উঠল, "ওই তো .... ওই তো .... উনি,উনি .... ওনারই হার .... আমি নিজে চোখে দেখেছি ...." বলতে বলতে উত্তেজনার বশে লোকটা এমনভাবে রেণুবালার দিকে ছুটে এল, যেন পারলে রেণুবালাকে টানতেটানতে নিয়ে যায়। 
"আসুন আসুন মাসীমা, ওই যে ছেলেটাকে দেখতে পাচ্ছেন..." লোকটা ভিড়ের মধ্যে আঙুলনির্দেশ করে দেখাল রেণুবালাকে, " ...ওই ছেলেটাই আপনার হার ছিনতাই করেছে।"
হতচকিত রেণুবালা ফ্যালফ্যাল করে লোকটার মুখের পানে চেয়ে রইল। চোখেমুখে একটা তীব্র বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে লোকটা বলে উঠল,"দেখছেন কী চলুন চলুন।"

কয়েকপা এগিয়ে যা দেখলেন --- শিউরে উঠতে হল রেণুবালাকে। এ কী ভয়ঙ্কর! ক্রোধে উন্মত্ত একদল মানুষ বছর আঠারো-উনিশের রোগাপাতলা একটা ছেলেকে নৃশংসভাবে যেখানে খুশি, যেমন খুশি এলোপাথাড়ি মেরে চলেছে। কিল, চড়, ঘুঁষি, লাথি  --- কোনকিছুই বাদ যাচ্ছেনা। শুধু কী তাই,  চারপাশ থেকে বৃষ্টিরমত আছড়ে পড়ছে গা-ঘিনঘিন করা অশ্রাব্য সব গালিগালাজ। একদল টপ-টু-বটম ভদ্দরলোক ছেলেটার বাপ-মা-চোদ্দপুরুষ তুলে এমনসব রগরগে শব্দ উচ্চারণ করছিল যে ওদের পরনের পোশাকগুলো বড়ই বেমানান ঠেকেছিল রেণুবালার চোখে। কোন কস্মিনকালে যারা কখনো ছিনতাই-পকেটমারির শিকার হয়েছিল তারাও এই সুযোগে পুরোনো স্মৃতির ঢেঁকুর তুলে আচ্ছা করে হাতের সুখ মিটিয়ে নিতেও পিছিয়ে নেই।

এইবার ছেলেটার দিকে চোখ পড়ল রেণুবালার। শিউরে উঠলেন। দলবদ্ধ প্রতিহিংসার পাশবিকতায় থেকেথেকেই আর্তনাদ করে উঠছিল ছেলেটা। জামাটা ছিঁড়ে ফালাফালা।গালের কশ বেয়ে গড়িয়ে নামছিল রক্তের ধারা। চোখের কোল ফুলে উঠেছিল। আঘাতের পর আঘাতে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল তার শরীরটা। হাত-পা সর্বাঙ্গ কেটে-থেঁতলে ক্ষতবিক্ষত। রক্তাক্ত।

যে লোকটা রেণুবালাকে ডেকে এনেছিল,  রাগে দাঁত কিড়মিড় করে আবারো বলে উঠল, "এই জানোয়ারটাই আপনার হার ছিনতাই করেছে.." বলেই তেড়ে গেল ওর দিকে। ছেলেটা হাতজোর করে সক্রন্দনে আর্তনাদ করে উঠল, "আমাকে আর মারবেন না,  মরে যাব আমি.... আর মারবেন না।"

চমকে উঠলেন রেণুবালা। তার সমগ্র ভিতরটা প্রবল একটা বিস্ফোরণে থরথর করে কেঁপে উঠল। মাথায় তোলপাড়। দুচোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা। একটা হিমশীতল স্রোত সাপের মত কিলবিলিয়ে শিরা-উপশিরা বেয়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো তার অনুভবের আনাচে-কানাচে। চেতনার বাইরে কোথাও যেন হারিয়ে গেলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর ভীষণ আঁতকে উঠে আবার ফিরে পেলেন নিজেকে। তার দুটো চোখ স্থির ওই ছেলেটার মুখে। এ তিনি কার মুখ দেখছেন?  এ যে অবিকল বিশুর মুখ! হ্যাঁ-হ্যাঁ, রেণুবালার কোনো সন্দেহ নেই, ও মুখ বিশুর না হয়ে যায় না। বিশুরই। বিশু তার ছেলে। পনের বছর আগে ভয়ঙ্কর এক দু:স্বপ্নের রাতে হারিয়ে গিয়েছিল অকালে। এরকমভাবেই একদল ক্রোধান্ধ হিংস্র মানুষ অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ওর উপরে। আত্মরক্ষার এতটুকুও সুযোগ দেয়নি ওকে। তারপর .... তারপর .... । রেণুবালার অনুভবে মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়েগেল তার চারপাশের বেবাক বর্তমান। তার আপাদমস্তক সম্পূর্ণ গ্রাস করে নিল পনের বছর আগের এক ভয়ানক অতীত ... সেই বীভৎস রাত... ।



অন্যদিনের মতই একশ টাকার রোজে সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে এসে সেদিনও সবেমাত্র খেতে বসেছিল বেচারি। হঠাৎ দুমার-দুম দুমার-দুম দরজায় লাথি মারার শব্দ।হতচকিত রেণুবালা। বিশুও। কারা ওরা?  কী চায় ?  কিছু বুঝে উঠতে না পেরে দুজন দুজনার মুখে হাঁ করে চেয়েছিল। ততক্ষণে দরজার ওপাশে শুরু হয়ে গেছে কান গরম করা বাছাবাছা খিস্তির ধারাবর্ষণ।
"দরজাটা খোল, শা..." তারপরে আর যা বলেছিল তা যেন কানে শোনা নয়, কানে কেউ গলন্ত লাভা ঢেলে দিল। 

খাওয়া ফেলে উঠে দাঁড়াল বিশু। 
"তুই যাস না বাবা। দরজা খুলিস না ...।" বিপদের আঁচ টের পেয়েছিলেন রেণুবালা। "... আমার ঠিক ভাল ঠেকছেনা।"
"দরজাটা না খুললে ওরা ভেঙে ঢুকবে মা।" 
রেণুবালা হাত বাড়িয়ে একটা দুর্বল বাঁধা দেবার চেষ্টা করলেও দরজার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল বিশু। 
দরজাটা খোলামাত্রই সপাটে ঝাপট মারল চোলাইয়ের ঝাঁজাল কটুগন্ধ।তারপর হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল একদল উত্তেজিত মানুষ। বন্যপশুর মত হিংস্র। ওদের চোখগুলো আগুনের ভাটার মত জ্বলছিল। আকণ্ঠ চোলাই গিলেছিল সবকটা। হিতাহিতজ্ঞানের কোন বালাই ছিলনা কারো। ঘরে ঢুকেই সবাই মিলে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিশুর উপরে। রেণুবালার চোখের সামনেই তাকে মাটিতে ফেলে নৃশংসভাবে মারতে লাগল। ওদের কারো হাতে হকিস্টিক,  কারো হাতে মোটা লোহার রড। যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠেছিল বিশু। 
"ওরা আমাকে মেরে ফেলবে মা, তুমি কিছু একটা কর... । আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও মা...।" 
এতগুলো পশুর হাত থেকে কেমনকরে তাকে বাঁচাবেন রেণুবালা! পাগলের মত একবার এর কাছে, একবার ওর কাছে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করেছিলেন,"দোহাই তোমাদের, ছেড়ে দাও ওকে, মেরো না অমনকরে..।" জনেজনে দুটো-পা জড়িয়ে ধরেছিলেন ওদের। জানোয়ারগুলো সবাই লাথি মেরে সরিয়ে দিয়েছিল তাকে। তবুও দমেন নি। ছুটে গিয়ে জাপ্টে ধরেছিলেন ছেলেকে। ওদের আক্রমণ থেকে নিজের শরীর দিয়ে আড়াল করে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন তাকে। পারেন নি। ওরা তাকে হিড়হিড় করে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে এনে নিক্ষেপ করেছিল ঘন অন্ধকারে। প্রচন্ড আঘাতে সমস্ত শরীর যেন ভেঙে খানখান হয়ে গেল। যন্ত্রণায় দুমড়ে গেলেন। কিন্তু তার যা হয় হোক,  ছেলেটাকে যে যেমন করেই হোক বাঁচাতেই হবে। ওই পশুগুলো যে নির্ঘাত ওকে মেরে ফেলবে! অস্থির হয়ে উঠলেন পাগলের মত। কীভাবে বাঁচাবেন ছেলেকে?  শেষ পর্যন্ত আর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে তার সবটুকু শক্তি দিয়ে আর্তচিৎকারে যে-যেখানে আছে সবার কাছে অসহায়ভাবে সাহায্যভিক্ষা চেয়েছিলেন ---
"তোমরা কে কোথায় আছো, তাড়াতাড়ি এসে বাঁচাও আমার ছেলেটাকে... ওরা সবাই মিলে মেরে ফেলছে ওকে... দয়া করে বাঁচাও, বাঁচাও আমার বিশুকে...। তোমাদের পায়ে পড়ছি...।"
অসহায় কাকুতিতে ডাকতে-ডাকতে, কাঁদতে-কাঁদতে বুক তার শুকিয়ে গেল। তবু কেউ এলনা। একটা  জনপ্রাণীও না। অথচ এই নয়াবস্তির মানুষগুলো বিশুর কাছে কতই না আপন, কতই না ভালোবাসার! আপদে, বিপদে, প্রয়োজনে সবসময়ে ওদের পাশে থেকেছে এতকাল। কানে শুনলেই নাওয়া-খাওয়া ফেলে ছুটে চলে গেছে। ক্লান্তিহীনভাবে রাতের পর রাত জেগেছে হাঁসপাতালে। নিজে না খেয়েও আহার তুলে দিয়েছে ওদের মুখে। রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। নিজের জীবন বিপন্ন করে আগুন থেকে তুলে নিয়ে এসে ফিরিয়ে দিয়েছে ওদের জীবন। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার হয়ে দোরেদোরে গিয়ে সাহায্য চেয়েছে। কারো প্রতি এতটুকুও অন্যায় দেখলে নির্ভীকচিত্তে রুখে দাঁড়িয়েছে। এহেন মানুষটার এমন জীবন-মরণ দুর্দিনে মনুষ্যত্বের আবেদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসা তো দূরে থাক, কৃতজ্ঞতার খাতিরেও এগিয়ে আসার এতটুকু সাহস ওরা নিজেদের মধ্যে খুঁজে পাই নি সেদিন। প্রাণের ভয় যে বড় বালাই! তাই নয়াবস্তির যে ক'টা ঘরে তখনো আলো জ্বলছিল --- পটাপট নিঁভে গিয়েছিল নিমেষে।

অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে কোনোক্রমে তার বিধ্বস্ত শরীরটাকে ঘরে টেনে এনেছিলেন রেণুবালা। ততক্ষণে অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিল ঘাতকের দল। ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে তার বিশু। তার ছাব্বিশ বছরের জোয়ান ছেলে। নিথর। নিস্পন্দ। চারপাশে চাপচাপ তাজা রক্ত। টলতে-টলতে এগিয়ে গিয়ে বিশুর ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত মুখটার উপর ঝুঁকে পড়ে কয়েক মুহূর্ত চেয়েছিলেন। তারপরে তার দুহাতের মাঝখানে মুখটাকে চেপে ধরে ঝাঁকুনি দিতেদিতে উদ্ভ্রান্তের বলে উঠেছিলেন, "বিশু, বাবা আমার কথা বল.... কথা বল বাবা.... চোখ খোল....।"   
তার বাছা যে আর কোনদিনই কথা বলবে না --- আশঙ্কা যতই তীব্র হোক না কেন,  এমন অবিশ্বাস্য সর্বনাশের কথা ভাবতে পারেননি রেণুবালা,  বোধহয় মা বলেই। কিন্তু আচমকাই বিদ্যুতের শক খাওয়ার মতই উপলব্ধি করেছিলেন যে তার বিশুর গোটা শরীরটা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। উ: কী বীভৎস উপলব্ধি! মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন --- যেন কোনো প্রস্তরমূর্তি। তার বিস্ফারিত দুটি চোখে তখন পাতলপুরীর হিমশীতল অন্ধকার। ক্ষণকালমাত্র! রেনুবালা বিশ্বাস করতে পারলেন না --- নাকি কোনভাবেই বিশ্বাস করতে চাইলেন না যে তার বিশু খুন হয়ে গেছে!                                                              
কিন্তু একসময়ে তাকে বিশ্বাস করতেই হয়েছিল যখন নিস্পন্দ ছেলেটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে অতর্কিতেই দৃষ্টিনিক্ষেপ করেছিলেন নিজের ভিতরে। শুধুই ধূ ধূ বিবর্ণতা। মুছে গেছে জীবনের সব রঙ। চেতনার সবটুকু জুড়ে খাঁ খাঁ মরুভূমির শূন্যতা। বুকটা ভেঙেচুড়ে, দুমড়েমুচড়ে, তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগল। প্রলয়ংকর শোককে আর চেপে রাখতে পারলেন না। চূর্ণবিচূর্ণ হতেহতে প্রখর প্রচণ্ডতায় হাহাকারে ফেটে পড়লেন ---
"বিশুরে, আমি আর কী নিয়ে বাঁচব রে বাবা...."
রেণুবালার বুকফাটা বিলাপধ্বনি শাণিত ফলার মত সেই রাতের আদিম নৈ:শব্দকে ফালাফালা করে দিয়েছিল। কেন খুন হতে হল বিশুকে? একটা অশরীরী প্রশ্ন ল্যাম্পপোস্টের অলৌকিক ক্ষীণ আলোয় নয়াবস্তির গা-ছমছমে আনাচেকানাচে গোটা রাতধরে বৃথাই খুঁজে ফিরেছিল অসম্ভব উত্তরটা।

বিশু কোনো দাগী অপরাধী ছিলনা। সমাজবিরোধীও নয়। ছিলনা কোনো রাজনৈতিক সংস্রবেও। একদম শৈশবে চোখ বুঝেছিলো বাপ। কঠিন দারিদ্রের সংসারে আধপেটা খেয়েই বড় হতে হয়েছিল। সহ্য করতে হয়েছিল নিদারুণ দু:খ-কষ্ট। ইচ্ছা থাকলেও উপায় হয়নি লেখাপড়া শেখার। তবু কী করে যেন খুব ছেলেবেলাতেই ন্যায়-অন্যায়ের বিভেদরেখাটা খুব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তার চোখে। ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত --- এইসব মূল্যবোধগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল একটা আপোষহীন বিচারশক্তি, যা ছিল তার জীবনের কোনোকিছুকে দ্বিধাহীন গ্রহণ-বর্জনের একমাত্র মানদন্ড। তাই অন্যায়ের মসৃনপথে সহজে বেঁচে থাকার চেয়ে কঠিন জীবন-সংগ্রামের কন্টকিত পথ অনেক বেশি গ্রহণীয় হয়েছিল। অন্যায় তার সহ্য হত না। রুখে দাঁড়িয়ে  প্রতিবাদ করতেও বুক কাঁপত না। জীবন দিয়েই হয়তো তাকে তার মাশুল দিতে হয়েছিল। 

এলাকার দাপুটে জননেতা প্রহ্লাদ সাহা। ক্ষমতা প্রতিপত্তি যার এতটাই যে নাম শুনলেই বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়। তার এক হাঁকে হাজির হয়ে যায় কয়েকহাজার লোক। যারা বিনা বাক্যব্যায়ে, না জেনে না বুঝে মাইলের পর মাইল মিছিলে হাঁটে। জনসভায় গাদাগাদি ভিড় করে। বিক্ষোভে সামিল হয়। প্ররোচনায় মারমুখী হয়ে ওঠে। নির্বিচারে ভাঙচুর করে। প্রতিবাদের নামে পথ অবরোধ করে। 'বনধ' এর ডাক শুনে জনগণের হয়ে বারো-চব্বিশ-আটচল্লিশ যত ঘণ্টা চাইবে জনজীবন শ্মশানের মত স্তব্ধ-নি:শব্দ করে দেবে। যে নেতার এত দাপট, এত প্রতাপ তার ক্ষমতার হাত যে কতদূর পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে তা' বলে বোঝাবার আর কী কোনো অবকাশ রাখে? প্রহ্লাদ সাহা তাই পার্টির সম্পদ। পার্টি তাকে তোবাতোবা করে মাথায় করে রাখে। মারদাঙ্গা-বোমাবাজি-ভীতিপ্রদর্শন যাই করুক না কেন --- সাতখুন মাপ। পুলিশ তাকে সমঝে চলে। প্রশাসন নিরব দর্শক। সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত। প্রহ্লাদ সাহা তাই বল্গাহীন। বেপরোয়া। অপ্রতিরোধ্য। নেতাগিরির পাশাপাশি দালালি, প্রমোটারি, তোলাবাজি থেকে শুরু করে বোলবোলা চোলাইয়ের কারবার কী নেই তার! নয়া-বস্তির প্রতিও সে এতটুকুও অনুদার ছিলনা। খুলে দিয়েছিল রমরমা চুল্লুর ঠেক যা দিনেদিনে হয়ে উঠেছিল এলাকার সবরকম অসামাজিক কাজকর্মের আঁতুড়ঘর। মারামারি, গোলমাল ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। নিরাপদ ছিলনা মেয়ে-বউদের সন্মান। ভয়ে সব কিছু দেখেও মুখবুজে থাকত সবাই। তবুও তো কারো কারো সহ্যের শেষ একটা সীমা থাকে!  যেমন বিশুর মত ছেলেদের যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহসটুকু রাখে। পুলিশি সাহায্য চেয়ে খুব স্বাভাবিক কারণেই হতাশ হয়ে একদিন তারই মত কয়েকজনকে জুটিয়ে নিয়ে চড়াও হয়েছিল প্রহ্লাদ সাহার চোলাইয়ের ঠেকে। পরিণতি আশঙ্কা করে আঁতকে উঠেছিল সবাই। আর এভাবেই তাদের আশঙ্কা সত্যি হতেও সময় লাগে নি। না, এখানেই শেষ নয়।

মা ভিন্ন বিশুর এই দুনিয়ায় আর কেউ ছিলনা। তাই ছেলের সৎকার মাকেই করতে হয়েছিল। 
ছেলেকে দাহ করে ঘরে ফিরেছিলেন রেণুবালা। কিন্তু কোথায় তখন তার ঘর? দাউদাউ জ্বলছে! গনগনে সেই আগুনের লেলিহান শিখা সীমাহীন ঔদ্ধত্যে আকাশ ছুঁতে চাইছে। চোখের সামনে তিলতিল করে গড়া ঘর-সংসার জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তবুও অদ্ভুতভাবে নির্বিকার ছিলেন রেণুবালা। শুধুই চেয়ে রইলেন নির্বাক-সম্মোহিতের মত। এক লহমায় যেন সবকিছু শেষ হয়েগেল। একটু আগে নিষ্প্রাণ বিশু জ্বলে ছাই হয়েগেছে। এখন তার ঘর জ্বলছে! ভয়ে ঘরের কোণে সিঁটিয়ে আছে গোটা নয়াবস্তি। হয়ত ওদের নজরেও আসেনি --- বেবাক বস্তির আকাশ ছেয়ে ফেলেছে থিকথিকে কালো ধোঁয়া! ওদের মনে আছে তো --- বিশু আর নেই! আর দাঁড়ান নি রেণুবালা। চোখমুছে চিরকালের মত চলে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছিলেন। যাবার কোনো ঠিকানা ছিলনা, তবু থেমে থাকেন নি।



ছেলেটার জামার কলার ধরে টেনে তুলে রেণুবালার পায়ের কাছে ধাক্কা মেরে ফেলল লোকটা।
"এই শালাই আপনার হার ছিনতাই করেছে। তাকিয়ে দেখুন একবার..."
মাটিতে মুখগুজে, হাত-পা দুমড়ে, দলা পাকিয়ে, নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইল রক্তাপ্লুত ছেলেটা। বেশ খানিকক্ষণ। তারপর অনেক কষ্টে মাথাটা তুলতে পারল কিছুটা। দুটো চোখ কী ভীষণ ফুলে গেছে! টকটক করছে লাল। কথা বলারও ক্ষমতা ছিলনা। শুধুই সকরুণ আর্ত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল রেণুবালার দিকে।

লোকটা আবার পাশবিক ক্রোধে মারমুখী হয়ে এগিয়ে গেল তার দিকে। 
গর্জে উঠলেন রেণুবালা,"খবরদার, ওর গায়ে একদম হাত দেবে না। তোমরা মানুষ! এতগুলো লোক মিলে একজনকে মারছ?"

লোকটা স্তম্ভিত। বিমূঢ়। এতটাই যে স্তব্ধবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল রেণুবালার দিকে। রেণুবালার চোখে তখন এমন কিছু ছিল যাতে লোকটার হিংস্র ক্রোধ পোষা বাঘের মত সুড়সুড় করে খাঁচায় ঢুকে গিয়েছিল। অনেকটা সময় নিয়ে মিনমিনে গলায় কোনক্রমে বলতে পেরেছিল, "আমি নিজে চোখে দেখেছি ও-ই আপনার হার ঝেড়ে দিয়েছে....."

"কোথায় সেই হার?" শান দেওয়া তলোয়ারের মত ঝনঝন করে বেজে উঠল প্রশ্নটা।

লোকটা থতমত খেয়ে গিয়ে বলল, " মানে...পাওয়া যায় নি। সরিয়ে দিয়েছে আর কী! ওর দলে আরো লোক ছিল......"

"তার মানে নিছক সন্দেহের বশে..."

"বিশ্বাস করুন, আমি নিজে চোখে দেখেছি।"

রেণুবালা বেশ খানিকক্ষণ লোকটার  দিকে চেয়ে থেকে মাথা ঝাঁকালেন।

"ওই চোখেতো অনেক ভাল কিছুও দেখ, তখন কী কর? তখন তো ভাল কিছু করার ইচ্ছা জাগে না! যেই কারো কোনো মন্দ দেখলে অমনি মাথার পোকা ক্ষেপে উঠল --- আরো কত মন্দ করে তার জবাব দেবে, তাই না? একা না পারলে অন্যদের তাতাবে।"

থামলেন না রেণুবালা। এবার আঙুল তুলে চারপাশের মানুষগুলোকে ইঙ্গিত করে বললেন,"তুমি যে ওদের তাতিয়েছ, চেন ওদের? ওদের নিজেদের কোনো চোখকান নেই। অন্যের চোখে দেখে, অন্যের কানে শোনে। ওদের যদি কেউ বলে কাকে কান নিয়ে যাচ্ছে, ওরা নিজেদের কানে হাত দিয়েও দেখবে না, কাকের পিছন-পিছন দৌড়াবে। যেখানে দেখবে নিজেদের গায়ে এতটুকু আঁচড় লাগবে না সেখানে গিয়ে বীরত্ব দেখাবে আর যেখানে বীরত্ব দেখানোর প্রয়োজন সেখানে লেজ গুটিয়ে পালাবে। তোমাদের বিবেকে বাঁধল না --- তোমরা এতগুলো লোক একজোট হয়ে অতটুকু একটা ছেলেকে এভাবে মারতে মারতে মেরে ফেলতে বসেছ। ও যদি কোন অপরাধ করেই থাকে তার জন্য থানা পুলিশ আইন আছে, তোমরা বিচার করার কে?"

এবার লোকটা রেণুবালার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল, " মাসীমা হারটা কিন্তু আপনারই ছিনতাই হয়েছে।"  

রেণুবালা বলল,"সে কী আমি এত অল্পসময়ের মধ্যেই ভুলে যাব? আমার হার গেছে কষ্ট হলেও সয়ে নিতে পারব কিন্তু সারা জীবনধরেও সইতে পারব না যদি ওই হারের জন্য একটা আস্ত জীবন চলে যায়।"

সংখ্যায় অল্প হলেও এবার এগিয়ে এল তারা,যারা এই ভিড়ের মধ্যেই মিশেছিল কিন্তু যা ঘটছিল তাকে মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহসও নেই।

"ঠিক বলেছেন আপনি। এদের পুলিশেই দেওয়া উচিত। এরা মানুষ! মানুষের রক্ত গায়ে থাকলে কেউ কাউকে এভাবে মারতে পারে?"

রেণুবালা কটমটকরে তাকালেন ওদের দিকে।

"তোমরাও তো ছিলে বাপু। ভেবে যখন কিছু করতে পারবে না তখন দেখে শুধুশুধু ভাবা কেন? না ভেবে ঠিক কাজটা যদি করতে তাহলে তো এ বেচারির এমনদশা হত না।"

এমন চিরতাগোলা স্পষ্ট কথাগুলো যেমন সোনামুখ করে মেনে নেওয়াও বেজায় কষ্টকর তেমনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে মুখ খোলাও চরম নির্বুদ্ধিতা। তাই তারা মানেমানে কেটে পড়াই শ্রেয় বোধ করল। সরে পড়েছিল সেই লোকটাও। সঙ্গে তারসাথে যোগ দেওয়া বীরপুঙ্গবদেরদলও। ভিড়টা বুদবুদের মত মিলিয়ে গেল। যেন কোথাও কিছু ঘটেনি। শুনশান অকুস্থল। এখন শুধু অভিযুক্ত ছিনতাইকারী আর যার হার ছিনতাই করার অপরাধে অভিযুক্ত সে -- সেই রেণুবালা।

ছেলেটা আগেরমতই মাটিতে মাথাগুঁজে, চার হাতপা এক করে কুঁকড়ে সিঁটিয়েছিল। রেণুবালা এগিয়ে গিয়ে তার মাথায় আলতো হাত রাখল।
"এই ছেলে উঠতে পারবে?"

ছেলেটা অনেক কষ্টে কোনক্রমে মাথাটা তুলতে পারল। তারপর কঁকিয়ে উঠল যন্ত্রণায়। চোখদুটো অস্বাভাবিক ফুলে গিয়েছিল, এতটাই যে খুলে তাকাতে পর্যন্ত পারছিল না। গোটামুখে, কপালে আঘাতের দগদগে চিহ্ন। কোথাও রক্ত ঝরছিল, কোথাও জমাট বেঁধে কালো হয়েছিল। 

রেণুবালা তার দুহাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু ওই দুটো হাতকে অবলম্বন করে উঠে দাঁড়াবার শক্তিটুকু পর্যন্ত আর অবশিষ্ট ছিল না ছেলেটির। এইবয়সে রেণুবালারও ক্ষমতা ছিল না ওই জোয়ান ছেলেটাকে টেনে তোলার। ওদের অসহায়তা বেশ কয়েকজোড়া চোখে ধরা পড়েছিল। তাদের কয়েকজন স্বত:প্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসে সাহায্য করল ওদের।

হাঁটার ক্ষমতা ছিল না ছেলেটার। সবাইমিলে কোনরকমে ধরেধরে নিয়ে গিয়ে সামনের একটা চায়েরদোকানের বেঞ্চে বসিয়ে দিল তাকে।

"একটু জল পাওয়া যাবে?"

দোকানি ব্যস্ত ছিল নিজের কাজে। রেণুবালার জবাবে ছোট্ট করে বলল,"ওই ধারে জগ আছে।"

আবার প্রশ্ন রাখলেন রেণুবালা,"গরম দুধ হবে?"

--- হবে। 

--- একগ্লাস দিতে পার। 

--- বসুন দিচ্ছি। 

ছেলেটা কাত হয়ে একপাশে নেতিয়েছিল। চোখ বন্ধ। মাঝেমাঝে যন্ত্রণায় বেঁকে যাচ্ছিল মুখখানা।

রেণুবালা তার গায়ে হাত রেখে বললেন,"এই ছেলে একটু সোজা হয়ে বস দেখি। চোখেমুখে একটু জল দিয়ে দিই।

"আ!" ছেলেটা একটু চেষ্টা করেই কাতরে উঠল।

রেণুবালা তাকে ধরেধরে শুইয়ে দিলেন। ক্ষতস্থানগুলো ধুইয়ে দিলেন। চোখেমুখে ভালো করে জলের ছিটে দিয়ে বললেন,"একটু ভাল লাগছে বাবা? দুধটুকু খেতে পারবে?"

সামান্য চোখখুলে একটু তাকালো ছেলেটি। তারপর আপনাথেকেই যেন আবার বুজে গেল। রেণুবালা বুঝতে পারলেন ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। বললেন,"থাক বাবা, তুমি শুয়ে থাক। দুধটা না হয় একটু পরেই খেও।"

দোকানি এতক্ষণ হাতেরকাজটা সারার পাশাপাশি এদিকটাও লক্ষ্য রেখেছিল। এবার মুখ খুলল,"ও মাসীমা অত সেবাযত্ন ওকে করতে হবে না। ও শালা পকেটমারের জাত! এরকম ঘাপান খাওয়ার অভ্যাস ওর অনেক আছে। ও সব ঠিক হয়ে যাবে। একটুপরেই দেখবেন দিব্যি হেঁটে চলে যাচ্ছে। আপনি বাড়ি চলে যান।"

কথাগুলো খুব নিষ্ঠুরের মত কানে বাজলেও রেণুবালা শুনেগেলেন। পকেটমার হোক, ছিনতাইবাজ হোক রক্তমাংসের মানুষ বইতো নয়।  ওর কী যন্ত্রণা-কষ্ট থাকতে পারেনা। তার চেয়েও বড় কথা সবারবেলায় এক বিচার কই? দোকানির দিকে গনগনে চোখে খানিক চেয়ে থাকার পর তার মনে হয় যেন চিৎকার করে জানতে চায় --- স্বাধীনতাদিবসে নয়াবস্তিতে যখন পতাকা তোলে প্রহ্লাদ সাহা কিংবা মহান সমাজসেবী হিসেবে যখন তাকে ঘটা করে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তখন তো টুশব্দ করার সাহস দেখি না কারো, কোথায় থাকে তখন এদের মত মানুষগুলো? দোকানির কথার কোনো উত্তর না করে বেঞ্চের একপাশে ঠায় বসে রইলেন রেণুবালা।

এবার দোকানি তার ভিতরের সবটুকু বিরক্তি গলার স্বরে ঝরিয়ে বলল,"মাসীমা বেঞ্চটা ছাড়তে হবে, এবার আসুন।"

রেণুবালা উঠে দাঁড়ালেন।
"এই ছেলে উঠতে পারবে?"

কোনো হুঁশ নেই। চোখ খুলে এতটুকু তাকাল না পর্যন্ত। রেণুবালা তার কপালে হাত রাখলেন। কী তাপ! প্রমাদ গুণলেন। কী করবেন এবার ছেলেটাকে নিয়ে? আর যে-ই পারুক রেণুবালা কিছুতেই ছেলেটাকে এভাবে ফেলে রেখে চলে যেতে পারবেন না। কিছুতেই না। ও যদি কোনো ছিনতাইবাজ না হয়ে তার বিশু হত, পারতেন তিনি? না না, তিনি পারবেন না।

দোকানিকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,"ওকে আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাব। একটা রিক্সা ডেকে নিয়ে এখুনি ফিরে আসছি।"

দোকানি বিস্ময়ে এতটাই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল যে রেণুবালা অনেকদূর চলে যাওয়ার পরেও হাঁ করে তারদিকে চেয়ে রইল।

সারারাত জ্বরে বেহুঁশ হয়ে রইল ছেলেটা। ঠায় জেগে বসে রইলেন রেণুবালা। সমানে কপালে জলপট্টি দিয়ে যাওয়া। থার্মোমিটারে বারবার জ্বর দেখা। ওষুধ খাওয়ানো। মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া। শুশ্রূষার এতটুকু ত্রুটি নেই কোথাও। এই অজ্ঞতকুলশীল ছেলেটা কতকালের কত আপন যেন তার! আসলে ছেলেটার মুখে বারবার বিশুর মুখচ্ছবি ভেসে উঠছিল রেণুবালার চোখে। চোখদুটো জলে ভরে উঠছিল তার। বুকের ভিতরটাও চাপা দুশ্চিন্তা আর উত্তেজনায় টানটান অস্থির। বিশু জ্বরে অচেতন হলে ঠিক যেমনটি হত তার।

অবশেষে ভোররাতে গিয়ে একটু স্বস্তি মেলে গোটারাত ধরে চলা একটানা উদ্বেগের। ছেলেটার জ্বর অনেকটাই কমে। চোখও মেলে। তবুও যেন কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। বিকেলের দিকে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠল। উঠে বসল। কাছেই ছিল রেণুবালা। তিনি পরম স্নেহে একটি হাত তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,"আর জ্বর নেই তো?"

একটা নরম স্পর্শ আলতো ছুঁয়ে যায় ছেলেটির ললাটে। সমস্ত শরীর তার অদ্ভুত এক অনুভবে থরথর করে কেঁপে ওঠে। আজকের এই চকিত অনুভব তার কাছে সম্পূর্ণ অচেনা, অন্যরকম --- যার স্বাদ আগে সে কোনদিন পায় নি।

"না গা ঠান্ডা। আর কোনো ভয় নেই। গরম দুধ আর মুড়ি নিয়ে আসছি। এখন কিছু খেতে হবে। কাল থেকে তো কিছুই খাওয়া হয় নি।"
উঠে দাঁড়ালেন রেণুবালা।   

অনেক চেষ্টা করেও দমন করতে পারল না ছেলেটি --- হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। লোকচক্ষুর অন্তরালে নিশ্চুপে, চরম অবহেলায় নিকৃষ্ট কীটের মত বেঁচে এসেছে এতকাল। জন্মমুহূর্তেই তার পরিচয়ে তপ্ত লৌহশলাকায় খোদাই হয়ে গিয়েছিল একটি দুরপনেয় শব্দ --- বেজন্মা! এই পরিচয়ের বিষজ্বালার তিলার্ধমাত্রও ভাগ নেয় নি কেউ কোনোদিন। না তার গর্ভধারিনীও নয়। তাকে ফেলে একরাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে সে কোন এক নাগরের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে হাতধুয়ে ফেলেছিল অবলীলায়। আর সেই রাত থেকে থকথকে পাঁকে ব্যাঙাচির মত কিলবিল করতে করতে শুরু হয়েছিল এক 'বেজন্মা' শিশুর বেঁচেথাকার প্রাণান্তকর লড়াই। মাথার উপর খোলা আকাশ। ফুটপাতের এককোণে কুকুরের সাথে ভাগাভাগিকরে থাকা। ভাল করে খুঁটে খেতে শেখার আগেই হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিল --- খিদে কাকে বলে! অত্যুগ্র খিদে! অতটুকু সে, তবুও এতবড় জগৎ-সংসারে তার খিদের দায় ভয়ঙ্কর নিষ্করুণভাবে যেন শুধুই তার। কী নির্মম তার পারিপার্শ্বিকতা! হাত পেতে খাবার চাইলে দূর-দূর করে তাড়িয়ে দেবে। কেড়ে খেলে মেরে হাত ভেঙে দেবে। চোখের জলে বুক ভাসালেও বুঝতে চাইবে না ওদের পেটের জ্বালাটা। পশুপ্রেমীর দল বিস্কুট ছুঁড়ে ছুঁড়ে যত্ন করে কুকুরকে খাওয়াতো। খিদের তাড়নায় যদি সে একটা কুড়িয়ে নেবার জন্য হাত বাড়াত, যতনা ঘেউ ঘেউ করে কুকুরগুলো তেড়ে আসত তার চেয়ে অনেকবেশি খেঁকিয়ে উঠত পশুপ্রেমীর দল। ভয়ে জড়সড় হয়ে গিয়ে, পেট ভর্তি খিদে নিয়ে জুলজুল করে কুকুরগুলোর খাওয়া দেখত। তার হাতে কেউ কোনদিন একটুকরো খাবার তুলে দেয় নি। একটুও আদর করে নি। দুটো মিষ্টি  কথা বলে কাছে ডাকে নি। জ্বরে অচৈতন্য হয়ে পড়ে থাকলেও কপালে হাত ছুঁয়ে কেউ কখনো তাপ দেখার প্রয়োজনবোধ করে নি। তবু ছেলেটি কোনদিন এতটুকুও কষ্ট পায় নি। দু:খ পায়নি। এক ফোঁটা চোখের জলও ফেলে নি। দু:খ-কষ্ট-আবেগ-যন্ত্রণা কিংবা স্নেহ ভালোবাসা মায়া মমতা --- এগুলো যে কী বস্তু কোনোদিনই তার জানার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। মার খেতেখেতে অসহ্য তাড়সে ভিন্ন আর কোনো কারণে যে কাঁদা যায় --- সে আজ পর্যন্ত কোনোদিন ভাবতেই পারে নি। আজই প্রথম জানল। কেউ যেন হাত ধরে নিয়ে গিয়ে আকস্মিকভাবেই তাকে এই প্রথম  চিনিয়ে দিল তার ভিতরের সম্পূর্ণ অচেনা, অদেখা আরো একটা জগৎকে। অলৌকিক আলোয় উদ্ভাসিত এমন একটা জগৎ --- সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ যে তার নিজেরই, শুধুই তার নিজের --- কথাটা ভাবতেই বিস্ময়ে, আনন্দে, উচ্ছ্বাসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল। না না, এই জগৎটাকে আর সে কোনো নারকীয় অন্ধকারে হারিয়ে যেতে দেবে না। সব জড়তা, সব অবসন্নতা এক ঝটকায় ঝেড়ে ফেলে উঠে বসল। তারপর এক লাফে ঘর থেকে বেরিয়ে যেন হওয়ায় মিলিয়ে গেল।

দুধের গ্লাস আর মুড়ির বাটি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকেছিল রেণুবালা। 

"এটুকু খেয়ে নে বাবা...."

তার দুটো চোখ থমকে গেল বিছানায়। খাঁ খাঁ। শুনশান। বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। কোথায় গেল ছেলেটা? বাটি- গ্লাসটা কোনরকমে রেখে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। ঘরের চতুর্দিকে, এখানে-ওখানে পাগলের মত খুঁজে ফিরলেন। কিন্তু কোথায় কে?

হতাশ, বিমর্ষ রেণুবালা আবার ঘরে এসে ঢুকলেন। বিছানার একপাশে ঝপাৎ করে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে স্থানুর মত নির্বাক বসে রইলেন। অনেকক্ষণ-অনেকক্ষণ ঐভাবে বসে থাকার পর বিড়বিড় করে বলে উঠেছিলেন,"কিছু না বলেই চলে গেলি বাপ....একটু সুস্থ হয়ে না হয়....আর কি কখনো ফিরবি না বাপ...."

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হল। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত। রাতও গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল। রেণুবালা ঠায় বসেই রইলেন। মুখে একটা দানাও কাটলেন না। দুচোখের পাতাও এক করলেন না। 

রাত তখন নিশুতি। হঠাৎ ভেজান দরজাটায় মৃদু টোকা মারার শব্দ। একবার...দুবার...। রেণুবালা উঠতে যাবেন আর ঠিক তখনই দরজাটা খুলে গেল।

যেন বিশ্বাস হয় না রেণুবালার! বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সময় লেগেছিল তার। তারপর উচ্ছ্বসিত গলায় বলতে বলতে এগিয়ে গিয়েছিলেন ---
"আমি জানতাম... আমি জানতাম, তুই আবার ফিরে আসবি..."

ছেলেটা জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তা' দেখে রেণুবালা বলে উঠলেন,"দাঁড়িয়ে রইলি কেন, ভিতরে আয়।"

ছেলেটা ঘরে ঢুকেও সঙ্কুচিত হয়ে রইল। কেমন যেন সন্ত্রস্ত ভাব। দুচোখেও ভয় মিশে ছিল। অবাক হলেন রেণুবালা। গলায় উদ্বেগ ঝরিয়ে বললেন --
"কী হয়েছে বাপ? কোথায় গিয়েছিলি?"

ছেলেটা যন্ত্রচালিতের মত তার ডানহাতটা এগিয়ে দিল। আলগা করল তার হাতের মুঠো। রেণুবালার চক্ষু চড়কগাছ! এ যে তার সেই হারছড়াটা! 

"তার মানে কাজটা তোরই।"

ছেলেটা মাথা নীচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল।

রেণুবালা হতাশ সুরে বললেন,"আমার মনে হয়েছিল কাজটা তুই করিস নি..."

রেণুবালার কথা শেষ হল না। ছেলেটা হাউমাউ করে কাঁদতে-কাঁদতে রেণুবালার দুটো পা জড়িয়ে ধরে বলল,"তুমি আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও, পুলিশে দাও, শুধু আমার একটা কথা বিশ্বাস কর -- এমন কাজ এজন্মে আমি আর কোনদিন করব না। এই তোমার পা ছুঁয়ে বলছি..."

"আমার পা ছুঁয়ে বললেই বা কী? আমি তোর কে?"

ছেলেটা মুখ তুলে রেণুবালার চোখে তাকাল। দুগাল বেয়ে তার অশ্রুধারা গড়িয়ে নামছিল।

"তুমি আমার মা।"

শোনামাত্রই গোটা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল রেণুবালার। মা! মা! কতদিন ওই নামে তাকে কেউ ডাকে নি। তীব্র আকুতিভরা দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলেটার দিকে। দুচোখ জলে ভরে উঠল।

"তুমি আমাকে তাড়িয়ে দেবে না তো?" কাঁদতে-কাঁদতে করুণ স্বরে বলে উঠল ছেলেটা।

উদ্গত অশ্রুকে অনেক কষ্টে সংবরণ করে কেবল মাথাটা নাড়ালেন মাত্র।

ছেলেটার কণ্ঠে নৈরাশ্যের সুর ঝরে পড়ল,"আমাকে বিশ্বাস করছ না, না?"

রেণুবালা স্নিগ্ধ হাসলেন। 

"তুই হারটা ফিরিয়ে এনেছিস, এরপরেও তোকে বিশ্বাস না করে থাকা যায়!"

তাকে বিশ্বাস করেছে! তাকে!! যে কিনা একটা বিশ্রী জানোয়ার -- একটা পকেটমার, ছিনতাইবাজ, বেজন্মা -- তাকে বিশ্বাস করেছে! নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারল না ছেলেটা। এই মানুষটা তাকে প্রাণে বাঁচিয়েছে। কপালে স্নেহের হাত বুলিয়েছে। ভালবেসে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে। নিখাদ মমতায় সারারাত জেগে সেবা করেছে। তার জন্য চোখের জল ফেলেছে। এখন আবার তাকে বিশ্বাসও করছে! এই নিষ্ঠুর, কঠিন দুনিয়ায় কোন মানুষ শুধু হাতে, নি:স্বার্থে আরেকজনকে এত মহার্ঘ কিছু দিতে পারে? পকেট মেরে টাকা ভর্তি ব্যাগ পেলে কিংবা ছিনতাই করে ভারী একটা গয়না পেলে ভাবত -- উ: কী না পেয়েছি! এর থেকে দামী কিছু পাওয়া বুঝি এই পৃথিবীতে আর কিছু হয় না! সে কতই না বোকা ছিল!! আজকের সত্যিকারের দামী জিনিসটা পাওয়ার বাঁধভাঙা আনন্দের উদ্বেলিত আবেগকে ধরে রাখতে পারল না সে। জলোচ্ছ্বাসের মতই যেন আছড়ে পড়ল। মাথাটা রেণুবালার পায়ে গুঁজে দিয়ে অঝোরে কাঁদতে-কাঁদতে বলল,"তুমি আমার মা -- তুমিই আমার মা। তোমার পায়ের কাছে আমাকে একটু জায়গা দিও...."

রেণুবালা তাকে দুহাতে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তার শূন্য বুকটা যেন কানায় কানায় ভরে উঠল। মুহূর্তের জন্য যেন তিনি সবকিছু বিস্মৃত হয়ে গেলেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা, আমি তোরই মা --- তোরই মা। কেন তোকে থাকতে দেব না? কেন তোকে তাড়িয়ে দেব? বাবা আমার, এসব তুই কী বলছিস বিশু?"

বিশু!! নামটা কানে যেতেই ছেলেটা বুঝতে পারল মানুষটা কোথাও একটা ভুল করছে। মানুষটা বোধহয়   নিজের মধ্যেই নেই। কিন্তু কে বিশু? ছেলে? মানুষটা কি তাকে তার ছেলে ভেবে বসেছে? দারুণ একটা ভাললাগায় মনটা ভরে উঠল। কিন্তু সে আজ বদলে গেছে। কাউকে কোনভাবে আর ঠকাবে না।

"আমি তোমার বিশু নই। আমার দিকে তাকিয়ে দেখো।"

"হ্যাঁ রে বাবা তুই আমার বিশু। বিশুই। আমার ছেলে।"

ছেলেটা রেণুবালার বুকের ভিতর থেকেই নিজের মুখটা রেণুবালার চোখের সামনে তুলে ধরে আবারো বলল,"এই দেখ, চেয়ে দেখ..দেখ, আমি বিশু নই! আমি ভেকু। একটা ছিনতাইবাজ! পকেটমার! বেজন্মা! আমাকে এতটুকু রেখে পালিয়ে গিয়েছিল আমার মা...."

রেণুবালা আরো শক্ত করে তাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে বললেন,"কে বলল তোকে এসব? তুই ঈশ্বরের সন্তান রে ---- ঈশ্বরের সন্তান।" 

উছলে পড়া কান্নাকে সামাল দিতেই খানিক থামলেন। তারপর আবার বলে চললেন,"ছেলেটা আমার কোনদিন অন্যায় করেনি, কারো মন্দ করে নি, প্রাণ দিয়ে সবাইকে ভালবেসে ছিল। তবুও একদল শয়তান নিষ্ঠুরভাবে ওর প্রাণটা কেড়ে নিয়েছিল আমার বুক শূন্য করে। মানুষের বিচার অন্ধ হলেও ঈশ্বর কোনদিন কারো প্রতি অবিচার করেন না। তাই তো আমার শূন্য বুকে ভরিয়ে দিলেন আরেক সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়ে। তুই আমার ছেলে রে --- আমার ছেলে। আমার কাছেই থাকবি --- আমার কাছেই।"

পরিচয়ের অভিশাপমুক্তি, মাকে পাওয়া, নতুন জীবন --- ছেলেটা  বল্গাহীন খুশিতে যেন জ্ঞানহারা‌ হয়ে গেল। দুহাত তুলে উপরওয়ালাকে কৃতজ্ঞতা জানাল। শিশুর মত নানা অঙ্গভঙ্গি করতে লাগল। কখনো কাঁদতে লাগল, কখনো হাসতে লাগল। আনন্দে যে কী করবে ছেলেটা যেন কিছুই ভেবে উঠতে পারল না।

রেণুবালা তার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বললেন,"অনেক হয়েছে বাবা, আর একটুও নয়। অসুস্থ শরীরটার উপর দিয়ে আজ অনেক ধকল গেছে। এবার শুয়ে পড়।"

সারা শরীর জুড়ে ভাললাগার কী অদ্ভুত স্নিগ্ধ আবেশ! মন চায় না ঘুমিয়ে গিয়ে তাকে হারিয়ে ফেলতে।   কিন্তু দুর্বল শরীরটা আর নিতে পারে না। ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়ল। রেণুবালা তারপরেও সমানে তার মাথায় হাত বুলিয়ে চললেন। চোখদুটো যখন তারও বুঝে আসতে চাইল তখন বাইরে ভোরের আলো ফুটছে। রেণুবালা নড়েচড়ে টানটান হয়ে বসলেন। ঘুমলে আর চলবে না। সামনে অনেক বড় দায়িত্ব। আরো একটা বিশুকে গড়ে তুলতে হবে।। 

                               --- --- --- ---

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 
 হৃদয়পুর, উত্তর ২৪ পরগণা


Comments

বিধিবদ্ধ স্বীকার্য :

লেখার বক্তব্যের দায়িত্ব লেখকের, পত্রিকার নয়। আমরা বহু মতের প্রকাশক মাত্র।

মতামত/লেখা এখানে জমা দিন

Name

Email *

Message *

সাম্প্রতিক বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

রেজাল্ট ।। সৈকত মাজী

রেজাল্ট সৈকত মাজী শুভ্রাংশু বিছানতে শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে উঠল। মনে মনে নিজের শরীরটাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিলো দু- চারটে কথা, দেবে নাই বা কেন, কয়দিন ধরে এতো কাঠ খড় পুড়িয়ে সব বন্ধুরা মিলে রথটা বানালো, কত কি প্ল্যান করলো, আর এই শরীরটার জন্যই তো সব ভেস্তে গেলো। মনে মনে ভাবলো একটা যা হোক শরীর হয়েছে ওর প্রতি মাসে তিন - চার বার করে জ্বর হচ্ছেই। হবি তো হ আর একটা দিন পরে হলে কি এমন ক্ষতি হতো, এই রথের দিনেই হতে হলো। ওর বিরক্তিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ঘর।    " মা ও মা...মাআআআআ...." জোরে হাঁক  দিলো শুভ্রাংশু।    " কি হয়েছে বাবু? আবার জ্বরটা বেড়েছে? মাথা ব্যথা করছে?" ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মালতিদেবী।     " ওসব কিছু নয়, ও মা বলছি এখন তো খুব কম জ্বর আছে যাই না মা একবার বাইরে, সবাই কতো ফুর্তি করছে বলো"  কাতর ভাবে বলল শুভ্রাংশু।      " না বাবু, এখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাব, বাবা তৈরী হয়ে গেছেন, আমরা বিকেলে তখন মেলা দেখতে যাব কেমন, এখন উঠে জামা কাপড় পরে নাও"  মালতিদেবী জামা কাপড় গুলো এগিয়ে দিলেন।      শুভ্রাংশু...

রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি

রাই আর বাবা অদিতি চ্যাটার্জি রাই-র জীবনে বেশ কিছু ভালো লাগা আছে তার মধ্যে একটা হলো সন্ধ্যার সময় তিন তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখতে দেখতে কফি কাপে চুমুক দেওয়া ।" আজ যশোদা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে বেশ ভিড়,নির্ঘাত 'তেলে ভাজা ' প্রেমীরা।" আপন মনেই ভাবে ও, কিন্তু বসার ঘরে সুমন আর আঁখি এতো জোরে 'হল্লা গোল্লা ' করছে তালতলার জমজমাট রাস্তার দিকে আর মন দিতে পারছে না রাই।  পায়ে পায়ে ঘরে এসে দাঁড়ায় রাই, দেখে ক্লাস ফোরের মেয়ে এতোটা ঝগড়া করছে সুমনের সাথে , "বাপ রে, কবে এতোটা কথা শিখলো মেয়ে! কিভাবে কথা বলছে?? কোঁকড়া চুল ঝাঁঝিয়ে,গোলগাল হাত নেড়ে " ...মেয়ে কে দেখে থতমত খেয়ে যায় রাই। এদিকে আঁখি বলছে, "ধুত্ বাপী তুমি কিচ্ছু পারো না, তুতাই-র বাবা, পিসাই, মামু সবাই কত ভালো করে খেলতে পারে , না আমি তোমার সাথে খেলবো না।" কাতর চোখে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সুমন বলে ,"আচ্ছা তুই আমাকে শেখা, দ্যাখ আমি কার জন্য আলিপুরদুয়ার থেকে পনেরো দিন পর পর কলকাতায় আসি বল!"  ঐ টুকু মেয়ে কথা প্রায় না শুনেই ঘরে চলে গেল রাই-র চোখের সামনে, সুমন একবার হেসে বাথরুমের দিকে এগো...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী

বস্তু, চেতনা এবং  কবি সজল চক্রবর্তী  "যেখানে পৌঁছায় না রবি,, সেখানে পৌঁছে যান কবি।" এই ছোট্ট কবিতা টি অনেক পুরনো  এবং বহু পরিচিত, তথাপি এর তাৎপর্য এখনো হারায় নি। তবে, কথা হ'চ্ছে -আমরা তো  রবি-কবিকে একত্রেই পেয়ে যাই আমাদের ঋষি-প্রতিম কবি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। আর তখনই জেনে যাই উপরোক্ত ছোট কবিতার প্রণিধানযোগ্যতা ।  ... এবার শুনে নেয়া যাক, ঋষি-প্রতিম কবির মুখ নিঃসৃত বাণী:- "তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি যাই ...." অর্থাৎ আমাদের প্রিয়তম কবি অনায়াসে পৌঁছে যান সৃষ্টির অসীমে , যা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। এখানে কবির চেতনা সুদূর প্রসারী! ... প্রকৃত প্রস্তাবে কবি অতিন্দ্রীয় জগতের এক নাগরিক। তাঁর কাছে তাই চেতনা বা চৈতন্যেরই প্রাধান্য। ...এখন আসছি, বস্তু এবং চেতনার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে।  ... আমি একজন অতি সাধারন মানুষ, তাই এই ব্যাপারটাকে কবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা ক'রছি। তবে আমার সামান্য জ্ঞান থেকে একটা সাধারণ কথা সেরে নি'। আমরা সাধারণত ব'লে থাকি-- সূর্য পূর্বদিকে ওঠে। প্রকৃত অর্থে কি তাই ? আসলে সূর্য যেদিকে ওঠে ,আমরা  সেই দিকটাকে নামাঙ্কিত ক...

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদি ।। অরবিন্দ পুরকাইত

স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি  (পর্ব—সাত) অরবিন্দ পুরকাইত স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগ্্ধারা ইত্যাদির সংগ্রহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল রামচন্দ্র নস্কর সম্পাদিত 'চর্যা' পত্রিকায়, ২০১৬ সালে। সে সংগ্রহ যায় নিজের 'গাঁ-ঘরের কথা' পুস্তকে, ১৪২৩ সনে। পরে এই ব্লগজিনেও কিছু সংগ্রহ প্রকাশিত হয় ১৪২৮ সনের আশ্বিন মাসে, পৌষ ১৪২৯-এ, আষাঢ় ১৪৩০, নববর্ষ ১৪৩১ ও কার্তিক ১৪৩১ সংখ্যায়। তার পরেও ধীরে ধীরে আরও কিছু সংগৃহীত হয়েছে, সেগুলিই এখানে রাখা হল। নিজের আগের সংগ্রহে এসে-যাওয়া শব্দ যদি এখানে এসে থাকে, তা বাড়তি বা ভিন্ন কিছু বলার প্রয়োজনেই। নিজের আগের সংগ্রহ খুব ভাল করে যে মিলিয়েছি তা নয়, পুরো সংগ্রহ একত্র করার সময় তা করা যাবে যতটা সম্ভব নিখুঁত করে। আগে আগে সংগ্রহ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা হয়েছে, বিশেষত প্রথম প্রকাশের সময় একটু বিশদভাবে। এখানে আর কিছু বলা নয়, কেবল সংগ্রহটাই তুলে ধরা গেল। অখেজো/অখেজে — অকেজো থেকে। আদরের তিরস্কার হিসাবেই মূলত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পাজি। অচিমিতি — (উচ্চারণ ওচিমিতি) আচমকা, হঠাৎ। অদীয় — প্রচুর, অজস্র। অদ্বিতীয় থেকে ক...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায়

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত রণেশ রায় ভূমিকা দর্শনের ইতিহাসে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক মানবচিন্তার গভীরতম প্রশ্ন। অধিবিদ্যা ভাবকে মুখ্য ধরে, বস্তুকে গৌণ বলে মনে করে। বিপরীতে মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন—বস্তুই মুখ্য এবং চেতনা তার প্রতিবিম্ব। মানুষ যখন প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল, তখনই সে বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিল—আমি কে, কোথা থেকে এলাম, আর এই দৃশ্যমান জগতের বাইরে কিছু আছে কি? এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নিয়েছিল দর্শনের দুই বিপরীত স্রোত—ভাববাদ আর বস্তুবাদ। ভাববাদ বলেছিল—"ভাবই প্রথম," আর মার্কস বললেন—"না, বস্তুই প্রথম।" এই দুই প্রান্তের মাঝখানে আমি দেখি এক সেতুবন্ধন, যেখানে বস্তু, স্নায়ু ও চেতনা একে অপরকে গড়ে তোলে, আর তাদের এই ত্রিত্বের নৃত্যেই সৃষ্টি হয় জীবন ও কল্পনার জগৎ। ভাবববাদ এক সর্বশক্তিমান শক্তির কল্পনা করে যা এই বস্তুজগতের স্রষ্টা। আর এখান থেকে ধর্ম ও ধর্মীয় ভাবধারার সৃষ্টি। আমার এই প্রবন্ধে আমি মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক আলোকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি দেখাবার চেষ্টা করবো কিভাবে ইন্দ্রিয় এবং স্নায়ুজগৎ বস্তু ও চেতনাকে সংযুক্ত করে এবং কল্পলোকের জন্ম দেয়...

চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার

চাঁদে জীবন  শমীক সমাদ্দার                           চন্দ্রযান দুরন্ত তৈরি, রকেটের উপর ভর করে চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পেরিয়ে মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথে  স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রাযান চাঁদের মাটিতে পা রাখবে সময়ের কাউন্ট ডাউন চলছে। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ স্পেসস্কাই গাবেষণা কেন্দ্র কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে প্রযুক্তি বিজ্ঞান অতল গভীরতায় বাসা বাঁধে। পরিচয়টা দিয়ে দিলাম এই স্পেসসিপে রয়েছে তিনজন নভোচর, একজনের নাম সাইমন আর এক জনের নাম রেমন্ড, আর এদের সঙ্গে একজন মহিলা আছে তার নাম মেরিনা। চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। চন্দযান দুরন্ত চাঁদের পূর্ব -পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবতরণ করেছে। আলো আঁধারের গভীরতায় বড় বড় পাথরের পিণ্ড, চাঁদের সার্ফেসের উপরে পাথর জল দেখা যায়। জমাট বাঁধা অক্সিজেন আর কার্বনডাই অক্সাইড। ওরা এখানে এসেছে এক রহস্য উদ্ঘাটন করতে। যে স্থানে ওরা অবতরণ করেছে সেখানে ১০ বছর আগে ওরা এসেছিলো। রুশ সরকার ওদের দেশের ছাত্র ছাত্রী কে মহাকাশে চাঁদে পাঠাতে চায়। ওরা কেন এসেছে সেটা এখনো অধরা। সাইমনের বর্...

জনপ্রিয় লেখা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। ‎জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‎ ‎নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', ...

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত।  সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম।  মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন।  সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে  তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল  তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন...

গ্রন্থ আলোচনা: শর্মিষ্ঠা দেবনাথ

প্রতিবাদ যখন অগ্নিবাণী বাংলাদেশে নারীমুক্তি ও নারী আন্দোলনের পুরোধা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৯তম জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হল " আসিফা এবং.." কাব্য সংকলনটির মধ্যদিয়ে।সংকলনটির বিশেষত্ব হল,এটি উৎসর্গ করা হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার আন্দোলনের যোগ্যতম ব্যক্তি শহীদ শিক্ষক বরুন বিশ্বাসকে। সংকলক প্রকাশক সন্দীপ সাহু নিজে এবং বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন এমন কিছু কবিতা, যা শুধুমাত্র শব্দ ও ছন্দের অনুবন্ধ নয়, এক একটি অগ্নিবাণী।আসলে জীবনকে দেখার স্বাতন্ত্র‍্যে কবিরা সব সময়ই অগ্রগণ্য এবং অনন্য।যুগ ও জীবন দ্বন্দ্বের কণ্ঠস্বরকে আশ্রয় করে,একদিকে মনের প্রবল দাহ ও অন্যদিকে  নির্যাতিতা শিশুকন্যা ও নারীর প্রতি মনের গভীর আকুলতা থেকে প্রকাশ পেয়েছে "আসিফা এবং" এর  কবিতাগুলি।এক অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি আমরা,সেই অন্ধকার আমাদের নিয়ে এসেছে সামাজিক অবক্ষয়ের শেষধাপে যেখানে নৈতিকতা,পাপবোধ,গ্লানিকে সরিয়ে রেখে, সমাজের বানানো নিয়মকে তোয়াক্কা না করে,অনায়াস দক্ষতায় ও ক্ষিপ্রতায় নিজেরই ধর্মচেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু মানুষ তার পশুত্বের পরিচয় দিয়েছে ধর্ষণ ও ন...

শ্যামাপদ মালাকারের কবিতা

চোখ """"""" নদী, অরণ্য, রাতের ফালি চাঁদ- সবেই তো আমার...স্বর্ণপিঁড়িটাও!। সেদিন, শুকতারাটার গা' মাপতে গিয়ে মনে হল, --ওরা আমার চেয়েও সুখী? দেখিনা একবার গাইতি-শাবল চালিয়ে... চালালাম। জল-মাটি ভেজা একটা 'চোখ' কুড়িয়ে ফিরলাম! সেই চোখদিয়ে দেখি-- শেষ বিকেলের নিরন্ন আঁচে ঝলসানো বুকে নীড়ে ফিরছে ধূলিমাখা কত কাল পা, কি শান্তি - কি তৃষ্ণা! পাতাক্ষোয়া কোদালেরর মাথায় ঝরেপড়া ললাটের ঘামে, কারা যেন জীবন শাণ দেয়! রুক্ষঠোঁটের আবরণে এক সময় নেমে আসে শিশিরস্নাত কালনিশি-- মাঝের ব্যবধান মুছে দেয় প্রতিশ্রুতির ভীড়- - পূর্বজনমের নিদর্শনচুম্বন শেষে হেরে যায় কার মমতাজ-- ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লান হয়ে যায় কত পিঁড়ি! ... ম্লা...

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

  কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়  পার্থ সারথি চক্রবর্তী  কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই।  খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই ...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '...

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

  উৎসবের সৌন্দর্য:  সেকালে ও একালে   সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু ...

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

বসন্তের কোকিল তুমি   বিচিত্র কুমার                      (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে।                 (০২)        এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ।  তারপর প্র...

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

"এ কালে একটু লেখাপড়া জানা থাকাতে, এবং বঙ্গভাষায় অনেক গুলি পাঠ্য পুস্তক হওয়াতে কেবল পরনিন্দা করিয়া সময় কাটাইতে তাঁহাদের আবশ্যকও হয় না, প্রবৃত্তিও হয় না। …নিতান্ত সখ্যতা বা আত্মীয়তা না থাকিলে, সকল পেটের কথা খুলিয়া নিঃশ্বাস ছাড়িয়া তৃপ্তিলাভ করা, এ কালের মেয়েরা পছন্দ করেন না। তাঁহারা বইখানি, কার্পেটটুকু, নিজের স্বামী পুত্র লইয়া দিন যাপন করিতে বা একেলা থাকিতে কষ্ট বোধ করেন না।" —শরৎকুমারী চৌধুরাণীর এই লেখা (ভারতী ও বালক/ আশ্বিন কার্তিক, মাঘ/ ১২৯৮) দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না উনিশ শতকে নারীর লেখাপড়া শেখার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আত্মমুক্তির জন্য। শুধু লেখাপড়া শেখা নয়, সাহিত্য সৃষ্টিতেও ছয়'এর দশক (উনিশ শতকের) থেকে নারীরা যে ধারা সূত্রপাত করেছিল তা নারীর আত্মমুক্তির পথকেই প্রসারিত করেছিল। ছয়'এর দশকের পূর্বেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপার হরফে নারী রচিত কাব্য 'চিত্তবিলাসিনী' প্রকাশিত হয়। লেখেন কৃষ্ণকামিনী দাসী। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কবি ঠাকুরাণী দাসীর নাম উঠে আসতে থাকে, যিনি কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লিখতেন। ঠিক সেই বছরই জন্মগ্রহণ করেন কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী, যাঁর কবিতা লেখা আত্মমুক্...

বছরের বাছাই

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

  এই সংখ্যায় একটি গ্রন্থ আলোচনা ও একটি ধারাবাহিক রচনা ছাড়া সব লেখাই ভাষা দিবস, মাতৃভাষা, ভাষাচেতনা ও ভাষা সমস্যা বিষয়ক রচনা। লেখাগুলি এই সংখ্যাকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে। পড়ুন। শেয়ার করুন। মতামত জানান। লেখকগণ নিজের নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন যতখুশি, যে মাধ্যমে খুশি। কিন্তু স্ক্রিনশট শেয়ার নৈব নৈব চ!  অন্য বিষয়ের লেখাগুলি আগামী সংখ্যার জন্য রইল।  সকলকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন। ভালো থাকুন।   --সম্পাদক, নবপ্রভাত। ==  সূ  চি  প  ত্র  == প্রবন্ধ-নিবন্ধ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালীর বাংলা ভাষা দুর্জয় দিবস।। বটু কৃষ্ণ হালদার ভাষা শহীদদের পঁচাত্তর বছর।। অনিন্দ্য পাল একুশে ফেব্রুয়ারি : বাঙালির শ্রেষ্ঠ অশ্রুবিন্দু।। জীবনকুমার সরকার কবিগানের সাহিত্যিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্য।। বারিদ বরন গুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি।। শ্যামল হুদাতী মায়ের দুধ আর মাতৃভাষা।। প্রদীপ কুমার দে একুশে ফেব্রুয়ারি : কিছু কথা।। বনশ্রী গোপ বাংলায় কথা বাংলায় কাজ।। চন্দন দাশগুপ্ত বিপন্ন মাতৃভাষা ও তার মুক্তির পথ।। মিঠুন মুখার্জী. হে অমর একুশে, তোমায় ভুলিনি, ভুলব না।। মহম্মদ মফিজুল ইসলা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৭তম সংখ্যা ।। জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ মে ২০২৫

  প্রচ্ছদ চিত্র: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূচিপত্র রবীন্দ্রনাথ এবং কয়েকজন নারী ।। অনিন্দ্য পাল পরাবাস্তববাদ ও বাংলায় জীবনানন্দের কাব্যচর্চা ।। রণেশ রায় প্রতীক্ষা ।। চন্দন দাশগুপ্ত আশ্রয় ।। সায়নী সাহা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র ।। দেবাংশু সরকার প্রণামের প্রভু ।। সুপ্রভাত মেট্যা দুর্ভাগ্যের সম্মুখ সমরে ।। সমীর কুমার দত্ত আচমকা শরৎ ।। অর্ণব সামন্ত প্রতিধ্বনি ✍️ সুবীর কুমার ঘোষ জীবন যেখানে যেমন ।। আরজু মুন জারিন বছর সীমান্তে হিসেব নিকেশ ।। রানা জামান চারটি কবিতা ।। বিবেকানন্দ নস্কর আমরা আছি ।। লালন চাঁদ চাওয়া ।। মাথুর দাস কাগজ ফুলে ।। সফিউল মল্লিক সময়ের স্রোত ।। দুর্গাদাস মিদ্যা তুমি মানুষ ।। বদরুল বোরহান দিঘার সমুদ্র ।। মাখনলাল প্রধান পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত সংযম ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত  চেনা প্রতিবেশী (প্রথম পর্ব) ।। দীপক পাল খেলার মাঠ ।। তূয়া নূর বন্ধু শ্যামলকান্তি ।। শংকর ব্রহ্ম তুমি তোমার মতো থাকলে ।। সত্যেন্দ্রনাথ বেরা গ্রীষ্মে খুবই হিংস্র রবি ।। জগবন্ধু হালদার স্বপ্ন দর্শন ✍️ পার্থ প্রতিম দাস মৌন মুখরতা ।। মুসা মন্ডল রুদ্র বৈশাখ ।। দীনেশ সরকার চিহ্নিত পদযুগ পদাঘাত ।। দেবাশীষ...

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

সূচিপত্র ।। ৮৯তম সংখ্যা ।। শ্রাবণ ১৪৩২ জুলাই ২০২৫

সূচিপত্র   প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান প্রবন্ধ ।। শ্রমিকের অধিকার ।। চন্দন দাশগুপ্ত প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। নারীমর্যাদা ও অধিকার ।। হিমাদ্রি শেখর দাস কবিতা ।। মশালের রং তুলি ।। তূণীর আচার্য কবিতা ।। জললিপি ।। রূপক চট্টোপাধ্যায় গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম নিবন্ধ ।। পূনর্জন্ম ।। শংকর ব্রহ্ম মুক্তভাবনা ।। কোলাহল তো বারণ হলো ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত গল্প ।। গানের হাড় ।। শুভজিৎ দত্তগুপ্ত গল্প ।। শিকড়ের খোঁজে ।। সমীর কুমার দত্ত সুপ্রভাত মেট্যার পাঁচটি কবিতা গ্রন্থ-আলোচনা ।। আবদুস সালামের কাব্যগ্রন্থ 'অলীক রঙের বিশ্বাস'।। তৈমুর খান অণুগল্প ।। হরিবোল বুড়ো ।। সুমিত মোদক রম্যরচনা ।। গোয়েন্দা গোলাপচন্দ আর প্রেমের ভুল ঠিকানা ।। রাজদীপ মজুমদার দুটি গল্প ।। মুহাম্মদ ফজলুল হক দুটি কবিতা ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। মেঘমুক্তি ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। ব্যবচ্ছিন্ন শরীর ।। কৌশিক চক্রবর্ত্তী কবিতা ।। শমনচিহ্ন ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। ভালোবাসার দাগ ।। জয়শ্রী ব্যানার্জী কবিতা ।। ফণীমনসা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ছড়া ।। আজও যদি ।। বদ্রীন...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পাদকীয় এই সংখ্যাটি বাংলা নববর্ষ বিষয়ক সংখ্যা। নৱৰ্ষকেন্দ্রিক বহু তথ্যপূর্ণ লেখা এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস, রীতিনীতি, উৎসব, পার্বন, লোকাচার, রূপান্তর বহুবিধ বিষয় প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যার লেখাগুলিতে। এই সংখ্যার বাছাই কিছু লেখার সঙ্গে আগামীতে আরও কিছু লেখা সংযুক্ত করে বাংলা নববর্ষ বিষয়ক একটি মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশ করার ইচ্ছে রইল।  সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা জানাই। উৎসবে আনন্দে থাকুন, হানাহানিতে নয়। ধর্ম-ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে সহনাগরিকের পাশে থাকুন। মনে রাখুন, ধর্মকে মানুষই সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর আল্লা গড ইত্যাদির জন্মদাতা মানুষই। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের পাশে থাকুন।  নিরাশাহরণ নস্কর  সম্পাদক, নবপ্রভাত।  সূচিপত্র প্রবন্ধ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা পয়লা বৈশাখ ।। সিদ্ধার্থ সিংহ নববর্ষকেন্দ্রিক মেলা, পার্বন, উত্সব, লোকাচার ।। সবিতা রায় বিশ্বাস নববর্ষ আবাহন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিভিন্ন দেশে ।। তুষার ভট্টাচার্য নববর্ষের সেকাল ও একাল ।। হিমাদ্রি শেখর দাস নববর্ষের হাল-হকিকৎ ।। শংকর ব্রহ্ম বোশেখি বাঙালি নাকি পোশাকি বাঙালি? ।। দিব্যেন্দু...

প্রবন্ধ ।। বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় ।। মাখনলাল প্রধান

বাংলা যাত্রা ও নাট‍্যশিল্পে অবক্ষয় মাখনলাল প্রধান বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির জগতে যাত্রা শিল্প তথা নাট‍্যশিল্পে মড়ক নেমে এসেছে । যাত্রা শিল্পের মড়কে শুধু কোভিড নয় তার বহুপূর্ব থেকেই অর্থনৈতিক বিপর্যয় , শিক্ষাক্ষেত্রে বন্ধ‍্যাত্ব এবং গ্ৰাম বাংলার পটপরিবর্তন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। যাত্রা-শিল্পের লীলাভূমি ছিল গ্ৰাম বাংলা। গ্ৰামে প্রচুর যাত্রাপালা হত নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে । জমিদারি ব‍্যবস্থা লুপ্ত হওয়ার পর গ্ৰামীণ মানুষের উদ‍্যোগে শীতলা পূজা,  কালীপূজা, দুর্গাপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, চড়ক ইত‍্যাদিকে উপলক্ষ‍্য করে যাত্রাপালার আয়োজন না হলে কেমন যেন ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে লাগতো। সেই সঙ্গে কলকাতার বড়বড় কোম্পানির যাত্রাপালা ঘটা করে, টিকিট সেল করে হত মাঠে। খুব বড় মাপের খেলার মাঠ যেখানে ছিল না সেখানে ধানের মাঠ নেওয়া হত ‌। ত্রিশ-চল্লিশ হাজার মানুষ দেখতে আসত। স্পেশাল বাস পাঠাত  আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বিনা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করত যাত্রার দর্শকেরা। কিন্তু বিকল্প ধানচাষ শুরু হলে জমিগুলো সময় মতো ফাঁকা পাওয়া গেল না । প্রথম দিকে ব‍্যাপকহারে ধান শুরু না হওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হত না। বহুক্ষেত্রে  ধান কা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। ভিনগ্রহীদের সন্ধানে ।। শ্যামল হুদাতী

ভিনগ্রহীদের সন্ধানে  শ্যামল হুদাতী  ইতিহাসের শুরু থেকে বারবার মানুষকে একটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় – এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? পৃথিবীর মতো আরও গ্রহ রয়েছে, যেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীরা বাস করে – এই সম্ভাবনা বরাবর মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের কখনও না কখনও এই ভাবনা এসেছে। দীর্ঘ কয়েক দশকের গবেষণার পরও, এই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ, বহু দূরের এমন কিছু গ্রহের সন্ধান দিয়েছে, যেগুলিতে প্রাণ থাকতেই পারে। তবে, নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভিনগ্রহীদের খুঁজতে বহু দূরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। তারা এই পৃথিবীতেই মানুষের ছদ্মবেশে মানুষের মধ্যেই বসবাস করতে পারে। আমরা ভিনগ্রহীদের যেমন কল্পনা করি, এরা তার থেকে আলাদা। এরা অনেকটাই, দেবদূতদের মতো। মানব জগতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রযুক্তিগত নয়, বরং জাদুকরি। মহাকাশে সৌরজগতের গ্রহ পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথায় প্রাণ রয়েছে কি না তা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। একই সঙ্গে পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে মানুষ বসবাস ক...

মাসের বাছাই

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬

  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠালে  অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে হলে ভালো। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # ...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯২তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩২ অক্টোবর ২০২৫

—: সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে :— এই সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল প্রায় ১৮০টা। কিন্তু গুণগত মানে দুর্বল লেখার সংখ্যা বহু। আমরা নবপ্রভাতে নতুনদের কথা ভেবে বেশ কিছু দুর্বল লেখাও রাখি। কিন্তু সবসময় একই লোকের দুর্বল লেখা প্রকাশ করা অনুচিত বলে মনে করি। শেষ পর্যন্ত ৯৯ জনের লেখা রাখা গেল। যাদের লেখা প্রকাশিত হল না, তারা লেখাগুলি অন্য যেখানে খুশি পাঠাতে পারেন। বিশেষ কারণে এই সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা দুঃখিত। তবে মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৬ সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই আসছে। সঙ্গে থাকুন। সকলকে উৎসবমুখর বর্ণময় শুভেচ্ছাসহ— —নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদক, নবপ্রভাত। অনুরোধ : প্রকাশিত লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, ছবি/স্ক্রীনশট নয়।  == সূচিপত্র == পড়া-লেখার ইতিহাস অনুসন্ধান।। তপন তরফদার উৎসব : মানুষের চিরন্তন আত্মপ্রকাশ।। কৃশানু ব্যানার্জি বাংলা : সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্মভূমি।। শ্যামল হুদাতী সমুদ্র আর অস্তিত্ব ।। সুব্রত চৌধুরী রাজা ছিলেন জুবিন গর্গ ।। গঙ্গা 'অনু'   আদ্যাশক্তি মহামায়ার বাংলা বারো মাসের বারো রূপ ।। অর্হণ জানা মেধাদাদুর আসর ।। রণেশ রায় বৈজ্ঞানিক মা...

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯৩তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩২ নভেম্বর ২০২৫

সূচিপত্র বস্তু, চেতনা এবং কবি ।। সজল চক্রবর্তী দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আলোচনায় নব দিগন্ত ।। রণেশ রায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ও সন্নিহিত অঞ্চলের কথ্য শব্দ ।। অরবিন্দ পুরকাইত চাঁদে জীবন ।। শমীক সমাদ্দার অসমাপ্তি ।। মহুয়া হুই গ্যালাক্সির শব্দে ।। জাসমিনা খাতুন তিনটি কবিতা ।। দিবাকর সেন অপূর্ণতার শেষ অধ্যায় ।। সুপ্রিয় সাহা হাফ ডজন ছড়া ।। স্বপনকুমার পাহাড়ী স্বাপ্নিক অমলের ঘুৃম ।। সঞ্জয় দেওয়ান দুটি কবিতা ।। সৌমিত্র উপাধ্যায় পথ চলতি ✍️পার্থ প্রতিম দাস হেমন্তের বিষাদ ছুঁয়ে ।। শক্তিপদ পাঠক রাই আর বাবা ।। অদিতি চ্যাটার্জি স্থিতিশীল ।। রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় হৃদয়ের শূন্য কোড ।। লিপিকা পিঙ্কি দে অমানিশা ।। সৌভিক মুখার্জী দৃষ্টিগত ।। শামীম নওরোজ জ্যান্ত ভূতের গপ্পো ।। পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় ধুতরা ফুলের ঘ্রাণ ।। মজনু মিয়া তারা খসার আলোয় ।। তীর্থঙ্কর সুমিত উত্তরণে অন্তরায় ।। সমীর কুমার দত্ত প্রেম মুদ্রা ।। বিবেকানন্দ নস্কর ধারা ।। লালন চাঁদ অন্যের ব্যথায় ব্যথি ।। জগদীশ মণ্ডল গর্ভ ।। শাশ্বত বোস ভ্রমণ বিষয়ক স্মৃতিকথা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত শাপে বর ।। সাইফুল ইসলাম রবিবার ।। সঙ্ঘমিত্রা দাস দুটি ...

দিদৃক্ষা ।। রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী

  দিদৃক্ষা রাজেশ কে. চক্রবর্ত্তী 'কাল একবার দেখা হতে পারে?' দশমীর দুপুরে খাটে আধশোয়া হয়ে নিজের ফোনটা ঘাঁটছিল দেবমাল্য; হোয়াট্‌সঅ্যাপের সার্চ বক্সে  র‍্যান্ডম সিক্যুয়েন্সে ক'খানা ডিজিট ইনপুট করতেই বিস্মৃতির অতল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে যে নামটা স্ক্রিনের সারফেসে ভেসে উঠল, এককালে দেবমাল্যের প্রায়োরিটি লিস্টে সবথেকে ওপরে পিন্‌ করা থাকতো এই অ্যাকাউন্টটা। 'অহনা দাশগুপ্ত'—গ্রেয়েড-আউট ডিপিটার ডানদিকে, নামটার তলায় নিস্প্রভ হরফে ভেসে থাকা ওর এই লাস্ট মেসেজটা বেশ ক'বছরের পুরনো, কিন্তু দেবমাল্যর স্মৃতির প্যান্ডোরা বাক্সটি উলটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। আরেকবার আপাদমস্তক শিহরিত হয় সে। প্রোফাইলটা খুলে ওপরে-নীচে স্ক্রল্‌ করে দেখে, ওদের পুরনো চ্যাটগুলো তেমনি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে আছে, ওর মেসেজগুলোর পাশে ডাবল টিকগুলো এখনও জাজ্বল্যমান সবুজে ছোপানো, যেন এইমাত্র 'সিন্‌' করে রেখেছে অহনা! যেন এখুনি আবার হাত বোলালেই অহনা এসে খানিকটা রাগত ভঙ্গিতে চ্যাট করতে লেগে যাবে। দেবমাল্যের বুক ছাপিয়ে একটা নীরব দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে! ছুটির এই আমেজটা লক্ষ্মীপুজো অব্দি গড়াবে—অফিস খুললেই তো আবার দমফাটা ব্য...

গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম

  গুচ্ছকবিতা || শিশির আজম হুইসেল (মুরাকামি থেকে অনুপ্রাণিত) ♦ 'গভীর রাতে একটা হুইসেল কতটা গভীর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারো না,' ছেলেটা বললো, 'আশ্চর্য ঐ হুইসেলের মতো আমি ভালবাসি তোমাকে।' কিন্তু গভীর রাতে অন্ধকারে কখনও তো ঘুম ভেঙে যায়নি মেয়েটার, কখনও ও বিচ্ছিন্ন আর একা হয়ে যায়নি। ও কীভাবে অনুভব করবে গভীর রাতে ট্রেনের হুইসেল কতটা গভীর! নিউজ এজেন্সি ♦ একসময় আমরা খবর শুনতাম এখন দেখি স্বীকার করতে হবে খবর শোনার চেয়ে দেখার আনন্দ বেশি আলাদা উত্তেজনা নিউজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে তৎপর আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ কোনটা নিউজ সেটা ওরাই ঠিক করে যেটা ওদের দরকার আর সেটাই আমাদের দেখানো হয় ধারাবাহিকভাবে সুচারু জ্যামিতিকতায় বিভিন্ন পদ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় নতুন বাস্তবতা নির্মাণে যে বাস্তবতায় জায়গা নেই আমাদের ইতিহাস অন্বেষা স্বাধীনতার সমৃদ্ধি আর স্বাধীনতার কথা বলেই ওরা আমার ক্ষেতখামার পাহাড় আর নদীর দখল নিয়েছে তাহলে টিভিতে যে হাসিখুশি প্রাণবন্ত আমাদেরকে দেখানো হয় ওরা কারা এই প্রশ্ন করো নিজের কাছে আগুন নিয়ে খেলা ♦ আজও পুকুরে ছিপ ফেলে বসবো আমি ধীরে চুপ সূর্য আমার ঘাড়ে শ্বাস ফেলবে সারারাত ঘরের ভেতর ল্যাং...

বিদায়ের স্রোত ।। চয়ন মন্ডল

  বিদায়ের স্রোত চয়ন মন্ডল "বিজয়া দশমী—আনন্দের দিন, কারও কাছে যা হয়ে উঠল চিরন্তন বিদায়।" আজ বিজয়া দশমী। শিউলি ফুলের গন্ধে ভোরটা অন্যরকম। পাড়ার প্যান্ডেলে অদ্ভুত এক কোলাহল—মায়ের বিদায় যে আজ। শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা আর উলুধ্বনিতে গমগম করছে চারদিক। একদিকে মা দুর্গার বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে আনন্দ ও মিলনমেলা। সারা বছরের অপেক্ষা শেষে এই দিনটিতে প্যান্ডেল ভরে উঠেছে মানুষের ভিড়ে। সকালের পূজার্চনা শেষ হতেই শুরু হয়েছে সিঁদুর খেলা। মহিলারা মায়ের প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে একে অপরের কপালে, গালে রাঙিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকের তালে আর শাঁখ বাজনার আবেশে ভেসে যাচ্ছে পাড়া। শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। কিন্তু এসবের মধ্যে নেই অনুরাধা। কেউ তার বা মিনির খোঁজ রাখেনি। মুখার্জিদের দোতলা বাড়ির কোণের ঘরে বসে সে চোখের জল ফেলছে। সবার বাড়িতে আলোর রোশনাই, ভোগের গন্ধ, হাসি—শুধু তাদের ঘরটিতে নিস্তব্ধতা। গতবছর এই দিনেই তো অন্যরকম ছিল সবকিছু। অনুরাধা, সুজয় আর তাদের তিন বছরের মেয়ে মিনি পাড়ার প্যান্ডেলে ঢাকের তালে নেচেছিল, সিঁদুর খেলায় রঙে ভেসেছিল। বিকেলের দিকে প্রতিমা বিসর্জনের মিছিলে শামিল ...

কবিতা ।। অরণ্যকন্যা ।। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

  অরণ্যকন্যা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় অরণ্যকন্যার দৃষ্টির ভেতর বিষাদ বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা জলের মতো গড়িয়ে যায়, হয়ে যায় কোন নদীপথ দৃষ্টি ভেঙে ভেঙে চলে যায় কোন এক শূন্য পথে অরণ্যকন্যার হৃদয়ের ভেতর ভাঙে যতো বৃক্ষপত্র নতুন পত্র পুষ্পের খোঁজ নেই ঠোঁট জুড়ে সমুদ্রকাঁপন বুদবুদের মতো অস্ফুট হয়ে উচ্চারিত হয় কোন অক্ষর শব্দ আর তাঁর শরীর থেকে ছড়িয়ে যায় হয়ে যায় একটা অদৃশ্য কবিতা...    ================== @ অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,  বেহালা, কলকাতা -৭০০০৬০,  

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৯১তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পাদকীয় দপ্তর থেকে এই সংখ্যায়  'শিক্ষা ও শিক্ষক' বিষয়ক বেশ কিছু লেখার পাশাপাশি রয়েছে বিচিত্র বিষয়ের আরও কিছু লেখা। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি আপনাদের সমৃদ্ধ করবে, আপ্লুত করবে — এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আপনাদের মতামত অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রতীক্ষিত।            আগামী অক্টোবর ২০২৫ সংখ্যা 'উৎসব সংখ্যা' হিসাবে প্রকাশিত হবে। ওয়েব সংখ্যার পাশাপাশি নির্বাচিত লেখাগুলি নিয়ে একটি pdf এবং তার মুদ্রিত সংস্করণও প্রকাশিত হবে। তাই অপ্রকাশিত ভালো লেখা পাঠান। বিশেষ কোনও বিষয় নেই। প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ফিচার ২০০০ শব্দ, গল্প ১২০০ শব্দ, অণুগল্প ৫০০ শব্দ, কবিতা-ছড়া ২৪ লাইনের মধ্যে হলে ভালো। ইমেলঃ nabapravatblog@gmail.com           বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি আসবে। সামাজিক মাধ্যমে আমদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন। সময় মতো সব সংবাদ পেয়ে যাবেন।  শারদ উৎসবের দিনগুলি সকলের আনন্দে কাটুক এই কামনা করি। —নিরাশাহরণ নস্কর সম্পাদক: নবপ্রভাত মোঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ Whatsapp Group:  https://chat.whatsapp.com/ AIpj98JKbloFSpeqMcpr6j Facebook Page:  https://www.facebook.com/ share...

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কড়াকড়ি বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো,  তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়।  যেমন, কবিতা/ছড়া ১২-১৬ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প/মুক্তগদ্য কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে, গল্প/রম্যরচনা ৮০০-৯০০ শব্দে, প্রবন্ধ/নিবন্ধ ১৫০০-১৬০০ শব্দে। তবে এ বাঁধন 'অবশ্যমান্য' নয়।  সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৬-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) য...

শেষ বিকেলের আলো ।। সৈকত প্রসাদ রায়

  শেষ বিকেলের আলো সৈকত প্রসাদ রায় রানাঘাট শহরের প্রান্তে ছোট্ট এক পাড়া বিশ্বাসপাড়া। সেই পাড়ার পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়িটায় থাকেন পুষ্পরাণী ভট্টাচার্য— বয়স পঁয়ষট্টির কোঠায়। সবাই তাকে "পুষ্পদি" বলেই চেনে। একসময় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, এখন অবসর নিয়েছেন। প্রতিদিন বিকেলে পুষ্পদি বারান্দায় বসে চা খান। ছোট একটা টেবিল, কয়েকটা পুরোনো বই, আর একখানা নীল কাঁচের ফুলদানি — তার নিত্যসঙ্গী। বারান্দার সামনেই একটা গলি, যেখান দিয়ে প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পরে বাচ্চারা হইচই করে ছুটে যায়। পুষ্পদির একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ — কলকাতায় চাকরি করে। ছেলেটা আধুনিক, নিজের সংসার আছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত। বছরে হয়তো একবার আসে, তাও কিছুক্ষণ বসে আবার চলে যায়। পুষ্পদি মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু বুকের ভেতরে একটা কষ্ট জমে থাকে। সেই বিকেলটা অন্যরকম ছিল। আকাশে ধুলো, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। হঠাৎ পুষ্পদির চোখে পড়ে — রাস্তায় এক কিশোর বসে আছে। বয়স বারো-তেরোর বেশি নয়। মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া চটি। ছেলেটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পুষ্পদির বাড়ির গেটে ঝুলে থাকা পুরোনো নোটিশবোর্ডটার দিকে, যেখানে একসময় লেখা ছিল — "পুষ্পরাণী ভ...